ডা. স্মরজিৎ জানা
আমাদের সময়ে স্কুল কিংবা কলেজ ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হেডমাস্টার মহাশয় কিংবা প্রিন্সিপালের কাছ থেকে ক্যারেক্টর সার্টিফিকেট জোগাড় করার একটা হিড়িক পড়ে যেত। এইসব সার্টিফিকেট পরবর্তীকালে কোনও চাকরির দরখাস্তে জুড়ে দিতে হবে বলে আমরা জানতাম। বাঁধা গতের ওইসব ক্যারেক্টর সার্টিফিকেটেরই শেষ লাইনটা থাকত ‘হি বেয়ারস্ গুড মরাল ক্যারেক্টার’ অর্থাৎ তার নৈতিক চরিত্র ভালো। তখন এই নৈতিক চরিত্রের বিষয়টা খুব একটা যে বুঝতাম তাও নয়, আর তা বোঝার কোনও দিন চেষ্টাও করিনি। সার্টিফিকেটগুলো ভালো করে গুছিয়ে রেখে দিতাম ভবিষ্যতে কাজে লাগবে বলে। পড়াশুনা শেষ করে তখন আমি অধ্যাপনার কাজে যুক্ত রয়েছি। বলতে গেলে জীবনে সেই প্রথম ‘নীতি-নৈতিকতার’ নতুন পাঠ নিতে হল আমাকে। আর যে কারণে এই নৈতিকতার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলাম তা যে জীবনে কোনও দিন ঘটতে পারে তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।
সময় ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দ, জানুয়ারি, স্থান শহর কলকাতা। ভোরের কুয়াশা তখনও পুরো কাটেনি, তারই ফাঁক দিয়ে সকালের নরম রোদ্দুর শহরবাসীদের ঘরের ছাদ, দেয়াল, জানালা ছাপিয়ে ঢুকে পড়েছে মনের আঙিনায়। আমরা ক-জনা সেদিন তড়িঘড়ি হাজির হয়েছিলাম রাজ্য সরকারের কো-অপারেটিভ বা সমবায় দপ্তরে। আমরা অর্থাৎ অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ্ (যেখানে আমি শিক্ষকতা করতাম)-এর দুজন আর আমাদের সঙ্গে ছিলেন তিনজন মহিলা, যারা পেশায় যৌনকর্মী। অর্থাৎ যেসব মহিলারা যৌন পরিষেবা বিক্রি করে সংসার প্রতিপালন করে। নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই পৌঁছে গিয়েছিলাম, ফলে সমবায় অফিসের সামনে ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করার পর, অফিসের দরজা খোলা হল, তারপর ঘরে ঝাঁট পড়ল, আলো জ্বলল, বাবুর টেবিল ঝেড়ে বেয়ারা যখন খবরের কাগজ, জলের গ্লাস সাজিয়ে দিয়েছে ততক্ষণে মোটামুটি আরও আধঘন্টা কেটে গেলেও আমরা ধৈর্য হারাইনি। প্রায় একমাস হল দরখাস্ত জমা পড়েছে বড়োবাবুর ঘরে। মাঝে বার দুয়েক তদ্বির করার পর অ্যাপয়েন্টমেন্টটা মিলেছে, তাই সবাই উত্তেজনায় ভরপুর, এবার তাহলে সমবায় সমিতি তৈরির অনুমতি মিলবে। বড়োবাবু খবরের কাগজ থেকে চোখ তুলে আমাদের একবার পরখ করে নিলেন, তারপর চোখ নামিয়ে আবার কাগজে মনোনিবেশ করলেন। একটুখানি নীরবতা, ফের আবার চোখ তুললেন তিনি। এবার আস্তে আস্তে তাঁর দৃষ্টিটা প্রসারিত করলেন দূরের জানলার দিকে। আমরা নিস্তব্ধ। মেঝেতে পিন পড়লেও শব্দ শোনা যাবে, আমি তখন একটু উশখুশ করতে শুরু করেছি। এবার তিনি নীরবতা ভঙ্গ করে বেশ মোলায়েম স্বরে শুরু করলেন, ‘আপনাদের দরখাস্ত সবই ঠিক আছে দেখেছি, ফর্মটা বোধহয় আপনারা ভরে দিয়েছেন?’ বলে তিনি আমাদের দিকে চোখ ঘোরালেন। তারপর একটুখানি বিরতি নিয়ে…… ‘তবে এই সমবায় গড়ার অনুমতি আমরা দিতে পারব না’। আমরা তখন প্রায় সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠেছি…… কেন? কেন? …… এবার তিনি বিস্তারিত হন – ‘সমবায় আইন অনুযায়ী সমবায় যারা গঠন করবেন তাদেরকে চরিত্রবান হতে হবে’। আমরা স্তদ্ধ ও হতবাক। নীরবতা ভাঙতে আমিই এবার শুরু করলাম, ‘ও আচ্ছা আপনি তাহলে বলছেন, প্রত্যেকের নামে একটা ক্যারেক্টর সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে? কিন্তু এরা তো সেই কবে স্কুল ছেড়ে দিয়েছে। অনেকে স্কুলের পড়াশুনা শেষও করেনি, এখন কি আর হেডমাস্টারমশাই ওদের ক্যারেক্টর সার্টিফিকেট দেবেন?’ আমার কথা শেষ হতে না হতেই ভদ্রলোক ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, ‘না না আমি সে সব সার্টিফিকেটের কথা বলছি না, বেশ্যাদের আলাদা কোনও সার্টিফিকেটের দরকারও নেই, তারা তো সব যৌনকর্মী পরিচয় দিয়ে যখন ফর্ম ভর্তি করেছে তখন আর নতুন করে “চরিত্রের” শংসাপত্রের দরকার পড়ে কি?’ আমাদের মাথায় তখন আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। সব কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে, কী উত্তর দেব ভেবে কুল পাচ্ছিলাম না। সেই অবস্থায় যৌনকর্মীদের মধ্যে একজন আমতা আমতা করে বলতে শুরু করল ‘আমাদের দোষটা কী শুনি?’ সঙ্গে আর একজন যোগ করল, ‘আমরা কি চুরি-চামারি করি, নাকি ঘুষ খাই তাহলে……’। সত্যি কথা বলতে কি, সেদিনই প্রথম এই ‘নৈতিক চরিত্রের’ বিষয়ে আমার জ্ঞানচক্ষু খুলেছিল। বড়োবাবু চোখ কটমট করে যেভাবে তাকালেন তাতে আর কথা বেশিদূর এগোয়নি। তবে যৌনকর্মীরা সেদিন ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এলেও থেমে থাকেনি। যে বিতর্ক তারা সেদিন সমবায় দপ্তরে তুলেছিলেন তা গড়াতে গড়াতে একদিন পৌঁছে গিয়েছিল সমবায় মন্ত্রীর দোরগোড়া পর্যন্ত। নীতি নৈতিকতার এই বিতর্ক যৌনকর্মীদের ধমক দিয়েও থামানো যায়নি। যৌনকর্মী আর সমবায় দপ্তরের মধ্যেকার এই বিতর্ক চলেছিল টানা কয়েকমাস। যৌনকর্মীদের সোজাসাপটা যুক্তি ছিল ‘যখন গতর খাটিয়ে শ্রম দিচ্ছি, কাস্টমারকে পরিষেবা বিক্রি করছি তখন কোন্ যুক্তিতে আমরা “চরিত্রহীন”?’ আমরা কাস্টমারদের বিনোদন দিয়ে থাকি, জোরজুলুম করি না, খুন-খারাপি করি না, লোক ঠকাই না, আমরা রোজগার করি পেট ভরানোর জন্য, ছেলেমেয়ে মানুষ করার জন্য। আমরা সংসার চালাই নিজেদের রোজগারের পয়সা দিয়ে, তাহলে দোষটা কোথায়?
বড়োবাবু এসব শুনতে নারাজ থাকলেও ওই দপ্তরের অনেকেই যৌনকর্মীদের জীবন-জীবিকার বিষয়গুলো বুঝতে চেয়েছেন ধীরে ধীরে। অনেকে প্রচণ্ড উৎসাহের সঙ্গে জানতে চেয়েছেন তাদের জীবন আর পেশাকে ঘিরে নানান ধরনের সংঘাত আর সমস্যার কথা। আর সেই আলোচনার অবসরে তাদের অনেকেই ধীরে ধীরে সরে এসেছিল যৌনকর্মীদের বিষয়ে তাদের পুরানো ধ্যান-ধারণা থেকে। ক্রমশ তাদের মতামত গড়ে উঠল যৌনকর্মীদের সপক্ষে। তাদেরই একজনের পরামর্শ এবং সাহায্যের হাত ধরে শেষ পর্যন্ত তারা পৌঁছে গিয়েছিল তৎকালীন সমবায় মন্ত্রী সরল দেবের চেম্বারে। মন্ত্রী মহোদয় তাদের উৎসাহ দেখে রাজি হয়ে গেলেন সমবায় খোলার অনুমতি দিতে। কিন্তু সরকারি দপ্তরের সেই অফিসার বলে উঠলেন, ‘স্যার ব্যাপারটা তাহলে কিন্তু আইন অমান্যের পর্যায়ে চলে যাবে…। আইনের অমুক ধারা অনুযায়ী শুধুমাত্র চরিত্রবান লোকেদের জন্য সমবায় গড়ার কথা বলা হয়েছে। এই দেখুন না, লেখা আছে সমবায়ের সদস্যদের গুড মরাল ক্যারেক্টরের অধিকারী হতে হবে…’ ইত্যাদি।
মন্ত্রী বললেন, ‘কিন্তু তোমাদের আলোচনার সূত্র ধরে তো সৎ চরিত্রের সংজ্ঞা নিরূপণ করা যাচ্ছে না, আর ওরা যেসব বিতর্ক তুলছে সেগুলোও তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তাহলে উপায়টা কী?’ বার কয়েক আপন মনে মাথা নাড়লেন মন্ত্রী মহোদয়। তারপর চেয়ার ছেড়ে তড়াক করে দাঁড়িয়ে পড়ে বললেন, চরিত্রের সংজ্ঞা ঠিক করা সমবায় দপ্তরের কাজ নয়। সমাজ কাকে চরিত্রবান আর কাকে দুশ্চরিত্রের বলে চিহ্নিত করবেন সেটা সমাজ সংস্কারকদের ব্যাপার। এই বিভাগের মন্ত্রী হিসেবে আমার কাজ হল সমবায় আন্দোলন রাজ্যে কী করে ছড়িয়ে দেওয়া যায় সেটাই দেখা, আর সে ব্যাপারে সাহায্য করা। যৌনকর্মীদের সমবায় গড়ার অনুমতি দিলে কি আর মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে? কিন্তু বড়োবাবু নাছোড়বান্দা, তাই শেষমেশ সরল দেব মহাশয় এসব বাধাবিপত্তি কাটাতে রাজ্য সরকারের সমবায় আইনের ওই বিশেষ ধারাটি বিধানসভায় পেশ করে ওই ধারাটিই আইন থেকে মুছে দিলেন। অনেকে হয়তো ভাবছেন কাজটা খুবই ছোট্ট, কিন্তু মন্ত্রী মহোদয়ের এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের ফলে এ রাজ্যে জন্ম নিতে পেরেছিল যৌনকর্মীদের জন্য এবং যৌনকর্মীদের পরিচালিত প্রথম সমবায়। এই সমবায় শুধু এদেশে নয়, এশিয়া মহাদেশে যৌনকর্মীদের মধ্যে গড়ে তোলা প্রথম সমবায়। এই সমবায় সংস্থা যে পরিবর্তনের হাওয়া বয়ে এনেছিল এ রাজ্যের যৌনকর্মী ও তাদের পরিবারের জীবনে এবং সংস্কৃতিতে তা নিয়ে এক দীর্ঘ আলোচনার অবকাশ রয়েছে। তবে এই সমবায়ের তুলনা সারা পৃথিবীতে আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই বিচারে নিঃসন্দেহে বলা যায়, যৌনকর্মীদের এই সমবায় সংস্থা, যার নাম ‘উষা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’, যৌনকর্মীসহ সমস্ত সীমান্তবর্তী মানুষদের আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা।
‘উষা’-র বিষয়ে ঢোকার আগে প্রথমেই জেনে নেওয়া দরকার কেন সেদিন এ রাজ্যের যৌনকর্মীরা নিজেদের সমবায় গড়তে এত উদগ্রীব হয়েছিল। এর পেছনে আরও একটা ঘটনা রয়েছে। সোনাগাছিতে এইচআইভি/এডস রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি যা অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথের মাধ্যমে পরিচালিত হত, সেই প্রোজেক্টের নীতি নির্ধারকেরা এদেশে প্রথম যৌনকর্মীদের ট্রেনিং দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে গড়ে তুললেন। তাদের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘পিয়ার এডুকেটর’। সেদিন অবশ্য অনেকেই এসব অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা দেখে ভ্রু কুঁচকে, ঠোঁট বেঁকিয়ে বলেছিলেন, এসব করে নাকি ‘বেশ্যাদের তোল্লা’ দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন, ‘বেশ্যাদের এ ভাবে মাথায় তুললে নাকি দেশ রসাতলে যাবে। ডান-বাম-মধ্য প্রায় সবপন্থী মানুষদের একটা বড়ো অংশের মধ্যে ছিল ছি-ছি ভাব। কেউ কেউ আরও একধাপ এগিয়ে নিজেদের মনের কথা বলে ফেলেছিলাম ‘বুঝলাম এডস না হয় একটা ভয়ঙ্কর রোগ। কিন্তু সেটা রুখতে এতটা নীচে নামতে হবে?’ সরাসরি না বললেও এই বক্তব্যের অর্থ হল যৌনকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সমস্যায় মাথা গলানো একটা ‘নীচুমানের কাজ’। এ ব্যাপারে বিদ্বজ্জনেদের প্রশ্ন করলে তাদের বাঁধা বুলি ছিল, আসল কাজ হল মেয়েদের এই পেশা থেকে উদ্ধার করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, কারণ সেটাই হলো উত্তরণের সঠিক পথ…। এসব মানুষজনের সঙ্গে অবশ্য বেশ্যাদের কোনও যোগাযোগ ছিল না (যদি থেকেও থাকত তা ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ)। কিন্তু তারাই এদেশে এদের বিষয়ে ‘বাদ’ মতবাদ তৈরি করেন, পরোক্ষে চাপিয়ে দেন নিজেদের অবস্থান থেকে। তাই ওই সময়ে যৌনকর্মীদের সমবায় সমিতি তৈরি করার কাজটা খুব একটা সহজ ছিল না। যৌনকর্মীদের রোজগার এবং রোজগারের টাকা কোথায় কীভাবে থাকে, কে কী ভাবে টাকা নয়ছয় করে সে সব নিয়ে বিদ্যেবাগীশদের কোনও মাথা ব্যথা ছিল না, রাখার প্রয়োজনও বোধ করেননি।
সে যাই হোক, ওই সময় ‘চরিত্রহীন’ যৌনকর্মীরা কোনও ব্যাংকে ঢোকার সাহস পেতেন না। অবশ্য তাদের মধ্যে দু-একজন দু-একবার যে ব্যাংকে ঢুকে অ্যাকাউন্ট খোলার চেষ্টা করেননি তাও নয়। তবে তাদের প্রথমবারের অভিজ্ঞতা এমনটাই ছিল যে দ্বিতীয়বার সেদিকে পা মাড়াবার চিন্তাও তারা করেননি। যেভাবে ব্যাংকের কর্মীরা তাদের নিয়ে হাসি-মশকরা করত, সে সবের কিছু খণ্ডচিত্র যেদিন পিয়ার এডুকেটররা আমাদের শোনালেন, তাতে বিষয়টা যে কী ধরনের অপমানকর হয়ে থাকে তা জেনে আমাদের কারুরই ভাল লাগেনি। এছাড়া ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খুলতে চাই পরিচয়পত্র — তা সে বাড়িভাড়ার রসিদ, ইলেকট্রিকের বিল কিংবা রেশন কার্ড যাই হোক না কেন, তখনকার দিনে যৌনকর্মীদের কারুর কাছেই তা থাকা সম্ভব ছিল না। গ্রাম থেকে চলে আসা যৌনকর্মীরা শহরে এসে রেশন কার্ড তৈরির হ্যাপাতে ঢুকতে উৎসাহ দেখাতেন না। একে তো নতুন জায়গা, জানাশোনা কোনও লোকজন নেই, কোথায় কার কাছে যেতে হবে, কীভাবে কথা বলতে হবে এসব তাদের জানার কথা নয়। আর যৌনপেশার চাপে সে ফুরসতই বা কোথায় ! দ্বিতীয়ত এদেশে আইন অনুযায়ী (যার নাম হল ‘ইটপা’ বা ‘আইটিপিএ’) যৌনপেশার জন্য কেউ বাড়িভাড়া দিতে পারেন না, কারণ আইনত তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত। যে কারণে এলাকার বাড়ির মালিকেরা কোনও যৌনকর্মীকে বাড়িভাড়ার রসিদ কিংবা সাব-মিটার বসিয়ে ইলেকট্রিসিটির বিলে যৌনকর্মীদের নাম তোলার রাস্তায় যেত না। এদের স্বল্প কিছুজনার ভোটার কার্ড গ্রামের বাড়ির ঠিকানায় থাকলেও শহরে এসে নতুন করে তা বদলানো বা তৈরি করার রাস্তায় কেনই বা যাবে তারা? আর কে তাকে এই ব্যাপারে সাহায্য করবে, কার-ই বা দায় পড়েছে এসব কাজে। এলাকার বাবু, মস্তান, দালাল, বাড়িওয়ালা থেকে শুরু করে শহরের বিদ্যাবাগীশ বাবুমশাই কিংবা বিপ্লবের আঁচ পোহানো নানান রঙের বিদ্রোহীদের এ ব্যাপারে কোনও আগ্রহ ছিল না, আর তা না থাকারই কথা, বলা বাহুল্য ওই পেশায় নিযুক্ত মেয়েদের কোনও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল না। তা হলে কীভাবে তারা তাদের রোজগারের টাকা-পয়সার জমাতেন? এবং যখন ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ত, তখন কোথায় বা কার কাছ থেকে তারা কীভাবে ঋণ নিতেন? এইসব বিষয়ে জানার পর সত্যি বলতে কি, আমাদের চক্ষুও চড়কগাছ হল।
( কৃতজ্ঞতা : দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি )