বিশ্বজিৎ পাল
ভারতবর্ষের সমাজ ব্যবস্থা হল একটি বিষমরূপী (Heterogenous) ও বহুস্তরীয় (Multilayered) ব্যবস্থা। এই বিষমরূপ নির্ধারিত হয় জাত, ধর্ম, ভাষা, খাদ্য, পোশাক ইত্যাদির ভিন্নতার উপর। এর থেকে তৈরি হয় বহুসংস্কৃতিবাদ (Multiculturalism)। ভারতবর্ষের ইতিহাসে যে বিষয়টি ভীষণ উল্লেখযোগ্য তা হল— এই দেশ বিভিন্ন সময়ে বিদেশি শাসকের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। ফল স্বরূপ আমরা উপলব্ধি করেছি যে বার বার শাসক তার সুবিধার্থে উপরি উল্লিখিত বিষমরূপীতাকে পরিবর্তিত করে সমসত্ত্বতা (Homogeneity) প্রতিষ্ঠা করতে উদ্গ্রীব ছিলেন। ঔপনিবেশিক শাসকের থেকে স্বাধীনতা আসার মুহূর্তে ও কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরে যখন দেশের পরিচালন ক্ষমতা ভারতীয় নাগরিকের হাতে এল তখনও প্রভাবশালী রাজনৈতিক কৌশল এই সমসত্ত্বতা (Homogeneity) প্রতিষ্ঠার প্রতি বেশি ঝুঁকে ছিল। যার পরিণতি হিসাবে আমরা লক্ষ করেছি বাংলার সমাজকে, যেখানে ১৯০৫ সালের বঙ্গ ভঙ্গ ঘোষণা হওয়ার পর ১৯১১ সালে সেটি রদ হয়ে যায়, কিন্তু তার মাত্র ৩৫ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে ধর্মীয় ভিত্তিতে দেশভাগের মতো সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অতিক্রান্ত হতে হয়েছিল। এই সময় মূলত যে রাজনৈতিক কৌশলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেটি হল — বহিষ্করণের রাজনীতির (Politics of exclusion)। এই কৌশলের সুপরিকল্পিত প্রয়োগ বাংলার সমাজের সবথেকে বড়ো অংশ বহিষ্করণের মধ্যে চলে আসে, সেই গোষ্ঠী হল — ‘ছোটোলোক শ্রেণি’ তথা দলিত বা তপশিলি গোষ্ঠী (Bhattacharya, 2014)। এই ‘ছোটোলোক শ্রেণি’ তথা দলিত বা তপশিলি গোষ্ঠী সামাজিক ভাবে তো বটেই, রাজনৈতিক ভাবেও মূল সারি থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। দেশভাগ এই বিচ্ছিন্নতার পরিস্থিতিকে অধিক পরিমাণে জটিল করে তুলেছিল।
সমাজ হল এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে কতগুলি সামাজিক প্রতিষ্ঠান পরস্পরের সাথে নির্ভরশীলতার সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে থাকে। সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট, কার্যনির্বাহী তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট, অনুসারে একটি সমাজ ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হল তার অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব নিরসন করে নির্দিষ্ট সমাজ ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা। এই দার্শনিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বলা যেতে পারে যে, দেশভাগের মতো ঘটনা যেকোনও সমাজ ব্যাবস্থার জন্য সংকটময় পরিস্থিতি। ভারতীয় সমাজ এই সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অতিক্রান্ত হয়েছে। প্রশ্ন হল ভারতীয় সমাজ কি সেই সময় ভেঙে পড়েছিল? সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে না পড়লেও কিছু ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছিল এবং সেই পরিস্থিতি এখনও চলছে। উদাহরণ হিসাবে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি আলোচনার পরিসরে চলে আসে সেটি হল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। দেশভাগ ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এমন ভাবে ধূলিসাৎ করেছে যে আজও তার রেশ কাটেনি। দেশভাগের সামাজিক ইতিহাস বর্ণনা করতে গেলে প্রধানত এই সাম্প্রদায়িক হিংসার কথা বহুলাংশে চর্চা করা হয়। Sekhar Bandyopadhyay ও Anusua Basu Ray Choudhury (2022) ভারত ভাগের ইতিহাস চর্চার প্রভাবশালী ধারাকে সমালোচনা করে উল্লেখ করেছেন যে— ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ যারা ছিল ব্রিটিশ ভারতের প্রধান দু-টি রাজনৈতিক দল যারা দেশভাগের সামগ্রিক বিষয়টিকে প্রভাবিত করেছিল এবং একইসাথে দেশভাগের সাথে সম্পৃক্ত হিংসায় একদিকে ছিল হিন্দু ও শিখ সম্প্রদায় ও অন্যদিকে ছিল মুসলিম— এর বাইরেও একটি আলোচনা আছে যেটি নিয়ে চর্চা কম হয়েছে, সেটি হল দেশভাগের প্রেক্ষাপটে দলিত বা তপশিলি জাতের অবস্থা, তাদের ভূমিকা ও তপশিলি রাজনৈতিক সংগঠনের ভূমিকা কী ছিল? Urvasi Butalia (2000) বলেছেন এই প্রভাবশালী মতাদর্শ কংগ্রেস বা হিন্দু সমাজের অভ্যন্তরের দন্দ্ব নিয়ে বা সাম্প্রদায়িক বিভাজন নিয়ে চর্চা করে সমাজের একটি বড়ো অংশকে — তপশিলি ও অস্পৃশ্যদের চর্চার বাইরে রেখেছে, বস্তুতপক্ষে তাদের অদৃশ্য করে রেখেছে। এই দলিত গোষ্ঠীকে দীর্ঘদিন ‘ভদ্রলোক’ শ্রেণি রাজনৈতিক পরিসর থেকে দূরে রেখেছিল কারণ রাজনীতি ছিল উচ্চ বর্ণের ইংরেজি ভাষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের দ্বারা আবদ্ধ। এহেন পরিস্থিতিতে ভারত শাসন আইনের প্রভাবে ভারতের তথা বাংলার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কাঠামোগত পরিবর্তন আসে, রাজনীতিতে মফস্সলের আবির্ভাব হয় (Chatterjee 2002)। ফলে দেশভাগ সমাজে ধর্মীয় বিভাজন ছাড়াও অপর একটি ভারসাম্যহীনতা তৈরি করেছিল, সেটি হল তৎকালীন প্রভাবশালী ‘ভদ্রলোক’ রাজনৈতিক গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত ‘বহিষ্করণের রাজনীতি’ কৌশল, যার মাধ্যমে সমাজের নিম্ন শ্রেণির সংখ্যা গরিষ্ঠ ব্যক্তিরা জন্মভূমি থেকে উৎখাত হয়েছিল এবং ‘ভদ্রলোক’ রাজনৈতিক গোষ্ঠী তার রাজনৈতিক ক্ষমতাকে সুরক্ষিত করেছিল। ব্রিটিশ শাসনের শেষ ২৫ বছর যাকে ‘বাংলার সন্ধিক্ষণ’ বলে চিহ্নিত করা যেতে পারে, সেই সময় ‘ভদ্রলোক’ রাজনৈতিক গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত ‘বহিষ্করণের রাজনীতি’ কৌশলের বিরুদ্ধে তপশিলি গোষ্ঠীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের অন্তর্ভুক্তিকরণ রাজনীতি করে একটি স্বাধিকার ভিত্তিক রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন তা দেশভাগের সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ইতিহাসে, চাপা পরে রয়েছে। ১৯৪৭ পর্যন্ত এই তপশিলি গোষ্ঠীর রাজনৈতিক ভিত্তি অবিভক্ত বাংলায় উল্লেখযোগ্য ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এই গোষ্ঠী ১৯৩৭ সালের সাধারণ নির্বাচনের পরে বাংলায় সরকার গঠনে একদিকে ভারসাম্য প্রদানকারী অংশ হিসাবে উঠে এসেছিল অন্যদিকে বলা যেতে পারে যে তপশিলি জাতের এম. এল. এ-গণ একটি ‘pressure group’ হিসাবে উঠে এসেছিল। যার প্রমাণ স্বরূপ আমরা বাংলার প্রাদেশিক মন্ত্রীসভার কাঠামো দেখলে বুঝতে পারব, এছাড়া এই গোষ্ঠীর রাজনৈতিক শক্তির জন্য, মূলত এই তপশিলি গোষ্ঠীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের প্রচেষ্টায় আম্বেদকর বাংলা প্রদেশ থেকে সংবিধান সভায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা তৎকালীন বাংলায় তপশিলি জাতের রাজনৈতিক পরিধির প্রমাণ দেয়।
উপরিউক্ত প্রেক্ষাপটে যে প্রশ্ন গুলি গুরুত্বপূর্ণ তা হল — কে যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডল? তার রাজনৈতিক কৌশল কী ছিল এবং সেই কৌশলের পরিণতি কী হয়েছিল?
যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল — সংক্ষিপ্ত জীবনী
১৯০৪ সালের ২৯ জানুয়ারি বরিশাল জেলার (বর্তমানে বাংলাদেশে) গৌরনদী থানার মৈস্তারকান্দি গ্রামে একটি দরিদ্র নমঃশূদ্র পরিবারে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। প্রতিকূল আর্থিক পরিস্থিতি ও জাত বৈষম্য উপেক্ষা করে মণ্ডল নিজেকে আইনজীবী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৩৬ সালের ২৫ জুলাই মণ্ডল বরিশাল সদর আদালতে যোগদান করেছিলেন (Mandal 2003)। এই বছর তিনি বরিশাল সদর লোকাল বোর্ড ও পরের বছর ১৯৩৭ সালে তিনি জেলা বোর্ডের সদস্য হন। কিন্তু এসবের থেকেও যেটি গুরুত্বপূর্ণ তা হল ১৯৩৭ সালের সাধারণ নির্বাচন, যেখানে নমঃশূদ্র যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল একটি অসংরক্ষিত কেন্দ্র থেকে বর্ণ হিন্দু কংগ্রেস প্রার্থী সরল দত্তকে পরাজিত করেন, সরল দত্ত ছিলেন অশ্বিনী কুমার দত্তের পরিবারের সদস্য। ফলে এই জয় কোনও সাধারণ জয় ছিল না, এটিকে Charismatic জয় বলা যায়। এই জয়ের পিছনে জাত পরিচয়ের রাজনীতি, সংখ্যার রাজনীতি যেমন ছিল, তার থেকেও বড়ো ছিল মণ্ডলের সমাজ, জাত, শ্রেণি ও রাষ্ট্র সম্পর্কের বোধ। একইসাথে এই জয়ের পিছনে ছিল কিছু উদারনৈতিক বর্ণ হিন্দুর সমর্থন। মণ্ডলের যেমন ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা ছিল তেমনি মণ্ডলের সামাজিক বাস্তবতা সম্পর্কে জ্ঞান নির্বাচনে তার জয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৩৭ থেকে ১৯৫০ সাল এই সময় মণ্ডলের সোনালি যুগ। এই সময় তিনি খাজা নাজিমুদ্দিন থেকে শুরু করে সোহরাওয়ার্দি, জওহরলাল নেহরু, জিন্না এদের মন্ত্রীসভায় কাজ করেছিলেন (Parvez 2019)। এই সময়ে মণ্ডল সমবায় ও ঋণ মন্ত্রী, বিচার, পূর্ত ও গৃহনির্মাণ মন্ত্রী, নেহরুর নেতৃত্বে ভারতের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন মন্ত্রী এবং স্বাধীন পাকিস্তানের আইন মন্ত্রী ও স্পিকার হিসাবে পদ গ্রহণ করেছিলেন ফলে বোঝাই যাচ্ছে সেই সময় মণ্ডল ক্ষমতার অলিন্দে ছিলেন। এত সময় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকার পরও মণ্ডল ক্ষমতা কুক্ষিগত করেনি। ১৯৫০ পরবর্তী সময় তার জীবন ছিল ধূসর, প্রতিকূলতায় ভরা। এই সময় তিনি রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করতে লড়াই করেন উদ্বাস্তু পুনর্বাসনকে কেন্দ্র করে। কিন্তু ধূসরতার রং অনেক গাঢ়, সহজে যায় না। মণ্ডলের মুসলিম লিগের সাথে রাজনৈতিক জোটকে তৎকালীন প্রভাবশালী রাজনৈতিক অক্ষ একটি সাম্প্রদায়িক জোট হিসাবে চিহ্নিত করে দেওয়ার সফল চেষ্টা হয়েছিল। যার ফলে মণ্ডলের অবিভক্ত বাংলার ব্যক্তব্যকে কোনোভাবেই প্রচারের আলোতে আনা হয় না। এর কারণ হিসাবে ঐতিহাসিকরা বিস্তারিত যুক্তি হয়তো দিতে পারবেন, কিন্তু সমাজতাত্ত্বিক ভাবে দেখলে প্রভাবশালী রক্ষণশীল বহিষ্করণের রাজনীতির (Politics of exclusion) কাছে উদারনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণ রাজনীতির (Politics of inclusiveness) পরাজয় হিসাবে চিহ্নিত হবে। স্বাধীন ভারতে অনেক গুলো নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে ১৯৬৮ সালের অক্টোবর মাসের ৫ তারিখে, মণ্ডল মারা যান (Usuda 1999)। এই পরাজয় শুধুমাত্র তার রাজনৈতিক পরাজয় হিসাবে বিশ্লেষিত হতে পারে না, এই পরাজয় দলিত-বহুজনবাদের পরাজয়, অন্তর্ভুক্তিকরণ রাজনীতির (Politics of inclusiveness) পরাজয়, একই সাথে স্বাধীন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দলিত রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পরাজয়। এই পরাজয় কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লেগেছে। বলা যেতে পারে যে এখনও সম্পূর্ণ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল — কিছু সামাজিক ও রাজনৈতিক কৌশল
যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের রাজনীতি ও রাজনৈতিক কৌশল মূলত ছিল ভদ্রলোক বা প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে। স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রভাবশালী আধিপত্যকারী গোষ্ঠী হল উঁচু জাতের বর্ণবাদী গোষ্ঠী এবং কংগ্রেস-মুসলিম লিগ নির্ভর রাজনৈতিক অক্ষ। এছাড়া হিন্দু মহাসভার মতো সংগঠনকেও এই আধিপত্যকারী দলের মধ্যে রাখা যায়। এরা প্রত্যেকে নিজেদের সামাজিক ও রাজনৈতিক সুবিধার জন্য All India Scheduled Caste Federation (AISF) ও পরবর্তীতে Bengal Scheduled Caste Federation (BSCF) কে নিজেদের অক্ষে শামিল করে সামাজিক সমসত্ত্বতা (Homogeneity) প্রতিষ্ঠা করে তাদের ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করে গেছে। মণ্ডল যে গোষ্ঠীর প্রতিনিধি ছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই এই আধিপত্যের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু মণ্ডল চেষ্টা করেছিলেন যাতে তপশিলি গোষ্ঠী একটি স্বতন্ত্র সত্তা তৈরি করতে পারে। এই পরিপ্রেক্ষিতে মণ্ডলের যে কৌশলগুলি চিহ্নিত করা যায় সেগুলি হল—
- ‘বরিশালের যোগেন মণ্ডল’ গ্রন্থে আমরা মণ্ডলের যে বক্তব্য পাই সেখান থেকে স্পষ্ট যে — তিনি নীচু জাতের সামাজিক সচলতার জন্য কোনোভাবেই সংস্কৃতায়ন প্রক্রিয়ার সমর্থক ছিলেন না, বরং তিনি শিক্ষার মাধ্যমে এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সামাজিক সচলতার পক্ষে কথা বলেছিলেন। “পৈতা পইরা আর পদবী পালটাইয়া নমশূদ্ররা কুনদিন কাস্ট- হিন্দু হইবার পারব না। আরে, বামুন-কায়েত-বৈদ্যরা তো শুধু হায়ার কাস্ট না, হায়ার কালচার। সেই কালচার তুমি পাইব্যা ক্যামনে — এডুকেশন ছাড়া? এক এডুকেশনই তো তোমারে নমশূদ্র পরিচয়ে প্রাইড দিবার পারে।” (Ray 2010).
- যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল দলিত-মুসলিম রাজনৈতিক জোটের কথা বলেছিলেন। তিনি মনে করতেন যে বাংলার দরিদ্র মুসলিম কৃষক ও তপশিলি জাতের লোকেরা শ্রেণিগত ভাবে সমান স্থানে বসবাস করছেন, ফলে উঁচু জাতের জমিদার ও ভদ্রলোক গোষ্ঠী দ্বারা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দলিত-মুসলিম রাজনৈতিক জোট একটি আদর্শ পরিস্থিতি।
- মণ্ডল প্রভাবশালী আধিপত্যকারী রাজনৈতিক দলের সাথে মিশে গিয়ে ক্ষমতার অলিন্দে বসবাস না করে স্বতন্ত্র দলিত রাজনৈতিক ভাবনা তৈরি করতে সচেষ্ট ছিলেন।
- মণ্ডল ধর্ম ও রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য রেখেছিলেন, ফলে দেশভাগের পর তিনি তপশিলিদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা ভেবে মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ পাকিস্তানে রয়ে গিয়েছিলেন। বর্ণবাদকে তিনি অধিক শোষণমূলক বলে মনে করতেন, এবং ভারতবর্ষের সমাজে বর্ণবাদ ভিত্তিক রাজনীতিতে তপশিলিরা কোনোভাবেই সামাজিক মর্যাদা পাবেন না সেই বিশয়ে নিশ্চিত ছিলেন।
- ১৯৫০ সালে মণ্ডল পাকিস্তানের মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করে, ভারতে এসে উদ্বাস্তু হিসাবে বসবাস শুরু করেন। এই সময় তিনি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন নিয়ে রাজনৈতিক লড়াই করেছিলেন। উদ্বাস্তুরা যেন কোনোভাবেই শুধুমাত্র রাজনৈতিক উপাদান হিসাবে না রয়ে যায় তার জন্য লড়াই করার চেষ্টা করেছিলেন।
সামাজিক ও রাজনৈতিক কৌশলের পরিণতি
মণ্ডলের সামাজিক ও রাজনৈতিক কৌশলের পরিণতি বিশ্লেষণ তিনটি সময়কালে করতে হবে। প্রথম সময়কাল হল— ১৯৩৭-১৯৪৭, দ্বিতীয়টি হল ১৯৪৭-১৯৫০, এবং পরিশেষে ১৯৫০ সালের পরবর্তী সময়। এই সময়কালের মধ্যে প্রথম ভাগটি ছিল মণ্ডলের উত্থান পর্ব। এই সময় তিনি ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একটি জাতিকে অংশগ্রহণ মূলক রাজনীতির বা অন্তর্ভুক্তিকরণ রাজনীতির পরিসরে নিয়ে আসেন এবং একটি তপশিলি জাতিকে— যারা মূলত সমাজে শ্লেষ হিসাবে বিবেচ্য হত, যাদের স্পর্শ ও ছায়া অপবিত্র ছিল তাদের একটি রাজনৈতিক ভারসাম্য প্রদানকারী অংশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি তপশিলি গোষ্ঠীর শিক্ষার প্রসারে সরকারি অর্থ বরাদ্দ এবং চাকরিতে কমিউনাল রেশিও মেনে তপশিলিদের প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। বাংলা প্রদেশে একক ভাবে তপশিলি জাতির অন্তর্ভুক্তিকরণ রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতিষ্ঠা করে আম্বেদকরকে সংবিধান সভার সদস্য হিসাবে জয়যুক্ত করে মণ্ডল প্রভাবশালী রাজনৈতিক অক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। প্রভাবশালী রাজনৈতিক অক্ষ এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছিল, এবং Dwaipayan Sen তার গ্রন্থ “The Decline of Caste Question Jogendranath Mandal and the Decline of Caste Question” এ বলেছেন ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৭ সালে বর্ণবাদী ভদ্রলোক, কংগ্রেস, হিন্দু মহাসভা প্রত্যেকে মণ্ডল ও তপশিলি রাজনৈতিক ক্ষমতাকে পরাজিত করতে Politics of mutual exclusion, politics of misrecognition ইত্যাদি কৌশলের সাহায্য নিয়েছিলেন। মূলত তপশিলি রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেও বিভাজন আনতে সক্ষম হয়েছিলেন (AISCF ও AIDCL বিরোধ)। ফলে মণ্ডলের অন্তর্ভুক্তিকরণ কৌশল প্রভাবশালী আধিপত্যকারী গোষ্ঠীর কাছে পরাজিত হয়েছিল। Sekhar Bandyopadhyay (2011) বলেন যে দেশভাগের প্রাক্কালে বাংলায় তপশিলি তথা নমশূদ্র দ্বারা পরিচালিত আন্দোলন দুর্বল হয়ে পরে তার অন্যতম কারণ হল কিছু তপশিলি নেতারা দরিদ্র তপশিলি কৃষকদের থেকে, তাদের সমস্যা থেকে দূরে সরে রাজনীতি করা শুরু করেছিলেন, ফলে সহজেই এই দূরত্ব তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে ও তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের রাজনীতিকে পরাজয়ের দিকে নিয়ে যায়। তার প্রতিফলন ১৯৪৭ সালের নির্বাচন ও পরবর্তীকালে দেশভাগের প্রসঙ্গে বেশিরভাগ মণ্ডলের অবস্থানে সম্পূর্ণ লক্ষণীয়।
১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক পরিচিতি নির্ভর দেশভাগ মণ্ডলকে একটি সংকটময় পরিস্থিতে এনে দাঁড় করিয়েছিল। এই সময় মণ্ডল মুসলিম লিগের সাথে রাজনৈতিক জোটে আবদ্ধ ছিলেন, তা সত্তেও তিনি যুক্ত বাংলার পক্ষে প্রচার করেন, এবং সমগ্র জাতির কাছে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়েন। তিনি যুক্ত বাংলার পক্ষে ছিলেন কারণ বাংলা প্রদেশে তপশিলি ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ, ফলে সেটি ছিল বর্ণবাদের শোষণ থেকে মুক্তি পাবার, সম্মানজনক জীবন যাপনের একটি আশা, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের একটি পথ। কিন্তু দলিত রাজনীতিতে বিভাজন এই পথকে কণ্টকাকীর্ণ করে তোলে, এবং তপশিলি রাজনীতির স্বার্থে ও যুক্ত বাংলা মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর মণ্ডল তার নিজের জন্মভূমিতে থেকে যাওয়ার কঠিন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই সিদ্ধান্ত বাংলার তথা ভারতবর্ষের দলিত রাজনীতিতে একটি আঘাত।
১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে ১৯৫০ পর্যন্ত মণ্ডল পাকিস্তানে ছিলেন। ছিলেন মন্ত্রী পদে। ১৯৪৯ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে পাকিস্তানে পালিত হয়েছিল ‘মণ্ডল দিবস’ (Sengupta, 2017)। মণ্ডলের পাকিস্তান মন্ত্রীসভায় অংশগ্রহন ছিল বর্ণবাদী সমাজ ব্যবস্থায় প্রতি কটাক্ষ, কংগ্রেসের রাজনীতির বিরুদ্ধে তপশিলিদের বৈরিতার প্রকাশ, অন্যদিকে মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের উদারনীতিকতার নিদর্শন। মণ্ডলের এই রাজনীতি নির্ভর সিদ্ধান্ত বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। জিন্নার মৃত্যুর পর তপশিলি অধ্যুষিত অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রতিবাদে এবং প্রশাসনিক স্তরে তপশিলিদের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার প্রতিবাদে ১৯৫০ সালে মণ্ডল পাকিস্তান ত্যাগ করেন ও তার মন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং পরবর্তী সময় ভারতবর্ষে বসবাস করেন। এই তিন বছরে মণ্ডলের উপলব্ধি দীর্ঘ পদত্যাগ পত্রে বিস্তারিত লিপিবদ্ধ রয়েছে। মূল যে কথা তিনি তুলে ধরেছেন সেটা হল— বর্ণবাদ জাত ভিত্তিক শোষণ করত, ধর্মীয় মৌলবাদ সাম্প্রদায়িক বঞ্চনা এবং হত্যা করে। ফলে মণ্ডল যে দলিত-মুসলিম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোটের কথা বলেছিলেন সেটি তীব্র ভাবে ভেঙে পড়ে।
১৯৫০ এর পর থেকে মণ্ডল তার রাজনৈতিক সীমানা পরিবর্তিত করেন। ভারতবর্ষে তিনি তখন উদ্বাস্তু। তার রাজনৈতিক লড়াই তখন উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান ঘিরে আবর্তিত। এই প্রেক্ষিতে বলা যায় মণ্ডল তার রাজনীতির ক্ষেত্র পরিবর্তন করেছিলেন, কিন্তু এই কথা আংশিক সত্য কারণ তিনি উদ্বাস্তুদের মধ্যে জাত ভিত্তিক অর্থাৎ তপশিলি উদ্বাস্তু ও অ-তপশিলি উদ্বাস্তু ভাগ করেন বলে সমালোচিত ছিলেন। ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী ১৯৫০ সালে প্রায় ১১৭২৯২ জনসংখ্যা উদ্বাস্তু হিসাবে ভারতে আসেন, এদের মধ্যে বেশিরভাগ তপশিলি। মণ্ডল মনে করতেন যে দেশভাগে তপশিলি জনসংখ্যা উদ্বাস্তু হিসাবে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছিল, ফলে তাদের পুনর্বাসন ভিন্ন প্রকৃতির হওয়া প্রয়োজন। সামগ্রিক ভাবে তিনি ভারতবর্ষের পুনর্বাসন নীতিকে অবাস্তব এবং দায়সারা হিসাবে দেখেছিলেন, দণ্ডকারণ্যের অনুর্বর জমিতে তপশিলি কৃষক উদ্বাস্তুদের পাঠিয়ে দেওয়া একপ্রকার অবাস্তব এবং দায়সারা নীতি ছাড়া আর কিছুই না। ফলে মণ্ডল উদ্বাস্তুদের সামাজিক ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা করেছিলেন এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের দ্বারা আবদ্ধ না থেকে স্বতন্ত্র রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরির কথা বলেছিলেন। যথার্থ পুনর্বাসনের জন্য তিনি পি. আর. ঠাকুরের সাথে একই মঞ্চে আন্দোলন করেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে যে বিষয়টি স্পষ্ট সেটা হল মণ্ডল রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল ছিলেন এবং দেশভাগের সময় তার সাথে ঠাকুর বাড়ির মতের যে পার্থক্য তৈরি হয়েছিল তা উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে ততটা দেখা যায়নি। এর অন্যতম কারণ মণ্ডলের রাজনৈতিক অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সেই সময় অনিশ্চিত ছিল, এবং তার যে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ছিল সেটি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছিল।
যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল একজন পরাজিত দলিত নেতা বনাম যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল একজন অসম লড়াইয়ের সৈনিক
প্রবন্ধের পরিশেষে এসে বার বার মনে কিছু সংকীর্ণ প্রশ্ন উঠছে যে, একজন দলিত বা তপশিলি নেতা যে বাংলার প্রাদেশিক মন্ত্রীসভার সদস্য, ভারত সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্য, যিনি পাকিস্তানের মন্ত্রী, তিনি দেশভাগের ইতিহাসে কীভাবে ব্রাত্য? কেন দেশভাগের ইতিহাসে Caste issue-টি তুলনামূলক ভাবে কম চর্চিত? কেন মণ্ডল পরাজিত হলেন? কীভাবে বাংলায় তপশিলি গোষ্ঠী যে একটি pressure group হিসাবে কার্যকর ছিল, সেই বাংলায় স্বাধীনতার পরে autonomous Dalit political activism একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ল?
এই প্রশ্নের উত্তর ভাবতে গিয়ে প্রথম যে বিষয়টি তুলে ধরা যেতে পারে তা হল মণ্ডল যে লড়াই শুরু করেছিলেন সেটি ছিল অসম প্রতিযোগিতার লড়াই। এখানে দু-জন প্রতিযোগী সমান স্থান থেকে তাদের প্রতিযোগিতা শুরু করেনি। ফলে মণ্ডলের পিছিয়ে পড়া ও একটা সময় তার পরাজয় ছিল কালের নিয়মে। কিন্তু মফস্সলের আবির্ভাব ও প্রাদেশিক রাজনীতিতে মণ্ডলের উপস্থিতি, তার অন্তর্ভুক্তিকরণ বা প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনীতি মণ্ডলকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক ক্ষমতার অলিন্দে বসিয়ে রেখেছিল। দক্ষিণ এশিয়ার জাতভিত্তিক সমাজে এটি ইতিহাসের থেকে কম কিছু নয়। অন্যদিকে ভদ্রলোক শ্রেণি ক্রমাগতভাবে তপশিলি জাতির রাজনৈতিক শক্তিকে পরাজিত করার জন্য বিভিন্ন কৌশল করেছে। মণ্ডল তার রাজনৈতিক জীবনে সাফল্য পেয়েছিলেন মুসলিম লিগের সাথে জোট করে এবং নিজের Charismatic leadership এর উপর ভিত্তি করে। ফলে এই দুটো ক্ষেত্রেই মণ্ডল প্রভাবশালী মূলধারার রাজনৈতিক অক্ষের বিরোধী অবস্থানে ছিলেন।
মণ্ডলের পরাজয়ের জন্য যেমন অসম লড়াই দায়ী, তেমন তার কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দায়ী। আমাদের মনে রাখতে হবে যে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলকে যোগেন্দ্রনাথ মোল্লা নামে ডাকা হত, তার অন্যতম কারণ মুসলিম লিগের সাথে তার জোট। এছাড়া তিনি সিলেট গণভোটে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে ছিলেন, সেখানকার মানুষদের পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিতে আগ্রহ করেন। সিলেট ভারতবর্ষের বাইরে চলে গেল। এছাড়া আর-একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তা হল মণ্ডল যেভাবে পাকিস্তান ত্যাগ করেছিলেন তা একপ্রকার যুদ্ধের ময়দান থেকে সেনাপতির সর্বপ্রথম পালিয়ে যাওয়া। মণ্ডল নিজে আগে ভারতে এসেছিলেন তার পর তিনি কলকাতা থেকে তার পদত্যাগ প্রেরণ করেন, তারপর সমস্ত পাকিস্তান নিবাসী মণ্ডলপন্থী তপশিলিদের দেশ ত্যাগ করতে বলেছিলেন। ফলে পরবর্তী সময়ে তপশিলি নেতা হিসাবে মণ্ডলের গুরুত্ব কমে যায়। বিশেষ করে তপশিলি গোষ্ঠী যখন তার জন্মভূমি থেকে উৎখাত হয়ে উঠে এসে নতুন একটি দেশে উদ্বাস্তু হয়ে বসবাস করা শুরু করল তখন তাদের কাছে রাজনৈতিক পরিসর তৈরি করার পরিবর্তে ক্ষুধা মেটানো গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মণ্ডল তখন তপশিলি উদ্বাস্তুদের কাছে একজন সহ-উদ্বাস্তু ছাড়া আর কেউ নন। ফলে অবিভক্ত বাংলায় যে তপশিলি রাজনীতির শক্তি ছিল, যে autonomous Dalit political activism ছিল সেটি স্বাভাবিকভাবেই অস্তমিত হয়ে গেল, যেটি বর্তমান সময়েও সঠিক ভাবে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হয়নি।
তথ্যসূত্র :
১. Bandyopadhyay, S. (2011). ‘Caste, protest and identity in colonial India: The Namasudras of Bengal, 1872-1947’ (2nd ed). Oxford University Press
২. Bandyopadhyay, S. Basu Ray Choudhuri, A. (2023). ‘Caste and Partition in Bengal The Story of Dalit Refugees, 1946-1961’. Oxford University Press
৩. Bhattacharya, S. (2014). ‘The Defining Moments in Bengal 1920-1947’. New Delhi: Oxford University Press
৪. Butalia, U. (2000). ‘The Other Side of Silence: Voices From the Partition of India’. London: Hurst & Company
৫. Chatterji, J. (2002). ‘Bengal divided: Hindu communalism and partition, 1932-1947’. Cambridge University Press
৬. Mandal, J. (2003). ‘Mahapran Jogendranath’ (First Vol.) Kolkata: Coturtho Dunia
৭. Parvez, A. (2019). ‘Jogen Mondoler Bohujonbad O Deshbhag’. Prothoma Prokashan
৮. Ray, D. (2010). ‘Barishaler Jogen Mondal’. Dey’s Publishing
৯. Sen, D. (2018). ‘The Decline of the Caste Question: Jogendranath Mandal and the Defeat of Dalit Politics in Bengal’. Cambridge University Press
১০. Sengupta, A. (2017). “Partition and Dalit politics: The figure of Jogendra Nath Mandal”. In R. Jalil, T. Saint & D. Sengupta (Eds.), ‘Looking Back: The 1947 partition of India, 70 years on’ (pp. 24–35). New Delhi: Orient Blackswan
১১. Usuda, M. (1999). “Pushed towards Partition: Jogendranath Mandal and the Constrained Namasudra Movement” in Kotani (ed.), ‘Caste System, Untouchability and the Depressed’. New Delhi: Manohar