কৃষ্ণেন্দু পাল
যত সময় যায়, ধর্ম তত গোড়া হতে থাকে। রীতি-নীতি, রেওয়াজ— সবকিছুর মধ্যে জটিলতা চলে আসে। প্রতিবাদী ধর্মগুলি তৈরি হয়েছিল মানুষের ধর্মঘটিত অবমাননা থেকে মুক্তির জন্য। কিন্তু পরবর্তীতে সেই একই পদ্ধতিতে তার কল্যাণময় ভাবধারা নষ্ট হয়— চলে আসে বিভিন্ন জটিলতা।
মতুয়া ধর্মের উৎপত্তি হয়েছিল মূলত নমশূদ্রদের কল্যাণার্থে, ধর্মীয় পরিচিতির প্রয়োজনে। সুতরাং তাদের ধর্মের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ধর্মাচরণের অধিকার— এটা ছিল সংকীর্ণ লক্ষ্য। এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল তাদের সামাজিক পরিচিতি, জীবনধারণের উন্নতির প্রচেষ্টা এবং পরবর্তী প্রজন্মকে আরও উন্নততর জীবন দেওয়ার প্রচেষ্টা।
হরিচাঁদ ঠাকুর (১৮১২-৭৮ খ্রিস্টাব্দ) এই সমস্ত ইচ্ছা তার বাণীর মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠা ও প্রচার করে গেছেন। পরবর্তীতে তার উত্তরসূরিরা এই কল্পে কাজ করে গেছেন। মতুয়া ধর্মের উন্নয়নের ধারা লক্ষ করলে দেখা যাবে যে, মতুয়াদের সমাজ তথা মতুয়ারা ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে কেবলমাত্র সংঘবদ্ধ হয়েই থেমে থাকেনি। তার প্রত্যেকটি প্রজন্ম আগের প্রজন্মের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। সুতরাং মতুয়াধর্ম সতত গতিশীল।
মতুয়া ধর্মের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে বলা যায়, নমশূদ্ররা আগে ‘চণ্ডাল’ বলে পরিচিত ছিলেন। এরাই ছিলেন প্রাচীন বঙ্গদেশে সংখ্যার বিচারে সর্বাপেক্ষা।১ এই ঘৃণিত নামটি পরিত্যাগ করে তারা ‘নমশূদ্র’ বলে চিহ্নিত হতে চেয়েছিলেন। ১৯০৭ সালে মতুয়া আন্দোলনের অন্যতম নেতা গুরুচাঁদ ঠাকুর বাংলার ছোটোলাটের কাছেও এই দাবি পেশ করেছিলেন বলে জানা যায়। সরকারিভাবে ‘নমশূদ্র’ নামটি স্বীকৃত হয় ১৯১১ সালের আদমশুমারির প্রতিবেদনে।২ এই চণ্ডাল-নমশূদ্ররা যখন হরি-গুরুচাঁদের অনুগামী হলেন তখন তাঁরা ‘মতুয়া’ নামে পরিচিত হলেন।
নমশূদ্ররা বাংলাদেশের নীচু জমিতে বসবাস করতেন। এদের সংখ্যাধিক্য ছিল ফরিদপুর, বাখোরগঞ্জ, যশোর, খুলনা, ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলায়। জাতি সম্পর্কিত গ্রন্থগুলিতে চণ্ডাল বা নমশূদ্রদের প্রতি খুব খারাপ ভাষা ব্যবহার করা হত। যেমন ‘চাড়াল’, ‘দুর্বৃত্ত’, ‘নরাধম’ ইত্যাদি। ব্রাহ্মণ পুরোহিতরা নমশূদ্রদের ধর্মীয় সামাজিক ক্রিয়াকর্মে অংশ নিতেন না, যে সমস্ত ব্রাহ্মণ পুরোহিতরা অংশ নিতেন তাঁরাও জাতিচ্যুত হতেন।
হিন্দু ধর্মের বর্ণভেদের প্রভাবে যারা নিম্নবর্ণের বা অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষ বলে পরিগণিত হয়েছিল তাদের কেবল ধর্মীয় অধিকার নয়, সামাজিক অধিকারও ক্ষুণ্ণ হয়েছে উচ্চবর্ণের হাতে। বাংলার এই সামাজিক ও রাজনৈতিক পটভূমিকায় এখানকার চির অবদমিত চণ্ডাল জাতির অতীত ইতিহাস বড়ো করুণ, বড়ো মর্মান্তিক এবং বেদনাদায়ক। একটা দেশ ও জাতিকে কি নির্মম ও পৈশাচিক নিষ্ঠুরতার দ্বারা সমাজের অন্ধকারে নিক্ষেপ করা যায় তার জ্বলন্ত নিদর্শন বাংলার এই চণ্ডাল জাতি।
বর্ণবাদী আধিপত্য তথা সামাজিক অবমাননার প্রতি নিম্নবর্গের মতুয়ারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে নিজেদের মতো করে। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে বাখরগঞ্জের আমগ্রামের অবস্থাপন্ন নমশূদ্র গ্রামপ্রধানের বাড়িতে শ্রাদ্ধের ভোজন অনুষ্ঠানে স্থানীয় কায়স্থগণ এবং তাঁদের প্ররোচনায় অন্যান্য উচ্চবর্ণের লোকেরাও ঘৃণাভরে নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। উচ্চবর্ণের লোকেদের অভিযোগ ছিল নমশূদ্র মহিলারা যথেচ্ছভাবে জেলখানায় ঝাড়ুদারের কাজ করে, নোংরা ও ময়লা পরিষ্কার করে, হাটে বাজারে যায়। উচ্চবর্ণের লোকদের এই অবজ্ঞা ও অসম্মানজনকভাবে নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করার ফলে নমশূদ্র গ্রাম প্রধানগণ একটি সভা করে এবং সিদ্ধান্ত নেয় যে— মহিলারা হাটে বাজারে যাবে না, উচ্চবর্ণের বাড়িতে রান্নাবান্না ও খাদ্য গ্রহণ করবে না। একই সময়ে ফরিদপুর জেলার মছলন্দপুরের বিল এলাকার সমৃদ্ধ কৃষক দ্বারকানাথ মন্ডল তাঁর পিতৃশ্রাদ্ধে সমস্ত বর্ণের ১০,০০০ লোককে আপ্যায়ণের পরিকল্পনা করেন কিন্তু স্থানীয় কায়স্থ ও উচ্চবর্ণের লোকেরা একই রকম অসম্মানজনকভাবে নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। তখন স্থানীয় নমশূদ্র গ্রামপ্রধানগণ এবং দ্বারকানাথ মন্ডল সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা উচ্চবর্ণের হিন্দু ও মুসলিমদের কোন কাজে সাহায্য করবে না এবং নিজেদের মহিলাদের হাটেবাজারে পাঠাবে না। তাদের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য হাটে বাজারে ঢাক বাজিয়ে প্রচার করা হয়েছিল। অতি সত্বর এই আন্দোলন ফরিদপুর, বাখেরগঞ্জ এবং যশোরের নমশূদ্র অধ্যুষিত গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং বয়কট আন্দোলন চরম আকার নেয়। ১৮৭৩ সালের ১৮ মার্চ ফরিদপুর জেলা পুলিশ অধ্যক্ষ W S Wells জেলা শাসকের কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে আন্দোলন সম্পর্কে বলেন, এই আন্দোলনের মাধ্যমে নমশূদ্ররা নিজেদের হিন্দুদের মধ্যে উচ্চবর্ণের সমান সামাজিক মাপে উন্নীত করার চেষ্টা করেছে।৩ মূলত এই আন্দোলনের কোনও রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিল না, এটা ছিল এক প্রকার ‘সামাজিক বয়কট’ আন্দোলন। এই আন্দোলন বা ধর্মঘট সম্পূর্ণ সফল না হলেও শুরু হওয়ার চার মাস পরে ফরিদপুরের জেলাশাসক ওই অঞ্চল পরিদর্শনের সময় দেখতে পান— ‘মাঠগুলি অনাবাদী পড়ে আছে, ঘরগুলি ছাওয়া হয়নি, কোন বর্ণ হিন্দু বা মুসলিমদের বাড়িতে নমঃশূদ্রদের কাজ করতে যেমন দেখা যায় না, হাটে বাজারে ও নমঃশূদ্রানীদের দেখা যায় না। গরীব নমঃশূদ্রদের পক্ষে কাজ না করে বয়কট আন্দোলন চালানো সম্ভব ছিল না, ফলে তাঁদের পূর্বের তুলনায় আরো খারাপ শর্তে পুরানো কাজে ফিরতে হয়েছিল। তবে সরকারী কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ নেয়নি।’৪
নমশূদ্রদের এই আন্দোলন অসফল হলেও নমশূদ্র সমাজ প্রধানগণ বুঝতে পেরেছিলেন যে, নিজস্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বজাতি চেতনা বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ শক্তিশালী সংগঠন প্রস্তুতিতে মনোযোগ দেওয়া উচিত। ১৮৭২-৭৩ সালে নমশূদ্রদের উচ্চবর্ণীয় সামাজিক রীতির প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ব্যবহার প্রমাণ করে যে, এই আন্দোলন ‘সংস্কৃতায়ণ প্রক্রিয়ার’ বিপরীতমুখী ছিল। কারণ এই আন্দোলন ছিল, সামাজিক অসম্মান ও অসাম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, বর্ণভেদ জনিত পেশা গ্রহণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, যদিও দরিদ্রতার কারণে বেশিদিন এই বয়কট স্থায়ী হয়নি, আবার সর্বাত্মক অংশগ্রহণও দেখা যায় না। তার অর্থ এই নয়, যে তাঁরা সামাজিক অসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। আসলে জীবনধারণ ও বেঁচে থাকার তাগিদে আর্থ-সামাজিক দিক থেকে কর্তৃত্বকামী উচ্চবর্ণের আধিপত্যকে তারা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল।
এই রিক্ত, নিঃস্ব, লাঞ্ছিত, পতিত, সর্বহারা জাতিকে দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্তি দিতে শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের (১৮১২-৭৮ খ্রিস্টাব্দ) আবির্ভাব।
যুগাবতার হরিচাঁদ ঠাকুর মতুয়া ধর্মের পতাকাতলে ধর্মহীন মানুষকে নিজস্ব ধর্ম দিয়েছিলেন, তাঁদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যুগ যুগ ধরে দেশের অগণিত অস্পৃশ্য মানুষদের মন্দিরে প্রবেশের কোনও অধিকার ছিল না, তাঁদের ছায়া মাড়ালে ব্রাহ্মণ্যবাদী বর্ণহিন্দুরা অপবিত্র হয়ে যেত, গঙ্গাজলের ছিটে দিয়ে তাকে পবিত্র হতে হত এবং প্রকাশ্য রাস্তা দিয়ে তাদের চলাচলের কোনও অধিকার ছিল না, হিন্দু ধর্মের কোনও আচার অনুষ্ঠানে তাদের যোগ দিতে দেওয়া হত না। তাই যুগাবতার হরিচাঁদ ঠাকুর ঘোষণা করলেন নিজেরা হরি মন্দির তৈরি করো, নিজেরা সেখানে পূজা করো। কোনও ব্রাহ্মণ্যবাদী বর্ণ হিন্দুদের মন্দির বা অনুষ্ঠানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি তাদের নিজস্ব উৎসব হিসাবে বারুণী মেলার প্রবর্তন করলেন। বললেন বেদ-বিধি বলে কিছু নেই। বেদের মন্ত্র ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী হতে পারে না।৫ মানুষই সবার ঊর্ধ্বে। তীর্থ পর্যটনের দ্বারা কোনও প্রকার পুণ্য অর্জন করা যায় না। ‘হাতে কাম এবং মুখে নাম’ নিলেই মানুষ সবকিছু করতে পারে। তাই সদা সত্য কথা বলো, সৎ ভাবে চলো, চরিত্র পবিত্র রাখো এবং অন্তর হতে হিংসা বিদ্বেষ দূর করো। ভক্তিতেই মানুষের মুক্তি। হরিচাঁদ ঠাকুরের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সেভাবে না হলেও তিনি শিক্ষা বিস্তারের কথা বলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল—
গৃহধর্ম গৃহকর্ম করিবে সকল। হাতে কাম মুখে নাম ভক্তিই প্রবল।।৬
এইভাবে তিনি ঊনবিংশ শতকের বাংলায় অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের মধ্যে এক প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন।
১৮৭৮ সালে হরিচাঁদ ঠাকুরের মৃত্যুর পর তার সুযোগ্য পুত্র, যোগ্য উত্তরসূরি গুরুচাঁদ ঠাকুরের (১৮৪৭-১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ) চেষ্টায় মতুয়া ধর্মীয় সম্প্রদায় সামাজিক, ধর্মীয়, শিক্ষা, সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বহুমুখী উন্নয়ন মূলক পরিকল্পনা নেয়। মূলত এই পর্বেই মতুয়া সম্প্রদায় তাদের আত্মপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
হরিচাঁদ ঠাকুর যে শিক্ষা বিস্তারের কথা বলেছিলেন তা আমরা গুরুচাঁদ ঠাকুরের কথা থেকেই জানতে পারি। হরিচাঁদ ঠাকুর নিজে বলেছেন— ‘আরও বলি গৃহীজনে যে কার্য করিবে, সন্তান সন্ততিগনে বিদ্যা শিক্ষা দিবে’ অর্থাৎ গৃহীজন মাত্রই সন্তান-সন্ততিদের বিদ্যা শিক্ষা দান করবেন। নিশ্চিত করে বলা যায়, পৃথিবীর অন্য কোনও ধর্মে ‘হাতে কাম মুখে নাম’ এই কথা বলা নেই। সেইদিক থেকে মতুয়া ধর্ম হল একটি বাস্তবমুখী ধর্ম তথা উত্তরণের এক গতিশীল ধারা।
শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে হরিচাঁদ ঠাকুরের অসমাপ্ত কাজ শেষ করেছিলেন তাঁর সুযোগ্য পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর। তিনি একজন বাঙালি সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষাব্রতী। তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের উন্নয়ন, দলিত হিন্দুদের শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের পথিকৃৎ। সমাজপ্রভু বর্ণহিন্দুদের বাধা অতিক্রম করে তিনি ১৮৮০ সালে ওড়াকান্দিতে প্রথম বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন শশিভূষণ আর দ্বিতীয় শিক্ষক রঘুনাথ। পরে এটি হল ছাত্রবৃত্তি স্কুল এম. ই (M. E.) এবং পরে ১৯০৮ সালে এটি উন্নীত হয় হাইস্কুলে। (H. E.)। ইতিমধ্যে খ্রিস্টান মিশনারি সি. এস. মিড এসে সাহায্য করলেন বলে এই বিদ্যালয়ের নাম হয় মিড হাই স্কুল। গুরুচাঁদ বলতেন—
সবাকারে বলি আমি যদি মানো মোরে। অবিদ্বান পুত্র যেন নাহি থাকে ঘরে।। খাও বা না খাও তা'তে কোন দুঃখ নাই। ছেলে পিলে শিক্ষা দেও, এই আমি চাই।।৭
বিশেষ লক্ষণীয়, তিনি তাঁর শিক্ষা আন্দোলন শুধু নিজ সম্প্রদায় নমশূদ্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তেলি, মালি, কাপালি, কুম্ভকার, মাহিষ্য সকল সম্প্রদায়ের জন্যই তিনি কাজ করে গেছেন। প্রসঙ্গত, বলা যেতেই পারে রামমোহন, বিদ্যাসাগর সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য যে কাজ করতে পারেননি, গুরুচাঁদ ঠাকুর তা করে দেখিয়ে দিয়ে গেলেন। আসলে গুরুচাঁদ ঠাকুর একজন মহান শিক্ষাব্রতী, দার্শনিকও বটে।
জি টি স্কুলে শিক্ষালাভ করার পরে শিক্ষার্থীরা গুরুচাঁদের নির্দেশ মেনে নিয়ে দুর্গম অঞ্চলে, এমনকি সুন্দরবন অঞ্চলেও শিক্ষাদান করতে যেতেন। এইভাবে দুর্গম, অনুন্নত অঞ্চলেও শিক্ষা বিস্তার সম্ভব হত। একথাও জানা যায়, অর্থের অভাবে যদি কারও উচ্চশিক্ষার ব্যাঘাত ঘটত তাহলে গুরুচাঁদ নিজে অর্থসাহায্য করে তাকে সমস্যা মুক্ত করতেন।৮
স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত পূর্ববঙ্গে ওড়াকান্দি কেন্দ্রিক মতুয়া ধর্মান্দোলন চলতে থাকে। গুরুচাঁদ পরবর্তী সময়ে তাঁর চার পুত্র শশীভূষণ, সুধন্যকুমার, উপেন্দ্রনাথ ও সুরেন্দ্রনাথ এদের মধ্যে শশীভূষণের পুত্র প্রমথরঞ্জন ঠাকুর এবং সুধন্য কুমারের কনিষ্ঠ পুত্র শ্রীপতি ঠাকুরই মতুয়া ধর্মান্দোলন চালানোর নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
১৯৪৭ সালে দেশভাগ জনিত কারণে বাংলা দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়– পূর্ববঙ্গ পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীনতার পর প্রমথরঞ্জন ঠাকুর পশ্চিমবঙ্গ চলে আসেন। নমশূদ্র তথা মতুয়া ভক্তদের তিনি পশ্চিমবঙ্গে চলে আসার আহ্বান জানান। কিছু সংখ্যক মতুয়া ভক্ত পশ্চিমবঙ্গে চলে আসে এবং একটা বড়ো অংশ পূর্ববঙ্গে থেকে যায়। পূর্ববঙ্গে ওড়াকান্দি কেন্দ্রিক মতুয়া ধর্ম আন্দোলন চলতে থাকে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে নমশূদ্র তথা মতুয়া শরণার্থীদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য প্রমথরঞ্জন ঠাকুর উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে কলোনি স্থাপন করেন এবং সেখানে মতুয়াদের জন্য নতুন করে মতুয়া মহাসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। ওড়াকান্দির মতো ঠাকুরনগরে প্রতি বছর হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে বারুণী মেলার আয়োজন করা হয়।৯
১৯৪৭ সালের পরবর্তী পর্বে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে কিছু উদ্বাস্তু পশ্চিমবঙ্গের বাইরে পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তরিত হন। কিছু অংশ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় জমি কিনে বসবাস করা শুরু করেন। আবার কিছু অংশ সরকারি কলোনিতে বসবাস করার সুযোগ পান। ঠাকুরনগরে প্রমথ রঞ্জন ঠাকুর, মহানন্দ হালদার ও অন্যান্য মতুয়া ভক্তদের উদ্যোগে মতুয়া মহাসংঘ পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী শরণার্থী এবং পশ্চিমবঙ্গের বাইরের শরণার্থীদের মধ্যে পূর্বেকার সাংগঠনিক আন্দোলনের পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের সমাজের স্বাভাবিক স্রোতে ফিরিয়ে আনার তাগিদে ধারাবাহিকভাবে পরিকল্পনা ও প্রচার অভিযানের সূচনা করেন।
প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের প্রচেষ্টায় ঠাকুরনগরের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঠাকুরনগর উচ্চ বিদ্যালয়।১০ এটি পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অনুমোদিত। এটি শিয়ালদহ-বনগাঁ ট্রেনলাইনের ঠাকুরনগর স্টেশন সংলগ্ন।
প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের প্রচেষ্টায় ঠাকুরনগর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় সদস্য থাকাকালে ঠাকুরনগরে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতিকল্পে প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারিভাবে স্কুল শিক্ষাদপ্তরে সুপারিশ করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ১৯৫৮ সালের ঠাকুরনগর বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর মৃত্যুর পরেও ঠাকুরনগরবাসী তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে ঠাকুরনগরের রূপকার হিসেবে। তাই ২০০২ সালে শিশু শিক্ষার জন্য ঠাকুরনগরেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে পি. আর. ঠাকুর বিদ্যাপীঠের মতো প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও ঠাকুরনগরের শিমুলপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গুরুচাঁদ জুনিয়ার হাই স্কুল। ২০১৩ সালে ঠাকুরনগরে চাঁদপাড়া গ্রামীণ হাসপাতাল পার্শ্ববর্তী ভূমি ও ভূমিসংস্কার দপ্তরের জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় পি. আর. ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ। এটি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ঠাকুরনগরের একটি উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান। মহাবিদ্যালয়টি পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ। এই মহাবিদ্যালয়ে কলা ও বিজ্ঞান শাখার অনেকগুলি বিভাগ রয়েছে। ঠাকুরনগরে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২১ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠনের অনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সেন্টার ফর মতুয়া স্টাডিজ’ নামে নতুন একটি বিভাগ খোলা হয়েছে।১১
তবে মতুয়া ধর্মে উত্তরণের ধারা একদিনে আসেনি—
এটি বহু দিনের সংগ্রামের ফল। জন্মভূমি সফলডাঙ্গা থেকে জমিদারদের অত্যাচারে হরিচাঁদ ঠাকুর ওড়াকান্দি চলে এসে সেখানে নমঃশূদ্রদের সংগঠিত করেন। এর অন্যতম কারণ ব্রাহ্মণ্য শোষণ, অত্যাচার। তার মূল বাণী ছিল ‘হাতে কাম, মুখে নাম’।১২ গুরুচাঁদের জীবনে মতুয়া আন্দোলন দেশব্যাপী পরিব্যাপ্ত হয়— শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক-সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পতিত মানুষরা নিজেদের জায়গা করে নেবার পথ খুঁজে পায়। তবে পরবর্তী পর্যায়ে প্রমথ রঞ্জন ঠাকুরের প্রচেষ্টায় ভারতে মতুয়া ধর্মের বিস্তার ঘটে। স্বাধীনতা উত্তরকালে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলার বাইরে ভারতের বিভিন্ন উদ্বাস্তু কলোনিতে এবং আন্দামানে মতুয়া আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন প্রমথ রঞ্জন ঠাকুর, বীণাপাণি দেবী ও কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর। জীবন জীবিকার তাগিদে মতুয়ারা আজ বিশ্বের দরবারে স্থান করে নিয়েছে।
সমাজ ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুরুষের সাথে নারীর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ থাকে– হরিচাঁদ ঠাকুর এই পরম সত্য অষ্টাদশ শতকেই উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি প্রথম থেকেই নারী ও পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলেছেন। তিনি বলতেন, নারীকে অবজ্ঞা করে আদর্শ গার্হস্থ্যধর্ম প্রতিষ্ঠা করা যায় না। নারীই হল গৃহীর আসল ভিত্তিভূমি। নারী ছাড়া সংসার হয় না। নারীকে সঙ্গে নিয়েই ধর্মপথে অগ্রসর হতে হয়। এজন্য তিনি নারীশিক্ষা, নারীর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় সকলকে জোর দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। জাতি-ধর্ম, উচ্চ-নীচ বিচার না করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সম-অধিকারই হল মতুয়াধর্মের মূল কথা। হরিচাঁদ ঠাকুর এই বিষয়টির উপর জোর দিয়েছেন সব থেকে বেশি। নারী এবং পুরুষ হিসাবে সমাজে যে বৈষম্য বর্তমান ছিল, তিনি তার বিরোধিতা করেছেন। হিন্দুধর্মের আইনগ্রন্থ ‘মনুসংহিতা’-য় নারীকে নরকের দ্বার, সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্র বলে নারীর প্রতি চরম অবিচার ও অবহেলা প্রদর্শন করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে তিনি বলেছেন নারীকে অবজ্ঞা করে আদর্শ গার্হস্থ্য ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা যায় না। নারী হল গৃহীর কেন্দ্রস্থল। নারী ছাড়া সংসার গড়া যায় না। নারীকে সঙ্গে নিয়েই ধর্মপথে অগ্রসর হতে হয়। তাই গুরুচাঁদ ঠাকুর বলেছেন—
বালক বালিকা দোঁহে পাঠশালে দাও। লোকে বলে মার গুণে ভালো হয় ছাও।।১৩
সমাজের যোগ্য নাগরিক তৈরি করে সমাজ ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষা যে কতটা জরুরি তা হরিচাঁদ ঠাকুর এবং তার পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর উপলব্ধি করেছিলেন। গুরুচাঁদ ঠাকুর অপ্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজের যোগ্য নাগরিক তৈরি করতে চেয়েছিলেন। অপ্রাতিষ্ঠানক শিক্ষা বিস্তার হত সাধারণত পিতৃ-মাতৃ শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে। ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে খুলনার দত্তডাঙ্গার ঈশ্বর গাইনের মাতৃ শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে একই রকমভাবে বিদ্যাশিক্ষা বিস্তারের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।১৪ এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার সূত্রপাত হয় ওড়াকান্দি নিজ বাসভবনে গুরুচাঁদ কর্তৃক ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। তবে গুরুচাঁদ পূর্ববঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেও বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে তিনি শিক্ষা বিস্তারের চেষ্টা করেছিলেন। এক্ষেত্রে তার প্রচেষ্টা গুলি হল– গোয়ালঘরে পাঠশালা প্রতিষ্ঠা, শিক্ষাগুরু ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা, মুষ্টি ভিক্ষা তুন্ডুল, লজিং সিস্টেম ইত্যাদি।
সমাজ সংস্কারক গুরুচাঁদ শুধুমাত্র শিক্ষা বিস্তার করেই থেমে থাকেননি। শিক্ষা বিস্তারের সাথে সাথে তাদের চাকরির ব্যবস্থাও করেছিলেন। ১৯০৬ সালে এই জন্য ওড়াকান্দিতে একটি জনসভা আহ্বান করে ছোটোলাটের কাছে চাকরির আবেদন জানানো হয়। অবশেষে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে আইন পাশ হয়— মুসলিম এবং নিম্নবর্ণের লোকেরা এই আইন মোতাবেক চাকরির সুযোগ পায়। ফলস্বরূপ ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে গুরুচাঁদ পুত্র শশীভূষণ সাব রেজিস্টার, ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে কুমুদবিহারী মল্লিক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও তারিনী চরণ বল সরকারি ডাক্তার হিসেবে যোগ দেন।১৫ এরপর নমশূদ্রদের চাকরি দিন দিন বাড়তে থাকে।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বলা যেতে পারে, নমশূদ্রদের মধ্যে সমস্ত পেশার মানুষ আছে। আছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার, শিক্ষক, অধ্যাপক, আই এ এস। একইরকমভাবে তাদের মধ্যেই আছে এম এল এ, এম পি-র মতো রাজনৈতিক নেতৃত্ব। সুতরাং যে প্রেক্ষাপটে থেকে হরিচাঁদ ঠাকুর মতুয়া আন্দোলন শুরু করেছিলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি মতুয়া আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন– গুরুচাঁদ ঠাকুর যে উদ্দেশ্য মাথায় নিয়ে এগিয়েছিলেন আজ সেই উদ্দেশ্য সার্থক বলা যেতেই পারে। একটা দিন ছিল, যখন নমশূদ্রদের বিচার করত সমাজের বর্ণ হিন্দুরা। কিন্তু আজ নমশূদ্র তথা মতুয়ারাই সমাজের নেতৃত্ব নির্ধারণ করছে।
গ্রন্থপঞ্জি:
১. Gait, ‘E.A. Census of India, Bengal’, Part-1, Secretariat press, Calcutta, 1901, Page 395
২. সরকার, অনিল কুমার, ‘গুরুচাঁদ ঠাকুর ও মীড সাহেব : প্রসঙ্গ বাংলার মতুয়া উর্দ্ধতন’, কনসেপ্ট পাবলিশিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, নিউ দিল্লি, ২০২৩, পৃষ্ঠা ১৬
৩. Govt. of Bengal (Judicial) W. S. Wells, ‘Magistrate of Furreedpur to the Commissoner of the Dacca Division’, Date 8 April 1873, 56-61, 17 May 1873, WBSA.
৪. Govt. of Bengal, (Judicial) ‘Proceedings’, June 1873, No-84, letter No.- 4470, 22 May 1873, and ‘Proceedings’, June, 1873, No.-87, Letter No.- 523, 7 June 1873, WBSA.
৫. বারুই, সন্তোষ কুমার, ‘ঠাকুর শ্রী শ্রী হরিচাঁদ মানব পুরুষ: অধ্যাত্ম পুরুষ’, শ্রী মন্মথ রঞ্জন মন্ডল, দুর্গাপুর, ২০১১, পৃষ্ঠা ২৪৯
৬. সরকার, তারক চন্দ্র, ‘শ্রী শ্রী হরিলীলামৃত’, কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর, ঠাকুরনগর, ২০১৬ পৃষ্ঠা ২৩
৭. হালদার, মহানন্দ, ‘শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ চরিত’, কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর, ঠাকুরনগর, ২০১৬, পৃষ্ঠা ১৪৪
৮. পাল, মৃন্ময়, ‘মতুয়া: দেশ-কাল’, সৌমিতা মিত্র, কলকাতা, ২০২৪, পৃষ্ঠা ১১৭
৯. বিশ্বাস, মনোশান্ত, ‘বাংলার মতুয়া আন্দোলন : সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি’, সেতু প্রকাশনী, কলকাতা, ২০১৬, পৃষ্ঠা ৯৪
১০. তদেব, পৃষ্ঠা ১৮১
১১. পাল, মৃন্ময়, ‘মতুয়া: দেশ-কাল’, সৌমিতা মিত্র, কলকাতা, ২০২৪, পৃষ্ঠা ১১৭-১৮
১২. সরকার, তারক চন্দ্র, ‘শ্রী শ্রী হরিলীলামৃত’, কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর, ঠাকুরনগর, ২০১৬ পৃষ্ঠা ৫৫
১৩. হালদার, মহানন্দ, ‘শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ চরিত’, কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর, ঠাকুরনগর, ২০১৬, পৃষ্ঠা ৫২৯
১৪. বৈরাগ্য, বিরাট, ‘মতুয়া স্মরণিকা’, বিরাট বৈরাগ্য, কলকাতা, ১৯৯৩, পৃষ্ঠা ২২
১৫. বিশ্বাস, মনোশান্ত, ‘বাংলার মতুয়া আন্দোলন : সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি’, সেতু প্রকাশনী, কলকাতা, ২০১৬, পৃষ্ঠা ১৭৬