কৃষ্ণা বনদেবী ও সন্ধ্যামণি ফুল

শান্তনু চট্টোপাধ্যায়

‘প্রকৃতি তাঁর নিজের ভক্তদের যা দেন, তা অতি অমূল্য দান। অনেক দিন ধরিয়া প্রকৃতির সেবা না করিলে কিন্তু সে দান মেলে না। আর কি ঈর্ষার স্বভাব প্রকৃতিরাণীর— প্রকৃতিকে যখন চাহিবে, তখন প্রকৃতিকে লইয়াই থাকিতে হইবে, অন্য কোনো দিকে মন দিয়াছি যদি, অভিমানিনী কিছুতেই তাঁর অবগুণ্ঠন খুলিবে না।’[১] 

‘আরণ্যক’ উপন্যাসে যখন এই কথাগুলি লিখছেন লেখক তখনও যুগল প্রসাদের কাহিনি আসেনি, আসেনি জঙ্গলে তিন বছর কাটিয়ে ‘শহরকে একরকম ভুলিয়া গিয়াছি’।[২] এই স্পষ্ট ও দ্বন্দ্বোত্তীর্ণ মানসিক অবস্থা বর্ণনা করেছেন নবম পরিচ্ছেদে। নবম পরিচ্ছেদের শুরুর কথাগুলি — ‘প্রায় তিন বছর কাটিয়া গিয়াছে। এই তিন বছরে আমার অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে। লবটুলিয়া ও আজমাবাদের বন্য প্রকৃতি কি মায়া-কাজল লাগাইয়া দিয়াছে আমার চোখে — শহরকে একরকম ভুলিয়া গিয়াছি। নির্জনতার মোহ, নক্ষত্রভরা উদার আকাশের মোহ আমাকে এমনি পাইয়া বসিয়াছে যে, মধ্যে একবার কয়েক দিনের জন্য পাটনায় গিয়া ছটফট করিতে লাগিলাম কবে পিচ-ঢালা বাঁধা-ধরা রাস্তার গণ্ডি এড়াইয়া চলিয়া যাইব লবটুলিয়া বইহারে — পেয়ালার মত উপুড় করা নীল আকাশের তলে মাঠের পর মাঠ, অরণ্যের পর অরণ্য, যেখানে তৈরী রাজপথ নাই, ইটের ঘর বাড়ী নাই, মোটর-হর্ণের আওয়াজ নাই, ঘন ঘুমের ফাঁকে যেখানে কেবল দূর অন্ধকার বনে শেয়ালের দলের প্রহর-ঘোষণা শোনা যায়, নয়তো ধাবমান নীল গাইয়ের দলের সম্মিলিত পদধ্বনি, নয়তো বন মহিষের গম্ভীর আওয়াজ।’[৩] প্রথম উদ্ধৃতিটির একটি বাক্যাংশে ‘অন্য কোন দিকে মন দিয়াছি যদি’ এবং দ্বিতীয় উদ্ধৃতির মধ্যে লবটুলিয়া বইহারের প্রাকৃতিক মোহময় আকাশ-অরণ্য-মাঠ-ধাবমান বন্যপ্রাণী, রাতের শিবাধ্বনির প্রতি সত্যচরণের চূড়ান্ত আগ্রহ যা নাগরিক জীবন থেকে তাঁকে ‘অনেক পরিবর্তন ঘটিয়েছে’ — এই দুই বর্ণনার মাঝে রয়ে গেছে লেখকের প্রায়-তিন বছরের কাছাকাছি সময়ে বয়ে চলা শহর জীবনের পূর্ব-অভিজ্ঞতার সঙ্গে আরণ্যক জীবনকে মানিয়ে নেওয়ার দ্বন্দ্ব। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের শুরুতে সত্যচরণ বলেছেন (কারণ, এই পরিচ্ছেদেই বনবাস ও শাহরিক জীবনাভিজ্ঞতার দ্বন্দ্বের ভাবখানি যেমন স্পষ্ট তেমন এই দুই মনোভাবের দুই রকমের মুগ্ধতাও রয়েছে।) ‘…এই আরণ্যক ভূমির নির্জনতা যেন পাথরের মত বুকে চাপিয়া আছে বলিয়া মনে হয়।’[৪] এই পরিচ্ছেদের ‘৩’-য় পর্বে সত্যচরণের অনুভূতির প্রকাশ— ‘দিন যতই যাইতে লাগিল, জঙ্গলের মোহ ততই আমাকে পাইয়া বসিল।’[৫] নিসর্গ-প্রকৃতিতে কতখানি আত্মমগ্ন হয়েছেন সত্যচরণ তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন — ‘এই মুক্তি ছাড়িয়া কলিকাতার গোলমালের মধ্যে আর ফিরিতে পারিব না।’ আসলে, ‘…এই মনের ভাব একদিনে হয় নাই। কতরূপে কত সাজেই যে বন্যপ্রকৃতি আমার মুগ্ধ অনভ্যস্ত দৃষ্টির সম্মুখে আসিয়া আমায় ভুলাইল!’[৬] সুতরাং, সত্যচরণের ‘অনভ্যস্ত দৃষ্টির’ পথে বন্য প্রকৃতির ‘রূপ’ ও ‘সাজ’ যে যে কারণে মুগ্ধতার মোহ-কাজল পরাল যাতে কলকাতার অনুস্মৃতিতে বারংবার দীর্ণ বাঙালিবাবু কলকাতা-কে ‘গোলমালের মধ্যে’ ঠেকতে শুরু করে — এই আখ্যানটাই-তো আসলে ‘আরণ্যক’ উপন্যাসের মূল আকর্ষণ। এসেছেন যে কাজের জন্য তা আখ্যানের আগে ‘প্রস্তাবনা’-তে উল্লিখিত — ‘এই স্বছন্দ লীলাভূমি আমার হাতেই বিনষ্ট হইয়াছিল।’ আবার, উপন্যাসের সমাপ্তিতেও জানিয়েছেন ‘…ক্ষমা করিও আমায়। বিদায়!…’ 

বিচিত্র ঋতুর প্রেক্ষিতে, অনভ্যস্ত পরিবেশে, দিন-রাত, আঁধার-জ্যোৎস্নায় অরণ্য প্রকৃতির সুন্দর ভয়ংকর দৃশ্য সমূহ আর সেই অরণ্যভূমি সংলগ্ন বিচিত্র মানুষ-মানুষীর সংস্পর্শে আসতে আসতে আসলে আরণ্যক জীবন-আখ্যান গড়ে ওঠে। ‘আরণ্যক’-এর আখ্যান-স্তরগুলি ভাঙলে আমরা শুরু থেকে লক্ষ করি ঋতু প্রেক্ষিত ও নিসর্গ প্রকৃতিকে সঙ্গে নিয়ে ধারাবাহিক একটা চক্রে বেঁধেছেন লেখক। আরণ্যক আখ্যানে ঋতুর পট-পরিবর্তনে এসেছে গ্রীষ্মের নানা রূপ রং, এসেছে বর্ষা, শীত, হেমন্ত, বসন্ত। শীত ঋতু দিয়ে অরণ্যে প্রবেশ এবং হেমন্ত ঋতুতে আখ্যানের সমাপ্তি। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের ঋতু শীতকাল। কিন্তু ‘৫’পর্বের প্রেক্ষিত-পরিবেশ গ্রীষ্ম। তৃতীয় পরিচ্ছেদ গ্রীষ্মকাল। চতুর্থ পরিচ্ছেদের শুরুই হচ্ছে ‘বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ কাটিয়া গিয়া আষাঢ় পড়িল।’ পঞ্চম পরিচ্ছেদ শীতকাল। তাহলে, এ পর্যন্ত (পঞ্চম পরি:, ‘১’ ম পর্ব) শীত গ্রীষ্ম বর্ষা হয়ে শীত এল। মাঝে শরৎ-হেমন্ত-বসন্ত এই তিন ঋতু তখনও অনুপস্থিত। পঞ্চম পরিচ্ছেদের ‘২’-য় পর্বে শীত শেষে বসন্ত ঋতু — ‘শীত শেষ হইয়া বসন্ত পড়িয়াছে।’ ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে চৈত্র মাসের উল্লেখ পাচ্ছি (‘চৈত্র মাসের দিকে দুইটি লোক কাছারিতে আমার সঙ্গে দেখা করিল।’ (পর্ব’১’) সপ্তম ও অষ্টম পরিচ্ছেদের ঋতু পরিবেশ বসন্ত। নবম পরিচ্ছেদের পর্ব ‘৩’-এ ‘সরস্বতী পূজার দিন-দশ-বারো পরে’-র ঘটনা। দশম পরিচ্ছেদে ‘হাড় ভাঙা শীত’। একাদশ ও দ্বাদশ পরিচ্ছেদে ঋতুর স্পষ্ট উল্লেখ নেই। ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদের ঋতু শ্রাবণ মাস, চতুর্দশে ফাল্গুন মাস, পঞ্চদশে ‘শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি’ এবং ষোড়শ পরিচ্ছেদ শ্রাবণ মাসের — ‘মাস তিন চারের মধ্যে’ সপ্তদশ পরিচ্ছেদে কার্তিক মাসের পড়ন্ত শীত এবং অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ হেমন্ত। ফলে, ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে প্রাকৃতিক পরিবেশের রূপবদল ও সৌন্দর্য অনুভবের নানা মাত্রাকেও সত্যচরণ পেয়েছেন।[৭] এরসঙ্গে এক এক ঋতুর আরণ্যক শোভা সৌন্দর্য, তার ভয়ংকরতা রহস্যময়তা, জ্যোৎস্না, বনাঞ্চলের আকাশ, লতা গুল্ম বৃক্ষরাজি তৃণ, নানা বনফুল ও বনফল, আরণ্যক পাখি বন্যপ্রাণীর দল তাদের জল খেতে আসা, ঘুরে বেড়ানো এবং সর্বোপরি কথক-নায়ক-দ্রষ্টা সত্যচরণের আখ্যানে সদা সচলতার সতর্ক দৃষ্টির কারণে মুসম্মত কুন্তার মত নারীর অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে থেকে ম্যানেজারবাবুর উচ্ছিষ্ট ভাত খাওয়ার আখ্যানগুলির মধ্যে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রকৃতির স্বাদ যেন পাঠকের কাছে অনুভূত হয়। বস্তুত, কথক-নায়ক-দ্রষ্টা সত্যচরণ একস্থানে স্থির থেকে কাহিনিকে বর্ণনা করেননি, তিনি ভাগলপুরের বিস্তৃত অরণ্য পরিসরের ভেতর বাইরে ঘুরেছেন যেমন — তেমন অসংখ্য বনবসতি গ্রাম-জনপদের মানুষদের বাড়ির মাঝেও প্রবেশ করেছেন। ফলে, অরণ্যে বসবাসকারী মানুষজন লোকালয়ে মিশেছে আবার লোকালয়ের মানুষ অরণ্যে ঢুকেছে। একারণে কাহিনিতে এসেছে অসংখ্য ঘটনা, অসংখ্য ছোটো বড়ো চরিত্র। 

বাস্তবে ভাগলপুরের আজমাবাদ, লবটুলিয়া, ইস্‌মাইলপুর, মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্টের প্রান্তসীমা আরণ্যক উপন্যাসের বিস্তৃত আখ্যান পরিসর। উপন্যাসটির রচনা কাল ‘১৯৩৭ থেকে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ’।[৮] ভাগলপুরের উদ্দেশে রওনা দেন ১৯২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি। ১৯৩০ সাল পর্যন্ত একটানা জমিদারিতে কাজ করেছেন কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯১৪)। উপন্যাসটির শুরুতে রয়েছে — ‘বি এন্‌ ডব্লুউ রেলওয়ের একটা ছোট স্টেশনে নামিলাম।’[৯] সরস্বতী পূজার দুই সপ্তাহ পরে এক ‘শীতের বৈকাল’-এ স্টেশনে নেমে পনের-ষোল ক্রোশ গরুর গাড়িতে সারারাত যাত্রা করে কাছারিতে পরের দিন ‘বেলা দশটার সময়’ পৌঁছালেন সত্যচরণ। ‘…শীতল সান্ধ্য বাতাসে তাজা মটরশাকের স্নিগ্ধ সুগন্ধে কেমন মনে হইল যে-জীবন আরম্ভ করিতে যাইতেছি তাহা বড়ো নির্জন হইবে, এই শীতের সন্ধ্যা যেমন নির্জন, যেমন নির্জন এই উদার প্রান্তর আর ওই দূরের নীলবর্ণ বনশ্রেণী, তেমনি।’[১০] বিকালের আলো-আঁধারে দেখা স্নিগ্ধ পরিবেশ-প্রেক্ষিত দূরত্বে এসে সকালের আলোয় হয়ে উঠল — ‘প্রাকৃতিক দৃশ্যও অন্যমূর্তি পরিগ্রহ করিয়াছে — ক্ষেত খামার নাই, বস্তি লোকালয়ও বড় একটা দেখা যায় না — কেবল ছোট বড় বন, কোথাও ঘন, কোথাও পাতলা,…।’[১১] শীতের বিকাল আসলে মাঘ মাসের শীত এবং ছোটো রেল-স্টেশনের পরিবেশ মায়াময় আকর্ষণীয় (‘বিস্তীর্ণ প্রান্তরে ঘন ছায়া নামিয়াছে, দূরে বনশ্রেণীর মাথায় মাথায় অল্প কুয়াশা জমিয়াছে।’)। চিত্রকল্প হিসেবে সেই বিকালের কুয়াশাচ্ছন্ন প্রেক্ষিতে মটর শাক ও মটর খেতের বর্ণের উল্লেখ করেননি, সঙ্গতভাবে বাতাসে তাজা স্নিগ্ধ সুগন্ধের বর্ণনা করেছেন। এই বর্ণনার সঙ্গে মিশে আছে শীতসন্ধ্যার নির্জনতা, উদার প্রান্তরের নির্জনতা এবং সত্যচরণের সম্ভাব্য কর্মস্থানটির নির্জনতা। আর, প্রত্যক্ষ যে-মাটি আকাশ ও কাছারির বর্ণনা দিয়েছেন তাতে ‘অন্যমূর্তি পরিগ্রহ করিয়াছে’। এই অন্যমূর্তিটি আসলে গত-বিকালের স্নিগ্ধতার বিপরীত। নিকটের দেখা হলেও তা প্রায়-সন্ধ্যার কুয়াশাচ্ছন্নতায় স্নিগ্ধ। কাছারির প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রেক্ষিত রৌদ্রময় আকাশ-মাটি-লোকালয়হীন খেতহীন রূঢ় ভূমি। প্রথম পরিচ্ছেদটির ‘৩’য় পর্বে লিখছেন— ‘শীতকালের এগার-ঘণ্টা ব্যাপী দিন, তা যেন খাঁ খাঁ করে শূন্য, কি করিয়া তাহা পুরাইব, প্রথম প্রথম সেইটা আমার পক্ষে হইল মহাসমস্যা।’[১২] সমস্যা সুরাহার ইঙ্গিত দিলেন বৃদ্ধ মুহুরি গোষ্ঠ চক্রবর্তী (‘জঙ্গল আপনাকে পেয়ে বসবে।’[১৩])। গোষ্ঠবাবু চলে গেলে কাছারির জানালা দিয়ে জঙ্গলের মাথায় চাঁদ দেখলেন সত্যচরণ, মুগ্ধ হলেন। জঙ্গলে এসে প্রথমে ছিল নেতি মন, ইতি পরে। এখন ইতি আগে (চাঁদ দেখা), নেতি পরে (‘চাকুরি করিবার আর জায়গা খুঁজিয়া পাই নাই! এ-সব বিপজ্জনক স্থান,আগে জানিলে কখনই অবিনাশকে কথা দিতাম না।’)[১৪] পরের বাক্যটি কিন্তু মুগ্ধতার — ‘দুর্ভাবনা সত্ত্বেও উদীয়মান চন্দ্রের সৌন্দর্য আমাকে বড় মুগ্ধ করিল।’[১৫]

সুতরাং, প্রথম পরিচ্ছেদেই রহস্যময়ী ‘প্রকৃতিরাণীর’ সঙ্গে কুয়াশামাখা শীতল বিকালে দূর থেকে পরিচয় ঘটল। সুবাতাসের স্নিগ্ধতা সত্ত্বেও নির্জনতা বোধে এক অস্পষ্ট কর্মস্থানের সম্ভাব্য নির্জনতা আড়ালে মোড়া ছিল, তা বাস্তব পরিবেশ-প্রেক্ষিতে খাঁ খাঁ শূন্যতায় ভরে উঠল। আবার, উদীয়মান চন্দ্রের সৈন্দর্যে মুগ্ধতার স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে জঙ্গলমহালে তিন বছর পর্যন্ত (নবম পরিচ্ছেদ পর্যন্ত বিস্তার) খাপ-খাইয়ে নেওয়ার মানসিক দ্বন্দ্বের শেষে আছে গোষ্ঠবাবুর পূর্বাভিজ্ঞতার কথাগুলিই। গোষ্ঠবাবু ‘মুঙ্গের’ (১ম পরিঃ, ২য় পর্ব) গিয়ে অরণ্য-ভূমি, অরণ্য-প্রকৃতির সবকিছুর জন্য অধীর হয়েছিলেন, আর সত্যচরণ ‘পাটনায়’ ( ৯ম পরিঃ, ১ম পর্ব) গিয়ে। সুতরাং, অরণ্য-প্রকৃতির ও আরণ্যক-পরিবেশের বাহ্যিক রূপের স্নিগ্ধতা থেকে অন্যমূর্তি ধরা, আর সত্যচরণের মনের মধ্যে সতেজ বাতাসে মটরশাকের গন্ধ ভেদ করে খাঁ খাঁ শূন্যতাবোধ থেকে গোষ্ঠবাবুর সান্নিধ্য, সান্নিধ্যের পর বন-জঙ্গলের মাথায় চাঁদ দেখায় মুগ্ধতার মাঝে যতটুকু আখ্যান সেটিই আসলে ‘অন্য কোন দিকে মন দিয়াছি যদি, অভিমানিনী কিছুতেই তাঁর অবগুণ্ঠন খুলিবে না।’ — এই অভিব্যক্তির সারবত্তাকে সত্য করে তোলে। অন্য কোনো দিকে মন না-দিয়ে ‘অভিমানিনী প্রকৃতিরাণী’-র রহস্যাবৃত অবগুণ্ঠন উন্মোচনের ফলেই পাঠকের সামনে মুসম্মত কুন্তার জীবনেতিহাস, ভানুমতীর সারল্য, রাখালবাবুর স্ত্রীর অপরিসীম অভাব, এবং অবশ্যই মঞ্চী, সুরতিয়া, ছনিয়াদের গায়ে আরণ্যক ঘ্রাণ পায়। অত্যন্ত অবহেলিত জীবনে বেঁচে থাকার নানা রঙের মধ্যে চওড়া হাসি, গভীর দুঃখের অশ্রুতে পাঠকের চিত্ত বেদনায় ভরে ওঠে। প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি সত্যচরণের খাপ-খাইয়ে নেওয়ার দ্বান্দ্বিক অবস্থান থেকে ধীরে ধীরে আরণ্যক জীবনের প্রতি তীব্র ভালোবাসার ফলে আমরা খুঁজে পাই বনোয়ারীলালের চাচাতো ভাই যুগল প্রসাদের মতো ‘খামখেয়ালী উদাসীন’ অথচ অরণ্য সৌন্দর্য বাড়াতে গাছ-লতা-গুল্মের জন্য পাগল চরিত্রটিকে। আমরা পাই বেঙ্কটেশ্বর প্রসাদ, রাজু পাঁড়ে, দোবরু পান্না বীরবর্দী, গনু মাহাতো, গনোরী তেওয়ারী, ধাওতাল সাহু, রাস বিহারী সিং, জয়পাল কুমার, গিরধারীলাল, নাটুয়া দশরথ, ধাতুরিয়া প্রমুখ মানব চরিত্রের বিচিত্র রূপ ও প্রকৃতিকে। মনে রাখতে হয় যে, সত্যচরণ অরণ্যভূমি ছেড়ে চলে আসার সময়-মুহূর্তটিকে ধরছেন এভাবে — ‘আমার বিদায় লইয়া আসিবার সময় একটি মেয়ে কাঁদিয়াছিল। আজ সকাল হইতে আসিয়া সে কাছারির উঠানে দাঁড়াইয়াছিল — আমার পাল্কি যখন তোলা হইল, তখন চাহিয়া দেখি সে হাপুস নয়নে কাঁদিতেছে। মেয়েটি কুন্তা।’[১৬] অন্যদিকে ‘বন্য বালিকা মঞ্চী’-র জন্য সত্যচরণের হৃদয়গভীরে জমে আছে দুঃখ আর হতাশা— ‘পারিলাম না কিছু করিতে সেই বন্য বালিকা মঞ্চীর। অভাগিনীকে কে কোথায় যে ভুলাইয়া লইয়া গেল! আজ সে যদি থাকিত তাহার নিজের নামে জমি দিতাম বিনা সেলামীতে।’[১৭] কয়েকটি বাক্যের পর ‘সুরতিয়া’ ও ‘ছনিয়া’ নাম্নী দুই বালিকা ‘ছুটিয়া আসিয়া পাল্কির কাছে দাঁড়াইল। ছনিয়াও আসিল পিছু পিছু। 

— বাবুজী কোথায় যাচ্ছেন?

— ভাগলপুরে। তোর বাবা কোথায়?

— ঝল্লুটোলায় গমের বীজ আনতে গিয়েছে। কবে আসবেন?

— আর আসব না।

—ইস! মিথ্যে কথা!…’[১৮]

একজন পরিণমিত আরণ্যক নারী বিদায়বেলার বিচ্ছেদ সত্য ও নিশ্চিত জেনে-বুঝে ‘হাপুস নয়নে কাঁদিতেছে’, আর দুই কিশোরীর কাছে সত্যচরণের বিদায় (‘আর আসব না’) ক্ষণকালীন বিচ্ছেদমাত্র (‘মিথ্যে কথা’) প্রতীয়মান হচ্ছে। একদিকে বিচ্ছেদের গম্ভীর উদাস পরিবেশ, ঠিক তার সঙ্গে সঙ্গে দুই অরণ্য দুহিতার নিশ্চিত-প্রত্যাবর্তনের আশা! মধ্যে রয়ে গেছে এক অভাগিনী বন্য বালিকার নিরুদ্দেশ যাত্রাজনিত কথক ও নায়কের হতাশা। সুতরাং, এভাবেও ভাবা যেতে পারে যে, আরণ্যক জীবনসম্পৃক্ততার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যে তীব্র টান তা প্রকৃতির ভাষ্য হয়ে উঠছে ঠিক ত্রি-স্তরীয় নারীপ্রকৃতির সম্বন্ধে বা প্রসঙ্গে — প্রথম স্তর, কুন্তার ক্রন্দনে শিকড়-মাটি ছিঁড়ে চলে-যাওয়ার কষ্ট। দ্বিতীয় স্তর মঞ্চীর প্রসঙ্গে অনুপস্থিতহেতু (‘আজ সে যদি থাকিত’) মায়া, এবং তৃতীয় স্তরে দুই কিশোরীর দ্বারা বিদায়কে চূড়ান্ত অস্বীকার। ক্রমটি দেখার মতো— পল্কি ওঠানোর আগে থেকেই ‘কাঁদিতেছিল’ এটি বিচ্ছেদ-বেদনার পূর্বসংকেত এবং মঞ্চীর জন্য মায়া মূর্ত ক্রন্দন থেকে বিমূর্তে আরোহণ, আর শেষে যাত্রপথে (‘…ছুটিয়া আসিয়া পাল্কির কাছে দাঁড়াইল। ছনিয়াও আসিল পিছু পিছু।’) বিদায়-অস্বীকারে বিমূর্ত মায়াকে অরণ্যের নব কিশলয়ের কাল্পনিক বন্ধনগ্রন্থিতে পুনরায় মাটি-জল-হাওয়ায় আঁকড়ে রাখার আশা। উল্লেখ্য যে, অরণ্যভূমি ত্যাগ করবার আগে সত্যচরণ তাঁর ‘মূর্তিমতী বনদেবী’ ভানুমতীর সঙ্গলাভ করে ‘ধন্য হয়েছেন’ এবং বনদেবীর নাম দিয়েছেন ‘কৃষ্ণা বনদেবী’। এই সেই ভানুমতী যে সত্যচরণের কাছে রাজকুমারী — ‘এই বনাঞ্চল, এই পাহাড়, ওই মিছি নদী, কারো নদী, কারো নদীর উপত্যকা, এদিকে ঝন্‌ঝরি, ওদিকে নওয়াদার শৈলশ্রেণী— এই সমস্ত স্থান এক সময়ে যে পরাক্রান্ত রাজবংশের অধীনে ছিল, ও সেই রাজবংশের মেয়ে — আজ ভিন্ন যুগের আবহাওয়ায় ভিন্ন সভ্যতার সংঘাতে যে রাজবংশ বিপর্যস্ত, দরিদ্র, প্রভাহীন — তাই আজ ভানুমতীকে দেখিতেছি সাঁওতালী মেয়ের মত। ওকে দেখিলেই অলিখিত ভারতবর্ষের ইতিহাসের এই ট্র্যাজিক অধ্যায় আমার চোখের সামনে ফুটিয়া উঠে।’[১৮] সে সত্যচরণকে জিজ্ঞাসা করে — ‘ভারতবর্ষ কোন্‌দিকে?’ 

সত্যচরণকে অরণ্যভূমি ধ্বংস করে প্রজাবিলি করতে হয়েছে — আরণ্যক মানুষের বেঁচে থাকার জন্য (‘এই স্বচ্ছন্দ প্রকৃতির লীলাভূমি আমার হাতেই বিনষ্ট হইয়াছিল, বনের দেবতারা সেজন্য আমায় কখনও ক্ষমা করিবেন না জানি।’—প্রস্তাবনা, ‘আরণ্যক’)। সত্যচরণ কাহিনির শেষে জানাচ্ছেন ‘হে অরণ্যানীর আদিম দেবতারা, ক্ষমা করিও আমায়। বিদায়!…’

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সন্ধ্যামণি’ (বঙ্গশ্রী,মাঘ ১৩৩৯) ছোটোগল্পে ‘কুসুমের স্বামী’ কেনারাম চাটুজ্জের (‘…বন্ধনহীন মুক্ত পুরুষ সে।’ ‘… আগে তবু ঘরে থাকিত, তখন সত্যকার একটা বন্ধন ছিল — তিন-চার বছরের কন্যা সন্ধ্যামণি। মাস তিনেক হইল মেয়েটির মৃত্যুর পর সে সব ছাড়িয়াছে।’[২০]) ছন্নছাড়া শ্মশানবাসী মনোভাবের আড়ালে মৃত কন্যার শোক হেতু সংসার উদাসীনতা— এই হল সংক্ষিপ্ত পরিচয়, যা আর কতকগুলি দাম্পত্য বা পারিবারিক গল্পের মতোই। কিন্তু, তারাশঙ্করের এই গল্পটির ভূগোল, প্রাকৃতিক প্রেক্ষিত-পরিবেশ, ঋতুর উল্লেখ থেকে শুরু করে গল্পের সমাপ্তি পর্যন্ত আমরা হতবাক হয়ে যাই শিল্পী তারাশঙ্করের আশ্চর্য দক্ষতা বা মুন্সিয়ানায়। গল্পের প্রথম বাক্য ‘হিন্দু আমলের অক্ষয় পুণ্য-মহিমান্বিত একটি স্নানঘাট। গঙ্গা এখানে দক্ষিণ-বাহিনী। রাঢ়ের বিখ্যাত বাদশাহী সড়কটা বরাবর পূর্ব মুখে আসিয়া এই ঘাটেই শেষ হইয়াছে।’ কয়েকটি বাক্যের পর লিখেছেন — ‘অন্ধকার বাজারখানা হাঁ হাঁ করে। তখন দু’দশজন আগন্তুক যাহারা আসে — তাহারা শ্রান্ত শব বাহকের দল।’[২১] গল্পের প্রেক্ষিত-পরিসরের একই স্থানের অন্য-এক মঞ্চের (পঞ্চাশ মিটারের মধ্যে) বর্ণনা দিচ্ছেন ‘স্থানটার একটা তীব্র বিকট গন্ধে বুকের ভিতরটা কেমন মোচড় খাইয়া উঠে। দগ্ধ নরদেহের গন্ধ। এইটিই শ্মশানঘাট।’[২২] হ্যাঁ, এটি উদ্ধারণপুরের শ্মশানঘাট (দ্রষ্টব্য — ‘আমার সাহিত্য জীবন’)। পৈরু, ‘সে শ্মশান-প্রহরী চণ্ডাল’[২৩] গল্পের নায়ক কেনারাম চাটুজ্জেকে শ্মশানের চতুর্দিকে হু হু চিতাগ্নির মাঝে বসেই নিঃশব্দে কুসুমের দিয়ে-যাওয়া রাতের ‘খাবার’ খাওয়ায় (এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলিয়া চাটুজ্জে খাইতে বসিল। খাইতে খাইতে সে কহিল — সত্যি বড় ক্ষিদে পেয়েছিল, পৈরু। এই জন্যেই তোকে এত ভালবাসি।’) কুসুমের মৃত সন্তানের দুঃখ শোকের ওপর আছে স্বামীহীন একলা ঘরে থাকার যন্ত্রণা। তাই, কেনারামের মুখে ভালোবাসার কথা শুনেও শ্মশান চণ্ডাল ‘ভাবিতেছিল মাইজীর কথা। শ্মশানের চণ্ডাল সে, দুঃখের উচ্ছ্বাস সে অনেক দেখিয়াছে, বুক-ফাটা কান্না সে অনেক শুনিয়াছে, কিন্তু দুঃখের এমন নীরব প্রকাশ সে আর দেখে নাই।’ গল্পটির শুরুতে আছে ‘শেষ কার্তিকের একটি শীতকাতর সন্ধ্যা।’ আর, গল্পটির শেষে রয়েছে ‘ইহারই মধ্যে লাঙলের কল্যাণে শ্যামল ফসলে ভরিয়া গিয়াছে। কোনো একটি ফসলে ফুলও দেখা দিয়াছে।’ বর্ষার পরের ছবি এইটি। আসলে এই বর্ণনার আগেই কুসুমের সন্তান চলে যাওয়ার প্রসঙ্গে এসেছে পল্লীবাসিনীর মধ্যে ‘বিশ্বাস গিন্নীর’ ভাষায় — ‘কি করবি বল্‌ মা,- গাছের সব ফল ক’টি কি থাকে? মনে কর ও তোর নয়।’[২৪] কুসুমেরও দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে (কেনারামের প্রত্যাবর্তন ইঙ্গিতেই) — ‘সে আমার ফিরে আসবে, দেখো তুমি, সেই মুখ, সেই চোখ, সেই কথা, সেই সব।’ তার কিছু-বাক্যের পর চাটুজ্জে শ্মশান ছেড়ে ফেলে আসা বাড়ি-অভিমুখে আসছে — ‘চাটুজ্জে কুসুমের দাওয়ায় গিয়া উঠিল। কিন্তু, থমকিয়া দাঁড়াইল। দাওয়ার নীচে সন্ধ্যামণির একটা কচি গাছ, সেটা ফুলে ভরিয়া উঠিয়াছে।’[২৫] গল্পের শেষ বাক্যটিও লক্ষণীয় — ‘কুসুম সজল চক্ষে প্রত্যাশার হাসি হাসিয়া বলিল — ‘সে আবার আসবে।’’ সুতরাং, যে-গল্পের প্রেক্ষিত শ্মশানভূমি উদ্ধারণপুর, পরিবেশের সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্নানঘাট আর শ্মশানের চিতাভস্ম, দগ্ধ নরদেহের দুর্গন্ধ, এমনকি গল্পের নায়ক-নায়িকা শ্মশান চণ্ডালের সঙ্গে প্রত্যক্ষ জড়িত শ্মশানভূমিতেই, সেই গল্পের পরিণতিতে দেখি মৃত কন্যাসন্তানের পুঁতে যাওয়া সন্ধ্যামণি গাছে ফুল ফুটেছে। আশার আলো দেখা দিয়েছে ছন্নছাড়া এক দম্পতির মধ্যে। প্রকৃতির প্রেক্ষিতে এই অসাধারণ নকটার্ন গল্পটিকে রসোত্তীর্ণ করেছে। কার্তিক মাসের শীতের জীর্ণতা দিয়ে গল্পের আখ্যান শুরু আর বর্ষাশেষে ‘শ্যামল ফসল’, ‘ফসলে ফুলও’ দেখা দেওয়া বাস্তবিক শবস্থানে জীবনের ব্যঞ্জনা আনে। গল্পটির পূর্ব শিরোনাম ছিল ‘শ্মশানঘাট’। এই গল্পটি প্রসঙ্গে জগদীশ ভট্টাচার্য মহাশয়ের একটি মন্তব্য উল্লেখ করতেই হয়, তিনি লিখেছেন — ‘কন্যাবিয়োগের মর্মবিদারী বেদনা বুকে নিয়ে তারাশঙ্কর-প্রতিভার আবরণভঙ্গ হল। রচিত হল ‘সন্ধ্যামণি’ গল্প। আমরা বলেছি, বাংলা সাহিত্যে একমাত্র তারাশঙ্করই এ গল্প লিখতে পারেন। সূক্ষ্ম বস্তুবীক্ষণ, তদ্গত তটস্থদৃষ্টি, পরিবেশের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পৃক্ত জীবনের রূপায়ণ এবং সৃষ্টির সঙ্গে স্রষ্টার সমপ্রাণতা — তারাশঙ্করের ছোটগল্পের এই চারটি মুখ্য বৈশিষ্ট্য ‘সন্ধ্যামণি’ গল্পেই প্রথম ধরা দিয়েছে।’[২৬] উল্লেখ্য যে, কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘আমার সাহিত্য জীবন’ গ্রন্থে এই গল্পটির বাস্তব প্রেক্ষিত, লেখক-কন্যা বুলুর অকাল মৃত্যু প্রসঙ্গ এবং উদ্ধারণপুরের ঘাট ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন ‘আমার সত্যকার সাহিত্য জীবনের শুরু যে গল্পে সেটির নাম —‘শ্মশানঘাট’।’

তথ্যসূত্র :

১. ‘আরণ্যক’, মিত্র-ঘোষ পেপার-ব্যাক ক্ল্যাসিক্‌স্‌ ছাত্রপাঠ্য সংস্করণ, তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত, বৈশাখ ১৪০০, অষ্টম পরিচ্ছেদ,পর্ব ‘১’, পাতা ৬৮

২. ঐ, নবম পরিচ্ছেদ, পর্ব ‘১’, পাতা ৮১

৩. ঐ, ৮১

৪. ঐ, প্রথম পরিচ্ছেদ, ‘২’য় পর্ব, পাতা ১২

৫. ঐ, ‘৩’য় পর্ব, পাতা ১৬

৬. ঐ, পাতা ১৭

৭. ‘আরণ্যক’, মিত্র-ঘোষ পেপার-ব্যাক ক্ল্যাসিক্‌স্‌ ছাত্রপাঠ্য সংস্করণ, তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত, প্রথম প্রকাশ নবম মুদ্রণ, বৈশাখ ১৪০০, গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি ব্যবহৃত।

৮. ঐ, ‘বীজ থেকে বৃক্ষ’ ভূমিকা, পাতা (২)

৯. ঐ, প্রথম পরিচ্ছেদ ’২’ য় পর্ব, পাতা ৮

১০. ঐ, পাতা ৮

১১. ঐ, পাতা ৮

১২. ঐ, পর্ব ‘৩’, পাতা ৮

১৩. ঐ, পাতা ৯

১৪. ঐ, পাতা ১০

১৫. ঐ, পাতা ১০

১৬. অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ পর্ব ‘২’, পাতা ১৭৭

১৭. ঐ, ১৭৭

১৮. ঐ, পর্ব ‘১’, পাতা ১৭১, ১৭২

১৯. ঐ, পাতা ১৭

২০. ‘তারাশঙ্করের গল্পগুচ্ছ’ প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, অধ্যাপক জগদীশ ভট্টাচার্য সম্পাদিত, প্রথম প্রকাশ ষষ্ঠ মুদ্রণ, জুলাই ১৯৯৮, গ্রন্থের ‘সন্ধ্যামণি’ছোটোগল্প, পাতা ২১৭

২১. ঐ, পাতা ২১৬

২২. ঐ, পাতা ২২১

২৩. ঐ, পাতা ২২১

২৪. ঐ, পাতা ২২৪

২৫. ঐ, পাতা ২২৫

২৬. ঐ, ভূমিকা ‘৩’

সহায়ক গ্রন্থ

‘আঞ্চলিকতা : বাঙলা উপন্যাস’, অরূপকুমার ভট্টাচার্য, পুস্তক বিপণি, ১৩৯৪

‘তারাশঙ্কর : নিরন্তর দেশ’, দেবেশ রায়, দে’জ পাবলিশিং, ১৪০৯

‘তারাশঙ্কর : দেশ কাল সাহিত্য’, উজ্জ্বলকুমার মজুমদার (সম্পাদিত), পুস্তক বিপণি, ১৯৯৮

‘উপন্যাস সমগ্র’ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, মাঘ ১৪২৬

‘বিভূতিভূষণ : দ্বন্দ্বের বিন্যাস’, রুশতী সেন, প্যাপিরাস ১৯৯৩

‘আরণ্যকের আলো ছায়া’, বিশ্বজিত পাণ্ডা, রত্নাবলী ২০১৩

‘বঙ্গসাহিত্যে উপন্যাসের ধারা’, শ্রীশ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মর্ডাণ বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড, ২০০৬-০৭

‘আমার সাহিত্য জীবন’, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বেঙ্গল পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৩৬৪

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান