বিজু কৃষ্ণন
ভাষান্তর ও অনুলিখন: অঙ্গিরাপ্রিয়া নন্দী
আমাদের আলোচ্য বিষয় হল— নয়া কৃষি আইন, এবং সেই আইন কৃষিস্বার্থ বিরোধী হওয়ায় সারা ভারতবর্ষব্যাপী কৃষক আন্দোলন কীভাবে বৃহৎ আকার ধারণ করেছে তার গতি প্রকৃতি নিয়ে। আমি মূলত যে বিষয়ের উপর আলোকপাত করব তা হল— কেন এই বৃহত্তর কৃষক আন্দোলন শুরু হল। সেই প্রসঙ্গে ফিরে যেতে হবে ছয় বছর পিছনে, যখন বিজেপি সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসেনি। আসার প্রাক্কালে তারা কৃষকদের নানা প্রলোভনমূলক প্রতিশ্রুতি দিলেও আদপে তা রক্ষা করেনি।
২০১৪ সালে বিজেপি যখন লোকসভা নির্বাচনের মাধ্যমে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসতে বদ্ধপরিকর ছিল, তখনই দেশ জুড়ে কৃষিসঙ্কট দেখা দিয়েছিল। অপরদিকে কংগ্রেসের ইউ.পি.এ দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল পাহাড় প্রমাণ। দারিদ্র্য, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের সমস্যা ইত্যাদি বিষয়গুলি যখন সামাজিক ব্যাধি রূপে প্রকট হয়ে উঠছে ঠিক তখনই বিজেপি দলটি এই সমস্যাগুলিকে তুরুপের তাসের মতো ব্যবহার করে কৃষকদের আশ্বাসবাণী দিল যে, যদি তারা বিজেপিকে ভোট দেয় তাহলে তাদের দুর্দশার কালো মেঘ ঘুচবে, কৃষিসঙ্কটের সমাধান করা হবে, কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হবে, শস্য উৎপাদনের খরচ বাবদ ন্যূনতম পঞ্চাশ শতাংশ তারা ফেরত পাবে, শস্যে ক্ষতি হলে কৃষকরা ক্ষতিপূরণ পাবে এবং তার জন্য ফসলবিমা থাকবে, কৃষকদের দেওয়া ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে, সব খেতে কৃষকরা জল পাবে (“হর খেত কো পানি মিলেগা”) এবং শুধু তাই নয়, বীজ, সার ইত্যাদি সস্তায় দেওয়া হবে, সর্বোপরি কম সুদের হারে কৃষিঋণ দেওয়া হবে।
ওপরে উল্লিখিত সবকটি বিষয়ই বিজেপির নির্বাচনি ইশতাহারে রাখা হয়েছিল। কিন্ত, ২০১৪ সালে ভোটে জিতে বিজেপি যখন ক্ষমতায় এল তখন সর্বভারতীয় কিষাণসভার পক্ষ থেকে তৎকালীন কৃষিমন্ত্রীকে বলা হল, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ন্যূনতম সহায়কমূল্য (Minimum support price) হিসাবে শস্য উৎপাদনের খরচের পঞ্চাশ শতাংশ চাষীদের দিতে হবে এবং আইন বলবৎ করতে হবে। প্রত্যুত্তরে কৃষিমন্ত্রী নির্দ্বিধায় জানিয়ে দিলেন যে, ভোটের আগে সব রাজনৈতিক দলই এরকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে ভোট পাওয়ার জন্য, তাই এসব কথাকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। সর্বভারতীয় বিজেপি দলের সভাপতি অমিত শাহ একই সুরে সুর মেলালেন এবং বিজেপি সরকার সুপ্রিমকোর্টে হলফনামা দাখিল করল যে, চাষ বাবদ চাষিদের যা খরচ হয় তার পঞ্চাশ শতাংশ ফেরত দেওয়া যাবে না এবং ন্যূনতম সহায়কমূল্য আইন বলবৎ করা যাবে না। অতএব, বিজেপি সরকারের চাষিদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের পর্ব অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল।
এরপর ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় সরকার জমি অধিগ্রহণ অধ্যাদেশ (Land Acquisition Ordinance) জারি করল এবং জমি কর্পোরেট গ্রাসে চলে গেল। আর এই অন্যায়ভাবে জমি অধিগ্রহণ, ন্যূনতম সহায়কমূল্য না দেওয়া— সবকিছুর বিরুদ্ধে গর্জে উঠল বিভিন্ন কৃষক সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, দলিত, আদিবাসী, জেলে সম্প্রদায়ের মানুষেরা। তাঁদের সম্মিলিত প্রয়াসে শুরু হল ভূমি অধিকার আন্দোলন। চাপে পড়ে বিজেপি সরকার তিনবার বিষয়টিকে সংসদে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও অসফল হল এবং এই প্রথম তাঁরা নতিস্বীকার করল কৃষকদের সংগঠিত শক্তির কাছে, প্রত্যাহার করতে বাধ্য হল অধ্যাদেশ। কৃষক-শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় যে আন্দোলন শুরু হল তার ঢেউ আছড়ে পড়ল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, বিহার, হিমাচলপ্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকরা দাবি জানাল যে, সরকারি তরফে তাঁদের ন্যূনতম সহায়কমূল্য দিতে হবে এবং ঋণ মকুব করতে হবে। নাসিক থেকে মুম্বাই দীর্ঘ ১৮৬ কি.মি. পথ পায়ে হেঁটে হাজার হাজার কৃষক বিজেপি সরকারকে দাবি জানাতে এল এবং চাপ সৃষ্টি করল যাতে তাঁদের লিখিত আশ্বাস (written assurance) দেওয়া হয়।
২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে যখন বিমুদ্রাকরণ হল, চাষিদের দুর্দশা তখন চরমে পৌঁছালো। বিশেষ করে যেসব চাষিরা পচনশীল ফসল ফলায়, তাঁরা নিদারুণ অর্থসংকটের মুখে পড়ল। ওদিকে যখন মহারাষ্ট্র, রাজস্থানের পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশের কৃষকরাও ন্যূনতম সহায়কমূল্য বলবৎ করার দাবিতে প্রতিবাদমুখর হল, ঠিক তখনই বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের পুলিশ নৃশংসভাবে ৬ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করলেন।
মনে রাখতে হবে, এই কৃষকরা কোনো বামপন্থী দলের পক্ষ থেকে যাননি। তাঁরা গিয়েছিলেন কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে। চাষিদের বক্তব্য ছিল যে, রসুন চাষ করতে তাঁদের প্রতি কেজিতে খরচ পড়ে ৩৩-৩৫ টাকা (যদিও বিজেপি দাবি করে ২৭ টাকা) সেই রসুন মাত্র ১ টাকা লাভে তাঁদের মধ্যস্বত্বভোগীদের বিক্রি করতে হয়। অথচ, রিলায়েন্স সেই রসুন বাজারে বিক্রি করছে প্রতি কেজি ১৪৭ টাকায়। উত্তর কর্ণাটক এবং অন্যান্য মধ্যকৃষি অঞ্চলে যেখানে অড়হর ডালের উৎপাদনমূল্য প্রতি কেজি ৩০-৩৫ টাকা, সেই ডাল উপভোক্তারা কিনছে প্রতি কেজি ২০০-২২০ টাকায়। সেই ডাল বিক্রি করছে কারা? আদানি, আম্বানি, টাটাগোষ্ঠী, আই.টি.সি. প্রমুখরা। তাবৎ শিল্পপতিরা এই যে বিপুল পরিমাণ মুনাফা লুটছে, চাষিরা সেই লভ্যাংশের কানাকড়িও পাচ্ছে না, এমনকি ন্যূনতম সহায়কমূল্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। আর তাই কৃষকরা চেয়েছিল সংসদে প্রাইভেট মেম্বার বিল রূপে এই বিষয়টি উত্থাপন করতে। সারা দেশব্যাপী চাষিদের যে ২০০টি কৃষক সংগঠন আছে, তারা সম্মিলিতভাবে সরব হয়েছিল ন্যূনতম সহায়কমূল্য বলবৎ ও ঋণ মকুব করার দাবিতে। কিন্ত, মোদি সরকার কোনো বিষয়েই কর্ণপাত করেননি। উল্টে কথার বেড়াজাল বুনে কৃষকদের সাথে একপ্রকার প্রবঞ্চনা করেছেন এবং অপরপক্ষে রিলায়েন্সসহ অন্যান্য বড় বড় কোম্পানিকে কিস্তিতে ১০০০ কোটি টাকা বিমার বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। ফলস্বরূপ, কর্পোরেট মিডিয়ার দৌলতে এবং কর্পোরেট ধনরাশির সহায়তায় এক উগ্র জাতীয়তাবাদকে কাজে লাগিয়ে ২০১৯-এর নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় বহাল থাকতে পেরেছে বিজেপি।
দেশে যখন অপুষ্টি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের মতো সমস্যাগুলি মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে কেন্দ্রের সরকার তখন সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, ৩৭০ ধারা নিয়ে মাথা ঘামাতে ব্যস্ত। অথচ, তারা ২ কোটি মানুষকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি, বরং সরকারি ক্ষেত্রগুলির বেসরকারিকরণ হয়েছে।
এরপর বিশ্বজুড়ে যখন অতিমারির সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হল, তখন লাল কার্পেটের উপর দিয়ে হেঁটে এলেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘নমস্তে ট্রাম্প’-এ যোগ দিতে। তারপরই শুরু হল লকডাউন। যেভাবে লকডাউন জারি করা হল, তাতে অন্যান্য ক্ষেত্রের পাশাপাশি নিদারুণভাবে বিপর্যস্ত হল চাষের কাজ। কারণ, এপ্রিল-মে মাস বিভিন্ন দানাশস্য, গম, চাল, আলু, চানা চাষের সময়। ঠিক তখনই লকডাউন শুরু হওয়ায় সর্বস্তরের শ্রমিক, কৃষক কাজ হারিয়ে তাঁদের বাড়ি ফিরতে বাধ্য হন। এটাই বোধহয় দেশবিভাগ-উত্তর ভারতে সবচেয়ে বড় অভিনিষ্ক্রমণ (exodus)।
লকডাউন চলাকালীন মালিয়া, রামদেব, মেহুল চোকসিরা কামিয়ে নিল ৬৮০০০ কোটি টাকা, বিপরীতে চাষিদের রোজগার শূন্য হয়ে গেল। তাই কৃষকরা সরকারের কাছে দাবি জানালো যে, প্রত্যেক মাসে তাঁদেরকে পরিবার পিছু ১০০০০ টাকা দিতে হবে, কৃষিঋণ মকুব করতে হবে যাতে তাঁরা আর্থিক ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সঙ্গে দিতে হবে খাদ্য সুরক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য সহায়তা— যার কোনোটিই কেন্দ্রীয় সরকার দেয়নি। উল্টে, জুনের প্রথম সপ্তাহে কেন্দ্র তিনটি নতুন কৃষি আইন নিয়ে এল। যার মূল উদ্দেশ্য হল—
এক) আক্ষরিক অর্থেই নিয়ন্ত্রিত বাজার প্রথা (regulated market system) বা মাণ্ডিকে নির্মূল করা ও কর্পোরেটরাজকে ফুলে ফেঁপে উঠতে সাহায্য করা।
দুই) অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনে রদবদল ঘটানো হল। যার ফলে তৈলবীজ, আলু, পেঁয়াজের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আর অত্যাবশ্যকীয় পণ্য রইল না। কর্পোরেট হাতে তুলে দেওয়া হল যথেচ্ছভাবে বিপুল পরিমাণ শস্য মজুত করার ক্ষমতা এবং সেই সঙ্গে কালোবাজারির অবাধ সুযোগ। ফলস্বরূপ, মূল্যবৃদ্ধি ঘটল ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ল।
তিন) এই আইনের প্রতিফলে কর্পোরেট জগৎ কৃষকদের চুক্তিচাষে বাধ্য করবে। এই চুক্তিচাষে কোনো কৃষক রাজি না হলে বা কৃষি সংক্রান্ত কোনো সমস্যার উদ্রেক হলে কৃষকরা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবে না।
আজকের এই বৃহত্তর আন্দোলন এই সমস্ত অসম, অনৈতিক জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধেই। তাই, কৃষিবিল জারি করার ঠিক একদিনের মাথায় সারা দেশের প্রায় ৩৬০০টি জায়গায় এই অধ্যাদেশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সবথেকে বড় কথা অত্যন্ত তড়িঘড়ি একটি অগণতান্ত্রিক উপায়ে এই কৃষি আইন পাশ করানো হয়েছে। কারণ, যে সময়ে বিলটি সংসদে উত্থাপিত হয়েছিল, তখন সংসদের ৮ জন সদস্যকে বরখাস্ত করে রাখা হয় (যাঁর মধ্যে ছিলেন কিষান সভার যুগ্ম সভাপতি কমরেড কে.কে.রাগেশ এবং সিটু (CITU)-র সভাপতি এলামারাম করিম) যাতে তাঁরা বিলটির কোনো ভাবেই বিরোধিতা করতে না পারেন।
একদিকে যেমন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organisation) কেন্দ্রকে চাপ দিয়েছিল কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ করার জন্য, অন্যদিকে মোদির তত্ত্বাবধানে শান্তাকুমার কমিটি সুপারিশ করেছিল যে, ন্যূনতম সহায়কমূল্য তুলে দেওয়া হোক। কারণ দেশে যত কৃষক আছে, তার মাত্র ৬ শতাংশ কৃষক এর থেকে সুবিধা পান। এই প্রস্তাবগুলিকে পরবর্তীকালে মাথায় রেখেই তিনটি নয়া কৃষি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে এবং খুব সুপরিকল্পিতভাবে চমক দেবার জন্যই বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী (যদিও প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য গুজরাট প্রধানমন্ত্রী ফসলবিমা যোজনা থেকে কোনো লাভজনক সুবিধা না পেয়ে নিজেদের নাম তুলে নিয়েছে) অথবা দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নাম সংযুক্ত করা হয়েছে।
শুধু ন্যূনতম সহায়কমূল্য তুলে দেওয়াই নয়, তার সঙ্গে গরিব চাষিদের কেন্দ্র কর্তৃক প্রদেয় বিদ্যুতের ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণ হয়েছে, যার ফলে কৃষক আন্দোলন ইতিবাচক রূপ ধারণ করেছে। পক্ষান্তরে কেন্দ্র কখনও এই আন্দোলনকে পাঞ্জাব-কেন্দ্রিক সমস্যা, কখনও খলিস্তানিদের কীর্তিকলাপ বলে চিহ্নিত করতে চেয়েছে। কিন্তু, কেন্দ্রের আনীত এই অভিযোগ যখন ধোপে টেকেনি এবং আন্দোলনও স্তিমিত হয়নি, তখন বলা হল কৃষক আন্দোলনে ইন্ধন দিচ্ছে চিন ও পাকিস্তান, অথবা এসব শহুরে নক্সালদের কার্যকলাপ, বা ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’-এর চক্রান্ত। অথচ, আজ কে না জানে অমিত শাহ, মোদিরাই এই ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্রমাগত প্রচার চালাচ্ছেন যে, কেরালাতে কৃষিপণ্য বাজার কমিটি (APMC-Agriculture Market Produce Committee) নেই, মাণ্ডি নেই, তাহলে ওখানে আন্দোলন হচ্ছে না কেন? হয় তিনি কেরালার কৃষিকাজ সম্পর্কে একদমই অবগত নন, নচেৎ ইচ্ছাকৃত ভাবে ছলনার আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতবাসীকে বিপথে চালিত করবার উদ্দেশ্যে। কেরালায় এল.ডি.এফ সরকার তাদের রাজ্যবাসীকে ‘ফুড কিট’ দিয়েছে। পঞ্চায়েত সাহায্য করেছে ভর্তুকি দিয়ে। কেরালার সরকার ১৬টি শস্যের উপর সর্বোচ্চ ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করেছে কৃষকদের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে, যা ভারতে প্রথম কোনো রাজ্য করেছে। কেরালায় যে বাগিচা কৃষি, যেমন- চা, কফি, মশলাপতি, নারকেল, জায়ফল, কাজু ইত্যাদি চাষ হয়, তার বাজার নিয়ন্ত্রিত হয় কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ কমোডিটি বোর্ড দ্বারা, যে বোর্ডটি বিগত তিরিশ বছর ধরে নতুন নতুন অর্থনীতির প্রকোপে পরে ধুঁকছে। ফলত, চাষিরা চরম অর্থসংকটের মুখে পড়েছে। আর আগুনে ঘি পড়েছে যখন বিজেপি এবং কংগ্রেস সরকার মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করে চাষিদের ওপর সেই নিয়ম চাপিয়ে দিয়েছে।
এভাবেই রাষ্ট্র বারবার বিভিন্ন উপায়ে কৃষকদের দাবি দাওয়া জোর করে অবদমন করে রেখেছে। জলকামান, কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে কৃষকদের প্রতিহত করতে চেয়েছে। এমনকি কৃষকদলের নেতাকে গ্রেফতার করে আন্দোলনের গতি রুদ্ধ করতে চেয়েছে। আশার কথা, এতদসত্ত্বেও আন্দোলন চলছে নয়া কৃষি আইন, বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহারের দাবিতে। মহারাষ্ট্রের কৃষকদের দীর্ঘ পদযাত্রার পর এটাই সবথেকে বড় আন্দোলন। তাই এই আন্দোলনকে নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক আন্দোলন বলা চলে। সরকার যতই অনড় মনোভাব নিয়ে কৃষি আইন আঁকড়ে বসে থাকুক এবং কর্পোরেট রাজের হাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে বদ্ধপরিকর হোক, কর্পোরেট লুটের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ যে সংহতি দেখাচ্ছেন,যে সংঘবদ্ধতার প্রমাণ রাখছেন, তাকে পাথেয় করে আমাদের আগামী দিনের লড়াইতে এগিয়ে যেতে হবে।
সৌজন্যে: রাইট টু এডুকেশন ফোরাম ও জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ একাডেমিসিয়ান্স