অভ্র ঘোষ
কথাটা প্রথমেই পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো যে স্বাদেশিক বোধ বা প্রীতি আর জাতীয়তাবাদ এক কথা নয়। নিজের দেশ, নিজের ভাষা, নিজের সংস্কৃতি, নিজের ধর্মবোধ — ইত্যাদি আরও অনেক কিছুকে ভালোবাসা অপরাধ নয়। অপরাধ তো নয়ই, বরং কবুল করতে হবে — এ হল সেই গভীর গূঢ় চেতনা যেখানে আত্মবোধ স্বাদেশিকতার আশ্রয়ে মুক্তির আলো খুঁজে পায়। আত্মবোধ আর আত্মীয়তার মেলবন্ধন ঘটে। আত্মীয়তা শব্দটির মানে অপরের সঙ্গে মিলন। নিজেকে ছাড়িয়ে অন্যের সঙ্গে সাযুজ্য ও সহমর্মিতা গড়ে তোলা।
জাতীয়তাবাদ একটি রাজনৈতিক অস্ত্র। এর উৎপত্তি পুঁজিবাদের আদিতম উন্মেষের যুগে। দুটি মূল্যবোধ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে — স্বজাতির প্রতি দায়বদ্ধতা ও প্রেম, এবং অপরের অর্থাৎ অন্য জাতির প্রতি অপ্রেম কিংবা বিদ্বেষভাব পোষণ করা। ইংরেজি দুটি শব্দ ব্যবহার করলে ব্যাপারটা আরও স্পষ্ট হবে। জাতীয়তাবাদ কোনো এক মনুষ্যগোষ্ঠীর মধ্যে ইনক্লুসিভ বোধ তৈরি করে, পাশাপাশি অপর গোষ্ঠীগুলির প্রতি এক্সক্লুশনের চেতনা নির্মাণ করে দেয়। এই এক্সক্লুশনের ভিত্তি হল ঘৃণা, তীব্র বিদ্বেষপ্রবণতা।
জাতীয়তাবাদের প্রথম উন্মেষের যুগে পশ্চিমের উন্নত দেশগুলিতে এই তাত্ত্বিক অস্ত্রটি দাবি করত যে, দেশের মানুষ তাদের সর্বোচ্চ আনুগত্য প্রদান করবে নিজের জাতি-রাষ্ট্রের প্রতি। অর্থাৎ মানুষ তার স্বদেশের মাটি, দেশীয় সংস্কৃতি এবং সীমানা-নির্দিষ্ট রাষ্ট্রীয় ভূখণ্ডের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে। অষ্টাদশ শতকে পুঁজিবাদের আরও উন্নত ও পরিপক্ক ব্যবস্থায় জনসাধারণের এই আনুগত্যের গভীরতা, প্রসারতা আরও খানিকটা নিবিড় হল। শুধু নাগরিক জীবন বা রাষ্ট্রীয় জীবনেই নয়, সমগ্র ব্যক্তিগত যাপনের ক্ষেত্রে (প্রাইভেট লাইফ) এই আনুগত্যের চেতনা প্রসারিত হল। সামন্ততান্ত্রিক যুগে স্বতন্ত্র মনুষ্যগোষ্ঠীগুলির আনুগত্য ছিল কোনো ট্রাইব বা ক্ল্যানের প্রতি, সামন্ত রাজা বা শাসক গোষ্ঠীর প্রতি কিংবা প্রাচীন গ্রিসে সিটি স্টেটগুলির প্রতি। অথবা চার্চ বা ধর্মীয় সংস্থাগুলির প্রতি। পুঁজিবাদ এই শিকড়গুলি ছিন্ন করে রাষ্ট্রীয় জাতীয়তাবাদ তৈরি করল। সৃষ্টি হল জাতি-রাষ্ট্রের ধারণা। বুর্জোয়া যুগে অর্থাৎ ধনতান্ত্রিক সভ্যতায় জাতীয়তাবাদ হল সবচেয়ে তীক্ষ্ণ উদ্দীপক রাজনৈতিক মন্ত্র, যার ভিত্তিতে পশ্চিমের সর্বত্র ছোটো-বড়ো জাতীয় রাষ্ট্রগুলি উদ্ভূত হয়েছে। স্বভাবতই রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষমতা এই জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। ক্ষমতা কথাটা এখানে বিশেষ সম্ভ্রমকারী ধারণা। যার সঙ্গে মিশে আছে আধিপত্যের (Hegemony) ধারণাটিও।
ধনতান্ত্রিক সভ্যতার উন্মেষের যুগে এই জাতীয়তাবাদ সদর্থক শক্তি রূপেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। স্বয়ং লেনিনও সেকথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু পুঁজির দাপট যত বাড়ল, মনোপলি পুঁজির সমাগমে যখন জাতি-রাষ্ট্রসমূহ পারস্পরিক বিবাদে অবতীর্ণ হল, প্রবল শক্তিমান রাষ্ট্র তার জাতীয় শক্তি আরও বৃদ্ধির মতলবে পররাষ্ট্রের প্রতি লোভাতুর হয়ে পড়ল, আগ্রাসনমুখী হয়ে উঠতে থাকল — তৈরি হল সাম্রাজ্যবাদ। একথা প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত সত্য হয়ে দাঁড়াল যে, পুঁজির তাড়নায় জাতীয়তাবাদ ক্রমশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে রূপান্তরিত হল। লেনিনের ভাষায়, ‘Imperialism is the highest stage of capitalism’ — ক্যাপিটালিজম শব্দটি পালটে ন্যাশনালিজমও বলা চলে। এই ন্যাশনালিজম এক প্রকার ব্যালিস্টিক ন্যাশনালিজম, জেনোফোবিয়া যার দোসর। ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদ এই প্রবল জাত্যভিমান থেকেই উৎসারিত হয়েছে।
অথচ উনিশ-বিশ শতকেও জাতীয়তাবাদের আরেকটি মুখ ছিল। তাকে অগ্রাহ্য করা চলে না। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের নিপীড়নে নিষ্পিষ্ট ভারতবর্ষে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় যখন লেখেন ‘A Nation in the Making’-এর মতো স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, তখন জাতীয়তাবাদের একটি সদর্থক রূপ ফুটে ওঠে। ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্ত হয়ে ভারতবর্ষীয় জাতির গড়ে ওঠার ইতিহাস তো প্রগতির সূচক। ইতিহাসবিদ কে এন পানিক্কর লিখেছিলেন, ‘the idea of a nation in the making involved a process of decolonisation’। এটা তাহলে সাব্যস্ত করা যায় যে শুধু ভারতবর্ষ নয়, বিশ শতকের তৃতীয় বিশ্বের সবকটি ঔপনিবেশিক দেশগুলিতেই জাতীয়তাবাদ এক সদর্থক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। তবে এই জাতীয়তাবাদেরও রূপের রকমফের আছে। একেক দেশে তাদের বৈচিত্রের নিরিখে জাতীয়তাবাদের স্বরূপ এক রকম নয়, এক রকম হওয়া স্বাভাবিকও নয়।
এমনকি, ভারতীয় চিন্তাবিদেরাও জাতীয়তাবাদী তত্ত্বের বিচিত্র ব্যাখ্যা দিয়েছেন। দেশের মুক্তির কথা সেখানে প্রথম শর্ত হলেও জাতীয়তাবাদের চেহারা বিষয়ে বিচিত্রতা আছে। এই বিচিত্রতার এক বড়ো কারণ — ধর্ম। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য নানা ধরনের চেষ্টা করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। ১৯১৮-১৯ সালে খিলাফত আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে গান্ধী দুই সম্প্রদায়ের মিলিত জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। গোড়ার দিকে জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস হিন্দু-মুসলমানের মিলিত সাধনার ক্ষেত্র খানিকটা তৈরি করতেও পেরেছিল। কিন্তু সেটা টেঁকেনি। ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিবাদী জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে অচিরেই তৈরি হয়েছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ও হিন্দু মহাসভার হিন্দুত্ব জাতীয়তাবাদ। অপরদিকে মুসলিম লিগের কট্টর ইসলামিক জাতীয়তাবাদ। গান্ধী-নেহরু-সুভাষচন্দ্র যে কম্পোজিট ন্যাশনালিজমের ধারণা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ব্যাপৃত ছিলেন — জাতীয় কংগ্রেসের মহাবৃক্ষ গড়ে তুলেছিলেন — তা পদে পদে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে ওই দুই গোঁড়া ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বিস্তৃতিতে। কিন্তু একথাটাও বিস্মৃত হলে চলবে না যে, গান্ধীর নেতৃত্বে যে-স্বাধীনতা আন্দোলন তাতে যুক্ত ছিলেন বহু মুসলিম নেতা, যাঁদের সেসময় বলা হত ন্যাশনালিস্ট মুসলিম নেতা।
গান্ধীজির জাতীয়তাবাদকে বলা যেতে পারে লিবারাল ন্যাশনালিজম বা উদারনৈতিক জাতীয়তাবাদের ধারা। সাম্প্রতিককালে গান্ধীজির পৌত্র গোপালকৃষ্ণ গান্ধী এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘India is all Indians and all Indians are India’। এটা বস্তুত গান্ধীজির লালিত চিন্তা। সাভারকার-গোলওয়াকারদের হিন্দু রাষ্ট্রের ভাবধারায় রঞ্জিত ছিল না গান্ধীর জাতীয়তাবাদের ধারণা। অন্যদিকে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতিস্পর্ধী শক্তি হিসেবে ইকবাল-মহম্মদ আলি জিন্না যে ইসলামিক জাতীয়তাবাদের তত্ত্ব আমদানি করেছিলেন, তাতে দ্বিজাতি তত্ত্বের সূচনা হল। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সঙ্গে এল দেশভাগের মতো মর্মান্তিক ঘটনা। গান্ধী শত চেষ্টা করেও দেশভাগ রুখতে পারেননি।
গান্ধীজির জাতীয়তাবাদের ধারণা কেমন ছিল জানতে হলে ১৯০৯ সালে তাঁর লেখা হিন্দ স্বরাজ পুস্তিকাটি স্মরণে রাখা প্রয়োজন। এই পুস্তিকায় গান্ধী পরিষ্কার ভাষায় জানিয়েছিলেন যে, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নাগরিক সমাজ সভ্যতার পরিপন্থী। এতটাই পরিপন্থী যে, তাকে তিনি ‘শয়তানের সভ্যতা’ অভিধা দিতেও পিছপা হননি। এই সমাজের ভিত্তিতে সাম্যের চিন্তা নেই, মৈত্রীর বোধ নেই, ঐকত্রিকতার সংকল্প নেই। এই সমাজের ইমারত তৈরি হয়েছে লোভ-লালসা-রিরংসা আর ঘৃণা ও হিংসার ভিত্তিতে। ১৯২৫ সালে কলকাতার এক জনসভায় গান্ধীজি তাঁর সুচিন্তিত ভাষণে বলেছিলেন, ‘Is hatred essential for nationalism?’ না, ঘৃণা নয়, মৈত্রী হল জাতীয়তাবাদের প্রধান স্তম্ভ। আমরা ভারতবাসীরা ব্রিটিশ শাসন মুক্ত হতে চাই, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, আমরা ইংরেজদের ঘৃণা করি। গান্ধী বলেছিলেন, ‘In my humble opinion it is derogatory to the dignity of mankind, it is derogatory to the dignity of India to entertain for one single moment hatred towards Englishmen…’ খুব দৃঢ় ভাবে একথাও বলেছিলেন, ‘… my idea of nationalism is that my country may become free— free that if need be the whole of the country may die— so that the human race may live. There is no room here for race hatred. Let that be our nationalism.’
অর্থাৎ ঘৃণা নয়, ভালোবাসা হল জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে গান্ধী বলেছিলেন, ক্ষমতার প্রমত্ততা, ঘৃণা, বিদ্বেষ পশ্চিমি দেশগুলিকে যুদ্ধে লিপ্ত করেছে। এই জাতি-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে এক আগ্রাসী মনোভাব কাজ করছে। এটা ভাববার কোনো কারণ নেই যে, এই ঘৃণা আর আগ্রাসনের অভিব্যক্তি বিশ্ব-মানবিকতাকে সমৃদ্ধ করছে। বরং ঠিক উলটো। এটা মানব সভ্যতা ও মানবিকতার প্রতি এক ভয়ংকর বিপজ্জনক শক্তি। শান্তি-প্রীতি-অহিংসা ছাড়া মানবসভ্যতার অগ্রগতি হতে পারে না। ভারতবর্ষ এই মুহূর্তে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কবলে আছে। তার থেকে মুক্ত হতে হবে ঠিকই। কিন্তু সেটা হিংসার প্রবৃত্তিকে উসকে দিয়ে নয়, মৈত্রীর সাধনা করে। এসব কথার পাশাপাশি গান্ধী বারবার বলেছেন, জাতীয়তাবাদকে গ্রহণ করতে হবে অহিংস নীতির সঙ্গে বেঁধে রেখে, বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নয়। এক অর্থে গান্ধীর দর্শন এই কথা বলে যে, জাতীয়তাবাদ মৈত্রীর ভিত্তিতে গড়ে উঠলে তা আন্তর্জাতিকতায় পৌঁছোতে সাহায্য করে। ১৯২৫ সালের ভাষণে গান্ধী বলেছিলেন, ‘I want the freedom of my country so that other countries may learn something from this free country of mine.’ একথা বলার একটু পরেই তিনি জানান, ‘… my patriotism was not narrow, and that it included not merely the welfare of India but the whole world’.
একথা বলার কোনো অপেক্ষা রাখেনা যে, গান্ধী ভারতীয় ‘জাতির জনক’। স্বয়ং সুভাষচন্দ্র দিয়েছিলেন সেই আখ্যা। রবীন্দ্রনাথ ‘মহাত্মাজি’ ছাড়া অন্য কোনো সম্বোধন ব্যবহার করেননি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিষয়ে সংঘাত হয়েছে গান্ধীজির। ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলন তার এক বড়ো সাক্ষ্য। ১৯২১ সালেই বিশ্বভারতীর কাজকর্ম শুরু, সমগ্র বিশ্বের জ্ঞান আদানপ্রদানের কেন্দ্র হয়ে উঠুক শান্তিনিকেতন — এই ছিল কবির সাধনা। ঠিক ওই সময়েই গান্ধীজি ডাক দিলেন অসহযোগ আন্দোলনের। অসহযোগিতা যদি শুধু প্রশাসনিক স্তরে সীমিত থাকত তাহলে কবির সঙ্গে মহাত্মাজির বিরোধের সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু গান্ধীজি জনচিত্ত উদ্বোধিত করার জন্য সরকারি স্কুল-কলেজ বর্জনের আহ্বান জানালেন, বললেন ইংরেজি ভাষাশিক্ষার গুরুত্ব ছেলেদের কাছে চাকরি পাওয়ার জন্য আর মেয়েরা ইংরেজি বিদ্যা আয়ত্ত করছে ভালো বিবাহের পাত্র অন্বেষণের জন্য। বলেছিলেন চৈতন্য-কবীর-নানক-দাদূ অনেক মহান ও গুরুত্বময় তিলক বা রামমোহনের চাইতে, রামমোহন চৈতন্য-কবীরের তুলনায় পিগমি। কারণ ইংরেজি শিক্ষার আবাহন করে তিনি দেশীয় ঐশ্বর্যকে ম্লান করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি নিজেকেও পিগমি বলেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ‘শিক্ষার মিলন’, ‘সত্যের আহ্বান’ ইত্যাদি ভাষণে গান্ধীজির এই মনোভাবকে তীক্ষ্ণ সমালোচনা করেছিলেন। লিখেছিলেন, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সঙ্গে ও বিদ্যার বিনিময় ছাড়া ভারতবর্ষের যোগ না থাকলে আমরা সংকীর্ণতার দাসত্ব স্বীকার করব। এই জাতীয়তাবাদ সংকীর্ণ, কূপমন্ডূক ও অন্ধ। উপরন্তু অহিংস সংগ্রামের কর্ণধার গান্ধী অসহযোগ আন্দোলনে বিদেশি বস্ত্র ও পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছেন। এটাও অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে স্বাস্থ্যকর নয়। স্বদেশি বস্ত্র, স্বদেশি শিল্প, স্বদেশি পণ্য উৎপাদনের প্রতিজ্ঞা অবশ্যই মহৎ, কিন্তু সেসব কাজ পূর্ণোদ্যমে শুরু করার আগে বিদেশি বস্ত্র পোড়ানোর কাজ আদৌ অহিংস আন্দোলন নয়। এতে জনমনে হিংসারই উদ্রেক ঘটে। কাপড় পোড়ানোর নেশায় মানুষ ইতিবাচক সৃষ্টিকর্ম থেকে সরে যায়। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলে, মহাত্মাজি দেশবাসীকে আশ্বাস দিয়েছেন — এক বছরের মধ্যে স্বরাজ এনে দেবেন। রবীন্দ্রনাথ এই সংকল্পের মধ্যেও একপ্রকার লোভের তাড়না ও ভুল বোঝানোর বার্তা দেখেছিলেন। ফলে অসহযোগ আন্দোলনের পর্বে রবীন্দ্রনাথ যে বিশ্বজনীনতা ও আন্তর্জাতিকতার অভাব প্রত্যক্ষ করেছেন মহাত্মাজির কার্যক্রমে — সে-বিষয়ে কবি নীরব থাকতে পারেননি। ১৯২১ সালের এই আন্দোলনের আবর্তে গান্ধী রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে অকাতরে মত বিনিময় করেছিলেন, জোড়াসাঁকোর বাড়িতে দুজনের মধ্যে একান্ত রুদ্ধদ্বার বৈঠকও হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ অবশ্য গান্ধীর সঙ্গে একমত হতে পারেননি। গান্ধীজি যখন লেখেন, ‘I hope I am as great a believer in free air as the great poet. I do not want any house to be walled in on all sides and my windows to be stuffed.’ রবীন্দ্রনাথ ওই মুহূর্তে তা বিশ্বাস করতে পারেননি।