কোভিড ১৯-উত্তর মানসিক সমস্যা

গোপাল শেঠিয়ার

এই মৃত্যুর উপত্যকা আমার দেশ নয়, এই কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন আজ আমরা। জৈব প্রাকৃতিক রাজনৈতিক সামাজিক এবং মানসিক — সব দিক দিয়েই আমরা আজ গভীর সংকটের দিকে চলেছি। আফগানিস্তানে আবার তালিবান ফিরে এসেছে। কাবুল থেকে একের পর এক ছেড়ে যাচ্ছে উদ্বাস্তু বোঝাই বিমানগুলো, তার চাকা আঁকড়ে মরিয়া মানুষ আকাশ থেকে খসে পড়ছে, এও দেখতে হল আমাদের। আমাদের এই পৃথিবীটা যে খুব ভালো ছিল এমনটা নয়। কাবুলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম মারফত যে দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্বের মানুষ, তার চেয়ে হয়তো আরও হৃদয়বিদারক মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে আমাদের ঘরের আরও কাছে; মায়ানমারের রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের উপর নেমে এসেছে একের পর এক বিপর্যয়, গণমাধ্যমে সেই বিপর্যয়ের ছবি আসেনি। কিন্তু কাবুল বিমান থেকে খসে পরা মানুষের ছবি এবং ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ৯৫ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে পড়া মানুষের ছবি আমরা দেখলাম। আমরা দেখলাম মানব সভ্যতার পতন।

আমাদের একমাত্র বাসস্থান পৃথিবী গ্রহটিকে আবাসযোগ্য করে তুলছি আমরা। এই বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এমন কোনও অঙ্গীকার করা কি আজ আমাদের সাজে? তার কারণ আরও ২০-৩০ বছরের মধ্যে হয়তো পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল আর মানুষের বাসযোগ্য থাকবে না।

বিভিন্ন দেশের প্রান্তিক মানুষেরা বিভিন্ন বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে আজও জীবন যাপন করে চলেছেন। উষ্ণায়ন ও সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে, মেরু অঞ্চলে হিমবাহ গলছে, আমাজনের জঙ্গল ও ক্যালিফোর্নিয়া থেকে শুরু করে ভারতের উত্তরাখণ্ডের সিমলি পালে আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে হেক্টরের পর হেক্টর অরণ্য, পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বন্যায় এবং কানাডার মতো শীত প্রধান দেশে তাপ প্রবাহে মারা গেলেন শতাধিক মানুষ।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা একুশ শতাব্দীর গোড়া থেকেই পৃথিবীর জলবায়ু পরিবেশের বিপর্যয় কথা বলেছেন, কিন্তু হয়তো আর আগের মতো পৃথিবীর জলবায়ু ও প্রিয় পরিবেশকে ফিরে পাব না, ইতিমধ্যেই যে প্রজাতির অর্ধেক বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে চিরতরে।

আমাদের মানবমন সেই ঘটে চলা অসংখ্য বিপর্যয়ের ঘাত ও অভিঘাতে আজ বিপন্ন। আতঙ্কের মধ্য দিয়ে ছুটছে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। কোভিড ১৯‐এর সংক্রমণের চরিত্রের বিষয়ে এবং এর গতি প্রকৃতি নিয়ে আমাদের সুস্পষ্ট কোনও মতামত বিশেষজ্ঞরা দিতে পারেননি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নানা সংশয়ে থেকেছে, মূল ধারার সংবাদ মাধ্যম এবং facebook, whatsapp-এর মতো গণমাধ্যমে ছড়িয়েছে বহু ভ্রান্ত ধারণা, বিজ্ঞানের নামে আধুনিক অনেক কুসংস্কার মানুষের মনে জন্ম দিয়েছে অকারণ নানা অনিশ্চয়তা আশঙ্কা ভয় ও আতঙ্ক। আতঙ্ক আমাদের মনে উদ্‌বেগ উৎকণ্ঠার লক্ষণ বাড়িয়ে তোলে, যার প্রভাব পরে আমাদের অনুভূতিতে আচরণে দৈনন্দিন জীবন যাপনে কাজের ক্ষেত্রে এবং পারস্পরিক সামাজিক সম্পর্কে। আমাদের মধ্যে ফুটে উঠল অতি সতর্কতা অতি সাবধানতা। একে অপরের সম্পর্কে সন্দেহ অসহিষ্ণুতা আর আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপরতা, কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেটা হিংসার রূপ নিয়েছে। শৈশব থেকে অর্জিত সহিষ্ণুতা সহমর্মিতার অনুভূতি মানবিক মূল্যবোধ যুক্তিবোধ সব এক ধাক্কায় উড়ে গেল। কোভিড চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক নার্স স্বাস্থ্যকর্মী সাফাই কর্মী এমনকি ভলিন্টিয়ার, কোথাও আবার সংক্রামিত ব্যক্তি ও পরিবার নানা রকম সামাজিক হেনস্তার শিকার হলেন। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল ব্যক্তিতে পরিবারে সমাজে এবং পারিবারিক বৃত্তের বাইরেও। কেউ কারও বাড়ি যেতে এমনকি করোনা হওয়ার আতঙ্কে বাড়ির বাইরে যেতেও আতঙ্কিত হল।

চিকিৎসা হবে তো? বেঁচে ফিরব তো? মরে গেলে লোকজন দেখতে পাবে তো? বাড়িতে যারা আছেন তাদের কী হবে? এরকম বিপন্নতার বোধ আমাদের মনের মধ্যে জায়গা করে নিল, উদ্‌বেগ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, মনখারাপ, বিষণ্নতার শিকার হলাম আমরা। এখনও বহু মানুষ আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা এবং অতিরিক্ত হাত ধোয়ার কারণে বাতিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।

চিনের সীমান্ত পেরিয়ে করোনা ভাইরাস আমাদের দেশে অশ্বমেধের ঘোড়া ছুটিয়ে চলে এল। সরকার বাহাদুরের হঠাৎ ঘুম ভাঙল, বলে উঠলেন জনতা কারফিউ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন সারাদেশ জুড়ে লকডাউন। মাত্র একদিনের চার ঘণ্টা নোটিশে বন্ধ হয়ে গেল কল-কারখানা অফিস আদালত স্কুল কলেজ এবং সমস্ত রকম যানবাহনের চলাচল, জারি করা হল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের অ্যাক্ট। যে আইনের বলে রাষ্ট্র হয়ে উঠল একমাত্র স্বেচ্ছাচারী শক্তিধর। সে আইনের বলে রাষ্ট্র একের পর এক জনবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে চলল। জনবিরোধী অনেক বিল পাস করে নিল, যার বিরুদ্ধে পথে নামার অধিকার হারিয়ে মানুষ আরও অসহায় হয়ে পড়ল। দেশবাসী কিছু জানার আগেই, যে-যেখানে ছিল সেখানেই আটকে পড়লেন। বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মরত লক্ষ লক্ষ শ্রমিক, স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী, চিকিৎসা পরিষেবা এবং অন্যান্য কাজে আটকে থাকা মানুষ, বাড়িতে ফেরার অপেক্ষায় মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাতে বাধ্য হলেন।

মানব মনের এমন চরম অবমাননা আমরা দেখলাম সংবাদমাধ্যমের মধ্যে। এমন অনেক ঘটনা মনকে বেদনায় আহত করেছে। লকডাউনে আটকে পড়া শ্রমিকদের অনেকেই আক্রান্ত হলেন তীব্র উদ্‌বেগ উৎকণ্ঠা বিষণ্ণতায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাইলের পর মাইল হাঁটা দিলেন নিজের গাঁ-এ ফিরতে। মাঝপথে অনেক শ্রমিকদের পথ থমকে গেল খিদা তৃষ্ণা নিয়ে। রেললাইন ধরে চলা রাতের অন্ধকারে মাল গাড়ি পিষে দিয়ে যায়। কিছু শ্রমিকদের দেহ পড়ে থাকে লাইনের ওপর। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ফিরতে থাকেন দিল্লি বোম্বাই চেন্নাই ব্যাঙ্গালোর আহমেদাবাদ হায়দরাবাদের রাজপথ ধরে। কখনো কখনো পুলিশি নির্যাতন অনাহার তৃষ্ণার্ত ক্ষুধার্ত শ্রমিকদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি কোনও সরকার। যাদের হাতে গড়ে উঠেছে শহর বাড়িঘর হাসপাতাল কলকারখানা। কোথাও তাদের থাকার জায়গা নেই। বন্ধ হয়ে গেছে ওদের জন্য আশ্রয়, খাদ্য, থাকার জায়গা।

লকডাউনের ছাত্র-ছাত্রীদের মনে উঁকি দিল অনিশ্চয়তা। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের নতুন নতুন খবর নানা রকম অনিশ্চয়তা অজানা আশঙ্কা উদ্‌বেগ উৎকণ্ঠা। বুক ধড়ফড় করা, হাত-পা কাঁপা কিংবা ঠান্ডা হয়ে আসা, ঘামতে থাকা, ঘাড়ে কিংবা পিঠে ব্যথা, মাথা ঘোরা বা মাথার যন্ত্রণা, কান গরম হয়ে যাওয়া পেটের মধ্যে অস্বস্তি, গা-গোলানো বা বমি বমি ভাব ইত্যাদি। মনের মধ্যে অস্থিরতা, অজানা আশঙ্কা ও ভয়। অনেক দূরের কোনও নেতিবাচক পরিণতি ভেবে মনের ভেতর জন্ম নিল উদ্‌বেগ উৎকণ্ঠা আতঙ্ক। করোনাতে আক্রান্ত হওয়ার ভয়, কাছের মানুষদের জন্য দুশ্চিন্তা, পড়াশুনা নিয়ে পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা, ভবিষ্যৎ নিয়ে দুর্ভাবনা, খেলাধুলা বন্ধ হওয়ার কারণে মন খারাপ, বন্ধুদের সাথে দেখা না-হওয়ার জন্য অস্থিরতা, কারো কারো মধ্যে দেখা দিল তীব্র মন খারাপ, বিরক্তি আর রাগের প্রকাশ। এই সময় স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বাড়ল ইন্টারনেট নির্ভরতা। পড়াশোনার কারণ ছাড়াও অনলাইন গেমস, ইউটিউব, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক নির্ভরতা। ক্লাস ওয়ানে পড়া শিশু থেকে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা বাধ্য হল অনলাইনে পড়াশোনার। দুঃখজনকভাবেই স্মার্ট ফোন না-থাকায় আত্মহননের ঘটনাও ঘটেছে এবং আজও ঘটে চলেছে। মাদকের মতোই অতি নির্ভরতার, অপব্যবহারে, হাতছানিতে মোবাইল বা ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়েছে বহু পড়ুয়া। ডিজিটাল মাধ্যম আমাদের কল্পনা শক্তিকে বাড়াতে সাহায্য করে না। বরং অনেক বেশি সংকুচিত করে। এই অতিমারি করোনা কালে লকডাউনের সময় মানসিক সমস্যার শিকার হয়েছে শৈশব ও কৈশোর। বেড়েছে গার্হস্থ্য হিংসা, শিশু নির্যাতন ইত্যাদি। আমরা যতটুকু জানতে পারি তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র।

এই লকডাউন এবং অতিমারিতে রাষ্ট্র এবং সমাজের অমানবিক আচরণ এক বিশাল ক্ষত সৃষ্টি করেছে মানবমনে। যার পরিমাপ করা বা সংশোধন করা আর সম্ভব না। রাষ্ট্রের দাঁত নখ বেরিয়ে পড়েছে সর্বত্র, শিক্ষা,স্বাস্থ্য, কাজের অধিকার এবং নিরাপত্তাহীনতায়। অবিশ্বাসের এক বাতাবরণ তৈরি হয়ে গেছে। মানুষ মানুষে বিভেদ, সন্দেহ মাথা চাড়া দিয়েছে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে দুই পা এগিয়েও তিন পা পিছিয়ে গেলাম আমরা। আবার স্বস্থানে ফিরতে গেলে কতটা মূল্য চোকাতে হবে আমাদের জানা নেই। সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত বিদ্যালয় শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকতা গৃহবন্দি। দীর্ঘ সময় আমাদের রাজ্য সহ গোটা দেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা ছেদ পড়ে গেল। ছাত্র-ছাত্রীদের নিত্যনৈমিত্তিক রুটিনের চরম বিঘ্ন ঘটে গেল। প্রথম দিকে সাধারণ কয়েক দিনের ছুটির মতো মনে হল যতদিন গড়িয়েছে ততই সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক সমস্যা ছিল এটা ঠিক। যেমন পরীক্ষার কাঠামোগত, প্রশাসনিক পাঠদান সংক্রান্ত এবং ছাত্রকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার। এই সময় প্রাত্যহিক রুটিনের পঠনপাঠন থেকে শিক্ষার্থীরা বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। ধীরে ধীরে পড়াশোনার প্রতি অনীহা দেখা দেয়, যে অনীহা ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে প্রাইভেট টিউশন নির্ভর পড়াশোনা অনেক বৃদ্ধি পায় এবং পাবে। অন্যদিকে অনলাইন পঠনপাঠনের ব্যবস্থা শুরু হয়ে গেল। বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যবহার করার প্রবণতা দেখা গেল সরকারি তরফে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সংস্পর্শে না-এসে যাতে পাঠ প্রক্রিয়া সচল রাখা যায় তার ব্যবস্থা হল, এখানেই শুরু হল এক ধরনের বৈষম্য। সারা দেশ জুড়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে। আর্থিক অনটন ও পারিবারিক এবং পারিপার্শ্বিক সহযোগিতার অভাবের কারণে একদল অনলাইনে পঠনপাঠনের সুবিধা পেল আর অন্য দল বঞ্চিত হয়ে রইল। 

করোনা ভাইরাস জনিত মহামারির কারণে ভয়াবহ আর্থিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। বেড়েছে বেকারত্ব আর্থিক অনটন। শিশু শ্রমিকের হার বেড়ে চলেছে। অভিভাবকদের আর্থিক অনটনের ফলে কন্যা সন্তানদের বিবাহ দিয়ে দায়িত্ব থেকে মুক্তি চাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের বৈষম্য দেখা দিয়েছে। সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত বিদ্যালয়ের সকল কর্মচারী বেতন পেয়েছেন। কিন্তু বেসরকারি বিদ্যালয়ের কর্মচারীদের অনেকে সঠিকভাবে বেতন পায়নি। লকডাউনে অনলাইন পড়াশোনার ক্ষেত্রে কম্পিউটার ল্যাপটপ মোবাইল ফোনের মতো ইলেকট্রনিক্স উপকরণগুলির অতিরিক্ত ব্যবহারের জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে নানারকম ক্ষতির সম্মুখীন। নেশার মতো আসক্তিতে পরিণত হল এইসব ইলেকট্রনিক্স উপকরণগুলি। মোবাইলের ব্যবহারের উপর আসক্তি অনেকটাই বেড়ে গেল। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চা থেকে বঞ্চিত হল। এছাড়া সহপাঠী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা তথা শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে মেলামেশা শিশুর সামাজিকীকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই সব কিছু থেকে বঞ্চিত হয়ে সারাদিনের অধিকাংশ সময়টা বন্দি অবস্থায় তারা পড়ে রইল ঘরের কোণে। অনেক পরিবারে শিশুদের পড়াশোনায় ছেদ ঘটেছে, নতুন করে সবকিছু আবার গড়ে উঠবে সে সম্ভাবনাও কম ।কিন্তু এর জন্য যে মূল্য আমাদের দিতে হবে তার হিসাব আর আমরা কী কখনও করতে পারব? এমত অবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ভবিষ্যতের নিরাপত্তার অভাববোধ থেকে জন্ম নিয়েছে উদ্‌বেগ উৎকণ্ঠা, ভয়, অবসাদ, বিষণ্ণতা এবং নানা রকম মানসিক সমস্যা।

২০২৩ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা চার লক্ষ কম। সহজেই বোঝা যায় শিক্ষা ব্যবস্থা কতটা ক্ষতি হয়ে গেছে। আমাদের নতুন করে অধিকার আন্দোলনে ফিরে যেতে হবে। কাজের অধিকার নিরাপত্তার অধিকার সুষম খাদ্যের অধিকার বাসস্থানের অধিকার এবং চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার। পরিবেশ বাঁচিয়ে তোলার অধিকার আন্দোলনে আরও বেশি বেশি করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের আরও দায়িত্ব বেড়ে গেল মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকার জীবন জীবিকা ও যাপনের অধিকার আগামী দিনে অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠবে। ভূমিষ্ঠ শিশুর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে নিতে হবে আমাদের আগামী দিনের আশু কর্মসূচি।

ভারতে কোভিড পরবর্তী সময়ে আমরা একটু দেখে নেব পরিসংখান কী বলছে? ভারতে করোনায় মৃত্যু হার ছিল ১.৫ শতাংশ; অন্যদিকে প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যুর হার সেখানে ৭.৩ শতাংশ, ভারত এবং নাইজেরিয়ায় জন্মকালীন শিশু মৃত্যুর হার এক-তৃতীয়াংশ। সারা ভারতবর্ষে ৭১ শতাংশ নাগরিক অপুষ্টির শিকার। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যু বেড়েছে ১৮.২ শতাংশ। দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যু বেড়েছে দুই শতাংশ। মানসিক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। এই সময় আত্মহত্যা বেড়েছে ৭ শতাংশের বেশি।

কর্মচ্যুত শ্রমিক, বেকার যুবক, ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন ধরনের পেশায় নিযুক্ত মানুষের আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে। কর্মসংস্থান, বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান