মৃন্ময় মুখার্জি
“কোথায় হারাল রে আমার মন”—হাহাকার উত্তর দিল প্রজ্ঞাপনের সম্মোহিনী শব্দে, চমকে—চটকে—ঝটকায়, সংক্ষিপ্ত একাগ্রতার অন্তরালে।
বিভ্রান্তি আর উদ্দীপনা দুটোই বাড়িয়েছে আমাদের ইন্টারনেট। ভার্চুয়াল বাস্তবতার ব্যাপ্তি কমাচ্ছে মনোযোগের প্রসার। বিভিন্ন গবেষণার মূল্যায়নে, অতিরিক্ত ইন্টারনেট আসক্তি আজ জন্ম দিয়েছে দ্রুত নিষ্পত্তির উদগ্র আকাঙ্ক্ষা, বিক্ষিপ্ত চিন্তা আর অগভীর জ্ঞান। সে বদহজমের চিৎকার সর্বদা শোনা যায় সোশ্যাল মিডিয়ার মন্তব্য—টিপ্পনীতে।
মনখারাপের খবর আর আজ মেঘ বয়ে আনতে পারবে না। ঘড়ির কাঁটার গতিপথের দিকে তাকিয়ে থাকা অথবা ফুল ফুটতে দেখতে চাওয়া এখন কল্পনার অতীত। নির্বুদ্ধিতার সামাজিক প্রশ্রয়ে অথবা প্রলাপ দর্শনের অছিলায় বিনোদনও উন্মত্ততার নামান্তর। অর্থহীনতায় পরম সুখ।
অস্থিরতা, অস্থিরতা ও আরো অস্থিরতা এখন সফলতার পরিমাপক। পিছিয়ে পড়বার ভয়, তীক্ষ্ন হবার ভান, সর্বদা প্রকাশিত হতে চাওয়া মন প্রসব করছে কৌতূহলহীনতা, ধ্বংসপ্রাপ্ত আমোদ, ক্ষণস্থায়ী আবেগ। মুঠোবন্দী জগতে সংযোগ আর যোগাযোগের সাম্যাবস্থায় ভারসাম্য হারিয়ে একঘেয়েমি ও অবসাদ।
মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে বারো শতাংশ অতীতরোমন্থন, আঠাশ শতাংশ বর্তমানযাপন ও আটচল্লিশ শতাংশ ভবিষ্যৎচিন্তা থাকলে বাকিটা থাকে শূন্যতা। এ ভারসাম্য এখন বিঘ্নিত। সমস্ত রহস্য দৃশ্যমান অথচ অস্পষ্ট।
পালাবার পথ কি আছে ! আশাবাদ বেছে নিলে টেকগুরু—নির্বুদ্ধিতা উদযাপনের মায়া, নৈরাশ্য পাঠাক বনে—অন্তর্জালহীনতায় ; যেখানে কল্পনারা ডানা মেলবে আবার। “Not all those who wander are lost”।