গোপাল চন্দ্র সিনহা
এক
ইতিহাস এখন কেবলমাত্র পাঠ্যবিষয়ক গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আন্তঃশাস্ত্রীয় গবেষণায় অংশগ্রহণ করে অনেকাংশেই নিজেকে সময়োপযোগী করে তুলেছে। এর মধ্যে একটি অন্যতম বিষয় হল প্রকৃতি ও পরিবেশ সংক্রান্ত ইতিহাসচর্চা। বস্তুত, জলবায়ু, পরিবেশ ও আবহাওয়া পরিবর্তনের মত জটিল বিষয়বস্তুগুলি এখন আর কেবল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এক-রৈখিক প্রিজমের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। বরং সমস্যাগুলিকে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে গেলে সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যথা সমাজতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়সমূহের গুরুত্বকেও বুঝতে হবে।[১] এ বিষয়ে সংশয়ের অবকাশ কম যে মানব সভ্যতার বিকাশে আমরা দিন দিন যত বেশি পরিবেশগত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি ততই বাধ্য হচ্ছি ইতিহাসের কাছে হাত পাততে। কৌতূহল জাগছে আজ প্রকৃতি ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্যের যে অভাব ক্রমশ প্রকট রূপ নিচ্ছে তা কি অতীতেও ছিল? থাকলে তার স্বরূপ কীরূপ ছিল? সমাধান কি হয়েছিল? হয়ে থাকলে কীভাবে? নাকি আদৌ কোনও সমাধান হয়নি — তা ক্রমপ্রসারমান হয়ে আজ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
প্রাচীন ভারত (আনুমানিক ৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত)-এ পরিবেশ সমস্যা ছিল নিশ্চিতভাবে এবং তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়ার নীতিও ছিল, যার প্রমাণ মিলবে এই প্রবন্ধের পরবর্তী অংশে আলোচিত সমকালীন প্রধান প্রধান কয়েকটি আকর উপাদানে।[১এ] তবে মনে রাখা দরকার সেই সময় আজকের তুলনায় জনসংখ্যা ছিল অনেক কম। অপরদিকে প্রাকৃতিক সম্পদ ছিল যথেষ্ট বেশি। তবে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতি ও মানুষের ভোগবাদী মানসিকতা বর্তমান দুনিয়ার ন্যায় তখন প্রকৃতির ওপর আগ্রাসী আধিপত্য বিস্তার করেনি। স্বাভাবিকভাবেই পরিবেশগত সমস্যা তখন এখনকার মতো প্রকটরূপ ধারণ করেনি। অর্থাৎ প্রাচীন ভারতে যা ছিল পরিবেশ সমস্যা এখন তা পরিবেশ সংকটের রূপ ধারণ করেছে। বর্তমান কালে পরিবেশ সবচেয়ে বড়ো বাণিজ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশের ওপর সার্বিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য শুরু হয়েছে রেষারেষি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃতি।
পরিবেশ বলতে বোঝায় সমগ্র জীবজগৎ (মানুষকে বাদ দিয়ে) এবং প্রাকৃতিক পরিমণ্ডল, যাকে আমরা বলি nature (প্রকৃতি)।[২] উল্লেখ্য, বহু যুগ আগে প্রায় কুড়ি লক্ষ বছর ধরে যখন প্রাচীন মানবজাতির অন্তর্গত আমাদের পূর্বপুরুষেরা আফ্রিকার কেনিয়া (ওল্ডভাই গর্জ)-য় উদ্ভূত হয়ে ক্রমশ ইউরেশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সেই সময় কুমারী প্রকৃতি (Virgin nature) অর্থাৎ যে প্রকৃতি মানুষের কার্যকলাপের দ্বারা প্রভাবিত নয় তা ছিল সর্বোচ্চ। এরপর আমাদের নিজস্ব প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্স অর্থাৎ দৈহিক গঠন অনুযায়ী আধুনিক মানুষ আফ্রিকায় আবির্ভূত হয়ে বিগত প্রায় ১,৫০,০০০ বছরের মধ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পরেও ওই অবস্থাই চলতে থাকে। কিন্তু আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ অব্দ নাগাদ মানুষ যখন কৃষিকাজ ও পশুপালন শুরু করে (প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ গর্ডন চাইল্ডের তত্ত্ব অনুযায়ী নিওলিথিক বিপ্লব), তখন থেকেই নিজেদের অজান্তে তারা প্রাকৃতিক পরিবেশের নানা অংশের পরিবর্তন ঘটাতে শুরু করে।[৩] তারপর শিল্প বিপ্লবের সময় থেকে প্রাকৃতিক পরিবেশ দ্রুত বদলে যেতে থাকে, যার ধারা আজ আরও দ্রুতগতিতে বহমান।
দুই
এখন কয়েকটি আকর উপাদানের আলোকে প্রাচীন ভারতের প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর আলোকপাত করা যাক। প্রসঙ্গত বলা যায় বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য এবং বিদেশি পর্যটকদের বিবরণে প্রাচীন ভারতের প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। প্রসঙ্গত বলা যায় ‘ইকোলজি’-র গুরুত্ব আজ সর্বজনস্বীকৃত। এই ইকোলজি হল পরিবেশের সব উপাদানের পারস্পরিক সম্পর্কের বিদ্যা। কিন্তু মনে রাখা দরকার পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে ইকোলজির ধারণা তুলনামূলকভাবে নবীন।উল্লেখ্য, ঊনবিংশ শতকের শেষ ভাগে আর্নেস্ট হেকেল গ্রিক শব্দ ‘ওইকস’ (oikas) থেকে এটি গ্রহণ করেন। ‘ওইকস’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল আবাস। পাশ্চাত্য ভাবনায় নতুন হলেও সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতাবোধ ও দায়বদ্ধতার বেশ কিছু উল্লেখ আমরা পেয়ে থাকি।
প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে মৈত্রীপূর্ণ সহাবস্থানের প্রয়োজনীয়তার কথা বৈদিক সাহিত্যে উজ্জ্বল। এই প্রসঙ্গে অথর্ববেদের দ্বাদশকাণ্ডের প্রথম পরিচ্ছেদের অন্তর্ভুক্ত ‘পৃথিবীসূক্ত’-য় উল্লিখিত মন্ত্রগুলির অনুবাদ সম্পর্কে আলোকপাত করা যেতে পারে। এখানে বৈদিক ঋষিদের কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হয়েছে — ‘মাতা ভূমিপুত্রম্ পৃথিব্যাঃ’, অর্থাৎ মাতা ধরিত্রী (পৃথিবী)-র সঙ্গে মানুষের নাড়ির বন্ধনের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া মাতা ধরিত্রী পূজিতা হয়েছে তার প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের অজস্রতায়, লতা-গুল্ম-বৃক্ষরাজি, রৌদ্র, আকাশ, মেঘ, বৃষ্টি, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী ও মহাসাগরের সুন্দর মহিমা ও তার অকৃপণ স্নেহের দানের জন্য। শুধু তাই নয়, অথর্ববেদের ‘পৃথিবীসূক্তে’ আর্য ঋষিরা ধরিত্রীকে অমলিন ও অক্ষত রাখার সংকল্প, পরিবেশ ও প্রকৃতির সংরক্ষণ এবং মানুষের হিংসা, লোভ ও স্বার্থসিদ্ধি থেকে রক্ষা করার অঙ্গীকার করেছেন। এমনও সংকল্প করা হয়েছে :
“যৎ তে ভূমে বিখনামি ক্ষিত্রং তদপি রোহতু।
মা তে মর্ম বিমৃগ্ধরি মা তে হৃদয়মর্পিপম”।।[৪]
এর অর্থ হল — হে ভুমি, আমি যখনই তোমায় খনন করে কিছু নিষ্কাশন করি, আমার কর্তব্য হল আবার তা পূরণ করে পূর্বের অবস্থায় যতদূর সম্ভব ফিরিয়ে আনা।[৫] সুতরাং দেখা যাচ্ছে অথর্ববেদের যুগে (আনুমানিক ১০০০-৬০০ খ্রিস্টাব্দপূর্বে রচিত) প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং তার সুরক্ষা সম্পর্কে সমকালীন ঋষি ও গুণীজনদের সম্যক ধারণা ছিল।
প্রাচীনকালে ঋষিরা জলের বিশুদ্ধতা অব্যাহত রাখা, জল দূষণ প্রতিরোধ, জলাভূমি সংরক্ষণ এবং বাস্তুতন্ত্রের স্থিতি বজায় রাখতে যথেষ্ট যত্নবান ছিলেন। এর প্রমাণ মেলে বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থে। এ প্রসঙ্গে যজুর্বেদে উল্লিখিত একটি শ্লোকে বলা হয়েছে :
“পয় পৃথিব্যাং পয় ওষধীষু পয়ো দিব্যন্তরীক্ষে পয়ো ধাঃ।
পয়স্বতী: প্রদিশ সন্তু মহ্যম”।।[৬]
বস্তুত, ভূ-ভাগ বা বাতাস যেখানেই হোক না কেন, উপস্থিত জল সম্পর্কে বৈদিক ঋষিরা শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রমের একটি ভাব পোষণ করতেন। এছাড়া, উক্ত বৈদিক মন্ত্র থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, জলসম্পদের উপযুক্ত সংরক্ষণের জন্য পরিবেশের প্রত্যেক অংশের তরল, বাষ্পীয় বা কঠিন (বরফ) অবস্থায় জলের আবর্তন চক্রকে অব্যাহত রাখা সুনিশ্চিত করতে হবে।
জলের সংরক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে জল যাতে দূষণমুক্ত হয় সে ব্যাপারেও প্রাচীন ভারতের সামাজিক আইন প্রণেতারা সচেতন ছিলেন। এ ব্যাপারে আপাতত দুটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ‘তৈওরীয় আরণ্যক’ (৬/১/৪১)-এ বলা হয়েছে যা জলকে কলুষিত করবে, দূষিত করবে এবং যা জলের গুণমানের ক্ষতি করবে, যে কোনো প্রকারে সেগুলি অপসারিত করতে হবে। ‘মনুস্মৃতি’তে বিশুদ্ধ ও পানীয় জলের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ আছে :
“আপঃশুদ্ধা ভূমিগতা বৈতৃষ্ণণ্যম যাসু গর্ভেৎ।
অব্যয়াপ্তাশ চেদ অমেধ্যয়েন গন্ধবর্ণরসানভিতঃ”।।[৭]
এর অর্থ হল যে — জলের বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ গ্রহণযোগ্য, যাতে কোনও দূষিত পদার্থ মিশ্রিত নেই এবং যে-জল পান করলে পশুদের কোনও ক্ষতি হবে না সেই জলই শুদ্ধ বলে বিবেচিত হবে।
তিন
প্রাচীন ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য আকরগ্রন্থ হল কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’। অর্থশাস্ত্রে সম্পদ বলতে বোঝানো হয়েছে সমস্ত অজৈব ও জৈব বস্তু-কে। অর্থাৎ ভূমি, জলরাশি, অরণ্য, খনিজ ধাতু, পশু, জনসম্পদ প্রভৃতি এই পর্যায়ে পড়ে। এক কথায় বর্তমান কালে ইকোলজি বর্ণিত সম্পদের সঙ্গে অর্থশাস্ত্রে উল্লিখিত সম্পদের অভিন্নতা লক্ষ করা যায়। কৃষির ওপর নির্ভরশীল ভারতবর্ষে কৃষিকাজে জল ও জলসেচের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে ‘অর্থশাস্ত্রে’র ২/২৪/৪১-নং শ্লোকে। এখানে বলা হয়েছে যে জলসেচ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে রাজাকে উদ্যোগী হতে হবে। তিনি জলের জন্য নদী বা ঝরনার মত কোনও অনিঃশেষ উৎস থেকে জল সংগ্রহ ও জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। এ ব্যাপারে তাঁকে জলাধার বা সেতু নির্মাণ করতে হবে। আরও বলা হয়েছে যে নদীর পরিবাহ-ক্ষেত্র (catchment area) খনন করে তাকে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যা পরে প্রয়োজনে সেচের কাজে ব্যবহার করা হবে। বলাবাহুল্য, সময়কালের দিক থেকে প্রাচীন হলেও এই ব্যবস্থার মধ্যে আধুনিকতার ছাপ রয়েছে। অর্থশাস্ত্রে বারবার সেচের গুরুত্বের কথাই বলা হয়নি, সেচপ্রকল্প বা সেতুর ক্ষতিসাধন করলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চরম শাস্তি, এমনকি মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশও করেছেন কৌটিল্য। এইভাবে জলসেচব্যবস্থার ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের যে সুপারিশ করেছেন কৌটিল্য, মৌর্য যুগ (আনুমানিক ৩২৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ-১৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)-এ এদেশে আগত গ্রিকদূত মেগাস্থিনিসের “ইন্ডিকা”-য় তার সমর্থন মেলে। এই গ্রন্থে মেগাস্থিনিস ‘অ্যাগ্রোনময়’ নামে জেলার ভারপ্রাপ্ত এক উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীর উল্লেখ করেছেন, যাদের অন্যতম প্রধান কর্তব্য ছিল সামগ্রিক কৃষি ব্যবস্থার তত্ত্বাবধান, বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে সেচের জন্য প্রয়োজনীয় জল নিয়মিতভাবে সরবরাহ করা।
অরণ্যসম্পদ সর্বোতভাবে রক্ষা করার ওপরেও জোর দেওয়া হয়েছে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে। উল্লেখ্য, এই গ্রন্থটির অধ্যক্ষপ্রচার অংশে যে বত্রিশজন অধ্যক্ষের পদের নাম আছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন — কূপাধ্যক্ষ। তাঁর প্রধান কাজ ছিল অরণ্য সম্পদকে সর্বতোভাবে রক্ষা করা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে অরণ্য সম্পদের রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া। সবচেয়ে বড়ো কথা হল রোগগ্রস্ত গাছের উচ্ছেদ এবং নতুন গাছ লাগানো তাঁর অন্যতম কর্তব্য ছিল, যা তিনি সম্পাদন করতেন তাঁর অধস্তন অরণ্যরক্ষীদের মাধ্যমে। এইগুলি ছাড়াও ওনার দায়িত্বের এক্তিয়ারে ছিল অরণ্য সম্পদের ক্ষতিসাধনকারী ব্যক্তিদের শাস্তিবিধান ও জরিমানার হার স্থির করা।
মৌর্য সম্রাট অশোকের কয়েকটি শিলালেখ ও স্তম্ভলেখয় উদ্ধৃত কিছু তথ্যের মধ্যে প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতার বিষয়টি খুব স্পষ্ট। এই কথা সর্বজনবিদিত যে আনুমানিক ২৬১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সংঘটিত কলিঙ্গ (উড়িষ্যা) যুদ্ধে জয়লাভের পর অশোকের মনে পরিবর্তন আসে এবং কারণ যাই হোক না কেন, এরপর তিনি যুদ্ধনীতি ছেড়ে ‘ধম্ম’ নীতি গ্রহণ করেন এবং প্রজাকল্যাণমূলক ও জনহিতকর কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। এই ঘটনার প্রায় কুড়ি বছর পর আনুমানিক ২৪২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে উৎকীর্ণ সপ্তম স্তম্ভলেখতে অশোক ঘোষণা করেন :
“আমি পথের দুপাশে বটবৃক্ষ রোপণ করেছি, যা মানুষ ও পশুদের ছায়া বিতরণ করবে। আমি আম্রকুঞ্জ ও উদ্যান স্থাপন করেছি এবং প্রতি অর্ধ ক্রোশ অন্তর পান্থশালা নির্মাণ, বিশ্রামাগার স্থাপন ও জলপানের জন্য কূপ খনন করেছি।…….. সর্বত্র মানুষ ও পশুর জন্য জলাশয় স্থাপন করেছি।…. আমি এইসব জনহিতকর কাজগুলি করেছি এই ভেবে যে এগুলি দেখে আমার প্রজারা ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হবে…..।”[৮]
বলা বাহুল্য, অশোক কর্তৃক অনুসৃত ঐ সমস্ত কাজগুলি নিশ্চিতভাবে শুভ উদ্যোগ। বিশেষ করে ছায়াতরু হিসাবে বটবৃক্ষকে বেছে নেওয়ার একটি বাস্তুতান্ত্রিক গুরুত্ব আছে পরোক্ষভাবে। প্রসঙ্গত বলা যায় বটবৃক্ষ একটি প্রতিষ্ঠিত বনস্পতি। এর বিনাশ সহজে হয় না। এর বহু বিস্তৃত শাখা-প্রশাখা যেমন শীতল ছায়া দেয়, তেমনি সালোকসংশ্লেষের ফলে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন নির্মুক্ত করে পরিবেশকে স্বাভাবিক ও সমৃদ্ধ করে।[৯] বলা বাহুল্য, এর স্তম্ভমূলগুলি ও বহু বিস্তৃত শিকড়াদি ভূমি ও ভূমিতে জল সংরক্ষণের পক্ষে বিশেষ প্রয়োজনীয়। বস্তুত, বটবৃক্ষের মতো মহিরুহ রোপণের সঙ্গে বাস্তুতন্ত্রের সাম্য বজায় রাখার বিষয়টি সামঞ্জস্যপূর্ণ।
মৌর্য সম্রাট অশোক যে একজন পরিবেশ সচেতন শাসক ছিলেন তার সুস্পষ্ট প্রমাণ মেলে তাঁর পঞ্চম মুখ্য স্তম্ভলেখয় (২৪৩ খ্রিস্টপূর্ব)।[১০] সেখানে তিনি বলেছেন :
“আমি নিম্নলিখিত প্রজাতির প্রাণীহত্যা নিষিদ্ধ করলাম। এগুলি হল— টিয়া, ময়না, লালমাথা হাঁস, রাজ হাঁস, বুনো হাঁস, নান্দীমুখ, পায়রা, বাদুর, আম্র বৃক্ষবাসী পিঁপড়ে, ক্ষুদ্র কচ্ছপ, অস্থিহীন মৎস্য, সজারু, দ্বাদশ শৃঙ্গ বিশিষ্ট হরিণ, কাঠবেড়ালি, টিকটিকি, গৃহপালিত পশু, গন্ডার এবং সমস্ত রকমের চতুষ্পদ যা লোকের কোনও কাজে আসে না ও লোকে যা খায় না।”
এছাড়া জীব হত্যার উদ্দেশ্যে অথবা অন্য কোনও কারণে অরণ্য অগ্নিদগ্ধ না-করা এবং বৃক্ষচ্ছেদন না করার ওপর তিনি বিশেষ জোর দিয়েছিলেন। বলা বাহুল্য, এগুলিকে কেবল অশোকের ধর্মীয় উপদেশ বলে মনে করলে ভুল হবে। আসলে পশুপাখি, গাছপালা, অরণ্য তথা সামগ্রিকভাবে পরিবেশ রক্ষা ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য একদিকে তার উদ্যোগ এবং পাশাপাশি তার মহানুভবতা প্রকাশ পেয়েছে। সবচেয়ে বড়ো কথা হল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের এটি একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
চার
প্রাচীন ভারতের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আকরগ্রন্থ হল ‘মনুস্মৃতি’। যার রচয়িতা ঋষি মনু স্বয়ং।[১১] এটি মৌর্য-পরবর্তী যুগ অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক ও তার পরবর্তীকালের রচনা বলে মনে করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক রীতিনীতি, বিবাহ ব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয় এই স্মৃতি গ্রন্থটিতে প্রাধান্য পেলেও প্রকৃতি ও পরিবেশ সংক্রান্ত বহু প্রয়োজনীয় তথ্য এতে উপস্থিত, যেগুলি নীচে আলোচনা করা হল।
বৃক্ষ ধ্বংস করা অথবা তার কোনোরকম ক্ষতি সাধন করলে তার ফল কি মারাত্মক হতে পারে সে বিষয়ে মনুস্মৃতিতে বেশ কিছু স্পষ্ট নির্দেশ ঘোষিত হয়েছে। বলা হয়েছে :
“ফলদানম্ তু বৃক্ষানাম ছেদনে যাপ্যম ঋক শতম্।
গুল্প-বল্লী-লতানাম্ ভ পুষ্পিতানায় চ বীরধাম্”।।[১২]
এর অর্থ হল ফলবতী বৃক্ষ, গুল্ম, লতা অথবা পুষ্পিত তরু ছেদন করলে অপরাধী ব্যক্তিকে শতবার একটি বৈদিক মন্ত্র আবৃত্তি করতে হবে। এছাড়া কোনও ব্যক্তি যদি কোনও বন্য অথবা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা অথবা আবাদিত কোনও উদ্ভিদের কোনোরকম ক্ষতি সাধন করে তাহলে তার শাস্তির কথা বলা হয়েছে মনু স্মৃতির একটি শ্লোকে :
“কৃষ্টজানম ওষধিনাম জটানামৃচ স্বয়ং বনে।
বৃথালম্ভে’নুগচ্ছেদ গাম দিনম্ একম্ পয়োব্রতঃ”।।
এই শ্লোকটির মাধ্যমে বলা হয়েছে যে — ‘বৃথালম্ভ’ অর্থাৎ কেউ যদি বিনা কারণে কোনও ফসলের ক্ষতি করে অথবা বনের স্বাভাবিকভাবে গজিয়ে ওঠা কোনও চারা গাছের ক্ষতি সাধন করে তাহলে তাকে উপবাস থেকে কিংবা কেবল দুগ্ধ পান করে পূর্ণ একটি দিন গোসেবা করতে হবে। মনুকে অনুসরণ করে পরবর্তীকালে যাজ্ঞবল্ক্য তাঁর স্মৃতিগ্রন্থে আর একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, যে-কোনো বৃক্ষের বিশেষ করে যে সকল বৃক্ষ প্রয়োজনীয় ও উপকারী তার শাখা, কাণ্ড বা মূল যদি কেউ ছেদন করে তাহলে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী তার যথাক্রমে ২০ বা ৪০ মুদ্রা জরিমানা হবে :
“প্ররোহী শাখিনাম শাখা-সকাণ্ড-সর্ব বিদারণে।
উপজীব্য-দ্রুমানাং চ বিংশতির দ্বিগুণ দামেঃ”।।[১৩]
সামগ্রিকভাবে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতেও মনু ছিলেন সজাগ। এ ব্যাপারে স্থানীয় অধিবাসী তথা প্রজা সাধারণকে সতর্ক ও যত্নবান হবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে মনুস্মৃতিতে।[১৪] বলা হয়েছে যে চরম আপৎকালীন অবস্থা ছাড়া রাজমার্গে আবর্জনা নিক্ষেপ করলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সেগুলি অপসারণের মাধ্যমে পথ পরিষ্কার করে দিতে হবে। শুধু তাই নয়, এই অপরাধের কারণে তাকে দুই মুদ্রা জরিমানা স্বরূপ দিতে হবে। বর্জ্য পদার্থ অপসারণের ক্ষেত্রেও মনুস্মৃতিতে সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে :
“দূরাৎ অবস্থান মূত্রম দূরাৎ পাদাবসেচনম্।
উচ্চৈস্থান্ন নিষেকম চ দূরাদ্ এব সমাচরেৎ”।।[১৫]
এর অর্থ হল — নগর বা গ্রামের বাসস্থান থেকে অনেক দূরে মলমূত্রাদি, দেহ প্রক্ষালনের জল, খাদ্যের অবশিষ্টাংশ, স্নানাগারের বর্জ্য জল অপসারিত করতে হবে।
জলসম্পদের অপচয় ও জল দূষণের সম্পর্কে মনু (খ্রিস্টীয় প্রথম ও দ্বিতীয় শতক) যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। জল সংক্রান্ত ব্যাপারে স্মৃতিকারদের বিধান লঙ্ঘন করলে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মনুস্মৃতিতে। বলা হয়েছে, জল যে অন্যায় ভাবে আত্মসাৎ করে তাকে মূল্যবান সামগ্রী, অপহরণকারী চোরের মতোই গণ্য করা হবে। আরও বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি যদি প্রজা সাধারণের ব্যবহার্য জলাশয়ের জল দূষিত করে অথবা জলাধারের গঠন কাঠামোর কোনও ক্ষতি করে তাহলে তাকে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেওয়া হতে পারে। জল দূষণের প্রতিকার হিসাবে মনুস্মৃতি (৪/৫৬)-তে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে জলরাশিতে কেউ মলমূত্র ত্যাগ করবে না, অশুদ্ধ বস্তু ফেলে জলকে দূষিত করবে না এবং জলে বা জলাশয়ের পাড়ে কেউ শ্লেষ্মা ত্যাগ করবে না (‘ন চাপ্সু শ্লেষ্মা চ সমীপে’)। প্রসঙ্গত বলা যায় সেচ প্রকল্প বা জলসেচ ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন করলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জলে ডুবিয়ে কিংবা শিরচ্ছেদ করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে ‘মনুস্মৃতি’ (৯/২৭৯)-তে।
কয়েকটি পুরাণ ও মনুস্মৃতিতে সবুজায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ‘বরাহপুরাণ’ (১৭২/৩৬)-এ বলা হয়েছে :
“অশ্বত্থমেকং পিচুমর্দমেকং ন্যগ্রোধমেকং দশপুষ্পজাতিম্।
দ্বে দ্বে তথা দাড়িম্বমাতুলিঙ্গে পঞ্চাম্ররোপি নরকম্ ন যাতি”।।
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি একটি অশ্বত্থ, একটি নিম, একটি ন্যগ্রোধ বা বটবৃক্ষ অথবা দশটি পুষ্পবারুৎ, দাড়িম্ব, জোড়া মাতুলিঙ্গ বা লেবু জাতীয় কোনও গাছ লাগায় অথবা পাঁচটি আমগাছ রোপণ করে ও তাদের বৃদ্ধি ঘটাতে যত্ন নেয় তাহলে তাকে কখনোই নরকে যেতে হবে না। বৃক্ষরোপণের নিদান দেওয়া হয়েছে ‘ব্রহ্মনারদীয় পুরাণে’র একটি শ্লোকে :
“স্থাপয়েদ বৃক্ষমেকং বা দরিদ্রোলোক সাধকম।
স যাতি ব্রহ্মসদনম্ কুলা-তৃতীয়া সংযুক্ত”।।[১৬]
এর অর্থ হল — যদি কোনও দরিদ্র ব্যক্তি কেবল একটি গাছও লাগায় তাহলে সে ব্রহ্মাসদনে যাওয়ার অধিকার অর্জন করবে এবং তার বংশের তৃতীয় পুরুষ পর্যন্ত ওই পুণ্যফলের অংশিদার হবে। বলা বাহুল্য, সকল শ্রেণির মানুষ এমনকি দরিদ্রতম ব্যক্তিকেও বৃক্ষরোপণ তথা সবুজায়নের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হত।
‘মনুস্মৃতি’তে সবুজ সতেজ গাছ ছেদন করার ওপর চরম নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে (১১/৬৪ ও ১১/৬৬)। ঘোষণা করা হয়েছে যে কোনও ব্যক্তি যদি রন্ধনকার্যে ব্যবহৃত জ্বালানির উদ্দেশ্যে সবুজ কাঁচা গাছ ছেদন করে তাহলে তাকে চরম পতিত ব্যক্তি বলে চিহ্নিত করা হবে।
আনুমানিক খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ বরাহমিহির তাঁর ‘বৃহৎসংহিতা’ গ্রন্থে পরিবেশ ও প্রকৃতি সম্পর্কে কিছু মূল্যবান তথ্য লিপিবদ্ধ করে গেছেন। ভূমিপ্রকৃতি ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের উদ্ভিদ প্রকৃতির বিশিষ্ট লক্ষণগুলি থেকে ঊষর বা ঊষরপ্রায় অঞ্চলের ভূগর্ভে সঞ্চিত জলের সন্ধান কীভাবে পাওয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে বৃহৎসংহিতা গ্রন্থের ৫৪তম অধ্যায়ে উদকার্গলস অংশে ১২৫ টি শ্লোকে। এছাড়া আরও একটি বিষয় এখানে উল্লেখের দাবি রাখে যে বরাহমিহির উইঢিবি ও জলের অস্তিত্বের মধ্যে একটি সম্ভাব্য সম্পর্কে সঙ্গত অনুমান করেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, কোনও বৃক্ষের গোড়ায় উইঢিবির অস্তিত্ব অথবা গাছপালার মাঝে মাঝে উইঢিবির সারিবদ্ধ উপস্থিতি ভূ-গর্ভে জলের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়।[১৭] এখানে যেটা সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য বিষয় তা হল, বরাহমিহিরের উক্ত পদ্ধতির অনুসরণ করে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন দুটি গবেষণা প্রকল্পের অনুমোদন দেন এবং ১৯৮০ দশকের শেষ ও ১৯৯০ দশকের দশকের গোড়ায় বরাহমিহিরের অনুমানের যথার্থতা প্রমাণিত হয়।
আসলে মানুষ সংকটকালে শিকড়ের সন্ধান করে। এই প্রবন্ধটি ওই ধরনের একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। দীর্ঘ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রাচীন ভারতীয় বিভিন্ন আকর গ্রন্থাদি ও লেখমালার আলোকে বোঝা সম্ভব হয়েছে, পরিবেশ সমস্যা আধুনিক ভারতবর্ষে নতুন নয়। সুপ্রাচীন কাল থেকেই এই সমস্যা স্বল্প ছিল। বস্তুত পুরাপ্রস্তর যুগে যখন মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখেছিল তখন থেকেই এর সূত্রপাত। এ বিষয়ে কোনও সংশয় নেই যে পরিবেশ সমস্যার সিংহভাগই মনুষ্যকৃত। বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে ওপরে উল্লিখিত সামগ্রিকভাবে পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে স্মৃতিশাস্ত্র রচয়িতাদের সাবধান বাণী, শাস্তি প্রদান, মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ প্রভৃতি থেকে। এ কথা অবশ্য ঠিক যে তখন জনসংখ্যার তুলনায় প্রাকৃতিক সম্পদ ছিল বেশি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক এর বিপরীত। বলা বাহুল্য, ভোগবাদী সমাজে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার অদম্য প্রয়াসের ফলস্বরূপ একসময় যা ছিল পরিবেশ সমস্যা, আজ তা পরিবেশ সংকটে রূপান্তরিত হয়েছে।
টীকা ও তথ্যসূত্র :
১) ইরফান হাবিব, ‘ম্যান এন্ড এনভায়রনমেন্ট : দ্য ইকোলজিক্যাল হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া’ গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ। অনুবাদক পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের পক্ষে জিনিয়া মুখার্জী, প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স, কলকাতা, ২০১৫, পৃষ্ঠা: ১১।
১এ) প্রাগৈতিহাসিক (সে যুগের লিখিত উপাদান পাওয়া যায় না অর্থাৎ প্রস্তর যুগ) ও প্রায় ঐতিহাসিক যুগ(যে যুগে লিখিত উপাদান ছিল, কিন্তু সঠিক পাঠোদ্ধার হয়নি অর্থাৎ সিন্ধু সভ্যতা)-কে এই প্রবন্ধের আলোচনার বাইরে রাখা হয়েছে।
২) প্রকৃতির কাছে আমরা পেয়ে থাকি আমাদের আহার্য বস্তু, জল, বায়ু, মাটি, তাপমাত্রা, উদ্ভিদ জগৎ, আমাদের বস্ত্র ও বাসস্থানের সংস্থান, তুষার আবৃত পর্বতমালা, উত্তাল নীল সমুদ্র, নদী, আকাশ ভরা সূর্য তারা এবং আকাশের নানা প্রাকৃতিক দৃশ্য, যেমন গভীর অরণ্য, নানা ধরনের পশু পাখি, নানা খনিজ পদার্থ প্রভৃতি। উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ হল সামগ্রিকভাবে একটি স্থানের জৈব ও অজৈব উপাদানের সম্মিলিত রূপ। মানুষ ও অন্যান্য জীবিত প্রাণী ও উদ্ভিদের চারিদিকে বিরাজ করে ওই সমস্ত ভৌগোলিক পরিবেশ। বলা বাহুল্য, প্রকৃতির বুকে ক্ষুদ্র বৃহৎ সকল জীবেরই জীবনযাত্রার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। কোনও জীবকে কেন্দ্র করে যে পরিমণ্ডল বিদ্যমান, সেই পরিমণ্ডলে বিভিন্ন অবস্থার সামগ্রিক রূপকে বলে জীবের পরিবেশ। এক কথায় পরিবেশ হল প্রকৃতির একটি উপাংশ মাত্র।
৩) ইরফান হাবিব, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ১৭।
৪) ‘অথর্ববেদ’, ১২/১/৩৫
৫) শুভেন্দু গুপ্ত, ‘প্রাচীন ভারতে পরিবেশ চিন্তা’, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০১২, পৃষ্ঠা: ৮৪ দ্রষ্টব্য।
৬) ‘শুক্ল যজুর্বেদ’, ১৮/৩৩
৭) ‘মনুস্মৃতি’, ৫/১২৮
৮) রোমিলা থাপার, পরিশিষ্ট পঞ্চম, সপ্তম স্তম্ভলেখ, ‘অশোক এ্যন্ড দ্য ডিক্লাইন অফ দ্য মৌর্যস’, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯৭, পৃষ্ঠা: ২৫৬; ইরফান হাবিব ও বিবেকানন্দ ঝা, ‘মৌর্য যুগের ভারতবর্ষ’, ন্যাশনাল বুক এজেন্সি, কলকাতা, ২০০৬, পৃষ্ঠা ১২৩ দ্রষ্টব্য।
৯) শুভেন্দু গুপ্ত, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ১২৯।
১০) রোমিলা থাপার, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ২৬৪; দীনেশচন্দ্র সরকার, ‘অশোকের বাণী’, কলকাতা, ১৯৮১, পৃষ্ঠা: ৮৭ দ্রষ্টব্য।
১১) ‘মনুস্মৃতি’র ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীকালে যাজ্ঞবল্ক্য, নারদ, বৃহস্পতি প্রমুখ এর ব্যাখ্যা ও বিস্তৃতি ঘটান।
১২) ‘মনুস্মৃতি’, ১১/১৪২
১৩) ‘যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি’, ২/২৩০
১৪) ‘মনুস্মৃতি’, ৯/২৮২
১৫) ঐ, ৪/১৫১
১৬) ‘ব্রহ্মনারদীয় পুরাণ’, ১৩/৫২
১৭) শুভেন্দু গুপ্ত, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ১৫০ দ্রষ্টব্য।
গবেষণাধর্মী চমৎকার প্রবন্ধ।
LikeLike