শান্তিপদ গণ চৌধুরী
কোনও কাজ করতে গেলেই শক্তির প্রয়োজন হয়। সেটা সেচ ব্যবস্থা হোক, শিল্প কেন্দ্র হোক অথবা পরিবহণ ব্যবস্থা হোক। এমনকি আমরা যখন ঘুমাই তখনও আমাদের হৃদযন্ত্র এবং ফুসফুসকে চালু রাখতে শক্তির প্রয়োজন হয়। বহু বছর আগে শক্তির উৎস হিসাবে মানুষ জীব জন্তুর শক্তিকে কাজে লাগত অথবা নিজের দৈহিক/পেশি শক্তিকে কাজে লাগত। কৃষিকাজ, পরিবহণের কাজ ইত্যাদিতে জীবজন্তুর ব্যবহার এখনও প্রচলিত। রাজা মহারাজাদের ঘরে পাখা টানুনি ছিল। পালকি বাহক ছিল পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত; এভাবেই চলছিল। এসব শক্তির উৎসগুলো ছিল সবুজ শক্তি। অর্থাৎ এর থেকে কোনও দূষণ হত না। ফলে পৃথিবীর আবহাওয়া ছিল নির্মল। কিন্তু সমস্যা হল এই সব শক্তির উৎসগুলো ছিল কার্যকারী দিক থেকে অত্যন্ত নিম্নমানের। গোরুর গাড়িতে ১০ কিলোমিটার যেতে তিন ঘণ্টা সময় লাগত, কোনও একজন লোক সারাদিনে ২০ বালতির বেশি জল কুয়ো থেকে তুলতে পারত না। স্বভাবতই খোঁজ শুরু হল নতুন শক্তি উৎসের। সেসব শক্তির উৎস কার্যকারী দিক থেকে অনেক দক্ষ। এর উপর রান্নার কাজে মানুষের তাপ শক্তির প্রয়োজন হল এবং আলোর জন্য মানুষের ভিন্ন শক্তির উৎসের প্রয়োজন দেখা দিল। যেগুলি মানুষের কায়িক শ্রম দ্বারা করা সম্ভব ছিল না। মানুষ সেসময় আর একটি শক্তির উৎসের ব্যবহার করত তা হল জ্বালানি কাঠ। রান্নার কাজে জ্বালানি কাঠের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। বহু যুগ আগে কাঠ জ্বালিয়ে ঘর গরম রাখা, কাঠকে আলোর উৎস হিসাবে ব্যবহার করা হত। মানুষ কিন্তু শক্তির উৎস হিসাবে কয়লার ব্যবহার বহু আগে থেকেই করত। চিনারা তিন হাজার বছর আগে কয়লার ব্যবহার করত বলে প্রমাণ আছে। কিন্তু সেগুলি কয়লার বাণিজ্যিক ব্যবহার নয়। ১৬৭৯ সালে ইলিনয়স নদীর তীরে প্রথম কয়লা আবিষ্কৃত হয়। ১৭৪৮ সালে প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে কয়লার উত্তোলন হয়। স্থানটি ছিল ভার্জিনিয়া প্রদেশের রিচমন্ড এলাকা। ১৭৫০ সালের ১৩ এপ্রিল ডক্টর থমসন ওয়াকার কয়লার সঠিক ব্যবহার আবিষ্কার করেন। শিল্প বিপ্লব কয়লার ব্যবহারকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। পরবর্তীকালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার ব্যবহার শুরু হয়। রেল চালানোর জন্য সেসময় ব্যাপক ভাবে কয়লা ব্যবহার করা হত। কারণ সে-সময় ডিজেল ইঞ্জিনের প্রচলন হয়নি। লক্ষণীয় প্রায় একই সময়ে তেলের বাণিজ্যিক ব্যাবহার শুরু হয়। যদিও চিনারা খ্রিস্টপূর্ব ৩৪৭ সালে নোনা জল থেকে নুন প্রস্তুত করার কাজে তেলের ব্যবহার করত বলে ইতিহাসবিদদের ধারণা। আধুনিক যুগে শক্তির উৎস হিসাবে তেলের ব্যবহার শুরু হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে। তথ্য অনুযায়ী ১৮৪৬ সালে বাকু শহরে প্রথম যান্ত্রিক পদ্ধতিতে তেল উত্তোলন করা হয়, বাকু বর্তমানে আজারবাইজানের রাজধানী। ১৮৫৪ সালে কেরোসিন তেলের লণ্ঠন আবিষ্কৃত হয়। আবিষ্কার করেন মাইকেল ডেয বলে এক বিজ্ঞানী। শক্তির উৎস হিসাবে তেলের ব্যবহার সেই থেকে শুরু। তারপর আবিষ্কৃত হয় ডিজেল ইঞ্জিন। শক্তির উৎস হিসাবে তেলের ব্যবহার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমান পৃথিবীতে তেল ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও চলতে পারি না। কাঠ, তেল , কয়লা এগুলি উন্নত মানের শক্তির উৎস, ফলে বিংশ শতাব্দীর মানুষ শক্তির উৎস হিসাবে এগুলিকেই ব্যবহার করত। দূষণ ব্যাপারটা তখন মানুষের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। এদিকে ১৯৫৪ সালে রাশিয়ানরা বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক শক্তি চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেন। প্রথম কেন্দ্রটির ক্ষমতা ছিল ৫ মেগাওয়াট। সেসময় ভাবা হয়েছিল পারমাণবিক শক্তি বিশ্বের সমস্ত শক্তি চাহিদা মিটিয়ে দিতে পারবে এবং সারা বিশ্বে গত শতাব্দীর ৬০ এবং ৭০ এর দশকে ব্যাপক হারে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানো হয়। রাশিয়ার চের্নোবিল (Chernobyl) এবং জাপানের ফুকুশিমা (Fukushima) পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিপর্যয়ের পর অবশ্য সারা বিশ্বে এই শক্তির ব্যবহার দ্রুত কমতে থাকে। বহু পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। ভারতবর্ষে বর্তমানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে মাত্র চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। ৮০-র দশকে সারা বিশ্বে পরিবেশগত সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। বিজ্ঞানীরা জলবায়ু ঘটিত সমস্যার কথা জনসমক্ষে তুলে ধরতে শুরু করেন। বিশ্বব্যাপী সবুজ বিদুৎতের উপর গবেষণার মাত্রা বৃদ্ধি পায়, রাষ্ট্রপুঞ্জ ভূ-উষ্ণায়ন নিয়ে বিশেষ সাবধানতার কথা বলতে শুরু করেন। সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর গবেষণার কাজ শুরু হয়। এইসব উৎসগুলি পরিবেশ বান্ধব এবং অফুরন্ত। সাধারণত এই বিদ্যুৎ উৎসগুলোকে আমরা নবীকরণ যোগ্য শক্তির উৎস বলি। এছাড়াও ক্ষুদ্র জল বিদ্যুৎ, জোয়ার ভাঁটা থেকে সৃষ্ট বিদ্যুৎ ও জিয়ো থার্মাল বিদ্যুৎ উৎসগুলিকে আমরা নবীকরণযোগ্য বিদ্যুৎ উৎস বলে থাকি।
সৌর–শক্তি :
অফুরন্ত শক্তির উৎস সূর্য। হাজার হাজার বছর ধরে আমরা সৌর শক্তিকে বিভিন্ন ভাবে কাজে লাগিয়ে আসছি কিন্তু সৌর শক্তির আধুনিক প্রযুক্তিগত ব্যবহার শুরু হয় ১৯৫০-এর দশকে মহাকাশ বিজ্ঞানে। গত শতাব্দীর ৫০-এর দশকে রাশিয়া প্রথম মহাকাশে উপগ্রহ পাঠায় আর সেই স্যাটেলাইটে বিদ্যুৎ সরবরাহ হত সৌর কোশের সাহায্যে। উল্লেখ করা যেতে পারে ফরাসি বিজ্ঞানী এডমন্ড বেকারেল ১৮৩৯ সালে প্রথম ফোটোভোল্টিক কোশ আবিষ্কার করেন; তার প্রায় ১২০ বছর বাদে মানুষ সৌর কোশের ব্যবহার শুরু করে। বেল (B.E.L) কোম্পানি মহাকাশের জন্য প্রথম সৌর কোশ উৎপাদন করে। মানুষের কাজে পৃথিবীতে তখন সৌর কোশ ব্যবহার হত না। ৭০-এর দশকে বিশ্বের সৌরশক্তির বাণিজ্যিক ব্যবহার লক্ষ করা যায়। সৌর শক্তিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় —
ক) সৌর-তাপশক্তি
খ) ফটোভোল্টিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সৌর বিদ্যুৎ শক্তি
সৌর-তাপশক্তির ব্যবহার কিন্তু মানুষ বহু বছর আগে থেকেই করে আসছে, বিশেষত ফসল শুষ্ককরণের কাজে। আধুনিক কালে সৌর-তাপশক্তিকে জল গরম করার কাজে এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। বাণিজ্যিক ভাবে সব দেশেই সৌর শক্তির মাধ্যমে জল গরম করার যন্ত্র পাওয়া যায়। আমাদের দেশে অসংখ্য পরিবার, হোটেল, হাসপাতাল ইত্যাদি স্থানে জল গরম করার কাজে বর্তমানে সৌর-তাপশক্তির ব্যবহার করে। কলকাতা শহরেও বেশ কিছু বাড়িতে সৌর-তাপশক্তিতে জল গরম করার যন্ত্র বসানো হয়েছে। প্রতিদিন ১০০ লিটার গরম জল তৈরি করার যন্ত্র মোটামুটি দাম ১৮ হাজার টাকা। এই যন্ত্রগুলি প্রায় দুকিলো ওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। বড়ো বড়ো সংস্থায় এক হাজার বা দু-হাজার লিটার গরম জল তৈরি করার যন্ত্রও লাগানো হয়। সৌর গরম জল যন্ত্র পুরোপুরি পরিবেশ বান্ধব। এই যন্ত্র যেখানে বসবে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ রৌদ্র পড়তে হবে। এর রক্ষণাবেক্ষণ সামান্যই, আমাদের দেশে কর্ণাটকে সব চাইতে বেশি সৌর গরম জল করার যন্ত্র বসানো হয়েছে। ব্যাঙ্গালোর শহরে প্রায় প্রতি বাড়িতেই এই যন্ত্র দেখতে পাওয়া যায়। রান্নার কাজে সৌর শক্তির ব্যবহারও দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। পরীক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে এখন বাজারে উচ্চমানের সৌর কুকার পাওয়া যায়। এই কুকারে ঘরের ভিতরে রান্না করা যেতে পারে। সৌর কুকারে রান্না করার জন্য পর্যাপ্ত রৌদ্রের প্রয়োজন হয়। উত্তর ভারতে সৌর কুকার খুবই জনপ্রিয়। কমিউনিটি সোলার কুকারের সাহায্যে একসঙ্গে বহু মানুষের রান্না করা হয়। রাজস্থানের মাউন্ট আবুতে ব্রহ্মকুমারী আশ্রম এবং পন্ডিচেরির অরোভিলে এ ধরনের সৌর কুকারের সাহায্যে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার লোকের রান্না করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সৌর-তাপশক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়। মূলত মরুভূমি অঞ্চলে এ ধরনের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেখা যায়। উল্লেখ করা যেতে পারে আমাদের দেশে সৌর-তাপশক্তি নির্ভর কোনও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নেই। ভারতের জাতীয় সৌর মিশন প্রকল্পে শুধুমাত্র সৌর কোশ থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়। সিলিকন নির্ভর সৌর কোশ ভারতে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। অনেকগুলো সৌর কোশের সমন্বয়ে একটি সৌর প্যানেল তৈরি হয়। আগে এক একটি সৌর প্যানেল থেকে সর্বোচ্চ ১০০ ওয়াট মতো বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। বর্তমানে সৌর কোশের কার্যক্ষমতা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বড় মাপের সৌর প্যানেল তৈরি হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৫৫০ ওয়াট ক্ষমতার এক একটি সৌর প্যানেল পাওয়া যায়। যদিও ভারতের বেশিরভাগ সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৩৩০ থেকে ৩৫০ ওয়াট ক্ষমতার সৌর প্যানেল ব্যবহার করা হচ্ছে।
সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবচেয়ে বড়ো গুণ হল এগুলি পরিবেশ বান্ধব। বর্তমানে ভারতের প্রায় ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্রই কয়লা নির্ভর এবং এই সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ জলবায়ুর পরিবর্তনে প্রতক্ষ ভাবে দায়ী। ২০২১ সালে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত পরিবেশ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ লক্ষ মেগাওয়াট সবুজ বিদ্যুৎ তৈরি হবে, এর মধ্যে প্রায় ৩ লক্ষ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রই হবে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। গত শতাব্দীর শেষ দিকে ভারতের দুর্গম গ্রামগুলিতে ছোটো ছোটো সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা সৌর আলোক ব্যবস্থা বসানো হত। আমাদের রাজ্যে সুন্দরবন অঞ্চলে বেশ কিছু এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করা হয়। পরবর্তীকালে গ্রামে প্রচলিত বিদ্যুৎ যাওয়ার পর এ ধরনের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানোর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সারা বিশ্বে এখন গ্রিড সংযুক্ত সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। ২০০৮ সালে ভারতের প্রথম গ্রিড সংযুক্ত মেগাওয়াট মাপের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বসানো হয় পশ্চিমবাংলার আসানসোল অঞ্চলের জামুরিয়াতে। প্রকল্পটির ক্ষমতা ছিল ২ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এখনও চালু আছে। পরবর্তীকালে বড়ো বড়ো সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানোর কাজ আরম্ভ হয়। ২০১০ সালে জাতীয় সৌর মিশন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এই প্রকল্পে কুড়ি হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তীকালে প্রকল্পের ক্ষমতা এক লক্ষ মেগাওয়াট ধার্য করা হয়। এবং ২০২২ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যে পৌঁছোবার পরিকল্পনা করা হয়। আশার কথা ইতিমধ্যেই ভারতে প্রায় ৮০ হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানোর কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করা যায় বাকি ২০ হাজার মেগাওয়াটের কাজ এ বছরের মধ্যেই শেষ হবে। ভারতে গ্রিড সংযুক্ত সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র তিন ধরনের হয় —
ক) ছাদে বসানো সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যেগুলির ক্ষমতা কিছুটা কম হয়। (রুফ টপ সৌর বিদ্যুৎ)
খ) জমিতে বসানো সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এগুলি প্রধানত বড়ো মাপের হয়।
গ) ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
রুফ-টপ সৌর-বিদ্যুৎকেন্দ্র :
বর্তমানে রুফটপ সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যেগুলি ছাদে বসানো হয়, খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। স্কুল কলেজের ছাদে, হাসপাতালের ছাদে, কারখানার শেডের ওপর এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র বহুল ব্যবহৃত। ১ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসাতে মোটামুটি ৯০ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন হয় ; নির্বাচিত স্থানটিতে সবসময় সূর্যের আলোর প্রয়োজন। ১ কিলোওয়াটের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বছরে প্রায় ১৫০০ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমায়। রুফটপ সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১ কিলোওয়াট থেকে ২০০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত হতে পারে। পৃথিবীর সব দেশেই এখন রুফটপ সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানো হচ্ছে। জাতীয় সৌর-মিশনের অধীনে সারা দেশে ৪০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার রুফটপ সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
জমিতে বসানো সৌর-বিদ্যুৎ কেন্দ্র :
এ ধরনের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র সাধারণত বড়ো মাপের হয়। জাতীয় সৌর মিশনের অধীনে ৬০ হাজার মেগাওয়াট এ ধরনের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫০ হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। রাজস্থান, কর্ণাটক এবং অন্ধ্রপ্রদেশে বড়ো বড়ো সৌর পার্ক বসানো হয়েছে। রাজস্থানের ভাদলা সৌর পার্কে প্রায় ২২০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানো হয়েছে। এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। চিনের গৌগেতে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বৃহৎ সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রয়েছে। উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৫০০ মেগাওয়াট। বড়ো সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির বিদ্যুৎ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা নির্দিষ্ট মূল্যে উৎপাদনকারী সংস্থার কাছ থেকে কিনে নেয়। প্রতিটি রাজ্য বিদ্যুৎ মাশুল নির্দিষ্ট করার জন্য রয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ মাশুল নির্ণায়ক কমিশন। উল্লেখ করা যেতে পারে ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ৫ লক্ষ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিভিন্ন অপ্রচলিত শক্তির উৎস থেকে তৈরি করা হবে, যাতে দেশে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব।
ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র :
দেশে ব্যাপকহারে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানোর কাজ চলছে। সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিস্থাপনে অনেক জমির প্ৰয়োজন। প্রতি মেগাওয়াটে ৪ একরের মতন জমির প্রয়োজন হয়, ফলে আগামী দিনে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানোর জমি পাওয়া কষ্টকর হবে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কথা ভাবা হয়। কারণ ভারতে প্রচুর পরিমাণে জলাভূমি রয়েছে। ২০১৪ সালে ভারতের প্রথম ক্ষুদ্র ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির পরিকল্পনা করেছিলাম। কলকাতার উপকণ্ঠে রাজারহাট উপনগরীতে একটি জলাভূমিতে ১০ কিলোওয়াট ক্ষমতার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে, কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহয়তায় । পরবর্তীকালে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে দেশে আরও কিছু ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। সৌর-বিদ্যুতের দাম কিন্তু ধীরে ধীরে অনেকটাই কমে এসেছে। ২০০৯ সালে প্রতি ইউনিট সৌর বিদ্যুতের দাম ছিল প্রায় ১৭ টাকা, বর্তমানে সেই দাম ২ টাকায় নেমে এসেছে। সৌর বিদ্যুৎ অত্যন্ত পরিবেশ বান্ধব এবং প্রচুর কর্ম সংস্থানের সুযোগ করে দেয়। কিন্তু সৌর বিদ্যুতের সমস্যা হল আমরা রাতের বেলা এবং দুর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়ায় এই শক্তি পাই না। সারা বিশ্বব্যাপী সৌর শক্তি সঞ্চয়ের উপর গবেষণার কাজ চলছে, যদিও ব্যাটারির মাধ্যমে সৌর শক্তিকে সঞ্চয় করা যায় কিন্তু সেটা বড়ো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সৌর পাম্প স্টোরেজ প্রকল্প বা সৌর শক্তির সাহায্যে জলের তড়িৎ বিশ্লেষণ করে হাইড্রোজেন তৈরি করা ও পরে সেই হাইড্রোজেন থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করা প্রভৃতি বিষয়ের উপর ব্যাপক গবেষণার কাজ চলছে। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে সহজ সৌর বিদ্যুৎ সঞ্চয়ী ব্যবস্থা আমাদের হাতে আসবে। কারণ সারা বিশ্বে সৌরশক্তি বর্তমানে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় শক্তির উৎস। ভবিষ্যত বিশ্বে যে সব সৌর প্রকল্প নিয়ে কাজ হচ্ছে তার মধ্যে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মরুভূমি অঞ্চলে বৃহৎ মানের সৌর শক্তিকে আপতিত করা ও পরবর্তীকালে তার ব্যবহার অথবা বিশ্বব্যাপী একটি বৈদ্যুতিক গ্রিড লাইন তৈরি করে বিশ্বের এক প্রান্তে সৌরশক্তি উৎপাদন করে অপর প্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার মতো প্রকল্পের গবেষণার কাজ চলছে।
মজার ব্যাপার হল ভারতে যখন দিন আমেরিকায় তখন রাত। আর ভারতে যখন রাত আমেরিকায় তখন দিন। অর্থাৎ বিশ্ব বিদ্যুৎ গ্রিডে দিন বা রাত সবসময়ে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। বিশ্বকে দূষণমুক্ত রাখার ব্যাপারে সৌরশক্তির ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আগামীদিনে বিদ্যুৎ চালিত সব ধরনের যানবাহনই সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে চার্জ করা হবে। এ ব্যাপারে হাইওয়েতে বড়ো বড়ো সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানো হবে। এবার আসা যাক সৌর শক্তি ছাড়া অন্য পরিবেশবান্ধব শক্তির উৎসগুলোর ব্যাপারে।
বায়ু–শক্তি :
বায়ু শক্তি সৃষ্টির মূল কারণ সৌর শক্তি। বহুদিন আগে থেকেই আমরা বায়ুশক্তির ব্যবহার করে থাকি। হল্যান্ড (নেদারল্যান্ড)-এ প্রথম বায়ুশক্তির ব্যবহার করা হয়। মূলত সেচের কাজে বায়ু শক্তি ব্যবহার করা হত। গত শতাব্দীর আশির দশকে বাণিজ্যিকভাবে বায়ুশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা শুরু হয়। ভারতে বায়ুশক্তির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয় গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে। অপ্রচলিত শক্তি মন্ত্রকের উদ্যোগে বেশ কিছু বায়ুশক্তি চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র সেসময় দক্ষিণ ভারতে বসানো হয়। সেসময়কার বায়ুশক্তি চালিত টারবাইনগুলির কর্মক্ষমতা কম ছিল। এক একটি যন্ত্র থেকে ১০০ কিলোওয়াট মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন হত। পরবর্তীকালে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বায়ুশক্তি চালিত টারবাইন বসানোর কাজ শুরু হয়। বর্তমানে পৃথিবীতে ৫ হাজার কিলোওয়াট ক্ষমতার বায়ুশক্তি চালিত টারবাইন পাওয়া যায়। যদিও বেশিরভাগ এ ধরনের টারবাইন সমুদ্রের গভীরে বসানো হয়। কারণ সেখানে হাওয়ার গতিবেগ বেশি। উল্লেখ করা যেতে পারে বায়ুশক্তি চালিত টারবাইনের বিদ্যুৎ উৎপাদন সেই এলাকার বায়ুর গতিবেগের উপর নির্ভর করে। এই গতিবেগ আবার টারবাইনের উচ্চতার উপর নির্ভর করে। কোনও স্থানের গড় (বার্ষিক) বায়ুর গতিবেগ ১৮ কিমি প্রতি ঘণ্টা থেকে ২৫ কিমি প্রতি ঘণ্টায় পাওয়া গেলে সেস্থানে বায়ুশক্তি চালিত টারবাইন বসানোর কথা ভাবা যেতে পারে। অনেকগুলি বায়ুশক্তি চালিত টারবাইন একটি জায়গায় বসিয়ে বায়ুশক্তি ভিত্তিক খামার তৈরি করা হয়, এগুলিকে ইংরেজিতে “wind farm” প্রকল্প বলা হয়। ভারতের তামিলনাড়ুতে সর্বাপেক্ষা বেশি বায়ুশক্তি চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। মোট ক্ষমতা ৮ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। ভারতে প্রায় তিন লক্ষ মেগাওয়াট ক্ষমতার বায়ুশক্তি চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানো যেতে পারে। এর মধ্যে প্রায় এক লক্ষ সাতাশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র সমুদ্রের মধ্যে বসানোর হিসাবে ধরা হয়েছে। বর্তমানে ভারতে প্রায় ৪২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বায়ুশক্তি চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। ভারত সরকার ভবিষ্যতে সমুদ্র বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। পশ্চিম বাংলায় বায়ুর গতিবেগ কম, তাই এখানে বায়ুশক্তি চালিত বিদ্যুৎ ততটা কার্যকারী নয়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফ্রেজারগঞ্জে একটি ২ মেগাওয়াট ক্ষমতার বায়ুশক্তি চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য প্রতি ইউনিট ৩.৫০ টাকার কাছাকাছি ; সৌর বিদ্যুৎ থেকে কিছুটা বেশি। আগামী দিনে একই জমিতে বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানোর পরিকল্পনা চলছে। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টাওয়ারের উচ্চতা প্রায় ৮০ মিটার হয়। টাওয়ারের উপরে টারবাইন ও ব্লেড বসানো থাকে। বায়ু বিদ্যুৎ দূষণ মুক্ত বিদ্যুৎ উৎস, সারা বিশ্বে ব্যাপক হারে বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ছোটো জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র :
ভারতে প্রায় ১.৫০ লক্ষ মেগাওয়াট জল বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। সাধারণত জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কার্বন নিঃসরণ হয় না। কিন্তু বড়ো মাপের জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সময় পরিবেশ বিভিন্ন ভাবে বিপন্ন হয়ে থাকে। ছোটো জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি তুলনামূলক ভাবে পরিবেশ বান্ধব। ভারতে প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষুদ্র জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব, ইতিমধ্যে দেশে ৫ হাজার মেগাওয়াটের ছোটো বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানো হয়েছে। পশ্চিম বাংলার দার্জিলিং জেলায় এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেখা যায়। ভারতের অরুণাচল প্রদেশে জল বিদ্যুৎ তৈরি করার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এই রাজ্যে স্থাপন করা হয়েছে। জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিস্থাপন করতে বেশ কিছু সময় দরকার হয়, প্রাথমিক খরচও বেশি, কিন্তু প্রথম ১০ বছর চলার পর জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম অনেকটাই কমে আসে, তখন জল বিদ্যুতের দাম কয়লা বিদ্যুৎ অপেক্ষা অনেক কম হয়।
সৌর বিদ্যুৎ, বায়ু বিদ্যুৎ ও জল বিদ্যুৎ সম্বন্ধে কিছু কথা জানালাম। এছাড়া কিছু নবীকরণ যোগ্য শক্তি আছে যার ব্যবহার এখনও সীমিত; যেমন সমুদ্রের জোয়ার ভাটা থেকে বিদ্যুৎ, জৈব-ভর থেকে বিদ্যুৎ, জিয়ো থার্মাল বিদ্যুৎ ইত্যাদি। এই উৎসগুলি সবই পরিবেশ বান্ধব। মনে রাখা দরকার ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে আগামী শতকের শুরু পর্যন্ত পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫°- ২° সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে পৃথিবীর প্রতিটি দেশ যথাযথ উদ্যোগ নেবে। সেদিক থেকে বিচার করলে ভারতকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৫ লক্ষ মেগাওয়াট সবুজ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসাতে হবে। সে কাজটি কিন্তু খুবই কঠিন, এখন থেকে পূর্ণমাত্রায় পরিকল্পনা করা ও তার রূপায়ণ করা প্রয়োজন। আমাদের রাজ্য বিকল্প-শক্তি ব্যবহারের ব্যাপারে এক সময় একটি অগ্রণী রাজ্য ছিল, কিন্তু বর্তমানে বেশ কিছু রাজ্য আমাদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছে আমার অনুরোধ নবীকরণ যোগ্য শক্তি ব্যবহারে আরও বেশি গুরুত্ব আরোপ করা ও যথাযথ নীতি প্রণয়ন করা হোক। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে রাজ্যে অন্তত ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবীকরণ যোগ্য শক্তির উৎস থেকে তৈরি করতে হবে। কমাতে হবে আমাদের কয়লা নির্ভরতা, তবেই আগামী দিনে আমরা সবুজ পরিবেশ তৈরি করার কাজে এগিয়ে যেতে পারব। রাজ্যে প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও রাজ্যে জৈব-ভর (Biomass) থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী দিনে হাইড্রোজেন এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তির উৎস হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। সৌর শক্তির সাহায্যে জলের থেকে হাইড্রোজেন তৈরি করে সেই হাইড্রোজেনকে ‘সবুজ বিদ্যুৎ’-এর উৎস হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। ভারতবর্ষ ২০৭০ সালের মধ্যে শূন্য গ্রিন হাউস নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে প্রয়োজন সবুজ শক্তির উপর ব্যাপক গবেষণা। আশার কথা এ ব্যাপারে ভারতে অন্তত উঁচুমানের গবেষণার কাজ শুরু হয়েছে। সরকার লক্ষ্যে পৌঁছানোর ব্যাপারে বহুবিধ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।