পদ্মা-তিতাস-তিস্তা : মানুষ-নদী জীবনের ভাঙাগড়া

নীলাদ্রি নিয়োগী

জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর বাল্যবন্ধু ভাগীরথীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন — “নদী, তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ?” এই প্রশ্নের পেছনে তাঁর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা যেমন ছিল, তেমনই এক দার্শনিক জিজ্ঞাসাও কি ছিল না? শাস্ত্রে বলেছে ‘আত্মানং বিদ্ধি’। অর্থাৎ, নিজেকে জানো। নিজেকে জানা কি আর এক জীবনে হয়ে ওঠে? জানলেও সেই জানাই যে শেষ জানা, তা কে কবে বলতে পেরেছে? আর যেটুকু আমরা জানি, শিখি; যতটা আমাদের জ্ঞান-বুঝের জগৎ, তার বাইরের পৃথিবীটা কি কম বড়ো? আর পৃথিবীর বাইরের এই যে মহাবিশ্ব? আজকাল তো আবার শুধুই ইউনিভার্সে আটকে নেই আমাদের কৌতূহল! বিজ্ঞান হোক আর সাহিত্য কিংবা সিনেমা; মাল্টিভার্সের কনসেপ্টই তো এখন ‘ইন থিং’! ফলে প্রশ্নের পর প্রশ্নের মালা সাজিয়েই আমরা প্রাণপণ ছুঁতে চাই সেই অরূপরতনকে; জানতে চাই, বুঝতে চাই সেই মহাজাগতিক রহস্যের গোলকধাঁধাকে। আবার সেই সূত্রেই ফিরে আসতে চাই সেই প্রথম প্রশ্নে — আমি কে? আমি কোথা থেকে এসেছি? মানে, এ যেন এক অন্তহীন লুপ! যেখানে অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর অথবা নিছক প্রেডিকশান পেরিয়ে আবার পৌঁছে যেতে হয় সেই চিরাচরিত প্রারম্ভিক জিজ্ঞাসায়। তাই মহাভারতের কর্ণের মতো যথাযথ খ্যাতিবঞ্চিত মহাবিজ্ঞানী যখন একটি নদীর গতিধারা বেয়ে, উলটো পথে হেঁটে পৌঁছে যেতে চান মোহনা থেকে ক্রমশ উৎসের দিকে; তখন সেটার সঙ্গে কি পূর্বোল্লিখিত প্রশ্নের প্যাটার্নের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না? ব্ল্যাক হোল-ইন্টারস্টেলার-মাল্টিভার্স পেরিয়ে বিগ ব্যাং-এ ফেরার মতো!

এইসব থিয়োরি সাময়িক মুলতবি রেখে, আমরা যদি ভাগীরথীর কুলুকুলু জবাবটা শুনে নিই, তাহলে দেখব সে জানিয়েছে — “মহাদেবের জটা হইতে।” নাছোড় ও প্রশ্নবান জগদীশচন্দ্র বসু সেই মেটাফরিক ‘জটা’ পর্যন্ত ধাওয়া করে, প্রাকৃতিক যে-সকল সৌন্দর্য দেখে এলেন, সেই আপাত অপ্রাসঙ্গিক বাহুল্যে না ঢুকে আমরা আরেকটি বিষয়ে স্টেপ জাম্প করে ঢুকে যেতেই পারি। বিষয়টা খুব সরল (যদিও আদৌ তরল নয়; ফলকথা, সেটাকে জটিলও বলা যেতে পারে এমনই প্যারাডক্স!) — নদী ও মানুষের সম্পর্ক! গাছেরও প্রাণ আছে এবং তার ছাড়াও শুধুমাত্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে কাজে লাগিয়ে যে শব্দকে এক স্থান থেকে দূরবর্তী স্থানে পাঠানো সম্ভব — যুগপৎ এই দুই মহাবিষ্কার যাঁর কীর্তি, তাঁর সঙ্গে প্রাণহীন অথচ প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর নদীর সম্পর্ক যে একমাত্রিক হতে পারে না, তা বোঝাই যায়। কিন্তু নদীর সঙ্গে মানুষের সহস্রাব্দ-প্রাচীন সম্পর্কের খতিয়ান নিতে চাইলে তো আমাদের ফিরে যেতে হবে ইতিহাসের সেই দিনগুলিতে, যখন একের পর এক নদীর ধারে গড়ে উঠছে বড়ো বড়ো নগর-বন্দর। আবার ছুঁয়ে আসতে হবে নদীমাতৃক সভ্যতার সেইসব কাব্য-গাথা-সাহিত্য, যেখানে মানুষ নদীকে কলমের নিবে ধারণ করেই সৃষ্টি করে গেছে মানব ও প্রকৃতির লগ্ন হয়ে থাকার অনন্য সব আখ্যান। ইতিহাস ও মহাকাব্যের সেই বিস্তারকে সীমায়িত পরিসরের এই গোষ্পদ নিবন্ধে ধরা সম্ভব নয় বলেই আমরা আলোচনা নিবদ্ধ রাখব এমন তিনটি উপন্যাসে, যেখানে নদীর সঙ্গে মানুষের জীবন অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। বস্তুত, মানব জীবনের উপমা হিসেবে নদীর গতিপথ — বহু ব্যবহারে এতটাই ক্লিশে, যে সেটার পুনরুল্লেখ না করে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’ এবং ‘তিতাস একটি নদীর নাম’-এ নদীর সঙ্গে উপন্যাসের পাত্রপাত্রীদের অন্তরঙ্গতা খোঁজারই চেষ্টা থাকবে আলোচ্য প্রবন্ধে।

একজন জেলে কিংবা মাঝির সঙ্গে নদীর সম্পর্ক কি কেবলই পেশাদারিত্বের? সমীক্ষা করলে হয়তো দেখা যাবে, আধুনিক জীবনযাত্রায় অধিকাংশ মানুষেরই জব স্যাটিসফেকশন থাকে না। কিন্তু যা আমাকে ক্ষুধার অন্ন যোগায়, যার নাড়িনক্ষত্র আমি জন্ম থেকেই ঘনিষ্ঠতার কারণে জেনে গিয়েছি, যা আমাকে সামাজিক বা পেশাগত প্রয়োজনে পৌঁছে দেয় দূরদূরান্তে; তার প্রতি কৃতজ্ঞতা-অতিরিক্ত, নির্ভরতা-মিশ্রিত এক অমোঘ টান ও ভালোবাসা থাকতে বাধ্য। ভাষার ব্যবহার আর চিন্তা করতে পারা মানুষকে যেমন স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে, তেমনই প্রকৃতির থেকে বিচ্ছিন্নও করেছে। আবার এটাও ঠিক, মানুষ প্রকৃতি থেকে যত আলাদা হয়েছে, ততই নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে তার আগ্রহ ও জ্ঞানের স্পৃহা পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। কিন্তু যে বা যারা পেশার খাতিরে সরাসরি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল, যেমন কৃষক বা মাঝির মতো কেউ কেউ, তারা স্বভাবতই নদী-মাটি-ঝড়-জল-শস্য-মাছ-পশু-পাখি ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক বেশি ওয়াকিবহাল। ফলে তাদের ‘আত্ম’ বা ‘সেলফ’-সচেতনতা কম না বেশি, তা তর্কের বিষয় হলেও, প্রকৃতি বিষয়ে তাদের জ্ঞান অর্জিত ও চিরস্থায়ী, সর্বোপরি প্রায় অভ্রান্ত। যেমন কুবেরের, যেমন হোসেন মিয়ার।

কুবের, গণেশ, ধনঞ্জয় পদ্মানদীর মাঝি। পদ্মানদীর মাঝি হোসেন মিয়াও। তবে কয়েকটা সূক্ষ্ম ও স্থূল পার্থক্য রয়েছে। কুবের-গণেশ নৌকা বোঝাই করে ধান, পাট, তামাক, গুড়, চিনি থেকে শুরু করে গরু, ছাগল ইত্যাদি চালান করে; হোসেন মিয়া অধিকন্তু গোপনে চালান করে আফিম। কুবের-গণেশ মাছ শিকার করে, ইলিশের মরশুম ফুরালে মানুষকে নদী পারাপার করিয়ে দেয়; হোসেন মিয়া সেখানে মানুষ শিকার করে এবং কোনও মরসুমের তোয়াক্কা না করেই সেইসব ভাঙাচোরা মানুষদের জোড়াতালি দিয়ে চালান করে নির্বিবাদে। শুধু চালান করে বললে অবশ্য খানিকটা অবিচারই করা হবে— হোসেন তাদের স্থাপন করে আসে এক আরোপিত সব পেয়েছি-র ইউটোপিয়ায়। হ্যাভ নটস-দের দায়িত্ব নিয়ে পৌঁছে দেয় এক অনিকেত ভাগ্যের লড়াইয়ের ময়দানে— ময়নাদ্বীপে। অর্থাৎ নদীকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্পষ্ট দুটি শ্রেণি লক্ষিত হচ্ছে এখানে। একদলের লড়াই পেটকে শান্ত রাখার তাগিদে; অন্যজন নদীকে বাহন করে কায়েম করতে চাইছে সাম্রাজ্য। প্রথম দলকে নিয়ে কমলাকান্ত-কল্পিত সাহিত্য-সমালোচনার বাজারে বিস্তর টানাহ্যাঁচড়া-কাঁদাকাটা হয়েছে। ধূসর হোসেন মিয়ার সঙ্গে পদ্মার কেমিস্ট্রি নিয়ে অপেক্ষাকৃত কম।

হোসেন মিয়া দূরদর্শী। দুনিয়ার যত খণ্ড খণ্ড মানুষ আছে, সবাইকে জড়ো করে এক অখণ্ড সুষমায় সে প্রস্তুত করতে থাকে তার নিজস্ব ট্রোজান অশ্বতে। তাদের আর কোনও উপায় থাকে না। নির্বিবাদে নিয়তির মতো হোসেনের হাতে নিজেদের তুলে দিয়ে অচরিতার্থতা বিলাসে অভ্যস্ত হতে শিখে যায় তারা। এদেরই মাঝে রাসুর মতো একজন-দুজন থাকে, যারা ডিসটোপিয়ান ময়নাদ্বীপে সব হারিয়ে, জীবন দাঁও রেখে ফিরে আসে দেশে। এই রাসু — পদ্মানদীর মাঝি এবং হোসেন মিয়ার প্রজা — এই দুই সম্পূর্ণ বিপরীত সত্তার মাঝে আটকে থাকা মিসিং লিংক। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসে তুলে আনতে চেয়েছেন এইসব টুকরো-টাকরা মানুষেরই কথা। মাঝিদের জীবন, পেশা, চাওয়া, না-পাওয়া, উৎসব, প্রেম-যৌনতা, অসহায়তা, ছ্যাঁচড়ামি, বিদ্বেষ; তাদের অর্ধমনস্কতা, ফলত নানাবিধ অসফলতা— সব কিছুর সমান্তরালে মানিক এই উপন্যাসে বুনে গিয়েছেন এক অল্টারনেটিভ ডিসকোর্স; যেখানে একজন স্থিতপ্রজ্ঞ মাঝি হোসেন মিয়া, নদী-সমুদ্রের সহায়তায়, ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা কিছু না-মানুষদের নিয়ে পরম মমতায় ও চরম ক্রূরতায় গড়ে তুলছে এক আধাসামন্ততান্ত্রিক উপনিবেশ।

হোসেন পদ্মাকে নিংড়ে যতরকম উপার্জন সম্ভব, করে নিতে পারে। কারণ সে ভার্সেটাইল চিন্তক। সেই তুলনায় কুবের অনেকটাই একবজ্ঞা। নৌকা তার কাছে শুধুই মাছ ধরার উপায়-উপকরণ; নদী শুধুই মাছের নিবাস। অথচ ধনঞ্জয় যখন তাকে নৌকায় নিল না, আর তাকে নেয়নি বলে গণেশও নির্দ্বিধায় সেই কাজে গেল না; তখন কুবের ভাবতে বসে— এরপর কী করবে? ‘মাঝিগিরিই সে করিবে সন্দেহ নাই, তবু গম্ভীর চিন্তিত মুখে অন্য কিছু করা যায় কিনা ভাবিতে কুবের চিরদিন বড়ো ভালোবাসে।’[১] এখানেই হোসেন মিয়ার সঙ্গে কুবেরের পার্থক্য। অলস শৌখিন ভাবনাটুকুই সার কুবেরের। হোসেন সেখানে নদীকে তো বটেই, গ্রামবাসীদের ‘মেঘলা অমাবস্যার অন্ধকারের মতো অতল কুসংস্কার’ অনুযায়ী ঝড়-বাদল এমনকী ভেঙে পড়া গাছকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে অনায়াসে! ফলে প্রকৃতির সঙ্গে তার সম্পর্ক অনেক বেশি ডায়নামিক। হবে নাই বা কেন? ‘কুড়ি বছর বয়সে হোসেন বাড়ি ছাড়িয়া পালাইয়াছিল, তারপর অর্ধেক জীবন সে তো দেশ-বিদেশ ঘুরিয়াই কাটাইয়াছে — নদীর বুকে ও সমুদ্রে।’[২] ফলে বলা যেতে পারে, নদীই হয়ে উঠেছে তার জীবনে মাটিহীন এক নিজস্ব ভূমি।

ফরেস্টারচন্দ্র বাঘারুবর্মণের সঙ্গে তিস্তা নদীর সম্পর্কটা আবার একটু আলাদা। সে নদীকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে না। সেই সচেতনতা তার মধ্যে আদৌ তৈরি হয়নি। বরং জোতদার গয়ানাথের একটা বিশ্বস্ত ‘টুল’ হিসেবেই সে এবং নদী উভয়েই ব্যবহৃত হয়েছে। আর এই ব্যবহৃত হতে হতে, শুয়োরের মাংসে পরিণত হতে হতে সে ক্রমশ তিস্তার সঙ্গে একাত্ম বোধ করেছে। কিছু মানুষ আছে, যাদের কোনোদিনও আইডেন্টিটি ক্রাইসিস হয় না। তারা যে ক্রাইসিসের সম্মুখীন হয় না, তা নয়। আদতে তারা নিজেদের আইডেন্টিটি সম্পর্কেই উদাসীন। অথচ ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’ উপন্যাসে বাঘারুর প্রথম আবির্ভাব দৃশ্যে সে কিন্তু জরিপের সরকারি কর্মচারী সুহাসের কাছে আকণ্ঠ মদ্যপ অবস্থায় নিজের পরিচয় দিয়েছে! সেখানে কিছুটা অহং-ও লেগে ছিল বৈকি। এরপর এমএলএ সাহেবকে কাঁধে চাপিয়ে নদী পার করে দেবার সময় কিংবা চা বাগানের বাবুর কাছে কাজ চাইবার সময়েও সে নিজেকে প্রাণপণ প্রকাশ করতেই চেয়েছে। কিন্তু মহাকাব্যিক এই উপন্যাসের যত বিস্তার হয়েছে, আমরা দেখব বাঘারু ততই নীরব এমনকি নির্বেদ হয়ে গেছে। নদীর সঙ্গে, জঙ্গলের সঙ্গে, কুকুর-বাছুর-মোষ, সর্বোপরি পাখির সঙ্গে অর্থাৎ এক কথায় প্রকৃতির সঙ্গে ক্রমশ ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে বলেই কি সে মূক হয়ে উঠেছে ধীরে ধীরে? সে তো পশুর সঙ্গে কথা বলে। সে তো নিজের শরীর দিয়ে নদীর স্রোতকে অনুভব করতে শিখে গেছে। সে তো পড়তে পারে পাখির ভাষা! সেই জন্যই কি মানুষের স্বার্থগন্ধী কূটনৈতিক ভাষায় তার অনীহা? এক মুহূর্তের জন্যও তো বাঘারু ভুলতে পারে না যে সে গয়ানাথের সম্পত্তি! ডায়না নদী, আপলচাঁদ জঙ্গল, তিস্তা, গরু-মোষ যেমন গয়ানাথের, বাঘারুর অন্তরাত্মকথনে জানা যায় নিজেও সেই গয়ানাথেরই ‘মইষ্যাল’। এই পরাধীনতার অনুভব থেকে কীসের জোরে সে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে শিখে যায়? উত্তরটি হয়তো লুকিয়ে আছে তিস্তার সঙ্গে তার জান্তব এক ঘনিষ্ঠতার কারণেই।

সুহাসকে নিজের মৌজার সীমান্ত বোঝাতে গয়ানাথ যেমন বাঘারুকে নামিয়ে দিতে পারে তিস্তায়, যেন নদী তার খাস মৌজার কতটা গ্রাস করেছে তা সাঁতরে ডেমো দিয়ে চিহ্নিত করে আসবে বাঘারু; তেমনই আবার বন্যার তিস্তায় গয়ানাথ স্বাচ্ছন্দে বাঘারুকে ভাসিয়ে দিতে পারে কয়েকটা গাছসহ। ঝড়ে ভেঙে পড়া কিছু শাল গাছ আর একটা মূল্যবান অর্জুন গাছের গুঁড়ি একসঙ্গে বেঁধে বন্যার তোড়ে পাড়ি দেয় বাঘারু, বিনাবাক্যব্যয়ে। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের গাছ কাটা বেআইনি হলেও ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছ যদি নদীতে ভেসে যায়, আর সেইসব গাছ যদি কেউ নদী থেকে তুলে আনতে পারে — তাহলে তার মালিকানা সে দাবি করতেই পারে। বিষয়ী গয়ানাথের হয়তো পার্থিব কিছু লাভ হয় এতে, কিন্তু বাঘারুর এই অবসরে হয় গাছ, নদী, পাখি, আঁধার আর ভোরের সঙ্গে নতুন করে সখ্য। ডাল-পাতা-কাণ্ড-কোটর-শেকড়সহ কিছু গাছের সঙ্গে স্রোতের মধ্যস্থতায় বাঘারু ও তার কুড়ুলের চেনাশোনা হয়ে যায় সেই রাতেই। স্পাইরাল টেকনিকে, অসম্ভব ডিটেলিং-এর সাহায্যে দেবেশ রায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কয়েকটি অধ্যায় জুড়ে সেই রাত, সেই সখ্য, সেই জীবন-পণ লড়াইয়ের বর্ণনা দেন। এই যাত্রা যদি নৌকায় হতো, তাহলে তা নাটকীয় হলেও হতো নিঃসন্দেহে প্রেডিক্টেবল এবং লোকায়ত। কিন্তু দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা কিছু গাছ, পানসি না, ভেলাও না; স্রেফ সদ্য শেকড়চ্যুত কিছু গাছে ভেসে দীর্ঘ পথ পাড়ি— বাংলা সাহিত্যে সম্ভবত আর নেই।

মনন ও মেধার পরিবর্তে শরীর তথা ইন্দ্রিয় দিয়ে সব কিছু বুঝে নিতে চাওয়া বাঘারুরও এই অন্তহীন অবগাহনে সময়ের, দূরত্বের, মায় যাবতীয় হিসেবের গোলমাল হয়ে যায় —

“সময়ের সঙ্গে তো বাঘারুর শরীর বাঁধা। বাতাসের ছোঁয়ায় সে বোঝে বেলা কত হল, ছায়ার গাঢ়তায় সে টের পেয়ে যায় বেলা কত হেলল, শোয়ানো ঘাস দেখলে সে পায়ের স্পর্শে শেষ রাতেও আন্দাজ পায় সূর্য উঠতে আর দেরি কত… কিন্তু এখন তেমন কোনো অনুমান বাঘারুর আসে না।… নদীর এই খোলা আকাশের ভেতর দিয়ে যে-বেগে হাওয়া আর বৃষ্টি বেয়ে আসছে তারও কোনো ছেদ নেই। তাহলে বাঘারু সময় মাপবে কী দিয়ে?”[৩]

সময় জানতে চায় কেন বাঘারু? সময় জানতে চায় কেন মানুষ? মানুষের কীসের এত তাড়া? আয়ু সীমিত বলেই কি তার এই সময়-সংক্রান্ত ফ্যাসিনেশান? কোথায় পৌঁছাতে চায় মানুষ? কোথায় গিয়ে ঠেকবে বাঘারু? সে তো এটুকুও জানে না যে তার নিজেরও একটা সত্তা রয়েছে! ছায়ামানুষ বাঘারু যদি আজ গয়ানাথের ইশারায় আপলচাঁদ জঙ্গলে বাথান সামলাতে যায় তো কালই আবার নিজেকে খড়কুটোর মতো ছুড়ে দেয় বন্যায়! সময়ের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক? সম্পর্ক থাক বা না থাক, যাবতীয় অনিশ্চয়তার মধ্যেও সে একটা ব্যাপারে নিশ্চিত — গয়ানাথ যখন তাকে গাছসহ ভাসিয়ে দিয়েছে, তখন সে যেখানে গিয়েই ঠেকুক, স্থলপথে এসে মালিক তাকে ঠিক খুঁজে নেবে। এই অবিচল বিশ্বাসে ভাসমান অবস্থাতেই সে গাছগুলি দিয়ে একটি মাচান নির্মাণ করে। নদীই যেন হয়ে ওঠে তার বিকল্প বাসভূমি। স্রোতে ক্রমশ অভ্যস্ত বাঘারু এমনকি সেই মাচানে বসে বিষাদে আক্রান্ত হওয়ারও অবসর পায়! বিষণ্ণতার কারণ — সেই গাছগুলির কোটরে আশ্রয় নেওয়া পাখিদের সে বাধ্যত উড়িয়ে দিয়েছে! বাঘারু ভাসতে ভাসতে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকল; বন্যার্ত মানুষ, প্রশাসন ও মিডিয়া, নিজের নিজের স্বার্থে কীভাবে তাকে ব্যবহার করল সেসব আলোচ্য প্রবন্ধে অপ্রাসঙ্গিক বলে উল্লেখ না করে আমরা বরং এই উপন্যাসেরই এমন একটি ধর্ষণ কাণ্ড দিয়ে বর্তমান প্রসঙ্গ শেষ করব, যে ঘটনাটি মানুষ ও নদীর আদিম সম্পর্কেরই দ্যোতক বলে গুরুত্বপূর্ণ।

বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে শান্তিপূর্ণ আলোচনা হয়। বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং বোঝা যায় যে দুই দেশের বন্যা কবলিত মানুষই প্রকৃত উপকৃত হতে চলেছে। ভারতীয় ক্যাম্পের এক অফিসার ঘোষ বিশেষ প্রয়োজনে নিজের ক্যাম্পে ফেরে। অন্যান্যরা তখন বাংলাদেশ ক্যাম্পে মিটিং-এ ব্যস্ত, কেউ গেছে সেখানে রসদ পৌঁছে দিতে। একা ঘোষ দেখে এক নারী এসেছে ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে। জিজ্ঞাসবাদ করে জানা যায় :

“তোমার তো বাড়ির কেউ নেই বললে?’

‘না বাবু। মোর বাড়ি নাই রো।’

‘না। বাড়ির লোকজনও তো কেউ নেই বললে?’

‘না বাবু। মোর মানষি কুনো নাই রো।’

‘ইন্ডিয়া বাংলাদেশও নেই?’

‘না বাবু। মোর ঐলা কিছু নাই রো।’

‘তোমার দেশ নেই? একটা?’

‘না বাবু। মোর দেশ নাই রো।”[৪]

নির্জন ক্যাম্পে একজন মানুষ্যিহীন, ঘরহীন, দেশহীন একলা নারীকে ভেজা মাটিতে শোয়াতে দেরি হয় না ঘোষের। একটা ভিজে ধর্ষণ দিয়ে শেষ হয় এই উপন্যাসের ‘চরপর্ব’। কিন্তু মনে কয়েকটা প্রশ্ন কাঁটার মতো বিঁধে থাকে! কে এই নারী? এই নারী কি আসলে তিস্তা নয়? তিস্তার জল নিয়ে চুক্তি হওয়া না-হওয়ার টানাপোড়েনে ভারত ও বাংলাদেশের যে শীতল যুদ্ধ চলছে; নদীটিকে যেভাবে ব্যবহার, অতিব্যবহার, অপব্যবহার এবং অব্যবহার করা হয়েছে ও হচ্ছে, তাতে করে দিনের পর দিন কি এই রাষ্ট্র তাকে ধর্ষণ করছে না? তিস্তা আসলে কার? ভারত না বাংলাদেশের? নাকি অন্য কারও? নাকি কোনও দেশেরই না! ‘নদী, তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ?’

একটা গোষ্ঠী বা জাতির জীবন একটা নদী কীভাবে ও কতদূর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তা ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসে অদ্বৈত মল্লবর্মণ দেখিয়েছেন। ‘মালো’-রা পেশায় জেলে এবং সর্বতোভাবেই তিতাস নদীর ওপর নির্ভরশীল। আর তিতাসও এমন নদী, যে মেঘনা বা পদ্মার মতো বিশাল নয় আবার বিজয়-এর মতো শীর্ণকায়াও না। মালোদের জীবনের সমস্ত চাহিদা সে মেটাতে পারে একাই। আবার উপন্যাসের শেষে যখন দেখা যায় তিতাস শুকিয়ে যাচ্ছে, চরা পরে গেছে তার বুকে; তখন মালোরাও জীবিকা হারিয়ে ধুঁকছে। ফলে আলোচ্য তিনটি উপন্যাসের মধ্যে নদী ও মানুষের জীবনের ভাঙাগড়া সবচেয়ে স্পষ্ট এখানে। তিতাস যেন হয়ে উঠেছে মালোদেরই কালেক্টিভ প্রাণসত্তা!

উপন্যাস জুড়ে অজস্র চরিত্রের সারি এবং তাদের জীবনের দিকে তাকালে দেখব, নদীতেই তাদের প্রেম, বন্ধুত্ব, মিলন আবার নদী বুকেই বিদায়, বিচ্ছেদ বা বিরহ যাপন! আদ্যন্ত নদীকেন্দ্রিক সেই জীবনে মাটির ভূমিকা গৌণ। বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে যখন মালোদের অফুরন্ত চাহিদার জোগান দিতে দিতে তিতাস একটু ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন তারা প্রবাসে যায় মাছ ধরতে। কিশোরের মতো কেউ কেউ হয়তো উপার্জন করে ফেরার পথে বিয়ে করে বউকেও নিয়ে আসে। যদিও কিশোর বাড়িতে আনতে পারেনি নবপরিণীতাকে। নদীর বুকেই ডাকাত তাকে তুলে নিয়ে যায়! আবার নদীর বুকেই অন্য কোনও নারীর শব ভাসতে দেখে, তাকে নিজের স্ত্রী মনে করে কিশোর উন্মাদ হয়ে যায়। নেমেসিসের মতো নদী তার জীবনে বারবার হানা দিয়ে শেষমেশ তছনছ করে দেয়। কিশোরের সন্তান অনন্তের জীবনেও তিতাস অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এ ছাড়াও বনমালী, সুবলের মতো অন্যান্য প্রধান অপ্রধান চরিত্রের জীবন-জীবিকা-যৌবন ও মৃত্যু সবই তিতাসকে সাক্ষী মেনেই। মূল তিন নারী চরিত্র — অনন্তের মা, সুবলের বউ বা বাসন্তী আর উদয়তারা — তিনজনই নদীসম্পৃক্ত; কখনও বা নিজেরাই নদীর মতো স্রোতস্বিনী, অতল-গভীর এবং ক্ষেত্রবিশেষে আনপ্রেডিক্টেবল! অনন্ত যেন ত্রিবেণী সঙ্গমের মোহনা আর তাকে ঘিরে এই তিন নারী যেন নদীর মতোই বহমান। মজার কথা হল, অনন্ত যেমন পড়াশোনার জগতে প্রবেশ করে ক্রমশ দূরে সরে গেছে নদীর থেকে, তেমনই প্রাগুক্ত তিন নারীর শেষ দুজনের থেকেও। আর মাকে তো সে আগেই হারিয়েছে। হয়তো নদী থেকে সচেতন দূরত্বের কারণেই সে বেঁচে গেছে শেষ পর্যন্ত। কারণ মালোদের পরিণতিও তিতাসের মতোই— ক্রমশুষ্কমান।

মালোদের সর্বনাশ হয়েছে দ্বিবিধ উপায়ে। এক, যাত্রাওয়ালাদের প্রভাবে এবং আত্মসচেতনতার অভাবে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির চূড়ান্ত অবক্ষয় ঘটেছে। দুই, তিতাসে চর পড়ে যাওয়ায় তাদের বংশানুক্রমিক পেশার মাজা ভেঙে গেছে। সুতরাং পতনটা অনিবার্যই ছিল। ডারউইন মেনে ফিটেস্টরা সার্ভাইব করে যায় চিরকাল। বাকিরা আত্মহারা হয়ে, নিয়তিকে দোষারোপ করে অভ্যস্ত হয় ভাটার টানে। কেউ রূপান্তরিত হয় মজুরে আর শারীরিকভাবে অশক্ত অধিকাংশ মালোই পরিণত হয় ভিখারিতে। তবে এই পতনের পূর্বের ইতিহাস কিন্তু ছিল সুখের, সমৃদ্ধির ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিরও। যে কোনও উৎসব-অনুষ্ঠান বা বিপদে-আপদে নির্দ্বিধায় তারা একে অপরের পাশে এসে দাঁড়াত। আর এই মেলবন্ধনে তিতাসেরই ভূমিকা ছিল সর্বাধিক। নৌকাপথে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় ছইয়ের ফাঁক দিয়ে উদয়তারাকে দেখে যেমন সই পাতানোর তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগে জমিলার; তেমনই আবার কাদিরের আলু ভর্তি নৌকাকে নিশ্চিত ডোবার হাত থেকে বাঁচাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না বনমালী। ডাকাতের হাত থেকে প্রাণ নিয়ে সাঁতরে পালিয়ে আসা অনন্তের মাকে পরম মমতায় আশ্রয় দেয় সম্পূর্ণ অনাত্মীয় দুই বৃদ্ধ — নিত্যানন্দ ও গৌরাঙ্গ। আবার দৌড় প্রতিযোগিতায় ছাদিরের নৌকা অন্য এক দল ভেঙে দিলেও সেই বনমালীই ছাদিরকে উদ্ধার করে নদী থেকে। তিতাসই এইসব নবলব্ধ সখ্য ও কুটুম্বিতায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিয়ে এসেছে বরাবর।

মালোদের উৎসব, ব্রত, সংগীত এমনকী প্রবাদ প্রবচন, লব্জ সবেতেই আলতোভাবে জড়িয়ে থাকে নদী। তাদের জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহ— প্রতিটির অনুষঙ্গে তিতাস অবধারিত। তারা যেমন নদীর নাড়ি-নক্ষত্র জানে, নদীও তেমন মানুষগুলোর সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে নেয় নিজের প্রতিটা বাঁক। বড়ো বড়ো নদীর এক তীর ভাঙে, অন্য তীরে চর পড়ে। কিন্তু তিতাসের ধর্ম তা নয়। এই নদীর কোনও তীরই ভাঙে না। তাই তার বুকে যখন চর পড়ল, সেই চর দিন দিন বেড়ে গোটা নদীটাই প্রায় শুকিয়ে গতিহীন হয়ে গেল। মালোরাও ঠিক সেইরকম! মেঘনার তীরের জেলেরা মাছ ধরার পাশাপাশি কৃষিকাজও করত। তাদের বাড়িতে একপাশে জালের সরঞ্জাম তো অন্যপাশে হালের। ফলে বড়ো নদী যেমন একদিকে চর পড়লেও অন্য পাড় ভেঙে বেঁচে থাকে অনন্তকাল; তার ধারের মানুষেরাও তেমনই মাছ না পেলেও চাষ করে অন্তত জীবনধারণ করতে পারে। কিন্তু তিতাস বা মালো কারোরই কোনও ব্যাকআপ প্ল্যান নেই। ফলে তাদের মৃত্যু উভয়ত সম্পূর্ণ এবং অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ায়।

আসলে নদী, মানুষ, সময় — সব কিছুই তো এক অদৃশ্য কসমিক সুতোয় বাঁধা। একজনের গায়ে টান লাগলে আরেকজনে ঢেউ উঠবেই। এইজন্যই তো উপমা হিসেবে বারবার প্রকৃতির কাছেই হাত পাতি আমরা। প্রকৃতির অনুকরণেই যে আমাদের নশ্বর জীবন সৃষ্ট। আকাশের কাছে, সাগরের কাছে, পাহাড়ের কাছে, মাটি ও অরণ্য-মেঘ-বৃষ্টির কাছে কি আমাদের কম ঋণ? গ্যালাক্সির প্রতিশব্দ তাই আমরা করি ছায়াপথ। মহাকাশের দীর্ঘ দূরত্ব মাপি সময়ের হিসেবে। মানবের চারিত্র্যে প্রায়ই প্রক্ষেপ এসে পড়ে পর্বত বা বৃক্ষ কিংবা নদী অথবা ঝরনার! একইভাবে নদী আর ‘কাল’-এর একটা চমৎকার অ্যানালজি তৈরি করেন তিতাস-কথক —

“নদীর একটা দার্শনিক রূপ আছে। নদী বহিয়া চলে; কালও বহিয়া চলে। কালের বহার শেষ নাই। নদীরও বহার শেষ নাই। কতকাল ধরিয়া কাল নিরবচ্ছিন্নভাবে বহিয়াছে। তার বুকে কত ঘটনা ঘটিয়াছে। কত মানুষ মরিয়াছে।”[৫]

এইসব মৃত্যু উদাসীন নদীবক্ষে খুব বেশি তোলপাড় তোলে না নিঃসন্দেহে। তবে ‘মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব থেকে যায়’, জীবনানন্দীয় এই সূত্র মেনে তিতাসের তীরেও নবজীবনের ইঙ্গিতে উপন্যাস শেষ হয়। অনন্ত ফিরে এসেছে সমাজসেবার উদ্দেশ্যে। বাবুদের সঙ্গে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে সে এসেছে মালোদের গ্রামগুলোতে। সেই তিতাস পথেই নৌকায় তার আগমন। পিতৃপরিচয়হীন এবং শৈশবে মাতৃহীন অনন্ত এভাবেই তিতাস এবং তার পার্শ্ববর্তী মানুষদের কাছে বেঁচে থাকার ঋণ শোধ করতে ফিরে আসে। নদী নদীর মতো বয়ে যায়; আর স্রোতের ছলাৎ শব্দে, নীরবে সম্পূর্ণ হয় একটা বৃত্ত।

তথ্যসূত্র :

১. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় : ‘পদ্মানদীর মাঝি’ : বেঙ্গল পাবলিশার্স (প্রাঃ) লিমিটেড : কলকাতা : প্রথম প্রকাশ, আষাঢ় ১৩৪৩ (১৬ জুলাই ১৯৩৬) : চুয়াল্লিশতম মুদ্রণ, মাঘ ১৪১৮ (জানুয়ারি ২০১২) : পৃষ্ঠা— ৭১

২. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় : ‘পদ্মানদীর মাঝি’ : বেঙ্গল পাবলিশার্স (প্রাঃ) লিমিটেড : কলকাতা : প্রথম প্রকাশ, আষাঢ় ১৩৪৩ (১৬ জুলাই ১৯৩৬) : চুয়াল্লিশতম মুদ্রণ, মাঘ ১৪১৮ (জানুয়ারি ২০১২) : পৃষ্ঠা— ৮৭

৩. দেবেশ রায় : ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’ : দে’জ পাবলিশিং : কলকাতা : প্রথম প্রকাশ, আষাঢ় ১৩৯৫ (জুলাই ১৯৮৮) : নতুন শোভন সংস্করণ, জ্যৈষ্ঠ ১৪২২ (জুন ২০১৫) : পৃষ্ঠা— ৩৩১

৪. দেবেশ রায় : ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’ : দে’জ পাবলিশিং : কলকাতা : প্রথম প্রকাশ, আষাঢ় ১৩৯৫ (জুলাই ১৯৮৮) : নতুন শোভন সংস্করণ, জ্যৈষ্ঠ ১৪২২  (জুন ২০১৫) : পৃষ্ঠা— ৩১৩

৫. অদ্বৈত মল্লবর্মণ : ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ : দে’জ পাবলিশিং : কলকাতা : প্রথম দে’জ সংস্করণ, জুন ২০১৩, জ্যৈষ্ঠ ১৪২০ : পুনর্মুদ্রণ, এপ্রিল ২০১৮,  বৈশাখ ১৪২৫ : পৃষ্ঠা— ২৬

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান