অমৃতেশ বিশ্বাস
১। “ …আমাদের নিয়মকানুন, দর্শন, সংস্কার, ধর্মের বিশ্বাস, জীবনের অভ্যাস উপচারে— এইসব একসাথে আমাদের মগজে ভরে যায়… তবু আমরা সবাইকে বোঝাতে চাই… অন্যকে দেখাতে চাই… প্রতিনিয়ত আমাদের প্রতিনিয়ত বোধে থাকে… সবাইকে জয় করার প্রবণতা…
‘জানো! না না— এত তাড়াতাড়ি সব কেন?’… জানো, আমাদের এই যে আকৃতি বা প্রকৃতি বা পৃথিবীর পরিবেশের যে গঠনমালিকা, আজ যা আমরা দেখতে পাচ্ছি… তার জন্যও ঐ সময়ই দায়ী… প্রতি মুহূর্তের না-এর সঙ্গে হ্যাঁ-এর সংঘর্ষে সে ঠিক করে নিচ্ছে… পরের মুহূর্তে তার রূপ কি হবে… ”
[প্রকাশ কর্মকার। ‘কলাবতী’। কলকাতা: রক্তকরবী, ১৯৯৭।]
২। “শিল্প ও সৌন্দর্য্য সম্পর্কে আমাদের মধ্যে একটি প্রচলিত বিশ্বাস আছে। যা-ই শিল্পগত তাই সুন্দর কিংবা সুন্দর যা কিছু তাই শিল্পসৃষ্টি। এই কথা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। Objective beauty সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণার জন্যই এই বিশ্বাস আমরা মেনে নিতে চলেছি। কিংবা material beauty সম্পর্কে আমরা যথেষ্ট পরিমাণে সচেতন নই। …এই প্রসঙ্গে বলা দরকার যে অভিনন্দিত নন্দনতত্বের সঙ্গে আমাদের ধারণাগত সুন্দরের একটা মিশ্রণ করে ফেলেছি। …এছাড়াও দুঃখের বিষয় যে ইতালীয় রেনেসাঁ সংযোজিত গ্রীক দেহ সুষমার সুন্দরতত্বের নিয়মানুগত্যে আমন্ত্রিত সৌন্দর্য্য বিজ্ঞান আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে শিল্পকাজ উপভোগে পরিচালিত করেছে।”
[নিখিল বিশ্বাস। ‘শিল্প জিজ্ঞাসা’। কলকাতা: রক্তকরবী, ১৯৯৭।]
৩। “তখনই কমিউনিস্ট চিত্রশিল্পী চিত্তপ্রসাদের সঙ্গে যোগাযোগ হল। উনি আমাকে রাস্তায় রাস্তায় হাসপাতালে সঙ্গে নিয়ে হাতে কলমে দেখিয়ে দিলেন— কী করে ভুখা এবং অসুস্থদের ছবি আঁকতে হয়। আমি কাঁচা হাতে তাই করতে লাগলাম। পার্টি থেকে রঙ তুলি কাগজ কিনে দেওয়া হল।”
[সোমনাথ হোর। ‘আমার চিত্রভাবনা’। কলকাতা: সীগাল বুক্স্, ১৯৯২।]
‘পরিবেশ’ বলতে সাধারণভাবে আমরা যা বুঝি, তা তো বুঝিই। কিন্তু, অন্যান্য নানারকম পারিপার্শ্বিকতা, কৃষ্টিজনিত নির্দিষ্ট গণ্ডি, আশেপাশে চোখে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে এমন সব জীব-জন্তু-গাছপালা ইত্যাদিও আলাদা আলাদা জীবের কাছে, আলাদা আলাদা গোষ্ঠীর কাছে এক একরকম পরিবেশ সৃষ্টি করে, সেইসব পরিবেশগুলোকে সর্বজনস্বীকৃত সাধারণ ব্যাখ্যায় ফুটিয়ে তোলা দুঃসাধ্য। সাম্প্রতিক মহামারির পরে একাধিক social media-য় মানুষদের মানসিক পরিবেশ নিয়ে প্রবল চর্চার জের আবার ভাবতে বাধ্য করাচ্ছে, সত্যিই তো, এও তো এক বিরাট সমস্যা বটে! তা বলে এটা মোটেই ভাবা উচিত হবে না যে ঐ ‘মানসিক পরিবেশ’ এক ‘নতুন ঢেউ’। চর্চার প্রাবল্য ‘নতুন ঢেউ’ অবশ্যই। কেননা, এখন প্রায় সবাই-ই যে কোনো বিষয়ে মতামত জ্ঞাপন করতে পারেন, বক্তব্য পেশ করতে পারেন প্রযুক্তির বিবর্তনজনিত কারণে। আগে এটা সম্ভব ছিল না মোটেই। হয় উঁকিঝুঁকি-পাড়াকেন্দ্রিক চর্চা, নয় ডাক্তারের কাছে ছোটা। এর বেশি খুব একটা তরঙ্গ এগোতোই না। এখন আর সে যুগ নেই। ‘বহুস্বর’ ছাপিয়ে উঠছে দীর্ঘকালীন গড়ে ওঠা সামাজিক পরিবেশের মানসিকতাকে।
একদম প্রথমের যে বক্তব্য তিনটে, সেগুলো আসলে ‘মানসিক পরিবেশ’ নামক ধারণাটার পক্ষে। আমি নিজে যে ভাবে বুঝছি তার সমর্থনে। বিশদে বলতে গেলে,
প্রথমত, পরিবেশ তার নিজের মতোই চলে। সেখানে আমরা বড়জোর জলে আঁক কাটি মাত্র। শুনতে অবাক লাগলেও, global warming-এর বেশিরভাগটাই সংঘটিত হচ্ছে সময়ের স্বাভাবিক নিয়মে! মানুষ নামের সামাজিক পশুদের তথাকথিত সভ্যতাজনিত দূষণের প্রকোপ সেই উষ্ণায়নের অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে সত্যি, কিন্তু তার পরিমাণ তুলনায় খুবই কম! অবশ্য সেটাও যতটা কম করা যায়, ততটাই মঙ্গল। এটা অবশ্যই আমার কথা নয়, পরিবেশ বিজ্ঞান/ বিজ্ঞানীদের কথা। আর ঐ ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’-এর সংঘর্ষ সূর্যেও প্রতিনিয়ত হয়ে চলেছে। সেইজন্যেই আমরা এখনও বেঁচে আছি।
দ্বিতীয়টি হল আমাদের অভ্যাসতন্ত্রের চিন্তন-প্রক্রিয়া। আমরা না চাইতেই অনেককিছু ধারণা আমাদের মজ্জাগত হয়ে ওঠে দিনের পর দিন অভ্যাস, অনুশীলন ইত্যাদির হাত ধরে। ঠিক যেমন ঐ ‘সৌন্দর্য্য’ বোধ আর ‘অভিনন্দিত নন্দনতত্ব’! অতএব, বাঙালি মানেই এমনটা হবে, শিল্প মানেই অমনটা হবে, তেমনটা নয়!
তৃতীয়ত, tabula rasa-বস্থায় আমাদের মননে, চিন্তনে অনেক কিছু ধারণা, মতামত, বক্তব্য বাইরে থেকে গেঁথে দেওয়া হয়। সেই গাঁথা এতোটাই ভিতর পর্যন্ত ঢুকে যায় যে প্রবল যন্ত্রণা, রক্তপাত সত্ত্বেও তা আর বের করে আনার উপায় থাকে না। আস্তে আস্তে মৃত্যু গ্রাস করে আমাদের। প্রাচীন crucifixion পদ্ধতি এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য। আমি যে কতটা কৃষ্টিশীল বঙ্গপুঙ্গব তা অপরকে জানানোর/ বোঝানোর জন্য আমাকে দুই-তিন লাইন রবিকবি আওড়াতেই হবে। বিভিন্ন বিদেশি তাত্ত্বিকের কাম নয়, নাম জানতেই হবে সংশ্লিষ্ট বিদেশি ভাষার ‘নির্ভুল’ উচ্চারণে (যদিও তা আদতে অনেকক্ষেত্রেই হয়ে ওঠে না)! আর অনধিকার চর্চা তো নিত্যসঙ্গী। ব্যাখ্যা, ব্যাখ্যা আর ব্যাখ্যা — এই এখন যেমন আমি করছি। এতো ব্যাখ্যা না করে সৃষ্টিশীল কিছু করা কি যায় না? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি। উত্তরও পাই। কিন্তু ঐ গাঁথার প্রকোপে আবার একমনে লিখতে শুরু করি। যথার্থ ‘চোখে আঙুল দাদা’ হয়ে উঠেছি কখন। টেরই পাই নি!
যাক গে, যে তিনজনের উক্তি/ বক্তব্য এখানে পেশ করা হয়েছে, তাঁরা সকলেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চিত্রকলার সঙ্গে যুক্ত (ছিলেন)। আসলে বাংলার চিত্রকলার অন্যতম সংরূপ ‘কার্টুন ও কমিকস’ সংক্রান্ত কিছু জিজ্ঞাসা অনেকদিন ধরেই মনের কোণে ঘোরাফেরা করছে। কোনও না কোনওভাবে কি বাংলা কার্টুন ও কমিকস জগৎ পাঠকবর্গের সামনে কিছু বিশেষ বিশেষ পরিবেশ তৈরি করছে? নাকি এ আমার নিছক ভ্রান্ত ধারণা?
সাধারণত বাংলা কার্টুন ও কমিকস-এর আলোচনায় মগজে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াজনিত যে যে পরিকাঠামোগুলোর প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে, সেগুলো আসলে ঐ ‘অভিনন্দিত নন্দনতত্ব’-এর অংশবিশেষ বলা চলে। আবুল ফজল মহাশয়ের ভাষায় ‘অধীত ঐতিহ্য’। এই পরিকাঠামো আদতে “সাগরপারের”।
চণ্ডী লাহিড়ী-র লেখায় পাই, “হাতে আঁকা ছবিকে কার্টুন হিসাবে ধরা হলেও, কার্টুনের প্রধান লক্ষ্য যে রঙ্গ-ব্যঙ্গ, তার চর্চা অন্যভাবেও ছিল।”— কি ভাবে ছিল? ছিল, না কি এখনও আছে? যদি থেকেই থাকে, তাহলে তার সম্পর্কে কী কী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে?
তিনি আরও লিখেছেন, “…সমসাময়িক ঘটনাবলীকে নিয়ে গানে, ছড়ায় ও লোকশিল্পে রঙ্গ করার রেওয়াজ অনেক দিন ধরেই বাংলায় চলে আসছে। রাঢের বোলান, উত্তরবঙ্গের গম্ভীরা কিংবা ঝুমুর গান, গাজনের সঙের গান ও নানা লোকগীতি ও ছড়ায় আমাদের কৌতুকপ্রিয়তা ও পরিহাসবোধ সুস্পষ্টভাবে পরিস্ফুটিত।”— এই বক্তব্যে বাংলার নানারকম performing art এবং মুখে মুখে ছড়া কাটার গতানুগতিক ঐতিহ্যের কথা বলা হচ্ছে যেখানে কৌতুক ও হাস্যরস পরিবেশনের বৈশিষ্ট্য প্রকটতা লাভ করেছে।
ভাষা আর শব্দের বিবর্তন কালের নিয়মের বৈশিষ্ট্য। “প্রতি মুহূর্তের না এর সঙ্গে হ্যাঁ-এর সংঘর্ষে সে ঠিক করে নিচ্ছে… পরের মুহূর্তে তার রূপ কি হবে… ।” ‘কার্টুন’ শব্দটা ‘Cartone’ (বড়ো কাগজ) থেকে এলেও “পরবর্তী কালে কাগজ নয়, খসড়া ড্রইংকেই কার্টুন বলা শুরু হয়। এখন অবশ্য খসড়া ড্রইংকে আমরা লে-আউট বলি।” এছাড়াও, বাংলায় বহুকাল ধরেই কমেডিয়ানদের কার্টুন-শিল্পী, কার্টুন-ক্যারেক্টার বলা হয়ে থাকে। ঘরোয়া পরিবেশে বা বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি হাস্যকর অঙ্গ-ভঙ্গি বা হাসির কথা বললে তাকেও ‘কার্টুন’ বলে অভিহিত করা হয়। “ইতালিয়ান শিল্পী আনাবেল কারাচ্চি সর্বপ্রথম তাঁর ড্রইং বোঝাতে কারিকাতুরা (ক্যারিকেচার) শব্দটি ব্যবহার করেন।” কিন্তু এখন ক্যারিকেচার শব্দটার মানে অনেকটাই আলাদা। ঠিক সেইভাবেই ‘কমিক’ (comic) শব্দটার দিকে যদি দৃষ্টিপাত করা যায় তাহলে দেখা যাবে noun এবং adjective হিসেবে এর অর্থতালিকা দীর্ঘ। Oxford English Dictionary-র বৈদ্যুতিন সংস্করণে Comic শব্দের বিভিন্ন অর্থ আর সংজ্ঞাগুলোর মধ্যে A.n.1.c.-তে আছে,
“An entertainer who tells jokes, adopts a comic persona, or acts in a manner intended to make an audience laugh; (now esp.) a performer of stand-up comedy; = COMEDIAN”.
4.a.-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী,
“A periodical containing amusing and satirical articles and illustrations.”
4.b.-তে পাওয়া যায়,
“A publication, usually in magazine format, containing a story or collection of stories in the form of comic strips; originally one with chiefly humorous or action-based content intended for children, later also one dealing with a broad range of subjects and intended for adults.”
4.c. —“orig. and chiefly North American. A comic strip. Also in plural, often with the: the comic strip in a newspaper, magazine, etc.; (North American) the section of a newspaper containing these (cf. FUNNY n.).”
4.d. — “In plural with singular agreement. The medium or genre of comics.”
5. — “A comic film, animation, or programme for cinema or television, esp. a cinematic short shown before the feature film.”
এছাড়াও, adjective-এর মধ্যে এই শব্দের বিবিধ ব্যবহারে যেমন “Of a writer, performer, etc.” (B.2.b.), তেমনই“Of a journal, magazine” (B.2.c.), “Of a personal attribute, quality, ability, etc.: endowed with or showing natural capacity to cause amusement.”(5.)-ও বোঝায়।
অথচ, এর পরেও আমাদের বোধের পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ভাঙতে চায় না মোটে!
শৈল চক্রবর্তী তাঁর ‘কার্টুন’ বইয়ে লিখেছেন, “কার্টুন কথাটি ইংরাজী ভাষার। এর বাঙ্লা হয় ব্যঙ্গচিত্র।” সুশোভন অধিকারী ‘কার্টুনে রবীন্দ্রনাথ’ বইতে পাওয়া যায়, “কার্টুন জিনিসটা ঠিক এদেশের নয়। এই শিল্পচর্চা বোধ হয় সাগরপার থেকে এসেছে।” কমলাকান্ত ‘মাস্কাবারের পে-বিল’ নিয়ে যে চিত্র এঁকেছিলেন, বঙ্কিমচন্দ্র সেই চিত্রকে অভিহিত করেছেন কেবল ‘চিত্র’ বলেই। আদতে সেই চিত্র কিন্তু পরিকাঠামোর বিচারে একপ্রকার কার্টুন-ই। দ্বিজেন্দ্রলালের ‘অবতার’ নাটকের পরিবর্দ্ধিত সংস্করণ ‘আনন্দবিদায়’ নামক নাটকে ব্যঙ্গ প্রসঙ্গে সুশোভন অধিকারী মহাশয়ের সেই উক্তির কথা আবার মনে পড়ে, “তবে, শব্দ দিয়ে ভাষা দিয়ে গড়া এই নির্মম কার্টুন অল্পকালের মধ্যেই কীভাবে সত্য হয়ে উঠেছে তা আজ ভাবতে অবাক লাগে।” শব্দ দিয়ে, ভাষা দিয়ে কার্টুন তাহলে গড়া যায়!
প্রশ্নটা শুরু হয় এই জায়গা থেকেই।
“ইংরেজী শব্দ কার্টুনের নাম হবে ‘চিত্রসাহিত্য’ আর তা হালকা ক্যারিকেচারের পর্যায়ে হলে তার নাম হবে ‘নক্সাসাহিত্য’— বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ তাঁর সচিব নন্দগোপাল সেনগুপ্তকে আর নন্দগোপাল বলেছিলেন ব্যঙ্গচিত্রী পিসিয়েলকে।”
ছাপার অক্ষরে এই কথা বিশ্বদেববাবুর ‘কার্টুন রঙ্গ বিচিত্রা’ বইয়ে আছে। এছাড়া, ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় এই প্রসঙ্গ চণ্ডী লাহিড়ী মহাশয় একাধিকবার উল্লেখ করেছেন।
‘চিত্রসাহিত্য’ বাদ দিয়ে যদি কেবল ‘নক্সাসাহিত্য’ বলা হয়, তাহলে, এই বিশেষ শব্দবন্ধনী একদিক থেকে বাংলার রঙ্গ-ব্যঙ্গ চর্চাকে তুলে ধরার জন্য জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে যথাযথ নামকরণ বলা যেতে পারে। ‘নকশ’(স) আর ‘নকশা’(সা) সম্পর্কে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’-এ জানাচ্ছেন “চিত্র, উৎকীর্ণ চিত্র, সূচি-শিল্প, জমির রেখাচিত্র, মানচিত্র, বাড়ির রেখাচিত্র ইত্যাদি”। বাংলা একাডেমি-র বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধানের দ্বিতীয় খণ্ডে যখন ‘নক্সা’ শব্দের অর্থাবলীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে, তখন সেখানে দেখা যায় — “পরিকল্পনার রেখাচিত্র”, “রেখাচিত্র”, “খণ্ড খণ্ড কাহিনীচিত্র”, “ছবি”, “আলপনা” তো রয়েইছে, “নিপুণ নকশাকার” হিসেবে কবি মনীষী’-রও উল্লেখ আছে। অর্থাৎ নকশা/নকসা-র মধ্যে লিখিত রূপকেও মান্যতা প্রদান করা হয়েছে। পরের পৃষ্ঠাতেই ‘নক্সা’ শব্দের অর্থগুলোর মধ্যে “প্রহসন”-ও লক্ষ করা যায়।
এরই সূত্র ধরে বলা যায়, বাংলা রঙ্গ-ব্যঙ্গ চর্চা ‘বসন্তক’, ‘হরবোলা ভাঁড়’, Indian Charivari পত্রিকাসমূহের এবং আনন্দবাজার পত্রিকার ১৯৭২ সালের ঐ উডব্লকে ছাপা চিত্রের বহুযুগ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। কাজেই নির্দিষ্ট সময়-বিচারে কেবল ইউরোপীয় পরিকাঠামো অনুযায়ী কি কি পাওয়া যাচ্ছে সেই ইতিহাসটুকুই লিপিবদ্ধ না করে আরও পিছন দিকে এগিয়ে গেলে কেমন হয়? তর্জা, সঙের গান, ভাণ ইত্যাদি নানারকম performing art তো বটেই, বিংশ শতকীয় বাংলা ‘কৌতুক নক্সা’গুলোও এই ধরনের অনুসন্ধানের আওতায় আসতে পারে। লিখিত নক্সা/নকশা/নক্শা নিয়ে একাধিক কাজ আগেই হয়ে গেছে। কাজেই পুনরাবৃত্তি অপ্রয়োজন।
সাধারণভাবে দেখা যায় ‘হাস্যকৌতুক’ বা ‘চুটকি’-র বিভিন্ন রেকর্ডে এবং ক্যাসেটে ‘বাংলা কৌতুক নক্সা’ অথবা কেবল ‘কৌতুক নক্সা’ [‘নকশা’/ ‘নক্শা’-ও মুদ্রিত থাকে] কথাটা ব্যবহার করা হয়েছে এবং এখনও সিডি/ ডিভিডি-তে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইংরেজিতে লেখা থাকে ‘Bengali humorous sketches’, ‘Humorous sketches’ — অনেক সময় ‘Comic sketches’-ও দেখা যায়।
‘কমিকস’ আর ‘কমিক স্কেচেস’— দুইয়ের মধ্যেই ‘কমিক’ শব্দটা সাধারণ। চিন্তন-প্রক্রিয়ার তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়ায় প্রায় সমোচ্চারণজনিত কারণে দুই পৃথক সংরূপকে এক করে দেখা হয়েছে নাকি, এই ধারণায় কি অন্য কারণও বর্তমান— শব্দের এই প্রয়োগ কি নিয়মনির্দিষ্ট, স্বাভাবিক?
আশি-নব্বইয়ের দশকে প্রকাশিত কৌতুক নক্সার ক্যাসেটগুলোর প্রচ্ছদের দিকে তাকালে আরও একটা ব্যাপার চোখে পড়ে —

বাংলা কৌতুক নকশা/ নকসা/ নক্সা, Bengali Humorous Sketches-এর বদলে ব্যবহার হয়েছে ‘Comics’ শব্দটা!
আবার, অতি সম্প্রতি, ১৪১৭ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ‘শারদীয়া সন্দেশ’ পত্রিকায় নীতিশ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘দুঃখী রাজা সুখী সে’ শীর্ষনামের একটা ‘কমিক্স’ স্থান পেয়েছে। সচরাচর কমিকস বলতে যে চিত্র তৎক্ষণাৎ চিন্তন-প্রক্রিয়ায় মানসচক্ষে ভেসে ওঠে, এই কমিকস কিন্তু সেইরকম নয়।

লক্ষ করলে দেখা যাবে যে এই ছবিগুলোর পাশাপাশি লেখার ধরনটা সাধারণত সাহিত্যে অলংকরণের কথাই মনে করায়।
আবার ফিরে যাওয়া যাক লেখার শুরুতে, তিন নম্বর বক্তব্যে। একজন “হাতে কলমে দেখিয়ে দিলেন” এবং “আমি কাঁচা হাতে তাই করতে থাকলাম”।
তবে এই প্রসঙ্গে আসার আগে,
১৮৭৬ সালের Indian Charivari পত্রিকার মার্চ সংখ্যার একটা আঁকাটার কথা না বললেই নয়। HB স্বাক্ষরিত জনৈক শিল্পীর কল্পনায় এমন এক জন্তু দেখা যায় যার মাথা হাতির আর দেহ জিরাফের। এইরকম Transposed Heads মার্কা আঁকা ভিক্টোরীয় ইউরোপে একসময় বহুল প্রচলিত ছিল। ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন উপন্যাস প্রকাশের পরে আরও কাটা-ছেঁড়া শুরু হয়। বাংলাতেও ১৯০৭ সালে দক্ষিণারঞ্জনের হাত ধরে (ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমি) এইধরনের চিত্রের প্রবেশ। তারপরে তো একাধিক শিল্পী-সাহিত্যিক (খ্যাতনামা, অখ্যাতনামা) এই ধারাকেই আরও এগিয়ে নিয়ে গেছেন। সুকুমার রায়ের ভূমিকা এক্ষেত্রে অবিস্মরণীয়।

[তথ্যসূত্র : HB, Indian Charivari, মার্চ৩১, ১৮৭৬, ৭৩।]
[কলকাতার মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজ-এর মহাফেজখানায় সংরক্ষিত এই Indian Charivari এ্যালবাম যদি না দেখতাম, তাহলে হয়ত এত কথা জোর দিয়ে বলা সম্ভব হত না।]
কিন্তু, কাঁচা হাতের কাজ বলে এইসব কাজকে অভিহিত করা যাবে না মোটেই। কেননা,
“… বিশেষ ভাবাদর্শের অভিঘাত (Impact) বা প্রভাব, সাহিত্য সংস্কৃতির জীবনে সত্য। কোন কবির ওপর কোন বিশেষ প্রভাব বা কোন কবির রচনাভঙ্গীর প্রভাব আর একটি কবির ওপরে পড়া নতুন ঘটনা নয়। তুলনামূলক আলোচনার সাহায্যে আমরা এই অভিঘাত এবং প্রভাবকে আরও ভালো করে চিনতে পারি।
…প্রভাব বা অভিঘাত যেমন সাহিত্যে সত্য, তেমনি নবসৃজনও সমান সত্য।…”
ড. শেখ মকবুল ইসলাম তাঁর ‘লোকসংস্কৃতিবিজ্ঞান : তত্ত্ব, পদ্ধতি ও প্রয়োগ’ বইয়ে তুলনামূলক পদ্ধতি-র লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও ব্যাপ্তি নিয়ে নিয়ে আলোচনার সময়ে যা লিখেছেন, তার খেই ধরেই বলা যায় এগুলো কখনও পুরোপুরি, কখনও আংশিক ‘নবসৃজন’ তো নিশ্চয়ই।
পরবর্তীকালে যখন Dandy Comics-এর Desperate Dan, Corky the Cat ইত্যাদি একাধিক চরিত্রগুলোর আদলে অনেক বছর পরে বাংলায় প্রকাশিত হয় বাহাদুর বেড়াল, বাঁটুল দি গ্রেট ও অন্যান্য কমিকস,


অথবা,

তখনও, বিলেতি প্রভাবের বলিষ্ঠতা সম্পর্কে সন্দেহ না থাকলেও, বাঁটুল, নন্টে-ফন্টে বা বাহাদুর বেড়াল ইত্যাদি চরিত্রগুলো বিদেশি কমিকসের কিছু কিছু মুখ্য চরিত্রের একাধারে অবয়ব আর অঙ্কনশৈলী অবলম্বনে সৃষ্ট হলেও সেগুলো যে অন্ধ অনুকরণ নয়, বোঝা যায়। পাঠকবর্গ পাঠকালীন কখনওই বোধহয় সেইরকম অজ্ঞাত দূরত্ব অনুভব করেন না যা কিনা দুর্বোধ্যতার আর-এক নাম। প্রথম থেকেই বাঁটুলের আশেপাশে যে-সব লোকজন, পিসিমা, ভজা-গজা, গুণ্ডা— এরা পাঠকবর্গের চিরপরিচিত মানুষজনদেরই প্রতিফলন। ঠিক যেমন হাঁদা-ভোঁদা সিরিজে পিসেমশাই, মাস্টারমশাই, বন্ধু-বান্ধব, রাস্তায়-ঘাটে কর্মরত বা পথ-চলতি মানুষজনেরা।
এই কারণেই যখন পাঠকবর্গ দেখেন যে পাড়াতুতো কাকিমা বা পিসিমার মতো কেউ একজন হাঁদা কে চকোলেট ক্রিম কেক দিচ্ছেন, তখন পারিপার্শ্বিকতা এতটাই স্বাভাবিক বলে মনে হয়, মনে প্রশ্ন জাগে না এরকম কেক তৎকালীন সমাজে মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ ব্যঞ্জনের বা ক্রয়-তালিকায় থাকার কথা নয়। পাঠকবর্গের অজান্তেই একটা অজানা কিন্তু অজানা নয় পরিবেশ তৈরি হচ্ছিল। উদার অর্থনীতি ও বিশ্বায়নের কবলে সমাজ-ব্যবস্থা কীরকম হতে চলেছে তার একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছিল সেই সময় থেকেই।
আবার, একইভাবে, ‘Desperate Dan’-এর আদলে নির্মিত এই ‘বাঁটুল’-এর নতুন বছরের সংকল্প শুরু হয় ১ বৈশাখ, ১ জানুয়ারি নয়। কাজেই সেই কমিকসেই টেক্সাসীয় কাঠের বাড়ি, কাঠের বেড়া আর ল্যাসোর ব্যবহার পরিচিত না হলেও দূরত্ব বাড়ায় না, বরং কৌতূহল জাগায়। এমন পরিবেশ, এমন হাব-ভাব যা বাংলার সমাজের অঙ্গ না হয়েও অঙ্গ!
তবে, অঙ্কনশৈলীর কথা যদি ধরা হয়, তাহলে, ঐ “হাতে কলমে” বলাটা খুব একটা বাড়াবাড়ি হবে না। ষাটের দশকের বহু কমিকস আর কার্টুন শিল্পী এই একই রীতি অনুসরণ, অনুকরণ করেছেন “হাতে কলমে”। এরকম উদাহরণ ভূরি ভূরি।
ময়ূখ চৌধুরী যখন নির্দ্বিধায় লেখেন, “এই পশ্চিমবঙ্গ থেকেই সত্যিকার ভালো কমিক্স সৃষ্টি করা অসম্ভব নয়—যার মান বা স্ট্যান্ডার্ড বিদেশি কমিকসের কাছাকাছি হবে।” তখন ‘অভিন্দিত নন্দনতত্ব’, ‘অধীত ঐতিহ্য’ আর ‘হাতে কলমে’-র ব্যাপারটা আরও ভালোভাবে বোঝা যায়। পরিবেশ নির্মাণে সাগরপারের হাওয়ার দাপট তো দাপট নয়, একেবারে ঘূর্ণিঝড়!
এরও পরে যখন নজরে আসে, বাংলার কার্টুন ও কমিকস শিল্পীরা অনুকরণ করতে শুরু করেছেন তাঁদেরই পূর্বসূরিদের এবং বিভিন্ন রচনায় একই ঘটনা আর আঁকাকে ঈষৎ পালটে পালটে পরিবেশন, তখন এই সমগ্র পদ্ধতিকে একধরনের ‘স্থগন-প্রক্রিয়া’ ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়?
ছবিগুলোর দিকে তাকালে আমার বক্তব্যের স্পষ্টতা হয়তো কিছুটা পরিষ্কার হবে–

[তথ্যসূত্র: যথাক্রমে নারায়ণ দেবনাথ, ‘হাঁদা ভোঁদার কাণ্ডকারখানা: ৫’ (কলকাতা: দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশকাল নেই), ১২। এবং দিলীপ দাস, ‘চুনো পুঁটি’ (কলকাতা: উজ্জ্বল কমিকস, প্রকাশকাল নেই), ৬।]
কেবল এই নয়, একই ঘটনার পাঠান্তর একই শিল্পীর রচনাতেই!

[তথ্যসূত্র যথাক্রমে দিলীপ দাস, ‘বেচারাম কেনারাম: চড়কিবাজি’ (কলকাতা: পাত্র’জ পাবলিকেশন, ২০০৮), ৩২।, দিলীপ দাস, মামা-ভাগ্নে: ৪, ‘রকমারি কমিকস্’ (কলকাতা: ভৈরব গ্রন্থালয়, ২০০৩), ২৬১। এবং দিলীপ দাস, ছক্কা ফক্কা: ১৮, তদেব, ২৪৬।]
এবারে আসা যাক আরেক প্রসঙ্গে। ‘বিশ্বসাহিত্য চিত্রকথা’-র বেশ কিছু গল্প পুনর্মুদ্রিত হয়েছে ‘বুক ফার্ম কমিক্স’ প্রকাশনা সংস্থার দ্বারা। ২০১৭ সালে ‘ওয়ার্ল্ড ক্ল্যাসিকস ১’ নামধারী এই বইটা হাতে পাওয়ার পরে দেখা যায় যে ‘Script’ সংস্থার পক্ষ থেকে এর মধ্যে একটা গল্প আগেও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত। সেই বইটা জোগাড় করেছিলাম স্কুলে পড়াকালীন, আসানসোল বইমেলায়।

[তথ্যসূত্র: যথাক্রমে Bram Stoker, Dracula (Kolkata: Script, প্রকাশকালনেই), প্রচ্ছদ। এবং গৌতম কর্মকার, ‘ওয়ার্ল্ডক্ল্যাসিকস১’ (কলকাতা: বুকফার্ম, ২০১৭), প্রচ্ছদ।]
প্রদর্শিত দ্বিতীয় বইটার প্রচ্ছদ দেখে মনে হয় যে এর মধ্যে কেবল ‘ড্রাকুলা’-র কাহিনীই চিত্রসাহিত্য রূপে স্থান পেয়েছে। উলটে দেখলে বোঝা যায় ‘ড্রাকুলা’-র সঙ্গে এইচ. জি. ওয়েলস-এর ‘টাইম মেশিন’ চিত্রসাহিত্যটাও রয়েছে। কিন্তু, সেটা পুনর্মুদ্রিত কিনা জানা যায়নি। তার ওপরে, সমগ্র বইতে ‘ড্রাকুলা’র পুনর্মুদ্রণ নিয়ে কোনো তথ্য নেই বটে, কিন্তু সৌজন্য জানানো হয়েছে ‘ক্লাসিক্স ইলাস্ট্রেটেড, শৈব্যা প্রকাশনী’কে। প্রচ্ছদকার হিসেবে নাম দেওয়া আছে গৌতম কর্মকারের।
অন্যদিকে, Script প্রকাশনীর ‘ড্রাকুলা’-র (প্রদর্শিত প্রথম বই) প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে নাম দেওয়া আছে তাপস মুখার্জী বলে এক ব্যক্তির। আপাতদৃষ্টিতে দুটো চিত্রসাহিত্যই দ্বিতীয় বইটার ক্ষেত্রে গৌতম কর্মকার মহাশয়ের করা বলে ভ্রান্তি দেখা দিতে পারে, কেননা, ‘বিশ্বসাহিত্য চিত্রকথা’-র বাংলা অনুবাদের যেসব কমিকস দেখা সম্ভব হয়েছে সেগুলোর সবক’টাতেই চিত্রশিল্পীর নাম, মর্মানুবাদকের নাম, বর্ণযোজকের নাম, চিত্রলিপিকরের নাম প্রভৃতি স্পষ্টভাবে আলাদা করে মুদ্রিত। কিন্তু এই পুনঃপ্রকাশিত ‘ড্রাকুলা’ চিত্রসাহিত্য সম্বলিত বইয়ে এই কমিকসের প্রথম পাতায় প্রথম ফ্রেমেই স্বাভাবিকভাবেই ‘বর্ণযোজনা- গৌতম কর্মকার’ পুনর্মুদ্রণের কারণে স্থান পেয়েছে এবং পাতার নীচে ডানদিকে মুদ্রিত ‘অনুবাদ ও বর্ণলিপি : গৌতম কর্মকার’। চিত্রকাহিনির একদম শেষে একইভাবে পাতার নীচে ডানদিকে অতি ছোটো font-এ মুদ্রিত ‘শিল্পী নেস্টর রেডন্ডো’।
দ্বিতীয় গল্পের চিত্রকর গৌতম কর্মকার, কেননা, মাঝে মাঝেই একাধিক ফ্রেমে শিল্পীর ‘Gautam’ স্বাক্ষর লক্ষ করা যায়। প্রথম কাহিনির ক্ষেত্রে তথ্যপ্রদানার্থে অনুবাদক, বর্ণলিপিকর এবং চিত্রশিল্পীর নাম তুলনামূলক এতটাই ছোটো font-এ মুদ্রিত যে খুঁটিয়ে না পড়লে তা চোখে পড়ার কথা নয়— পাঠকের চোখ এড়িয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়! এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা বাঞ্ছনীয়। বিশদে তথ্যপ্রদান কাম্য বলেই মনে হয়।
এ আলোচনার শেষ নেই। যতই বলি, কম বলা হবে। নিজস্ব ঘরানা, গতানুগতিক ‘অভিজ্ঞতার ঐতিহ্য’ অনুযায়ী সৃষ্টিশীল বিবিধ কাজকর্মের অবশ্য প্রয়োজন। তা নাহলে সত্যিই বাংলা নকশাসাহিত্যের পরিবেশ বড়োই বিপন্ন!
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : অভিজিৎ গুপ্ত, অম্লান দাশগুপ্ত, বিশ্বজিৎ রায় ও সুকান্ত চৌধুরী।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি :
বাংলা
- অতুল বসু। ‘বাংলায় চিত্রকলা ও রাজনীতির একশ বছর’। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৯৩।
- অশোক ভট্টাচার্য। বাংলার চিত্রকলা। কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ১৯৯৪।
- আবুল ফজল। ‘সমাজ সাহিত্য রাষ্ট্র’। ঢাকা: গতিধারা, ২০০৫।
- ইব্রাহিম মণ্ডল। ‘কার্টুনের কথা’। ঢাকা: বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি, ২০০৮।
- গোলাম মুরশিদ, সম্পা. ‘বাংলা একাডেমি বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান: দ্বিতীয়খণ্ড’।ঢাকা: বাংলা একাডেমি, ২০১৩।
- গৌরী দে। ‘কমেডিয়ানদের কথা’। কলকাতা: দেব সাহিত্য কুটীর, ২০১০।
- চণ্ডী লাহিড়ী। ‘কথায় কথায়’। কলকাতা: নিউ এজ পাবলিশার্স, ২০০৩।
- চণ্ডী লাহিড়ী। ‘কার্টুনের ইতিবৃত্ত’। কলকাতা: গণমাধ্যম, ১৯৯৫।
- চণ্ডীলাহিড়ী, সংগ্রহ ও টীকা. ‘বসন্তক: ১মবর্ষ-২য়বর্ষ’।কলকাতা: নিউ এজ পাবলিশার্স, প্রকাশকাল নেই।
- চণ্ডী লাহিড়ী ও শান্তনু ঘোষ, সম্পা. ‘নারায়ণ দেবনাথ কমিক্স-সমগ্র: দ্বিতীয় খণ্ড’। কলকাতা: লালমাটি, ২০১১।
- তুষার মাজি ও শান্তনু ঘোষ, সম্পা. ‘ময়ূখ চৌধুরী কমিক্স-সমগ্র ২’। কলকাতা: লালমাটি, ২০১৩।
- দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার। ‘ঠাকুরমার ঝুলি: বাংলার রূপকথা’। কলকাতা: মিত্র ও ঘোষ, ১৩১৪।
- দিলীপ দাস। ‘চুনো পুঁটি’। কলকাতা: উজ্জ্বল কমিকস, প্রকাশকাল নেই।
- দিলীপ দাস। ‘বেচারাম কেনারাম: চড়কিবাজি’। কলকাতা: পাত্র’জ পাবলিকেশন, ২০০৮।
- দিলীপ দাস। ‘রকমারি কমিকস্’। কলকাতা: ভৈরব গ্রন্থালয়, ২০০৩।
- দিলীপ দাস। ‘থ্রিলার কমিক্স’। সংকলন. স্বাগত দত্ত বর্মন। কলকাতা: বুক ফার্ম, ২০১৭।
- দেবাশীষ দেব ও শান্তনু ঘোষ, সম্পা. ‘নারায়ণ দেবনাথ কমিকসসমগ্র’। কলকাতা: লালমাটি, ২০১১।
- নারায়ণ দেবনাথ। ‘বাঁটুল দি গ্রেট: ২’। কলকাতা: দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশকাল নেই।
- নারায়ণ দেবনাথ। ‘বাঁটুল দি গ্রেট: ৬’। কলকাতা: দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশকাল নেই।
- নারায়ণ দেবনাথ। ‘বাঁটুল দি গ্রেট: ১৩’। কলকাতা: দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশকাল নেই।
- নারায়ণ দেবনাথ। ‘বাঁটুল দি গ্রেট: ১৮’। কলকাতা: দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশকাল নেই।
- নারায়ণ দেবনাথ। ‘বাঁটুল দি গ্রেট: ২০’। কলকাতা: দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশকাল নেই।
- নারায়ণ দেবনাথ। ‘বাঁটুল দি গ্রেট: ২৫’। কলকাতা: দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশকাল নেই।
- নারায়ণ দেবনাথ। ‘বাঁটুল সমগ্র’। কলকাতা: দেব সাহিত্য কুটীর, ২০১১।
- নারায়ণ দেবনাথ। ‘বেস্ট অফ বাহাদুর বেড়াল ১’। কলকাতা: লালমাটি, ২০১১।
- নারায়ণ দেবনাথ। ‘হাঁদা ভোঁদার কাণ্ডকারখানা: ২’। কলকাতা: দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশকাল নেই।
- নারায়ণ দেবনাথ। ‘হাঁদা ভোঁদার কাণ্ডকারখানা: ৩’। কলকাতা: দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশকাল নেই।
- নারায়ণ দেবনাথ। ‘হাঁদা ভোঁদার কাণ্ডকারখানা: ৪’। কলকাতা: দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশকাল নেই।
- নারায়ণ দেবনাথ। ‘হাঁদা ভোঁদার কাণ্ডকারখানা: ১৩’। কলকাতা: দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশকাল নেই।
- নারায়ণ দেবনাথ। ‘হাঁদা ভোঁদার কাণ্ডকারখানা: ১৯’। কলকাতা: দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশকাল নেই।
- বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়। ‘কার্টুন রঙ্গ বিচিত্রা’। কলকাতা: করুণা প্রকাশনী, ২০১৩।
- বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায় ও প্রদীপ গরাই, সংকলন ও সম্পা. ‘কাফীখাঁসমগ্র’। কলকাতা: লালমাটি, ২০১২।
- বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায় ও সৌম্যেন পাল, সম্পা. ‘ময়ূখ চৌধুরী কমিক্স-সমগ্র ১’। কলকাতা: লালমাটি, ২০১২।
- ময়ূখ চৌধুরী। ‘অ্যাডভেঞ্চার কমিকস’। সম্পা. সন্দীপ রায়। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৯৭।
- ময়ূখ চৌধুরী। ‘বুদ্ধির যুদ্ধে রবিনহুড’। কলকাতা: দেবসাহিত্য কুটীর প্রাইভেট লিমিটেড, ২০১৩।
- শৈল চক্রবর্তী। ‘কার্টুন’। কলকাতা: কারিগর, ২০১৬।
- শ্রীপান্থ। ‘বটতলা’। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৯৭।
- সন্দীপ রায় ও দেবাশিস সেন, সম্পা. ‘শতবর্ষের সন্দেশ কমিক্স-সমগ্র (১৩২০-১৪১৯): প্রথম খণ্ড’। কলকাতা: লালমাটি, ২০১৫।
- সিদ্ধার্থ ঘোষ, সংকলন. ‘সুকুমাররায়, আবোলতাবোল’।কলকাতা: সুবর্ণরেখা, ১৪০৭।
- সুকুমার সেন। ‘বটতলার ছাপা ও ছবি’। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৮৪।
- সুশোভন অধিকারী। ‘কার্টুনে রবীন্দ্রনাথ’। কলকাতা: দেবভাষা, ২০১৯।
ইংরেজি
- Dandy: Comic Library No. 1. London: D. C. Thomson& Co., 1983.
- Dandy: Comic Library No. 2. London: D. C. Thomson& Co., 1983
- Dandy: Comic Library No. 3. London: D. C. Thomson& Co., 1983.
- Dandy: Comic Library No. 6. London: D. C. Thomson& Co., 1983
- Dandy: Comic Library No. 8.London: D. C. Thomson& Co., 1983.
- Dandy: Comic Library No. 17. London: D. C. Thomson& Co., 1983.
- Dandy: Comic Library No. 27. London: D. C. Thomson& Co., 1984.
- Dandy: Comic Library No. 39. London: D. C. Thomson& Co., 1984.
- Dandy: Comic Library No. 47. London: D. C. Thomson& Co., 1985.
- Dandy: Comic Library No. 55. London: D. C. Thomson& Co., 1985.
- Dandy: Comic Library Special No. 2.London: D. C. Thomson& Co., 1987.
- Dandy: Comic Library Special No. 84.London: D. C. Thomson & Co., 1987.
- Eisner, Will. Comics and Sequential Art. Tamarac: Poorhouse Press, 1985.
- McCloud, Scott. Understanding Comics: The Invisible Art. New York: Harper Perennial, 1994.