স্বাগতা রায়
স্বার্থের স্বরচিত ক্রমবর্ধিত জালে প্রতিমুহূর্তে নিজেদের জীবনকে আমরা এখন এতটাই জড়িয়ে ফেলেছি যে, অন্যকে মনের কোণে একচিলতে জায়গা পর্যন্ত দিতে আজ আমরা নারাজ। পাশে দাঁড়ানো বা সাহায্য তো দূরের কথা, চারপাশের মানুষের সমস্যা, তাদের সংকট আমাদের ভাবিত করে না। স্মার্টফোন-ওয়েবসিরিজ-ওয়ার্ক ফ্রম হোম প্রভৃতি অজুহাতের আড়ালে নিজেদের ক্রমশ গুটিয়ে ফেলছি। নিরন্তর শম্বুকবৃত্ত গোটানোর খেলায় মেতে গিয়ে ভুলে যেতে চাই যে, আমার ছোট্ট পরিধির ছোটো ছোটো সমস্যাগুলো ছাড়াও বৃহত্তর সমস্যার অস্তিত্ব। কাজেই যাকে আমি কৃষকের সমস্যা ভাবছি, কেবলমাত্র দেশের অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত এক জটিল গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ভাবছি,আদতে কিন্তু তার শেকড় আমাদের প্রত্যেকের অস্তিত্বের সঙ্গেই জড়িত।
২
প্রাক-স্বাধীন ভারতবর্ষের দিকে তাকালে ভূমিব্যবস্থায় গৃহীত নীতিগুলির মধ্যে জমিদারি প্রথা (চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, ১৭৯৩), রায়তওয়ারি প্রথা (১৮২০) আর মহলওয়ারি প্রথা (১৮২২) বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রাক্-ব্রিটিশ ভারতে মোগল আমলে আকবরের সময়কালে টোডরমল এবিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ (দশশালা ব্যবস্থা ইত্যাদি) গ্রহণ করলেও ব্রিটিশ শাসকরা ভারতীয় ভূমিব্যবস্থাকে নিজেদের মতো করে সুবিন্যস্ত করতে চেয়েছিলেন। মূল লক্ষ্য ছিল প্রবর্তিত ব্যবস্থা ব্যক্তিস্বার্থের খাতিরে চাষ-আবাদ উৎপাদন হারের বৃদ্ধি ঘটাবে ও ইংল্যাণ্ডের মতোই কৃষি-বিপ্লবের সূচনা ঘটাবে, শ্রেণিস্বার্থের কারণে উদীয়মান জমিদাররা ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার ভিতকে দৃঢ় করবে, রাজস্ব আদায়ে দক্ষতার অভাব অর্থাৎ চাহিদা পূরণে অক্ষম হলে জমিদারি বা মহলের নিলামের ব্যবস্থা তো রইল। স্বার্থপূরণের ভিত্তিতে প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বাস্তবে আরোপিত হলে তাই একটা বড় বদলের মুখোমুখি হতে হয়েছিল ভূমিব্যবস্থা ও কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনকে, মূলত কৃষকশ্রেণিকে। এবং ভূমিব্যবস্থা নিয়ে ক্রমাগত চলতে থাকা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রয়োগ এই বদল তথা আলোড়নকে জিইয়ে রেখেছিল। অন্যায় শোষণের প্রতিকার ও বাঁচার জন্য ন্যূনতম অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে সংগঠিত কৃষক আন্দোলনগুলি (চম্পারন সত্যাগ্রহ ১৯১৭, খেদা সত্যাগ্রহ ১৯১৮, বারদৌলি সত্যাগ্রহ ১৯২৮, মোপলা বিদ্রোহ ১৯২১, তেলেঙ্গানা কৃষক বিদ্রোহ ১৯৪৬-৫১, তেভাগা আন্দোলন ১৯৪৬-৪৭ প্রভৃতি) ইতিহাসের পাতায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করলেও কী প্রাক্-স্বাধীন ভারত বা স্বাধীন ভারত— কৃষিকাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত মানুষ অর্থাৎ যাঁদের একমাত্র জীবিকা কৃষিকাজ— কৃষক অভাবের জীবন থেকে মুক্তি লাভ করেনি কখনও।
৩
১) দ্য ফার্মারস’ প্রোডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রোমোশন অ্যান্ড ফেসিলিটেশন) অ্যাক্ট
২) ফার্মারস’ (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রোটেকশন) এগ্রিমেন্ট অন প্রাইস অ্যাস্যুরেন্স অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস অ্যাক্ট, ২০২০
৩) এসেন্সিয়াল কমোডিটিস (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০২০
অনেকেই সহজবোধ্য ভাষায় বিল তিনটির সারবস্তু ব্যাখ্যা করেছেন, চর্বিতচর্বণে কাজ নেই। সংক্ষেপে বলে নেওয়া যাক। প্রথম বিলটি কৃষকদের উৎপাদন ও উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রির ক্ষেত্রে পূর্বের থেকে বহুগুণ বেশি সুযোগের প্রসার ঘটাবে, ই-কমার্স ও ই-ট্রেডিং এর সুবিধা এবিষয়ে তাঁদের সহায়ক হবে। একইসঙ্গে রাজ্য সরকারের এবিষয়ে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রেও পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকছে, যাতে কৃষকরা ‘স্বাধীন’-ভাবে তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে মুনাফা বা লাভের মুখ দেখতে পারেন। দ্বিতীয় বিলটিতে কৃষকরা কৃষিপণ্য বিষয়ে ক্রেতার সঙ্গে সুপরিকল্পিত চুক্তিতে বদ্ধ হতে পারেন, যেখানে কৃষি-ব্যবসায়ীরা কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের (সার ইত্যাদি) ব্যয়ভার বহন করবে এবং সেটি একটি বিরোধ-নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। তৃতীয় বিলটিতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যদ্রব্যের তালিকায় কিছু বদল আনা হয়েছে এবং তার সঙ্গে অবাধ মজুতদারি ও প্রয়োজনমতো মূল্যবৃদ্ধি বরাদ্দ থাকছে।
এখন, মস্তিষ্ক পদার্থটি একেবারে অকেজো না হলে বা একান্ত না বোঝার ভান করলে, একটি বিষয় একেবারে গোড়ায় পরিষ্কার যে, আর যারই লাভ হোক না কেন, কৃষক বা কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের এই বিলগুলি থেকে ছিটেফোঁটাও লাভের সম্ভাবনা নেই। প্রথমত, বড়ো কৃষি-ব্যবসায়ী তথা কর্পোরেটের সঙ্গে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করে মুনাফা অর্জনের স্বপ্ন একমাত্র ছেলেভুলানো রূপকথাতেই সম্ভব। আর সরকারের তরফ থেকে হস্তক্ষেপের অপসারণ এক অর্থে ভর্তুকি ব্যবস্থার অবসানের ইঙ্গিতও বটে। দ্বিতীয়ত, যতই সুপরিকল্পিত চুক্তির কথা বলা হোক্ না কেন, আসলে এটি ক্রেতাপক্ষের, এক্ষেত্রে কর্পোরেট স্বার্থকেই রক্ষা করবে, ফলে বিরোধের সম্ভাবনা থাকলেও নিষ্পত্তির কোনো প্রশ্নই নেই। তৃতীয়ত, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যদ্রব্যের তালিকায় রদবদল অদূর ভবিষ্যতে বাজারকে কতখানি প্রভাবিত করবে তা অনুমান করতে খুব কষ্ট হওয়ার কথা নয়। যে দেশে অতিমারির ভয়কে পিছনে ফেলে দৈনিক রুজির তাড়না মানুষকে ভিড়ে ঠাসা বাসে নিত্যযাত্রায় অকুতোভয় করে তুলতে পারে (বর্ষশেষ উদযাপনে উৎসাহী মানুষরা নন কিন্তু), ১৫ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীও জরুরিকালীন ‘অনলাইন পড়াশোনা’-র আওতায় আসতে পারে না (মাইনে,স্মার্টফোনের অভাব, ইন্টারনেট পরিষেবা, ড্রপ আউটের অন্যান্য কারণ তো আছেই) –– সেখানে অত্যাবশ্যকীয় নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যকে ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্যদ্রব্যের তালিকা’ থেকে সরিয়ে দিলে অন্যায় মূল্যবৃদ্ধি যে আসন্ন এবং সেক্ষেত্রে অচিরেই অনেক পরিবারের অনাহারে পৃথিবী থেকে মুছে যাওয়ার বাস্তব সম্ভাবনা থেকেই যায়।
তিনটি বিল প্রত্যাহারের আর্জি নিয়ে কৃষকরা রাজধানীর বাইরে যে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন আসলে তা এক প্রতিরোধের তথা আত্মরক্ষার বর্ম। সেই প্রতিরোধভূমিতে মা যোগ দিয়েছেন তাঁর সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্যে, পরিবারের পাশে অকুতোভয়ে দাঁড়িয়েছেন ছাত্র-ছাত্রীরা, নিজেদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অদম্য তাগিদই তাঁদের প্রেরণা একথা আর বলবার অপেক্ষা রাখে না। সেই প্রতিরোধভূমিতে মানুষ নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখছেন, যেখানে তাঁদের ভালোভাবে বাঁচার আশ্বাস থাকবে। সরকার তাঁদের দাবি সনদ মেনে নেবেন কি না, তার উত্তর অজানা। সরকার তাঁর অহং রক্ষা করতে তৎপর। অধ্যাদেশ না ফেরাতে জেদ ধরে আছেন। অথচ, আইন প্রণয়ন-সংশোধন একটা সচল প্রক্রিয়া, অস্ত্যর্থক গতিশীলতাই তার ভিত্তি, বৃহৎ স্বার্থের খাতিরে ক্ষুদ্রের অল্পবিস্তর স্বার্থত্যাগ এমনকি লোপ পর্যন্ত মহিমান্বিত হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু আইন যদি দেশের একদল মানুষের একপেশে স্বার্থ পূরণের হাতিয়ারে পরিণত হয়, তখন সেই আইনের প্রতি সমর্থন কেবল মূর্খামিই নয়, ‘পাপ’ও বটে। কেননা, রাজার আদেশ অমান্য যদি ক্ষমার অযোগ্য শাস্তিযোগ্য ‘পাপ’ (এখন তো অপরাধ আর পাপ শব্দদুটি প্রায় সমতুল!!) হয়, তবে সেই রাজাকে পাপের হাত থেকে না বাঁচানোটাও পাপই!
৪
প্রতিদিনের রান্নাঘরকে আমি যতই ব্যক্তিগত পরিসর ভাবি না কেন, আদতে রান্নাঘর কিন্তু তা নয়। কেবল ব্যক্তির আর্থিক সঙ্গতির সঙ্গে সম্পর্কিত বা নির্ভরশীল নয়। ভৌগোলিক অবস্থানগত এবং ঋতু অনুযায়ী সুলভ খাদ্যবস্তু-উপকরণের সুলভতার এক অন্যতম শর্ত হলেও বিশ্বায়ন আর বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির হাত ধরে পৃথিবীর নানা প্রান্তের নানা খাদ্য এবং খাদ্য প্রস্তুতের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বর্তমানে সর্বত্রই সুলভ (কখনো আমদানি, কখনো স্থানীয়ভাবে উৎপাদন )। এছাড়া জরুরিকালীন পরিস্থিতি অতিবৃষ্টিজনিত বন্যা বা অনাবৃষ্টিজনিত খরা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা যুদ্ধ ছাড়াও কীটপতঙ্গের উপদ্রব, মাটির উর্বরতা হ্রাসের মতো কৃষিকাজের ক্ষেত্রে নিত্যনতুন প্রতিবন্ধকতা আত্মপ্রকাশ করে। এই কারণে উৎপাদন হার এক ধাক্কায় অনেকখানি হ্রাস পায়। স্থানীয় অথবা দেশীয় চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে নানা বিচিত্র ও বহুমুখী প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। আর তাই পশ্চিমবঙ্গের এক চাষিকে তার সমকালের ‘স্বাস্থ্য-সচেতন’ ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ফুলকপির পাশাপাশি ‘ব্রকোলি’ র চাষ করতে হয়, যার নামই তিনি হয়তো আজন্মে কখনো শোনেননি, স্বাদ চাখা তো আরো দূরের কথা; সে বস্তুটি কার সঙ্গে খেতে হয় বা কোন্ মশলা দিয়ে রান্না করতে হয় যেমন তাঁর অজানা, তেমনই তার উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় তাপ, আর্দ্রতা, মাটির ধরন, জলের পরিমাণ প্রভৃতি সম্পর্কে অবহিত হতে গেলে তাকে সম্পূর্ণভাবে বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হতে হয়। ক্রমবর্ধমান চাহিদার তালে তাল মেলাতে গিয়ে অনিশ্চয়তা হয়ে ওঠে তার নিত্যদিনের সঙ্গী।
৫
লাভক্ষতির চুলচেরা হিসাবের রাস্তায় ব্যালান্স করে চলতে অভ্যস্ত জীবনযাত্রার অংশীদারিত্বের খাতিরে শৌখিন খাদ্যবিলাসিতার হুজুগে মত্ত আমরা বিস্মৃত হই কৃষক সংকটের গুরুত্ব, গভীরতা। কৃষকশ্রেণির স্বার্থ ও চাহিদাপূরণে ঘাটতি যে অচিরেই খাদ্য সংকটের জন্ম দেবে, সেটা বোঝার জন্য সুগভীর চিন্তার প্রয়োজন নেই, আসন্ন বিপদ প্রতিহত করা, এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা দূরের ব্যাপার, আপন আপন খেয়ালের গণ্ডির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রেখে সেই উপলব্ধিকেও প্রাণপণে দূরে সরিয়ে রেখেছি। বিস্মৃত হয়েছি কৃষিক্ষেত্রে বীজ সংরক্ষণের মতো অত্যাবশ্যকীয় বিষয়টি। ‘ফিউশন’ সংস্কৃতির ঠেলায় হারিয়ে গেছে বহু শস্যের নানা প্রজাতির শরীরী অস্তিত্ব। ফলস্বরূপ আমরা হারাতে থাকি আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানগত খাদ্যাভ্যাস, আঞ্চলিক ও ঋতুভিত্তিক খাদ্য উপকরণ নির্বাচনের যুক্তি, বৈচিত্র্যময় বহুস্তরীয় রন্ধনপ্রক্রিয়ার বিবিধ খুঁটিনাটি। খাদ্যাভ্যাস সংক্রান্ত বিধিনিষেধগুলিকে বিজ্ঞানশিক্ষায় অভাবজনিত কুসংস্কার ভেবে দূরে সরিয়ে রাখি। উত্তর-আধুনিক নাগরিক পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের খ্যাতনামা পদ শুধু পেশাদার রাঁধিয়ের হাতে চেখেই তৃপ্তি হচ্ছেন না,নিজের রান্নাঘরেও তাকে বাস্তবায়িত করার নেশা পেয়ে বসেছে তাঁদের। তাই বিদেশি খাবার, খাদ্য তৈরির উপকরনের গুণকীর্তন করেই ক্ষান্ত হই না, এদেশের খাদ্যবস্তুর গুণাগুণ সম্পর্কে বিদেশিদের মূল্যায়নেও আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা জন্মেছে। এমনকি অসুবিধার অজুহাতে বদলাতে বদলাতে আমাদের রান্নাঘরটিও নকলনবিশির চূড়ান্ত প্রদর্শনী হয়ে ওঠে। আগ্রাসী বিপণন নীতির হাতছানিতে ওঠাবসায় অভ্যস্ত, রঙিন ইশারায় প্রলুব্ধ আমরা নির্বোধের মতো ক্রমাগত হারাচ্ছি নিজ এলাকার সংস্কৃতির ধারক-বাহক চিহ্নগুলিকে, ক্রমাগত হারাচ্ছি বিবর্তনের ধারার মধ্যে দিয়ে পাওয়া নিজ এলাকার সঙ্গে মানানসই জীবনযাপনের ধাঁচটি। বিশ্বায়নের গভীর থেকে গভীরতর গহ্বরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে সেই উপলব্ধির দরজাটুকুও। অথচ, আমরা নিজেরাই জানিনা,আমাদের রান্নাঘরে দখলদারের থাবা ক্রমশ দৃঢ় হচ্ছে।