প্রকৃতি-পরিবেশ ও মানবমন : এক অখণ্ড যাত্রা

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

বিশ্বপ্রকৃতির নানা ঘটনা উদ্দীপক হিসেবে অজস্র বার্তা নিয়ে বিরামহীন আছড়ে পড়ছে আমাদের মস্তিষ্কে, আর প্রভাবিত করে চলেছে আমাদের মনকে, তার ভাবনা ও আবেগকে; আমরা তা বুঝতে পারি বা না পারি। দিগন্তবিস্তৃত নীলিমা, সবুজ শ্যামলিমা, অবিরাম নদীর জলের স্রোত আমাদের মনে এক অনির্বচনীয় অনুভূতির জন্ম দেয়। প্রকৃতির এই বিষয়গুলির যে মহৎ বৈশিষ্ট্য তা অনুভূতির পথ ধরে আমাদের মনের ভেতরেও তাদের গড়ে তুলতে থাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে। নীল আকাশ মনকে সংকীর্ণতা থেকে বিস্তৃতি দেয়, উদারতা দেয়, অস্থিরতা থেকে শান্ত করে। নদীর জলের স্রোত আমাদের অবিরাম ক্লান্তিহীন চলার কথা বলে। সুউচ্চ পর্বতের মৌনতা মহিমা স্থিতধী ও ধ্যানস্থ হতে প্রাণিত করে। ছোটবেলায় পড়া কবির লেখা লাইনগুলো কতখানি বিজ্ঞানসম্মত ছিল, তা আজ বুঝতে পারি —

                “আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাইরে                                                                                       
                  কর্মী হবার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাই রে।”

দূরাগত মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি আমাদের স্মৃতিমেদুর করে তোলে। রাতের আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জ আমাদের মহাকালের হাত ধরিয়ে দেয়। আমাদের বসবাসের জায়গাটা এক লহমায় বিপুল বিস্তৃতি পেয়ে যায়। সামান্য কিছু হারানো আমাদের আর আহত করতে পারে না। 

প্রকৃতির এই বিষয়গুলি যে আমাদের প্রভাবিত করে চলেছে তার নির্দিষ্ট বিজ্ঞানটি হল ‘সম্মোহন’। সম্মোহনের মাধ্যমে প্রকৃতি আমাদের মস্তিষ্কের এই ছন্দোময় টিউনিং করে চলে। আর তাই জলের স্রোতের ধারে এসে আমরা মগ্নাবিষ্ট হয়ে পড়ি। লেখালেখি করতে হলে বা পুরোনো স্মৃতি বয়ে আনা কোনও চিঠি পড়তে পড়তে অজান্তে কখন জানলার ধারে চলে আসি। কিন্তু কেন আসি? 

কোনও একটি গভীর উপলব্ধি মনের ভেতর যখন দানা বাঁধতে থাকে, মস্তিষ্কের সেই আনুষঙ্গিক অঞ্চলে উদ্দীপনা (Excitation) ক্রমাগত ঘনীভূত হতে থাকে। বিজ্ঞানী প্যাভলভের সূত্র অনুযায়ী, ঐ উদ্দীপনাকে কেন্দ্র করে সংলগ্ন অঞ্চলে নিস্তেজনা (Inhibition) ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ফলে অন্যান্য চিন্তা-চেতনার অঞ্চলগুলো নিস্তেজনায় ডুবে যাওয়া উদ্দীপনার মগ্নতাকে বিক্ষিপ্ত করতে বা বিরোধিতা করতে পারে না। আমাদের কাছাকাছি দৃষ্টির পরিসরে প্রতিদিনকার বিষয় — দরজা, জানলা, টেবিল, চেয়ারের পুঙ্খানুপুঙ্খ অবয়ব মস্তিষ্কে এত স্পষ্ট প্রতিবিম্ব গড়ে তোলে যে, মস্তিষ্ক বাস্তবের এই কংক্রিট ছবির সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যায, ফলে মন শুধুই বর্তমানের মধ্যে বাধা পড়ে যায়। কল্পনা ও বিমুর্ত (abstract) ভাবনার পথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। আর তাই আমরা বহুদিন পর প্রিয় জনের চিঠি পেয়ে জানলার ধারে চলে যাই, কারণ জানলা দিয়ে চোখে পড়া দূরের অস্পষ্ট দৃশ্যপট মনকে টেনে ধরে রাখে না, বরং এক মৃদু প্রেক্ষাপট হয়ে ওঠে তার উপর দিয়ে আমাদের মনের আবেগ ও স্মৃতিচারণাকে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে। মনকে জাগিয়ে রাখে, কিন্তু অধিকার করে ফেলে না। আমরা তখন অতীতে বিচরণ করতে করতে কালের বুকে অনেকখানি স্পেস পেয়ে যাই। বর্তমানের বিষয় তখন আমাদের একমাত্র সত্য থাকে না, অতীতের মাধুর্যগুলো আবার আমাদের নিজের জিনিস হয়ে ওঠে। তখন খুব সহজেই আমরা হতাশা, নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্ত হয়ে উঠতে পারি।

লোকালয়ের কাছে যেখানে নদী আছে, বিকেল-সন্ধেয় সেই নদীর ধারেই মানুষের আবেগ গুলো জটলা করে, আড্ডা দেয়। নিজেদের সুখ-দুঃখের ভাবনার আদান-প্রদান সব ঐ নদীর পাড়ে। দৈনন্দিন সাংসারিক উপলব্ধিগুলো নদীর খোলা দৃশ্যপটের সঙ্গে মিশে গিয়ে অনন্তের অংশ হয়ে যায়। তখন একজনের দুঃখ অন্যজন উপলব্ধি করতে পারে। নিজেকে একা মনে হয় না। অন্যের দুঃখকে নিজের দুঃখ মনে হয়। সমব্যথী হবার ক্ষমতা বাড়ে। অস্থিরতা, উগ্রতা প্রশমিত হয়ে মন স্থির, শান্ত হয়ে আসে। সেই জন্যই মানুষের কোমল অনুভূতিগুলো — মায়া, মমতা, স্নেহ, সহানুভূতি, মানবিকতা বিকশিত হয়ে ওঠার প্রয়োজনে কাছের বস্তুজগতের ভিড় থেকে মাঝে মাঝে মুক্তি পাওয়া দরকার প্রকৃতির কোলে — খোলা মাঠ, উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ, দিগন্ত রেখার উপস্থিতি, নদীর স্রোত, সমুদ্র, তার মগ্নতার জন্য প্রয়োজনীয় Space। কালহাউনের পরীক্ষায় দেখা গেছে বদ্ধ জায়গায় ল্যাবরেটরির ইঁদুরদের খাবার ও বাসা বাঁধবার জায়গার অভাব না থাকলেও শুধুমাত্র স্পেস এর অপ্রতুলতায় তাদের আচরণে বিশৃঙ্খলা, হিংস্রতা ও আক্রমণের প্রবণতা দেখা গেছে। দ্রুত বেড়ে গেছে মৃত্যুহার। একইভাবে মানুষের মধ্যে স্বাধীনভাবে, পছন্দমতো জীবনযাপনের যথাযথ স্পেস না থাকায় দেখা যাচ্ছে অস্থিরতা, অবসাদ, হিংস্রতা। দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা যাকে আধুনিক সভ্যতা বলি, সেই বস্তুসর্বস্ব নাগরিক জীবনে স্পেস-এর অভাব পূর্ণ হয়ে থাকে স্বাচ্ছন্দ্যের সমাহারে, বস্তুগত সুখভোগ আর বিলাস বৈভবে। তাই আমরা আর মগ্ন হই না, ভাবুক কল্পনাপ্রবণও না। হয়ে উঠি দামাল, উন্মত্ত হঠকারী, কিংবা হতাশাগ্রস্ত ও আত্মঘাতী। অথবা অসম্ভব হিসেবি। অথচ নক্ষত্র ভরা আকাশকে মনেপ্রাণে সঙ্গে নিতে পারলে, আমাদের অস্তিত্বের বিপন্নতা ও মহিমা — দুইয়ে মিলে প্রজাতি চেতনায় এসে দাঁড়ায় আমাদের মন। সেই চেতনাটিই ছড়িয়ে পড়ে শাখা-প্রশাখায় মানুষের পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতায়, যা হতাশা ও নিঃসঙ্গতা থেকে উত্তরণের এক উল্লেখযোগ্য পথ।  

পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতির সাথে যুক্ত দিন ও রাত্রির পৃথিবী এবং ঋতুচক্রের প্রভাবে প্রাণীকুলের মস্তিষ্কেও গড়ে উঠেছে এক Biological Clock। তার প্রভাব শরীরে প্রতি ২৪ ঘন্টা অন্তর জৈব বৃত্ত আবর্তিত হয়, যা Circadian Rhythm পরিচিত। লক্ষ বছরের অভিযোজনের মধ্যে দিয়ে মস্তিষ্কের ভেতরেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে গড়ে উঠেছে বাইরের প্রকৃতির Rhythm বা ছন্দ, সূর্যোদয়- সূর্যাস্তের ছাপ। প্রকৃতির স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে তাই মানুষের জীবনযাত্রা যদি বেশি দূরে সরে যায়, আলো অন্ধকার তাপ-শৈত্যের ব্যবহার যদি স্বাভাবিক না থাকে, তাহলে মস্তিষ্কের অন্তর্জাত ও বহির্জগতের দুই Rhythm-এর মধ্যে সংঘাতে শরীরবৃত্তীয় কাজ এলোমেলো হয়ে পড়ে। নিদ্রাহীনতা, ক্লান্তি, অবসাদ ছাড়াও নানা শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা দেখা দিতে থাকে। দিনের সূর্যের আলো চোখের রেটিনার মাধ্যমে স্নায়ু বাহিত হয়ে হাইপোথ্যালামাসের SCN (Supra Chiasmatic Nucleus)-এ পৌঁছে সারারাতব্যাপী যে মেলোটোসিনের নিঃসরণ, তাকে বন্ধ করে মস্তিষ্কের Natural anti-depressant নিউরো ট্রান্সমিটার নর এদ্রেনাশিম ও সেরোটোমিনের নিঃসরণে অংশ নেয়। এই রাসায়নিকগুলি আমাদের অবসাদ দূর করে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আসে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আধুনিক সভ্যতার নগরায়ণ, কর্পোরেট সংস্কৃতি আমাদের দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি থেকে আলো বাতাসহীন ঘনবসতিতে, ডিজিটাল অটোমেশনের কৃত্রিম, বদ্ধ কিউবিকল এর ভিতরে। কৃত্রিমতা নির্ভর জীবন যাপনে দ্রুত ভেঙে পড়ছে প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য। গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কর্মব্যস্ততা, আনন্দ-উৎসব। অতিরিক্ত রাত জেগে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমানো আমাদের জীবনযাপনের অঙ্গ হয়ে উঠছে। ফলে আমাদের রেটিনা প্রতিদিন যে সূর্যের আলো গ্রহণ করছে তা অপ্রতুল। মেলাটোমিনের নিঃসরণে বেড়ে-কমে যাচ্ছে সেরাটোমিন-নরআদ্রেনিলের নিঃসরণ। দেখা দিচ্ছে অবসাদ। পৃথিবী জুড়ে আজ আত্মহত্যার ঘটনা বিপুলভাবে ঊর্ধ্বমুখী, সমস্ত আন্তর্জাতিক সমীক্ষা যার প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 

কর্পোরেট পৃথিবীর এই পুঁজি সংস্কৃতি প্রকৃতির লুণ্ঠনের মাধ্যমে পরিবেশের ধ্বংস সাধন করে চলেছে অতিরিক্ত মুনাফার আকাঙ্ক্ষায়। কারণ পুঁজির একমাত্র গন্তব্য মুনাফা। তার পথ চলা এক দিশাহীন যাত্রা, কারণ তার গন্তব্য আরও আরও পুঁজির তৃপ্তি, ক্ষমতার তৃপ্তি, যা শেষ পর্যন্ত সীমারেখাহীন। তার শেষ নেই, ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা নেই, নিজের ধ্বংস নিজেরই অজানা। পেছনে ফেরা নেই। সামনেটা সীমাহীন। ধ্বংস জেনেও তাকে এগোতে হবে, ক্ষমতাই তার একমাত্র উল্লাস। মানুষ, নদী, জল, জঙ্গল, পাহাড় সবই তার ক্রীতদাসে পরিণত হোক — এই তার স্বপ্ন। তার তাণ্ডবে একের পর এক প্রজাতির লুপ্তি, জ্বালানির সীমাহীন ব্যবহারে অরণ্য ধ্বংসের পথে। মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রের ব্যবহারে, গ্রিনহাউস গ্যাসের আধিক্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি, মেরু অঞ্চলে বিপুলভাবে বরফ গলে যাওয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি; পরিণতিতে পৃথিবীর উপকূলবর্তী দেশগুলি সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার মুখে। এমনই আজ বিপন্নতার মুখে আমাদের মানব সভ্যতা। প্রকৃতির ওপর কর্পোরেট বিজ্ঞানের প্রবল ধ্বংসশক্তি এমন দাবি চাপাচ্ছে, প্রকৃতির তাতে সাড়া দেবার ক্ষমতা নেই।  

পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি যে আমাদের কতখানি মানসিক বিপর্যয় ডেকে আনে, তা বোঝা যায় ৯-১০ বছর অন্তর সূর্যের চরম দশায় (Solar Maxima)। সূর্যের অভ্যন্তরে যে সৌর ঝড় দেখা যায়, যার প্রভাবে উপরিতলে কয়েক হাজার কিলোমিটার উচ্চ সৌর শিখা পৃথিবীর তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। যেমন, ১৯৮০, ১৯৮৯, ২০০০ সালে কাছাকাছি এই দশা দেখা দিয়েছিল। সেই সময়গুলিতে পৃথিবীতে মানসিক অসুস্থতা বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া গেছে। 

কমিউনিস্ট ইস্তাহারে মার্কস-এঙ্গেলস বলেছেন —

“বুর্জোয়া শ্রেণির তাদের ১০০ বছরের শাসনে আগের প্রজন্মের সম্মিলিত উৎপাদন শক্তির চেয়ে অনেক বিশাল ও দানবাকার উৎপাদন শক্তির জন্ম দিয়েছে … চাষের জন্য গোটা মহাদেশ সাফ করে ফেলা— গোটা জনগোষ্ঠীকে মাটির ভেতর থেকে যেন জাদুবলে উৎপাটিত করে ফেলা — আগের কোনও শতক কি ভাবতে পেরেছিল যে সামাজিক শ্রমের বুকে এমন শক্তি ঘুমিয়ে রয়েছে?”

মার্কস-এঙ্গেলসের বক্তব্য —

“মানুষ প্রকৃতি থেকেই বাঁচে, অর্থাৎ প্রকৃতি তার শরীর। এবং মরতে না চাইলে তাকে তার সঙ্গে অবিরাম কথোপকথন চালিয়ে যেতে হবে। মানুষের মানসিক ও শারীরিক জীবন প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত — কারণ মানুষ প্রকৃতির অংশ। আর তাই প্রকৃতিকে জয় করাটা আত্মঘাতী।”

মার্কস দেখিয়েছেন ধনতন্ত্র শ্রমিককে কে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শ্রমোতপন্ন দ্রব্যটি তার নয়, তাই শ্রমটিকে তার একান্ত নিজের জিনিস বলে সে মনে করতে পারে না। এভাবে সে নিজেরই সত্তা তথা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নেমে আসে নিঃসঙ্গতা ও হতাশা। আজ আমরা তাই প্রকৃতি থেকে যতই বিচ্ছিন্ন হচ্ছি, পড়ে থাকছে শুধুই তাৎক্ষণিক উপভোগ, একমাত্র আশ্রয় হিসেবে। সুদূরের লক্ষ্য মিলিয়ে যাচ্ছে শূন্যে, প্রতিযোগিতায় জয়ের আকর্ষণ আর ক্ষমতার তৃপ্তি হয়ে উঠছে আমাদের চালিকাশক্তি। জয়ের হাত ধরে আসছে ক্ষমতার উল্লাস আর পরাজয়ের পেছনে পেছনে হতাশা, অবসাদ, আত্মহনন।  

মাটির সঙ্গে বিচ্ছিন্নতার ফলে দেখা দিচ্ছে নিজের দেশ, জাতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা। Identification ঘটছে ক্ষমতা ও স্বীকৃতির প্রতিভূ ব্যক্তিগত আইডলের সাথে। আর এভাবেই আমরা কবি এলিয়টের ভাষায় — “…live dispersed …and no man knows or cares who is his neighbour.” আর তাই এখন আমরা তুচ্ছ স্বার্থে হত্যা করেও বিচলিত বোধ করছি না। 

বিজ্ঞানী প্যাভলভের ভাষায় — “The reflex of purpose is of great and vital importance; it is fundamental form of life energy to us all …” জীবনের সুদূর লক্ষ্য তাৎক্ষণিকতার ঝড়ে উড়ে যাওয়ায় আমাদের সুদূর লক্ষ্য তেমনভাবে গড়ে উঠতে পারছে না। তাৎক্ষণিকতা, সারিবদ্ধতাই গড়ে তুলছে আমাদের জীবনের পথ। 

মনোবিজ্ঞানী এসলি কুনসোলা এবং নেভিস এলিসের গবেষণায় দেখা গেছে প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপন্নতা সঞ্জাত মানসিক আঘাত ও বিষণ্ণতায় আত্মহত্যা পর্যন্ত ঘটে যাচ্ছে। কানাডার তুষারাবৃত অঞ্চলে অতিরিক্ত বরফ গলে যাবার ফলে পর্যটক কমে যাওয়ায় আর্থিক সংকটে অবসাদ ও আত্মহনন বিপুলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মনোবিজ্ঞানীরা যাকে আখ্যায়িত করেছেন Ecological Grief বলে। 

সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে পৃথিবীর নানা দেশে উদ্বাস্তু ও শরণার্থীদের জীবন বিপুলভাবে আক্রান্ত হচ্ছে Post Traumatic Stress Disorder (PTSD)-এ। অন্য দেশের সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়ে যাওয়া Immigrants ও Refugee জীবনে নেমে আসছে আত্ম-পরিচয়ের সংকট, হীনম্মন্যতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, কিংবা বিপরীতে ক্রোধ প্রতিহিংসা আগ্রাসন। 

পৃথিবী একদিন স্বাভাবিক নিয়মেই ধ্বংস হবে তার কক্ষপথে, প্রকৃতির বিধানে। মানবসভ্যতা যদি ততদিন টিকে থাকতে পারে তাকে খুঁজে নিতে হবে অন্য কোনো গ্রহের আশ্রয়, হয়তো অন্য কোনো সৌরমণ্ডলেও। কিন্তু আজ ঘোর সংশয়— ততদিনে পৃথিবীর অর্থলোভী, ভোগবাদী সত্তা কর্পোরেটের মাধ্যমে তার বিলাস ও ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করতে পৃথিবীকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে প্রকৃতির সম্ভার করে নিশ্চিহ্ন করে, কার্বন দূষণ, পরমাণু বিস্ফোরণে পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে সভ্যতাকে যদি ধ্বংস করে বসে! তবে মানব প্রাণহীন পৃথিবী তার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরে চলবে হাজার হাজার বছর, কিন্তু পৃথিবীর মাটি থেকে সাড়া দেবার কেউ আর সেদিন থাকবে না। আমরা কি প্রস্তুত সেদিনের জন্য? 

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান