‘পরিচয়’ যখন ‘অন্য যৌনতা’-র 

জয়দীপ জানা (লিখন সহায়তা : দেশপ্রিয় মহাপাত্র) 

যৌনতা কখনোই কারো পরিচয় হতে পারে না। তাত্ত্বিকরা বলে থাকেন সেক্সুয়ালটি ফ্লুইড। বাস্তবিক আমাদের সমাজে কজন মানুষ নিজের সেক্সুয়ালিটি নিয়ে স্বচ্ছন্দ, নিঃসন্দেহ, এবং সঠিক ধারণা পোষণ করেন। কিছুকাল আগে পর্যন্ত ৩৭৭ ধারার মতো আইনি অসহযোগিতা একজন সমকামী মানুষের সুরক্ষাও যেখানে নড়বড়ে করে রেখেছিল, সেখানে দুয়ের জয়গান গাওয়া পৃথিবীতে নিজেকে বুঝতে পেরে সঠিক(?) সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারা খুব সহজ ছিল না সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ  নিশ্চয়ই নেই। 

আজ ৩৭৭ পরবর্তী সমাজেও পুরুষ পুরুষকে ধর্ষণ করবে এটা কজন ভাবতে পারে। মানসিক ধর্ষণ যে প্রতিনিয়ত হতে থাকে তার স্বীকার সমাজ আজও করে না! 

একজন শিশুর মনের বিকাশ যে সকল ফ্রেম অফ রেফারেন্স নিয়ে গড়ে ওঠে, যে সকল অনুভূতি নিয়ে সে বেড়ে ওঠে তার ওপরেই অনেকাংশে নির্ভর করে বলেই মনে করা হয়। কিন্তু যদি বেড়ে উঠতে গিয়ে যখন একজন ছেলের শরীর নিয়ে তথাকথিত মেয়েদের মতো হয়ে উঠতে চায় বা মেয়েদের সাজপোশাককে আঁকড়ে ধরতে চায়, সবার প্রথমে পরিবারের লোকজনই সেখানে যে ধরনের মন্তব্য করে (কখনও কখনও তো এমনও শুনতে হয়, “চাইয়াছিলাম পোলা, এহন পোলা কয়, আমি মাইয়া”, আবার কখনও শুনতে হয় “এক তরকারি নুনে পোড়া”) তার বিরূপ প্রভাব যে মনোবিকাশের অন্তরায় সে শিক্ষা পরিবারের মধ্যে কে দেবে!!! 

প্রতিনিয়ত আত্মপরিচয়ের দ্বন্দ্বে মন হয় ক্ষতবিক্ষত। নিজেকে বাকিদের সাথে মেলাতে না পারা, স্কুলের বন্ধুদের কাছে অন্যরকম, নিজেকে কেমন যেন এলিয়েন মনে হয়! সমলিঙ্গের প্রতি ভালো লাগা তো কোনও মতেই প্রকাশ করা যাবে না। লোকে কী বলবে ভাবতে ভাবতেই হারিয়ে যাওয়া… 

আত্মপরিচয়ের টানাপোড়েনে কেউ যদি মনে করে মনটাই তো সব। মনে মনে ভাবে যদি নিজেকে পালটাতেই হয় তবে না হয় শরীরের লিঙ্গচিহ্নগুলোকে বদলে ফেললেই তো হয়। লিঙ্গচিহ্নগুলো বদলটা চাইলেই তো আর হাতের মোয়ার মতো হয় না। একাধারে তা যেমন সময়সাপেক্ষ তেমনি ব্যয়বহুল। যেমন পুরুষলিঙ্গ ঢাকতে গিয়ে শারীরিক কসরত ও যন্ত্রণা তেমনি মহিলা শরীরে তথাকথিত মহিলা চিহ্ন ঢাকতে শারীরিকভাবে যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে মনের ওপর চাপ স্বীকারের যন্ত্রণায় অবসাদ, না-জেনে না-বুঝে হরমোন চিকিৎসা, হাতুড়ে নিদান, সর্বোপরি ইম্যাসকুলেশন কিংবা সেক্স রি-অ্যাসাইনমেন্ট সার্জারির পর শরীরের হরমোনাল ইমব্যালেন্সের ফলে যেসকল মুড ডিসঅর্ডার, ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি-ডিসঅর্ডার-এর প্রকোপ ঘটে, পাশাপাশি তারপরেও সমাজ যখন “রূপান্তরিত নারী” বা “রূপান্তরিত পুরুষ” বলে দেগে দেয়, নারী বা পুরুষের সম্মান দেয় না, তখন মনটা হতাশার অন্ধকারে ডুবে যায়। কখনও বা না বুঝে না ভেবে ভালোবাসার মানুষকে সুখী করতে চেয়েই হয়তো এসকল সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর যখন ভালোবাসার মানুষটিই প্লাস্টিক বা নকল শরীরের বদলে আসল শরীর খুঁজতে চায় তখন মনের মধ্যেকার টানাপোড়েনে শুধুই হাহাকার পড়ে থাকে। 

যে-কোনও পরিচিতি তৈরিতে সামাজিক ভাবনার নির্মাণে কোনও না কোনও রাজনীতি স্বমহিমায় বর্তমান তাকে অস্বীকার করা যায় না। রাজনীতি কখনও পুরুষতন্ত্রের কখনও বা সমাজতন্ত্রের। আসলে যে তন্ত্র বা সিস্টেম হোক না কেন সেটার জয়গানেই লুকিয়ে থাকে আসল রাজনীতি। পরিচয় শব্দটাই আসলে অনেক বেশি রাজনৈতিক। এই একটা শব্দ দিয়ে স্থান কাল পাত্রকে দেগে দেওয়ার আগে একবার কি ভাবা হয় সেটা কার ইচ্ছেতে কার জন্য?  

“বনমালী তুমি পরজনমে হইয়ো রাধা”, কেন সুদামা নয়। রাধাকেই এত গ্লরিফাই করার দরকারটা কি? মীরাকেই বা যোগিনী হয়ে যেতে হল কেন? সবটাই কি পুরুষতন্ত্রের রাজনীতি নাকি সমাজতন্ত্রের। চারপাশে শুধুই বাইনারির খোপের রাজনীতি। মাতৃত্ব আর পিতৃত্ব নামক খোপটাতেও কেমন যেন শুধু বায়োলজিকাল নারীপুরুষের একচ্ছত্র অধিকার। পুরুষের মাতৃত্ব কিংবা নারীর পিতৃত্ব এসমাজ না মানলেও সিংগল্ বাবা বা মা আজ সন্তানের সবরকম দায়িত্ব পালন করলেও দিনের শেষে আঙুল তুলে কোনও একটার খামতিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে এ সমাজ দ্বিধা করে না। মনে রাখতে হবে আজও সোশিও-ইকনমিকাল জায়গা থেকে প্রেম নিয়ন্ত্রিত হয়ে গ্লরিফাইড্ হয়। আজও ভ্যালেন্টাইন দিনে নীতিপুলিশি সমস্ত জায়গায় চোখ রাঙায়। আজও ভারতবর্ষে honour killing বিদ্যমান। আর তাই হয়তো আয়ান ঘোষকে নপুংসক হতে হয়। পদাবলির কৃষ্ণ আর শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের কৃষ্ণ তাই এক হয় না। এখান থেকেই হয়তো রবি ঠাকুর লিখেছিলেন “হেরি কাহার নয়ন রাধিকার অশ্রুআঁখি পড়েছিল মনে” নিজেই নিজের উত্তর দিয়েছেলেন, “আর পাব কোথা, দেবতারে প্রিয় করি প্রিয়েরে দেবতা”। আসলে আমরাও সেই “নামে”র ফাঁদে পড়ে বগা হয়ে বেড়াই। সবটুকুই তো আমাদের তৈরি আর তাই যা তথকথিত বহুত্বের যৌনতার মতো না, তা “অন্য যৌনতা” নাম পায়। সবসময় কোনও না কোনও নামের খোপ ফেলাটাও আসলে আমাদের সংকীর্ণতা। রাধা কি নিজে রাধা হতে চেয়েছিলেন? কিংবা মীরা কি নিজেকে মীরা-বাই (দাসী) বানাতে চেয়েছিলেন? প্রেম তো আজীবন প্রেমই হয়। কোনটা প্রণয়সুখ আর কোনটা দাস্যসুখ তা তো সামাজিক নির্মাণ মাত্র। একটা মিথ আর একটা বাস্তবের দড়ি টানাটানি দিয়ে প্রেমের খোপকে গ্লরিফাই করে সুদামা-কে সখা বানিয়ে রাখতে হয়। আজও বহু প্রেম নিজের কাছে নিজেরা স্বীকার না করে বন্ধুত্বের খোপে পড়ে কাঁদে শুধু লোকের কাছে কী পরিচয় দেব বুঝতে না পেরে। আবার আজকের আমরা তো আরও বেশি বুদ্ধিমান, বেশি পলিটিকাল, খোপে পড়তে চাইনা খোপের মধ্যে নিজেকে আটকাতে চাই না নিজের মতো করে মুক্তির খোঁজে ছুটে বেড়াই।  তাই নামহীন সম্পর্ক  “ধামে”র ( খোপের) স্বীকৃতির জন্য কেঁদে বেড়ায়। 

কেউ কেউ বলতেই পারেন, আসলে তো আমরা সবাই মানুষ, তাহলে orientation জনে জনে বলে বেড়াবার দরকার কি? অনেকেই বলেন হয়তো আমার sexual orientation-টা তো আমার identity নয়, আমার শিক্ষা, কাজ, সংস্কৃতি বোধ এসব মিলিয়ে তো আমি একটা পুরো মানুষ। কই “straight” মানুষরা তো নিজেদের straight হওয়ার কথা এমন চিৎকার করে বারবার বলে বেড়ায় না, তাহলে আমাকে কেন এই ঢাক বাজিয়ে চিৎকার করতে হয়? 

একবার ভেবে দেখেন না কেউ “coming out” কাকে/কাদের করতে হয় এবং কেন করতে হয়? “coming out” করতে হয় একজন homosexual (gay, lesbian), bisexual, transgender মানুষকে, কোনও heterosexual, cisgender মানুষকে নয়! কিন্তু কেন? আজও আমার যৌন প্রবণতাকে এবং আমার অসংখ্য ট্রান্স বন্ধুর স্বেচ্ছায় বেছে নেওয়া জেন্ডার identiy-কে  “স্বাভাবিক” বলে স্বীকার করা হয় না, তথাকথিত মূলস্রোতের ওই যে heteronormativity তার বিপ্রতীপে রাখা হয়,কারণ heteronormativity এতটাই normalized যে তার “বনাম (versus)” হয়, আর বনামে যা কিছু তা অস্বাভাবিক ভাবা হয়, আর সে জন্যই গে, হোমো, লেসবি এই শব্দগুলোকে নোংরা শব্দ/গালাগালির রূপান্তর বলে ব্যবহার করা হয়, “straight” শব্দ কে নয় কিন্তু। আর আমার ট্রান্স বন্ধুদের জন্য তো আছেই, হিজড়া, মৌগা, ছক্কা এইসব শব্দের সম্মান। অধিকাংশ তো এটাই জানেন না যে “হিজড়া” একটি পেশাগত পরিচিতি মাত্র।  

তবে এই পেশাটাও কুসুমাস্তীর্ণ  নয়, অনেক কাঁটা আছে। হিজড়া পেশায় মানুষ যায় না যেতে বাধ্য হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছেলেবেলা থেকে মেয়েলি হওয়ার কারণে ব্যুলি হতে হতে স্কুল ছুট হয়ে পড়ায়। পড়াশোনার গণ্ডি সকলের সমান না।  আমরা তথাকথিত পুরুষালি আচরণে অভ্যস্ত সমকামী মানুষও অন্তত সে ব্যুলি বুঝবে না, তার মানে এই নয় তারা নিজেদের যৌনতার কারনে ব্যুলিং এর স্বীকার হয়নি বা হয় না। যেহেতু মেয়েলি হওয়ার ভিসিবিলিটি অনেক বেশি  সেখান থেকেই যন্ত্রণাটাও বেশি। এবার প্রতিটা স্তরে ধাক্কা খেতে খেতে এই মানুষগুলো সমাজের নারী পুরুষের মাঝে ফিট করতে না পেরে একটা সময় দেখেন আর একদল মানুষ আছেন যাদের লোকে সম্মান না করলেও ভয় পায়।পেটের টান, নারী হয়ে ওঠার বাসনা সব মিলিয়ে তারা তখন সেই পেশার মানুষজনদের সাথে একাত্মবোধ  করেন, কেউ কেউ রোজগারের  জন্য পেশাটাকে গ্রহণও করেন। কারণ মেয়েলি পুরুষদের অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে সেই একই শারীরিক  ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়।  

কেউ কেউ মনে করেন হিজড়া পেশার মানুষজনদের কাজ দিলে তারা সে কাজে আসতে চান না। গলদটা গোড়াতেই। যে মানুষটা নিজের বেড়ে ওঠায় পড়াশোনা, শিক্ষাব্যবস্থার অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত  হয়েছেন নিজের সেক্সুয়্যালিটি ও জেন্ডার আইডেন্টিটির কারণে তাকে তথাকথিত আনস্কিলড লেবারের সমতুল্য বেতন দিতে সরকার বা বেসরকারি সংস্থা কেউই প্রস্তুত নন। সঙ্গে ফাউ হিসাবে জোটে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে যে ব্যুলিং তিনি পেরিয়ে এসেছেন তা নতুন করে। এই মানুষগুলো জানেন কেউ তাদের সম্মান দেয় না, ঘৃণা করেন। ভয় দেখিয়ে যা তিনি করতে পারেন শুধু মাত্র ভালোমানুষির তথাকথিত সভ্যতর নতুন জীবনে এসে আবারও বৈষম্যের শিকার হতে তিনি চাইবেন কেন? 

ইনকাম জেনারেশন প্রোগ্রামে স্কিল ডেভেলপ করা হলে কিন্তু সকল রূপান্তরকামী পুরুষরা হিজড়া পেশায় যাবেন না। যত বেশি আমরা ওরা বিভেদটা থাকবে ততবেশি এমপ্যাথি কমবে।  

সুতরাং শুরুটা বোধ হয় তাদের মেয়েলি হওয়াটাকে মেনে নেওয়া দিয়ে করা দরকার। আজও মূলস্রোতের অনেকেই মনে করেন ছক্কা-মওগা-লেডিস বলে যাদের ডাকা যায় দরকারে দু-একবার শোয়াও যায়, তাদের সঙ্গে রাস্তা ঘাটে চললে তাদের যৌনতার পরিচয় লোকে জেনে যাবে। অনেকে এও ভাবে, ছেলে হয়ে দিব্যি ছেলেকে ভালবাসি তার জন্য মেয়েলি হতে হবে কেন? এখান থেকেই লড়াই এর সূত্রপাত। সেই সঙ্গে ট্রান্স জেন্ডার বিল পাশ হওয়ায় অনেকে মনে করি, সব সংরক্ষণ বোধ হয় ওরা পেয়ে গেল। যেভাবে লোকাল ট্রেনে মহিলা কামরায়, বা লেডিস স্পেশাল ট্রেনের ফাঁকা কামরা দেখলে গা চিড়বিড় করে, চাকরিতে এস সি/এস টি সংরক্ষণে গায়ে জ্বালা ধরে এটা ঠিক তেমন। নিজের আচরণটা ঠিক, অন্যেরটা বেঠিক এই ভাবনা থেকে না বেরোতে পারলে কিসসু হবে না। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি যা আমাদের চালিত করে সে কথাই আমরা ক্রমশ কপচে যাব। 

যেদিন আপনাদের পরিচিত বৃত্তের মানুষজন খুব স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন করবে — কি রে তোর গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি বয়ফ্রেন্ড আছে নাকি দুরকমই আছে, আমার কোন ট্রান্সওম্যান বন্ধুকে বলা হবে — ও, তুমি মেয়ে বুঝি, আচ্ছা “মা” কেমন আছ, বা আমার কোন ট্রান্সম্যান বন্ধুকে বলা হবে না যে — যতই চেষ্টা কর “আসল” পুরুষ কি আর হতে পারবি রে, সেদিন এইসব “শিক্ষা, কাজ, সংস্কৃতি আর সকলেই মানুষ আমরা” — এইসব সুললিত বাণী শোনাতে এলে, শুনব মন দিয়ে। কোন heterosexual, cisgender মানুষকে নিজের sexuality, gender identity স্বাভাবিক বলে প্রমাণ করার জন্য চিৎকার করতে হয় না। কারণ ওটাই সমাজচলিত। আমাদের এই চিৎকৃত প্রকাশ বনামের বাকি সব sexual orientation আর gender identity-কে সমাজচলিত করার জন্য। 

মনে রাখা দরকার আমাকে আর আমার বন্ধুদের নিজেদের sexual orientation আর gender identity এর জন্য দেশের সর্বোচ্চ আদালতে মামলা লড়তে হয়েছে। কোনও heterosexual, cisgender মানুষকে নয়। 

এছাড়া আরও একটা বিষয়ের অবতারণাও এ লেখায় দরকার। আমাদের সমাজে কতজন মানুষ তার নিজের জীবনের সমস্ত সিদ্ধান্ত একা নেন, কতটা সমাজ নির্ধারিত আজন্ম লালিত ফ্রেম অফ রেফরেন্স প্রভাবিত হয়ে নেন তা আমরা সকলেই কম বেশি জানি। সেখানে বিবাহের মতো সিদ্ধান্তও কতটা স্বপ্রণোদিত সেটা স্বাভাবিক ভাবেই বিচার্য বিষয়। আজকের প্রজন্ম নিজেদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, মূল্যবোধ আবেগ সবকিছু দিয়ে জাজমেন্টাল হতে পারেন, কিন্তু কোন্ পরিস্থিতিতে ঠিক কোন্ কারণে কোনও মানুষ (লিঙ্গ-যৌনতা নির্বিশেষে) বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানকে নিজের জীবনে আহ্বান করেন সেটা শুধু মাত্র তিনিই জানেন। সেখানে তিনি সত্যিসত্যিই কাউকে প্রতারিত করতে চান, নাকি, নিজেই লোকে কী ভাববে জাঁতাকলে নিজেকে প্রতারণা করতে রাজি হন তার উত্তর তিনিই দিতে পারবেন। নিজেকে বোঝা নাকি নিজের অবোধ্য সেক্সুয়ালিটি তার জীবনের বোঝা তা ঠিক করে দেওয়ার মতো কতজনকে তিনি বা তাঁরা পাশে পান বা পেতে পারেন তা আমরা সকলেই জানি। তার ওপরে বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে এমন সমাজ-ভাবনা কখনও কখনও তাকেও প্রভাবিত করে কিনা কে জানে। নিজেকে দিয়ে অন্যকে বিচার করলে যদি সব মিটে যেত তাহলে তো এক একজনের সহনশীলতা এক একরকম হত না, একই পরিস্থিতি কেউ কেউ অতিক্রম করেন, আবার কেউ কেউ আত্মহননের পথও বেছে নেন। সুতরাং বিবাহিত সমকামী বা সমকামী পুরুষ/নারীর বিবাহকে কাঠগড়ায় তোলার আগে প্রত্যেকেই একটু সহনশীল হয়ে ওঠার চেষ্টা করি না কেন। সব সময় কোনও একজনের দিকে আঙুল তুলে একটি জীবন নষ্ট মনে না করে দুটি জীবনই নষ্ট এটা বোঝাটা অনেক বেশি জরুরি। বিবাহিত পুরুষটি/নারীর মধ্যে যে যন্ত্রণা, যে ঝড় প্রতিনিয়ত বয়ে চলে তার খবর কজন রাখি! একাধারে বিবাহিত সম্পর্ক ও অন্যপাশে নিজের ভালোলাগা ভালোবাসা দু তরফের চাহিদা, কতজন পুরুষ/নারী এই মানসিক চাপ না নিতে পেরে বিবাহ পরবর্তী জীবনে আত্মহননের পথ বেছে নেন তা ডকুমেন্টেড হয় না! 

বড় বিচিত্র মানবমন! কতরকম বাঁক যে সেখানে থাকে তার হদিশ পেতে মনের অতলে ডুব দেওয়ার মতো ডুবুরির অভাবেই হারিয়ে যেতে থাকে আমাদের মতো অন্য-যৌনতার মানুষেরা।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান