সঞ্জীব দাস
স্থান : গ্রিসের অ্যাগোরা। অ্যাগোরা হল প্রাচীন গ্রিসের সেই স্থান যেখানে সক্রেটিস থেকে প্লেটো, অ্যারিস্টটল প্রমুখ চিন্তাবিদগণ সমবেত হতেন। চলত আড্ডাচ্ছলে নানা প্রকার তাত্ত্বিক আলোচনা। সেখানে বক্তার পাশাপাশি শ্রোতারাও থাকতেন সক্রিয় ভূমিকায়। ফলে একক বক্তার স্বরাট শাসনের অবকাশ থাকত না। একজন কোনো আলোচনা শুরু করতেন।আর তারই সূত্র ধরে শ্রোতাদের মধ্যে কেউ বক্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। এইভাবে সৃষ্টি হত বহুস্বরের কলতান। সেই অ্যাগোরা এখনও আছে। তবে তার গ্ল্যামারকে অনেকটাই ধূসর গ্রাস করেছে।
সময় : বিকেলবেলা। বসে আছেন দেশবিদেশের খ্যাতনামা তাত্ত্বিক, দার্শনিক এবং সাহিত্য সমালোচকের দল। স্বর্গ থেকে এসে উপস্থিত সেই ত্রয়ী— সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল এবং দিয়োনিউস থ্রাক্স প্রমুখ। আছেন রেচেল কার্সন, রুক্রেট, গ্যারাড, স্কট শ্লোভাক, লরেন্স বুয়েল ইত্যাদি একালের প্রমুখ তাত্ত্বিক। এই বাংলারও কয়েকজন আছেন সেখানে — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, দেবেশ রায়, উজ্জ্বলকুমার মজুমদার প্রমুখ।
জনৈকশ্রোতা : বসে আছি অলসভাবে। হঠাৎই ঘোষকের কণ্ঠস্বর কর্ণগোচর হল — আজকের আলোচনার বিষয় ‘ইকোক্রিটিসিজম’।
সূত্রধর : ‘ইকোক্রিটিসিজম’ একান্তভাবেই একটি পাশ্চাত্য তত্ত্ব। এবং প্রকৃতিগতভাবে একেবারেই উত্তরাধুনিক। এর উদ্ভব বিগত শতাব্দীর শেষ দশকে।তবে পূর্ববর্তী কয়েকদশক জুড়ে একাধিক চিন্তকের ভাবনা এবং বয়ানে এর পশ্চাদভূমি তৈরি হয়েই ছিল। মাননীয় থ্রাক্স শব্দটির উৎসগত দিকে সম্পর্কে আশা করি আপনি কিছু বলবেন।
দিয়োনিয়ুসথ্রাক্স : ‘ইকোক্রিটিসিজম’ শব্দটির মূলগত অর্থ এবং এর প্রচলিত সংজ্ঞা অনেকেরই জানা। তবু আলোচনার সমগ্রতার তাগিদে সেই জানা কথার পুনরুচ্চারনের দিকে আমাদের যেতেই হবে। এখানে স্পষ্টই আছে দুটি শব্দ ‘Eco’ এবং ‘Criticism’. ‘Eco’ কথাটির উৎস খুঁজতে হলে পৌঁছতে হবে প্রাচীন গ্রিক ভাষার অভিধানে। তখনকার গ্রিক ভাষার একটি জনপ্রিয় শব্দ হল ‘oikos’. এর অর্থ হল “an extended family unit that consists of the house, members of the family, slaves, farmland, and all property”. অর্থাৎ মূলগত দিক থেকে বিচার করলে Eco, ecology ইত্যাদি শব্দের মধ্যে আছে একটা inclusive বা সর্বাত্মক অন্তর্ভুক্তিকরণের দ্যোতনা। আর ‘Criticism’-এর ‘Critic’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘criticus’ থেকে। আর ‘criticus’ শব্দটি এসেছে Greek adjective ‘kritikós’ থেকে যার অর্থ হল “discerning, capable of judging”.
অ্যারিস্টটল : আমরা তো বিগতকালের মানুষ। তবে উৎসগত দিক থেকে ভাবলে অনুমিত হয় এটি এমন কোনো তত্ত্ব যা যাবতীয় সংকীর্ণতাকে পরিহার করে সামগ্রিকভাবে সাহিত্য-শিল্পকে বিচার করার কথা বলে। ঘর মানে তো বাসস্থান। এক হিসেবে গোটা পৃথিবী তো মানুষের বসতি।এই তত্ত্ব সম্ভবত সাহিত্য-শিল্পের সমালোচনার ক্ষেত্রে এই বৃহত্তর ঘরটির কথা মাথায় রাখার কথা বলছে।
সক্রেটিস : আর অনুমানে কাজ কী! তার থেকে চল এর প্রণেতাদের মুখ থেকে দু-চার কথা শুনি।
প্লেটো : আমারও তাই মত। রেচেল বরং আপনি বলুন।
সূত্রধর : এই সেই রেচেল কার্সন (Rachel Carson) যাঁর হাতে তৈরি হয়েছে ইকোক্রিটিসিজমের পশ্চাদভূমি। চলুন পাঠক ওঁর কথা উৎকর্ণ হয়ে শুনি। তারপর শুনব একে একে গ্রেগ গারাড, স্কট শ্লোভাক, উইলিয়াম রুক্রেট, স্বর্ণলতা রঙ্গরাজন প্রমুখের সংলাপ।
রবীন্দ্রনাথ : বলুন তরুণী তাত্ত্বিক। আমি সারাজীবন পরিবেশ নিয়ে, পরিবেশ ও মানুষের সম্পর্ক নিয়ে ভেবেছি।লিখেওছি। তাই আপনাদের পরিবেশকেন্দ্রিক সমালোচনাতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা শুনতে আমি আগ্রহ নিয়ে বসে আছি। বলুন রেচেল। শুনি।
রেচেল কার্সন : আমি আমার ‘Silent Spring’ বইতে ‘Environmentalism’ বা ‘পরিবেশবাদ’ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করি। ভাবলেন তো আমি বাংলা বলছি কেমন করে? এতে আশ্চর্য কিছু নেই। আমাদের আমেরিকায় এখন প্রচুর বাঙালি। আমার বেশকিছু বাঙালি বন্ধুও আছে। ওদের থেকে আমি বাংলা বেশ ভালোই শিখে ফেলেছি। যাইহোক ভনিতা ছেড়ে আসল কথায় আসি। আমি শুরুতেই আপনাদের শোনাব আমেরিকার একটি আখ্যান। নাম ‘A Fable for Tomorrow’. এই আখ্যানের কেন্দ্রবিন্দু আমেরিকার এক মনোরম শহর। আমেরিকার প্রাণকেন্দ্রে শহরটি অবস্থিত ছিল। সেখানের বাসিন্দাদের জীবন সুখে-শান্তিতে অতিবাহিত হত। সেখানে ছিল সবুজঘেরা মাঠ। ছিল বিস্তীর্ণ পাহাড় পর্বত এবং বনভূমি।পাহাড় থেকে ভেসে আসত শৃগালের ডাক।হরিণ, অসংখ্য পাখির দল শীর্ণ নদীর শীতল স্বচ্ছ সলিলে অবগাহন করত। এই শহরে আসা পর্যটকদের মন এসব দেখে অপার প্রসন্নতায় ভরে উঠত। কিন্তু! ¡Oh dios! La dicha no es perpetua. তাই দেখা গেল আচমকাই সবকিছু বদলে গেল। সেই বদল কী রকম ছিল? পড়ে শোনাই সেসব কথা :
“Then a strange blight crept over the area and everything began to change.Some evil spell had settled on the community: mysterious maladies swept the flocks of chickens; the cattle and sheep sickened and died. Every where was a shadow of death.”[১]
সর্বাপেক্ষা হৃদয়বিদারক বিষয় হল, যে শহর একদা মুখরিত ছিল পাখ-পাখালির কলতানে তারা একেবারে মুছে গেল আচম্বিতে :
“On the mornings that had once throbbed with the dawn chorus of robins, catbirds, doves, jays, wrens and scores of other bird voices there was now no sound; only silence lay over the fields and woods and marsh.”[২]
এ ছিল যেন মহাবিনষ্টির এক পূর্বসংকেত : “A synecdoche for a more general environmental apocalypse.”[৩] কিন্তু এই বিষাদখিন্ন পরিণতির কারণ কী? আমি দেখেছি DDT রাসায়নিকের নির্বিচারে প্রয়োগই এই মহাবিপর্যয়ের পশ্চাৎভূমি রচনা করেছিল।আমার বইতে এর বিশদ বর্ণনা আছে। বলতে পারা যায় আমার এই বইটা থেকেই জম্ম নিয়েছে এক নতুন তত্ত্ব — Environmentalism। সাহিত্য সমালোচনা, সমাজ বিজ্ঞানের পরিসরে এর থেকেই গড়ে উঠেছে আর-একটি তত্ত্ব। ইকোক্রিটিসিজম নামে যার পরিচিতি সর্বজনবিদিত। তবে, মাননীয় শ্রোতৃমণ্ডলী ecocriticism-এর উদ্ভাবক আমি নই। সকলেই জানেন নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক William Rueckert ১৯৭৮সালে প্রকাশিত ‘Literature and Ecology: An experiment in Ecocriticism’-তে ‘Ecocriticism’ অভিধাটি প্রথম ব্যবহার করেন। এখন তাই আমরা শুনব তাঁর বক্তব্য উৎকর্ণ হয়ে। বলুন রুক্রেট।
রুক্রেট : হ্যাঁ একথা সত্য আমিই ‘Ecocriticism’ শব্দটিকে সৃষ্টি করেছি। আসলে বেশ কয়েক বছর ধরে আমি একালের পাশ্চাত্য সাহিত্যতত্ত্বের ক্রমবর্ধমান পরিসর এবং তার অন্ত:সারশূন্যতা নিয়ে ভাবছিলাম। ‘ইকোক্রিটিসিজম’ সেই পশ্চাৎভূমিরই সাম্প্রতিক নির্মাণ। আমি আমার বইয়ের সূচনাতেই এসম্পর্কে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। বোঝার সুবিধার জন্য আমি সেই অংশটি স্মরণ করছি :
“Where have we been in literary criticism in my time? Well like Count Mippipopolus in The Sun Also Rises? — Here are just some of the positions and battles which many of us have been into and through: formalism, neo formalism, and contextualism, biographical, historical, and textual criticism — so forth and so forth.”[৪]
কিন্তু এত সব তত্ত্বের পরিণাম কী! এসব যে শেষ পর্যন্ত তাৎপর্যহীন এবং ক্লান্তিকর কানাগলি আমি বেশ বুঝেছিলাম। তাই লিখেছিলাম :
“Furthermore ,there are so many resourceful and energetic minds working out from even the merest suggestion of a new position that the permutation of even the most complex new theory or methodology are exhausted very quickly these days.”[৫]
এই উপলব্ধির প্রেক্ষিতেই জন্ম নেয় ইকোক্রিটিসিজমের প্রস্তাবনা : ‘Literature and Ecology : An experiment in Ecocriticism’। কী এই প্রস্তাবনার উদ্দেশ্য তা-ও সেখানে নির্ধারিত হয়েছে স্পষ্ট ভাষায় :
“Specially, I am going to experiment with the application of ecology and ecological concepts to the study of literature, because ecology has the greatest relevance to the present and future of the world.”[৬]
স্কট শ্লোভাক : আমি বিষয়টিকে একটু অন্যভাবে দেখি। আমি মনে করি :
“The field of ecocriticism, as I understand it, seeks to explain through textual analysis who we are (as individuals and as a species) and how and why we think about and interact with other beings (human and non-human) and places as we do. To me it all boils down to two overarching paradigms : animality and place.” [৭]
আমি রুক্রেটের মতো নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে না দেখলেও একথা আমি দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করি এতকাল ধরে চলে আসা তত্ত্বগুলোর দেখার পরিসর তুলনামূলকভাবে অনেকটাই সংকীর্ণ। যেমন —
“Some scholarly modes in the humanities, such as New Criticism, deconstruction and stylistics, focus on ‘text’ in and of itself, on patterns of language. Other modes, including New Historicism and psychoanalytic approaches, consider texts (literary and otherwise) within a human context.”[৮]
এই প্রবণতার বদল দেখা গেল ১৯৭০সালে প্রথম বসুন্ধরা দিবস পালনের পর থেকে। সেই সময় থেকে মানুষের ভাবনায় আসল বদল। সেই সময় থেকে পৃথিবীর স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের উপর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং শিল্পায়নের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে ভাবনার সূচনা হয়। সাহিত্যতাত্ত্বিক গণও সচেতনভাবে সংকীর্ণ পরিসর থেকে বেরিয়ে এসে বৃহত্তর প্রেক্ষাপট থেকে পাঠকৃতির বিচার করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নানাপ্রকার প্রকৌশলের আবিষ্কারে প্রয়াসী হন।আরও সহজভাষায় বলা যায় :
“a context that recognises the implications of our lives (including our works of art)in a more-than-human context.”[৯]
সূত্রধর : কিন্তু এর মাত্রাগুলো কী কী? এবং এর প্রয়োগই বা হবে কীভাবে?
সক্রেটিস : এর উত্তর গ্যারাডের কাছে আছে। উনিই বলুন।
গ্যারাড : তবে আমি Goltfelty এবং Lawrence Bull প্রমুখকেই আসল কৃতিত্ব দেব। ওঁদের বইতেই ইকোক্রিটিসিজমের প্রথম তরঙ্গের সূচনা হয়েছিল।
প্লেটো : প্রথম তরঙ্গ! একটু বুঝিয়ে বলুন।
গ্যারাড : ইকোক্রিটিসিজম উঠে আসার প্রথম দিকে প্রকৃতির উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। সেই সব প্রতিবেদন গুরুত্ব পেয়েছিল যাদের মূল বিভাব প্রকৃতি। তাই গুরুত্ব পেয়েছিলেন ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কিটস, শেলির মতো ইংরেজি সাহিত্যের রোমান্টিক যুগের কবিকুল। গুরুত্ব পেয়েছিলেন সেইসকল ঔপন্যাসিক, গল্পকার যাঁদের রচনায় প্রকৃতি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে। প্রকৃতিকে কেন্দ্রে রেখে তাঁদের পাঠকৃতির পুনর্বিচারের দিকেই ছিল প্রথম দিকে ইকোক্রিটিকদের প্রবণতা।
প্লেটো : আর দ্বিতীয় তরঙ্গ!
গ্যারাড : এই পর্যায় আসলে প্রথম তরঙ্গেরই পরিমার্জিত রূপ। এই পর্যায়ে প্রকৃতি নয়, জোর দেওয়া হয় পরিবেশের উপর। সেই পরিবেশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক কীরকম তা দেখতে চাইলেন নতুন কালের ইকোক্রটিকরা। দেখতে চাইলেন সাহিত্যে এই সম্পর্কের স্বর কীভাবে কতটা উঠে আসছে। শুধু তাই নয়, এই দ্বিতীয় তরঙ্গ মানুষ এবং মনুষ্যেতর ,প্রকৃত এবং অ-প্রকৃত ইত্যাদির মধ্যে যে বেড়া দেওয়ার প্রবণতা ছিল প্রথম পর্যায়ে সেই প্রবণতা পরিত্যক্ত হল। অর্থাৎ :
“Second wave is particularly modern in its breaking down of some of the long-standing distinctions between the human and the non-human, questioning these very concepts.”[১০]
লরেন্স বুয়েল : আমি আরও স্পষ্ট করে দিই। আমার মতে :
“The boundaries between the human and the non-human, nature and non-nature are discussed as constructions, and ecocritics challenge these constructions, asking (among other things) how they frame the environmental crisis and its solution. This wave brought with it a redefinition of the term “environment,” expanding its meaning to include both “nature” and the urban.”[১১]
সূত্রধর : আর তৃতীয় তরঙ্গ?
ত্রাস্ক : যা জেনেছি তার ভিত্তিতে বলি এই তৃতীয় তরঙ্গ আরও বেশি বিপ্লবাত্মক। আধুনিকতাবাদী নির্দিষ্টায়ণের প্রবণতা এখানে পুরোপুরি খারিজ হয়ে গেছে। এতকাল মূলধারার সাহিত্য-সংস্কৃতি আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। প্রান্তিক কালচারকে দুয়োরাণীর মতো উপেক্ষার অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। সেই অচলায়তন এখন ধূলিস্যাৎ হল। ইংরেজি ভাষায় বলি :
“Third Wave Ecocriticism has been accepted as a label for a new form of critical writing that transcends national and ethnic barriers and compares the human experience of different cultures.”[১২]
সূত্রধর : আর চতুর্থ তরঙ্গ?
গ্যারাড : ম্যারল্যান্ড এই তরঙ্গের অন্যতম প্রবক্তা। একে এককথায় মেটিরিয়াল ইকোক্রিটিসিজম বলা যায়। এখন মানুষ এবং মনুষ্যেতর এই বাইনারিটিকে নস্যাৎ করা হয়েছে উপাদানগত দিক থেকে। আসলে মানুষ এবং অন্যান্যদের শরীরের মৌলিক উপাদান তো একই। সেদিকেই লক্ষ রেখে মেরিল্যান্ড বলেছেন :
“First is the premise that there is a shared materiality between the human and the non-human world that renders obsolete the distinction between human and environment, moving beyond the construct of ‘nature’ altogether, second is the idea that all of this shared matter has agency and the third is the ethical and political challenges the complexity and hybridity of these material intermingling’s suggest.”[১৩]
যে প্রবাহ আসুক আর যাক সব মিলিয়ে ইকোক্রিটিসিজম আমাদের cultural ইতিহাসের সঙ্গে লগ্ন : “indeed the widest definition of the subject of Ecocriticism is the study of the relationship of the human and the non-human, throughout human cultural history and entailing critical analysis of the ‘human’ itself.”[১৪]
সূত্রধর : এতক্ষণ তো তত্ত্বের কথা হল। এখন প্রয়োগের কথায় আসা যাক। উজ্জ্বলকুমার আপনি একটু বলুন তো।
অলোকরঞ্জন : হ্যাঁ বেঁচে থাকাকালীন অবস্থাতেই দেখেছিলাম ওর সেই মিথসঞ্চারী বই ‘বিশ্বভরা প্রাণ’। সম্ভবত ইকোক্রিটিসজমকে বাংলা ভাষায় প্রতিষ্ঠিত করার এটাই প্রথম প্রয়াস।
উজ্জ্বলকুমার : না, সেরকম কিছু নয়। যাই হোক। আসল কথায় আসা যাক। আমাদের মধ্যেই আছেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং। ওনার গল্প দিয়েই শুরু হোক।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আধুনিককালের প্রথম ইকোক্রিটিক। যে জৈবসমগ্রতা বা deep ecology-এর কথা এখন বলা হচ্ছে তাঁর পথিকৃৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। একথার প্রমাণ ছড়িয়ে আছে তাঁর ‘অতিথি’, ‘ছুটি’, ‘সুভা’ ইত্যাদি গল্পে। আমি এখানে ‘ছুটি’ গল্পটির কথা বলব। এই গল্পের মূল থিম আপনাদের ঐ deep গ্রথিত। তাই আমি আমার রচিত ‘কথাকোবিদ রবীন্দ্রনাথ’ বইতে রুশোর তত্ত্ব দিয়ে গল্পটিকে ব্যাখ্যা করেছিলাম। আমার মনে হয় এই ‘Deep ecology’-এর মূল নিহিত আছে রুশোর তত্ত্বে। রুশো মনে করতেন মানুষের অস্তিত্ব প্রকৃতির সঙ্গে একসূত্র গ্রথিত। তাই প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্নতা অশুভ ফল ডেকে আনে। Jacques-Henri Bernardin de Saint-Pierre তাঁর ‘Paul et Virginie’ উপন্যাস এই তত্ত্বেরই শিল্পরূপ। রবীন্দ্রনাথও তাঁর ‘ছুটি’ গল্পে এই ভাবনাকেই শিল্পিত রূপ দিয়েছেন। গ্রামের দুরন্ত বালক ফটিক গ্রামের পরিবেশেই ভালো ছিল। প্রাণ প্রাচুর্য তাঁর আচরণে প্রাণবন্ত হয়ে উঠত। ফটিককে সেই পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মামা বিশ্বম্ভরবাবু কলকাতায় নিয়ে আসেন তাকে মানুষ করে তুলতে।কিন্তু সমগ্র থেকে অংশকে বিচ্ছিন্ন করার ফল কী কখনো ভালো হতে পারে? আর তাই ফটিকের প্রাণসত্তা শহর কলকাতার ভিন্ন পরিবেশে এসে তার প্রাণপ্রাচুর্য হারাল। বাকি ছিল শারীরিক মৃত্যু। সারাদিন রোদে পুড়ে জলে ভিজে সে জ্বরে পড়ল। এই জ্বরই তার প্রাণের শেষ সজীবতাটুকুকেও কেড়ে নিল।
রবীন্দ্রনাথ : আপনাদের মূল্যায়নে আমি সম্মানিত বোধ করছি। শ্রীমান দেবেশ আপনি কিছু বলতে চান মনে হচ্ছে। মন খুলে বলুন।
দেবেশ রায় : মাননীয় কবি আমি এই পাশ্চাত্য তত্ত্ব কীভাবে একালের বাংলা কথাসাহিত্যে প্রভাব ফেলেছে তা নিয়ে কিছু কথা বলব। সাম্প্রতিক কালে বাংলা ভাষায় পরিবেশকেন্দ্রিক বেশকিছু উপন্যাস রচিত হয়েছে। যেমন সাধন চট্টোপাধ্যায় বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে গজিয়ে ওঠা আর্সেনিক সমস্যা নিয়ে লিখেছেন ‘জলতিমির’। মহাভারতীয় কথার কালীয়নাগের মিথকথার আর্কেটাইপের আড়াল থেকে তিনি গোটা বিষয়টাকে ধরেছেন।
ইকোক্রিটিসিজমের দ্বিতীয় প্রবাহে সেইসব প্রতিবেদনের উপর আলোকপাত করা হয়েছিল যেখানে সরাসরি পরিবেশদূষণের ইস্যু উপজীব্য হয়েছে। সাধনের ‘জলতিমির’ স্পষ্টতই এই দ্বিতীয় ধারার অন্তর্ভুক্ত । তবে আলাদা করে কিন্নর রায়ের কথা বলতেই হবে। ওর ‘প্রকৃতিপাঠ’, ‘মেঘপাতাল’ বাংলা কথাসাহিত্যের সম্পদ। ‘প্রকৃতিপাঠ’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় বিভাব যে পরিবেশদূষণ নিয়ে লেখকের উৎকণ্ঠা তা ভূমিকায় অনুস্যূত স্বরলিপিতেই প্রাণবন্ত :
“নিজের চারপাশে — আকাশ, নদী, সমুদ্রে মানুষ মিশিয়ে দিচ্ছে সভ্যতার বিষ।তেল-কালি, ধোঁয়া আর নানান দূষণে বুকের বাতাসে পড়েছে টান। পৃথিবী জুড়ে পরিবেশবিজ্ঞানীরা গ্রিন হাউস এফেক্টের দু:স্বপ্ন দেখছেন — ক্রমাগত অরণ্য ধ্বংস করে, বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি খুন করে মানুষ তার নিজের মৃত্যু-পরোয়ানা রচনা করতে চলেছে। এই ধ্বংসের খেলাই মূল সুর হিসেবে বেজেছে উপন্যাসে।”
কিন্নরের এই আখ্যানে ‘পরিবেশ’ কাগজের সম্পাদক সতীপ্রসন্নকে সামনে রেখে কলকাতা ও সন্নিহিত অঞ্চলের ঘটে চলা এই ‘ধ্বংসের খেলাকে’ চিত্রল বর্ণনায় তুলে ধরেছেন। তবে শুধু ধ্বংসের পালাগান নয় এই আখ্যান। এখানে আছে প্রতিরোধের কথাও। সতীপ্রসন্ন নিজে একঝাঁক যুবককে নিয়ে মাঠ-পুকুর দখল করে বহুতল নির্মাণের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন। আন্দোলনকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আখ্যানের উপান্তে কথকের মন্তব্য :
“বৃষ্টির দাপটে, হাওয়ার ছাটে, ভিজতে ভিজতে সতীপ্রসন্ন দেখতে পেলেন মাঠপুকুরের সবুজ জল একটু একটু করে ইঁটের ঘাটলা ঢেকে দিচ্ছে। ক্যাচকোচ ক্যাচকোচ করতে করতে গোটা তিনেক শালিক বুঝি উড়ে গেল। জল বাড়ছে, হাঁসেরা তীব্রতর করছে গতি। তাদের সাঁতারে আনন্দের ছন্দ। প্রকৃতি মাঠপুকুর ভরিয়ে দিচ্ছে। তার চারপাশে অনেক মানুষ।”
অর্থাৎ আখ্যানের সূচনা পরিবেশের ধ্বংসের বিবরণে হলেও সমাপ্তিতে এসে লেখক আশার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। বাস্তবে এমনটা কী ঘটে! আমরা জানি এমন ঘটাটা প্রায় অপ্রত্যাশিত। তবু এমন আশাবাদী উপসংহারকে বাহবাই দেব। আসলে আশা নিয়েই যে মানুষ বাঁচে!
অ্যারিস্টটল : শুনে ভালো লাগল। সুদূর বঙ্গভূমির বুদ্ধিজীবীরা চিরকালই উন্নত মননচর্চায় অগ্রসর। একালেও মনে হচ্ছে সেই ধারা অব্যাহত।
সক্রেটিস: তবে ‘বুদ্ধিজীবী’ শব্দটি না প্রয়োগ করাই ভালো। ব্রেকিং নিউজে সেদিন শুনলাম ওটা এখন সেখানে গালাগালে পর্যবসিত হয়েছে।
দেবেশ রায় : উজ্জ্বল, আপনি তো জীবনের শেষ কয়েকটা বছর পরিবেশ নিয়ে লেখালিখি করলেন। বলুন আপনার উপলব্ধির কথা।
উজ্জ্বলকুমার : আমি নয়, অলোকদা এই সম্মানের প্রকৃত দাবিদার বলে আমি মনে করি। একালের বাংলা ভাষায় যদি Eco-poetry কেউ লিখে থাকেন তিনি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। সেই কবে ‘জবাবদিহির টিলা’র বিভাব কবিতায় তিনি প্রকৃতি এবং প্রকৃতির কোলে খোলা আকাশের তলায় ফুটপাতে ঘুমানো মানুষগুলোকে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার অনুভব তুলে এনেছিলেন সংবেদী ভাষায় :
“আর আমার কোনো নিসর্গ নেই, মানুষজন যখন ঘুমিয়ে পড়ে
আপাতমৃত লোকালয়ের মধ্য দিয়ে যেতে-যেতে অনুভব করি অনন্ত নিসর্গের আস্বাদ
যেন দেবদারুর দূতীরা ঢেলে দেয় আমার মুখে অমৃত আ:
আমার ঘুম পায় আর দুদিকে খাটিয়া পেতে ঘুমিয়ে থাকে কাতারে—
কাতারে নরনারী তাদের মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাবার পথটাই আজ
আমার নিসর্গ”
এই দেখা তো সাধারণ প্রকৃতিপ্রেমিকের দেখা নয়। এই মার্কসবাদী মানবপ্রেমিকের সহানুভূতিশীল হৃদয়ের প্রকাশমাত্রও নয়। এমন স্তবক তাঁর লেখনী থেকেই নি:সৃত হতে পারে যিনি উপলব্ধি করেছেন প্রকৃতি কিংবা মানুষ আলাদা কিছু নয়। তারা দুইয়ে মিলেই নিসর্গ, তারা দুইয়ে মিলেই পরিবেশ। এই ‘Oikos’-এর ভাবনাই প্রতিবেদনটিকে এক গভীর দার্শনিক কবিতার স্তরে উন্নীত করেছে।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় : উজ্জ্বল তোমার কথা শুনে মনে পড়ছে আমার ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। মানে তোমরা যখন ছাত্র সেই সময়টার কথা বলছি। অলোক, শঙ্খ তোমাদের থেকে একটু সিনিয়র। তুমি তো জানো সে সময় অলোকের কবিতা লোকের মুখে মুখে ফিরত। ‘যৌবন বাউল’ প্রকাশ হলে ও তো রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেল। ঐ কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘বুধুয়ার পাখি’। অপাপবিদ্ধ যৌবনে ও লিখেছিল। রিখিয়ার অরণ্যসন্তান বুধুয়ার চোখ দিয়ে সে আমাদের দেখিয়েছে শহুরে বাবুদের সেই পরিত্যক্ত বাড়ি যা স্পষ্টতই গ্রামে অবস্থিত হলেও প্রকৃতির সঙ্গে সংসর্গহীন, আর তাই সেখানে “কোনো পাখিও বসে না।” বুধুয়াও তাই বোঝে, “এর চেয়ে আমাদের কুঁড়ে ঘর ঢের ভালো, ঢের।” সেখানে যে আছে প্রকৃতির সঙ্গে আন্তরিক লগ্নতা। তাই দলে-দলে নীল পাখি সেখানে নিকোনো নরম উঠোনে এসে বসে। ধান খায়। পরবর্তী স্তবকে দেখি উদার আকাশের অপরিমেয়তা বুধুয়ার সরল হৃদয়কে বিস্ময়ে ভরে দিয়েছে। তার চোখে সেই সুনীল আকাশ ঈশ্বরের বাসস্থান হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। সেখানে প্রাণ ও প্রকৃতি একসূত্রে গ্রথিত। কবিতার শেষ স্তবকে দেখি বুধুয়া আরও বেশি করে তার physical environment-কে নিয়ে যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। তার ডাকে, “ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসে, কেউ তার দিদি, কেউ মাসি”। বুধুয়ার অনাবিল হাসি তাদের মুগ্ধ করে। তাই তারা ফেরার সময় রুপোলি ডানায় করে বুধুয়ার হাসি সঙ্গে নিয়ে যায়। অর্থাৎ তোমরা যে deep ecology-র কথা বলছ সেই বক্তব্যই যেন এখানে উৎকীর্ণ হয়েছে।
উজ্জ্বলকুমার : আমি মনে করি যিনি জৈব সমগ্রতায় বিশ্বাসী একমাত্র তাঁর কবিতাই ইকোকবিতা হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া এই বোধ আন্তরিকতায় একজন মাত্র কবির কবিতায় উঠে এসেছে। তিনি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। ‘বুধুয়ার পাখি’তে সেই বিশ্বাসের সূচনা। আমৃত্যু এই বিশ্বাস ছিল শ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই স্বাভাবিক-স্বত:স্ফূর্ত। ওঁর শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘বাস্তুহারার পাহাড়তলি’ কাব্যগ্রন্থের আপাততুচ্ছ ‘গ্রিন কার্ড’ কবিতার কথাই ধরা যাক। কবিতার কথক মুখোমুখি এক রাষ্ট্রনায়কের। একটি মুমূর্ষু গাছ দেখিয়ে তিনি সেই রাষ্ট্রনায়কের উদ্দেশে বলেন : “এ গাছ মুমূর্ষু, তবু তাকে তুমি গ্রিন কার্ড দিয়ো”। এই প্রস্তাবনার পশ্চাদযুক্তি এরকম :
“তুমি যদি
বিশ্বের উদবাস্তুদের উৎসাদন না করে নীরবে
একেই লালন করো পরিণামে এই মহীরুহ
গর্ভগৃহ মেলে দেবে, তার যত কোটরে কোটরে
বেড়ে উঠবে শরণার্থীদের সব সন্তান-সন্ততি—”
আপাত সাধারণ সংলাপের কী সুগভীর তাৎপর্য! বিশ্বের যত উদবাস্তু তাদের আশ্রয় হয়ে উঠবে এক মুমূর্ষু গাছ। তার কোটরে বেড়ে উঠবে “শরণার্থীদের সব সন্তান-সন্ততি”। এমন ব্যতিক্রমী ভাবনা তিনিই ভাবতে পারেন যিনি উপলব্ধি করেন মানুষ কিংবা প্রকৃতি আলাদা কিছু নয়। মানুষের মতো গাছও living being. তারাও একই বিশ্বগৃহের বাসিন্দা। আর তাই বিপদাপন্ন উদবাস্তুদের কষ্ট দেখে সে নিজে মুমূর্ষু হয়েও তাদের দিকে বাড়িয়ে দেয় সাহায্যের হাত। হয়ে ওঠে তাদের আশ্রয়স্থল। কিন্তু বাস্তব যে বড়ই কঠিন তা কবি জানেন। ভালোই বোঝেন এই প্রস্তাবকে কী চোখে দেখবে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রনায়ক। তাই নির্মোহ চিত্তে সেই সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার জীবন্ত বর্ণনায় তিনি কবিতার সমাপ্তি টানেন :
“আমার এ কথা শুনে দেখলাম সেই সর্বগ্রাসী
রাষ্ট্রনায়কের মুখে পরিতৃপ্ত হাঙরের হাসি।”
প্লেটো : এতক্ষণ ধরে চলা আলোচনা সভা আমাকে বেশ আনন্দ দিল। দেখছি কবিকুল শুধু মিথ্যার অনুকরণ করছেন না। তাঁরা সত্য ভাবছেন। লেখছেনও। এঁদের তাই বিতাড়িত করা নয়, আজকের রাষ্ট্রব্যবস্থায় পুনর্বাসনের প্রস্তাব রাখব।
রবীন্দ্রনাথ : ওসব রোমান্টিক ভাবনা ছাড়ুন। এখন বাইডেন, পুতিন, শ্রীমান মোদির রাজত্ব। কে শুনবে আপনার উপদেশ?
অলোকরঞ্জন : জরুরি অবস্থার দিনগুলোর থেকেও এখন আমাদের দেশে খারাপ অবস্থা চলছে। কে শুনবে ভাই সুজন কথা! মোদি ‘নমানি গঙ্গে’ করছেন।অথচ গঙ্গার উৎস অঞ্চলেই একের পর এক বাঁধ! কর্পোরেট দের কারখানার গরলে গঙ্গামাইয়া নীলকণ্ঠী। অতএব চলবেই পরিবেশের হত্যালীলা।
রবীন্দ্রনাথ : অলোকরঞ্জন তোমার কথা শুনে ‘মরমী করাত’ কাব্যগ্রন্থের সেই কবিতার কটি পঙক্তি আমার খুব মনে পড়ছে। কবিতাটির সূচনা পরিবেশ ধ্বংসের সতর্কীকরণে : “আজ বাতাসে ভীষণ গাঢ় / স্মগ অ্যালার্ম”। আর শমে পৌঁছে দেখি মানুষ-প্রাণীজগৎ এবং গাছপালার সহমরণকে বেদনায় রাঙিয়ে দিতে বেজে উঠেছে স্মগ অ্যালার্ম :
“মুমূর্ষুদের সঙ্গে দারুণ
ঐকতানে
গাছপালার সঙ্গে সহ—
মরণ মেনে
তানপুরায় বেজে উঠছে
স্মগ অ্যালার্ম।”
অ্যারিস্টটল : আপনারা কি তবে Ecocriticism-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন?
রবীন্দ্রনাথ : আমি ভেঙে কিছু বলব না। অলমতিবিস্তরেণ।
প্লেটো : যা হোক। অনেক আলোচনা হল। বেলা পড়ে এল। এখন যাওয়া যাক।
জনৈক শ্রোতা : দেখলাম একে একে সক্রেটিস, প্লেটো রবীন্দ্রনাথেরা আকাশের মহাশূন্যে মিলিয়ে গেলেন। গ্যারাড প্রমুখরা চললেন মদের দোকানে। সেখানে তাঁরা বোধহয় স্কচ-ব্রান্ডির সৌরতাপে জীবনের স্বাদ নেবেন।
সূত্রনির্দেশ :
১) Rachel Carson : ‘Silent Spring’, Houghton Mifflin America, 1962, page 10
২) Rachel Carson : ‘Silent Spring’, Houghton Mifflin America, 1962, page 10
৩) Rachel Carson : ‘Silent Spring’, Houghton Mifflin America, 1962, page 10
৪) William Rueckert : ‘Literature and Ecology : An experiment in Ecocriticism’, In Glotfelty and Fromm, 1996, Page 105
৫) William Rueckert : ‘Literature and Ecology : An experiment in Ecocriticism’, In Glotfelty and Fromm, 1996, Page 106
৬) William Rueckert : ‘Literature and Ecology : An experiment in Ecocriticism’, In Glotfelty and Fromm, 1996, Page 106
৭) Scott Slovic : ‘Editor’sPreface, Eco Criticism’ (by Swarnalata Rangarajan), Orient BlackSwan, 2018
৮) Scott Slovic : ‘Editor’s Preface, Eco Criticism’ (by Swarnalata Rangarajan), Orient BlackSwan, 2018
৯) Scott Slovic : ‘Editor’s Preface, Eco Criticism’ (by Swarnalata Rangarajan), Orient BlackSwan, 2018
১০) Greg Garrard : ‘Ecocriticism’, Rutledge, 2012, Page 1-24
১১) Lawrence Buell : ‘The Future of Environmental Criticism’, Massachusetts, Blackwell, 2005, page 12
১২) Scott Slović : ‘The future of Ecocriticism’, https//ecozona eu, 2010
১৩) Pippa Maryland : ‘Ecocriticism’, Literature Compass, November 2013, Page 836
১৪) Greg Garrard : ‘Ecocriticism : The New Critical Idiom’, Rutledge, 2004, Page 05