মনোজগৎ-এ টানাপোড়েন, বিচ্ছিন্ন কাফকার নায়ক

পার্থ সারথি বণিক

Cry, dearest, cry, the time for crying has come! The hero of my little story died a while ago. To comfort you, I want you to know that he died peacefully enough and reconciled to all. [১]

গ্রেগর নামের একটা বীভৎস অতিকায় কীটের মৃত্যু হল। সংসারের জোয়াল কাঁধে নিয়ে সংসার-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এক অ-মানুষের অস্তিত্ব শেষ পর্যন্ত নাকচ হয়ে গেল। গ্রেগর সামসা মৃত্যুর শান্তির মধ্যে ঢলে পড়েছে, আর গ্রেগরের স্রষ্টা কাফকা, প্রেয়সী ফেলিস বাউয়ারকে চিঠিতে লিখছেন, Cry, dearest, cry…। অস্তিত্বের এই কারাগার, যন্ত্রণা, হাহাকার কাফকার নিজের মনের জগতে যেমন, তেমনই তাঁর কাহিনির চরিত্রদেরও মনোজগৎ-এ টানাপোড়েন তৈরি করেছে। কাফকার পাঠক তাঁর লেখায় একটা বিত্ত-মুখী সমাজের সাধারণ মানুষের মানসিক বিচ্ছিন্নতার কাহিনি শোনে; অস্তিত্বের সংকট, প্রজাতি-সত্ত্বার সংকটের কাহিনি শোনে। আইন পড়ে সারাদিন বিমা কোম্পানিতে চাকরির ঘানি টানতে টানতে মনে যত ক্লেদ জমত কাফকা তা স্খালনের পথ খুঁজে নিতেন লেখার খাতায়। কাফকা ডায়েরি লিখেছেন; তাঁর জীবনে আসা বিভিন্ন নারীকে চিঠি লিখে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মনের দ্বন্দ্বের কথা প্রকাশ করেছেন; গল্প লিখতে বসে প্রথম লাইনের বেশি কখনো কখনো এগোতে পারেননি; নিজের লেখা, যা আজকের পাঠকের কাছে অমূল্য সাহিত্য-সম্পদ বলে বিবেচিত, তেমন লেখাকে মনে হয়েছে জঘন্য; তাঁর মৃত্যুর পরে যেন তাঁর অপ্রকাশিত লেখাজোখা পুড়িয়ে ফেলা হয় এমন নির্দেশও দিয়েছেন; তবু কাফকাকে লিখতে হয়েছে, লিখতেই হয়েছে :

My mode of life is devised solely for writing, and if there are any changes, then only for the sake of perhaps fitting in better with my writing; for time is short, my strength is limited, the office is a horror, the apartment is noisy… [২]

৪১ বছরের জীবনে (১৮৮৩-১৯২৪) শরীরের ব্যাধি ফ্রানৎস-এর মনের মধ্যে অনিশ্চয়তার বোধ তৈরি করেছিল। কাফকার বাবা ছিলেন বোহেমিয়া থেকে প্রাগে চলে আসা একজন সফল ব্যবসায়ী, এবং আর দশটা মূলধারার জার্মান ইহুদি পরিবারের মতোই তাঁর পরিবারও তথাকথিত ‘উদার’ বুর্জোয়া মূল্যবোধ গ্রহণ করেছিল, এবং তেমনই এক সাংস্কৃতিক পরিবেশে ফ্রানৎস বড়ো হয়েছেন। ছোটোবেলা থেকেই কর্তৃত্বপূর্ণ বাবার প্রতি ভালোবাসা ও ভয়, এবং পরবর্তী জীবনে ফেলিসের সঙ্গে বিয়ের গাঁটছড়ায় বাঁধা পড়ার ইচ্ছা এবং অনিচ্ছা [৩] কাফকার মনকে সংকটে জর্জরিত করেছে। সেই সংকটকে তিনি বুনে দিয়েছেন তাঁর সাহিত্যে। তাঁর কাহিনি পাঠককে বারবার নিয়ে গেছে অনতিক্রম্য বিচ্ছিন্নতাবোধের এক ঊষর জমিতে;  ভালোবাসা সেখানে অস্তিত্বের দাবির কাছে মাথা নোয়ায়, সেখানে কর্তৃপক্ষের নজরদারি প্রতি পদক্ষেপে মানবসত্তাকে খাটো করে, কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রবৃত্তিতে সেখানে বাবা ছেলেকে আত্ম-ধ্বংসে প্ররোচিত করতে দ্বিতীয়বার ভাবেন না। 

কাফকার কুশীলবেরা অ্যারিস্টটলীয় হামার্সিয়া-পেরিপেতেইয়া-এনাগনরিসিস-এর পথ ধরে অমোঘ পতনের দিকে হাঁটে না। ‘চরিত্রই ভবিতব্য’ গোছের দর্শনও তাদের জন্য  নয়। তাঁর কুশীলবেরা প্রচলিত অর্থে হয়তো নায়ক নন। তাঁদের স্বতন্ত্র সত্তায় আমরা  আমাদের সমসাময়িক এই শ্রম-সমৃদ্ধ সমাজের সাফল্য-বঞ্চিত মানুষের মানসিক দ্বন্দ্ব, বিচ্ছিন্নতার শরীরী প্রকাশ দেখি। সাফল্য-বঞ্চিত মানুষের এই সমাজমনটা কিন্তু ইউরোপে শিল্প বিপ্লবেরই  ফলশ্রুতি। সেই ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীতেই বাজারমুখী ইউরোপীয় সভ্যতার কল-সমৃদ্ধ অগ্রগতি মানুষের ‘শ্রম’-কে আত্মসাৎ করছিল।  ব্যাপক শিল্পায়ন এই সুযোগটা পুঁজির লগ্নিকারীদের দিচ্ছিল। আজও দেয়। শ্রমিক তাঁর উৎপাদন থেকে, উৎপাদন পদ্ধতি থেকে, তাঁর প্রজাতি-সত্তার থেকে, এবং সর্বোপরি নিজের থেকে প্রতিনিয়ত বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এই বিচ্ছিন্নতা মানুষকে শক্তিহীন করে, অমানুষিক অস্তিত্বে ঠেলে দেয়, তাকে ধ্বংস করে [৪]। কাফকার কুশীলবদের মানসিক দ্বন্দ্বে আমরা এই বিচ্ছিন্নতাকে দেখতে পাই; মনোভঙ্গি, আচরণে অস্তিত্ববাদের প্রতিধ্বনি শুনি।আবার কখনো পিতা-পুত্রের দ্বান্দ্বিক অবস্থানে অয়েদিপাউস উঁকি দিয়ে যান।কাফকার কাহিনির অন্তরকে ছোঁবার জন্য আমরা মূলত তাঁর বড়ো গল্প ‘মেটামরফোসিস, এবং ছোটো পরিসরে তাঁর ছোটো গল্প ‘দ্য জাজমেন্ট’-কে বুঝবার চেষ্টা করব, এবং ‘দ্য ট্র্যায়াল’ উপন্যাসটিকে ছুঁয়ে যাব। 

নিজের সত্তার থেকে বিচ্ছিন্নতার এক বিন্দু থেকে কাফকার বড়ো গল্প ‘মেটামরফোসিস’-এ গ্রেগরের কাহিনি শুরু হয়। সে কাহিনির চরিত্রদের মনের চোরাস্রোত পাঠককে আমাদের আজকের পৃথিবীর মানুষের বিচ্ছিন্নতার কাহিনি শোনায়, সম্পর্কের অসাড়তার কথা বলে। মেটামরফোসিস [৫] বিত্ত-বঞ্চিত মানুষের মানুষী স্ব-ভাব থেকে বিচ্যুত হওয়ার, নিজের প্রজাতি-সত্তার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কাহিনি। এই কাহিনি রূপান্তরের কথা বলে, মানুষের না-মানুষে পালটে যাওয়ার কথা বলে। শরীরে এবং মনে। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে দীর্ণ হতে হতে, নিজের ব্যক্তি-সত্তাকে  হারিয়ে ফেলতে ফেলতে মানুষী স্তর থেকেই মানুষের অবনমন ঘটে। গ্রেগর সামসার শরীরে রূপান্তর আসে, মনে নয়; আর গ্রেগরের বাবা, মা ও বোনের মানসিক সত্তার অ-মানুষী রূপান্তর ঘটে যায়। কাহিনি যত এগোয় এরা প্রত্যেকেই কাহিনির মূল চরিত্র হয়ে উঠতে থাকে। একটা বাজারমুখী বুর্জোয়া সমাজে অর্থ-বঞ্চিত মানুষের মনুষ্যত্ব হারানোর সাহিত্য-সাক্ষী হয়ে থেকে যায় গ্রেগর সামসা এবং তার পরিবার। 

এক সকালে অস্বস্তিকর স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গ্রেগর সামসা খেয়াল করে, তার চেহারা এক অতিকায় কদাকার কীটে পরিণত হয়ে গেছে। দেহটা যেন অনেক আংটির একটা মালা; বাদামি পেটের অংশটা ধনুকের মতো বাঁকানো; অগুনতি পা নড়ছে! এবং, গ্রেগর তার পরিবারের একমাত্র রোজগেরে! এ হেন এক পরাবাস্তব পরিস্থিতি পরিবারের একমাত্র রোজগেরে গ্রেগরের নিজের মনের মধ্যে উদ্‌বেগ আর দ্বন্দ্ব তৈরি করে। ভোরবেলা তো তার কাজে বেরোনোর সময়, ট্রেন ধরার সময়! বিছানায় পড়ে থাকার সময় নয়! বাঁধা গতের জীবনে আজ ছেদ পড়ল। ডাকাডাকিতেও যখন গ্রেগরের ঘরের দরজা খুলল না, পরিবার বুঝল সংকট এসে দাঁড়িয়েছে তাদের ঘরের দরজায়। আর ঠিক তখনই সদর দরজায় কড়া নাড়লেন গ্রেগরের অফিসের চিফ ক্লার্ক, হেড অফিসের বড়োবাবু। গ্রেগরের গোলামির দুনিয়ায় তিনি একজন নজরদার। তাঁর রিপোর্টের উপর নির্ভর করছে কর্মক্ষেত্রে আজ অনুপস্থিত গ্রেগরের ভবিষ্যৎ। গ্রেগরকেই তো বাবার দেনা শোধ করতে হবে; সেই দেনা তো আবার আছে অফিসেরই ডিরেক্টর সাহেবের কাছে! কিন্তু, গ্রেগর যে আর মানুষ নেই! মানব সমাজ থেকে এখন সে বিচ্ছিন্ন এক কদাকার ঢাউস কীট!     

এহেন সংকট মেটামরফোসিসের কাহিনিকে যত এগিয়ে নিয়ে যায়, শরীর তত হতে থাকে একটা ক্যামোফ্লাজ। শরীরের মুখোশের আড়াল সরিয়ে বেরিয়ে আসে মন। পরিবারের উত্তরণের জন্য গ্রেগর যেন তার সচেতন সত্তাকেই (ego) জলাঞ্জলি দিয়েছে, মনে হয়। পরিবারের প্রতি গ্রেগরের অনুচ্চার অঙ্গীকার আমাদের অবাক করে! কিন্তু, পরিবার-সর্বস্ব প্রাণ গ্রেগর যে, একবার হলেও, উলটো চিন্তাটাও করে বসেছে! ঘরের ভিতরে নিজের পালটে যাওয়া চেহারাটা নিয়ে গ্রেগরের মনের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে, এটা  কী স্বপ্ন! ও কী এখনও স্বপ্নের মধ্যে আছে, নাকি এটাই ওর নতুন বাস্তব! বাইরে তখন গ্রেগর আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠেনি বলে, এখনো কাজে বেরোয়নি বলে, পরিবারের লোকেদের মধ্যে হইচই শুরু হব হব করছে। গ্রেগর ভাবছে, ও গিয়ে দরজাটা খুলে দেবে নাকি! এমন একটা পরিস্থিতিতে গল্পের সর্বদর্শী কথক গ্রেগরের চিন্তাকে সশব্দে প্রকাশ করেছেন এইভাবে: এই পালটে যাওয়া চেহারাটা দেখে ঘরের বাইরে থেকে ডাকাডাকি করা পরিবারের মানুষগুলো যদি ধাক্কা খায়! ব্যস, তবে আর কোনও দায়দায়িত্বের বালাই থাকবে না! তখন আসবে জিরোনোর সময় :

If they were shocked, then Gregor would have no more responsibility, and could relax. [৬]

নিজের খুশিমতো বিশ্রাম পাওয়ার এই চকিত আকুতির মধ্যে দিয়ে উঁকি দিল গ্রেগরের সচেতন সত্তা, যাকে সে তার সামাজিক সত্তার মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে রাখতে রাখতে হারিয়েই ফেলেছে। কিন্তু তবুও, বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শামিল একটা পরিবার, বা, বৃহত্তর অর্থে, একটা অর্থ-মুখী সমাজ, একজন ব্যক্তির থেকে যেমন আচরণ চায়, যতটা অঙ্গীকার আশা করে, সেই দাবি কি কোনও মানুষের পক্ষেই পুরোপুরি মেটানো সম্ভব? সম্ভব নয় বলেই বোধহয় মানুষ একটা কৃত্রিম ব্যক্তিত্বের মুখোশ (persona) [৭]  গড়েপিটে নেয়। সমাজের বেঁধে দেওয়া যথাযথতা, সদাচরণ ইত্যাদির পরাকাষ্ঠাকে মান্যতা দিয়ে সেই সমাজ-মুখোশ মানুষের সচেতন সত্তার উপর চেপে বসে। চেতন তখন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়; আর, অবচেতনে তার তীক্ষ্ণ, গভীর মানসিক প্রভাব পড়ে। অসুস্থ আতঙ্ক, মানসিক চাপ, পিছু হঠতে চাওয়া বিষণ্ণ মন তখন চেপে বসে। পরিবারের ত্রাণকর্তা হতে চাওয়া গ্রেগরের মতোই মানুষ তখন অ-মানুষে বদলে যায়। পরিবারের সঙ্গে, এবং, বৃহত্তর অর্থে, সমাজের সঙ্গে, তার সমস্ত রকমের শারীরিক ও মানসিক যোগাযোগ অসম্ভব হয়ে যায়। 

গ্রেগরের দশাও তেমনই হয়েছে। শারীরিক পরিবর্তনের পরেও গ্রেগর পরিবারের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করতে চাইছে, ঘাড় ঘুরিয়ে মাকে দেখছে, অসহায় ভাবে দেখছে  যে ওর নোংরা হয়ে যাওয়া ঘরে বোন পা-দিয়ে খাবার প্লেট অবহেলায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তবুও, বোনের বাজানো বেহালার সুরমূর্ছনা ওকে টেনে নিয়ে যায় নিজের ঘরের আশ্রয় থেকে ‘মনুষ্যপদবাচ্য’দের মাঝখানে! পরিবার যে তাকে নিয়ে সন্ত্রস্ত, সে বোঝে না; ফলে, বাবার লাথি খেতে হয়। পরিবারের তথাকথিত মানুষেরা শেষ পর্যন্ত পরিবার- বিচ্ছিন্ন এই অ-মানুষটাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। গ্রেগরের ‘প্রিয়’ বোন রায় ঘোষণা করে :

We must get rid of it … that’s the only thing for it, Father. [৮]

কয়েক দিনের না-খাওয়া শরীর, পিঠে গেঁথে যাওয়া বাবার ছোড়া আপেল আর তার থেকে হওয়া দগদগে ঘা নিয়ে গ্রেগর নামের ক্লীবটার নাক দিয়ে শেষ নিশ্বাস খুব দুর্বল ভাবে বেরিয়ে যায়। এতক্ষণে বোধহয় সত্যিকারের জিরোনোর সময় হয়! ভোরবেলা, তখন সবে মাত্র আকাশে আলো ফুটছে।  

গ্রেগরের মৃত্যুতেই এ কাহিনি শেষ হয় না [৯]। গ্রেগরের বাবা, বোন (এবং, হয়তো বা মা-ও) হাঁফ ছেড়ে বাঁচে, শুরু হয় তাদের নতুন জীবন। উষ্ণ রোদ্দুর গায়ে মেখে তারা ট্রামে করে পার্কে বেড়াতে যায়। সোমত্ত মেয়ের শরীরের দিকে চেয়ে বাবা-মায়ের মনে হয় এবার মেয়ের জন্য একটা মানানসই বর খুঁজে আনতে হবে! গ্রেগরের সব ঘাম, পরিবারের জন্য সব উদ্‌বেগ, রূপান্তরের সব যন্ত্রণা, বোনকে গানের স্কুলে ভর্তি করার জন্য সব আবেগ অর্থহীন হয়ে যায়। কাহিনির সর্বদর্শী কথকের একটা কথাই শুধু আমাদের কানে বাজতে থাকে : 

Could he be an animal, to be so moved by music? It was as though he sensed a way to the unknown sustenance he longed for. [১০]

মানুষ চায়, কাজের জগতের কর্মমুখরতা তাকে বেঁচে থাকার আনন্দ দেবে। এ পথেই মানবসত্তা পরিপূর্ণতা পেতে চায়। কিন্তু গ্রেগর সামসার কর্মজীবন তো তাকে খুঁটিতে বাঁধা এক নিম্নস্তরের, ইতর জীবে পরিণত করেছে। তার নিজের জীবন তার নিজের নয়। গতর খাটিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সে পরিবারের জন্য একটা জায়গাওয়ালা ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করতে পারে, বাপ মায়ের ধারের টাকা একটু একটু করে শোধের ব্যবস্থা করতে পারে, বাবার ব্রেকফাস্টের টেবিলে পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করতে পারে, শুধু পারে না ভোরের ট্রেন মিস করতে, নিজের প্রাতরাশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে খেতে, প্রয়োজনীয় বিশ্রামটুকু নিতে, পারে না কোম্পানির নজরদারি এড়িয়ে কাজ থেকে সাময়িক বিরতিটুকুও পেতে, বিছানায় আর একটু গড়িয়ে নিতে। তার নিজের পরিশ্রমের ফসল তার ঘরে ওঠে ঠিকই, কিন্তু সে ফসলে ভরা সোনার তরিতে তার নিজেরই জায়গা হয় না! তার মানুষী অস্তিত্বকেই মান্যতা দেয় না সেই ফসল। এই জীবন তার ‘বেছে নেওয়া’ জীবন নয়। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ-জীবনে তাকে ঢুকে পড়তে হয়েছে, আর পেটের তাগিদ তাকে জীবন থেকেই বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এই বিচ্ছিন্নতার বোধ শুধুমাত্র গ্রেগরের কোনও ব্যক্তিগত অবস্থা নয়, এই বিচ্ছিন্নতার শিকার আজকের সমাজের সেইসব মানুষ যাদের জীবনে শ্রমটুকুই একমাত্র পুঁজি, এবং সেই পুঁজিটুকু আত্মসাৎ করে পুঁজিপন্থীরা। বিচ্ছিন্নতার ফলে বাজারি অর্থনীতিতে শ্রমজীবী মানুষের মনের মধ্যে বাস করা জীবনমুখী প্রবণতাগুলো হারিয়ে যায়। Eros আর Thanatos-এর দ্বন্দ্বে Thanatos বারবার জিতে যায়।

‘ওয়েডিং প্রিপারেসন্স ইন দ্য কান্ট্রি’ নামের একটা অসমাপ্ত লেখায় এডুয়ার্ড রাবান শহর থেকে পাড়া গাঁ-তে যাবে প্রেয়সী বেটির কাছে। রাবানের মনে দোলাচল। বিয়ে মানে যেমন সঙ্গী পাওয়া, তেমনই দায়বদ্ধতার জোয়াল কাঁধে নেওয়া। রাবান অলীক কল্পনায় ওরই বিকল্প হিসেবে একটা গুবরে পোকাকে ও বেটির কাছে পাঠিয়ে দিতে চায়। কল্পনার সেই পোকার মোটিফ বাস্তব চেহারা পেল ‘মেটামরফোসিস’-এ। 

মানুষী চেহারার রূপান্তরের কাহিনি কিন্তু প্রাচীন সভ্যতাগুলোর লোককাহিনিতে  বহুল প্রচলিত [১১]। ইহুদি লোককাহিনিতে প্রচলিত ‘গোলেম’-এর ধারণা এমনই এক রূপান্তরের কথা বলে [১২]। ইহুদিদের মধ্যে ‘গোলেম’-এর লোককাহিনি বহুল প্রচলিত। গোলেম হল এক ছদ্ম-মানব; তাকে ধুলো থেকে তৈরি করেছেন হয়তো বা কোনও এক জাদুকর। গোলেম তার শক্তি দিয়ে নিজের জাতিকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করে। প্রতিনিয়তই শক্তি অর্জন করতে করতে একসময় নিজের সৃষ্টিকর্তাকেই সে ধ্বংস করতে চায়। নিজের প্রাণরক্ষার তাগিদে সৃষ্টিকর্তা তখন তাঁর তৈরি গোলেমকে আবার ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে ধ্বংস করেন। ‘প্রাগের গোলেম’ কাহিনিতেও একই ভাবে গোলেমকে তৈরি করা হয়েছে ইহুদি ghetto-তে অত্যাচারিত ইহুদিদের রক্ষা করার জন্য। সেই রক্ষা করার কাজে সে সফল হলেও ঘটনাচক্রে সে ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে, এবং সেই কারণে তার জীবননাশ করা হয় [১৩]। এমনতরো এক কাহিনির সঙ্গে জার্মান ইহুদি কাফকার ‘মেটামরফোসিস’-এর  কাহিনির বহিরঙ্গের কাঠামোগত মিল চোখে পড়ে। ইহুদি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মানো প্রাগের ভূমিপুত্র কাফকার অবচেতনে ‘প্রাগের গোলেম’-এর ‘ছদ্ম-মানব’-এর লোক-ধারণা কোনোভাবে ‘মেটামরফোসিস’-এর প্রাথমিক কাঠামো নির্মাণে রসদ জুগিয়েছিল কিনা আমরা জানি না। কিন্তু, দুটো কাহিনিই ত্রাণকর্তার ধ্বংসের কথা বলে। ‘মেটামরফোসিস’-এ আপেল-বিদ্ধ গ্রেগরের মৃত্যু তো সরাসরি পাঠকের মনে পেরেক-বিদ্ধ জিশুখ্রিস্টের অনুষঙ্গ বয়ে আনে।  

বাবার ব্যবসায় বিপর্যয়ে পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া, হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে চাকরিতে পদোন্নতি করা, আর্থিক বিপর্যয় সামলে পরিবারকে বাঁচাতে চাওয়া গ্রেগরকে পরিবারের ক্ষমতার কেন্দ্রে স্থাপন করছিল; পরিবারের কর্তা গ্রেগরের বাবা তখন একজন বিধ্বস্ত বৃদ্ধ ছাড়া আর কিছুই নন। কিন্তু গ্রেগরের কীটে পরিণত হয়ে যাওয়ার ফলে ঘটনা যত এগোয় আমরা দেখি পরিবারের মধ্যে ক্ষমতার সমীকরণের দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। আমাদের চোখের সামনে গ্রেগরের বাবা যেন জরাগ্রস্ত আনুভূমিক অবস্থান ছেড়ে জরামুক্ত উল্লম্বতায় নিজেকে ক্ষমতার কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত করছেন, আর তাঁরই আক্রমণের ফলশ্রুতিতে গ্রেগরের মৃত্যু ত্বরান্বিত হচ্ছে। 

সাহিত্যে এক্সপ্রেসনিজমের ধারায়, এবং কাফকার নিজের লেখায়, বাবা-ছেলের দ্বন্দ্ব ও মানসিক বিচ্ছিন্নতা একটা বিশেষ বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছিল। ক্ষমতার অন্দরে প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকার স্পৃহাকে বাবা-ছেলের সম্পর্কের জটিলতার মধ্যে কাফকা বুনে দিয়েছিলেন। কাফকার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই হয়তো বেরিয়ে এসেছিল কাহিনির ছেলেদের মনের মধ্যে ঘটতে থাকা বিপর্যয়ের ঘটনাগুলো। ‘মেটামরফোসিস’এর আগেই ‘দ্য জাজমেন্ট’-এ মনের সেই বিপর্যয়ের কথা আছে। ‘দ্য জাজমেন্ট’-এর প্রথম দিকে জর্জ বেন্ডেমান তার নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে বন্ধুর বিদেশে চলে গিয়ে ব্যবসায় অবনতি এবং তার পরিণতিতে বন্ধুর সম্ভাব্য জটিল মানসিক অবস্থানের কথা বিশ্লেষণ করছে। ব্যবসায় ব্যর্থতা বন্ধুর মনে জটিলতার সৃষ্টি করেছে বলে তার বিশ্বাস। সে কারণে বন্ধুর সাথে সফল ব্যবসায়ী জর্জ-এর নিজের মানসিক যোগাযোগও এতটাই ক্ষীণধারা হয়ে গেছে যে নিজের আসন্ন বিয়ের কথা আর বন্ধুকে প্রাণ খুলে বলা যাচ্ছে না। মিস ফ্রিডা ব্রান্ডেনফেল্ডের সাথে তার বিয়ের বাগদানের অনুষ্ঠান হয়েছে একমাস আগে। কিন্তু ওর নিজের সুখের কথা শুনলে বন্ধু যে একাকিত্বে ভুগতে পারে! জর্জ তো জানে একাকিত্ব কী ভীষণ ব্যাপার! প্রেয়সী নারীর কথায় জর্জ অবশেষে বন্ধুকে চিঠি লিখে সব জানাতে বসে। কিন্তু ও যে চিঠি লিখেছে সেটা বাবাকেও জানাতে হবে তো! পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগে, কেন জানাতে হবে? বাবার প্রতি আনুগত্য? বন্ধুর প্রতি দায়বদ্ধতার দেখনদারি? লেখক সে কথার সরাসরি জবাব দেননি। শুধু বলেছেন, বন্ধুকে লেখা চিঠির কথা বাবাকে জানাতে গেলে বাবার দায়সারা জীবনচর্যার ছবিটা ওর চোখের সামনে ফুটে ওঠে। জর্জের চোখ দিয়েই আমাদের দেখানো হয়েছে মায়ের মৃত্যুতে বাবার একাকিত্ব কতটা প্রকট! এখান থেকে, বলা যায়, কাহিনির দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হচ্ছে। এখন বাবা তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে ছেলেকে বিচার করছেন; অভিযোগ করছেন, ফ্রিডা শরীর দিয়ে জর্জকে বশ করেছে, ছেলে প্রয়াত মায়ের স্মৃতিকে কলুষিত করেছে, অনৃতভাষী ছেলে নিজের বন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, আর এখন বাবার শুরু করা ব্যবসার লেনদেন আর রফাগুলো নিষ্পন্ন করে নিজে সফল ব্যবসায়ী সেজে বসেছে; বয়সের অছিলায় বাবাকে বিছানায় বেঁধে ফেলতে চাইছে। বাবার এহেন আকস্মিক আক্রমণের অভিঘাত ছেলে হজম করতে পারে না। সে বাবাকে একটা হাস্যকর চরিত্র হিসেবে ভাবতে চায়। বাবা ঘোষণা করেন এ বাড়িতে তিনিই ছেলের অনুপস্থিত বন্ধুর প্রতিনিধি! তবে কী মুখোশে ঢাকা পড়ে বাবার মুখ? বাবা বলেন, ছেলের বন্ধুটিই যে আসলে তাঁর মনের মতো ছেলে, সে কথা তাঁর নিজের ছেলেটি বিলক্ষণ বোঝে! আর, বোঝে বলেই তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে চায়। বিচারকের মতো বাবা ছেলের বিরুদ্ধে চরম রায় ঘোষণা করেন : 

I sentence you to death by drowning. [১৪]   

কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকারী বাবার মুখ থেকে বেরিয়ে আসা এমন কথা ছেলের মনে তীব্র অভিঘাত তৈরি করে; ছেলে দৌড়ে যায় বাড়ির কাছেই, নদীতে; সেতুর রেলিং থেকে মুঠো আলগা করে নদীতে নিজের শরীরটাকে ছেড়ে দেয়। আত্ম-ধ্বংসের ঠিক আগের মুহুর্তে সে বলে যায় : ‘প্রিয় বাবা-মা, চিরকাল তোমাদের ভালোবেসেছি’। ভালোবাসা এবং ভালোবাসাহীনতার এমন বহুস্তরীয় প্রকাশ কাহিনির মূল চরিত্রের মনোজগতের টানাপোড়েনকে আমাদের সমসাময়িক মানুষের মানসিক সংকটের দোসর করে তোলে। ‘দ্য জাজমেন্ট’ আধুনিক মানুষের অতীত-বিচ্ছিন্ন অগ্রগতির, কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও কর্তৃত্ব-বিচ্ছিন্ন হতে চাওয়ার টানাপোড়েনে নিজের সচেতন-সত্তাকে জলাঞ্জলি দেওয়ার কাহিনি। 

এই সচেতন সত্তা বারবার নিজেকে প্রকাশ করতে চেয়েছে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের মধ্যে দিয়ে। ‘মেটামরফোসিস’-এ মা ও ছেলের পারস্পরিক আকর্ষণকে এতটাই বাস্তবোচিত ব্যঞ্জনা দেওয়া হয়েছে যে কাফকার জার্মান এক্সপ্রেসনিজমসুলভ প্রকাশভঙ্গি সেই বাস্তবতাকে নাকচ করতে পারেনি। শরীরী যৌনতার প্রকাশ গ্রেগরের মানবিক মনকে প্রকাশ করে। খবরের কাগজ থেকে এক নারীর ছবি কেটে নিয়ে নিজের হাতে ফ্রেম তৈরি করে একসময় গ্রেগর দেওয়ালে টাঙিয়ে রেখেছিল। ওর রূপান্তরের পরে যখন ওর ঘরের আসবাব ওর বোন আর মা সরাচ্ছিল, গ্রেগর কিছুতেই সেই ছবি সরাতে দেবে না; সে নিজের শরীরটাকে ঠেসে ধরল ছবির উপর; উষ্ণ পেটে কাচের শীতল অনুভূতি ও তখন টের পাচ্ছিল। ‘দ্য জাজমেন্ট’-এ শরীরী যৌনতার কর্কশ প্রকাশ হয় জর্জ-এর বাবার কথায়। তিনি অভিযোগ করেন,  ফ্রিডা  স্কার্ট তুলে জর্জকে প্রলুব্ধ করেছে নাক ঘষতে, আর, শরীরী কাম চরিতার্থ করে জর্জ নিজের মায়ের স্মৃতিকে কলুষিত করেছে! এই কলুষের মধ্যে কী কোথাও অয়েদিপাউসের কলুষ জড়িয়ে আছে? 

বাবা-ছেলের  সম্পর্কের মধ্যে ক্ষমতার সমীকরণ অথবা, অ-সমীকরণ, বারবার কাফকার কাহিনির উপজীব্য হয়ে উঠেছে। আর সেখান থেকেই তৈরি হয়েছে মূল চরিত্রগুলোর মনের মধ্যে দোলাচল। ‘দ্য ট্রায়াল’ উপন্যাসে বাবার স্থান নিয়েছে রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা। রাষ্ট্র তার বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে কীভাবে ব্যক্তির মনের উপর প্রভাব বিস্তার করে তাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয় সেই কাহিনি কাফকা শুনিয়েছেন ‘দ্য ট্রায়াল’-এ। এ-কাহিনির শুরুতেই কাহিনির প্রধান চরিত্র জোসেফ কে গ্রেফতার হচ্ছে; কিন্তু তার অপরাধ কী জানা নেই? কেউ-ই তা জানে না! কেউ নিশ্চয়ই ওর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করেছিল, কারণ জোসেফ কে তো কোনও অপরাধই করেনি! সমস্ত কাহিনি জুড়ে জোসেফ কে নিজেই গোয়েন্দাগিরি করার মতো বিচার ব্যবস্থার দরজায় দরজায় ঘুরতে থাকে সত্যিটা খুঁজে বের করার জন্য; তার চোখের সামনে প্রকাশিত হতে থাকে রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থার ক্ষয়িষ্ণু দিকগুলো। এমন একটা ব্যবস্থা মানুষের উপর প্রতিনিয়ত নজরদারি চালায়। পর্দার আড়ালে থেকে এই ব্যবস্থা, এবং তার নজরদারি, মানব-সমষ্টির  যূথবদ্ধ স্বাস্থ্যকর অস্তিত্বের সব সম্ভাবনাকেই নাকচ করতে চায়। অথচ, যূথবদ্ধতা মানুষের স্বভাবজাত, কারণ, মানুষ ঝাঁক-প্রাণী। প্রজাতি-বিচ্ছিন্ন মানুষ এমন একটা হৃদয়হীন শাসনযন্ত্রের কবলে পড়ে আস্তে আস্তে নিজের থেকেই বিচ্ছিন্ন হতে থাকে; এগিয়ে যেতে থাকে ধ্বংসের দিকে [১৫]। কাফকার চরিত্রেরা তাই সমাজ ব্যবস্থার হাড়িকাঠে বলি প্রদত্ত এমন এক-একজন মানুষ যারা তথাকথিত ট্র্যাজিক নায়কোচিত উচ্চতা পান না বটে, কিন্তু তাদের পরাজয়ের কাহিনি পাঠককে এই অর্থ-মুখী, ক্ষমতালিপ্সু সমাজের থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে উদ্বুদ্ধ করে।  

শেষের কিছু কথা এবং তথ্যসূত্র : 

[] ফেলিস বাউয়ারকে লেখা চিঠি, ৫/৬ ডিসেম্বর ১৯১২, ‘The Cambridge Introduction to Franz Kafka’, Carolin Duttlinger, Cambridge University Press, পৃ. ৪২  

[] Franz Kafka, ‘The Trial’, tr. Idris Parry, Penguin Books, xi

[] ১৯১৪ সালের মে মাসে বার্লিনে ফেলিসের সাথে আনুষ্ঠানিক বাগদান হয়ে যাওয়ার পরে কাফকা ৬ জুন ডায়েরিতে লিখছেন : ‘Was tied hand and foot like a criminal. Had they sat me down in a corner bound in real chains, placed policemen in front of me and let me look on simply like that, it could not have been worse’. Franz Kafka, ‘The Trial’, tr. Idris Parry, Penguin Books, xiv

[] উৎপল দত্ত এই বিষয়ে মার্কস-এঙ্গেলসের উদ্ধৃতি সহ আলোচনা করেছেন তাঁর ‘ব্রেখট ও মার্ক্সবাদ’ প্রবন্ধে, গদ্য সংগ্রহ, উৎপল দত্ত । 

[] ‘Metamorphosis and Other Stories’, Franz Kafka, tr. Michael Hofmann, Penguin Books

[] ‘Metamorphosis and Other Stories’, Franz Kafka, translation by Michael Hofmann, Penguin Books। কোনও ইংরেজি অনুবাদক গ্রেগরের পরিবর্তিত চেহারাকে লিখছেন cockroach, আবার কেউ বা লিখছেন vermin। 

[] ‘The Essential Jung’, Selected Writings, Introduced by Anthony Storr, Fontana Press

[] ‘Metamorphosis and Other Stories’, Franz Kafka, tr. Michael Hofmann, Penguin Books 

[] এ কাহিনির শেষ অংশটা কাফকা  নিজেই যে পছন্দ করেননি, তা তিনি ১৯১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি ডায়েরিতে লিখেছেন।

[১০] ‘Metamorphosis and Other Stories’, Franz Kafka, tr. Michael Hofmann, Penguin Books, পৃ ১১৭

[১১] লোককাহিনির মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা ফ্রয়েড, ইয়ুং সহ আরও বিভিন্ন মনস্তত্ত্ববিদেরা দিয়েছেন; ডঃ মযহারুল ইসলাম, ‘ফোকলোরঃ পরিচিতি ও পঠন-পাঠন’,পৃষ্ঠা ১২৪-১২৭

[১২] European Mythology, Jaqueline Simpson, Hamlym 

[১৩] ‘The Golem of Prague: Man or Monster?’ University of Hawaii, https://hilo.hawaii.edu 

[১৪] ‘Metamorphosis and Other Stories’, Franz Kafka, tr. Michael Hofmann, Penguin Books 

[১৫] ‘দ্য ট্রায়াল’ উপন্যাসেও শেষ পর্যন্ত জোসেফ কে নিহত হয়। যে সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে জীবন ধারণ করে কাফকা ‘দ্য ট্র্যায়াল’ লিখতে উদ্বুদ্ধ হন সেই ব্যবস্থার চেহারাটা ক্যাথিড্রালের পুরোহিত এবং জোসেফ কে-এর কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পায় :

‘No’, said the priest, ‘one does not have to believe everything is true, one has to believe it is necessary.’ ‘Depressing thought,’ K said, ‘It makes the lie fundamental to world order.’ 

(‘The Trial’, ‘In The Cathedral’, pp.176-177, translation Idris Parry, Penguin Books)

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান