জাতীয়তাবাদ ও দলিত প্রশ্ন

কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর 

স্বদেশের প্রতি বিশেষ এক অনুভূতি, যার অন্তঃস্থলে থাকে স্বদেশবাসীর প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও একাত্মতা, তা থেকেই উৎসারিত হয় জাতীয়তাবোধ। জাতীয়তাবোধ থেকেই জাতীয়তাবাদের জন্ম। পুরানো নয়, জাতীয়তাবাদ একটি আধুনিক ধারণা। ইংরেজদের আগমনের আগে ভারতীয় জাতীয়তাবোধের অস্তিত্ব ছিল না। তার বড়ো কারণ, ভারতবর্ষ তখন ছিল বহু ছোটো বড়ো রাজ্যের সমষ্টি। এক রাজ্যের মানুষ আর-এক রাজ্যের মানুষের ওপর হামলা চালাতে দ্বিধা করত না। বাংলার অধিবাসীদের বারংবার বর্গি বা মগ দস্যুদের দ্বারা লুণ্ঠিত হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। আরও অতীতে কান পাতলে আমরা শুনতে পাই, এদেশের মাটি থেকে একুশবার ক্ষত্রিয়দের নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। জাতীয়তার বন্ধন থাকলে এমন হতে পারত না। 

অন্যদিকে রাজার সঙ্গে প্রজাদের ব্যবধান ছিল বিস্তর। রাজা বা বাদশার ফরমান মেনেই সকলকে চলতে হত। প্রজাদের অধিকার ছিল খুবই সীমিত। জাত-বর্ণ ভেদে তারও আবার রকমফের হত। সুতরাং, দেশবাসী হিসাবে একাত্মবোধ গড়ে ওঠার অবকাশ ছিল না। তবে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজ্যগুলি বিচ্ছিন্ন থাকলেও তাদের ভিতরে একটি শিথিল সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ছিল। যা ক্রমে একটি বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক বন্ধনে সবাইকে বেঁধে নেয়। এ সত্য অস্বীকার করা যাবে না যে, সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজরাই ভারতবর্ষকে রাজনৈতিক দিক দিয়ে এক সূত্রে গেঁথে তুলেছিল। পরবর্তীকালে ইংরেজবিরোধী ভূমিকা তথা স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ধীরে ধীরে জাগ্রত হতে থাকে। 

‘স্বাধীনতা’ খুবই ছোট্ট একটি শব্দ, কিন্তু তার তাৎপর্য অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত। ইংরাজি অভিধানে স্বাধীনতার প্রতিশব্দ Freedom-এর তাৎপর্য বোঝাতে বলা হয়েছে, The power or right to act, speak, or think as one wants. অর্থাৎ, স্বাধীনতা হল সেই ক্ষমতা যার দ্বারা ইচ্ছা মতো কাজের অধিকার, কথা বলা বা মত প্রকাশের অধিকার এবং চিন্তার অধিকার জন্মায়। অবশ্যই স্বাধীনতা হল আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারও। অর্থাৎ, অধীনতা বা অন্যের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি। স্বাধীনতা প্রসঙ্গে এই কথাগুলো সম্যক ভাবে অনুধাবন না করলে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রতিবন্ধকতাকে আমরা শনাক্ত করতে পারব না। 

ভারতের স্বাধীনতার কথা যখন আমরা বলি, অধিকাংশের মাথায় থাকে সেই ভারত, যা ছিল ব্রিটিশের উপনিবেশ। আপাতদৃষ্টিতে সেটাই স্বাভাবিক। এজন্য দেশীয় ঐতিহাসিক ও গবেষকগণ স্বাধীনতা আন্দোলন বলতে শুধুমাত্র ব্রিটিশের থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরের আন্দোলনকেই বুঝে থাকেন। সে কাজে কোনও পক্ষের কোথাও কোনও শিথিলতা দেখলে কঠোর সমালোচনা করতে তাঁরা পিছপা হন না। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই দলিত নেতৃবৃন্দকে কাঠগড়ায় তোলার সুযোগ গ্রহণ করেছেন কেউ কেউ। বলতে চেয়েছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামকে দলিত নেতৃবর্গ এড়িয়ে চলেছেন। বাংলায় মতুয়া আন্দোলনের অগ্রণী ব্যক্তিদেরও একই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। মতুয়ার আদর্শ যতই উদার মানবতাবাদী হোক, যেহেতু দলিত পতিতের মুক্তিব্রতকে তা সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে, এজন্য বাংলা তো বটেই, ভারতের অগ্রণী দলিতমুক্তি আন্দোলন হিসেবেও মতুয়া আন্দোলনকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। দলিত আন্দোলন প্রসঙ্গে একজন বাঙালি গবেষক লিখেছেন : “সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, মন্দির প্রবেশের অধিকার, কতিপয় সরকারী পদ ও রাজনৈতিক পদ প্রাপ্তিতেই দলিত আন্দোলন সীমাবদ্ধ থেকেছে।” অভিযোগ অতি স্পষ্ট, তা হল, স্বাধীনতা সংগ্রামে দলিতরা কোনও ভূমিকা পালন করেননি। নিজেদের ক্ষুদ্র শ্রেণিস্বার্থের মধ্যেই নাকি দলিতরা বন্দি থেকেছেন। সমালোচকদের এ অভিযোগকে অলীক বলে উড়িয়ে দেবার মতো প্রচুর তথ্য আমাদের সামনে আছে। প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী বসন্তকুমার মজুমদার, মোহিনীমোহন দাস এই সমাজেরই মানুষ। ওড়াকান্দির স্বনামধন্য গুরুচাঁদ ঠাকুরের দুই ভ্রাতুষ্পুত্র নগেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মহেন্দ্রনাথ ঠাকুর ঐতিহাসিক লবণ সত্যাগ্রহে অংশ নেন।স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে মহেন্দ্রনাথকে ছয়মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বাংলার নমঃশূদ্র’ নামক গ্রন্থে এমন অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীর অজানা ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে। অবশ্য সে সাক্ষ্যেরও প্রয়োজন হত না, যদি কেউ মুক্তিতীর্থ আন্দামানের সেলুলার জেলের সামনে যে পাঁচ বিপ্লবীর ধাতব মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছে, তাঁদের সম্পর্কে অবগত হওয়ার চেষ্টা করতেন। এঁদেরই একজন মোহনকিশোর নমোদাস; পদবিতেই যাঁর দলিত পরিচয় বিধৃত। 

উচ্চবর্গের সমাজ-তাত্ত্বিকদের অভিযোগ খুঁটিয়ে দেখলে আমরা পাই : দলিতরা সামাজিক মর্যাদা, মন্দিরে প্রবেশ এবং কিছু সরকারি পদ ও রাজনৈতিক পদের জন্য আন্দোলন করেছেন। এখানে যে প্রশ্নটি অনিবার্য ভাবে এসে যায় — সে আন্দোলনই বা তাঁদের কেন করতে হল? কারা তাঁদের ওই সামান্য প্রাপ্তির পথে বাধা হয়েছিল? এবং কারাই বা ওই সামান্য অধিকারটুকু দিতেও সম্মত ছিল না? যে জন্য দলিতদের আন্দোলনের পথে নামতে হয়েছিল? সেই অধিকার হরণকারী কি ব্রিটিশ শাসকেরা? কিংবা তারও আগে আসা মোগল পাঠানেরা? উত্তরটা একালের ঐতিহাসিকদের খুঁজে বের করতে হবে। এবং সেটা খুব কঠিন হবে বলেও মনে হয় না। কারণ, সাব-অলটার্ন ইতিহাস চর্চাকারীরা সে পথে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছেন। বলাইবাহুল্য, উত্তরটা তখনকার দলিত নেতৃত্ব, বিশেষত মতুয়া নেতৃত্ব নিজেদের জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার বিনিময়ে জেনেছিলেন। তাই বিশ শতকের প্রথম ও দ্বিতীয় দশকে জাতীয় কংগ্রেসের উচ্চবর্ণীয় নেতারা যখন অস্পৃশ্যদের কাছে এসে স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে আহ্বান জানিয়েছেন, তখন মতুয়া নেতারা প্রশ্ন করেছেন — স্বাধীনতা তো খুবই জরুরি, কিন্তু কাদের স্বাধীনতা? খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং জবাব খুঁজে না-পাওয়া এক প্রশ্ন। এই প্রশ্নের সিঁড়ি ধরে নেমে গেলে আমরা দেখব, ব্রিটিশরা এদেশটাকে উপনিবেশ করে তোলার অনেক আগে থেকেই এদেশেরই এক শ্রেণির মানুষ রাজত্বের সীমা ও শাসকের গণ্ডি ছাড়িয়ে ভারতবর্ষ জুড়ে অতি স্থায়ী এক উপনিবেশ কায়েম করে বসে আছেন। ধর্ম তাদের হাতিয়ার, মনুসংহিতা তাদের সংবিধান। তারই সাহায্যে অন্তত দেড় হাজার বছর ধরে বৃহত্তর ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের উপরে ঔপনিবেশিক শাসন শোষণের থেকেও নির্মম শোষণ তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। মনুবাদী এই শোষণ প্রক্রিয়া উপনিবেশের পরিকল্পনাকারী সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা আবিষ্কৃত বহুনিন্দিত দাস ব্যবস্থার থেকেও ঘৃণ্য। অন্যান্য অবিচার ও নিগ্রহের শিকার হলেও ক্রীতদাসদের ধন-সম্পত্তির অধিকার এবং শিক্ষা গ্রহণের অধিকার কখনও কেড়ে নেওয়া হয়নি। সবচেয়ে বড়ো কথা, ঘৃণাভরে তাদের কখনও অস্পৃশ্য ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু মনুবাদী-ব্রাহ্মণ্যবাদীদের দ্বারা এদেশের অন্ত্যজেরা শুধু অর্থনৈতিক ভাবে শোষিত হননি, উপরোক্ত সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত থেকেছেন। ফলে এ দেশের বর্ণবাদী সমাজ ও দলিত আদিবাসীরা দুই প্রান্তে, দুই বিপরীত মেরুর বাসিন্দা হয়ে থেকে গিয়েছেন। তাদের স্বার্থ পরস্পর বিরোধী, একের যাতে লাভ, অন্যের তাতে ক্ষতি। সুতরাং দু-পক্ষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে একই বন্ধনীতে রেখে বিচার করার পরিস্থিতি অন্তত উনিশ ও বিশ শতকের গোড়ায় তৈরি হয়নি। 

বাংলার দৃষ্টান্ত যদি আমরা দেখি, বঙ্গভঙ্গ উত্তরকালে (১৯০৫) স্বদেশি আন্দোলনে অংশ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে মতুয়া অধিপতি গুরুচাঁদ ঠাকুরের কাছে যখন কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব, ‘রাষ্ট্রগুরু’ সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠি এসে পৌঁছায়, গুরুচাঁদের বিবেচনায় প্রাথমিক কর্তব্য হয়ে দেখা দিয়েছিল বর্ণবাদী নেতাদের উদ্দেশ্য ও গতিবিধি সঠিক ভাবে বুঝে নেওয়া। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে যারা তাদের শোষক, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে শোষিতরা একযোগে লড়াই করে বিদেশি সাহেবদের বিতাড়ন করতেই পারে, কিন্তু তার বিনিময়ে মনুবাদী দেশীয় সাহেবরা যদি শোষণের পুরানো জাঁতাকল নামিয়ে আনে, তাহলে অন্ত্যজদের পক্ষে তা হবে অতিশয় বিধ্বংসী। কারণ, ইতোমধ্যে ইংরেজের আনুকূল্যে অন্ত্যজেরা লেখাপড়ার সুযোগ ও সরকারি চাকুরি পেয়ে নতুন জীবনের দিকে পা বাড়াতে শুরু করেছেন। আদালতে গেলে পাওয়া যাচ্ছে নিরপেক্ষ আইনি বিচার। তাদের কি উচিত হবে সে সব পরিত্যাগ করে পুনরায় মনুবাদীদের শিকলে মাথা গলিয়ে দেওয়া? এখানে উচ্চ ও নিম্নবর্ণের ভিন্ন স্বার্থ লক্ষণীয়। 

কারও কারও হয়তো মনে হতে পারে, জাতীয় নেতাদের প্রতি অতটা সন্দেহপ্রবণ না হলেই পারতেন গুরুচাঁদ ঠাকুর প্রমুখেরা। স্বদেশের এত বড়ো মাপের নেতারা কি সাধারণ দেশবাসীর এতটা স্বার্থবিরোধী কাজ কখনও করতে পারতেন? মতুয়া নেতৃবৃন্দ নিশ্চয়ই এ দিকটাও ভেবে দেখেছিলেন। কারণ, তাঁদের সামনে ছিল আরও পঞ্চাশ বছর পূর্বেকার ধারাবাহিক ঘটনাপ্রবাহ। 

যে নীলচাষ বাংলার কৃষককুলকে ধ্বংসের কিনারে নিয়ে এসেছিল, চরম অত্যাচারে গ্রামের পর গ্রাম শ্মশানে পরিণত করেছিল, সেই নীলচাষের পক্ষে ইংরেজদের সমর্থন জানিয়ে কৃষকদের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, রাজা রামমোহন রায়, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রমুখ বাংলার শ্রেষ্ঠ মানুষেরা। হরিশচন্দ্র মুখার্জী, দীনবন্ধু মিত্রের মতো কয়েকজন হৃদয়বান মানুষ কৃষকদের পক্ষে দাঁড়াতে গিয়ে যারপরনাই হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নিজেদের জমি ও জীবন রক্ষায় সাঁওতাল গণবিদ্রোহ বা হুল সূচিত হলে, তার তীব্র বিরোধিতা করে ব্রিটিশদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, নবীনচন্দ্র সেন প্রমুখ তৎকালীন বাংলার শ্রেষ্ঠ লেখক কবিরা। ‘সংবাদ প্রভাকরের’ পাতায় ঈশ্বর গুপ্ত লিখেছিলেন : “সাঁওতালরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শান্তিভঙ্গ করছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত”। 

একই সময়ে নমঃশূদ্রদের চণ্ডাল বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জেলখানায় নমঃশূদ্র কয়েদিদের দিয়ে জোর করে মল-মূত্র পরিষ্কার করানো হত। ইংরেজ প্রশাসকদের কাছে এ ব্যাপারে তীব্র আপত্তি জানানো হলে তাঁরা সরকারি নির্দেশনামা জারি করে অবিলম্বে সে জুলুম বন্ধ করতে আদেশ দেন। কিন্তু তারপরও উচ্চবর্ণের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা সরকারি আদেশ লঙ্ঘন করে, জেলখানায় নানা অজুহাতে অন্যায় ভাবে সে কাজ চালিয়ে গেছেন। বার্তা খুবই স্পষ্ট, ইংরেজের পরিবর্তে তাঁরা যদি ক্ষমতায় থাকতেন, কিছুতেই এই জুলুম থেকে নমঃশূদ্রদের মুক্তি মিলত না। স্বদেশবাসীর কাছে নয়, অন্ত্যজদের ন্যায় পেতে হয়েছে বিদেশিদের কাছ থেকে। 

একই দেশে বাস করেও একই অধিকার বা মর্যাদা পাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারতেন না দলিতেরা। মর্যাদা দূরস্থান, একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবহারেও তারা সক্ষম ছিলেন না। দলিত সমাজের মানুষদের জুতো পরা, ছাতা মাথায় দেওয়া, পালকি চড়ার মতো জরুরি বিষয়গুলিতে অনুমোদন না দিয়ে বাধার সৃষ্টি করত সবর্ণ সমাজ।তবে বাংলায় নমঃশূদ্ররা হীনবল ছিলেন না। মুখ বুজে তাঁরা এ অন্যায় মেনে নিতেন না। ফলে প্রায়ই উভয় পক্ষের মধ্যে গন্ডগোল মারামারি লেগেই থাকত। সবর্ণ সমাজ সুযোগ পেলেই এই গন্ডগোলকে একটু কৌশলে ঘুরিয়ে নমো-মুসলমানের দাঙ্গার দিকেও নিয়ে যেত। এ রকমই একটি ঘটনা ঘটেছিল ওড়াকান্দি থেকে কিছু দূরে গোপালপুর গ্রামে, ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে।

সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের সঙ্গে নিয়ে সবর্ণসমাজ সরকারের কাছে আবেদন জানায় নমঃশূদ্রদের অপরাধ প্রবণ জাতি ঘোষণা করে তাদের বিরেুদ্ধ পিটুনি পুলিশ প্রয়োগ করা হোক। প্রশাসনে আসীন উচ্চবর্ণের আধিকারিকরা যথারীতি কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেন। ঢাকা বিভাগের কমিশনার শ্বেতাঙ্গ ন্যাথার সাহেব এলেন তদন্তে। তিনি প্রকৃত সত্য খুঁজে বের করে নমঃশূদ্রদের শুধু নির্দোষ ঘোষণা করেই ক্ষান্ত হননি, গুরুচাঁদের নেতৃত্বে ওড়াকান্দিতে যে হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা চলছিল, তার উন্নতিকল্পে মাসে মাসে পঁচাত্তর টাকা সরকারি অনুদান প্রদান করেন। 

ইতোপূর্বে কায়স্থকুলের উদার ধনাঢ্য গিরিশ বোস ওড়াকান্দিতে স্কুল করে দেবেন বলে গুরুচাঁদ ঠাকুরকে কথা দিয়েও ফুকুরার ব্রাহ্মণ সমাজপতিদের চাপে পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই পরিস্থিতির মধ্যে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠি এসে পৌঁছায় গুরুচাঁদ ঠাকুরের কাছে, অন্ত্যজ মানুষদের সঙ্গে নিয়ে তিনি যাতে ব্রিটিশ বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। একই আবহের মধ্যে ফরিদপুরের বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা, পরবর্তীকালে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি অম্বিকাচরণ মজুমদার, ওড়াকান্দির আশপাশের গ্রামগুলিতে সভা করে মতুয়াদের তাতিয়ে তোলেন স্বদেশি আন্দোলনে শামিল হতে।  

গুরুচাঁদ ঠাকুর কোন্ পথে এগোবেন? অধিকার ও মর্যাদার আশা জলাঞ্জলি দিয়ে দলিত সমাজকে বলবেন বর্ণবাদীদের দাসত্বকে স্বীকার করে নিতে? কংগ্রেস নেতৃত্বের আহ্বানে বিগলিত না হওয়ায় যারা গুরুচাঁদ ও মতুয়াদের স্বাধীনতা আন্দোলন বিরোধী বলে ঘোষণা করতে উৎসাহী, তাঁরা সুরেন্দ্রনাথকে লিখিত গুরুচাঁদের চিঠিটি একবার পড়ে নিতে পারেন। গুরুচাঁদ লিখেছিলেন : “তথাকথিত উচ্চবর্ণের বিলাসী লোকরাই বিলাতী দ্রব্য ব্যবহার করিয়া থাকেন, অতএব এই আন্দোলন তাহাদের মধ্যেই প্রচলিত হওয়া আবশ্যক। নমঃশূদ্রজাতি এতকাল রাজনৈতিক অধিকারে বঞ্চিত হইয়া তাহাদের নিজ বাসভূমিতে নিপীড়িত ও নির্যাতিত অবস্থায় বাস করিতেছে। সর্বপ্রথমে তথাকথিত উচ্চবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে অনুন্নত জাতিসমূহের প্রতি ভ্রাতৃভাব আনয়ন করা দরকার। তাহা না হইলে কোনওদিনই বাংলার অনুন্নত সমাজ, উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সহিত মিলিত হইয়া কোনও প্রকার স্বদেশী আন্দোলনে যোগদান করিতে সমর্থ হইবে না”। বার্তাটিতে কোথাও অস্পষ্টতা নেই। কোথাও ঈশ্বর গুপ্তদের মতো বলা নেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শান্তিভঙ্গ করো না। বরং কীভাবে যৌথ বা সম্মিলিত ভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে তার পথরেখা দেওয়া আছে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় “এসো ব্রাহ্মণ শুচি করি মন ধরো হাত সবাকার”। রবীন্দ্রনাথের এ ভাষা যদি স্বাধীনতা আন্দোলন বিরোধী না হয়, গুরুচাঁদ ঠাকুরের একই প্রকার বক্তব্য স্বাধীনতা আন্দোলন বিরোধী হয় কীভাবে?  প্রসঙ্গের এখানেই ইতি ঘটে না। পরবর্তীকালে অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ১৯২০-এর দশকের সূচনায় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ সেই আন্দোলনে শামিল হওয়ার জন্য গুরুচাঁদকে আহ্বান জানান। আমরা বিস্মৃত হইনি যে, ওই দশকে দক্ষিণ ভারত জুড়ে অস্পৃশ্যরা মন্দিরে প্রবেশের আন্দোলনে উত্তাল হবেন। মহারাষ্ট্রে বাবাসাহেবের নেতৃত্বে চৌদা পুকুর অভিযান হবে জলপানের অধিকার দাবি করে, এবং তাতে দলিতদের রক্তাক্ত হতে হবে। জাতীয় নেতারা তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে থাকবেন। দলিতদের এইটুকু অধিকার দিতেও তাঁরা সম্মত নন। তাহলে কাদের এবং কোন্ স্বাধীনতার জন্য তাঁরা দলিত সমাজকে আন্দোলনে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানান? 

গুরুচাঁদ দেশবন্ধুকে তাঁর চিঠির উত্তরে দলিতদের বঞ্চনার প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিয়ে লিখেছেন : “রাজনৈতিক অধিকারে বঞ্চিত থাকিয়া নমঃশূদ্রগণ গভর্নমেন্টের সহিত কোনও প্রকার সহযোগ করিতে পারে নাই। এমন অবস্থায় ইহাদিগকে গভর্নমেন্টের সহিত অসহযোগ করিতে বলা ও না বলা উভয়ই সমান। দেশের নেতৃগণ এই প্রকার আন্দোলনে তাহাদের শক্তি সম্পূর্ণ নিয়োগ না করিয়া, অনুন্নত সমাজের উদ্ধার সাধন করিলে, অধিকতর অল্পসময়ে স্বরাজ লাভের সম্ভাবনা হইত ”। গুরুচাঁদ স্বরাজলাভের বিরোধিতা তো করছেন না, স্বরাজ লাভের কথাই তো বলছেন, সংক্ষিপ্ত পথটিও দেখিয়ে দিচ্ছেন। গোটা জাতি যদি একত্র হয়ে ইংরেজ শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তাদের সাধ্য কি সেই প্রবল শক্তির মোকাবিলা করে? কিন্তু অধিকারহীনদের মর্যাদা ও অধিকার স্বীকার করে না নিলে, ব্রিটিশদের হাত থেকে ছিনিয়ে কোন্ ভরসায় অন্ত্যজরা তাদের ধ্বংসকামী বর্ণবাদীদের হাতে ক্ষমতার চাবিকাঠি তুলে দেবেন?  ব্রিটিশ গিয়ে বর্ণবাদীদের রাজত্ব কায়েম হোক, দলিত নেতৃত্ব কীভাবে তাতে সম্মত হবেন? সুতরাং সর্বাগ্রে প্রয়োজন বর্ণবাদী ধারণা থেকে মানুষকে বের করে আনা। তাদের মনের সংস্কার ঘটানো। যাতে বদলাবে তাদের আচরণ। এদেশ যে বিশেষ কোনও গোষ্ঠীর নয়, এদেশে বসবসকারী সমস্ত মানুষের, এই নব বাস্তবতায় তাদের দীক্ষিত করতে হবে। ছোটো বড়ো, কুলীন অকুলীন হিন্দু মুসলিম খ্রিস্টান সবাইকে একসূত্রে গেঁথে তুলতে হবে। আমরা দেখেছি ধর্মান্দোলনের মধ্য দিয়ে বাধার প্রাচীর ভেঙে মতুয়ারা সমাজে সেই কাজটাই করে গিয়েছেন। আমরা লক্ষ করে থাকি, জাতীয় নেতাদের মধ্যে একমাত্র গান্ধিজি সংস্কারমূলক একটি পদক্ষেপ করেছিলেন; কিন্তু, তাঁর ‘হরিজন’ আন্দোলন শুধুমাত্র অস্পৃশ্যতা বর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।দলিতদের অধিকার প্রদানের প্রশ্নে তিনি ছিলেন যথেষ্ট কঠোর এবং গোঁড়া। গুরুচাঁদ ঠাকুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য একবার গান্ধিজি ওড়াকান্দির উদ্দেশে রওনা দিয়েও, অত্যন্ত আকস্মিক এক ঘটনায় সফর বাতিল করেন।        

মহাত্মা গান্ধি নিজে এসে সাক্ষাৎ করলেও বঞ্চিত সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ থেকে ‘সুপারম্যান’ গুরুচাঁদকে (অ্যালবার্ট হলের স্মরণসভায় নেতাজি সুভাষচন্দ্রের দেওয়া অভিধা) সরিয়ে আনতে পারতেন বলে মনে হয় না। বস্তুত, বঞ্চিত সমাজের পথ-প্রদর্শক গুরুচাঁদের চোখে যে ভারতবর্ষের স্বপ্ন আঁকা হয়েছিল, তা গণতান্ত্রিক সাম্যবাদী সমাজের। ভারতবর্ষ শুধু এক বিশেষ বর্ণ বা গোষ্ঠীর লীলাভূমি হয়ে উঠবে না, তা হবে সকলের। সেই লক্ষ্যেই তিনি অন্ত্যজদের আন্দোলনকে পরিচালনা করেছিলেন। আঘাতের পর আঘাত দিয়ে বর্ণবাদীদের সংবিৎ ফেরাতে চেয়েছেন।প্রকৃত গণতন্ত্রের স্বরূপটা তাদের বোঝাতে চেয়েছেন। এ জাতীয় বহুবিধ উদ্যোগের পরিণতি হল আজকের প্রজাতান্ত্রিক ভারতবর্ষ। যার সংবিধানের সূচনায় লেখা হয়েছে — We the people of India…। সংবিধান জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করার পূর্বে সংবিধান পরিষদের শেষ সভায় বাবাসাহেব আম্বেদকর বলেছিলেন, এখন থেকে আমরা রাজনৈতিক গণতন্ত্রে প্রবেশ করব, কিন্তু সমাজে থাকবে না সামাজিক ও অর্থনৈতিক গণতন্ত্র; যদি দ্রুত তা অর্জন করতে আমরা ব্যর্থ হই, স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়বে। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে গুজরাতের ভাবনগরের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী নেহেরু বলেছিলেন : “যে স্বাধীনতা সবার কাছে পৌঁছায় না, সে স্বাধীনতা অর্থহীন”। 

আমরা অনেকেই বিস্মৃত হয়েছি যে, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশদের কাছ থেকে যখন ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটে, তখন প্রদেশগুলির বাইরে ভারতীয় ভূখণ্ডে ছিল আরও ৫৬৫টির অধিক রাজ্যের অস্তিত্ব। এগুলি দেশীয় রাজ্য নামে পরিচিত ছিল। এদের নিজেদের মধ্যে কোনও ঐক্য ছিল না, বরং ছিল পারস্পরিক সন্দেহ ও শত্রুতা। নিজেদের সুযোগ ও সুবিধার ভিত্তিতে এই সব দেশীয় রাজ্যের অধীশ্বররা কেউ ভারতে, কেউবা পাকিস্তানে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। ভূপাল, ত্রিবাঙ্কুর, হায়দ্রাবাদের মতো রাজ্যগুলি আবার স্বতন্ত্র ও স্বাধীন থাকতে চেয়েছে। জয়পুর, যোধপুর, বিকানির ইত্যাদি রাজ্যর রাজাদের ছিল নানা বাহানা। নানা কৌশলে তাদের ভারতভুক্তি ঘটানো হয়েছিল। ছিল নানা ধরনের চুক্তি। সুতরাং, অখণ্ড ভারতীয়তার ভাবনা যে পরাধীন ভারতের সর্বত্র এবং সকলের মধ্যে গড়ে ওঠেনি, এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই। 

সুতরাং, এক দেশ এক জাতীয়তার স্রোতে সবাই সমান ভাবে সাড়া দিতে পারেনি কেন, তা নিয়ে কোনও দমিত জনগোষ্ঠীকে দোষারোপ করা সাজে না। এক জাতি, এক ভাবনা ইত্যাদি বলে আজ যতই আওয়াজ তোলা যাক না কেন, বর্তমান ভারত ভূখণ্ডের অধিবাসীদের সেই সূত্রে বেঁধে তুলতে বহু অসম্ভবকে সম্ভব করতে হয়েছে। এমনও দৃষ্টান্তের অভাব নেই, ভারতভুক্তি এবং ভাষা ভিত্তিক রাজ্য গঠনের টানাপোড়েনে কোনও কোনও ভাষা ও জনগোষ্ঠীকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। তাদের সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের বিলোপ ঘটেছে। 

এখনও জাতীয়তাবাদ গড়ে ওঠার পথে প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে খাড়া রয়েছে ভারতীয় সমাজের ভ্যন্তরীণ নানা থাক। শত শত বছর পেরিয়ে বংশানুক্রমিক শোষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় ভারতীয় সমাজ কোনও কালেই সংহত রূপ লাভ করতে পারেনি। সমতা ও সৌভ্রাতৃত্বের অভাব এ সমাজে আজও প্রকট। যেহেতু জাতিবাদই এখানে প্রধান, তাই কাঙ্ক্ষিত জাতীয়তাবাদ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে গড়ে উঠতে পারেনি।গণতান্ত্রিক চেতনার প্রসার ঘটিয়ে, সমাজ থেকে ব্রাহ্মণ্যবাদী মূল্যবোধ দূর করে, পরস্পরের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের আবহ গড়ে তুললে, অতি সহজেই এক দেশ এক জাতির ভাবনা তথা জাতীয়তাবাদী চেতনা মজবুত ভিত্তি পেয়ে যেত। 

কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, দেশ হাঁটছে উলটো পথে। জাতীয়তাবাদের নামে দেশকে দ্রুত হিন্দুত্ব তথা মনুবাদের দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতার নিরসন নয়, সাম্প্রদায়িকতার পালটা তোমাকেও সাম্প্রদায়িক হতে হবে, এই মন্ত্র দিন-রাত জপানো হচ্ছে কানের কাছে। সাম্প্রদায়িক অনুভূতি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি হতে পারে না, অথচ, ভারতীয় উপমহাদেশে জোরকদমে তারই চেষ্টা চলছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে উগ্র জার্মানি জাতীয়তাবাদের আবেগ তৈরি করতে হিটলার ও তাঁর অনুসারীরা আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রবল ইহুদি বিদ্বেষের। প্রাণ গিয়েছিল ২০লক্ষ নীরিহ ইহুদির। ভারতবর্ষকে আজ তারই অনুসরণ করতে দেখে শঙ্কিত না হয়ে উপায় কী? বাস্তবে এই উগ্র জাতীয়তাবাদ, যা প্রকৃতপক্ষে ব্রাহ্মণ্যবাদ প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তার প্রবল স্রোতের ঘূর্ণাবর্তে দলিতের সমস্ত আশা আকাঙ্ক্ষার যে নতুন করে সলিল সমাধি হবে না, বহু কষ্টে অর্জিত অধিকার বিসর্জিত হবে না, নিশ্চয় করে তা বলা যায় না। বলা যায় না, আমরা বহুকষ্টে গড়ে তোলা গণতন্ত্রকেই হারাবো কি না। 

জাতীয়তাবাদের প্রকৃত পরিচয় দেশের সকল শ্রেণির মানুষের দুর্দশা মোচন, সকলের সমান অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিতকরণে। তার বদলে স্বদেশেরই কায়েমি স্বার্থভোগী শ্রেণি যদি শক্তিহীন শ্রেণিকে শোষণ ও নির্যাতনে নির্মম হয়ে ওঠে, তাহলে জাতীয় চেতনা বলি বা দেশের মানুষের প্রতি ভ্রাতৃত্বের গভীর অনুভূতি, তাকে বাঁচিয়ে রাখার কিংবা উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ করার সহজ কোনও উপায় থাকে কি?

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান