পরিবেশবান্ধব যান ও কলকাতা

শৌর্য বসু

আমাদের সকলের আর এটা জানা বাকি নেই যে পরিবেশ দূষণ এখন একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন যে হারে আমাদের পৃথিবী দূষিত হয়ে চলেছে, সেইরকম চলতে থাকলে আমাদের অবস্থাও ডাইনোসরদের মতো হবে। এবং সেটা হতে খুব বেশি দেরি নেই। আন্তর্জাতিক সমীক্ষা অনুযায়ী পৃথিবীর ৩০টি সবথেকে দূষিত শহরের মধ্যে একুশটি ভারতে অবস্থিত। বড়ো বড়ো বিজ্ঞানীদের মত অনুযায়ী যদি এখনকার হারে পরিবেশ দূষণ ও বিশ্ব উষ্ণায়ন চলতে থাকে, তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং ১০০ বছরের মধ্যে এই সংখ্যাটা ৭০% গিয়ে দাঁড়াবে। পৃথিবীতে ২৭% পরিবেশ দূষণ যানবাহন থেকে হয়। শহরের মধ্যে আমরা প্রায়ই দেখে থাকি যে, কোনো বাস গাড়ি কিংবা ট্রাক গলগল করে কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে নিজের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলেছে। কলকাতা বা ভারতের অন্যান্য শহর এর ব্যতিক্রম নয়।

তবে সেটা হলে কি আমরা যাতায়াত বন্ধ করে দেব? যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়াটা তো কোনো সমাধান হতে পারে না। এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পরিবেশবান্ধব যান। কিন্তু কোন কোন যানকে আমরা পরিবেশবান্ধব যান হিসেবে গণনা করতে পারি? আপনার গ্যারেজে থাকা মারুতি সুজুকি কিংবা টাটার গাড়িটা নিশ্চয়ই নয়!

আমরা যদি বিদেশের দিকে তাকাই বিশেষ করে ইউরোপের দিকে, তাহলে দেখতে পাব ওখানকার সবার কাছেই প্রায় নিজের গাড়ি আছে। কিন্তু ওদের রাস্তা অনেক ফাঁকা। কারণ ওখানকার মানুষ নিয়মিত অফিস কাছারি যাওয়ার জন্য কখনোই গাড়ির ব্যবহার করেন না। বেশিরভাগ ইউরোপিয়ান শহরের ভেতরে গণপরিবহণ ছাড়া অন্য কোনও যান ঢুকতেই দেওয়া হয় না। শহরের ভেতরে চলাফেরা করার জন্য লোকেরা ট্রাম, বাস, মেট্রো, সাইকেল এবং নিজের পায়ের ব্যবহার করেন।

কিন্তু কয়েক দশক আগেও এই ইউরোপের শহরগুলো আমাদের শহর কলকাতার মতোই ছিল। চারিদিকে শুধু গাড়ি আর গাড়ি। ধোঁয়াটে পরিবেশ। মাত্রাছাড়া দূষণ। প্রচণ্ড ট্র্যাফিক জ্যাম। তবে এই আমূল পরিবর্তনের পেছনে কী কারণ? এক কথায়, ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান। আজকে ওদের শহরের রাস্তায় মাত্রাছাড়া দূষণ নেই, ট্রাফিক জ্যাম নেই। কারণ তারা অধিক অর্থ গণপরিবহণে ঢেলেছেন। একটা শহরকে পরিবেশবান্ধব করে তোলার সব থেকে ভালো উপায় হচ্ছে ঢালাও গণপরিবহণ। এবং সব থেকে পরিবেশবান্ধব গণপরিবহণ হচ্ছে লাইট রেল, অথবা যেটাকে আমরা কলকাতায় ট্রাম বলে থাকি। যাত্রী সংখ্যা অধিক হলে সব থেকে ভালো মাধ্যম হচ্ছে মেট্রো রেল। ইলেকট্রিক বাস এইসবের পরে আসে, কারণ ইলেকট্রিক বাস বিদ্যুতে চললেও এতে একটি লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি থাকে। একটা সময় অন্তর অন্তর এই ব্যাটারি বদলে ফেলতে হয়, আর পুরানো ব্যাটারি ফেলে দেওয়া হয়। এই ব্যাটারি ঠিক করে না ফেললে এর থেকে নির্গত কেমিকাল মাটিকে দূষিত করে তুলতে পারে। বলাই বাহুল্য এই একই সমস্যা ইলেকট্রিক গাড়ির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেহেতু ট্রাম আর মেট্রো ওভারহেড তার থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ নেয়, সেক্ষেত্রে এখানে কোনও ব্যাটারির প্রয়োজন হয় না। আরও একটি পরিবেশ বান্ধব গণপরিবহণ মাধ্যম হচ্ছে ট্রলিবাস। এই বাস সাধারণ বাসের মতো রাস্তাতেই চলে কিন্তু ট্রাম এর মতো এর উপরে ওভারহেড সিস্টেম থাকে। যার কারণে এতেও ব্যাটারি থাকে না। কম দূরত্বের যাত্রার জন্য পায়ে হাঁটা কিংবা সাইকেলে করে যাওয়ার থেকে কোনো ভালো উপায় নেই।

এইবার আসি কলকাতার বিষয়ে। কলকাতায় পরিবেশবান্ধব গণপরিবহণ বলতে আমাদের মাথায় আসে ইলেকট্রিক বাস। কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে কলকাতায় এর অনেক অনেক অনেক আগে থেকেই ট্রাম আছে। দিল্লি বোম্বে মাদ্রাস এর মতো অন্য শহরগুলো যখন নিজেদের ট্রাম বন্ধ করে দিয়েছিল তখনও কলকাতায় অবিরাম ট্রাম চলত এবং যাত্রীদের বাড়ি থেকে অফিস এবং অফিস থেকে বাড়ি পৌঁছে দিত। কলকাতায় প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলেছিল ১৮৭৩ সালে। পথ ছিল শিয়ালদা স্টেশন থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট। পথিমধ্যে লালবাজার এবং ডালহৌসি স্কোয়ারের অফিস পাড়া পড়ত। ১৯০২ সালে কলকাতার প্রথম বিদ্যুৎ-চালিত ট্রাম ধর্মতলা থেকে খিদিরপুরের মধ্যে চলেছিল। ১৯০৫ সালে কলকাতা ট্রামওয়েজ-এর হাওড়া সেকশন চালু হয়েছিল। হাওড়া সেকশনের তিনটে রুট ছিল। হাওড়া স্টেশন থেকে শিবপুর, হাওড়া স্টেশন থেকে বাধাঘাট ভায়া জি টি রোড, আর হাওড়া থেকে বাধাঘাট ভায়া ডবসন রোড। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে ১৯৭০-এর দশকে এই তিনটি রুট বন্ধ হয়ে যায়।

১৯৩০ সালের মধ্যে কলকাতায় মাকড়সার জালের মতো ট্রামলাইন ছড়িয়ে পড়ে। ট্রাম হয়ে ওঠে কলকাতার মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। অনেক জায়গায় ট্রামের জন্য ডেডিকেটেড করিডোর বানানো হয়, যার অর্থ হচ্ছে রাস্তার ওই অংশে ট্রাম ছাড়া আর কোনো গাড়ি-ঘোড়া চলাচল করতে পারবে না, একদম ময়দানের ট্রাম লাইন এর মতো। সেই কারণেই কলকাতার ট্রাম যথেষ্ট গতিশীল যান ছিল, কারণ রাস্তার অন্য গাড়ি তার চলাচলে ব্যাঘাত ঘটাত না।

কলকাতার জন্য আর-একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হচ্ছে মেট্রো। কলকাতার মতো জনবহুল শহরে মেট্রো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মেট্রো আসার পর আমাদের রাস্তা অনেক ফাঁকা হয়েছে। বাস ট্রাম এখন আর বাদুড়ঝোলা অবস্থায় দেখা যায় না খুব একটা। এখন আরও অনেক জায়গায় মেট্রো বানানো হচ্ছে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো কিছুটা খুলেও গেছে যাত্রী সাধারণের জন্য। বর্তমানে এটি সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদা স্টেশন পর্যন্ত যাতায়াত করছে। আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যেই এটি সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত যাতায়াত করবে। জোকা ধর্মতলা এবং কবি সুভাষ বিমানবন্দর মেট্রোর কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আশা করা যাচ্ছে এই পথগুলি চালু হয়ে যাবে। তবে মেট্রো চালু হলেই যে কলকাতার ট্রাম গুরুত্বহীন হয়ে যাবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা মেট্রো চললেও ওই রুটের ট্রামে কখনোই যাত্রীর অভাব হয় না। কারণ ট্রাম হচ্ছে মূলত তাদের জন্য যারা কম কম দূরত্বে যাতায়াত করবেন কিংবা ট্রাম থেকে নেমে অন্য যানবাহন ধরবেন। বলাই বাহুল্য মালপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য মেট্রো থেকে ট্রামকেই লোকে বেশি পছন্দ করেন। ভাড়াও অনেক কম লাগে। বর্তমানে কলকাতায় বাসে উঠলেই দশ টাকা ভাড়া দিতে হয়। সেইখানে ট্রামের সর্বোচ্চ ভাড়া হচ্ছে সাত টাকা। ট্রামের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে মেট্রোর ফিডার হিসেবে কাজ করা। অর্থাৎ ট্রাম থেকে নেমে লোকে মেট্রোতে উঠবে কিংবা মেট্রো থেকে নেমে লোকে ট্রামে উঠবে । যেমন টালিগঞ্জ থেকে বালিগঞ্জ ট্রাম রুট টালিগঞ্জ, রবীন্দ্র সরোবর এবং কালীঘাট মেট্রো স্টেশন এর সঙ্গে বালিগঞ্জ রেল স্টেশনকে জুড়ে দেয়। ইউরোপের প্রধান শহরগুলিতে এরকম ভাবেই মেট্রো আর ট্রাম দিয়ে গণপরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। কলকাতার যেখানে ট্রাম চলার ব্যবস্থা নেই, সেইখানে ডিজেল বাসের বদলে ইলেকট্রিক বাস চালাতে হবে। কলকাতায় যে গাদাগাদা ডিজেলের বাস চলে, সেইগুলি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইলেকট্রিক বাসে পরিণত করতে হবে। দরকার হলে প্রাইভেট বাস মালিকদের অনুদান বা লোন দেওয়া যেতে পারে ইলেকট্রিক বাস কেনার জন্য, কারণ ইলেকট্রিক বাসের দাম ডিজেল বাসের থেকে অনেকটাই বেশি, এবং এর রক্ষণাবেক্ষণও বেশ খরচসাপেক্ষ। এই ক্ষেত্রে সরকার বাস মালিকদের ভর্তুকি দিলে ভালো হয়। এখন যত ইলেকট্রিক বাস কলকাতার রাস্তায় চলে সবকটি হচ্ছে সরকারি। কলকাতার রাস্তায় যে বাতানুকূল ট্রাম চলাচল করে সেগুলোর বাতানুকূল যন্ত্র ডিজেল জেনারেটর দিয়ে চলে। তার কারণ হচ্ছে ওভারহেড সিস্টেমের কারেন্টে বাতানুকূল যন্ত্র চালালে সেটি শর্ট হয়ে যাচ্ছে, ভোল্টেজ ওঠা নামার জন্য। এ ক্ষেত্রে দেখতে হবে যাতে বাতানুকূল যন্ত্র ওভারহেড সিস্টেমে চালানো যায়। অথবা বিকল্প হিসেবে ইলেকট্রিক বাসের মতো ব্যাটারি দিয়ে চালানো যেতে পারে।

কলকাতার রাস্তাগুলো ছোটো এবং ঘিঞ্জি হওয়ায় সাইকেল লেন গড়ে তোলা এখানে সম্ভব নয়। কিন্তু নিউটাউনের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব। কারণ নিউটাউনের রাস্তা যথেষ্ট চওড়া এবং সার্ভিস লেন যুক্ত। নিউটাউনের কিছু কিছু রাস্তায় সাইকেল লেন থাকলেও সেটি ঠিক করে ব্যবহার হয় না। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় সাইকেল লেন এর উপর কেউ গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখেছে, কিংবা কোনও ছোটো রোলের দোকান খুলে গেছে। এইগুলি ঠিক করতে হবে। নিউটাউনে রাস্তা চওড়া হলেও মূল রাস্তা ছাড়া ভেতরে গণপরিবহণ খুব একটা দেখা যায় না। সেক্ষেত্রে লাইট রেল কিংবা আধুনিক ট্রাম গড়ে তোলার জন্য এটা আদর্শ জায়গা। তাতে লোকের যাতায়াতেও সুবিধা হবে এবং পরিবেশ রক্ষা পাবে।

বর্তমানে, কলকাতায় ট্রামের অবস্থা খুবই অসহায়। ২০১৬ সালে যেখানে ২৫টি রুট চালু ছিল সেইখানে এখন ২০২২-এ শুধু দুটো রুট চালু আছে। সালের শুরুতে ৩টি রুট চালু থাকলেও, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গের শাফট-এর কাজের জন্য শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা রুট বন্ধ করা হয়। তবে কাজ শেষ হয়ে গেলে রুটটি পুনরায় চালু করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। খিদিরপুর থেকে ধর্মতলা রুট চালু করার জন্য এখন কাজ চলছে, এমন আশা করা যাচ্ছে যে এই রুট চালু হয়ে যাবে। এইগুলো বাদ দিলেও, নানান সময় নানান অজুহাতে নানা রুট বন্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে, ব্রিজের দুর্বল হওয়ার পেছনে ট্রামকে দায়ী করা। ট্রাম চললে ব্রিজ ভেঙে পড়ে যাবে, এই অজুহাতে প্রত্যেকটা ব্রিজ দিয়ে ট্রাম চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে কলকাতার বেশিরভাগ ট্রাম রুট-ই অচল হয়ে পড়েছে। কিন্ত দীর্ঘদিন ধরে ওই সব ব্রিজের উপর দিয়ে ট্রাম চলেছে। ট্রাম রুটের কথা মাথায় রেখে ওই ব্রিজগুলোর নকশা তৈরি করা হয়েছিল। তাহলে এতদিন পরে এখন হঠাৎ কী সমস্যা তৈরি হল? এই ব্রিজের যুক্তিটা খবরের কাগজে প্রকাশ্যে আসে ২০১৮ সালে মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর। কিন্তু মাঝেরহাট ব্রিজ দিয়ে ২০০৪ সালের পর থেকে কোনও ট্রাম চলাচল করেনি। ফলে এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। ট্রাম বন্ধ করার পেছনে আর-একটি কারণ হচ্ছে উড়ালপুলের নির্মাণ। যদিও উড়ালপুলের নির্মাণের পর ট্রাম পুনরায় চালুর আশ্বাস প্রত্যেকবার দেওয়া হয়, কিন্তু কোনও কারণবশত সেটি কোনও বারেই হয় না। কিছু কিছু জায়গায় ট্রাম লাইন সংস্কার করার জন্য ট্রাম বন্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু মাঝপথে সেই সংস্কারও বন্ধ করে দেওয়া হল। যেমন, শ্যামবাজার থেকে বেলগাছিয়া এবং শিয়ালদা থেকে মানিকতলা। কিছু কিছু জায়গায় মেট্রোর কাজের জন্য ট্রাম বন্ধ করা হয়েছে। সেই কাজ এখনও অগ্রগতির পথে। তবে আশা করা যেতে পারে যে, মেট্রোর কাজ হয়ে গেলে সেই ট্রাম আবার পুনরায় চালু করা হবে। যেহেতু কলকাতার অনেক জায়গাতেই ট্রামের পরিকাঠামো মজুত আছে তাই জন্য আমাদের পরিবেশবান্ধব যান হিসেবে ট্রামকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত। কারণ এটি অল্প খরচের বিনিময়ে একটি বিশ্বমানের পরিবহণ ব্যবস্থা হওয়ার ক্ষমতা রাখে, যেমনটা ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ায় দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহর এর একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ। ওইখানে ট্রামের আধুনিকীকরণ করে রাস্তায় ট্রামকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তার ফল হাতেনাতে পাওয়া গেছে। এখন মেট্রো এবং ট্রাম মেলবোর্নের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম।

যেখানে ট্রামের পরিকাঠামো নেই, সেইখানে ইলেকট্রিক বাস ছাড়াও আরও কিছু বিকল্পের কথা ভাবা যায়। তার মধ্যে আছে ট্রলিবাস এবং মনোরেল। এক সময় শোনা গিয়েছিল যে, তারাতলা এবং বজবজ এর মধ্যে মনোরেল পরিষেবা চালু হবে। এর ফলে ওই এলাকার হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে। কিন্তু এখন এই প্রকল্পের কোনও খবর নেই। আদৌ হবে কিনা জানা নেই। সত্তরের দশকে বি এইচ ই এল থেকে একটি ট্রলিবাস এনে তারাতলা এবং বেহালার মধ্যে ট্রায়াল করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন ট্রায়ালের পরেই সেই ট্রলিবাস ফেলে রাখা হয় নোনাপুকুর ডিপোতে। পড়ে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়।

বোঝা যাচ্ছে আমাদের কতটা দূরদৃষ্টির অভাব আছে। আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়ার যত শহরে ট্রাম তুলে দেওয়া হয়েছে, প্রায় সবাই ট্রাম তুলে দেওয়াকে ঐতিহাসিক ভুল বলে আখ্যা দিয়েছে। কলকাতা জেনে-বুঝে সেই ঐতিহাসিক ভুল কেন করতে যাচ্ছে? এখন পরিবেশ ও যানবাহনের বিষয়টি অধিক গুরুত্ব এবং দূরদর্শিতার সঙ্গে ভেবে দেখার সময় হয়েছে, যাতে আমরা সবাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে একটি সুন্দর শহর উপহার দিয়ে যেতে পারি।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান