পরিচিতির নির্মাণে উত্তরবঙ্গের ‘কোচ-রাজবংশী’ সমাজ 

প্রদীপ রায় 

উত্তরবঙ্গের ‘কোচ-রাজবংশী’[১] সম্প্রদায়ের আত্ম-পরিচিতি নির্মাণে প্রথমেই আমাদের কতগুলি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, তবে দুঃখের বিষয় সব প্রশ্নের নির্ভরযোগ্য সমাধানের কোনও দিশা যে আমার বিশ্লেষণ থেকে উঠে আসবে না, সে কথা সবিনয়ে পাঠকদের শুরুতেই জানিয়ে রাখা ভালো। ব্যক্তি আমি নিজেই রাজবংশী সম্প্রদায়ের একজন হিসেবে আমার অতীত থেকে বর্তমানের কিছু ভালোলাগা-মন্দলাগা, রাজবংশী সমাজের বিভিন্ন আলো-আঁধারি দিক নিয়ে কিছু কিছু এলোমেলো ভাবনা, যাপনের ব্যক্তিগত স্মৃতি, কখনও বা কূটকচাল, তর্ক-প্রতর্ক থেকে সমাজ-রাজনীতি-সংস্কৃতির ছিটেফোঁটা একটু আধটু উঠে আসবে হয়তো-বা। এর জন্য কোনও চিন্তাবিদ বা তাত্ত্বিক তকমার প্রলেপ লাগিয়ে আমাকে দূরে ঠেলে দেবেন না — এটুকু সামান্য দাবি আমরা করতেই পারি। হ্যাঁ, এবার আসল কথায় আসা যাক — এটুকু পড়ে অনেকেই নিরাশ হয়েছেন আশাকরি, অনেকেই ভাবছেন এ বাবা! এ আবার কেমন গদ্য। আচ্ছা, ধরুন প্রথম থেকেই যদি আমরা তথ্য ও তত্ত্বকথা কপচাতাম বা চারুচন্দ্র সান্যাল মহাশয়ের ‘The Rajbansis of North Bengal’ (১৯৬৫) বইয়ের পাতা থেকে একটি মার্কা মারা ‘কোট আন-কোট’ ঝুলিয়ে দিতাম বা খান চৌধুরী আমানতউল্লা আহমদ সাহেবের ইতিহাস বই ‘কোচবিহারের ইতিহাস’ (১৯৩৬) কিংবা দীপককুমার রায়ের ‘রাজবংশী সমাজ ও সংস্কৃতির কথা’ (২০১২) বা সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ‘কিরাত-জন-কৃতি’ (১৯৫০) গ্রন্থের কয়টি লাইন তুলে বলতাম… বুঝেছেন তো? ইহারে কয় রাজবংশী। তাহলে কেন বাবা খামোকা আমার এই প্রবন্ধ পড়া? দুটি-তিনটে বই পড়ে নিলেই তো পাঠ চুকে যায়। বিশ্বাস করুন, এরকম কোনও ‘কংক্রিট’ ধারণা শুধু রাজবংশীদের সম্পর্কে কেন যে-কোনও জাতি-জনজাতির ক্ষেত্রে দেবার আগে গবেষকদের এখনও অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। কোচদের সকলে রাজবংশী নাকি কেউ কেউ রাজবংশী বা কোচরা যেমন সকলে রাজবংশী নয়, তেমনি রাজবংশীদের মধ্যে সকলেও কোচ নয়, কেউ কেউ কোচ, রাজবংশীরা ‘কোচ’ নাকি ক্ষত্রিয়’, ‘কোচ-রাজবংশী’দের ভাষা নাম ‘দেশিভাষা’, ‘রাজবংশী’ নাকি ‘কামতাপুরি’ এরকম হাজার প্রশ্ন, তর্ক-প্রতর্কের সমাধানে বিদেশি   সাহেব ফ্রান্সিস বুকান থেকে শুরু করে হজসন, ডালটন, বেভারলি, হান্টার, রাউনি, বোয়ালো, ম্যাগোয়ার, রিজলি, গ্রিয়ারসন, গেইট, ও’ম্যালি, টমসন [২] প্রমুখরা শুধু নন, আমাদের দেশের ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিকরাও অনেকেই দিশেহারা, অনেকেই নিজের মতো করে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ  করেছেন, কিছু সম্ভাবনা বা প্রবণতার কথা বলেছেনও অনেকেই যা আসলে আমরা অভ্রান্ত সত্য বলে মনে করি সেখানেও রয়েছে ইতিহাসকারের ভাবের ঘরের মিশেল, ইতিহাসের অন্ধকার দিক। যে সব অন্ধকার ভরাট করার ইচ্ছে নিয়ে আমরা অনেক সময় সাহিত্য-শিল্প-লোক-ঐতিহ্যের কড়া নাড়ি, সাহিত্য-শিল্পের কাছে যাই। তাহলে আর ‘ঠক’ বাছতে ইতিহাসের কাছে কেন, নৃতত্ত্বের কাছে কেন? আসুন… বরং আমরা একটু গল্প করি,  নিভৃতে দুটো মনের কথা ‘কই’, প্রতিমা পাণ্ডে বড়ুয়া, আব্বাসউদ্দিন, নায়েব আলি টেপু, ধনেশ্বর রায়, সুরেন বসুনিয়া, কেরামত আলি, সুখবিলাস বর্মা, নজরুল ইসলাম, অয়েষা সরকার, হাল আমলের হিমাদ্রি দেওড়ির ভাওয়াইয়া গান শুনি। [৩] ‘অটোগ্রাফ’ সিনেমার সুবাদে আনন্দী বসুর কণ্ঠে ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে’ ভাওয়াইয়া গানটির ফিল্‌মি সুর আশাকরি সংগীতপ্রিয় নাগরিক জীবনে অনেকেই শুনেছি হয়তো-বা, কিন্তু প্রচলিত ‘কথা ও সুরে’ ভাওয়াইয়া গানটি প্রথম রেকর্ড করে যিনি আমাদের উপহার দিয়েছিলেন অখণ্ড বাংলার হৃদয়ের সম্পদ ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাসউদ্দীন আহমদকে (১৯০১-১৯৫৯) আমরা সেভাবে শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে রাখতে পারিনি। ২০০১ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জন্মশতবর্ষ পেরিয়ে এসেছি প্রায় নিঃশব্দে। জানেন তো!  প্রায় এক দশক আগে কলকাতার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহে বসে— না, আমারও মন্দ লাগেনি গানটি শুনতে। কিন্তু বিশ্বাস করুন! ছোটোবেলা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাছের মগডালে বাঁধা ভাড়াটে চোঙা মাইকে আব্বাস সাহেবের কণ্ঠে ভেসে আসা ‘আমাছামা’ সুরে বগা-বগির যন্ত্রণা — অন্য অনুভূতি সে এক। আব্বাসের সেই তোর্সা-ধরলা নদী পারের হাহাকার, রাজবংশীদের যন্ত্রণার কথা আমরা (কোচ-রাজবংশী ও নস্যশেখ মুসলিম সমাজ) এখানেও খুঁজে পেতে চেয়েছি কখনও-বা…। 

ছোটোবেলা থেকে ভাওয়াইয়া গান ও আব্বাসউদ্দীন আহমদের প্রতি আমাদের বাড়তি টান জন্মভিটে (বলরামপুর গ্রাম) ও যাপনের প্রিয় শহর ও অঞ্চল এক, কুচবিহার তথা উত্তরবঙ্গ। এক, মুখের ভাষাও, রাজবংশী। আব্বাস সাহেবের মতো ছোটোবেলা থেকে আমরাও  অনুভব করেছি উত্তরবঙ্গের তিস্তা-তোর্সা-কালজানি-ধরলা নদীর চোরা স্রোত, দেখেছি ভাঙা গড়ার খেলা, নিধুয়া পাথারে শুনেছি ‘গাড়িয়াল বন্ধু’, ‘মাহুত বন্ধুর’ গান। তোর্সা-কালজানির চরায় দেখেছি রাজহংসা পঙ্খির গলায় গজ মতির মালা, চকোয়াদের ঠাটবাট, ফান্দি ভাইদের কারসাজির ফন্দি-ফক্কর। উত্তরের ভাওয়াইয়া, পালাটিয়া, পালা, জারি, সারি, দোতারা, কুশান গানে সহ-যাপনে নিজেদের মধ্যে  অজান্তে আমরা সে সব ‘পালা ও গান’ খুব সহজেই বড্ড আপন, ‘আমাদের’ করে নিয়েছি। স্মৃতিভারাক্রান্ত উত্তরবঙ্গের জাতি-জনজাতির মানুষেরা সব্বাই তাই  আজও উত্তরের আসন্ন শীতে কখনও ভান খোঁজে, পেতে চায় মুক্তির আস্বাদ ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালিতে। 

না, ছোটোবেলাতে রাজবংশী সমাজে এতটা ডিজে সংস্কৃতির চল ছিল না! ছিল না কেবল কিল মারার গোঁসাই বরং ভাত দিত অন্তত। এতটা কেউ দেখেননি রাজনীতির ট্রাম কার্ডের চালে রাজবংশী সম্প্রদায়ের অমুক সাহেব, তমুক বিবি কিংবা অন্যের খোয়ারে বাঁধা গোলামকে নিজের দলে টেনে আনার বেলেল্লাপনা, ছিল না ‘খেলা হবে’ স্লোগানের হুংকার। রাম  রাজত্বের রমরমা বাজারে কেঁপে উঠত না উত্তরের তরাই-ডুয়ার্সের আকাশ-বাতাস। রাজনৈতিক দলের ভোটের আগে কোনও দিনও বোমা বানানোর কথা ভাবেননি যুবকেরা, স্বপ্ন দেখেছিলেন  শিলিগুড়ির আকাশবাণী ভবনে ভাওয়াইয়া গানের, দোতারা-কুশান পালার, নিজের একখানা দোতারা-সারিন্দা-ভাওয়াইয়া গান শোনা রেডিওর। ‘ভারতভুক্তির চুক্তি, রাজবংশী-নস্যশেখ  মুসলমান-রাজবংশী মাইনষের মুক্তি’ স্লোগানে স্বপ্ন দেখিয়ে নিজের জাতি-মাটির কথা না ভেবে স্বজাতির অনেককেই নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত দেখে আমরা এখন ছড়া কাটি কেবল—‘কাঙালের ছাওয়া কুঙলাত বইসে, টিকা সুঙসুঙ্গায় খালি মনে মনে হাসে।’ উত্তরবঙ্গের বন-জঙ্গলে, খেত-খামারে সে সময় কর্মমুখর জীবন শিল্পীদের নিজস্ব ব্যথা-বেদনা, স্বপ্ন ও স্বপ্ন-ভঙ্গের কথা ভাওয়াইয়ার সহজ-সরল সুরে মিশে ভেসে আসত এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। খুব মনে পড়ে, গ্রাম-গঞ্জের বিয়ে বা যে কোনও অনুষ্ঠানে ভাওয়াইয়া গানের প্রতি আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষের মুগ্ধতার কথা। শুনতে পাওয়া যেত বিয়ের অনুষ্ঠানে চোঙা মাইক ভাড়া আনার সময় প্রতিবেশী দাদিমা, ঠাকুমা, নানিমাদের আবদার—“ফাইককরি (বেশি করে) নিকান বাপৈরঘর ভাবিয়া গানের ক্যাসেট।” হারাধন, চ্যারকেটু, হাচেন মিয়াঁদের ভাড়াটে ভাঙা চোঙা মাইকে রাতের দিকে ফুরিয়ে আসা ব্যাটারির চার্জে আব্বাস সাহেবের কণ্ঠে দীখল নাসা কাহারবার ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই, ‘তোর্সা নদীর উতাল পাতাল কার বা চলে নাও’, চিতানে ‘কি ও বন্ধু কাজল ভোমরা রে’, ক্ষীরোল ডাং-এর ‘আজি নদী না যাইওরে বৈদ… নদীর ঘোলারে ঘোলা পানি’, শ্রদ্ধেয় প্রতিমা বড়ুয়ার ‘হস্তীর কন্যা’র গান, ‘দিনে দিনে খসিয়া…রঙ্গিলা দালানের মাটি’, ‘মোর মাহুত বন্ধুরে’ গান আরও বেশি আবেগঘন আবেদন রাখত। বিয়ের অনুষ্ঠানের পর মেয়ে বিদায়ের ভোরবেলায় দেশি ঢোল ও করকার তালে সানাইয়ে বেজে উঠত প্রচলিত ভাওয়াইয়া গানের বিচ্ছেদের সুর।    

আমরা তানসেন কে পাইনি, কিন্তু উত্তরবঙ্গের মাটিতে পেয়েছি আব্বাসউদ্দীন আহমদ, সুরেন্দ্রনাথ রায় বসুনিয়া, নায়েব আলী (টেপু), আয়েষা সরকার, গৌরিপুরের প্রতিমা বড়ুয়ার মতো বহু শিল্পীকে, এঁরাই আমাদের কাছে শ্রদ্ধেয় তানসেন, লতা-আশা-আকাঙ্ক্ষা, বট-পাকুর-ভাওয়াইয়ার ‘শিপা’। উত্তরবঙ্গের হাওয়া-মাটিতে সৃষ্টি ভাওয়াইয়া গান বিশ্বের দরবারে  আব্বাস সাহেবদের মতো শিল্পীদের হাত ধরে বেশি প্রচার পেয়েছিল। আব্বাসউদ্দীন, প্রতিমা বড়ুয়ারা না থাকলে আমরা উত্তরবঙ্গের প্রায় ঘরে ঘরে, পাড়ায় পাড়ায় আমাদের সম্প্রদায়ের এত বেশি পরবর্তী প্রজন্মের নামকরা ভাওয়াইয়া শিল্পীদের পেতাম না, ‘রক্তকরবী’ নাটকের গান-পাগল বিশুদের মতো ভাওয়াইয়া পাগল ‘গিদাল’, ‘বাউদিয়া’দের দেখতাম না। উত্তরের মন ও মননে ভাওয়াইয়া গানের বীজমন্ত্র তাঁদের মতো জীবন শিল্পীরাই সযত্নে বিছিয়ে দিয়েছেন। আব্বাস সাহেবের মতো নস্যশেখ রাজবংশী মুসলমানরা ধর্মবিশ্বাসী ছিলেন, কিন্তু ধর্মান্ধ ছিলেন না। ভেদ ছিল কিন্তু বিভেদ তৈরি করেননি। কোচ-রাজবংশী সমাজের লোক-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ হয়েছে হিন্দু-মুসলমানদের মিলিত সাধনায়। বাউল শাহ আব্দুল করিমের মতো আব্বাস সাহেবও সব ধর্মের মানুষদের মিল-মহব্বতের কথা বলেছেন জারি, সারি, ইসলামি, লোক ও নজরুল সংগীতে। মনে মনে কষ্ট পেতেন খুব, অপমান বোধ করতেন চিলমারী বন্দরের গাড়িয়াল ভাই, কৃষক ভাইদের কন্ঠে সুর শুনতে না পেলে, ‘আমার শিল্পী জীবনের কথা’র পাতায় বলেছেনও সে কথা তিনি। গোটা বিশ্বকে বেঁধে রাখার স্বপ্ন দেখেছেন ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালির লোক-সুরে, আমাদের কাছে হতে পেরেছেন সেখ আব্বাসউদ্দীন আহমদ থেকে প্রিয় আব্বাস। ছোটোবেলায় “পাজী ছেলে মুসলমানের গান গাইতে আছে”—এরকম তির্যক শব্দবাণকে উপেক্ষা করে সংগীত সাধনা করেছেন আজীবন। তোর্সা, কালজানির কালো জলের ঢেউয়ে বুক ভাসিয়ে নজরুল, জসীমউদ্দীন কিংবা জীবনানন্দের মতো হাজার হাজার বছরের পথ হাঁটার ব্রত ধারণ করেছেন স্বেচ্ছায়। র‍্যাডক্লিফের দেশভাগের পর ওপার থেকে আসার সময় বর্ডারের কাঁটাতারের বেড়ায় সাময়িকভাবে তাঁর দোতারা টাঙ্গিয়ে রাখা হলেও দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে শোনাতে পেরেছিলেন তোর্সা নদীর ঘোলা জলে বুক ভাঙা ঢেউয়ের যন্ত্রণা, কালজানির কালো জলের হাহাকার। সাইবেরিয়ার পরিযায়ী পাখিদের মতো আব্বাসউদ্দীনের জন্মভূমির প্রতিবেশী রাজবংশীরা, সহ-নাগরিকেরা ভিটেমাটি, প্রিয় মানুষকে ছেড়ে যখন এখনও পাড়ি জমায় ভারত মহাসাগর কিংবা আরব সাগর-পারে সামান্য ‘রুটি-নুন-চা’র টানে, দুবেলা দুমুঠো মুখে দেবার আশায়, ‘সোনা বন্ধুর তানে’ তাঁর স্ত্রী হয়তো এখনও তাকিয়ে থাকেন উত্তরবঙ্গের তোর্সা-কালজানি-ধরলা নদী পারের আকাশ পানে, ভেসে আসা মেঘে যক্ষ বঁধুর মতো প্রিয়জনের সংবাদ না পেলেও মাথার ওপর চলন্ত উড়োজাহাজ দেখে— বর্ডারে আটকে রাখা আব্বাসউদ্দীনের তেঁতুল খুঠার (কাঠের) চকচকে কালো দোতারা উড়োজাহাজে ঝুলিয়ে দিল্লিতে নিয়ে আসার লোককথা মনে পড়ে হয়তো-বা, আব্বাসের তোর্সাপাড়ের গানে আশ্রয় খোঁজেন ভরসায় উত্তরবঙ্গের রাজবংশী গৃহবধূরা, খুঁজে পেতে চান বাঁচার আয়ুধ, অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকেন প্রিয় মানুষটির জন্য। রাস্তার সস্তা ধুলো উড়িয়ে কালো কাঁচের গাড়িতে আসা ‘উম্‌রা’ আব্বাসউদ্দীন বা পঞ্চানন বর্মার জন্মভিটের ছ্যাচার বেড়ায় ঘেরা জংধরা টিনের ঘর দেখতে এসে তিস্তা-তোর্সা-কালজানি-ধরলায় বয়ে চলা লক্ষ লক্ষ কিউসেক জল ও পানি মেপে দেখেন— কীভাবে লোক-ঐতিহ্য ভুলে থাকলে বাঙালি হওয়া যায়, কতটা অতীত ঐতিহ্য ভুলিয়ে রাখলে ভারতীয় হওয়া যায়, হিসেব রাখেন তার কেবল। শুনতে পান না, চান নাও উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সম্প্রদায়ের- নস্যশেখ মুসলমানদের  জীর্ণ ঘর থেকে ভেসে আসা সহ-নাগরিকদের ‘অনাহত মেম্ননের স্বর’ ও কেচ্ছা, ফিরে যাওয়ার সময় ‘ঘাড়ের গামছা’র বদলে রেখে যান ‘ভিজে গামছার’ একরাশ প্রতিশ্রুতি কেবল, আবারও আশায় সবাই বুক বাঁধেন, আনন্দে কোনও প্রিয় বিরহী বধূর চোখের জলে খেলা করে স্বপ্নরা। শুধু ভাওয়াইয়া গানেই নয়, যদি ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার [৪] রাজবংশী ভাষার কবিতা ‘ডাংধরি মাও’, তুষার বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অললই ঝললই মাদারের ফুল’ (১৯৭৭), গিরিজা শংকর রায়ের ‘সাত ভাইয়া’ (১৩৮৬), সন্তোষ সিংহের কবিতা, নিখিলেশ রায়ের ‘কালনাত্তির কবিতা’ (২০০১), পীযূষ সরকারের কাব্যগ্রন্থ ‘ভাঙা মানুষের রিংটোন, আমন ধান ও নিসর্গ সারিন্দা’র (২০২০) কবিতা শুনি, বীরেন রায়ের ‘ভকোস’ (১৯৭৫) ও অভিজিৎ রায়ের ‘বাথান’ উপন্যাস নিয়ে তর্ক করি, আলাপ আলোচনা করি দেখব সহজ সরল ভাষায় সেখানেও লুকিয়ে রয়েছে উত্তরের ঐতিহ্য, রাজবংশীদের পরা-ইতিহাস, ইতিহাসের অন্ধকার দিক, বাঘারুদের প্রকৃত অপরিচিত ‘পৃথিবী’ — যা কথাকার দেবেশ রায়ের ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’ (১৯৮৮) থেকে বহু ক্রোশ দূরে। সারা রাত জেগে গুণেশ্বর অধিকারীর যাত্রা ‘ময়নার চখুর জল’, ‘কুশান’, ‘পালাটিয়া’, ‘বিষহরা’, ‘দোতরার ডাঙ’ পালা [৫], হীতেন মালির পুতুল নাচ না  দেখে উত্তরের রাজবংশীদের নিয়ে দু-চার পাতা প্রবন্ধ লেখা যায়, উত্তরবঙ্গের ‘কোচ-রাজবংশী’দের জাতি-সত্তার হৃদস্পন্দন অনুভব করানো যায় না। ফুলতি গিদালির সাইটোল গান, বলরাম হাজরার ঢাক-ঢোলের ডাঙ, তাহাজ চাচার ফজরের নামাজের সুর, জয়নাল মিঞার জারি গান না শুনলে কেমন করে বোঝানো সম্ভব উত্তরবঙ্গের নস্যশেখ মুসলিমরা আসলে ধর্মে মুসলিম, জাতি পরিচয়ে ‘কোচ-রাজবংশী’। বাংলার উত্তরাঞ্চলে নস্যশেখ মুসলিমদের ফজরের আজানের সুরে হিন্দু ‘কোচ-রাজবংশী’দের মায়ের কোলের শিশু জেগে ওঠে, শুরু হয় প্রতিদিনের যাপনের ব্যস্ততা। দক্ষিণবঙ্গের রাজবংশীরা যে ‘কোচ-রাজবংশী’ নয়, সেটাও তো জেনে রাখা প্রয়োজন। উত্তরবঙ্গের রাজবংশীরা, মানে আমরা যে এদের থেকে নৃগোষ্ঠীগতভাবে আলাদা শিরোনামে তাই রাজবংশী শব্দের আগে ‘কোচ’ শব্দটি ‘টাঙিয়ে’ দিয়েছি। খেয়াল করেছেন কিনা জানি না!    

কথাতেই কথা বাড়ে তর্কে বহু দূর। ঠাকুমা-দাদিরা বলত — ‘অতি বড় হইস না বাতাসে ভাঙিবে, অতি ছোট না হইস ব্যাঙে দেওয়াইবে’। অতএব তর্কে যাব না! বুঝতেই পারছেন — নাহলে শেষ করতে পারব না আসল কথাই। শুধু দেখে যান, শুনে যান কে কী বলছে? প্রশ্ন থাকলে আমাকে! প্রকাশ্যে নৈব নৈব চ, কানে কানে হতে পারে কখনও বা। কত কথা কানে আসে, হজমি বড়ি ছাড়াই কত কথা যে হজম করতে হয় — রাজবংশীরা কী দলিত? নস্যশেখ মুসলিম ও হিন্দু রাজবংশীরা কী এক? সব রাজবংশীরা কী কোচ? রাজারা কী রাজবংশীদের ভালো বাসতেন? রাজারা কী আদৌ রাজবংশীতে কথা বলতেন? শুটকি, ছিদল, ছ্যাকা, প্যালকা (লক-খাদ্য) কী রাজবাড়িতে রান্না হত? শামুকের হোসসা, ‘টাকোয়াই’ চাটনি রাজারা কী খেতেন? রাজাদের দেখতে কী রাজবংশীদের মতো? রাজবংশীরা কি বাঙালি, বাংলা ভাষা জানেন? কোচ-রাভা ও কোচ-রাজবংশীরা কী ভিন্ন না অভিন্ন? এরকম হাজার প্রশ্নের ভিড়ে হেঁটে চলি আমরা, হেঁটে চলে আমাদের উত্তরের ‘কোচ-রাজবংশী’ সমাজ, নস্যশেখ মুসলিম সমাজ— উত্তরের  খোঁজে। কখনও বা এক-দুটো খুঁজে পাই উত্তর, না পেলে নত হয়ে থাকি, বাকিরা কান্না হয়ে মিশে যায় শাশ্বত অন্ধকারের পথে। চলার পথে কখনও বা হাতাহাতি হয়ে যায় নিজেদের মধ্যে ভাষার নাম নিয়ে। বাবুরা এগিয়ে এসে কখনও বা থামিয়ে যায় ঝগড়া ঘাড়ের নাম ‘গর্ধনা’ দিয়ে। দু-পক্ষ তাতেই খুশি দুটো নাম নিয়ে, খাঁচার উন্নতি হোক ছাই, পাখির হোক না তাতে দুর্গতি।[৬] এবার  একটু সোজা কথা সহজ ভাবেই বলি— ‘কোচ’ নামটি অনেক প্রাচীন তুলনায় আধুনিক ‘রাজবংশী’। কামতাপুরি ভাষা নামের থেকে ‘কোচ-রাজবংশীরা’ ‘রাজবংশী’ ভাষা নামেই আগ্রহী। উত্তরের রাজবংশী সমাজ নৃ-গোষ্ঠী ‘কোচ’ ও ‘ক্ষত্রিয়’ দুটো মতাদর্শে বিশ্বাসী। রাজবংশীরা দলিত কিনা বরং সে প্রশ্নের উত্তরের দায় সবার কাঁধে চাপিয়ে দিই। হিন্দি বলতে ধুতির কাছা খুলে যাওয়া কলকাতা শহরের দু-চারটে বাঙালিবাবুর কাছে উত্তরের রাজবংশীদের কখনও-বা শুনতে হয় দু-চারটে ভাঙ্গা হিন্দি— কখনও বা শুনতে হয় রাজবংশীরা কী বাঙালি ‘ওরা’ কী বাংলা বলতে পারে…! আজ্ঞে! হ্যাঁ, বাংলা লিখতে পড়তে পারি আমরা— কিন্তু ‘তোমরাই’ আমাদের ভাবনা বাঙালি। ‘তোমাদের’ সঙ্গে পুতুল খেলা সাঙ্গ যে! এখন আমাদের জাতিগত পরিচয় ‘কোচ-রাজবংশী’, ‘নস্যশেখ মুসলিম কোচ-রাজবংশী’। শুটকি, সিদল, ছ্যাকা [৭] রাজারা খেত কিনা জানি না, আমরা খেতেই ভালোবাসি, রাজারা রাজবংশী ভাষা বলত কিনা আমরা ‘রাজবংশী’ ভাষায় কথা বলি, কবিতা লিখি, গান করি। আমাদের জামাইষষ্ঠী নেই, আমরা ভাদ্র মাসে ভাদুরি খেতেই ভালোবাসি। আমাদের নীতি আছে, রাজনীতি নেই, হিংসে ছেড়ে আনন্দ-মিলনেতেই মেতে উঠি। শুধু পাঁচশত বছরের ঐতিহ্য কোচ রাজা নরনারায়ণের প্রতিষ্ঠিত বড়ো দুর্গামাই নয়, আমরা ‘হুদুমা দেও’, ‘টশা মাশান’ ‘শুবচনি’[৮] দেব-দেবীর কাছেও বর মাগি। আমরা মহরমে তোর্সার পাগলা পিরের মাঠে লাঠিখেলা দেখি, হুজুর সাহেবের মেলায় যাই একসঙ্গে। আমরা রাজবংশী ভাষায় স্বপ্ন দেখি, এ ভাষাতেই জেগে রই, নিজের ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য রক্ষায় আন্দোলনে মাতি, নিজের ভাষাতেই গান গাই— ‘কুঙ্কুরার সুতা আজি হলু লোহার গুনা রে…’, ‘সরু সুতা ভিজা রে বস্ত্র— যৌবন হেলিয়া পরে…’      

টীকা ও তথ্যসূত্র : 

১. উত্তরবঙ্গের রাজবংশীদের জাতিগত পরিচয় বোঝাতে ‘কোচ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অনেকেই মনে করেন—উত্তরবঙ্গের রাজবংশীরা বৃহত্তর ‘কোচ’ নৃ-গোষ্ঠীর একটি ভাগ। নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে তারা ইন্দো-মোঙ্গলয়েড জনগোষ্ঠীর। কিন্তু অনেকে আবার মনে করেন উত্তরবঙ্গের রাজবংশীরা ‘কোচ’ নয়, তারা ক্ষত্রিয়। আমরা ইতিহাসে ‘কোচ’ নামটি প্রথমের দিকে পাই। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য চণ্ডীমঙ্গলে ‘কোচ’ শব্দের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। আবুল ফজলের ‘আইন-ই-আকবরী’তে উত্তরবঙ্গের ‘কুচ’ রাজ্যের উল্লেখ দেখতে পাই।  ইখতিয়ারউদ্দিন বখতিয়ার খিলজির তিব্বত অভিযানের (১২০৬) বর্ণনায় আমরা জানতে পারি—কোচ, মেচ, থারু নামে তিনটি জনগোষ্ঠীর কথা। হজসন তার প্রবন্ধে কোচ, বোড়ো এবং ধিমাল তিনটি জনজাতির কথা লিখেছেন। অসমে কোচগণ তিনটি ভিন্ন নামে পরিচিত— কোচ, রাজবংশী এবং ক্ষত্রিয়। রেবতিমোহন সাহার মতে রাভারাই হল আসল ‘কোচ’। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় উত্তরের জাতিবাচক শব্দ ‘কোচ’-এর ভাষাতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ‘কিরাত-জন-কৃতি’ গ্রন্থেও তিনি এবিষয়ে আলোচনা করেছেন। অতএব ‘কোচ’ জনজাতি নিয়ে আরও বিস্তৃত গবেষণার প্রয়োজন।      

২. আলোচ্য বিদেশি গবেষক ও নৃতাত্ত্বিকরা বিভিন্ন গ্রন্থে ‘কোচ-রাজবংশী’-দের সম্পর্কে বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন। তবে অধিকাংশ নৃতাত্ত্বিক-এর মতে ‘কোচ-রাজবংশী’রা ইন্দো মোঙ্গলয়েড জনগোষ্ঠীর ধারক ও বাহক।      

৩. উত্তরবঙ্গের মানুষের মাটির গান, প্রাণের গান ভাওয়াইয়া। এই গানের ভাষা রাজবংশী। উত্তরবঙ্গের মানুষ কি রাজবংশী কি অ-রাজবংশী সকলেই বড়ো আপন করে নিয়েছে। আলোচ্য ভাওয়াইয়া শিল্পীরা গান লিখে ও সুর দিয়ে ভাওয়াইয়া গান বিশ্বের দরবারে হাজির করছেন। উত্তরবাংলায় কান পাতলে জানতে পারবেন, সে প্রচেষ্টা এখনও প্রবহমান।   

৪. রায়সাহেব পঞ্চানন বর্মা (১৮৬৬-১৯৩৫) রাজবংশী সমাজের প্রখ্যাত লেখক ও সমাজ–সংস্কারক। রাজবংশী ভাষায় লেখা তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতা হল ‘ক্ষত্রিয়ের প্রতি’, ‘বেটা ছাওয়ার প্রতি’, ‘ডাংধারী মাও’ প্রভৃতি। 

৫. উত্তরবঙ্গের জনপ্রিয় লোক-নাট্য ও পালা হল কুশান গান, দোতারার গান, পালাটিয়ার গান, বিষহরার পালা। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন লোকউৎসব ও সামাজিক অনুষ্ঠানে এই পালাগানগুলির প্রচলন দেখা যায়। তবে বর্তমানে ডিজে সংস্কৃতির প্রবাহে রাজবংশীদের এসব লোক-ঐতিহ্য অস্তিত্বের সংকটে।  

৬. উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সমাজ আজ দুটো ভাগে বিভক্ত। অনেকে নিজেদের কামতাপুরি ও অনেকে ‘কোচ-রাজবংশী ’ হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন। রাজবংশী সমাজের ভাষাও আজ দুটি নামে পরিচিত। রাজবংশী ও কামতাপুরি ভাষা। উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর রাজবংশী সমাজ চায় রাজনীতির ঊর্ধ্বে এর একটি সুস্থ সমাধান। 

৭. উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সমাজ তথা সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের জনপ্রিয় লোক-খাদ্য হল সিদল, ছ্যাকা, পেলকা। শুকনো মাছকে গুড়ো করে বিশেষ উপায়ে সিদল তৈরি করা হয় এবং শুকনো কলার গাছ পুড়িয়ে ছাই থেকে তৈরি খার ছ্যাকা তৈরির বিশেষ উপকরণ।  

৮. উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সমাজে বিশিষ্ট লোক-দেবতা হল ‘হুদুম দ্যাও’, ‘শুবচনি’ ও ‘মাশান দ্যাও’। ‘হুদুম দ্যাও’ ফার্টিলিটি কাল্টের প্রতীক। এই দেবতা দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য পূজা করা হয়। ‘শুবচনি’ দেবতার পুজো করা হয় বিভিন্ন রকম শুভকাজের প্রাপ্তির জন্য। উত্তরবঙ্গে মাশান বাবার পুজো করা হয় বিভিন্ন রকম অশুভ শক্তির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য। এ অঞ্চলে প্রায় ৪০ রকমের মাশান দেবতার ভিন্নতা গবেষকরা উল্লেখ করেছেন। বিভিন্ন লেখকরা এসব লোক-দেবতার মিথ নিয়ে বিভিন্ন গল্প কবিতাও লিখছেন। এপ্রসঙ্গে মনে পড়ে গল্পকার লতিফ হোসেনের ‘হুদুম দ্যাও’ ও ‘টশা মাশান’ গল্পটির কথা, সঞ্জয় সাহার ‘হুদুম দ্যাও’ শীর্ষক কবিতা সংকলনটি। যেখানে নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে লোক-দেবতা বিশ্লেষিত হয়েছে।      

গ্রন্থপঞ্জি : 

বাংলা গ্রন্থ :

ইসলাম, ডক্টর মযহারুল, ‘ফোকলোর পরিচিতি ও পঠন-পাঠন’, ঢাকা, অবসর, দ্বিতীয় মুদ্রণ, অক্টোবর ২০১৫।  

ঘোষ, আনন্দগোপাল, ‘উত্তরবঙ্গের নামের সন্ধানে’, শিলিগুড়ি, এন. এল. পাবলিশার্স, ২০০৬।

ঘোষ অঞ্জন ও বসু প্রদীপ (সম্পা.), ‘জাতপাতের কথা’, কলকাতা, অনুষ্টুপ, ২০২০।

চক্রবর্তী, সমীর, ‘চা-বলয়ের সংস্কৃতি’, কলকাতা, লোক সংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, ২০১০।

চট্রোপাধ্যায়, বিমলচন্দ্র, ‘উত্তরবঙ্গের লোকসঙ্গীত ভাওয়াইয়া ও চটকা’, কলকাতা, ১৯৯২।

চট্টোপাধ্যায়, সুনীতিকুমার, ‘ভারত সংস্কৃতি’, কলকাতা, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, তৃতীয় সংস্করণ, আষাঢ় ১৪০০ বঙ্গাব্দ।  

চৌধুরী, দুলাল (সম্পা.), ‘বাংলার লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ’, কলকাতা, আকাদেমি অব ফোকলোর, ২০০৪।

তামসাং, লিয়াংসা (সংকলন ও সম্পা.), ‘লেপচা লোকসাহিত্য’, নতুন দিল্লি, সাহিত্য অকাদেমি,  প্রথম প্রকাশ ২০১১।

দাশ, অভিজিৎ, ‘তিস্তা উৎস থেকে মোহনা’, জলপাইগুড়ি, এখন ডুয়ার্স, জানুয়ারি ২০১৯। 

দে সরকার, দিগ্বিজয়, ‘উত্তরবঙ্গরে লোকসংস্কৃতি’, কলকাতা, পত্রলেখা, বইমেলা ২০০৩।

দেব, রণজিৎ, ‘উত্তরবঙ্গের উপজাতির ইতিবৃত্ত’, কলকাতা, মেইনস্ট্রীম পাবলিকেশন, বইমেলা ২০১৪।    

বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবাজী, ‘বাংলা উপন্যাসে ওরা’, কলকাতা, প্যাপিরাস, ১৯৯৬। 

বন্দ্যোপাধ্যায়, শেখর ও দাশগুপ্ত, অভিজিৎ, ‘জাতি, বর্ণ ও বাঙালি সমাজ’, কলকাতা, নয়া উদ্যোগ, ১৯৯৮।  

বন্দ্যোপাধ্যায়, শেখর, ‘ধিমাল’, কলকাতা, লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র, ২০০৪। 

বন্দ্যোপাধ্যায়, ভগবতীচরণ, ‘কোচবিহারের ইতিহাস’, কলকাতা, দে’জ পাবলিশিং, প্রথম সংস্করণ,  ২০০৬। 

বর্মন, রূপকুমার, জাতি-রাজনীতি, ‘জাতপাত ও দলিত প্রতর্ক’, কলকাতা, অ্যালফাবেট বুকস্‌,  প্রথম প্রকাশ, ২০১৯। 

বিশ্বাস, মনোহরমৌলি, ‘দলিত সাহিত্যের রূপরেখা’, কলকাতা, বাণীশিল্প,  ফেব্রুয়ারি, ২০০৭।

ভদ্র, গৌতম ও চট্টোপাধ্যায়, পার্থ, ‘নিম্নবর্গের ইতিহাস’, কলকাতা, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রথম সংস্করণ,১৯৯৮।  

ভট্টাচার্য, উৎপল, ‘সাক্ষাৎ অমিয়ভূষণ’, কলকাতা, কবিতীর্থ, ২০১৬।   

ভৌমিক, নির্মলেন্দু, ‘প্রান্ত উত্তরবঙ্গের উপভাষা’, কলকাতা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮৫। 

মজুমদার, বিমলেন্দু, ‘উত্তরবঙ্গের আদিবাসী’, কলকাতা, গাঙচিল, ২০২০। 

রায়, কৃষ্ণেন্দু (সম্পা.), ‘উত্তরবঙ্গের সীমান্ত’, কলকাতা, দি সী বুক এজেন্সী, ২০১৩।

রায়, দীপককুমার, ‘তিস্তা বুড়ি’, কলকাতা, সোপান, প্রথম প্রকাশ ২০১৪।

রায়, দেবেশ, ‘উপন্যাসের নতুন ধরনের খোঁজে’, কলকাতা, প্রতিক্ষণ পাবলিকেশনস্‌ প্রাইভেট  লিমিটেড, জানুয়ারি ১৯৯৪।  

রায়, দেবেশ (সংকলন ও সম্পা.), ‘দলিত’, নতুন দিল্লি, সাহিত্য অকাদেমি, ১৯৯৭।  

রায়, নীহাররঞ্জন, বাঙ্গালীর ইতিহাস (আদিপর্ব), কলকাতা, দে’জ, ১৪০০ বঙ্গাব্দ। 

রায়, সুবীর ও মজুমদার, বিমলেন্দু, ‘চারুচন্দ্র সান্যাল স্মারক গ্রন্থ’, জলপাইগুড়ি, চারুচন্দ্র সান্যাল স্মারক কমিটি, মাঘ ১৩৯৮ বঙ্গাব্দ।

শর্মা, রামশরণ, ‘প্রাচীন ভারতে শূদ্র’, কলকাতা, কে পি বাগচী অ্যান্ড কোম্পানী, ১৯৮৯।

লিম্বালে, শরণকুমার, ‘দলিত নন্দনতত্ত্ব’ (অনুবাদ : মৃন্ময় প্রামাণিক), কলকাতা, তৃতীয় পরিসর,  ২০১৭। 

সরকার, আর. এম, ‘শারীরিক নৃবিজ্ঞান’, কলকাতা, নলেজ হাউস, ১৯৯৫।

সাংকৃত্যায়ন, রাহুল, ‘তিব্বতে সওয়া বছর’, কলকাতা, চিরায়ত প্রকাশন, পঞ্চম মুদ্রণ, ২০০৫।

সাহা, প্রদোষ রঞ্জন (সম্পা.), ‘আলিপুরদুয়ার’, জলপাইগুড়ি, এখন ডুয়ার্স, ডিসেম্বর, ২০১৮।

ইংরেজি গ্রন্থ : 

Barman, Rup kumar, ‘Contested Regionalism (A new look on the History, cultural change and Regionlism of North Bengal and Lower Assam)’, New Delhi, Abhijeet Publications, 2007.  

Bhattacharya, Krishnopriyo, ‘Silent Departure (A study of contemporary Tribal Predicament in Bengal-Duars)’, Kolkata, Papyrus, Dec. 2007.

Bhattacharya, Krishnopriyo, ‘Tribal Bengal (Life in the sub-Himalayan Terai Duars)’, New Delhi, Niyogi books, 2019. 

Bose, Nirmal kumar, ‘Tribal life in India’, New Delhi, National book trust, First Edition, 1971. 

Chatterji, Suniti Kumar, ‘KIRATA JANA KRITI’, Kolkata,The Asiatic Society,   Forth reprint in march 2014.

Mandal, Pratibha, ‘The Culture Mapping of North-East India’, Kolkata,The Asiatic Society,  November 2009. 

Rennie, David Field, ‘Bhotan and the Story of the Doar War’, London, Albemarle Street,1866, (reprint, Bibliotheca Himalayica, Series l , Vol. 5 Manjusri Publishing House, New Delhi, 1970). 

Risley, H.H, ‘The Tribes and Castes of Bengal’, Ethnographic Glossary (reprint of Bengal Secretarait prees Edition, 1998) (Vol. I & II), Kolkata, Firma KLV Pvt. Ltd., 1891. 

Sanyal, Charuchandra, ‘The Meches and the Totos : two sub-Himalayan tribes of North Bengal’, University of North Bengal,1973. 

Sanyal, Charu chandra, ‘The Rajbansis of North Bengal’, kolkata,The Asiatic Society, 1965. 

Sarkar, Kshitish Ch., ‘In Quest of Roots’, Tufangang new Town, Cooch Behar, Tribal Research Institute of North East Region (TRIONER),1st Ed. 2013. 

Singh, K.S., ‘The Schduled Tribes’, New Delhi, Oxford University Press, 1994.   

পত্রপত্রিকাপঞ্জি : 

অনীক, দীপংকর চক্রবর্তী (সম্পা.), কলকাতা, আগস্ট-সেপ্টেম্বর ২০১৭। 

আনন্দবাজার পত্রিকা, ‘আপনার অভিমত’, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং সাপ্লিমেন্টারি, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯।

আনন্দবাজার পত্রিকা, ‘কলকাতার কড়চা’ কলকাতা, সোমবার, ১৭ অগস্ট ২০২০। 

গাঙচিল পত্রিকা (বিষয় : দলিত), অধীর বিশ্বাস (সম্পা.), কলকাতা, এপ্রিল, ২০১৯।   

জেলেপিগোরি, (তিস্তাবঙ্গের গবেষণাধর্মী সাময়িকী), কৃষ্ণেন্দু রায় (সম্পা.), স্ফুলিঙ্গ সাহিত্য চক্র, জলপাইগুড়ি, ফ্রেব্রুয়ারি, ২০১১। 

তিতির (চা বাগানের সাহিত্য সংস্কৃতি), সঞ্জয় সাহা (সম্পা.), মাথাভাঙা, কোচবিহার, জানুয়ারি, ২০১৮।

নাইন্‌থ কলাম (রাজবংশী — কোচ-রাজবংশী), প্রসূন বর্মন (সম্পা.), গুয়াহাটি, অসম, নভেম্বর, ২০১৭।

পরাগ (শারদ সংখ্যা), সৌম্যব্রত সরকার (সম্পা.), আলিপুরদুয়ার, ১৪২২ বঙ্গাব্দ।  

পশ্চিমবঙ্গ, জলপাইগুড়ি জেলা সংখ্যা, অজিত ঘোষ (সম্পাদক), তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, ১৪০৮ বঙ্গাব্দ। 

পশ্চিমবঙ্গ, কোচবিহার জেলা সংখ্যা, (সংখ্যা – ১২, ৩৯ বর্ষ), সুপ্রিয়া রায় (সম্পা.), তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, কলকাতা, জুলাই ২০০৬। 

পশ্চিমবঙ্গ, বাংলা সংগীত সংখ্যা, ( রাজ্য সরকারের মাসিক মুখপত্র, ৩৯ বর্ষ, সংখ্যা ৯), সুপ্রিয়া রায় (সম্পাদক), তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, কলকাতা, এপ্রিল ২০০৬।

মধুপর্ণী (বিশেষ কোচবিহার জেলা সংখ্যা), অজিতেশ ভট্টাচার্য (সম্পা.), বালুরঘাট, পশ্চিম দিনাজপুর, আগস্ট, ১৯৯০। 

লোকস্বর (লোকসংস্কৃতি বিষয়ক ষান্মাসিক পত্রিকা), প্রমোদ নাথ, জীবন রাণা (সম্পা.), জলপাইগুড়ি, দ্বিতীয়বর্ষ প্রথম সংখ্যা, কার্তিক ১৪১৬।  

শুভশ্রী, (নিম্নবর্গের মানুষ বাংলা কথাসাহিত্যে, ৪৫ বর্ষ), পুলককুমার সরকার (সম্পাদক), কলকাতা, ১৪১৩ বঙ্গাব্দ (২০০৬-০৭)।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান