মৃণাল কান্তি চট্টোপাধ্যায়
আমাদের ভারতবর্ষ দীর্ঘ দিন ব্রিটিশদের দ্বারা পরাধীন ছিল। দেশকে স্বাধীন করার জন্য ভারতীয়দের বহু আন্দোলনের পরিণতিতে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট শেষ অবধি ভারত স্বাধীন হয়েছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আদর্শ এবং লক্ষ্য ছিল অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতা অর্জন। কিন্ত তাঁদের সেই স্বপ্ন অধরা হয়েছিল। অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দু-টি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া সেদিনের সংবাদপত্রে কীরূপ পড়েছিল তার তার কিছু নমুনা দেওয়ার চেষ্টা এই প্রবন্ধে হবে।
সেই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকার মধ্যে ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’ অবশ্যই স্মরণীয়। দেশ ভাগের কী প্রতিক্রিয়া এই সংবাদপত্রে হয়েছিল সেটা দেখা যাক। ‘ফ্রিডম অ্যাট কস্ট অফ পার্টিশন’ (Freedom at cost of Partition) এই শিরোনামে অমৃতবাজার পত্রিকা দেশভাগের পটভূমি ও দেশভাগের প্রতিক্রিয়াকে ব্যক্ত করেছে। পত্রিকার বক্তব্য হল— ২ জুন ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেন কংগ্রেস-শিখ ও মুসলিম নেতাদের কাছে ব্রিটিশদের ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনার রূপরেখা দিয়েছিলেন। এই পরিকল্পনা ৩ জুন প্রকাশিত হয়েছিল। এই পরিকল্পনাটি ছিল —
১) ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করে ভারত ও পাকিস্তান নামে দু-টি আলাদা রাষ্ট্র সৃষ্টি করা হবে। পাকিস্তানের মধ্যে থাকবে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু, পশ্চিম পাঞ্জাব, বালুচিস্থান এবং পূর্ববঙ্গ।
২) পাঞ্জাব ও বাঙলাকে মুসলিম সংখ্যাধিক্য এলাকায় ভাগ করা হবে এবং মুসলিম সংখ্যাধিক্য এলাকাগুলোকে পাকিস্তানে দেওয়া হবে। যে এলাকাগুলো মুসলিম গরিষ্ঠ নয় সেগুলো থাকবে ভারতে।
৩) ক্ষমতা হস্তান্তর হবে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট।
এর একমাস পরে ভারতের স্বাধীনতা আইন ব্রিটিশ আইনসভায় পাশ হয়েছিল। এর মূল্য স্বরূপ ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল এবং পাঞ্জাব ও বাঙলাকে ভাগ করা হয়েছিল।
এই পত্রিকা ভারত ভাগ সম্পর্কে গান্ধিজির বক্তব্যকে অনুসরণ করে লিখেছিল — পাকিস্তান সৃষ্টি, পাঞ্জাব ও বাঙলার অঙ্গচ্ছেদ সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের স্বার্থের জন্য হয়েছিল। মুসলিম লিগ পাকিস্তান দাবি করে ভারতের স্বাধীনতার মূল্যকে স্থির করে দিয়েছিল। কংগ্রেস ভারতভাগকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। কারণ কংগ্রেস মনে করেছিল যে সম্পূর্ণ দেহকে দাসত্বে রাখার চেয়ে একটি অঙ্গ কেটে স্বাধীনতা অর্জন করা অনেক ভালো।
এই পত্রিকার মত হল কংগ্রেস ভারতভাগকে মেনে নিয়ে বাস্তবতার পরিচয় দিয়েছিল। কংগ্রেস স্বাধীনতা অর্জনের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে সংগ্রাম করেছিল। তার ফল হিসেবে ভারত এবং পাকিস্তান স্বাধীনতা পেয়েছে। যে স্বাধীনতার জন্য এতকাল কংগ্রেস সংগ্রাম করেছিল এই স্বাধীনতা সেই স্বাধীনতা নয় বলে এই পত্রিকা মনে করেছে। পত্রিকা উল্লেখ করেছে কংগ্রেসের আশা হল, পাকিস্তানের বিছিন্ন এলাকাগুলি অবশেষে ভারতের সঙ্গে মিলিত হবে। ‘ফ্রিডম অ্যাট কস্ট অফ পার্টিশন’ প্রবন্ধের মূল বক্তব্য হল — আমরা এখনও স্বাধীন নই— স্বাধীনতা লাভ করার জন্য স্বাধীন (we are not yet free but only free to be free)। তাই কংগ্রেসের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে মাত্র। নতুন লক্ষ্য নিয়ে নতুন ভাবে কংগ্রেসের সংগ্রাম আবার শুরু হয়েছে বলে এই পত্রিকা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।
‘The Day Dawns’ নামক আর এক প্রবন্ধে এই পত্রিকা লিখেছে— এখন উষা, যদিও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, তবে খুব তাড়াতাড়ি সূর্য উঠবে। এই সূর্য স্বাধীন ভারতের নতুন আদর্শের নতুন লক্ষ্যের। এই প্রবন্ধে বলা হয়েছে — “এই দিনে আমাদের মন চলে যায় অনেক পিছনে-সেই সুদূর অতীতে যখন ভারতবর্ষ স্বাধীনতা হারিয়েছিল। নিরাশার ঘন অন্ধকার অনেক বছর ধরে ভারতবাসীকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। তথাপি সেই নিরাশার মধ্যেই আবির্ভূত হয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা, যাঁদের কঠিন প্রতিজ্ঞা ছিল করব অথবা মরব। তাঁদের অনেকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আজ আমরা গর্ব ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তাঁদেরকে স্মরণ করছি। বাংলাদেশের যেখানে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল সেখানে স্বাধীনতার সূর্য উদয়ের জন্য সংগ্রাম শুরু হয়েছিল।” স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সেই স্বপ্ন ব্যর্থ হয়নি তার প্রতিবেদন এই প্রবন্ধে পাওয়া যায়। এই প্রবন্ধে বলা হয়েছে— বর্তমান শতাব্দীর কয়েক বছর শহিদদের রক্তে রঞ্জিত ছিল। এই অমর শহিদরা স্বাধীনতার বেদিমূলে আত্মবলিদান দিয়েছিলেন। আজ আমরা সেই বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। আজ আমাদের ইচ্ছা হচ্ছে তাঁরা জীবিত থেকে দেখতেন তাঁদের সেই আত্মবলিদান ব্যর্থ হয়নি।
ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে সব শ্রেণির জনগণের যে বিরাট ভূমিকা ছিল বিশেষ করে নিম্নশ্রেণির, স্বাধীনতা দিবসে এই পত্রিকা তাঁদের স্মরণ করেছে। পত্রিকা লিখেছে — “স্বাধীনতা সংগ্রামে অসংখ্য নরনারী আত্মত্যাগ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে ছিলেন অখ্যাত অজ্ঞাত নিরীহ পল্লিবাসী। যারা চাননি কোনও খ্যাতি বা প্রশংসা। কিন্ত আত্মবিসর্জন দিয়ে তাঁরা সন্তুষ্টি লাভ করেছিলেন। তাঁরা ভেবেছিলেন যে ভবিষ্যতের বংশধরেরা এই কাজের জন্য উপকৃত হবেন। আজ আমরা সেই অজ্ঞাত যোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে মস্তক অবনত করি এবং কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি যে, তাঁদের আত্মত্যাগ ছাড়া স্বাধীনতার উষার উদয় সম্ভব হত না।’’
বিদেশি শাসনের সমাপ্তিতে স্বাধীনতা এসেছে এটাই একমাত্র আনন্দের কারণ বলে ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’ মনে করেছে। ভারতভাগ জনিত বেদনা এই পত্রিকায় মূর্ত হয়ে উঠেছে। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের লক্ষ্য, স্বপ্ন ও আদর্শ ছিল একতাবদ্ধ ভারতের এই পত্রিকা স্বাধীনতা প্রাপ্তির পূর্ণলগ্নে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। পত্রিকা লিখেছে— আমরা ভুলতে পারি না, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্ন ছিল ঐক্যবদ্ধ ভারতের। কিন্ত সেটা আমাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে সব মূল্য দিতে হয়েছে তার মধ্যে দেশভাগ হল সর্বশেষ চরম মূল্য। এটা আমাদের মুহ্যমান করে তুলেছে। আজ আমরা যে আনন্দ উপভোগ করতে পারতাম এই ঘটনা সেই আনন্দকে অনেকটা কেড়ে নিয়েছে।
বিদেশি শাসন আমাদের যে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে এই পত্রিকা আমাদের সেটা মনে করিয়ে দিয়েছে। ভারতীয়দের হৃদয়কে বিদেশি শাসন ভেঙে দিয়েছে। যে মুহূর্তে ভারতীয়রা ভেবেছিল তাদের মুক্তি আসন্ন, সেই মুহূর্তে মাতৃভূমির বিভাগ তাঁদের স্বপ্নের সমাপ্তি ঘটিয়েছে বলে পত্রিকায় তার অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে। এই দুঃখকে স্মরণ করেও ভারতীয়দের উদ্দেশ্যে এই পত্রিকা লিখেছে— “আসুন বাস্তববাদী নরনারী হিসেবে এই বিরাট আত্মত্যাগকে স্বীকার করেনি। শহিদদের রক্তরঞ্জিত আমাদের এই মাতৃভূমির বেশিরভাগ অংশের সংহতি সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়নি, এটাই আমাদের একমাত্র সান্ত্বনা। এই বৃহত্তর অংশকে যথার্থভাবে ভারতবর্ষ বলে অভিহিত করা যায়। ভারত যে অনেকগুলো খণ্ডিত রাজ্যে ভাগ হয়নি সেটা সৌভাগ্যের কথা। ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’ ধর্মের ভিত্তিতে ভারতভাগকে মেনে নিতে পারেনি। মুসলিমরা যে হিন্দুদের ভাই এই কথাকে স্মরণ করিয়ে পত্রিকা লিখেছে — “We shall not and we cannot accept this separation among brothers as final” অর্থাৎ আমরা ভায়ে ভায়ে এই বিভাগকে গ্রহণ করব না এবং করতে পারি না।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতের ইতিহাসে যে নব যুগের বা নব অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিল এই পত্রিকা। এমনকি পাকিস্তানিদের অভিনন্দন জানিয়ে পত্রিকা লিখেছে— “We send our greeting to our brothers who have left us to have a home of their own” অর্থাৎ আমাদের যে ভাইরা আমাদের ত্যাগ করে নিজেদের বাসভূমিতে বসবাস করছে তাদেরকে জানাই অভিনন্দন। পত্রিকা একই সঙ্গে এই আশা করেছিল যে একদিন না একদিন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের মিলন হবে। স্বাধীনতার এই প্রভাতে যে মেঘ ছায়া বিস্তার করেছে তার অবসান ঘটবে এবং অদূর ভবিষ্যতে আমরা অভ্যর্থনা জানাব দিবসের পরিপূর্ণ প্রকাশকে এবং সেই সূর্যালোককে যা আমাদের সকলের হৃদয়কে প্লাবিত করবে।
লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘টাইমস’ পত্রিকা ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতভাগের প্রতিক্রিয়া তাদের প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছিল। ‘পার্টিশন অফ ইন্ডিয়া’ নামক প্রতিবেদনে এই পত্রিকা লিখেছিল — আজ ভারত ও পাকিস্তানের সরকারিভাবে পৃথিবীর মানচিত্রে আবির্ভাব ঘটল। এদের মধ্যে একটি জনসংখ্যার দিক দিয়ে রাশিয়ার থেকে বড়ো এবং অন্যটি পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ ইসলামিক রাষ্ট্র। এই দুই রাষ্ট্র সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ভারত ও ব্রিটেনের সম্পর্কের দীর্ঘদিনের ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল এবং নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। পত্রিকার সঠিক মূল্যায়ন হল ভারতবাসী স্বাধীনতা পেলেও তাঁরা খুশি হতে পারেনি। এই দিনটি স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেছিলেন এমন অনেক ভারতীয়র কাছে চরম হতাশা এনে দিয়েছে। তাঁরা যে শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা অর্জন করা অসম্ভব প্রমানিত হয়েছে। খণ্ডিত ভারতবর্ষ অনেকের মনে এনেছে গভীর দুঃখ। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যে আনন্দ অনুষ্ঠান হচ্ছে, তাতে অনাবিল আনন্দের প্রকাশ নেই। তবে অন্য দিকে এই দিনের গুরুত্ব আছে বলে পত্রিকা উল্লেখ করেছে। পত্রিকার মতে বছর খানেক আগেও যে গৃহযুদ্ধের সম্ভবনা প্রায় অবশ্যম্ভাবী ছিল সেটা আজ আর নেই। তাই স্বাধীনতা লাভের প্রাক্মুহূর্তে ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য ইংরেজরা সিদ্ধান্ত নেয় যে, যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করতেই হবে তখন বর্তমানের অপেক্ষাকৃত শান্ত পরিবেশের মধ্যেই নূতন ২টি কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্র সৃষ্টি করাই যুক্তিযুক্ত। তখন খুব কম ইংরেজ ভেবেছিলেন যে, সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া একটি রাষ্ট্র সাময়িক ভাবে হলেও একজন ইংরেজকে গভর্নর জেনারেল হিসেবে মেনে নেবেন। কিন্ত অন্য দিকে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ প্রশাসন অংশ গ্রহণ করুক এটা জিন্না চাননি। পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসকে জিন্না একান্ত তাদের নিজেদের ব্যাপার বলে মনে করেছিলেন। অন্য কেউ তাতে মুখ্য ভূমিকা নিক এটা জিন্নার কাছে গ্রহণীয় ছিল না। ম্যাউন্টব্যাটনকে স্বাধীন পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল পদে গ্রহণ না করে তিনি ব্রিটিশদের শিক্ষা দিয়েছিলেন। অথচ অন্যদিকে পণ্ডিত জওহরলাল ম্যাউন্টব্যাটনকে স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল পদে নিয়োগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সেজন্য এই পত্রিকা উল্লেখ করেছে স্বাধীনতা পাওয়ার পর ভারতীয় ও ইংরেজদের বন্ধুত্বের মধ্যে কোনও ছেদ ঘটল না, বরং ভারত-ব্রিটেনের মধ্যে সখ্যতা বাড়বে। এতদিন ধরে ভারতের মধ্যে যে হতাশা ছিল তার সমাপ্তি ঘটতে চলেছে। স্বাভাবিক কারণে এই পত্রিকা এই আশা ব্যক্ত করেছিল যে এই সম্পর্কের উন্নতি অব্যাহত থাকবে। খুব নির্বিঘ্নে ভারতবিভাজন করার জন্য পত্রিকা মাউন্টব্যাটনের প্রশংসা করেছিল। একই সঙ্গে ৩রা জুনের পরিকল্পনাকে কার্যকর করার জন্য নেহরু ও সর্দার প্যাটলের প্রশংসা করতে পত্রিকা ভুলে যায়নি। গান্ধিজিকে স্মরণ করে পত্রিকা লিখেছিল— তিনি ভারতভাগের প্রস্তাব গ্রহণ করতে চাননি। কিন্তু চরম পর্যায়ের সন্ধিক্ষণে যে সব নেতা তাঁর কথাকে আইন বলে মনে করতেন সেই সব নেতাদের কাছে গান্ধি নতি স্বীকার করেছিলেন। পত্রিকা সঠিক ভাবে বিশ্লেষণ করে বলেছে, ভারতভাগ হিন্দু মুসলিম সম্পর্কের চূড়ান্ত সমাধান নয়। বাঙলা এবং পাঞ্জাবের বিভাজন হাজার হাজার মানুষকে হতাশ এবং প্রতিবাদী করে তুলেছে। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক আসতে অনেক সময় লাগবে। ভারত বিভাগের পরবর্তী অধ্যায় নিয়ে পত্রিকা আশা আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, নূতন রাজনৈতিক দল, উপদল, কর্মপন্থা আসবে এবং প্রশাসনের উপরে চাপ পড়বে। পত্রিকা মনে করেছে, পাকিস্থনের ক্ষেত্রে খুব বেশি অসুবিধা হবে না। কারন সেখানে আছেন জিন্নার মতো একজন প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সঙ্গে সঙ্গে পত্রিকা এটাও উল্লেখ করেছে যে, পরবর্তী কালে জিন্নার সমকক্ষ কোনও নেতা পাকিস্তানে নেই। ভারতের মতো পাকিস্তানে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যা আসবে। পত্রিকা আরও অনেক প্রশ্ন তুলেছিল, যেমন রাজনৈতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে কিনা? শাসকেরা ঠিক মতো ঐক্য রক্ষা করতে পারবে কিনা? ভারতের লখনউ থেকে প্রকাশিত ‘দি পাইওনিয়ার’ পত্রিকা ভারতভাগের প্রতিক্রিয়া এইভাবে উল্লেখ করেছে— সম্ভবত ভারাক্রান্ত মনে আজ ভারতবর্ষ স্বাধীনতা দিবস পালন করছে। দীর্ঘদিনের পরাধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে ভারত স্বাধীনতা লাভ করেও কেন আনন্দিত নয় তার ব্যাখ্যা এই পত্রিকা করেছে। পত্রিকার মতে ক্লান্তি এবং নৈরাজ্য উভয়ভাব এর মধ্যে রয়েছে। যে স্বাধীনতা এসেছে সেই স্বাধীনতা আমাদের আশানুরূপ হয়নি। জাতীয় কংগ্রেস ভারতের স্বাধীনতার জন্য যে আন্দোলন করেছিল স্বাধীনতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার অবসান ঘটছে বলে এই পত্রিকা মনে করেও সে উল্লেখ করেছে “But as the parts in power today its new task has just began” অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আজ এই কংগ্রেস নূতন কাজ সবেমাত্র শুরু করল। স্বাধীনতার জন্য জাতীয় কংগ্রেস সমগ্র ভারতের হয়ে কথা বলার দাবি করেছিল, কিন্ত মুসলিম লিগ জাতীয় কংগ্রেসের এই দাবিকে অস্বীকার করেছিল। পত্রিকার মতে, আজ বিজয়ের মুহূর্তে কংগ্রেস স্ববিরোধিতার সঙ্গে কংগ্রেসের বাইরে যাঁরা ছিলেন তাঁদের দাবিকে মেনে নিয়েছিলেন। পত্রিকা লিখেছে— ভারতের পক্ষে এটা আশার কথা যে ১৯৪৭ সালের কংগ্রেস তার ১৯৩৭ সালের ভুলকে উপলদ্ধি করতে পেরেছে। ১৯৩৭ সালে কংগ্রেস যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, পত্রিকা থেকে তা বোঝা যায়। সেই ভুলের মাশুল ভারতকে দিতে হয়েছে। মৌলনা আবুল কালাম আজাদ তাঁর India wins Freedom গ্রন্থে কংগ্রেসের ভুলের কথাকে স্বীকার করে নিয়েছেন। এই পত্রিকা সঠিকভাবে লিখছে— সত্যিকারের পরীক্ষা তখনই আসবে যখন ভারতের নতুন সরকার আমাদের জটিল রাজনৈতিক এবং আর্থিক সমস্যাগুলোর সমাধানের ক্ষেত্রে এগিয়ে আসবে। স্বাধীন ভারতের নাগরিকদের মনে করিয়ে দিয়েছে পত্রিকা— “Let it not be said then what that Independence comes, but freedom lingers” — এটা যেন বলা না হয় স্বাধীনতা এসেছে, কিন্তু মুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে।
বোম্বাই থেকে প্রকাশিত ‘দি টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ স্বাধীনতা দিবসের দিনে পাকিস্তান কেন সৃষ্টি হল এবং ভারত কেন ভাগ হল তার বিবরণ দিয়েছে। পত্রিকা উল্লেখ করেছে ১৮৫৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর হার্ডসন ভারতের নামসর্বস্ব শাসক মোঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে গ্রেপ্তার করার পরিণতিতে ভারতের বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্যের শেষ চিহ্নের অবসান ঘটেছিল এবং তারপর শুরু হয়েছিল ভারতীয় মুসলমানদের গভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন নিরাশার দিন। কারন ইংরেজদের চাপিয়ে দেওয়া নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে মুসলিমরা মানিয়ে নিতে পারেনি। ১৮৩৩ সালে ভারতে যে পাশ্চাত্য শিক্ষার অগ্রগতি শুরু হয়েছিল, তা থেকে মুসলিমরা দূরে থেকে তাদের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছিল। মুসলমানরা যখন ঐতিহ্যকে ধরে পিছিয়ে পড়েছিল, তখন হিন্দুরা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল। হিন্দুদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার জন্ম হয়েছিল। ব্রিটিশ সরকার হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের কাজে লাগাবার জন্য তাদের উদাসীনতাকে দূর করার চেষ্টা করেছিল। এই কাজে এগিয়ে এসেছিলেন স্যার সৈয়দ আহম্মদ খান। তিনি আলিগড় আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলিমদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। নবাব ভিকার উল মুলুক মুসলমানদের রাজনৈতিক জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে পত্রিকা উল্লেখ করেছে। ১৯৩৫ সালের ভারত আইন মুসলিমদের মধ্যে আশা নিরাশার মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল বলে পত্রিকা মনে করেছে। এই সময়ে স্যার ওয়াজির হাসানের সভাপতিত্বে লিগের ঐতিহাসিক অধিবেশন হয়েছিল। এখানে তিনি বলেছিলেন, “It was that, for the first time called Hindus and Muslims two Nations.”
পত্রিকা থেকে জানা যায় যে, ১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে লিগের সাফল্য আশাপ্রদ না হলেও উৎসাহব্যঞ্জক ছিল। কংগ্রেস লিগের সঙ্গে চলতে চায় না। কংগ্রেস ৬টি প্রদেশে সরকার গঠন করেছিল। পত্রিকা মনে করেছে, কংগ্রেস লিগের সঙ্গে সমঝোতা করেনি বলে লিগের আন্দোলন জোরদার হতে পেরেছিল। জিন্নার প্রত্যয়শীল ও প্রেরণাদায়ী নেতৃত্ব ভারতীয় মুসলিমদের একতাবদ্ধ করেছিল। পত্রিকার মত হল পাকিস্তান সৃষ্টির পিছনে কংগ্রেসের ভুল নীতি দায়ী ছিল। ১৯৪০ সালে মুসলিম লিগ যে লাহোর প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন, তার ফলকে পত্রিকা বিশ্লেষণ করেছে। পত্রিকার মত হল এই অধিবেশনের পর থেকে মুসলিমদের মানসিক অবসাদ চলে গিয়েছিল। মুসলিম সংখ্যাধিক্য এলাকাগুলোতে স্বাধীন এবং মুক্ত মুসলিম রাষ্ট্র গঠন মুসলিম লিগের উদ্দ্যেশ্য হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। কিন্ত লিগের এই সিদ্ধান্তকে কংগ্রেস সহ অনান্য লিগ বহির্ভূত সংগঠনগুলি প্রতিবাদ করেছিল এবং চমক বলে উড়িয়ে দিয়ে এই প্রস্তাবকে একটি অবাস্তব এবং কাল্পনিক বলে মনে করেছিল। কংগ্রেস সহ অনান্য সংগঠনের এই মনোভাব যে ভুল ছিল, এই পত্রিকা তা উল্লেখ করে মন্তব্য করেছে — “The only effect of this was to give further momentum to the movement of Pakistan.” পাকিস্তান আন্দোলনের সাফল্যের কারণ ছিল এক নেতা, এক কণ্ঠ, এক তত্ত্ব, এক উদ্দেশ্য বলে পত্রিকা উল্লেখ করেছিল। এসবের পরিণতিতে ভারতভাগ হয়েছিল। পত্রিকার মতে “Pakistan long a dream, become a reality” অর্থাৎ পাকিস্তানের স্বপ্ন বাস্তব রূপ পেয়েছিল।
লখনউ থেকে প্রকাশিত আর এক জনপ্রিয় পত্রিকা হল ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট পত্রিকা লিখেছিল — দেশ ও সভ্যতার মাপকাঠিতে এই দিনটি হল একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।এই পত্রিকা এই দিনটিকে তুলনা করেছে সেদিন গুলির সঙ্গে যে দিন সিন্ধু গাঙ্গেয় উপত্যকায় সভ্যতার প্রথম ফুল ফুটেছিল, কিংবা যেদিন অশোক তাঁর নৈতিক সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। স্বাধীনতা দিবস কেবল শুধু মাত্র চল্লিশ কোটি মানুষের দৈহিক মুক্তি নয়, তাদের চিন্তার এবং মুক্ত দিবস বলে পত্রিকা মনে করেছিল।
স্বাধীনতা পাওয়ার পর ভিন্ন এক পটভূমিকায় ইউরোপের মানবতাবাদী নবজাগরণ এবং প্রতিবাদী সংস্কার নতুন করে ভারতে দেখা দেবে বলে এই পত্রিকা মনে করেছে। এর সাথে সাথে ভারতীয়রা মনের স্বাধীনতা লাভ করবে বলে পত্রিকা উল্লেখ করেছে। পত্রিকা আরও মনে করেছে দু-টি মহান সভ্যতা আবার নিজেদের পথে চলার সুযোগ পাবে। নিজের অধিকার নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই দুই দেশ তারা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারে কিংবা আলাদা থাকতে পারে, কিন্তু আজ তারা কারও অধীনস্থ নয়। পত্রিকা স্বাধীন ভারতের কথা বলতে গিয়ে বলেছে — আমাদের চিন্তা আর অন্যের চিন্তার উপরে নির্ভর করবে না। আমরা আর মুখ বুঝে থাকব না, আমাদের মুখ ফুটেছে। আমাদের আর আশ্রিত জীবন যাপন করতে হবে না, পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আবার স্থাপিত হবে যেমন ফা-হিয়েন এবং হিউয়েন সাঙের মতো পরিব্রাজকদের সময়ে হয়েছিল। পত্রিকা মনে করেছে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট এর সাফল্যের প্রতিশ্রুতি বয়ে এসেছে ১৯৪২ সালের ৯ আগস্ট থেকে এবং তার পূর্বের সংগ্রামগুলো থেকে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধির অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে এই পত্রিকা স্মরণ করেছে। পত্রিকা ভারতের মহান সেইসব ব্যক্তিদের স্মরণ করেছে যারা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য পথ দেখিয়ে ছিলেন। এই দিনে পত্রিকা স্মরণ করেছে রাজা রামমোহন রায়কে যিনি তাঁর যুগের থেকে অনেক এগিয়ে ছিলেন; স্মরণ করেছে বিবেকানন্দকে যিনি ধর্মকে এক নবরূপ দিয়েছিলেন, স্বাধীনতার কবি রবীন্দ্রনাথকে, কংগ্রেসের নেতাদেরকে — গোখলে-তিলক-চিত্তরঞ্জন যাঁরা দেশের জন্য নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। এই পত্রিকা বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছিল — তাঁরা নিজেদের জন্য কিছু চাননি, ভাগ্যকে অস্বীকার করে এবং আদর্শকে ভর করে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁদের পদ্ধতির সঙ্গে হয়তো আজকের পদ্ধতির মিল নাও থাকতে পারে কিন্তু তাঁদের অন্তর এবং মন ছিল পরিষ্কার। তাঁরা মৃত্যুহীন এবং তাঁরা চিরস্মরণীয়। তাঁরা আমাদের কাছে বিশ্বাস এবং সাহসিকতার আদর্শ। একই সঙ্গে পত্রিকা সেই সব ভারত-বন্ধুদের স্মরণ করেছে যাঁরা ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে সাহায্য করেছিলেন যেমন — ওয়েডারবান, বেসান্ত, উইলিয়াম জোন্স, আইনস্টাইন, পার্লবারকের মতো বিশ্ববরেণ্য মনীষীদের।
স্বাধীনতা এসেছে সত্য, কিন্ত সংগ্রাম শেষ হয়নি। স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেসের মূল লক্ষ্য ছিল ভারতের প্রতিটি নারী-পুরুষের স্বাধীনতা, কোনও একটি বিশেষ শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের নয়। এই স্বাধীনতা ত্রুটিহীন নয়। সামনের দিনে অনেক পরীক্ষা আসবে। সীমাহীন দারিদ্র্য, অভাব, রোগ, হতাশা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে, এদের জয় করতে হবে। তবেই স্বাধীনতার মূল্য থাকবে। পত্রিকা স্বাধীনতা দিবসে ভারতীয়দের আহ্বান জানিয়ে লিখেছিল— আজকের এই আনন্দ অনুষ্ঠানে আসুন সবাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে উজ্জ্বল করি, কিছুক্ষণের জন্য আন্তরিক ভাবে হাসি, নিজেদেরকে স্বাধীন ভাবি— কারণ আজকের দিনে আমরা অতীতের দুঃখকে বিদায় দিয়েছি এবং আগামীদিনের প্রতিকূল অবস্থার সামনে আমাদের দাঁড়িয়ে তাকে জয় করতে হবে।
বোম্বাই থেকে প্রকাশিত ‘বোম্বে ক্রনিক্যাল’ দেশের স্বাধীনতা দিবসের দিনে তার সম্পাদকীয়তে লিখেছিল— আমাদের প্রিয় প্রাচীন ভারতবর্ষ প্রায় দেড়শো বছর পর দাসত্বের অপমান ও যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেল। ভারতের স্বাধীনতার পতাকা গর্বের সঙ্গে আজ বিশ্বের সব জায়গায় উড়ছে। ১৫ আগস্ট বিশ্বের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আজ ভারতবর্ষ সভ্যতার ঐতিহ্য নিয়ে জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই সভ্যতার ঐতিহ্য জগতের প্রয়োজনে লাগবে। ভারতের স্বাধীনতা আশা এবং সম্ভবনার বাণী নিয়ে এসেছে। পত্রিকা উল্লেখ করেছে ভারতের স্বাধীনতা এশিয়া এবং আফ্রিকার পরাধীন জাতির কাছে এই বার্তা দিচ্ছে তাদের মুক্তির আর দেরি নেই। স্বাধীনতার আনন্দের দিনে যাদের জন্য স্বাধীনতা এসেছে এবং যারা মৃত্যু বরণ করেছে, তাদের যেন ভারতীয়রা ভুলে না যায় তার জন্য পত্রিকা সচেতন করে দিয়েছিল। পত্রিকা মনে করেছে, ভারতের স্বাধীনতা বিয়োগাত্মক পরিণতির মধ্য দিয়ে এসেছে। ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। আমাদের অন্তরে অতীত বিরাজ করছে। ভাই ভাই এর উপরে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। পলাশী যুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে যে অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল আজ তার সমাপ্তি হয়েছে। অতীত কাল থেকে ভারতীয়রা যে আদর্শকে সামনে রেখে চলার চেষ্টা করেছিল তা পূরণ হয়নি। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের লক্ষ্য ছিল ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন ভারত। কিন্ত ভাগ্যের পরিহাসে স্বাধীনতা এসেছে ঐতিহাসিক ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভারতের ঐক্যকে ধ্বংস করে। স্বাভাবিক কারণে যারা ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা ভারতভাগকে মেনে নিতে পারছে না। তবে বাস্তবকে মেনে নিতে হবে। দেশের কর্ণধারদের গঠনমূলক কাজ করতে হবে। দেশের শতকরা ৯৩ জন নিরক্ষর এবং বহু মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। সেজন্য পত্রিকা মনে করেছে শিক্ষা এবং আর্থিক উন্নয়নকে সবার আগে স্থান দিতে হবে।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতার দিনে কিছু সংবাদপত্রের প্রতিক্রিয়া থেকে এটা বোঝা যায় যে ভারতভাগ ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্নের অপমৃত্যু। কিন্ত বাস্তবকে মেনে নিয়ে নতুন ভারতে গঠনমূলক কর্মসূচি নিতে হবে। পরাধীন ভারতের দীর্ঘদিনের অবহেলিত বিষয়গুলিকে পর্যালোচনা করে উন্নয়নকে সামনে রেখে অদম্য উচ্চাশার সঙ্গে নতুন ভারত গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে যেতে হবে বলে সব পত্রিকায় এই আশা ব্যক্ত হয়েছিল।