মানুষ ও জীববৈচিত্র্য

জীবন কুমার পাল

জীববৈচিত্র্য (Biodiversity : Bio = Life, Diversity = Variation) হল পৃথিবীতে সমস্ত ধরনের জীবের বা জীবনের জৈবিক বৈচিত্র্য। জীব অর্থাৎ যাদের জীবন (Life) আছে, তারাই জীব যেমন— গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, মানুষ ও অণুজীব-ব্যাকটেরিয়া সকলে মিলে প্রকৃতির যে পরিবর্তনশীলতা সেটাই জীববৈচিত্র্য। লক্ষ লক্ষ বছরের (3.5 billion years) বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এসেছে এই বর্তমান জীববৈচিত্র্য। জীবের বৈচিত্র্যের মাত্রা জিন থেকে শুরু করে স্ট্রেন, ভ্যারাইটি, প্রজাতি এবং ইকোসিস্টেম পর্যন্ত হতে পারে।

বিজ্ঞানী রোজেন (Rosen) 1985 সালে প্রথম Biodiversity কথাটি আখ্যায়িত করেন। তার আগে জীববৈচিত্র্য বিষয়টিকে “Biological Diversity” নামে আলোচনায় আনেন বিজ্ঞানী আর. এফ. ডাসম্যান (R. F. Dasman) 1968 সালে। যাইহোক, বিজ্ঞানী রোজেন 1985 সালে Biodiversity কথাটি উল্লেখের পরেই অর্থাৎ 1986 সালে ওয়াশিংটনে National Forum of Biological Diversity-র একটি প্রথম প্ল্যানিং মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন National Forum প্ল্যানিং মিটিং-এর সেমিনারে যে বইটি Proceeding Volume হিসাবে প্রকাশ করা হয়েছিল সেটি সম্পাদনা করেছিলেন Wilson এবং Peter। Wilson এবং Peter-এর এই সম্পাদিত বইটিতেই Biodiversity কথাটির আত্মপ্রকাশ ঘটে।

এরপর 1992 সালের জুন মাসে (3 -14 June 1992) দক্ষিণ আমেরিকার সমুদ্র তীরবর্তী একটি বড়ো শহর, Rio de Jeneiro-তে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা, কূটনীতিবিদ, বিজ্ঞানী ও সাংবাদিক সহ বিভিন্ন NGO-র সদস্য একটি বিশ্বব্যাপী বৃহৎ সম্মেলনে সমবেত হয়েছিলেন, পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলির উন্নতির জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে একটি টেকসই পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য।

এই আন্তর্জাতিক সভাতে 172টি দেশকে ডাকা হয়েছিল। সভাটি UNCED (United Nations Conference on Environment and Development) নামে পরিচিত। আবার সভাটি Rio de Jeneiro Earth Summit 1992 নামেও খুব পরিচিত। 2,400 NGO প্রতিনিধি, 10,000 সাংবাদিক এবং 17,000 অতিরিক্ত NGO প্রতিনিধি (Global Forum) এই সভাতে উপস্থিত ছিলেন। এই সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষের আর্থ-সামাজিক কাজকর্ম কীভাবে পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে সে ব্যাপারে আলোচনা করা। আগামীদিনের জন্য টেকসই পরিবেশ উন্নয়ন-ই ছিল এই সভার মূল লক্ষ্য। আর এরপর থেকেই জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ সচেতন হয় এবং দেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য তৎপর হয়ে ওঠে।

জৈববৈচিত্র্য হল মানুষের কাছে এক অমূল্য সম্পদ। সজীব, সুস্থ ও সুন্দর জৈববৈচিত্র্য আছে বলেই মানুষ বেঁচে আছে। কারণ জীবন ধারণের জন্য প্রতিটি দরকারি উপাদান, যেমন খাদ্য (চাল, ডাল, গম, যব, ভুট্টা, সর্ষে, শাক-সবজি, তেল, ফল, পানীয়, মাছ, মাংস, ডিম), পোশাক (জামাকাপড়, শীতবস্ত্র, রেশমবস্ত্র), ওষুধ (বিভিন্ন জীবনদায়ী antibiotics, proteins, single cell proteins, alkaloids, Vitamins, minerals etc.), জীববৈচিত্র্যের উপাদান উদ্ভিদ প্রাণী অথবা ব্যাকটেরিয়া থেকে উৎপন্ন হয়। আর এগুলো খেয়ে পরেই মানুষ সুস্থভাবে বাঁচে, বাঁচার স্বপ্ন দেখে, সংস্কৃতি তৈরি হয় এবং সমাজ ও দেশ গঠনের কাজে এগিয়ে যায়। পশুপাখি কীটপতঙ্গের আশ্রয় হল বনসম্পদ। আর এভাবেই গড়ে উঠেছে বাস্তুতন্ত্র। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে মানুষই হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের একমাত্র কারণ। কারণ, মানুষ নগরায়ণের লক্ষ্যে এবং লোভ ও বেশি মুনাফার নেশায় যথেচ্ছভাবে বনসম্পদ ধ্বংস করছে। শুধু তাই নয়, পরিবেশের প্রতিটি উপাদান যেমন মাটি, জল, বায়ু, উদ্ভিদ, প্রাণীসম্পদ over exploitation হচ্ছে। তার ফলেই বাড়ছে দূষণ। বিভিন্ন রকমের বায়ু বাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে পরিবেশে, মানুষের মধ্যে, প্রাণীদের মধ্যে, কোপ পড়ছে খাদ্যশস্যের উৎপাদন-এর উপর এবং মানুষের স্বাস্থ্যের উপর। তাই মানুষ ও জীববৈচিত্র্য কথাটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং বর্তমান দিনে খুবই প্রাসঙ্গিক।

জীববৈচিত্র্যের প্রকারভেদ

সুইডিস বিজ্ঞানী Carolus Linnaeus, যিনি ‘Father of Modern Taxonomy’ নামে ভূষিত, 1735 সালে একটি মূল্যবান বই প্রকাশ করেন। বইটির নাম ‘Systema Naturae’ (‘সিস্টেমা ন্যাচারাই’)। এই বইটির মূল বিষয় হল উদ্ভিদ ও প্রাণী মিলে সৃষ্ট যে জীবজগৎ তার শ্রেণিবিন্যাস। এরপর অর্থাৎ 1753 সালে তিনি আর একটি বই প্রকাশ করেন, বইটির নাম ‘Species Plantarum’ (vol. I & II), এই স্পিসিজ প্লান্টারাম (দুটি খণ্ড) বইটিতে তিনি তাঁর গবেষণার বিষয় — দ্বিপদ নামকরণ লিপিবদ্ধ করেন। দ্বিপদ নামকরণের মূল কথা হল প্রতিটি জীবের নামের দুটি অংশ থাকবে — 

  1. গণনাম (Genus Name) এবং 2. প্রজাতি নাম (Species name)।  জীববৈচিত্র্যের প্রকারভেদ বুঝতে হলে জীবের অর্থাৎ প্রাণী বা উদ্ভিদের এই প্রজাতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা দরকার। আর এই প্রজাতির জ্ঞান কাজে লাগিয়েই জীববৈচিত্র্যকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যেমন —

1. Species Diversity বা Phenotypic Diversity

2. Genetic Diversity

3. Ecosystem Diversity

Species Diversity বা Phenotypic Diversity

কোনও একটি অঞ্চলের Species Diversity বা Phenotypic Diversity হল ঐ অঞ্চলের উদ্ভিদ বা প্রাণী প্রজাতির মোট সংখ্যা (Total number of species)। উদাহরণ হিসাবে ধরা যাক, একটি স্থানীয় অঞ্চলের নাম কালিপুর, যেখানে নেতাজী মহাবিদ্যালয় (Netaji Mahavidyalaya) অবস্থিত। হুগলি জেলার আরামবাগের একটি স্থানীয় অঞ্চল কালিপুর। কালিপুর গ্রামের উদ্ভিদ বৈচিত্র্য নির্ণয় করতে হলে এই অঞ্চলের সর্বমোট উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা গণনা করতে হবে। কালিপুরের একটি সাধারণ গাছ, কালকাসুন্দা। কালকাসুন্দার বৈজ্ঞানিক নাম Cassia (ক্যাসিয়া)। কালিপুর গ্রামে কালকাসুন্দা (Cassia) গাছটির গণ (Genus)-এ পাঁচটি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়।

যেমন —

1. Cassia sophera (ক্যাসিয়া সফেরা)

2. Cassia tora (ক্যাসিয়া টোরা)

3. Cassia occidentalis (ক্যাসিয়া অক্সিডেনটালিস) 

4. Cassia alata (ক্যাসিয়া এলাটা) 

5. Cassia fistuala (ক্যাসিয়া ফিসচুলা)

সফেরা, টোরা, অক্সিডেনটালিস, এলাটা, ফিসচুলা এগুলি এক একটি পৃথক প্রজাতি, কিন্তু একই গণ ক্যাসিয়ার মধ্যে। ঠিক এইভাবে এই জায়গায় সর্বমোট কতগুলি গাছ এবং তার প্রজাতি আছে তা নির্ণয় করা দরকার।  

Genetic Diversity

একই প্রজাতির গাছগুলির মধ্যে যদি বৈচিত্র্য (diversity) পাওয়া যায় তখন ঐ ধরনের বৈচিত্র্যকে Genetic Diversity (জেনেটিক বৈচিত্র্য) বলে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বাঁধাকপি (cabbage), ফুলকপি (cauliflower) এবং ব্রকলির (Broccoli) কথা আলোচনা করা যাক। বাঁধাকপি, ফুলকপি ও ব্রকলি এই তিনটি গাছই সরষে গোত্রীয়, Brassicaceae ফ্যামিলির একই প্রজাতি Brassica oleracea (ব্রাসিকা অলিরেসিয়া) অর্থাৎ অলিরেসিয়া প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত।  

1. Brassica oleracea var. Capitata (বাঁধাকপি)

2. Brassica oleracea Var. botrytis (ফুলকপি)

3. Brassica oleracea var. italica (সবুজ ব্রকলি)

Ecosystem Diversity

প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের ইকোসিস্টেম দেখা যায়, যেমন — বনভূমি (Forest), তৃণভূমি (Grassland), মরুভূমি (Desert), জলাভূমি (Wet land) এবং নদী ও সমুদ্রের ইকোসিস্টেম। এক একটি অঞ্চলের বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা জীবসম্প্রদায় (Biotic Community) জড় উপাদান যেমন মাটি, জল, বাতাস, সূর্যালোক ও পরিবেশের অন্যান্য প্রভাবকের আদান প্রদানের মাধ্যমে যে একক অনুকূল বসবাস নীতি গড়ে তোলে তাকেই ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র বলে। পৃথিবীর সবকটি ইকোসিস্টেম যেমন — Forests, Grassland, Deserts, Wetlands, Coral reefs, Ocean, Tropical rainforest, Amazon rainforest, Tundra প্রভৃতি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। কোনও একটি ইকোসিস্টেমের বৈচিত্র্য (Ecosystem Diversity) নির্ভর করে ওই ইকোসিস্টেমের পরিবেশের জড় উপাদানগুলির বৈশিষ্ট্য, প্রজাতিবৈচিত্র্য (Diversity of Species) এবং ওখানকার উদ্ভিদ প্রাণী ও জড় উপাদানের আদানপ্রদানের উপর। আসলে, ইকোসিস্টেম ডাইভারসিটি ও কমিউনিটি ডাইভারসিটি শব্দদুটি সমার্থক।

বর্তমানে দেশে ও বিদেশে Ecosystem Diversity-র উপর বহু গবেষণা চলছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বর্তমানে বিপদগ্রস্ত এবং পরিবেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এটি আমাদের সমাজের একটি উপেক্ষিত দুঃখজনক ঘটনা।

কোনও একটি জায়গার জীববৈচিত্র্য পরিমাপ করার উদ্দেশ্যে, জীববৈচিত্র্যকে আবার তিনভাগে ভাগ করা যায় —

1. আলফা বৈচিত্র্য (Alpha Diversity or α- Diversity) : একটি সম্পদায় বা কমিউনিটির মধ্যে প্রজাতির বৈচিত্র্যকে বলা হয় আলফা বৈচিত্র্য (α Diversity)। একটি বাস্তুতন্ত্রে (Ecosystem) সমগ্র প্রজাতি বা গণের সংখ্যার দ্বারা আলফা ডাইভারসিটি নির্ণয় করা হয়।

2. বিটা বৈচিত্র্য (Beta Diversity or β – Diversity) : দুটি পৃথক বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে প্রজাতির তুলনাকে বলা হয় বিটা ডাইভারসিটি (β – Diversity)। বিটা  ডাইভারসিটির ফর্মুলা —

β – diversity = (S1 – C) + (S2 -C)

S1, S2 = sites এবং C = common species

3. গামা বৈচিত্র্য (Gamma Diversity or γ-diversity) : একটি বৃহৎ ভৌগলিক অঞ্চলের (Geographical area) ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির সমন্বয়কে (যোগফল) বলা হয় গামা বৈচিত্র্য ( γ-diversity)। গামা বৈচিত্র্যের ফর্মুলা — 

γ-diversity = S1 + S2 + S3 – (C1 + C2 + C3)

S1, S2 ও S3 — তিনটি পৃথক অঞ্চলের মোট প্রজাতি (Total Species)

C1, C2 ও C3 — তিনটি পৃথক স্থানে সাধারণ প্রজাতির সংখ্যা (Common species no.)

জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণ

আমাদের চারপাশে প্রকৃতি ও পরিবেশের দিকে চোখ মেলে একটিবার তাকালে আমরা দেখতে পাব, দীর্ঘদিন ধরে পৃথিবীর তাপমাত্রা ও আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষের লোভ, মুনাফা ও তথাকথিত আধুনিক জীবন-যাপন ও অবিবেচনামূলক কার্যাবলির ফলে প্রকৃতির জলবায়ু (climate) অনবরত পরিবর্তিত হয়ে চলেছে আর এটা শুরু হয়েছে শিল্প বিপ্লবের পরে পরেই, অর্থাৎ 1800 সাল থেকে। NASA-এর GISS (Goddrad Institute for Space Studies) বিজ্ঞানীদের তাপমাত্রা বিশ্লেষণের ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে যে 1980 সাল থেকে প্রতিবছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা 1.1 ডিগ্রি সেলসিয়াস (1.9 ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেড়ে যাচ্ছে। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, পৃথিবী উত্তপ্ত হয়ে পড়ছে যাকে আমরা সহজভাবে Global Warming বলতে পারি। এছাড়া খরা, ঘূর্ণিঝড় বেশি হচ্ছে এবং মেরুবরফ গলনের ফলে সমুদ্রের জল-তল, বৃদ্ধি পাচ্ছে। সত্যই তো, আমাদের যে ঋতু-বৈচিত্র্য, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্তের মেলা ছিল, সেসব আর দেখা যায় না। শরৎ, হেমন্ত, বসন্তের সময়কাল আগের থেকে অনেক কমে গেছে। ফলত গ্রীষ্ম ও শীতের খরা ও শুষ্ক পরিবেশ প্রাধান্য পাচ্ছে। এসব কিছুর মূলে রয়েছে পরিবেশ দূষণ (Environmental pollution)। আর এই পরিবেশ দূষণের ফলেই মূলত জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের বিভিন্ন কারণগুলি নিম্নে বর্ণনা করা হল।  

                    চিত্র 1 : তাপমাত্রা বিশ্লেষণের লেখচিত্র (NASA-GISS)[1]

পরিবেশ দূষণ : জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের প্রধান কারণ হল পরিবেশ দূষণ। বিভিন্ন রকমের দূষণ যেমন — বায়ুদূষণ, মৃত্তিকা দূষণ, জল দূষণ প্রভৃতি জৈববৈচিত্র্য ক্ষতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে যুক্ত।

জলবায়ু পরিবর্তন : জলবায়ু পরিবর্তনের (Climate Change) ফলে জীববৈচিত্র্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।  

ইনভেসিভ প্রজাতির আবির্ভাব : ইনভেসিভ প্রজাতির (Invasive species) বা আক্রমণকারী প্রজাতির আবির্ভাবের ফলেও জীববৈচিত্র্য ক্ষতি হচ্ছে অনেকখানি। সেইজন্য ইনভেসিভ প্রজাতির আবির্ভাব ও তার প্রভাব সম্পর্কে সমাজের সকল মানুষকে সচেতন হওয়া দরকার। ইনভেসিভ প্রজাতি বিদেশি গাছ, স্থলজ বা জলজ এবং এদের বৃদ্ধি ও বিস্তার দ্রুত গতিতে হয়। ফলে জলজ বা স্থলজ বসতি যা হোক না কেন ধীরে ধীরে বিশাল অঞ্চল ধরে বিস্তার লাভ করে। যেমন কচুরিপানা বা water hyacinth (Eichhornia crassipes), পার্থেনিয়াম (Parthenium hysterophorus), ল্যানটানা (Lantana camara), মাইকেনিয়া (Mikenia scandens), এরা সকলেই ইনভেসিভ প্রজাতির উদাহরণ। এরা যে শুধু দ্রুতগতিতে বংশবিস্তার করে বিশাল অঞ্চল দখল করে তাই নয়, এরা ওই স্থানীয় বাসস্থানের দেশীয় প্রজাতিগুলির বৃদ্ধিতেও বাধা সৃষ্টি করে। ফলে ওই অঞ্চলের বা বাসস্থানের দেশীয় প্রজাতিগুলি হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে। অত্যধিক কচুরিপানা জন্মানোর ফলে, ঐ জলাশয়গুলিতে দেশীয় মাছ জাতীয় প্রজাতির বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। 

প্রাকৃতিক বাসস্থান ধ্বংস : ঘন জীববৈচিত্র্যপূর্ণ জায়গাগুলিতে, বনভূমি ও জলাভূমি অঞ্চলে অথবা হিমালয় পার্বত্য এলাকাতে সড়কপথ স্থাপন এবং শিল্পায়ন (Industrialization) ও নগরায়ণের (urbanization) ফলে ঐ সমস্ত জায়গার জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। এজন্য সকল নাগরিকদের সচেতন করে তুলতে হবে।

প্রাকৃতিক সম্পদের অত্যধিক ব্যবহার : উদ্ভিদ ও প্রাণীসম্পদ প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। বিভিন্ন ওষুধ উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। আবার প্রাণী থেকে তৈরি হয় পশম দ্রব্য, চামড়ার ব্যাগ, কস্তুরী, কর্ডলিভার তেল, শিং ও হাড়ের দ্রব্য প্রভৃতি। সর্পগন্ধা, চন্দন, সিঙ্কোনা, বেলেডোনা প্রভৃতি গাছগুলি থেকে নানাবিধ ওষুধ তৈরি হয়, আর সেই কারণে গাছগুলি প্রকৃতি থেকে যথেচ্ছভাবে কেটে ফেলা হচ্ছে বা ব্যবহার হচ্ছে। ফলে গাছগুলির সংখ্যা প্রকৃতিতে কমে যাচ্ছে এবং বর্তমানে ঠিকভাবে ব্যবহার ও সংরক্ষণ না করতে পারলে প্রজাতিগুলি ভবিষ্যতে বিরল প্রজাতিতে বা অবলুপ্ত প্রজাতিতে পরিণত হতে পারে। বর্তমানে যথেচ্ছভাবে অবৈধ পশুশিকারের ফলে অনেক প্রাণীই বিপন্ন (Endangered) ও লুপ্তপ্রায় হয়ে যাচ্ছে। যেমন — কস্তুরীমৃগ, তুষার চিতা, আফ্রিকান হাতি, কুমির, একশৃঙ্গ কালো গন্ডার, ধনেশ পাখি, বাজপাখি, পেঙ্গুইন প্রভৃতি। IUCN (International Union for Conservation of Nature and Natural Resources), SSC (IUCN’s Species Survival Commission) ও WCMC (World Conservation Monitoring Centre) এর যৌথ সহযোগিতায় একটি বই প্রকাশ করেছে। বইটির নাম Red Data Book, যে বইটিতে সংকটাপন্ন (Threatened) উদ্ভিদ ও প্রাণীর নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। সেইজন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীসম্পদের টেকসই ব্যবহার (Sustainable Uses) দরকার। কিছু বিপন্ন বা সংকটাপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর নাম নীচের সারণিতে দেওয়া হল :

জেনেটিক ইরোসন বা জেনেটিক পলিউশন : বর্তমানে জিএম শস্য (GM crops = Genetically Modified Crops) তৈরি করা এবং তা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা আমাদের মতো উন্নতশীল দেশে প্রভূত বিস্তার লাভ করেছে। আধুনিক জেনেটিক ম্যানিপুলেশন কৌশলের সাহায্যে সংকর GM শস্য তৈরি করা হয় এবং ফলত GM শস্যগুলিতে আদি জেনেটিক পদার্থের পরিবর্তন হয়। উচ্চফলনের উদ্দেশ্যে এই GM শস্যগুলির সঙ্গে পুনরায় যখন বন্য (Wild) বা দেশীয় প্রজাতির সংকরায়ন করা হয় তখন ঐ পদ্ধতির মাধ্যমে কিছু জিনের অবক্ষয় হয়, একে জেনেটিক ইরোসন (Genetic Erosion) বা জেনেটিক পলিউশন (Genetic Pollution) বলে। এ মূলত একধরনের Genetic Depletion। জীবের জিনপুলে (Gene Pool) অবক্ষয় বা ইরোসন হলে, জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হতে পারে। ইনভেসিভ প্রজাতি (Invasive Species) ও দেশীয় প্রজাতির মধ্যে সংকরায়ন হলেও জীববৈচিত্র্যের জেনেটিক ইরোসন দেখা দেয়, ফলে জৈববৈচিত্র্য বিপন্ন হবার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

সংরক্ষণ অবস্থা (Conservation Status)

EX = Extinct – (বিলুপ্ত) : গত 50 বছরে যাদের দেখা যায়নি। শেষ প্রাণীটিও বিলুপ্ত।

EN = Endangered – (বিপন্ন) : বিলুপ্ত হবার কারণ দূর না হলে, যারা শীঘ্রই বিলুপ্ত হতে পারে।

CR = Critically Endangered – (গুরুতর বিপন্ন) : অদূর ভবিষ্যতে যাদের লুপ্ত হবার সম্ভাবনা আছে।

VU = Vulnerable – (সংকটপ্রবণ) : বিলুপ্ত হবার সম্ভাবনা আছে।

NT = Near Threatened : বিপন্নতার সম্ভাবনা কম।

LC = Least Concern : বিপন্নতার সম্ভাবনা কম।

কিছু বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী ও সংরক্ষণ অবস্থা নীচের সারণিতে দেওয়া হল :

জীববৈচিত্র্য রক্ষার দায়িত্ব ও উপায়

উপরের আলোচনা থেকে এবং বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির সংরক্ষণ অবস্থা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে বর্তমানে আমাদের জীববৈচিত্র্য অনেকখানি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। সেইজন্য উপস্থিত জীববৈচিত্র্যকে বাঁচানো এবং রক্ষা করা আমাদেরই দায়িত্ব। যে যে উপায়ে জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করা সম্ভব সেগুলি আলোচনা করা হল।

বৃক্ষরোপণ (Tree Plantation)

প্রাণীরা শ্বসনে ব্যবহৃত অক্সিজেনের (O₂) জন্য উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। পরিবেশের বায়ুমণ্ডলে যাতে অক্সিজেনের জোগান অব্যাহত থাকে এবং পক্ষান্তরে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে না যায় সেজন্য বৃক্ষরোপণ দ্বারা বনসৃজন করা এবং দেশের বনসম্পদ বাড়ানো জীববৈচিত্র্যকে বাঁচানোর বা রক্ষা করার একটা প্রধান উপায়। এর ফলে বিভিন্ন প্রাণী, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ প্রভৃতির আবাসস্থল রক্ষা পাবে এবং প্রাণীরা স্বাভাবিক ও স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার উপাদান খুঁজে পাবে।

কৃষি বনসৃজন (Agroforestry)

কৃষকের নিজের অধিকারভুক্ত কৃষিজমিতে বা পতিত জমিতে কৃষি ফসল উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে বৃক্ষ, ছায়াযুক্ত গাছ, কাঠ, সবুজ-সার গাছ (Green manure), ওষধি গাছ, ফলমূল গাছের প্রজাতিগুলি লাগিয়ে লাভজনক কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলাকে বলা হয় কৃষি বনসৃজন।

জমির অবস্থান ও শ্রেণি অনুসারে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বিভিন্ন জায়গাতে লাগানো যেতে পারে।

(i) জমির আল বা বাঁধ বরাবর নিম, সুপারি, তাল, সুবাবুল প্রভৃতি গাছ লাগানো যেতে পারে।

(ii) পতিত জমিতে — শাল, শিশু, মেহগনি, সুবাবুল, সেগুন প্রভৃতি বড়ো গাছ বা বিভিন্ন ধরনের ডাল যেমন অড়হর, মশুর বা ভুট্টা, বাদাম ইত্যাদি শস্য।

(iii) বাড়ির সীমানার চারপাশে — তাল, সুপারি, নারকেল, আম, কাঁঠাল, বাতাবিলেবু, শিশু, মেহগনি প্রভৃতি। 

(iv) পুকুরের ধার বরাবর — নারকেল, তাল, সবেদা, ফলসা, আম, চালতা প্রভৃতি।

(v) চা, কফি, কোকো বাগানে — শিরীষ, কৃষ্ণচূড়া প্রভৃতি।

(vi) সুবিধা মতো ফাঁকা জমিতে — কালমেঘ, সর্পগন্ধা, অ্যালোভেরা, স্টিভিয়া, গোলমরিচ প্রভৃতি। 

(vii) জলাজমিতে — হিংচা বা হেলেঞ্চা, কুলেখাড়া প্রভৃতি।

সামাজিক বনসৃজন (Social Forestry)

পরিবেশ, সামাজিক ও গ্রামীণ উন্নতিকল্পে নানা ধরনের অব্যবহৃত পতিত জমিতে বৃক্ষরোপণ পরিকল্পনার মাধ্যমে অরণ্যসৃষ্টির উদ্যোগকে বলা হয় সামাজিক বনসৃজন (Social Forestry)। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশ, অর্থনীতি ও মানুষ উপকৃত হয়। সামাজিক বনসৃজনে স্থানীয় মানুষজন অংশগ্রহণ করতে পারে এবং স্থানীয় অঞ্চলের মাটি, আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে শুধু গাছ লাগানো বা বৃক্ষরোপণ করা নয়, মানুষ ফলমূল, শাক-সবজি, পশুখাদ্য প্রভৃতি উৎপাদন করতে পারে। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতির বৃদ্ধি হয়। যে সমস্ত গাছ সামাজিক বনসৃজনে লাগানো যেতে পারে সেগুলি নীচে দেওয়া হল।

(i) রেললাইন বা রাস্তার দুধারে — বট, বাবলা, তেঁতুল, অমলতাস (Cassia fistula), কৃষ্ণচূড়া (Delonix regia), রাধাচূড়া (Peltophorum pterocarpum), বকুল (Mimusops elengi), করঞ্জ (Pongamia pinnata) প্রভৃতি।

(ii) নদীর ধার বা বাঁধের দু-পাশে— কাশফুল, নারকেল, বাঁশ, ইউক্যালিপটাস প্রভৃতি প্রজাতির গাছ লাগানো যেতে পারে।

(iii) সমুদ্রের উপকূল বরাবর — ক্যাসুয়ারিয়া ইকুইসেটিফোলিয়া (Casuarna equisetefolia) গাছ লাগালে ভাঙন রোধ হয়।

(iv) বাড়ির সীমানা বরাবর — নারকেল, সুপারি প্রভৃতি।

(v) ছোটোখাটো জলাশয়ের ধারে — বাঁশ, বাবুল (Acacia nilotica), ইউক্যালিপটাস, নারকেল প্রভৃতি।

গাছ কাটা বন্ধ করা

গাছ কেটে ফেলে বনাঞ্চল পরিষ্কার করাকে এক কথায় ডিফরেস্টেশন (Deforestation) বলে। অনুসন্ধান করলে বোঝা যায় যে মানুষের কিছু কিছু কাজকর্ম ডিফরেস্টেশনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। যেমন— জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ, কাঠের (Timber) অবৈধ ব্যবসা, কৃষিজমি বৃদ্ধি করা প্রভৃতি। রাস্তা বা সড়ক সম্প্রসারণ বা নগরায়ণও ডিফরেস্টেশনের অন্যতম কারণগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য ডিফরেস্টেশন বন্ধ করা খুবই জরুরি। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার ধারে বড়ো বড়ো গাছ অথবা যেসব জায়গাতে বাড়িঘর তৈরিতে গাছগুলি বাধার সৃষ্টি করছে সেই সব জায়গাতে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বা কপার সালফেট (CuSO₄) প্রয়োগ করে গাছগুলিকে আস্তে আস্তে লুকিয়ে মেরে ফেলা (killing) হচ্ছে। বৃক্ষচ্ছেদনের এই সমস্ত অনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজ আশু বন্ধ করা দরকার।

প্রাণী বা পশু শিকার বন্ধ করা

বিভিন্ন কারণে শিকারিরা পশু নিধন বা পশু শিকার করে থাকে। যেমন — পশু মাংস (Meat) সংগ্রহ, ব্যবহারযোগ্য বা শৌখিন জিনিসপত্র তৈরির উদ্দেশ্যে পশুচামড়া, হাতির দাঁত, বিভিন্ন পশুর শিং সংগ্রহ করা। মানুষ লোভ ও আর্থিক মুনাফার বশবর্তী হয়ে বিভিন্ন পশু বা প্রাণী যেমন হরিণ, বাঘ, সিংহ, বিভিন্ন ধরনের পাখি, শূকর, গন্ডার প্রভৃতি হত্যা করছে। এর ফলে জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বা ধ্বংস হচ্ছে। অবৈধ পশুনিধন বন্ধ করা দরকার। ভারত সরকার বন্যপ্রাণী হত্যা রোধ করার জন্য বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন (Wildlife Protection Act, 1972) বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছে। এই আইন ভাঙলে এবং অপরাধ করলে শাস্তি আরও কঠিন হওয়া দরকার। বিপন্ন প্রজাতির বন্য পশু ও গাছপালার আন্তর্জাতিক ব্যবসা রোধ করার জন্য CITIES (Convention of International Trade in Endangered Species of Wild Fauna and Flora) নামে যে গ্লোবাল চুক্তি হয়েছে, সেই নিয়মকানুন আরও দৃঢ়তার সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।

দাবানল থেকে বনভূমিকে রক্ষা করা

প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও, মানুষের কিছু কিছু কাজকর্মের ফলে, যেমন— বনভূমি কেটে পরিষ্কার করা ও শুকনো ডালপালা জ্বালিয়ে দেওয়া, কৃষিজমি সম্প্রসারণ, পশুচারণ ও বসতি স্থাপনের জন্য বনভূমি কেটে ফেলা ও আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া ইত্যাদি কারণে বনভূমিতে আগুন লেগে যায় ও দাবানল সৃষ্টি হয়। ব্রাজিলের চিরহরিৎ বনভূমি, যাকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয়, ঐ আমাজন বনভূমিতে 2019 সালের July মাসে ভয়াবহ দাবানলের ফলে প্রায় 2.3 million জীবজন্তু মারা গেছে এবং প্রায় ত্রিশ লাখ উদ্ভিদপ্রজাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গাতেও দাবানলের ঘটনা ঘটেছে এবং যার ফলে অনেক পরিমাণে জীবজন্তু, পশুপাখি ও উদ্ভিদপ্রজাতি নষ্ট হয়ে গেছে। উড়িষ্যা, উত্তরাখন্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া অঞ্চলের বনভূমিতে দাবানল দেখতে পাওয়া যায়। জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে গেলে যাতে বনভূমিতে দাবানল সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার।

জলাশয় ভরাট না করা

জলাশয় এবং জলাশয় সংলগ্ন পরিধি অঞ্চলে বহু জলজ প্রাণী, মাছ, কীটপতঙ্গ এবং ছোটো বা মাঝারি বীরুৎ ও গুল্ম জাতীয় প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাড়িঘর বা বড়ো বড়ো ফ্ল্যাট তৈরির জন্য গ্রামীণ অঞ্চলের অনেক জলাশয় ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। তাতে সেই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। কাজেই প্রকৃতির জীববৈচিত্র্যকে বাঁচাতে গেলে জলাশয় ভরাট করে যাবে না।

ইন সিটু ও এক্স সিটু সংরক্ষণ পদ্ধতি অনুসারে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা

ইন সিটু সংরক্ষণ (In situ Conservation): প্রকৃতিতে নিজস্ব বাসস্থানে জীববৈচিত্র্য তথা জীবজন্তু, পশুপাখি এবং উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণ করার যে পদ্ধতি, তাকেই ইন সিটু সংরক্ষণ বলে। জাতীয় উদ্যান (National Park), অভয়ারণ্য (Sanctuaries), সংরক্ষিত বন (Reserv Forests), বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ (Biosphere Reserve), এসব জায়গাতে বর্তমানে ইন সিটু পদ্ধতিতে জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এক্স সিটু সংরক্ষণ (Ex situ Conservation): আজকাল বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে জীবের নমুনা কৃত্রিমভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে, যাতে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস না হয়ে যায় এবং ঐ নমুনা থেকে পুনরায় দরকার মতো কৃত্রিম উপায়ে প্রাণী বা উদ্ভিদের বংশবিস্তার করে তাদের প্রজাতিগুলি বাঁচিয়ে রাখা যায়। প্রাণীর ডিম্বাণু (Egg), স্পার্ম (Sperm), রক্তকোশ (Blood cells) প্রভৃতি এবং উদ্ভিদের বীজ (seeds), কোশকলা (Cells-Tissues), পরাগরেণু (Pollen Grains), ভ্রূণ (Embryo), এন্ডোস্পার্ম (Endosperm) প্রভৃতি নমুনা কৃত্রিম উপায়ে -140°C থেকে -196°C তাপমাত্রায় তরল নাইট্রোজেনে রেখে দিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। সংরক্ষণের এই পদ্ধতিকে ক্রায়োপ্রিজারভেশন (Cryopreservation) বলে। 

পরিশেষে, আমাদের বোঝা দরকার যে মানুষ ও মানুষের সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন জীববৈচিত্র্যকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করা। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে মানুষের মূল্যবোধ এবং সচেতন দৃষ্টিভঙ্গিই পারে বর্তমানের বিপন্ন জীববৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে তুলতে।

“দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর …”

সহায়ক গ্রন্থ :

  1. Bhattacharya, K. Ghosh, A. K. and Hait, G. (2017). ‘A Text Book  of Botany’ Volume IV, New Central Book Agency, Kolkata,  pp.141-182.

2.  Chattopadhyay, A. (2016). ‘Paribesh’, T. D. Publications, pp. 251-260.

3.  Dash, M. C. and Dash, S. P. (2011). ‘Fundamentals of Ecology’,  Third Edition, Tata McGraw-Hill, New Delhi, pp. 293-330.

4.  Maiti, P. K. and Maiti, P. (2017). ‘Biodiversity Perception, Peril and Preservation’. PHI Learning Private Limited. Delhi, pp. 445-447

5.  ‘Paribesh Bidya’. (2012). Burdwan University, pp. 94

6.   Sharma, P. D. (2012). ‘Ecology and Environment Eleventh’ Revised Edition, Rastogi Publications, Meerut, pp. 499-500.

7.  Sikdar, J. K. Sen, K. and Giri, P. (2020). ‘Udvidbidya’, Semester II. Santra Publication Pvt. Ltd., Kolkata, pp. 113

চিত্রঋণ : অন্তর্জাল

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান