ডিপ্রেশনের দিন-রাত্তির

সরসিজ সেনগুপ্ত

এ কী তুমি এরকম করে শুয়ে থাকলে হবে? আরও কত লোক তোমার থেকে কত খারাপ আছে কিন্তু তারা তো কেউ এভাবে শুয়ে থাকে না। একটু মনে জোর করে উঠে নিজের কাজগুলো করো এবার। — সখেদে জানায় লোকটার বৌ।

আমাদের এই লোকটা আর যে কোনও পাঁচ জন লোকের মতোই আদ্যন্ত একজন সংসারী মানুষ। ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখের সংসার তার। এমনিতে স্নেহপ্রবণ, দায়িত্বশীল, চারপাশ নিয়ে ওয়াকিবহাল ও সংবেদনশীল একজন লোক। নিয়মিত অফিসে যায় লোকটা, দায়িত্ব নিয়ে দশটা-পাঁচটা কাজও করে। কিন্তু মাঝে মাঝে কী যে হয় আমাদের এই লোকটার। তখন কীরকম যেন নেতিয়ে পড়ে ও। যে কারণে লোকটার সহধর্মিনীর এই অনুযোগ।

তাই তো লোকটা ক-দিন ধরে এভাবে শুয়ে আছে কেন? কাকে বোঝাবে ও, কী করে বোঝাবে যে কিছুই ভালো লাগছে না ওর। আবার একরাশ নিঃসঙ্গতা এসে গ্রাস করছে ওকে। ভয়ংকর এক নিঃসঙ্গতা। অথচ ও তো আসলে নিঃসঙ্গ নয়, অনেক শুভানুধ্যায়ী বন্ধু-বান্ধব আছে ওর চারপাশ ঘিরে। কেউ হাঁটা পথে খুব কাছে, কেউ বা একটা মাত্র ফোন-কল দূরে। তবু ভালো লাগছে না ওর। কেন ও নিজেও জানে না আর ওর এই না-ভাল লাগা ব্যাপারটা কাউকে বোঝাতে পারছে না ও। 

হার্টের সমস্যা? না। সুগার? না। হাত ভেঙেছে? পা ভেঙেছে? সর্দি-জ্বর-কাশি?— এসব কিছুই না। লোকটার স্রেফ ভালো লাগছে না। লাগছে না। লাগছে না। সবাই ভাবছে এবং বলছে এটা ওর একধরনের বিলাসিতা। কিন্তু ও নিজে জানে এটা তা নয়, এটা ওর একধরনের অসুখ। ডিপ্রেশন। যেটা বোঝানো যায় না কাউকে। বুঝতে পারে না বা চায় না কেউ। এমনকী খুব কাছের লোকেরাও। তারা ভাবছে শুয়ে শুয়ে নিছক কুঁড়েমি করছে ও। ওর বিরক্ত লাগছে বাইরের মাইকের গাঁক গাঁক করে বেজে যাওয়া গান। ওর বিরক্ত লাগছে চতুর্দিকের ফুর্তির আবহ, কারণ তাতে শামিল হতে পারছে না ও নিজে। মনে হচ্ছে, এতো আনন্দের কী আছে চারপাশে। এই মুহূর্তে তিরিক্ষে মেজাজে আছে ও। আর একটু পরে এই মেজাজটা চলে গিয়ে পড়ে থাকবে অবর্ণনীয় এক ক্লান্তিবোধ। যে ক্লান্তি ওকে করতে দেবে না, দেয় না কিছুই। কিন্তু কাউকেই বোঝাতে পারে না ও, ওর এই ক্লান্তির কথা।

ওর এই ডিপ্রেশন ঠিক করতে বৌ প্রায় জোর করে ওকে ধরে নিয়ে যায় মাল্টিপ্লেক্সে সিনামায়। জোর করে বসে থাকে ও হলে, কখনও বা চোখ বন্ধ করে। বন্ধুরা আসে আড্ডা মারতে। আত্মীয়দের বাড়ি নিয়ে যেতে চায় ওকে ওর বৌ, যাদের ও ভালবাসে তাদের কাছে। কিন্তু কী করে বোঝাবে ও এই হাসি-কলরব সব কিছুই এখন অসহ্য ঠেকছে ওর কাছে, ভালো লাগছে না মানুষের ভিড় একটুও। সাধারণ অবস্থায় যে গল্পের বই পড়তে এতো ভালোবাসে, সেটাই পড়তে ইচ্ছে করছে না ওর। কিছু কিছু গান অবশ্য শুনতে ভালো লাগছে বা ইচ্ছেও করছে কিন্তু কিন্তু বিছানা ছেড়ে উঠে বসে গান চালানোর ঝক্কির কথা ভেবে পিছিয়ে যাচ্ছে ও। ফ্যালফ্যাল করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখছে, ঘুরে চলেছে সেকেন্ডের কাঁটাটা; একটু একটু করে সময় চলে যাচ্ছে ওর জীবন থেকে স্রেফ কিচ্ছু না করে।

সবাই বাইরে থেকে দেখছে ও সুস্থ-সবল। ওর কর্মক্ষেত্রে, বাড়ির লোকজন সবার কাছেই ও একজন পরিপূর্ণ সুস্থ-সবল পূর্ণবয়স্ক মানুষ। অনেক দায়দায়িত্ব ওর ওপর। সংসারের, কর্মক্ষেত্রের। একরাশ কাজ জমে চলেছে প্রতিনিয়ত কিন্তু কিছুই করতে পারছে না ও। কেন পারছে না, সেটা বোঝানো মুস্কিল যাদের এমনটা কখনও হয়নি বা হয় না তাদের। এটা শুধু তারাই বোঝে যারা এর মধ্যে দিয়ে গিয়েছে বা যাচ্ছে।

ওর দুশ্চিন্তা হচ্ছে সবকিছু, সবাইকে নিয়ে। ওর আশেপাশের মানুষজন যাদের ও এত ভালোবাসে তাদের কোনও অনিষ্ট বা ক্ষতির আশঙ্কা করছে লোকটা। এলোমেলো ভাবে লোকটা চিন্তা করছে দেশ ও রাজ্যের রাজনীতি আর ভবিষ্যৎ নিয়ে, ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে এমনকী লোকটা চিন্তা করছে ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়েও। এইসব নিয়ে ভেবে ভেবে কোনও কূল পাচ্ছে না লোকটা। ও ভাবছে, কেবল ভেবেই চলেছে। ভাবতে ভাবতে রাত্তিরে ঘুম হচ্ছে না ওর। যদিও মুখে রুচি নেই কিন্তু কখনও কখনও সব কিছু ভুলে থাকার জন্য এন্তার খেয়ে ফেলছে লোকটা। রাক্ষসের মতো খেয়েই যাচ্ছে খালি।

চান-খাওয়া-দৈন্যন্দিন সব কাজকর্মের ব্যাপারেই আছে শুধু তীব্র এক অনীহাবোধ। যেটুকু ঘুম হয় তারপর সকালে বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে করে না লোকটার। ঘুম থেকে উঠে যে মুখ ধোবে এমন কী সেটাও যেন ঠেলে করতে হয় ওকে। মনে হচ্ছে বিশাল, স্থূলকায় এক মালগাড়ির মতো পড়ে আছে ও। সকালে ওঠার পর কেউ যদি ওর শরীরের সঙ্গে একটা বাড়তি ইঞ্জিন জুড়ে দেয় একমাত্র তাহলেই চলতে পারবে ও, নিজের কাজগুলো করে উঠতে পারবে কোনও মতে। আর সেটা হচ্ছে না বলেই এরকম নির্জীবভাবে সারাদিনটা প্রায় শুয়ে কাটাচ্ছে লোকটা আর শুনে যাচ্ছে সবার অনুরোধ, উপরোধ। ওর আশেপাশে যারা আছে তারাও বিপন্ন বোধ করছে লোকটার এমতাবস্থা নিয়ে। এই লোকটাই তো যখন ঠিক থাকে কত কাজ করে, হৈ-চৈ আর, ফুর্তিতে মশগুল করে রাখে ওর চারপাশটাকে। কিন্তু থেকে থেকে কী যে গ্রাস করে মানুষটাকে কে জানে। লোকটা মুখে খালি বলে, ডিপ্রেশন। আরে ডিপ্রেশন তো সবারই হয়, এরকম তো হয় না, তাহলে? কী করে বোঝাবে ও এই মনখারাপটা সাধারণ আর পাঁচটা মনখারাপের মতো ঠিক নয়। এই মনখারাপটা প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খেয়ে নিস্তেজ করে দেয় ওকে।

ওর তখন খালি নিজের অপারগতা বা অক্ষমতাগুলোর কথাই মনে আসে ঘুরে ফিরে। মনে হয় কিছুই করতে পারল না নিজে এ জীবনে আর পারবেও না। সন্দিহান হয়ে পড়ে নিজের চেহারা নিয়েই কিন্তু একটু যে তার যত্ন নেবে উঠে সেটুকুও পারে না তখন। সব ব্যাপারে, সমস্ত কনফিডেন্স উবে যায় ওর। নিস্তেজ, দ্যুতিহীন চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে অন্যদের মুখের দিকে।কেউ জানতেও পারে না নিজেকে নিয়ে কতটা উদ্‌বিগ্ন হয়ে আছে লোকটা নিজেও, চোখের জলও ফেলছে সবার অজান্তেই। কেউ সামান্যতম কিছু বললেই চট করে গায়ে লেগে যাচ্ছে ওর। সবাই যেন একসঙ্গে ষড় করে পেছনে লাগছে ওর, কথা বলছে ওকে নিয়ে আর সব বুঝেও কিছু করতে পারছে না ও।

চিন্তা হয় খুব ওর আশেপাশের ঘনিষ্ঠ জনদের নিয়ে, যদি তাদের কোনও বিপদ-আপদ ঘটে তাহলে কী করবে ও? কী করে সামাল দেবে সেইসব। কিংবা যদি কোনও মারণরোগ হয়ে থাকে ওর? এখন, ঠিক এই মুহূর্তে কত কাজ পড়ে আছে লোকটার — কাজে যাওয়ার কথা না হয় বাদই দিলাম, তার বাইরে ইলেক্ট্রিক বিল, ফোন বিল, গ্যাসে খবর দেওয়া, ট্যাক্স জমা করা বাড়ির ও নিজের এইসব নিত্যনৈমিত্তিক দৈনন্দিন কাজ। এসব সাধারণত ইন্টারনেটেই করে থাকে ও। কিন্তু কমপিউটারে বসবে কী, কোনও কিছুর পাসওয়ার্ডই মনে করতে পারছে না যে ও। কী করে ও এইসব সামাল দেয় স্বাভাবিক অবস্থায় এই মুহূর্তে ভেবে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছে ও। কারণ ঠিক এই মুহূর্তে ওর নিজেকে একটা বিশাল নির্জীব জড় পদার্থ বলে মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, এভাবে পৃথিবীর অক্সিজেন ধ্বংস করার চেয়ে ভালো বোধহয় নিজের থেকে সরে যাওয়া।কী দরকার এইভাবে অন্যদের বোঝা হয়ে পড়ে থাকার? সবাই অবশ্য বোঝাচ্ছে ওকে যে ওর ঠিক থাকাটা, ঠিক হয়ে ওঠাটা সবার পক্ষে আর ওর নিজের পক্ষেও খুব জরুরি কিন্তু তা পারছে কোথায় ও?

তাই মাঝে মাঝে এরকমটাও মনে হচ্ছে ঘুমের ওষুধ খেয়ে একেবারে ঘুমিয়ে পড়লে কীরকম হয়? কিংবা যদি লাফ দেয় ছাদ থেকে বা ওপরের বারান্দা থেকে? অথবা ঝাঁপ দেয় মেট্রোর সামনে? কিন্তু এখনও সাহসে কুলোচ্ছে না ওর। হয়তো আর ক-দিন পরে সেটা ও পারবে।

এর সঙ্গে আরও সর্বনাশ হয় (অবশ্য সবার নয়) যখন এই সময় লোকটার সিগারেট খাওয়া বা মাদকের প্রতি আসক্তি বেড়ে যায় হঠাৎ। সেই মুহূর্তে ঠিক যেন টনিকের কাজ করে এগুলো, আদতে যা আদৌ নয়।

আসলে এটাই হলো clinical depression-এর স্বরূপ। যে অসুখে আমাদের এই লোকটার মতো ভুগে থাকেন অজস্র মানুষ জাতি-ধর্ম-বয়স-লিঙ্গ নির্বিশেষে।বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে থাকেন পারিপার্শ্বিক ও স্বাভাবিক জীবন থেকে। যার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত : 

A mental health disorder characterised by persistently depressed mood or loss of interest in activities, causing significant impairment in daily life. Possible causes include a combination of biological, psychological and social sources of distress. Increasingly, research suggests that these factors may cause changes in brain function, including altered activity of certain neural circuits in the brain.

The persistent feeling of sadness or loss of interest that characterises major depression can lead to a range of behavioural and physical symptoms. These may include changes in sleep, appetite, energy level, concentration, daily behaviour or self-esteem. Depression can also be associated with thoughts of suicide.

The mainstay of treatment is usually medication, talk therapy or a combination of the two. Increasingly, research suggests that these treatments may normalise brain changes associated with depression.

এই মুহূর্তে তাই লোকটার আসলে যাওয়া দরকার একজন কাউন্সেলার বা কোনও মনোরোগ বিশেষজ্ঞর কাছে। কিন্তু এর গুরুত্বই বুঝে উঠে পারেন না বাড়ির লোক বা লোকটা নিজেও। ভাবে আপনা থেকেই সেরে যাবে এই ভয়ংকর অসুখ। আর তাই বেশির ভাগ মানুষই চিকিৎসা করান না বা করে উঠতে পারেন না এই অসুখের আমাদের এই লোকটার মতোই, যার পরিণতি কখনও কখনও ভয়ংকর হতে পারে। 

চিকিৎসা করাবে কী করে? প্রথমত তো এটা বোঝানোই যায় না সাধারণ মানুষকে। যে লাগাতার কারও যদি মনখারাপ হয় বা চলে অবিলম্বে পেশাদার চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া দরকার তাঁর। কারণ সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা এ নিয়ে অপরিসীম। বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, একটু মনের জোর করলেই একজন এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারে। কিন্তু আসলে তা নয়। এইসব ক্ষেত্রে আমাদের ওই লোকটার মতো সবারই প্রয়োজন সাইকিয়াট্রিস্টের সাহায্য। ওষুধ না-খেলে এর থেকে বেরোনো প্রায় অসম্ভব। কিন্তু এই নিয়ে অদ্ভুত এক ট্যাবু কাজ করে আমাদের সমাজে।কেউ সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে গিয়েছেন বা তাঁদের সাহায্য নিচ্ছেন শুনলেই দেশে-বিদেশে যেন একঘরে করে দেওয়া হয় একজনকে।

প্রয়োজনে লোকে হার্টের ডাক্তার থেকে, নিউরো-সার্জেন-এন্ডোক্রিনোলজিস্ট মায় সব ধরনের ডাক্তারের কাছে যেতে রাজি কিন্তু সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নয়। সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়া মানেই যেন ‘পাগল’ হয়ে গেলাম আমি। আরে ‘পাগল’ শব্দটার যে আদতে কোনও অর্থই হয় না কী করে বোঝানো যায় সবাইকে? আগ বাড়িয়ে কাউকে এ নিয়ে বলতে গেলে বলবে, কেন আমি কি পাগল নাকি? সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে কেন যাব? কী করে বোঝানো যায় যে ‘পাগল’ বলে কিছু হয় না। বিভিন্ন নিউরো-ট্রান্সমিটার বা হরমোনজনিত কারণে বা তাদের মাত্রা পরিবর্তনের কারণেই মানুষ মনের অসুখের শিকার হন। গভীর কোনও মানসিক আঘাত থেকেও হতে পারে এই জিনিস। আর অন্য সব অসুখের মতো এ অসুখও চিকিৎসাধীন ও অনেকক্ষেত্রেই নিরাময়যোগ্য। কেউ যদি সুগারের ওষুধ খেতে পারে, প্রেশারের ওষুধ খেতে পারে, সর্দিকাশি হার্টের ওষুধ খেতে পারে নিয়মিত — তাহলে মনের অসুখের জন্য ওষুধ খেতে বাধা কোথায়?

অনেকেই আছেন যাঁরা আবার চিকিৎসা শুরু করিয়েও বন্ধ করে ফেলে সাময়িক উপশমের পরেই। কারণটা অর্থনৈতিক হতে পারে, মনের অসুখের চিকিৎসার খরচ কম নয়। আর যে দেশে লোকে সাধারণ শরীরের অসুখের চিকিৎসা খরচের অভাবে করাতে পারে না সেখানে মনের অসুখের চিকিৎসা করানো তো বিলাসিতা মাত্র। কখনও বা বন্ধ করে দেয় চিকিৎসা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে। অন্যান্য অনেক অসুখের ওষুধের মতো এই জাতীয় অসুখের ওষুধেরও অনেক সময় কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। কিন্তু তাই বলে চিকিৎসা বন্ধ করাটা কোনও সমাধান হতে পারে না। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও আছে এখন যাঁরা এই ধরনের অসুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্য দিয়ে থাকেন প্রয়োজনে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান জালিয়াতিও করে থাকে সুযোগ বুঝে, সমস্যা অনেক।

এ নিয়ে আসলে খোলা মনে আলোচনার প্রয়োজন। যতোদিন না মানুষ তা করবে, সাইকিয়াট্রিস্টের সাহায্য নেবার ব্যাপারে সমাজে ট্যাবু থাকবে ততদিন আমাদের ওই লোকটার মতো কষ্টই পেতে থাকবে সে শুধু, সবাই ভুল বুঝবে তাকে।

পরিশেষে বলি, আমাদের এই লোকটা যাকে দিয়ে এ লেখার গোড়াপত্তন করেছিলাম সে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে গিয়েছিল। বা বলা ভাল না গিয়ে উপায় ছিল না ওর। ডিপ্রেশনে ভুগতে ভুগতে ভুগতে একটা সময় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল লোকটার। না রাতারাতি কোনও ম্যাজিক ঘটে যায়নি ওর জীবনে। কিন্তু ডাক্তারের কথা শুনে, সাইকিয়াট্রিস্টের ওপর নির্ভর করে ওষুধ খেতে শুরু করেছিল লোকটা। একটু সময় লেগেছিল ঠিকই কিন্তু আস্তে আস্তে সেরে উঠেছিল ও। আবার ফিরে যেতে সক্ষম হয়েছিল নিজের দৈনন্দিন জীবনে। লোকটা এখন ভালো আছে। নিয়মিত সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, ওষুধও ওর আগের থেকে অনেক কম খেতে হয় এখন। আসলে সেরে ওঠার পর লোকটা এটাও বুঝতে শিখেছে, এইভাবে নিরন্তর নিজে কষ্ট পেয়ে যাবার থেকে এবং তারজন্য অন্যদের, কাছের জনদের বিপাকে ফেলার থেকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটা জীবনে অনেক জরুরি কারণ জীবন তো একটাই!

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান