আনন্দময় ভট্টাচার্য
যা স্বাভাবিক, যা প্রতিদিন ঘটে, তা খবর হয় না। ঘটনার খবর হয়ে ওঠার ‘যোগ্যতা’ তখনই হয়, হ্যাঁ, যোগ্যতাই বলব, যখন সে ঘটলেও ‘স্বাভাবিক’ ‘প্রাত্যহিক’ ঘটনার থেকে কিছুটা আলাদা গুরুত্ব দাবি করতে পারে। এখন ‘স্বাভাবিক’ কাকে বলব, এটা নিয়ে মিশেল ফুকোর মতো কোনও দৃষ্টিকোণ আঁকড়ে আপনি বসে থাকলে আমাদের এখানেই থেমে যেতে হবে। এই ধরুন সকালে সূর্যোদয় হবে, এটা খবর না। এটা ‘স্বাভাবিক’। আমরা ‘স্বাভাবিক’ বলতে এমনি একটা ন্যাচারাল ফেনোমেনা ধরে কথা এগোতে চাইছি। কিন্তু সকালে একখানি সবুজ রঙের সূর্য দেখা দিলে! সেটা খবর। আবার ‘খবর’-এর আর একটা ধর্ম হল অন্য খবরকে বা পুরাতন খবরকে চাপা দিয়ে মারার ‘যোগ্যতা’। আসলে এই মেরে উঠতে না পারলে তার গোচর হওয়ার পথ খোলে না। প্রতিদিন খবর তৈরি হয় প্রতিদিনের খবরকে দেওয়াল ধরিয়ে। স্থানীয় স্তর থেকে প্রাদেশিক, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক স্তরে এমনি খবর তৈরি হয়ে চলেছে অহরহ। তবু তার মধ্যেই দু-একটা খবর তৈরি হয় না হারানোর জন্যেই। তেমনটা ঘটেছিল ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ১ জুলাই।
আমেরিকার তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি সিনিয়র বুশ (জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ) সুপ্রিম কোর্টের সর্বোচ্চ পদে থারগুড মার্শালের উত্তরসূরি হিসেবে ক্লারেন্স থমাসকে মনোনীত করলেন। কৃষ্ণাঙ্গ ক্লারেন্স থমাস সেই সময় কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার রক্ষার এক পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ এবং ইকুয়াল এমপ্লয়মেন্ট অপারচুনিটি কমিশনের চেয়ারম্যান (১৯৮৯-৯০ খ্রিস্টাব্দ)। স্বাভাবিক ভাবেই রিপাবলিকান ভোট ব্যাংকের জন্যে এই মনোনয়ন একটা অত্যন্ত ভালো এবং স্বাস্থ্যকর বিজ্ঞাপন ছিল। কিন্তু তাঁর মনোনয়ন পাকাপোক্ত করতে গিয়েই গোল বাঁধল। দেখা গেল কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার রক্ষার এই কর্ণধারের নামেই একসময় তাঁর অধীনস্ত কৃষ্ণাঙ্গ গবেষিকা আনিতা হিল যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছিলেন। সংবাদ মাধ্যমে সেই তদন্তের লিক হয়ে যাওয়া ফাইল মার্কিন জনসমাজে এমন সারা জাগিয়েছিল যে এফ বি আই-কে সেই ঘটনার তদন্তভার নিতে হয়েছিল। জবানবন্দিতে আনিতা জানালেন থমাস সত্যিই এমন কিছু যৌনগন্ধী প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁকে, যা আনিতার সম্ভ্রমের পক্ষে অস্বস্তিকর মনে হয়েছিল। তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন থমাসকে। থমাস এর জন্যে তাঁর পেশাগত জীবনে বিশেষ সমস্যাও সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু এইসব ঘটনা যখন ঘটছে, তখন সিনিয়র বুশসাহেব থমাসের মনোনয়নকে নিজের জন্যেই প্রেস্টিজ ফাইট হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন। ভোট ব্যাংকের দিকে তাকিয়েও থমাসকে জিতিয়ে আনা ও আনিতার অভিযোগকে মামুলি পুরুষের ক্ষণিকের মতিভ্রমের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখানোর জন্যে উঠেপড়ে লেগেছেন রাষ্ট্রপতি। সেনেটেও ব্যাপকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানরা। ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির উপরে একেবারে বুলডোজার চালিয়ে দিলেন সিনিয়র বুশ। থমাসের মনোনয়নকে নিয়ে এসে ফেললেন সেনেটের ভোটাভুটির মধ্যে, যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েই বিতর্ক চাপা দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে থমাসকে বসানো যায়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল থমাসের মনোনয়ন জিতেছে; কিন্তু ৫২-৪৮ ভোটের তুচ্ছ ব্যাবধানে। বুশসাহেবের আর পিছোনোর পথ ছিল না। বসালেন থমাসকে সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু এই ঘটনায় যে চিরস্থায়ী প্রশ্নগুলো উঠে গেল, তাকে চাপা দিতে পারলেন না।
এই ঘটনা কিছুকাল থেকে ক্রমাগত পোক্ত হতে থাকা কৃষ্ণ-নারীচেতনাবাদ বা ব্ল্যাক ফেমিনিজমের ধারণাকে এমনভাবে বৈধতা দিয়ে গেল যে, কালো মেয়ের নিজস্ব জাতীয়তাবাদ, যা শোষণের দুটি লক্ষ্যবস্তু ‘কালো’ ও ‘মেয়ে’-কে সামনে রেখে উচ্চারণের স্তরে আসছিল, তাকে চিৎকারে পরিণত করে দিল। চামড়ার রঙের কারণে শোষণ বিশ্ব ইতিহাসের সবথেকে বড়ো অধ্যায় ও চলমান অধ্যায়। সব থেকে বড়ো বিড়ম্বনাও। তার কেবল দেশে দেশান্তরে পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশ পায়। সমাপ্ত হয় না। কিন্তু আনিতা হিল বিতর্ক শোষণের আরও সম্ভাব্য গভীরতার কথা জানান দিয়ে গেল। কৃষ্ণাঙ্গ অবদমনের সমাপ্তি বা নারীর উপর চলমান সামাজিক অবদমনের সমাপ্তি কামনা করলেই শুভ বোধের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে না। চাইতে হবে ‘কালো’ ‘নারী’-র উপর অবদমনের সমাপ্তি। কারণ তাঁরাই পৃথিবীর সর্বাধিক সম্ভাব্য শোষিতদের তালিকার সব থেকে অবহেলিতদের স্তরে অবস্থান করছেন। তাঁরা কেবল শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা নির্যাতিত নন, কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের দ্বারাও সমানভাবে নির্যাতিত হওয়ার সম্ভাবনাযুক্ত। শ্বেতাঙ্গ পুরুষ, শ্বেতাঙ্গ নারী, কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ ইত্যাদি চামড়াভিত্তিক সামাজিক স্তরগুলির প্রত্যেকটির দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার মতো ভালনারেবল পাটাতনে অবস্থান করছেন কৃষ্ণ নারীরা। স্বাভাবিকভাবেই কৃষ্ণ নারীচেতনাবাদ বা ব্ল্যাক ফেমিনিজম্ হয়ে উঠেছে বিশ্বের সম্ভাব্য সর্বাধিক অবহেলিত জাতির জাতীয়তাবাদী ভাষ্য।
ব্ল্যাক ফেমিনিজমের মোদ্দা কথা হল কালো মেয়েদের অধিকারের জায়গাটা পৃথিবীর সমস্ত শোষিত মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের লেজুড় হিসেবে বিবেচনা করলে চলবে না। যারা সেই অর্থে নানাভাবে শোষিত ও সমানাধিকারের লড়াই করছেন, তাঁরাও ক্ষেত্রবিশেষে কালো মেয়েদের দুনিয়ায় শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন। মানুষের সমাজের সবথেকে বেশি শোষণ সম্ভবত যৌনতার ক্ষেত্রে হয়ে আসছে। সেটা ভিক্টোরীয় শুদ্ধতার আগেও ছিল। পরেও আছে। বরং ভিক্টোরীয় শুদ্ধতার পরবর্তী কালে সেই শোষণ-সম্ভাবনা বেড়েছে। যৌনতা বৈধ-অবৈধের বাইনারি পেয়েছে। দাম্পত্যের প্রত্যঙ্গ হিসেবে চার-দেওয়ালবন্দি হয়েছে। নিষেধের প্রাচীর উঠেছে তাকে ঘিরে। যৌনতার বয়েস, যৌনতায় ব্যবহৃত প্রত্যঙ্গ, যৌনতার মেরু, যৌনতার সময়, যৌনতার স্থান, যৌনতায় অংশগ্রহণকারী মানুষগুলির মধ্যেকার সামাজিক সম্পর্ক, লিঙ্গপরিচিতি এইসব বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রীয় মদতে বিধান তৈরি হয়েছে। সেই মতো তৈরি হয়েছে যৌনতা নিয়ে মানুষের টেস্ট। মানুষ অপছন্দ করতে শিখেছে সমস্ত রকমের সমকামিতা। কারণ তা নন-প্রোডাক্টিভ। রাষ্ট্রের কোনও কাজে লাগে না। মানুষ নিন্দা করেছে দাম্পত্যের মধ্যে না থাকা নারী পুরুষের যে কোনও ধরনের যৌন মেলামেশা। মানুষ নিষেধ করেছে স্বমেহন, মৌখিক যৌনতা, পায়ুকাম, যৌথ কামাচারের মতো রাষ্ট্রবিধানের বাইরে থাকা যেকোনও যৌন অনুশীলন।
যৌনাচারকে নিয়ে যে সমস্ত উদ্দীপক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, বা হয়ে আসছে, সেখানে পুং-প্রত্যঙ্গেরই জয়জয়কার ঘোষিত হয়েছে। নারী ও নারী প্রত্যঙ্গকে পুং-প্রত্যঙ্গের আরাম-আয়েসবিধানের উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু সব থেকে বেশি ঘৃণা ধাবিত হয়েছে কালো মেয়ের যৌনতা, যৌন প্রত্যঙ্গগুলির দিকে। সুচতুরভাবে মানুষের ‘স্বাভাবিক’ (?) রুচির খাতায় কালো রং নিয়ে যে অস্বীকারের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছিল সহস্রাব্দের ষড়যন্ত্রে, তাকে কালো মেয়েদের যৌনাঙ্গ ও যৌনতার প্রতি প্রতিক্রিয়া বা দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। যৌনাচারের চলচ্চিত্রগুলিতেও কালো মেয়েদের প্রতি ব্যবহার বিকৃতির সমতুল করে তোলা হয়েছে। উত্তর-ভিক্টোরীয় সমকালে যৌনতা বিষয়টাই একপ্রকার নিষেধের নির্বাক এলাকা পরিগ্রহ করেছে। সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ নারীর যৌনতা বিদ্বেষের তলানিটুকু নিয়ে সাইডলাইনে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। ব্ল্যাক ফেমিনিজমের বিশ্লেষণের জায়গা সেটাও। কালো রঙের যৌন প্রত্যঙ্গগুলির চাহিদা, আকার, বিশেষত্ব, সেগুলির উপর নেমে আসা ঘরের বাইরের নিগ্রহগুলি নিয়ে দ্বিধাহীন হতে চায় কৃষ্ণ-নারীচেতনাবাদ। নিজের মতো মানুষগুলির চাহিদা নিয়ে সোচ্চার হওয়াও জাতীয়তাবাদের একটা দিক। নারীর যদি দেশ না থাকে, ঘর না থাকে, শাস্ত্রস্বীকৃত সম্পদ না থাকে, তবে শরীরই তার দেশ, প্রত্যঙ্গই তার সম্পদ, চামড়ার রং-ই তার জাতীয়তা। কৃষ্ণ নারীচেতনাবাদ সেইরকম একটা জাতীয়তাবাদী অবস্থান নিতে চায়।
যৌনতার পাশাপাশি জাতিতত্ত্বের বিষয়টা আমাদের নজরে আসে। কারা এই পৃথিবীর উন্নততম জাতি, তা নিয়ে লড়াই-ঝগড়া আজকের না। এগুলোর মতো উটকো, উৎকট বিষয় আর না থাকলেও মানবের ইতিহাসে এই বিষয়টা বারবার কালশিটে ফেলেছে। সে ক্রুসেড বলি, থার্ড রাইখের উত্থান বলি, খিলাফত বলি বা ইদানীং গজিয়ে ওঠা হিন্দুরাষ্ট্রের অ্যাজেন্ডা; বিষয়টির উদ্বমন বারবার মানবসভ্যতায় একটা রাজনৈতিক অভিমুখ হিসেবে থেকেছে। এই দাবিগুলির একটাই প্রকৃতি, মনোপলি। আমি থাকব, আমরা থাকব, তুমি থাকবে না, তোমরাও না। হয় তুমিগুলো আমি হয়ে যাও, না হলে আমিগুলির যাবতীয় বায়না মেটাও শ্রেণিগতভাবে দ্বিতীয় সারণিতে থেকে, না হয় ফুরিয়ে যাও। আমরা এমন একটা সমাজে বসবাস করছি, বেল হুকসের ভাষায় যা প্রকৃতিগতভাবে সাম্রাজ্যবাদী, শ্বেত-শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী, পুঁজিবাদী ও পিতৃতান্ত্রিক। খুব স্বাভাবিক ভাবে জাতি শ্রেষ্ঠত্বের ঝগড়ায় স্বাভাবিক ক্ষতিগ্রস্ত দলের প্রথমদিকেই দাঁড়িয়ে থাকবেন কালো মেয়েরা। দুনিয়ার যত কালো মেয়ে, জরুরি নয় তাঁকে নেগ্রিটো জনশাখার হতেই হবে, গাত্রবর্ণে কালো হলেই তাঁর এই শ্রেষ্ঠত্বের পিলারের তলায় চাপা পড়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তাঁরা নারী বলে শোষিত বা অবহেলিত বা অত্যাচারিত হবেন এমন না। তাঁরা কালো বলেও যে শোষিত, অবহেলিত, অত্যাচারিত হবেন এমটাও নয়। তাঁদের নির্যাতনের লক্ষ্যবস্তু হওয়া বা অত্যাচারিত হওয়া ‘কালো-নারী’ হওয়ার জন্যে এবং এই সেক্টটি একেবারে অবিভাজ্য। কালোর উপর অত্যাচার বা নারীর উপর অত্যাচারের থেকেও এই নির্যাতনের প্রকৃতি একেবারে ভিন্ন হয়ে যায় ওই জাতিতত্ত্বের দরুন উদ্ভূত প্রথাগত ঘৃণার কারণে। একারণেই কিম্বারলে ক্রেনশাও ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে কালো নারীদের বিচারের ক্ষেত্রে ‘intersectionality’-র মতো শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছিলেন, যেখানে কালো ও নারী হওয়ার বিষয়টি স্বাধীনভাবে গুরুত্ব পাবে। গুরুত্ব পাবে তাদের মধ্যে আন্তর্সম্পর্ক। সেই বিচার থেকেই অসাম্যের সম্ভবত সবথেকে নিকৃষ্ট নগ্ন চেহারাটির উপর থেকে আচ্ছাদন খসে পড়বে।
১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের আশেপাশে যখন মার্কিনদের মধ্যে নাগরিক অধিকারের লড়াই চলছে জোরদার, তখন সে আন্দোলন থেকে সুচারুভাবে নারী নেতৃত্বের বিষয়টি ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। শক্তপোক্ত জোয়ান-মর্দরা নারীদের নেতৃত্বে অধিকার আদায়ের লড়াই করতে পথে নামবেন, স্ট্যাচু অফ লিবার্টির দেশ দৃশ্যত ততখানি লিবারাল ছিল না। তবে এর প্রতিবাদ এসেছিল সমকালীন নারীচেতনাবাদীদের তরফ থেকে। কৃষ্ণাঙ্গ নারী সমাজকর্মীরা দেখলেন, সে প্রতিবাদে কেবল মধ্যবিত্ত শ্বেতাঙ্গ নারীদের প্রতিনিধিত্বের জন্যেই আওয়াজ তোলা হয়েছে। এখান থেকেই তাঁদের মনে হয়, ফেমিনিজম্ তাঁদের কথা বলে উঠতে পারবে না। ফেমিনিজমের মধ্যে লিঙ্গগত সীমাবদ্ধতার মধ্যযুগীয় ধারণার বিপক্ষ নিয়ে যতটা কণ্ঠ রয়েছে, গাত্রবর্ণ সংক্রান্ত ধারনা নিয়ে তার তিলার্ধ সচেতনতাও নেই। ফেমিনিজমে যে নারীকথা বলা হবে তার থেকে কালো মেয়েদের সমস্যাগুলো অনেক বেশি মৌলিক, অনেক বেশি গভীর। এই উপলব্ধি থেকেই পরবর্তী এক দশকের মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন নারীকুল কৃষ্ণাঙ্গ নারীচেতনাবাদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করতে থাকলেন। আনিতা হিল বিতর্ক তাকে আরও গতি দিয়েছিল সন্দেহ নেই। তাঁরা নিজেদের সীমা বিস্তারের অগ্রহ থেকেই কৃষ্ণ-জাতীয়তাবাদ, সমকামী স্বাধীনতা, যৌনতায় লিঙ্গঅধীনতার মতো বিষয়গুলিকে বিশ্লেষণে অন্তর্ভুক্ত করে গেছেন। এভাবেই সমাজদর্শন আলোচনার মূল স্রোতে নিজেদের শক্তিশালী প্রবাহ সন্নিবিষ্ট করেছে কৃষ্ণ-নারীচেতনাবাদ।
কৃষ্ণ-নারীচেতনাবাদের মধ্যে একুশ শতকে এসে এতখানি শক্তি সঞ্চারিত হয়েছে যে, তারা সাধারণ নারীচেতনাবাদী আলোচনাকে শ্বেত-নারীচেতনাবাদ হিসেবে দেখতে তথা নিন্দা করতে চাইছেন। তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিতে শুধু লিঙ্গশোষণ সাধারণ নারীচেতনাবাদের মূল ধর্তব্য হওয়ায় ও সামাজিক পিতৃতান্ত্রিকতা তাকে কিছুটা কথা বলার জায়গা করে দেওয়ায় তার মধ্যেকার শক্তি বিনষ্ট হয়ে গেছে। তা ক্রমাগত হয়ে উঠেছে পুরুষতান্ত্রিক সুবিধাবাদের সামাজিক রক্ষাকবচ। পিতৃতান্ত্রিকতার বিরোধিতায় তার জন্ম হলেও নিজেদের আলোচনায় সমস্ত পিতৃতান্ত্রিকতার বিরোধী চল বা ভ্যারিয়েবলস্ সন্নিবিষ্ট না করতে চাওয়ায় কৃষ্ণ-নারীচেতনাবাদী প্রবক্তারা সাধারণ ফেমিনিস্টদের পিতৃতান্ত্রিকদের প্রতি কৃতজ্ঞ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। তাঁদের মতে ফেমিনিস্টদের কেবলমাত্র লিঙ্গকেন্দ্রিক সচেতনতা বৃহত্তর নারীজাতির প্রতি চলমান শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, করে চলেছে। ফলে কৃষ্ণ নারীচেতনাবাদ একইসঙ্গে পিতৃতান্ত্রিকতা, জাতিতত্ত্ব এবং সাধারণ ফেমিনিজমের প্রতি সমানভাবে খড়্গহস্ত থাকতে চায়। রাখতে চায় নিজেদের স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদী কণ্ঠস্বর।
অ্যালিস ওয়াকারের ‘রমণীবাদ’ (Womanism) থেকেই এই কৃষ্ণ নারীচেতনাবাদ পাখা মেলতে শুরু করেছিল। পরে বেল হুকস, কিম্বারলে ক্রেনশাও, অ্যাঞ্জেলা ডেভিস, প্যাট্রিসিয়া হিল কলিন্স এই মতবাদের তাত্ত্বিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়েছেন, সমাজদার্শনিক আলোচনার মূল স্রোতে নিয়ে এসেছেন। দাস প্রথার ঐতিহাসিক পরিসমাপ্তি খাতায় কলমে অনেক আগে হয়েছে। কৃষ্ণ নারীচেতনাবাদের আধুনিক তাত্ত্বিকরা দেখিয়েছেন দাসব্যবস্থা খাতায়-কলমে শেষ হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে তার কেবল প্রকৃতিতে বদল হয়েছে। পুঁজিবাদী পিতৃতান্ত্রিক বিশ্ব-ব্যবস্থায় কৃষ্ণাঙ্গ নারীরাই নব্যদাস। তাদের শরীর, মন, সম্ভ্রমের সঙ্গে যে কোনও কিছুই করা চলে। তাঁরা ‘আফ্রিকানা ডায়াস্পোরা’-র কথা বলতে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন। এও এক জাতীয়তাবাদী নির্বাচন। তাঁরা স্পষ্ট করতে চেয়েছেন কালো মেয়েদের সমস্যা আর মেয়েদের সমস্যা কখনোই এক শর্তে বিচার করা যেতে পারে না। কালো মেয়েদের সমস্যা ওই আফ্রিকানা ডায়াস্পোরার মধ্যে এনে বিচার করতে হবে। বুঝতে হবে পিতৃতান্ত্রিক আইনের শাসন শুরু হওয়ার মুহূর্ত থেকে কালো নারী শরীরগুলো নিজেদের উপর থেকে অধিকার হারিয়েছেন, হারিয়েছেন আত্মনিয়ন্ত্রণ। ফলত ‘আইনত’ ধর্ষিতা হতে হয়েছে কালো শরীরের নারীদের। কৃষ্ণাঙ্গদের জন্যে সমাজে মানবিকতার বোধ ক্রমাগত জাগতে থাকলেও তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনও উপকার কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা পাননি। কারণ তাঁদের ঘরেও তাঁরা কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষটির কৃষ্ণবর্ণের পুংলিঙ্গটির শাসন থেকে মুক্ত ছিলেন না, হুমকি থেকে মুক্ত ছিলেন না। কৃষ্ণাঙ্গদের জন্যে মার্কিনমুলুকে আইন তৈরি হল। কিন্তু সে আইন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাদের সমস্যাগুলোর কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারল না। কারণ কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাদের সমস্যাগুলি বোঝার জন্যে তাঁদের পৃথক অস্তিত্বের কথা যে প্রথমে স্বীকার করে নিতে হয়, তা প্রচলিত ব্যবস্থার কর্ণধারদের হৃদয়ঙ্গম হয়নি। তাঁদের কাছে কৃষ্ণাঙ্গ মহিলারা তখনও ছিলেন স্থাবর সম্পত্তি। ফ্রেডেরিক ডগলাস ছিলেন উনিশ শতকের এমন একজন মানুষ, যিনি উপলব্ধি করেছিলেন কৃষ্ণাঙ্গরাও মানুষ, এই ধারণাটা থেকেই বিশ্ব মুখ ফিরিয়ে বসে আছে। তাঁর থেকেই ‘Black lives matters’ আন্দোলনের সূত্রপাত। কৃষ্ণাঙ্গ নারীচেতনাবাদের উত্তর বিশশতকীয় আলোচনায় সেই অনুভবই ফিরে এসেছে ‘Black women lives matters’-এর মুখরতায়।
১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে আন্না জুলিয়া কুপারের লেখা ‘A Voice from the South’ সম্ভবত কৃষ্ণ-নারীচেতনাবাদের আভাস নিয়ে লেখা প্রথম পূর্ণাঙ্গ বই। অত্যন্ত সাবলীলভাবে শ্বেত নারী আর কৃষ্ণ নারীর সমস্যার পার্থক্য তুলে ধরেছেন কুপার তাঁর বইতে। তিনি জানাচ্ছেন শ্বেত নারীরা যখন শিক্ষার অধিকার নিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী স্বপ্ন দেখছেন তাঁর একটা ভোট দেওয়ার অধিকার হবে একদিন, যে ভোট তাঁর দেশের মধ্যে নিজের অস্তিত্বের প্রমাণপত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। শ্বেত নারীর লক্ষ্য যখন জীবনটাকে পুরুষের মতোই অর্থপূর্ণ করে তোলা, তখন একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী চাইছেন জীবনের অস্তিত্বটা স্বীকৃতি পাক, নিরাপদ হোক। শুধু শ্বেতাঙ্গদের সুবিধায় তৈরি হওয়া সামাজিক কানুনের থেকেই কৃষ্ণ নারীরা নিরাপত্তা চাইছিলেন না, চাইছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের থেকেও। সেখান থেকেই কালার্ড্ মহিলাদের সংগঠন পাশ্চাত্যে ছড়িয়ে পড়তে থাকে বিশ শতকের শুরু থেকেই। ক্রমে সেখানে নানা স্রোত এসে মিশতে থাকে। কিছুটা বামপন্থী ঝোঁকও বিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে এই আন্দোলনের মধ্যে এসেছে। এসেছে কৃষ্ণাঙ্গ নারী মজদুরদের পৃথকভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা। কিন্তু কৃষ্ণ-নারীচেতনাবাদকে অপেক্ষা করতে হয়েছে তার দার্শনিক পূর্ণতার জন্যে ততদিন, যতদিন না এই আলোচনায় অন্তঃবিভাগীয়তা বা intersectionality-র আলোচনা সন্নিবিষ্ট হয়েছে। সামাজিক সুবিধার নিরিখে লিঙ্গ, জাতি, সামাজিক বর্ণ, যৌনতার অক্ষ, সংস্কৃতি, শ্রেণি, ধর্ম, ওজন, শারীরিক গঠন, গাত্রবর্ণ, উচ্চতা, উপস্থাপন ইত্যাদি মানুষলগ্ন বিবিধ বিষয়কে আলোচনার স্বাধীন অথচ পরস্পর সংযুক্ত বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে নিয়ে যে বিশ্লেষণ, তাকেই ইন্টারসেকশনালিটি বলা চলে। কৃষ্ণ নারীচেতনাবাদের আঁতের কথা এটাই। এখানেই সে বহুস্বরিত।
রোজা পার্ক থেকে রেসি টেলর বা মায়া এঞ্জেলিউ, কৃষ্ণ-নারীচেতনাবাদের নানা প্রবক্তার ব্যক্তিগত জীবনের দিকে তাকালেই বুঝি তাঁরা নানা সময়ে ধর্ষিতা হয়েছেন। তাঁরা আসলে বলতেও চেয়েছেন ধর্ষণ আসলে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের উপর নামিয়ে আনা যৌনবিকার নয়। কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা ‘স্বাভাবিক ধর্ষিতা’ হন। ধর্ষণের শিকার হননি এমনি কৃষ্ণাঙ্গ নারী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এমনকি কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা ব্যাপকভাবে শ্বেতাঙ্গ মহিলাদের হয় ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে, নয় যৌনদাসী হয়ে সেবা দিতে বাধ্য হয়েছে। এই কাণ্ড শুধুমাত্র যৌন বিকারের ফসল হতে পারে না। কারণ ধর্ষণে যৌনতার মজা পাওয়া বেশিরভাগ সময়েই অসম্ভব। বরং ধর্ষণের প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়ায় আহত হওয়ার সম্ভাবনা ষোলআনা। তবু কেন এমন হয়, এর কারণ সন্ধান করতে গিয়ে এই ইন্টারসেকশনালিটির বিষয়টা খুব প্রকট হয়ে উঠেছে। শ্বেতাঙ্গ পুরুষ, শ্বেতাঙ্গ নারী, কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ, এমনকি তুলনায় বলশালী কৃষ্ণাঙ্গ নারীর মাধ্যমেও যে একজন কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ের যৌন ও সামাজিক নিরাপত্তা যে বিঘ্নিত হল, তার কারণ সামাজিক চল বা ভ্যারিয়েবলসগুলি দেখিয়ে দিতে চায় তাঁর সামাজিক অস্তিত্ব টিকেই আছে এই নির্যাতনের প্রয়োগক্ষেত্র হিসেবে। তিনি প্রকৃতপ্রস্তাবেই সামাজিক ‘স্বাভাবিক’ প্রবণতার ডার্টবোর্ড।
কৃষ্ণ-নারীচেতনাবাদ এইসবের প্রতিরোধ হিসেবে নিজেকে জানা, নিজের অস্তিত্বকে জানা, নিজের নির্যাতিততম সারসত্তাকে জানা ও তাকে জাগিয়ে তোলার পক্ষে সওয়াল করে। নিজেদের প্রতি হওয়া প্রতিটি অন্যায়ের প্রতিকার করার জন্যেই সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি করার পক্ষে আওয়াজ তুলতে চান এই মনোভাবের প্রতিনিধিরা। তাঁরা মনে করেন কালো চামড়ার নারী না হলে তাঁদের সমস্যা সামাজিকস্তরে তুলে ধরার কাজ অন্য কেউ করতে পারবেন না। ভারতবর্ষের জাতীয় জীবনের সঙ্গে বিষয়টার প্রয়োজনীয়তা বা কোনও সংযোগ নেই, এমনটা নয়। নীরদচন্দ্র চৌধুরী মনে করেছেন, ভারতীয়রা নিজেদের আর্য জাতির শাখা মনে করে কিছুটা শ্লাঘাবোধ করেন। অথচ আর্যজাতির উজ্জ্বল শ্বেত গাত্রবর্ণ থেকে তাঁরা বঞ্চিত। ভারতীয় সমাজে শ্বেত গাত্রবর্ণ নিয়ে একটা অতিরিক্ত মোহের উপস্থিতির কারণ হিসেবে শ্রীচৌধুরী সেই বঞ্চিত হওয়ার খেদকেই দেখিয়েছেন। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে দীর্ঘ সময় ধরে শ্বেতাঙ্গের হাতে ঝাঁটা-জুতো খেয়ে ভারতীয়দের মধ্যে যে ফ্রয়েডীয় প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল, তাইই এই শ্বেতপ্রীতির পিছনের ইতিহাস। কারণ যাই হোক না কেন, সমীক্ষা বলছে (‘আনন্দবাজার পত্রিকা’, ৪ আশ্বিন, ১৪২০, শনিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩) ভারতের শতকরা আশি শতাংশ মহিলা মনে করেন শ্বেত গাত্রবর্ণ তাদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার মানদণ্ড। মহিলারা যেহেতু প্রজন্মের জমি, সেকারণেই মেয়েদের শ্বেত গাত্রবর্ণের আবশ্যিকতা ভারতীয় সমাজের পক্ষে উত্তীর্ণ হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। নিনা দাভুলুরি ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ‘মিস আমেরিকা’ খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন। একজন এশীয় তথা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলা পেয়ে গেলেন ‘মিস আমেরিকা’-র খেতাব ! সমকালীন শ্বেতাঙ্গ মার্কিনি সমাজ ছিছিকার শুরু করেছিলেন এই নির্বাচন নিয়ে। নিঃসন্দেহে তা ছিল মার্কিনি শ্বেতাঙ্গ সমাজের পক্ষে নেতিবাচক অভিব্যক্তি। কিন্তু তার জন্যে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, একটা অংশ কিন্তু সে দ্বিধা কাটিয়ে উঠে এই নির্বাচন করতে পেরেছিলেন। ভাবুন তো! নিনা তো ভারতীয়! ভারতীয় কোনও সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় তিনি মনোনীত হতে পারতেন! এক্ষেত্রে একটাই শব্দ আমরা উচ্চারণ করতে পারতাম, পারি, পারব— ‘না’। ‘না’ এবং ‘না’। যে দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে ফর্সা হওয়ার মলমের বিক্রির শতাংশ, যেদেশে চামড়ার উপর প্রসাধনী হিসেবে ব্লিচিং ব্যবহারের কোনও সীমারেখা নেই, সেখানের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় প্রবেশের ছাড়পত্রও জুটত না নিনার। প্রতিদিনের ‘পাত্র-পাত্রী’-র বিজ্ঞাপন দেখে আমাদের আর আলাদা করে উচ্চারণ করতে হবে না, এদেশেও কালো মেয়েদের অধিকার আদায়ের একটা ভাষ্য কৃষ্ণ-নারীচেতনাবাদের মধ্যে ছড়িয়ে আছে। তাকে নিয়ত প্রাসঙ্গিক করে তুলছে।
কৃষ্ণ-নারীচেতনাবাদে কৃষ্ণাঙ্গদের উপর হওয়া সামগ্রিক গাত্রবর্ণকেন্দ্রিক অবিচারের থেকেও তাঁরা নিজেদের সম্পর্কহীন করে নিতে চান। কারণ তাঁরা নিজেদের জাতীয়তাকে এতটাই মৌলিক মনে করেন। নিজেদের সমস্যার প্রকৃতিগুলিকেও। তাঁদের প্রকট রাজনৈতিক অবস্থান আসলে অস্তিত্বের রাজনীতি। শুধু স্বীকৃতি না, সহস্রাব্দের অত্যাচার বুকে নিয়েও অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারার প্রামাণিকতায় জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদারও হতে চান তাঁরা। আর এখানেই কিছুটা সিঁদুরে মেঘের পূর্বাভাস রয়েছে। এই বর্ণান্ধতা কোথাও আর একটা সম্ভাব্য নিগ্রহের ইতিবৃত্ত লিখবে না তো! আমাদের কাছে অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাতীয়তাবাদী পঙক্তির সন্ধান দিয়েছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। পঙক্তিটি সরল করলে দাঁড়ায়, পরজন যদি গুণান্বিতও হন, তবু তিনি পরিত্যাজ্য কেবল গোষ্ঠীর নন, এই বিধানেই। সেক্ষেত্রে নির্গুণ নিজগোষ্ঠীর সদস্যের সমস্ত অন্যায় কেবল আত্মীয়তার শর্তেই মেনে নিতে হবে। কৃষ্ণ-নারীচেতনাবাদ এই একবিংশ শতকের তাত্ত্বিক চেহারায় যেভাবে একক প্রতিনিধিত্ব চাইছে কৃষ্ণাঙ্গপ্রধান দেশ বা প্রদেশগুলিতে, তাতে সেই জাতীয়তাবাদী কণ্ঠই যেন অনুরণিত হচ্ছে। আমরা উদারনীতির শর্তে তার সমসাময়িক প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করতে বাধ্য হলেও একেবারে যে চিন্তামুক্ত থাকলাম, তা নয়।
সূত্রঋণ :
১. Levi-Strauss, Claude, 1963, Author’s Preface to the French Edition, Structural Anthropology, UK, Hachette
২. Foucault, Michel, 28 November 1988, ‘Madness and Civilization : A History of Insanity in the Age of Reason’, New York, Abridged (Paperback Edition
৩. Hobsbawm, Eric, 8 April 2010, ‘Palmiro Togliatti : A Biography’ by Aldo Agosti translated by Vanna Derosas and Jane Ennis and ‘IL sarto di Ulm : Una possibili storia del PCI’ by Lucio Margi, London Review of Books, Vol.32, No.8
৪. Foucault, Michel, 29 March 1994, ‘The Order of Things : An Archaeology of the Human Sciences’, UK, Vintage Book Series, Penguin, P.13-57, 388-416
৫. Barthes, Roland, 2007, ‘Critique Et Verite’, UK, The Athlone Press, British Library data: 1.criticism 2.linguistics 3.french literature-history and criticism, Catalogue No. 801-95-PN-98.l.V
৬. Barthes, Roland, 1975, S/Z, New York, Hill & Wang, (Paperback Edition)
৭. Derrida, Jacques, 1982, ‘Margins of Philosophy’, Chicago, University of Chicago Press, Reprint
৮. Derrida, Jacques, 1st January 1990, ‘Glas’ (Paperback), America West, University of Nebraska Press
৯. ‘Reality Principles : An Interview with John R. Searle’,
REASON, Webpage viewed on 24 April, 2018, 11.35pm (IST)
১০. Kelly, Jennifer, 2003, ‘Black Feminist Consciousness’, New York, Routledge, p-56-57
১১. James, Staline M., 2003, ‘Black Feminism, Encyclopedia of Feminist Theories’, New York, Routledge, p-54-56