উদ্‌বেগ ও ফোবিয়া

সায়নদীপ ঘোষ 

হঠাৎ একদিন ভিড় ট্রেনে আসতে আসতে শ্যামবাবুর মনে হল দমবন্ধ হয়ে আসছে, বুক ধড়ফড় করছে, ঘাম দিচ্ছে, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, মানে ‘প্রাণবায়ু নির্গত হয়’ আর কি। সেদিন ফিরেই ছুটলেন ডাক্তারের কাছে — রক্ত, প্রস্রাব, ই সি জি, সিটি স্ক্যান আরও কত পরীক্ষা হল, কিন্তু কিছু পাওয়া গেল না। ওদিকে সেদিনের মতো ভীষণ অবস্থা আরও বেশ কয়েকবার হয়েছে, এখন সর্বক্ষণ চিন্তা ও ভীতি — আবার কখন এমন হবে, কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

সেই কবে ছেলেবেলায় দাদাকে কুকুরে কামড়ে দিয়েছিল, তারপর ইনজেকশন নিয়ে দাদা একেবারে শয্যাশায়ী, পার্থ তাই আজ এই বিশ বছর বয়সেও কুকুর দেখলেই ভীষণ ভয় পায় আর তাই বাড়ির সামনের রাস্তাটায় যেখানে নেড়ি কুত্তাটা শুয়ে থাকে আজও সেই জায়গাটা তাকে মা পার করে দেন। সবাই হাসাহাসি করে, পার্থও বোঝে এ তার অস্বাভাবিক আচরণ, কিন্তু কুকুর দেখলেই যে তার প্রবল উৎকণ্ঠা জাগে।

গতবারের প্রবল বন্যায় স্বামী-পুত্রকে হারিয়ে হরিমতি বাবুদের বাড়ি কাজ করে কিন্তু আজও চোখ বন্ধ করলেই সেদিনের সেই ভয়াল দৃশ্য তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে, উদ্‌বেগে, উৎকণ্ঠায় ও বেদনায় চোখ ফেটে জল আসে, বুক ধড়ফড় করতে থাকে, কী ভীষণ কষ্ট হয়।

গ্রামের স্কুলে পড়লেও হারানের ইংরেজি উচ্চারণ মন্দ নয়। আবার তার শখও আবৃত্তি করবার, তাও আবার ইংরেজি কবিতা। কিন্তু কিছু বলতে হবে ভাবলেই গলা শুকিয়ে আসে, জিভ যেন জড়িয়ে যায়, তোতলামি শুরু হয়ে যায়, তাহলে আবৃত্তিকার হওয়ার স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে? 

প্রথমেই বুঝতে হবে সাধারণ দৈনন্দিন উদ্‌বেগ এবং অত্যধিক উদ্‌বেগ বা Pathological Anxiety কোনটি কী এবং এগুলির মধ্যে পার্থক্যই বা কী। কোনও ঘটনা যা কিছু ভীতি উদ্রেক করে বাকি কিছুটা চিন্তা সৃষ্টি করে, তার থেকে উদ্ভূত হয় সাধারণ উদ্‌বেগ, যা প্রতিটি মানুষের জীবনে কোনও বৃদ্ধি, পরিবর্তন বা নতুন পরিস্থিতি ও পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে গেলে দেখা যায়। যেমন, যে শিশু প্রথম তার মাকে ছেড়ে থাকছে, যে ছেলেটি প্রথমদিন স্কুলে যাচ্ছে, যে প্রেমিক প্রথমবার প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে, যে প্রৌঢ় আসন্ন বার্ধক্যের চিন্তায় মগ্ন— এরা সবাই কমবেশি সাধারণ উদ্‌বেগে ভুগছেন। এরকম অবস্থা মানুষের জীবনে বহুবার আসে এবং মানুষ তার সঙ্গে মানিয়ে নিতেও সক্ষম হয়। কিন্তু যদি এই আপাত সাধারণ ঘটনাগুলির থেকে উদ্ভূত উদ্‌বেগ বা উৎকণ্ঠা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে ওঠে ও অনাবশ্যকরকম দীর্ঘস্থায়ী হয়, তখন তাকেই আমরা বলি অত্যধিক বা অস্বাভাবিক উদ্‌বেগ (Pathological Anxiety)।

এবার দেখা যাক, ভয় ও উদ্‌বেগ — এই দুটির মধ্যে কী তফাত। আসলে দুটোরই জন্ম বিপদের আশঙ্কা থেকে। ভয়ের ক্ষেত্রে বিপদটি হল পরিচিত কারণে। উদ্‌বেগের ক্ষেত্রে এই কারণটি মানুষের মনোজগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত, অজানা, অস্পষ্ট এবং প্রায়শই কোনও অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনের সঙ্গে সম্পর্কিত। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ভয়ের কারণটি হয় তাৎক্ষণিক ও তীব্র (Acute)। আর উদ্‌বেগের কারণটি দীর্ঘস্থায়ী (Chronic)। যেমন, একটি দ্রুতগামী গাড়ি কারও দিকে ছুটে এলে মনের যে ভাবটি প্রকট হয়ে ওঠে তা হল ভয়, কিন্তু কোনও অপরিচিত মানুষের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় যে অজানা আশঙ্কায় মন দোলে, তারই নাম উদ্‌বেগ। কোনও ঘটনা বা পরিস্থিতি মনের উপর দীর্ঘ মেয়াদি চাপ সৃষ্টি করতে পারবে কিনা বা তা কতখানি উদ্‌বেগজনক হিসেবে প্রতিপন্ন হবে তা অনেকটাই নির্ভর করে মানুষের অন্তর্নিহিত সহ্য ক্ষমতা, আত্মরক্ষার পদ্ধতি এবং পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার উপর।

কেন এই আতঙ্কের বা উদ্‌বেগের সৃষ্টি হয় তা নিয়ে নানান মত আছে — মনঃসমীক্ষণের তত্ত্বে সিগমুণ্ড ফ্রয়েড প্রথম দিকে অবরুদ্ধ বা অবদমিত যৌনতাকে দেখালেও পরবর্তী সময়ে এর মধ্যে আগ্রাসী চিন্তার অবদমনও খুঁজে পেয়েছিলেন। অবচেতন মনে যৌনতাবাহী বা আগ্রাসী চিন্তার সঙ্গে তার বিরুদ্ধবাদী চিন্তার দুরন্ত টানাপোড়েন-এর বহিঃপ্রকাশই হয়তো উদ্‌বেগের জন্ম দেয়। ব্যক্তির ‘অহম’ বা Ego তার প্রতিরোধ প্রকরণগুলির (defence mechanism) মধ্যে দিয়ে চেষ্টা করে যাতে এইসব দ্বন্দ্বগুলি খানিকটা সহনশীল পথে চালিত হয় অথবা কোনোভাবে সেগুলিকে চাপিয়ে রাখা হয়। ফ্রয়েডীয় তত্ত্ব এবং তার পরের পরিবর্তনগুলিতেও উদ্‌বেগ উৎকণ্ঠা-ভয়ের নানা দিক হিসেবে এসেছে। মা ও শিশুর বিচ্ছেদ সংক্রান্ত উদ্‌বেগ (separation anxiety) এসেছে যৌনতা বিকাশের স্তরে লিঙ্গচ্ছেদ সংক্রান্ত উদ্‌বেগ (castration anxiety) থেকে, আবার কখনও কাঙ্খিত লক্ষ্যে না-পৌঁছতে দেওয়া (superego anxiety) থেকে।

Behavioral বা ব্যাবহারিক দৃষ্টিকোণ থেকেও উদ্‌বেগের কারণ অনুসন্ধান করা হয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে পাভলভের Classic Conditioning-এর অন্তর্গত। নির্দিষ্ট পারিপার্শ্বিক ঘটনা বা সূত্রের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ একই কাজ বা ব্যবহার প্রতিনিয়ত করতে থাকলে ধীরে ধীরে মানুষ তাকে শিক্ষণলব্ধ করে তোলে এবং সর্বদা সে এ সম্বন্ধে সজাগও থাকে না। হয়তো, কোনও মানুষের চিংড়ি-তে অ্যালার্জি নেই কিন্তু কোনও সময়ে চিংড়ি খেয়ে অসুস্থ হলেন। পরবর্তীকালে চিংড়ি খেলেই কিংবা আরও পরে চিংড়ি দেখলেই তিনি অসুস্থতা অনুভব করতে পারেন। ধীরে ধীরে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট খাবার সম্পর্কেও একই ধরনের অসুস্থতা ও সম্পৃক্ত উদ্‌বেগ সৃষ্টি হয়। Aplysia california নামক এক সমুদ্র-শামুকের ব্যবহারের পরিবর্তন নিয়েও প্রচুর পড়াশোনা হয়েছে এবং দেখা গেছে ভীতিপ্রদ কোনও উদ্দীপকের সম্মুখীন হলে সে খোলস গুটিয়ে নেয় এবং খাওয়া কমিয়ে দেয়। ভীতিপ্রদ কোনও উদ্দীপকের (ইলেকট্রিক শক্) সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও সাধারণ উদ্দীপকটিও ভীতিপ্রদ উদ্দীপকের কাজ করছে। এক্ষেত্রে Classical conditioning-এর ফলাফল পরিলক্ষিত হয়। আবার কেউ কেউ, যে সমস্ত বিষয় বা ঘটনার ক্ষেত্রে তাদের গুরুজনরা উদ্‌বেগ অনুভব করতেন, তার সম্পর্কে নিজেরাও উৎকণ্ঠিত ও উদ্‌বিগ্ন হয়ে উঠতে আরম্ভ করেন— একে বলা হয় Social Learning Theory। প্যানিক অ্যাটাক বা হঠাৎ আতঙ্ক অনুভূত হওয়ার যেসব রোগীরা থাকেন তাঁরা অনেকক্ষেত্রে সাধারণ বুক ধড়ফড় করা বা ঘাম হওয়া বা হৃদ্‌ছন্দের স্বাভাবিক দ্রুততাকে অস্বাভাবিক মনে করেন এবং অতিশয় উদ্‌বেগের শিকার হয়ে ওঠেন। এঁদের চিন্তাপ্রবাহ (cognitive process) অনেক সময় উদ্‌বেগের কারণে ভ্রান্তপথে চালিত হয় — খুব সামান্য বা সাধারণ পরিবর্তনকে অসাধারণ ও অস্বাভাবিক করে তোলে। Existential বা অস্তিত্ববাদী দৃষ্টিকোণ থেকেও উদ্‌বেগের কারণ অনুসন্ধান করা হয়েছে — অস্তিত্ববাদীরা মানবজীবনের অসারত্ব, স্থিতিশীলতার অভাব এবং জীবনধারণের বৃহত্তম কারণের অভাবকে উদ্‌বেগের কারণ হিসেবে নির্দেশিত করেছেন। 

মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রী ও স্নায়ুরাসায়নিকগুলির মধ্যেও বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। স্নায়ুরাসায়নিক সম্পর্কে বিশদ আলোচনার প্রয়োজন আছে। যে তিনটি প্রধান স্নায়ুরাসায়নিক এই রোগের সঙ্গে যুক্ত তা হল — Norepinephrine, Serotonin এবং GABA (animobutyric acid)। বিভিন্ন ওষুধ এই সমস্ত রাসায়নিকগুলির তারতম্য ঘটিয়ে রোগীকে এই রোগের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে এবং অধুনা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে এই রাসায়নিক সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞানও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেখা গেছে, Norepinephrine যে সমস্ত স্নায়ুতন্ত্রীগুলিতে অধিক পরিমাণে রয়েছে (যেমন Locus Ceruleus) সেই সমস্ত অংশগুলি উদ্দীপ্ত হলে উদ্‌বেগ ও ভীতির বৃদ্ধি ঘটে এবং যেসব ওষুধ মস্তিষ্কে Norepinephrine-এর বৃদ্ধি ঘটায় বা Norepinephrine অবস্থিত স্নায়ুতন্ত্রীগুলিকে উদ্দীপ্ত করে তারা সকলেই ভয় বা উদ্‌বেগ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে যেসব ওষুধ Norepinephrine-এর হ্রাস ঘটায় বা স্নায়ুতন্ত্রীর উদ্দীপনা কমিয়ে এনে তাকে শিথিল করে সেইসব ওষুধ উদ্‌বেগ বা আতঙ্ক কমায়। Serotonin নামক স্নায়ুরাসায়নিকটিও এই রোগের সঙ্গে জড়িত। এটির তারতম্য ঘটলেও বিভিন্ন ভাবে এ রোগের উপসর্গগুলির বৃদ্ধি ও হ্রাস ঘটে। যেসব স্নায়ুতন্ত্রী Serotonin এর আধার, তা হল Brainstem এর অন্তর্ভুক্ত ও Raphe nucleus, limbic system (amydala ও hippocampus) এবং hypothalamus। Gaba (-animobutyric acid) নামক রাসায়নিকেরও বিশিষ্ট স্থান রয়েছে উদ্‌বেগ সৃষ্টির পেছনে। দেখা গেছে Benzdiazepine এবং তার সংশিষ্ট ওষুধগুলি এ রোগের চিকিৎসায় বিশেষ এক স্থান অধিকার করে আছে। এরা কিন্তু GABA রাসায়নিকটিকে উদ্দীপ্ত করে উদ্‌বেগের হ্রাস ঘটাতে সাহায্য করে। আসলে GABA নামক Receptor-এর উপর এই ওষুধগুলি কাজ করে GABA নামক  রাসায়নিকটির ক্ষমতা বর্ধিত করে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগে CT Scan ও MRI-এর সাহায্যে মস্তিষ্কের বিভিন্ন পরিবর্তনও উদ্‌বেগের রোগে বিশেষভাবে জড়িত বলে মনে করা যেতে পারে। Positron Emission Tomography (PET), Single Photon Emission Computed Tomography (SPECT) ও Electroencehalogtaphy (EEG)-এর সাহায্যে দেখা গেছে উদ্‌বেগের রোগে Frontal, Occipital ও Temporal Cortex-এ পরিবর্তন ঘটে। আতঙ্কের রোগে Parahippocampal Gyrus ও বাতিকের রোগে Caudate Nucleus-এ বিশেষভাবে পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। আসলে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ বিশেষভাবে উদ্‌বেগ, উৎকণ্ঠা, আতঙ্কের রোগ ও বাতিকের রোগের সঙ্গে সংযুক্ত।

এবার দেখা যাক উদ্‌বেগ বা উৎকণ্ঠার রোগে কী কী লক্ষণ বা উপসর্গ সাধারণভাবে মানবদেহে পরিলক্ষিত হয়। যে সমস্ত লক্ষণ দেখা যায় তা অন্য বহু ধরনের শারীরিক অসুখেও দেখা যায় এবং তাই নিশ্চিত করা দরকার যে উপসর্গগুলি উদ্‌বেগজনিত কারণেই সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সময় মাথা ঝিমঝিম করে এবং কাঁপতে থাকে, বুক ধড়ফড় করে, হৃৎছন্দ দ্রুত হয়ে ওঠে, রক্তচাপ বেড়ে যায়, অত্যধিক ঘাম হতে থাকে, পেটের মধ্যে একটা অস্বস্তিভাব শুরু হয় এবং বারবার পায়খানা হতে থাকে, প্রস্রাবও বারবার হয় এবং প্রস্রাব করার পরেও মনে হয় আবার প্রস্রাব পাচ্ছে, সব মিলিয়ে এক সর্বাঙ্গীণ অস্বস্তি ও অধৈর্য দেখা যায়। এইসব উপসর্গগুলি দেখা গেলেও রোগী বুঝতে পারে না যে উদ্‌বেগ থেকেই সমস্যাগুলির উৎপত্তি। তাই সে বারবার বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে ছুটে যায়। যখন ডাক্তারবাবুরা বুঝতে পারেন যে উদ্‌বেগ ও উৎকণ্ঠাই উপসর্গগুলির মূল কারণ তখন চিকিৎসা সহজ ও কার্যকরী হয়।

উদ্‌বেগ বা Anxiety রোগের মধ্যে আমরা যেগুলি নিয়ে প্রধানভাবে আলোচনা করব তা হল হঠাৎ তীব্র আতঙ্কের রোগ বা Panic Attack আতঙ্কের রোগ বা ফোবিয়া, কোনও হৃদয়বিদারক ঘটনার স্মৃতি বিজড়িত যে রোগ বা Post traumatic stress disorder এবং শারীরিক যেসব রোগে উদ্‌বেগ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সেগুলি আলোচনা প্রসঙ্গে ছুঁয়ে যাব বাতিকের রোগ বা obsessive compulsive disorder-কে। আমাদের এবারের আলোচনার বিষয়বস্তু হল আতঙ্কের রোগ অর্থাৎ ফোবিয়া এবং তার সঙ্গে অনেকক্ষেত্রে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত Panic Attack, হঠাৎ তীব্র আতঙ্কের অনুভূতি, যাতে ‘এখনই মরে যাব’ এমন ভীতি চলে আসে। খুব সহজভাবে বলতে গেলে ফোবিয়াকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা যায় — নির্দিষ্ট বস্তু বা ঘটনা সংক্রান্ত ফোবিয়া, সামাজিক সংক্রান্ত ফোবিয়া এবং অ্যাগারোফোবিয়া বা খোলা জায়গার ভীতি। হঠাৎ তীব্র আতঙ্কের অনুভূতি বা Panic Attack-এর প্রত্যেকটির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে অ্যাগারোফোবিয়া, যার শব্দগত অর্থ হল fear of market place। এক্ষেত্রে রোগীরা সেই সমস্ত জায়গায় থাকতে অ-স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন যেখান থেকে নিষ্ক্রমণের পথ প্রশস্ত নয় অথবা যেখান থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে কারও সাহায্য পাওয়া যাবে না। যেমন ধরা যাক কোনও উন্মুক্ত স্থানে একা থাকা, অথবা কোনো ভিড়ের মধ্যে বা কোনও টিকিটের লাইনে একা দাঁড়ানো, বা কোনও ব্রিজ বা সুড়ঙ্গ বা মেট্রোরেল বা বাসে, ট্রেনে একা যাতাযাত করা — এগুলি এই রোগীর পক্ষে প্রাণান্তকর ব্যাপার। সচরাচর রোগী এই সমস্ত পরিস্থিতিগুলি সজ্ঞানে বর্জন করে এবং যদি-বা কখনও এই পরিস্থিতিগুলিতে যেতে বাধ্য হয় তবে সঙ্গী হিসেবে কাউকে অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে যায় (Phobic companion)। আসলে তার সর্বক্ষণের ভীতি কখন ঘটে যায় সেই হঠাৎ তীব্র আতঙ্কের অনুভূতি বা Panic attack। এবার আসুন দেখা যাক কী হতে পারে এই তীব্র আতঙ্কে।

হঠাৎ করেই দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ, বুক ধড়ফড়ানি ও হৃৎছন্দের গতি হয় তীব্র, প্রবলভাবে ঘাম ঝরতে থাকে, হাত-পা ও সারা শরীর কাঁপতে থাকে, নিশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসে — মনে হয় যেন কেউ আটকে দিয়েছে শ্বাস-প্রশ্বাসের স্বাভাবিক গতি, বুকে অনুভূত হয় যন্ত্রণা, বমিভাব দেখা যায়, মাথা ঝিমঝিম্ করে — মনে হয় জ্ঞান হারাবে, পারিপার্শ্বিক যেন পরিবর্তিত হয়ে গেছে মনে হয় এবং নিজেকেও কেমন অপ্রকৃতিস্থ লাগে, সব মিলিয়ে মনে হয় জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পাবে, মাথা খারাপ হয়ে যাবে, এমনকি অনেক সময় মনে হয় ‘এখুনি মারা যাব’। একটু বলে নেওয়া যাক যে, অনেক ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বারবার এই Panic attack দেখা যায়, যার সঙ্গে অ্যাগারোফোবিয়া যুক্ত নাও থাকতে পারে আবার অ্যাগারোফোবিয়া রোগীরও অনেক সময় Panic attack হচ্ছে না এমনও হয়। অনেক সময় এই দুটি রোগের সঙ্গে থাকে মানসিক অবসাদ, বাতিকের রোগ বা মদের উপর নির্ভরশীলতা।

হঠাৎ আতঙ্কের অনুভূতি বা Panic attack অনেক সময় কিন্তু শারীরিক অসুখের কারণেও হতে পারে এবং বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখে নেওয়া প্রয়োজন যে রোগীর কোনও শারীরিক সমস্যা আছে কিনা। হৃদ্‌যন্ত্রের বিভিন্ন অসুখ, যেমন রক্তাল্পতা, অ্যানজাইনা, বর্ধিত রক্তচাপ, হৃৎপিণ্ডের একটি ভাল্ব-এর অধিক পতনশীল হয়ে পড়া (মাইট্রাল ভাল্ব প্রোলাপ্স্), হার্ট অ্যাটাক, শ্বাসপ্রণালীর বিভ্রম, যেমন হাঁপানি বা অ্যাজমা, হাইপারভেনটিলেশন বা বর্ধিত শ্বাস-প্রশ্বাসের হার ইত্যাদি; স্নায়ুরোগ, যেমন খিঁচুনি বা ব্রেনের স্ট্রোক বা নার্ভের সংক্রমণ বা স্নায়ুতন্ত্রীর হ্রাস হচ্ছে এমন রোগ; গ্রন্থির অধিক বা অল্প ক্ষরণজনিত রোগ যেমন ফিওক্রোমোসাইটোসা, ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের আধিক্য ও অল্পতা, কারসিনয়েড, কুশিনং-সিনড্রোম প্রভৃতি। এছাড়াও কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং মদ ও মাদকের নেশার ফলাফল; বড়ো ধরনের সংক্রমণ, ভিটামিনের অভাব ইত্যাদি বহু কারণেই কিন্তু Panic Attack-এর অন্তর্গত কিছু কিছু উপসর্গ দেখা যায়।

এরপর আলোচনার বিষয়বস্তু হল কিছু নির্দিষ্ট ফোবিয়া এবং সামাজিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত ফোবিয়া। ফোবিয়া হল কোনও বিশেষ বস্তু বা ঘটনা বা সামাজিক পরিস্থিতি সম্পর্কিত এক অমূলক অজানা আতঙ্ক, যার ফলস্বরূপ রোগী সেই বিশেষ বস্তু বা পরিস্থিতি এড়িয়ে চলে। সে বোঝে যে ভীতির কারণ অমূলক এবং এই ভাবনাটি তাকে নিরন্তর বিরক্ত করে। কিন্তু সে কিছুতেই এই ভয়কে কাটিয়ে উঠতে পারে না। ধীরে ধীরে সে তার স্বাভাবিক কাজকর্ম ও জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন ও গৃহবন্দি হয়ে পড়ে। নির্দিষ্ট বস্তু বা ঘটনা সম্পর্কিত ফোবিয়া সামাজিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত ফোবিয়ার থেকে বেশি পরিমাণে দেখা যায় এবং মহিলাদের মধ্যেই এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।

এবার দেখা যাক কোন কোন বিষয়ে এই আতঙ্ক তৈরি হয়। যদিও অসংখ্য বস্তু বা ঘটনা থেকেই ফোবিয়ার সৃষ্টি হতে পারে, যেগুলির প্রাদুর্ভাব বেশি সেগুলি হল — জন্তু-জানোয়ারের ভীতি, ঝড়-বৃষ্টি-বিদ্যুতের ভীতি, উচ্চতার ভীতি, অসুখের ভীতি, আঘাতের ভীতি ও মৃত্যুভয়। এছাড়া অচেনা লোক সম্পর্কিত ভীতি, রক্ত বা ইনজেকশনের ভয়, বদ্ধ পরিবেশের ভীতিও দেখা যায়।

ফোবিয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই আসে দুটি বিষয় সম্বন্ধে আলোচনা। 

প্রথমত, পাভলভ-এর Classical Conditioning-এর দৃষ্টিকোণ। কোনো যথাযথ ভীতি উদ্রেককারী বস্তু বা পরিস্থিতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনও সাধারণ বস্তু বা পরিস্থিতি বারংবার ঘটতে থাকলে পরবর্তীকালে দেখা যায় যে এই সাধারণ বস্তুটিই ভীতি বা উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করতে সক্ষম হচ্ছে। তখন এই সাধারণ বস্তুটিই ভীতি বা উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করতে সক্ষম হচ্ছে। তখন এই সাধারণ বস্তুটিই ভীতি উদ্রেক করার জন্য শিক্ষণলব্ধ হয়ে যায়। কিন্তু পাভলভ বলেছেন যে, এই দুটি বস্তু সম্পৃক্ত না থাকলে ধীরে ধীরে শিক্ষণলব্ধ ব্যবহারটি লুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু ফোবিয়ার ক্ষেত্রে তা ঘটে না। আসুন দেখা যাক কেন হয় না। উদ্‌বেগের কারণে মানুষ চেষ্টা করে এমন কিছু করতে যা সেই উৎকণ্ঠাকে কমাতে পারে এবং ধীরে ধীরে মানুষ বুঝতে পারে কী করলে অথবা কী না-করলে উদ্‌বেগ কমে যেতে বাধ্য। তাই এই ব্যবহারটি ধীরে ধীরে চিরন্তন হয়ে ওঠে — এর নাম Operant conditioning।

দ্বিতীয়ত, ফ্রয়েড বলেছেন যে, মনের কোনও অচেতন নিষিদ্ধ ইচ্ছা যখন প্রকাশের পথ খোঁজে তখন ego চায় বিভিন্ন Primary Defence Mechanism বা প্রাথমিক আত্মরক্ষার পদ্ধতির সাহায্যে তাকে দমন করতে। যখন ego বা অহং — এই ইচ্ছাগুলিকে অবদমিত করতে ব্যর্থ হয় তখন অন্যান্য আত্মরক্ষার পদ্ধতির সাহায্য নিতে হয় এবং displacement বা বিচ্যুতি ব্যবহার করে যাতে করে নিষিদ্ধ ইচ্ছাটি কোনও সাধারণ ও অসংলগ্ন বিষয়, পরিস্থিতি বা বস্তুর উপর বিচ্যুত হয় এবং উদ্‌বেগের সৃষ্টি করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফোবিয়া উদ্রেককারী বস্তুটি এমন হয় যা সেই আদিম নিষিদ্ধ ইচ্ছার সঙ্গে কোনোভাবে সম্পৃক্ত থাকতে পারে অথবা এমন বস্তু যা সহজেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। আর থাকে ফোবিয়ার ক্ষেত্রে Counter Phobic Attitude বা ফোবিয়া সম্পর্কে বিরুদ্ধ ভাবনা। ফ্রয়েড দেখিয়েছেন মানুষ যে বস্তু বা পরিস্থিতিকে সর্বাধিক ভয় পায় বা যা তার মনে গভীর উদ্‌বেগের সৃষ্টি করে, অনেক সময় সেই ভয়টাকে সে অস্বীকার করার চেষ্টা করে এবং তাই সেই কাজটাই অধিক পরিমাণে এবং অধিকতর আগ্রাসী মনোভাব সহকারে করতে চায়। যাঁরা কোনও বিপজ্জনক খেলায় (যেমন প্যারাশুট থেকে লাফানো বা পর্বতারোহণ) অংশগ্রহণ করেন অথবা যে শিশু ডাক্তার সেজে সঙ্গে পুতুলটিকে ইনজেকশন দেয় — তারা সকলেই এই ব্যবহার প্রকাশ করে। কোনও সাধারণ কাজের সঙ্গে ভীতিপ্রদ কোনও স্মৃতি বা অভিজ্ঞতাকে সম্পৃক্ত করে রাখলে অনেক ক্ষেত্রে ফোবিয়া তৈরি হয়, যেমন গাড়ি চালানোর সঙ্গে দুর্ঘটনার যোগাযোগ। আবার কেউ কেউ পরিচিত লোকের আদলে তাদের ব্যবহার পরিবর্তিত করে অথবা বয়ঃজ্যেষ্ঠ কারও কাছ থেকে শিখে নেয় যে বিশেষ কোনও জিনিসের সঙ্গে ভয়ের যোগাযোগটা খুবই ঘনিষ্ঠ।

সবশেষে অস্বীকার করার উপায় নেই যে কিছু কিছু ফোবিয়া (যেমন রক্ত, ইনজেকশন, আঘাত সংক্রান্ত ফোবিয়া) কিছুটা অন্যতর। এখানে রোগী সেই পরিস্থিতিকে ভয় পায় যেখানে সে অচেনা লোকের সঙ্গে রয়েছে এবং যেখানে তার বিরূপ সমালোচনা হতে পারে। তার সর্বদা ভয় এই বুঝি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার করে ফেললাম এবং এই ভয়ের থেকে সৃষ্টি হয় উদ্‌বেগর, এমনকি হঠাৎ তীব্র আতঙ্কের অনুভূতি বা Panic Attack আরম্ভ হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। মাঝে মাঝে Panic Attack আর Phobia যেন গুলিয়ে যায়। যেমন কোনও একটি বিশেষ অবস্থায় (যেমন লিফ্টের মধ্যে) একজন রোগী হয়তো একটিবার মাত্র Panic Attack-এর শিকার হলেন এবং পরবর্তীকালে চিরদিনের জন্য লিফ্ট ব্যবহার বন্ধ করে দিলেন — তিনি কিন্তু নির্দিষ্ট ফোবিয়ার রোগী (এক্ষেত্রে লিফ্ট ব্যবহার)। আবার অন্য কেউ যার বারবার Panic Attack হচ্ছে, সে হয়তো কোনও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে ভয় পাচ্ছে, তার কিন্তু রোগের আসল কারণ Panic Attack, সামাজিক বিষয় সম্পৃক্ত ফোবিয়া নয়।

অ্যাগারোফোবিয়া রোগী যেমন কোনও একজন সঙ্গীর সাহচর্যে আরাম বোধ করে, সামাজিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত ফোবিয়ার রোগী তেমন একা থাকাই অধিক পছন্দ করে। এছাড়া কোনও হৃদয়বিদারক ঘটনার স্মৃতি বহুবছর পরেও স্বপ্নে এবং বাস্তবে আতঙ্কের রোগ তৈরি করে, যাকে Post Traumatic Stress Disorder নামে চিহ্নিত করা হয়। যে মানুষ ভূমিকম্প, যুদ্ধ, বন্যা এইসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছে, এইসব ঘটনার সুদূরপ্রসারী প্রভাব তার মনের উপর পড়ে। অনেক সময় এই রোগেও হঠাৎ তীব্র আতঙ্কের অনুভূতি বা Panic Attack-ও দেখা যায়। যেমন দেখা যায় বাতিকগ্রস্ত কোনও মানুষকে যদি তার বাতিকের বস্তুটির (যেমন শুচিবায়ুগ্রস্থ রোগীকে  যদি আবর্জনার মধ্যে থাকতে বাধ্য করা হয়) সঙ্গে সহবাস করতে বলা হয়। উদ্‌বেগ, উৎকণ্ঠা বা আতঙ্কের রোগের কিন্তু এখানেই শেষ নয়। কিছু কিছু আপাত শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকে উদ্‌বেগ ও উৎকন্ঠা। এই অসুখগুলিকে আমরা Psychosomatic Disorder বলতে পারি যেখানে শরীর ও মন উভয়েই অসুস্থ এবং একের উপর অন্যের  উপর প্রভাব স্পষ্ট। অবশ্য এখানে আমাদের আলোচনার বিষয় হল সেই সমস্ত অসুখ যা উদ্‌বেগের কারণে সৃষ্টি হয় বা যা উদ্‌বেগ বাড়িয়ে তোলে। নীচে এমন কতগুলি অসুখ সম্পর্কে স্বল্প পরিসরে আলোচনা করা হল —

১।পেপটিক আলসার : মনের উপর অত্যধিক চাপ সৃষ্টি হওয়া এবং উদ্‌বেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় অ্যাসিড ও পেপসিন নামক হরমোনের অধিক ক্ষরণের ফলে এই রোগ বৃদ্ধি পায় এবং চিকিৎসার অঙ্গ হিসেবে উদ্‌বেগ কমানোর জন্য বেঞ্জোডায়জিপিন গ্রুপের ওষুধ দেওয়া হয়।

২।উদ্‌বেগজনিত মাথাব্যথা : উদ্‌বেগজনিত কারণে অনেক ক্ষেত্রে মাথা ও ঘাড়ের মাংসপেশীর সংকোচন ঘটে এবং অসাড় করা এক ধরনের ব্যথা হতে থাকে। সচরাচর দিনের শেষভাগে মাথাব্যথা আরম্ভ হয় যখন মানুষ সারাদিনের পরিশ্রমের শেষে ক্লান্ত হয়ে শারীরিক ও মানসিক সমস্যার দিকে তাকাবার সময় পায়। অনেক সময় Tension headache-এর সঙ্গে মানসিক অবসাদও দেখা যায়।

৩।জননতন্ত্রের সমস্যা : উদ্‌বেগের কারণে পুরুষদের ক্ষেত্রে লিঙ্গের দৃঢ়ভাব (erection) কমে আসতে পারে এবং নারী যৌনজীবন সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

৪।উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌ক্রিয়ার অন্যান্য অসুখ : এগুলির ক্ষেত্রে উদ্‌বেগ এক গভীর সমস্যা তৈরি করে এবং হার্টের রোগীদের বা যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাঁদের সবারই উদ্‌বেগ কমানোর জন্য ওষুধ ও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। অনেক রোগীদের মধ্যে আবার হার্টের কোনও অসুখ না থাকলেও তাঁরা হার্টের অসুখের বিভিন্ন উপসর্গ অনুভব করেন এবং সে সম্বন্ধে তাদের মধ্যে উদ্‌বেগ বা আতঙ্কের সৃষ্টি হতে পারে।

৫।অ্যাজমা বা হাঁপানি : স্বল্পস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী উদ্‌বেগ ও উৎকণ্ঠা সাধারণ মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের হার পরিবর্তন করতে পারে এবং হাঁপানি রোগীদের ক্ষেত্রে তা আরও স্পষ্ট করে দেখা যায়। হাঁপানি রোগীদের ক্ষেত্রে ইনহেলারের উপর অত্যধিক বেশি নির্ভরশীলতা দেখা যায় এবং সেই নির্ভরশীলতার অভাব অনেক সময় উদ্‌বেগের সৃষ্টি করে ও হাঁপানি বাড়িয়ে তোলে।

৬।অস্থি ও মাংসপেশির অসুখ : দীর্ঘস্থায়ী উদ্‌বেগ ও উৎকণ্ঠা অনাক্রম্যতার স্তরে (Immune System) পরিবর্তন ঘটিয়ে অস্থি ও মাংসপেশির সংযুক্ত যে সমস্ত রোগ, যেমন Rheumatoid Arthritis-এর কারণ হতে পারে। কোমরে ব্যথার মতো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার ক্ষেত্রেও উদ্‌বেগ ও মানসিক অবসাদ দেখা যায়।

৭।চর্মরোগ : বিভিন্ন ধরনের চুলকানি এবং অত্যধিক ঘাম হওয়াও অনেকসময় উদ্‌বেগের কারণে হতে পারে।

শেষের কথা

বর্তমান ইঁদুরদৌড়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হচ্ছে প্রতিটি মানুষকে প্রতিনিয়ত। এই দৌড়ের পথ উঁচু নীচু, বহু বাধা-বিঘ্নে ভরা। পথে চলতে চলতে উদ্‌বেগ, উৎকণ্ঠা এমনকি আতঙ্ক আজ আমাদের নিত্যসঙ্গী। তাই আজ আমাদের প্রত্যেককে জানতে হবে এর কারণ, চিনতে হবে এর প্রকৃত উপসর্গগুলি আর এগিয়ে আসতে হবে এর মোকালিায়। তবেই মানুষ উদ্‌বেগের সঙ্গে আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারবেন।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান