আরে আহেন না!  কত মানু বারাইয়া আহে! ইলিয়াসি কথকতায় নিম্নবর্গীয় ভাষিকতা

সুশান্ত পাল 

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বহুপঠিত নন, তবে প্রান্তিকও নন; উচ্চশিক্ষা পাঠক্রমে ইদানীং অন্তর্ভূত কথাসাহিত্যিক। জীবনের হতাশা, ক্লেদ, হীনতা; সমাজের অন্তর্গত অসংগতি, দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত প্রতিরোধ, বাঁচার সংগ্রামকে ভাষারূপ দিতে চেয়েছেন তিনি সাকুল্যে দুটি উপন্যাস ও অনধিক তিরিশ গল্পে— বিপরীতে যখন বৃহতের জনসংযোগচ্যুত, রক্তহীন, আত্মস্বরূপ আবিষ্কারে ব্যর্থ আবেগসর্বস্ব, নিষ্ক্রিয় দর্শক ‘মধ্যবিত্তের কর্তৃত্বে, মধ্যবিত্তের দ্বারা এবং মধ্যবিত্তের জন্য’ রচিত কথাসাহিত্যের বাড়বাড়ন্ত। ঔপনিবেশিক খোঁয়ারি প্রলম্বিত! সংখ্যাগরিষ্ঠের রক্তধারাকে আখ্যানের শরীরে ধারণ করে সময়ের তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিবেদক হতে চাওয়া ইলিয়াস বৃহত্তর জন-‘সংস্কৃতির ভাঙা সেতু’-র মূলে দায়ী করেছেন শিল্পীর সঙ্গে সাধারণ মানুষের অনতিক্রম্য বিচ্ছিন্নতাকে; এক্ষেত্রে তাঁর পর্যবেক্ষণ—

মানুষ শুধু ইতিহাসের উপাদান নয়। কিংবা কোনো তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ কেবল প্রয়োজনীয় উপকরণমাত্র নয়। শ্রমজীবী মানুষ ইতিহাসের নির্মাতা।

একমাত্র ‘ভোট’-রূপে অর্থাৎ ‘সংখ্যা’ হিসাবে, রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের ‘ক্যাডার’/ ‘হাতিয়ার’ বিবেচনায় প্রান্তেবাসী জনগণের প্রতি, ‘মানুষের প্রতি গভীর মর্যাদাবোধ’ লঙ্ঘিত হয়। বাংলা কথাসাহিত্যে ‘ব্যস্ততা, তৎপরতা ও কাজ, দায়িত্ব ও কর্তব্য, চিন্তা ও দুশ্চিন্তা এবং উদ্‌বেগ ও উত্তেজনা নিয়ে নিরক্ষর ও কপর্দকশূন্য, নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী একজন আস্ত মানুষ’-কে, মানুষদের আশেকড় তাদের জীবনযাপন, সংস্কৃতিচর্চাসহ রক্তমাংসের চেহারায় হাজির করতে চেয়েছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। সংস্কৃতির ভাঙা সেতুর এপারে দাঁড়ানো অনালম্ব মধ্যবিত্তকে তিনি মুখোমুখি করেছেন নিম্নবিত্ত, শ্রমজীবী মানুষের ‘শাসিত স্পৃহা ও দমিত সংকল্পের’ মুক্তির তাৎপর্যে। জানা আছে তত্ত্বরাজির (না— বাজির?) বদৌলতে— Can the subaltern speak? গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক স্পষ্টত প্রশ্ন করেছেন— নিম্নবর্গ একজন মানুষ আদৌ নিজের কথা নিজের মুখে বলে, না, উচ্চবিত্ত তাকে প্রাতিস্বিক শ্রেণি-দৃষ্টিতে পুননির্মাণ করে? এডোয়ার্ড সাইদ আবার একান্ত সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক শ্রেণিস্বার্থ থেকে জ্ঞানের তাফসিরে রূপান্তরের কথা বলেছেন। নিম্নবর্গের জীবনচর্যাকে বিশ্বস্ত ও যথাযোগ্যরূপে প্রকাশের প্রশ্নে তবে মানদণ্ড কী? কথাসাহিত্যিকের এক্ষেত্রে থাকা দরকার কোন্ যোগ্যতা?

দেখার চোখ, শোনার কান, সহমর্মের হৃদয়, ঘটনা-চরিত্র বিশ্লেষণে ‘অনুসন্ধান ও সিদ্ধান্তের’ ক্রম সংলগ্নতা, পরিসর-যাপিত অভিজ্ঞতা নিম্নবিত্ত সমাজ-বর্গের জীবনযাপন উদ্‌ঘাটনের এক জটিল অনুশীলন হতে পারে। অন্ত্যজ জীবনের মাঝে পৌঁছে চলিষ্ণু পরিপার্শ্বসহ তাদের প্রাত্যহিক জীবনের হতাশা, গ্লানি, সংকল্প, দ্রোহ ক্রমাগত অন্বেষণ ও বিশ্লেষণের তৎপরতা এক্ষেত্রে অবশ্যই জরুরি শৈল্পিক দায়। না-ছাঁকা মৌখিক কথাবলির নৃতাত্ত্বিক-মিথীয়-সমাজগত মূল্য জনতার ইতিহাসের ভিতর-ঠিকানার হদিস পেতে এখন বহুল আলোচিত। আখতারুজ্জজামান ইলিয়াস হেঁটেছেন এই উজানি যাত্রাপথে। কোণঠাসা প্রান্তিকের প্রতি মর্যাদাবোধ, তাদের নিজস্ব রচিত শ্রুতিকথন থেকে উপাদান সংগ্রহ করে; সামাজিক প্রেক্ষিতে ব্যক্তিকে স্থাপন করে আবার ব্যক্তির ভেতরে সমাজবিকাশের দ্বান্দ্বিক স্বরূপের অনুপুঙ্খ সংশ্লেষণ করে কথাকার তিনি নিম্নবর্গের এক অ-পঠিত আখ্যানবিশ্ব উপস্থিত করেছেন। পাঠক মধ্যবিত্ত শিউরে উঠেছে; অবস্থা বেগতিক চকিত ভীতসন্ত্রস্ত যেন-বা!

মধ্যবিত্তকৃত ঘুণধরা প্রকরণের উচ্ছ্বাস, বাগাড়ম্বর ইলিয়াসের কথাজগতে ঘৃণিত, ধিকৃত। কথাবস্তু, কাঠামো, ভাষাশৈলী এখানে পরস্পর সম্পৃক্ত। বাচন লিখনে ভাষার ভূমিকা এখানে বড়ো। কেননা, ভাষাই শ্রমজীবীর নিম্নবর্গত্ব প্রকাশের অন্যতম প্রধান অভিজ্ঞান। বশ্যতা, প্রতিরোধ, প্রতিবাদ, আনুগত্য, ক্রোধ অথবা অসহায় আত্মসমর্পণের বিশ্বস্ত প্রকাশ ঘটে তাদের বাচনভঙ্গিতে। ইলিয়াসের চরিত্রেরা ভাষার শুচিতা রক্ষা করে না; সর্বজ্ঞ কথকের অদৃশ্য পুতুলনাচনের সুতো, মধ্যবিত্তের সওদাগরি চাহিদা অথবা ধরি-মাছ-না-ছুঁই-পানির নিয়ন্ত্রণ এখান থেকে বিতাড়িত। এই ভাষাশরীর সময়-পরিসরধৃত নিম্নবর্গীয় জীবনলগ্নতার সংযুক্তি অর্জন করেছে; যেহেতু, সংখ্যাগরিষ্ঠের রক্তধারায় প্রবহ, তাদেরই অন্তঃশীল চেতনে স্পন্দিত এই বৈভাষিক জগৎ। কথাসাহিত্যের এক নতুন সীমানা উন্মোচিত হতে দেখে হাসান আজিজুল হক ইলিয়াসি গদ্য-কে কেন্দ্রে রেখে লিখলেন (‘আখতারুজ্জামান ইলিয়াস: সাহিত্যের নতুন সীমানা’)—

[…] সরাসরি গ্রহণ করেছিলেন তাদেরই ভাষা যারা নিজেরাই নিজেদের দেখানোর দায়িত্ব নিচ্ছে, যারা মধ্যবিত্তের সমস্ত সংস্কৃতি থেকে দূরে এবং হাত তুলে নিরেট অবজ্ঞার সঙ্গে সেই সংস্কৃতিকে ‘তফাত থাক’ বলে কাপড় তুলে জননাঙ্গ দেখিয়ে দিচ্ছে। এইভাবে না দেখলে আমি তো ইলিয়াসের গদ্যে এত স্ল্যাং, এত চলতি দেহাতি শব্দ, এতসব মারাত্মক আঞ্চলিক বা শহুরে পাড়া বা গলির লব্জ, এত বুকনি, এত অদ্ভুত গালিগালাজ, মুদ্রাদোষে এত সহজভাবে অনুচ্চার্য নোংরা শব্দের ব্যবহার কিছুতেই ব্যাখ্যা করতে পারি না।

বাখতিন কথিত কার্নিভাল দৃষ্টিকোণের সহায়তায় আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের কথাসাহিত্যের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারি আমরা। কার্নিভাল যেমন অমিতাচার, স্বেচ্ছাচার, বাধাবন্ধনহীন স্বাধীন প্রকাশকে উৎসাহিত করে; প্রথানুগত্য, কর্তৃত্ববাদ, শালীনতা, শিষ্টাচারকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠি দেখায়, ইলিয়াসও তেমনি ভাষাকে মান্যতা, ভব্যতার গণ্ডি থেকে মুক্ত করে জীবনঅন্বিষ্ট করতে লিঙ্গ-শ্রেণিগত সামাজিক উপভাষা, পরিসরগত আঞ্চলিক উপভাষাকে হাতিয়ার করেছেন। জবাবদিহি তাঁর একমাত্র বাস্তবনিষ্ঠায়, কোনোরূপ ভদ্রলোকি প্যানপ্যানানির কাছে নয়। বাখতিনের মতানুযায়ী, ভাষাতত্ত্ব শুধুমাত্র একস্বরিক উপন্যাসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে সক্ষম। অথচ, বহুস্বরিক (Polyphonic) অথবা দ্বিরালাপী (Dialogic) আখ্যান ব্যাখ্যায় প্রয়োজন অধিভাষিক দৃষ্টিভঙ্গির। যেহেতু, কথাসাহিত্য মূলত বহুবিচিত্র সামাজিক উক্তির বহিঃপ্রকাশ। এই উক্তি দৈনন্দিন জীবন, ইতিহাস, সমাজ, রাজনীতি, শ্রেণি লিঙ্গ-প্রভেদ থেকে উৎসারিত, পরস্পর মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত। প্রকৃতপক্ষে, কথাসাহিত্যে বহুস্বরের সমাবেশ ঘটলে তা একদিকে যেমন ব্যক্তিস্বরের প্রকাশ ঘটায়, অন্যদিকে তা সামাজিক স্বরও বটে, শ্রেণির প্রতিভূ। বহুস্বরের কথাজগৎ তখন প্রত্যাঘাতের রণভূমি হয়ে ওঠে। দেশ-কাল সংলিপ্ত লেখক, চরিত্র ও পাঠক সংঘর্ষ জোরদার করে স্বরান্যাসে অর্থান্তরের প্রক্রিয়ায়। ভাঙচুর চলে বিষয়ে, প্রকরণে, পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে সংঘর্ষণে। প্রথম দিকের রোমান্টিক কাব্যময়তা ও তৎসম-জড়তার হাত-মকশোর ভাষা ছুড়ে ফেলে ইলিয়াস ভাষা-প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমাজবাস্তবিক দৃষ্টিকোণ প্রয়োগ করেছেন ক্রমশ। সমাজ যেহেতু শ্রেণিবিভক্ত, বাস্তবতার যেহেতু আছে নানা স্তরান্তর, ফলত ভাষা হয়ে উঠেছে বহু শ্রেণির, বহু স্বরের, মাঠে-ঘাটে-বাজারের, ড্রয়িংরুম থেকে আপসের, রাজনীতির নেতার চালাকির, গ্রাম্য কোন্দলের, ভয় থেকে জেগে ওঠা মানুষের, কখনও ভাষা হাজির করে স্বপ্নে ভাসা মানুষকে। প্রথম পর্বের গল্পে ইলিয়াসের ভাষা কাব্যময়, রোমান্টিক, অনেকাংশে ঘটে অনুপ্রাসের অনুবর্তন। এ-সব গল্পে ইলিয়াস মানুষের নিঃসঙ্গতা, অনিকেত অস্তিত্ব প্রকাশ করতে ভাষাকে করেছেন স্বগতচারী। প্রেক্ষিতহীন একাকী মনের ভাষায় আবেগের অতিরেক গোপন থাকেনি।

অনতিবিলম্বে ইলিয়াসের অভিযান যখন সমাজবাস্তবতার আন্তর প্রদেশে, তখন আর্থ-সামাজিকতা, রাজনীতির কূট-চারিত্র্যে ভাষার আবেগ যায় ছুটে, সামাজিকতা অর্জনে, যাথার্থ্যের প্রতিষ্ঠায় ক্লেদ গায়ে মাখতে তার আপত্তি থাকে না কোনো। সমাজের বহু মানুষ তাদের শ্রেণিভাষা সহ এসে দাঁড়ায় ইলিয়াসের লেখায়। ইলিয়াস যেহেতু তাঁর কথাসাহিত্যে মূলত সীমিত সর্বজ্ঞ কথক অথবা সর্বজ্ঞ কথকের দৃষ্টিকোণে ‘সে’ বাচক সর্বনামের প্রয়োগে কাহিনি উপস্থাপন করেন, ফলে চরিত্ররা নিজেরাই তাদের রক্তমাংসসহ মুক্তপরোক্ষ বাচনে নিজেদের উপস্থিতি প্রমাণ করেন। ভাষা তখন লুকায় না কিছুই।অতৃপ্ত যৌন আকাঙ্ক্ষায় (এমনকী!) নারীর অবদমিত ক্রোধ উদাম হয়ে পড়ে (‘তারাবিবির মরদপোলা’)— 

গোলজারে কি করছে? পোলায় আমার জুয়ান মরদ না একখান? তুমি বুইড়া মড়াটা, হান্দাইয়া গেছো কব্বরের মইদ্যে, জুয়ান মরদের কাম তুমি বুঝবা ক্যামনে?

ছেলের বিবাহ-বহির্ভূত যৌন-তৎপরতায় সমর্থন জোগায় মা তারাবিবি। সে বছর ৮০-৮২-র রমজান আলির ৪০-৪২ বছরের দ্বিতীয় স্ত্রী। পুরুষ শরীরটি অক্ষম পৌরুষ হলেও নারী তারাবিবি যে যৌথ যৌনজীবনে প্রাকৃত সম্ভোগ দাবি করে। তাই রাতের বেলা শুরু হয় যৌন-কোন্দল—

…তারাবিবি রমজান আলিকে জাগাবার চেষ্টা করছে, ‘অ গোলজারের বাপ! এক্কেরে লাশটা হইয়া রইছো, না? আরে বুইড়া মরদ, খাটিয়ার লাশটাভি লড়ে-চড়ে, তোমার লড়ন নাই? বিছানা জুইড়া ভ্যাটকাইয়া রইছো, অ গোলজারের বাপ!’ এরপর রমজান আলি হয় চুপ করে থাকবে, নইলে উঠে তার বালিশের কাছ থেকে হাতপাখাটা নিয়ে বৌকে পেটাতে শুরু করবে, ‘খানকি মাগি, তর মরদানি দ্যাখনের খাউজানি উঠছে, না? র। তরে মরদ দ্যাখাই। তর হাউস মিটাইয়া দেই, আয়।’

পারিবারিক, সামাজিক জীবনে পুরুষ তার লৈঙ্গিক প্রাধান্য কায়েম করবে নারীর শরীরে— প্রকৃত, স্বাভাবিক রীতিচলিত এই পরম্পরা। তারাবিবিও রমজান আলির কাছে পৌরুষ দাবি করে নিজে দমিত হতে চায়। কিন্তু, রমজানের শরীর তার যৌনক্ষমতা হারিয়েছে। তারাবিবির দেহের দাবি মেটানোর দায় থেকে সে মুক্ত হতে চেয়েছে পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতার চাপানো সামাজিক অনুশাসনে। তারাবিবির যৌনক্ষুধা তার বিবেচনায় নষ্ট মেয়েমানুষের ‘মরদানি দ্যাখনের খাউজানি’। যৌনতার ক্ষমতায়নে পৌরুষের প্রতিরূপ যে ‘মর্দানা’ তারাবিবির মনে স্থায়ী ছাপ রাখে, দেহ সম্ভোগের চাহিদা নির্দিষ্ট করে, ‘জোয়ান মরদ’ গোলজারকে কেন্দ্র করে তার প্রতিকল্প রচনা করে যুগপৎ আত্মকাম ও মর্ষকাম পরিপূরণ করে চলে সে।

আমরা জানি, নারীর যৌনতা এবং শ্রম, নারীর একান্ত নিজস্ব হলেও তার ওপরে নিজের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না তার। নারীর সামাজিক পরিচয় নির্ণীত হয় মাত্র সন্তান পুনরুৎপাদনের সক্ষমতায়। প্রাকৃতিক, জৈবিক নিয়মের অপরিহার্যতায় সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা নারীর আয়ত্তাধীন হলেও পুরুষতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণাধীন। সে যেন যৌনজীবনের দাস। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য অবান্তর। আতমন্নেসার স্মৃতিচারণায় (‘অসুখ বিসুখ’) বিষাদ, ক্ষোভ ভাষা পায়—

হায়রে কপাল তার, ছ’টা সাতটা ছেলেমেয়ে হল, —সন্তানের সংখ্যা তার ভালো করে মনেও পড়ে না, —মনে করার জন্য চোখ বন্ধ করে নিবিষ্ট চিত্ত হতেও তার ভয় করে পাছে মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে, একবার মনে হয় আটটা, সবচেয়ে বড়োটার কথা মনে পড়ে, সেটা ছিল ছেলে, সাত আট মাস বোধহয় বেঁচে ছিল, — তারপর বোধহয় নুরুন্নেসা— তার জীবিত সন্তানদের মধ্যে বড়ো। তারপর কে? সোবহান। না, সেই মরা ছেলেটা! —কি জানি? এখন আর মনে করে লাভ কি? তখনই কেউ খেয়াল করল না! না, পোয়াতির শরীরের দিকে কেউ দ্যাখেনি।

পুরুষের শ্রমই সমাজে পারিশ্রমিকের যোগ্য বিবেচিত। অথচ, নিংড়ানো গৃহশ্রমে নারী শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সম্মান-সমানাধিকার থেকে বঞ্চিত থাকে। আধা-সামন্ততান্ত্রিক ও আধা-পুঁজিবাদী সমাজ-কাঠামোর অন্তর্গত নিম্নবিত্ত পরিবারে নারীর অবস্থান আরও ভয়াবহ। গল্পে আতমন্নেসার ছড়ানো-ছিটানো খেদোক্তিতে অবজ্ঞা, উপেক্ষা সাকার হয়—

কই তার জন্যে তো একফোঁটা ওষুধ কোনোদিন আসেনি।

[…]

তার স্বামী সারা জীবন কেবল একা একা ভোগ করে গেছে, তার কপালে একটা দানাও জোটেনি কোনোদিন।

[…]

একবার উঁকি দিয়ে দ্যাখেওনি বউটা মরল কি বাঁচল।

ন্যুব্জ নিরন্নের টিকে থাকাই যেখানে আশ্চর্যের, সবলের প্রতাপের বিরোধিতা সেখানে অকল্পনীয় দুঃসাহস। তবু মানুষ চেতনে, অবচেতনে কখনো বা জেগে ওঠে, মৃত্যুর অনতিপূর্বে যেমনটা হয়েছিল জয়নাব-এর (দুধভাতে উৎপাত ) ক্ষেত্রে। অভুক্ত গ্রাম্য রমণী সে। আজ সে প্রতিপক্ষে দাঁড় করায় স্বামীকে— যে স্বামী বৌ-সন্তানদের মুখে ভাত জোটাতে পারে না, অথচ নিজে ‘খাইয়া খাইয়া প্যাটটিরে বানাইছে গোশতের কালা পাতিলা’, নিজের গাই-বাছুর, সন্তান আগলে সংসার ধর্ম পালন করতে বিমুখ, অথচ দুনিয়ার লোককে ধর্মশিক্ষার তামিল দিয়ে বেড়ায়। প্রতিপক্ষে থাকে সমাজ— যার বানানো নিয়মে হাশমত মুহরির বৌ নাতনিদের জন্য পিঠে-পুলি ভাজে, বিপরীতে জয়নাব তার ছেলে-পিলেদের শাক-ভাতেরও সংস্থান করতে অক্ষম। আজন্মের ক্ষুধা পেটে করে জয়নাব তার স্বামী সন্তানকে সামনে রেখে দুধ-ভাত দিতে অক্ষম বৈষম্যের সমাজের প্রতি তাচ্ছিল্যের হুংকারে পৃথিবী ছাড়ে।ব্যত্যয়হীন এই নিয়ম ভাঙতেই যেন প্রতিরোধের আহ্বান করে জয়নাব—

বুইড়া মরদটা। কী দ্যাহস? গোরু লইয়া যায়, খাড়াইয়া খাড়াইয়া কী দ্যাহস।

জোতদার হাশমত মুহরির গোয়ালে যে বাধা আছে হাজার হাজার জয়নাবের কালো গাই।

স্বাধীন বাংলাদেশের রকের মাস্তান ডামলালু (‘ফেরারি’)। তার সংলাপে ধরা পড়ে যায় ঢাকার নাগরিক জীবনের ক্লেদ, মূল্যবোধের অবক্ষয়, অপরাধ জগতের কদর্য বাস্তব। নব-বিপ্লবী ছাত্রসমাজ এখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী। লুম্পেন ডামলালু বিস্রস্ত করে সময়ের অভিঘাত—

কেলাব থাইকা, হোটেল থাইকা সায়েবরা বারাইব মাল টাইনা, অরা হেই গাড়িগুলা ধইরা মালপানি কামায়, মাগিউগি পছন্দ হইলে ময়দানের মইদ্যে লইয়া হেইগুলিরে লাগায়। অহন হালায় ইসটুডেন গো, হালায় ইসটুডেনের মারে বাপ!

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের তীক্ষ্ণ শানিত বক্রদৃষ্টি সমাজকে নিরাবরণ করেছে দ্বিধাহীনতায়। সাংস্কৃতিক-আর্থিক উচ্চাবচতায়, কালপরিসরের বৈভিন্ন্যে, বহুস্বরের প্রকাশে বহুবাচনিক মুক্ত পরিসরের আখ্যান জগতের সাক্ষাৎ পাই এখানে। আখ্যানকার সক্রিয় দ্বিবাচনিক সন্দর্ভের প্রকৌশলী (‘Active’ variety of double-voiced discourse) দৃষ্টিকোণে চরিত্র, চরিত্রের দেহ-মনের গতি পর্যবেক্ষণ করেছেন; শুধরে দেওয়ার মাস্টারিতে যতদূর সম্ভব নির্লিপ্ত থেকেছেন। কথাকার একদিকে ধানমণ্ডির অভিজাত সংস্কৃতির অন্তঃসারশূন্যতা (‘উৎসব’) প্রকাশ্য করেছেন মধ্যবিত্তের রক্তশূন্য সংলাপে—

মিসেসকে নিয়ে চলে আসুন না একদিন, যে কোনো রোববার সকালে আসবেন। প্লিজ আসবেন। না এলে ভারী রাগ করব কিন্তু।

ভাষা হয়ে ওঠে অনবরত লাঙ্গুলচর্চার নির্লজ্জতা—

ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, লেখা ছেড়ে দিয়ে আপনি ভারী অন্যায় করেছেন। রাদার, শুড আই বি এ্যালাউড টু সে দ্যাট ইউ কমিট এ ক্রাইম?

‘সাজানো বাক্যের’ চড়া মেকআপের বিপরীতে দিনগত আচরণের কলুষ হাজির করে বাইলেনের উৎসব চলে। এখানে যোগদানকারী জুয়ারি, পিচ্চি, দোকানি, ঠেলাওয়ালা, ফেরিওয়ালা, মেয়েদের টিট করা রকবাজ ছোকরা, রুটির দোকানের মালিক আর তার সমকামের ভোগ্য শিশুশ্রমিক। মূল্যবোধের ন্যাকা কান্না এখানে শোনা যায় না, আদর্শ উচ্চকিত হয় না। বিনোদনের মাধ্যম— চটুল বাংলাছবি, বহু চর্চিত হিন্দি গানের কলি, এমনকি ‘কুকুররতি’। নগ্ন এই জীবনকে ঢাকার কোনো প্রয়াস নেই। প্রকাশের ভাষা তাই নির্বাধ, অনায়াস :

রুটির দোকানের মালিক তোতামিয়া তার বালক কর্মচারীর খোঁজে চিৎকার করে, ‘আব্বে চুতমারানি, এহেনে খাড়াইয়া কিয়ের রং দ্যাহো? রাইত বাজে একটা, আর তুমি হালায় খানকির বাচ্চা এহেনে রংবাজি করো? তোমার কোন বাপে গিয়া কাউলকা দোকান খুলব?’

বাইলেন জনতা তখন কুকুর-সঙ্গম দেখার উল্লাসে মুখর।

এক যে ছিল আব্বাস আলি মাস্টার (মিলির হাতে স্টেনগান )। বিএসসি ফেল আব্বাস আলি একরামপুর স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে জনপ্রিয় ‘লাইকে স্যার’। বাংলাদেশ একদিন উত্তাল হয়। উনসত্তরের গণআন্দোলনের ব্যর্থতা পেরিয়ে আসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। হানাদার পাকসেনা ও ঘরের শত্রু রাজাকারদের নরখাদক অভিযানের পিশাচ উল্লাসের মুখোমুখি শক্ত চোয়াল মুক্তিসেনা। আব্বাস মাস্টারও যোগ দিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনে। স্বাধীন হল বাংলাদেশ। দিনবদলের স্বপ্নভঙ্গের অবসাদ নিয়ে এল আব্বাস আলির মাথার ব্যামো। আব্বাস আলি মাস্টার এখন আব্বাস পাগলা। সদ্য স্বাধীন দেশেও তিনি শত্রু খুঁজে ফেরেন। এখনও দেশদ্রোহীরা দেশের ‘আসমান’ ‘ব্যাকটি অকুপাই’ করে রেখেছে। আব্বাস পাগলা ক্রুদ্ধ চিৎকার ছাড়ে, ‘খানকির বাচ্চারা, তোমরা দুনিয়ার পুরোটাই কব্জা করছো, অহন আসমান চোদাইবার তালে আছো, না?’ অমূল-প্রত্যক্ষে দেশের আসমানে-চাঁদে-নদে আজও দখলদার বাহিনীর কাঁটাতারে ঘেরা ক্যাম্পের ছবি দেখে আগামী লুটের পরিকল্পনার সম্ভাবনায় উত্তেজনায় ফুটতে থাকেন তিনি। চ্যাঁচান—

… খানকির বাচ্চাগুলি অহন নাম দিব। নাম দিব, দাগ দিব, খতিয়ান করব, কবল করব, দলিল করব, মিউটেশন করব— হালারা বাপদাদাগো সম্পত্তি পাইছে তো, বুঝলি না?… দুনিয়ার পানি বাতাস মাটি আগুন পাথর তো জাউরাগুলি পচাইয়া দিছে, অহন পচাইব চান্দেরে!

অতএব কর্তব্য? শত্রুর আর্টিলারি নিকেশ করতে হবে। আব্বাস পাগলা তাই হন্যে হয়ে খোঁজেন যুদ্ধাস্ত্র। স্টেনগান।

ভাষা যখন রাজনৈতিক স্লোগানের ভিত্তি (চিলেকোঠার সেপাই ), তখন গতি তার ক্ষিপ্র— 

'কেউ খাবে কেউ খাবে না'— 'তা হবে না, তা হবে না!',                                                                     'জোতদারের গদিতে' — 'আগুন জ্বালো এক সাথে',                                                                               'মিল মালিকের গদিতে' — 'আগুন জ্বালো এক সাথে'।

নিম্নবর্গের আন্দোলনের সমাবেশ যেহেতু আড়াআড়ি সংঘটিত, স্বতঃস্ফূর্ত তার প্রণোদনা, তাই তারা একে অপরকে বিচলিত, বিক্ষুব্ধ, অনুরণিত করে। প্রতিরোধের আঁচে ভাষা তখন উদ্দীপিত করে, সংশয় দ্বিধা ভয় উপেক্ষার আহ্বান জানায়; যেমন, তেভাগার উত্তাপে (‘খোয়াবনামা’) ভাষা হয়ে ওঠে গনগনে—

জয়পুরে দেখিছি, বর্মণী মা পুলিশের গুলি খায়াও হিরদয়ে বল রাখে। তার হুকুমে চাষারা তির চালায়। আর এটি, এই গিরিরডাঙা গাঁয়ে দেখি, মাঝিদের চোদ্দপুরুষের বিল দখল করে ভিন্ন জাতের মানুষ আর মাঝিরা বস্যা বস্যা খালি বাল ছেঁড়ে।

ভাষায় নিম্নবিত্ত জীবনের রাগ, বিরক্তি, ক্ষোভ, সংকল্প (‘চিলেকোঠার সেপাই’) ঝরে পড়ে—

চুতমারানি মিলিটারিকে আজ ভাসিয়ে দেবে পেচ্ছাবের ফেনার মতো।

প্রতিকূল সময়ের বুকে জমিহারা সর্বস্বান্ত অদম্য ‘কালোকিষ্টি’ মানুষ পাথুরে দার্ঢ্যে ঘুরে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দিতে চায়, তারা নিঃশেষে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। আশ্রয়হীন ভবিষ্যতের জিম্মায় জীবন বাজি রেখে চাষা আকালু যেমন তার শহুরে জমিদার নন্দনকে জানিয়ে দেয় (‘পায়ের নীচে জল’)—

জমি তো আমাগো আছেই। আমাগো জমি বান্দের উপরে। আমরা বান্দের জমিদার।

এদিকে ভাষা তো একমাত্র ব্যক্তি বা শ্রেণি বিশেষের পরিচায়ক নয়, ভাষায় প্রবেশ করে ভূগোল, জৈবসত্তার বিশিষ্টতা। ইলিয়াসের কথাসাহিত্যে বগুড়া অথবা ঢাকা নামসর্বস্ব প্রেক্ষিত রূপে কাহিনির ধারক হয় না, ভাষাও তাদের পৃথক হয় অঞ্চলভেদে। এক-এক স্বর মিশে যে Polyphony-র সৃষ্টি করে, ইলিয়াসের উদ্দেশ্য সেই সমগ্রতার উপস্থাপন— সময়-পরিসর যেখানে পৃক্ত। ইলিয়াসের প্রতিবেদনে ঢাকাইয়া কথ্য বুলি শোনা যায় (‘উৎসব’)—

শুয়োরের বাচ্চাগো কারবারটা দ্যাহেন। হালায় বেশরম বেলাহাজ মানুষ, কী কই এ্যাগো, কন? মহল্লার মইদ্যে কতো শরিফ আদমি আছে, ঘরে বিবি বাল-বাচ্চা আছে, আর দ্যাখছেন খানকির পুতেরা কী মজাক করতাছে রাইত একটার সময়? দ্যাখছেন?

স্বতন্ত্র ধ্বনিতাত্ত্বিক, রূপতাত্ত্বিক বিশিষ্টতায় বাক্য গড়ে ওঠে বগুড়ার আঞ্চলিকতায় (‘পায়ের নীচে জল’)—

বাপদাদার ভিটা ভুল্যা গেলেন বাবা? আপনের বাপের হাতোপায়োত ধর‍্যা এই কয় বিঘা জমি আটকালাম। তো আপনের বাপ কলো, সাকিদার, বেচব্যার যখন তুমি দিল্যাই না তো দ্যাখ্যাশোনা তোমাকই করা নাগবো।

নিম্নবর্গীয় চেতনার একদিক বশ্যতা ও আনুগত্যের মনোভাব এখানে স্পষ্ট। 

আবার চাষা পুরুষের সংলাপে অবদমিত প্রতিরোধ কখনও ভিন্নতর খাতে ভাষা পায়। ক্ষমতাহীনের কর্তৃত্বের প্রয়োগক্ষেত্র তখন নারী-প্রকৃতি (‘খোয়াবনামা’):

হাত দিয়া মাটি ছানা হয় না। জমি চায় নাঙলের ফলা, বুঝলু? জমি হল শালার মাগিমানুষের অধম, শালি বড়ো লটিমাগি রে, ছিনালের একশ্যাষ। নাঙলের চোদন না খালে মাগির সুখ হয় না।

সুললিত সুভাষণে রুচিবাগীশ মহল বলে উঠবেন— তওবা তওবা তওবা…। স্তম্ভিত কণ্ঠে রব উঠবে গেল গেল সব। ভাষার নরকদর্শনে সুন্দর বাক্‌রুদ্ধ! কিন্তু, খেটেখাওয়া মানুষ এভাবেই কথা বলেন। শ্লীল-অশ্লীল সুরুচি-অপরুচির ভেদাভেদ তাঁরা করেন না। কেননা, প্রকৃতির সঙ্গে, শ্রমের সঙ্গে, জীবনলগ্ন হয়েই বেরিয়ে আসে তাঁদের ভাষা। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বলছেন (‘সংস্কৃতির ভাঙা সেতু’)—

জীবনযাপনের সঙ্গে তাঁর [তাঁদের] ভাষা সামঞ্জস্যপূর্ণ। হাজার হাজার বছর ধরে প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে যুদ্ধ করার ফলে আবেগ-অনুভূতির রাখো-ঢাকো মার্কা প্রকাশ তাঁদের স্বভাবের বাইরে। তাঁদের প্রেম-ভালোবাসা বা স্নেহ-বাৎসল্যের প্রকাশের ভাষাও মধ্যবিত্তসুলভ তুলুতুলু মার্কা মিষ্টি হতে পারে না। ভাষাকে তাঁরা অলঙ্কৃত করেন, কিন্তু স্যাঁতসেতে করেন না।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সমাজবাস্তবতার কথাকার। দেশ-কালের সমগ্রতা তাঁর অবলম্বন। কাল তার ঐতিহাসিক গতিতে সচল, অন্যদিকে আর্থ-সামাজিক চারিত্র্য দেশগত মানুষের জীবন ধারণের ভিত্তি; ধর্ম-রাজনীতি তার চেতনার কর্তৃত্ব স্থাপনে সদা তৎপর। ইলিয়াস এক্ষেত্রে উচ্চবর্গীয় দাপটের ইতিহাস থেকে সচেতন দূরত্ব স্থাপন করে নিম্নবর্গীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিহাসের ধারাকে সম্যক উপলব্ধি করতে চাইলেন। নিম্নবর্গীয় রাজনীতিকে বুঝতে আনুগত্য ও প্রতিরোধের দ্বণ্যুক সম্পর্কের মাত্রা নির্ধারণ করতে চাইলেন। প্রতিবন্ধক হল লিখিত কাহিনি, দলিল-দস্তাবেজের অনুপস্থিতি। কেননা, বিশ্বের তাবড় মহাফেজখানা মূলত উচ্চবর্গীয় ইতিহাসের সংগ্রহশালা। একমাত্র উপায় মৌখিক ইতিহাসের পরম্পরা— উচ্চবর্গীয় প্রতাপের বিরুদ্ধে, তার রচিত একপেশে, ভ্রান্তির ইতিহাসের বিরুদ্ধে স্মৃতির লড়াই। এখানে সঞ্চিত আছে কত সংগ্রাম, জয়, পরাজয়ের প্রত্নস্মৃতি। যার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে কত-না মিথ, জন্মায় কিংবদন্তি। নিম্নবর্গীয় রাজনৈতিক সমাবেশের প্রবীণ হাতিয়ার ধর্ম। ফলে, ব্রাত্যজনের ধর্মীয় রীতিতে, আচারে, তার শ্লোকে, গানে, প্রবাদে, তার সচেতন-অবচেতন মনে বাসা-বাঁধা প্রত্নবিশ্বাসে প্রান্তিক জনগণের প্রকৃত, সম্পূর্ণ পরিচয় পাওয়া যায়। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লক্ষ্য বাহ্যবাস্তবে নিহিত অনুচ্চার সংঘর্ষণের বয়ান প্রকাশ, এ-হেতু তিনি প্রবেশ করেন লোকবিশ্বাসের মাটিলিপ্ত পরিসরে। মাটির মানুষ তার জীবনের রূঢ়, বস্তুনিংড়ানো অভিজ্ঞতা থেকে গড়ে তোলে প্রবাদ, উপমা। জেলে, মাঝি, আধিয়ার, ক্ষুধাদিগ্ধ নারী-পুরুষ তাদের প্রাত্যহিক জীবনের চেনা জানা উপাদানে গড়ে তোলে উপমা। ইলিয়াস শুধু তার সংগ্রাহক। কথাবয়নে ভিড় করে প্রবাদ, বাগ্‌ধারা; রচয়িতা ও ব্যবহারকারী অন্ত্যজ জনতা—

ক. নরাণাং মাতুলক্রম। খ. সাত ঘাটের মাছ খেয়ে বিড়াল সেজেছে সাধু তপস্বী! গ. পানিত বাস করি, কুমিরের সাথে লাগা ভালো লয়। ঘ. ভক্ষক গেছে রক্ষকের কাম করবার? ঙ. যে পাতেত খাস, সেই পাতেত তোরা হাগিস। চ. যাহার হাতে নাঙল, ফলায় ফসল অন্ন নাই তার পাতে।

সংখ্যাগরিষ্ঠের হৃৎস্পন্দন, রক্তধারার কথকতায় অনিবার্যভাবে জড়িয়ে আছে লোকসাধারণের সংস্কৃতি। ইলিয়াস লোককৃষ্টির উৎসমূল অনুসন্ধানে ব্যাপৃত ছিলেন আমৃত্যু। শহরবাসী তিনি গ্রামে পৌঁছেছেন প্রতিনিয়ত। নিম্নবর্গীয় মানুষের সংসর্গে দীর্ঘ সময় যাপন করেছেন, তাদের বেঁচে থাকার ধরন-ধারণ, প্রতিকূলতা ও লড়াইয়ের সংকল্প প্রত্যক্ষ করেছেন তাদেরই পরিসরবাসী হয়ে। ইলিয়াস শুনেছেন তাদের গান, শ্লোক, ছড়া, যা একমাত্র অবসর অতিক্রমণের মাধ্যম নয়, প্রতিদিনের জীবনযাপনে ওতপ্রোত।

নিম্নবর্গীয় মানুষের পরম্পরা বাহিত রুচি, ধর্মবোধ, সংস্কার-কুসংস্কার, তাদের শ্রম, পরিপার্শ্ব— নদী মাঠ গাছ আকাশ, সর্বোপরি তাদের ইতিহাস থেকে তৈরি হয় সংস্কৃতির অভিজ্ঞান— গান, শ্লোক, ছড়া। ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ উপন্যাসে লোকজ সংস্কৃতির চিহ্ন মারফতি গানের উল্লেখ করা হয়েছে একাধিকবার। গানগুলি, শ্লোকগুলি কখনও চেরাগ আলি, কখনও বৈকুণ্ঠ গিরির কণ্ঠে শুনলেও এর প্রকৃত রচয়িতা নামহীন লোকসাধারণের জীবনপ্রকাশের সংকল্প। ফকিরালি গান শোনা যায় চেরাগ আলির কণ্ঠে—

গোল করিও না তোমরা ফকিরে ঘুমায়।                                                                                            গলা ঝাঁঝরা কোম্পানির কামানের গোলায়।।                                                                                   নিন্দের সোয়ারি ফকির ধীরে দাঁড় বায়।                                                                                            বাবরি চুলের ছইখানি— ওপরে চেরাগদানি চেরাগে আতশ নাই নাও ডুবে যায়।                                              দেহ জখম কোম্পানির কামানের গোলায়। গোল করিও না সাগরেদ ফকিরে ঘুমায়।।...

কীর্তনের সুরে বৈকুণ্ঠ গিরি শোনায় ভবানী সন্ন্যাসীর মরণপণ লড়াই-এর কাহিনি:

দশনামী প্রভুগণে       বন্দিয়া পবিত্র মনে                                                                                           গিরিসেনা দাঁড়ায় কাতারে।                                                                                                            ভবানী নামিল রণে       পাঠান সেনাপতি সনে                                                                                         গোরা কাটো আদেশে হুংকারে।                                                                                                      ভবানীর কণ্ঠধ্বনি       মৃগরাজধ্বনি জিনি                                                                                              গর্জনে শার্দুলে লজ্জিত।                                                                                                                 সেই ডাকে চঞ্চল       মানাস নদীর জল                                                                                             হইল গোরা শোণিতে রঞ্জিত।                                                                                                       কোম্পানির গোরাসবে       পাঠাইয়া যমভবে                                                                                       জলে প্রভু করে আচমন।...

কেরামত আলি আবার আধুনিক কবি। মারফতি গান নয়, সে নিজে গান বাঁধে, সুর দেয়, মানুষকে সচেতন করতে গান শোনায় হাটে-মাঠে-বাটে। তার গানের ভাষায় পরিশ্রমের, উদ্দেশ্যের চিহ্ন যুগপৎ প্রকাশ্য-প্রচ্ছন্ন—

যাহার হাতে নাঙল। যাহার হাতে নাঙল, ফলায় ফসল                                                                             অন্ন নাই তার পাতে।                                                                                                                   জমির পরচা লইয়া জোতদার থাকে দুধেভাতে।। রক্ত করি পানি                                                                 র অ ক্ত করি পানি মাটি ছানি ভাদ্রে রোপাই ধান।                                                                                     চার মাসের মেন্নতে দেহে নাহি থাকে পরাণ। পৌষে ধান কাটি                                                               পৌষে ধান কাটি, বাটাবাটি করিল জোতদার।                                                                                      ভাগে পাইলাম আধা ফসল চলে না সংসার। চাষার মেন্নতের দাম...                                                      চাষার মেন্নতের দাম খালি আকাম জোতদারেরই কাছে।                                                                          দুই মাস গেলে চাষা ঘোরে মহাজনের পাছে।।                                                                                 জোতদার মহাজনে                                                                                                                  জোতদার মহাজনে মনে মনে উহাদের পিরিত।                                                                                   চাষার মুখের গেরাস খাওয়া দুইজনেরই রীত ।।...

নিম্নবিত্ত জনতার জীবন-পর্যবেক্ষণ, ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা, অবদমিত স্বপ্ন-প্রতীকে গড়ে ওঠা শ্লোক ইলিয়াসের কথকতাকে আনুপূর্ব্য ঘিরে রাখে—

ক. ছাওয়ালে গর্ভেতে ধরি শুকায় পোয়াতি।                                                                                         মাতার লোহুতে পুত্র বাড়ে দিবারাতি ।।                                                                                                  খ. সুরুজে বিদায় মাঙে শীতেতে কাতর।                                                                                               ধান কাটো ফাটে ভরা শিষের অন্তর ।।                                                                                                 গ. মাঝি বিনা বিল আর জল বিনা মাছ।                                                                                                    পুত্রহীন মাতৃকোল পুষ্প বিনা গাছ ।।                                                                                           আওরাতে না পায় যদি মরদের চুম।                                                                                                           যত জেওর দাও তারে রাতে নাহি ঘুম।।                                                                                                     ঘ. বিলে না পরশ যদি পায় মাঝি অঙ্গ।                                                                                                 জল শুকাইয়া যায়, না থাকে তরঙ্গ।।                                                                                                     ঙ. ইন্দুরে খাইলো খান বড়ো কুফা বাত।                                                                                           জানিয়া রাখিও ব্যাপার করিল হায়াৎ।।

উচ্চবর্গীয় অনুশাসন, ক্ষমতা, কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে নিম্নবর্গের জনতা বারংবার প্রতিরোধ গড়েছে। জয়-পরাজয়ের ইতিহাস তার সুদীর্ঘ। বশ্যতার প্রতিস্পর্ধায় নিম্নবর্গের লড়াই প্রচল ইতিহাসে, অর্থাৎ উচ্চবর্গীয় দাপটের, সাম্রাজ্যবাদের দোসর জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে ঊহ্য থাকে, সতর্ক সচেতন নীরব থাকে। অথবা, প্রান্তিক মানুষদের অধিকারের লড়াই নৈরাজ্য, সন্ত্রাসের কার্যকলাপ রূপে ধিকৃত হয় প্রথাগত ইতিহাসবিদের মূল্যমানে। কিন্তু, সাধারণের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা, লড়াই-এর ইতিহাস সংরক্ষিত থাকে জনমানসের স্মৃতিভান্ডারে। প্রজন্মান্তরে শ্রুতির লিখনে সঞ্চিত প্রত্নস্মৃতি (Myth) কৌমসমাজের অন্তর্জগত, অবচেতন থেকে উত্থিত হয়ে প্রেরণা জাগায় বারংবার। ইলিয়াস নিম্নবর্গের বিকল্প ইতিহাস রচনা করতে তাঁর কথাবয়নে মিথ-কে করেছেন কেন্দ্রীয় শক্তি। কাহিনির পরোক্ষ নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ ও তার সহচর জমিদারবর্গের বিরুদ্ধে লড়াই-এর কিংবদন্তি চরিত্র ফকির মজনু শাহ এবং ভবানী সন্ন্যাসী ও তাঁদের সম্মিলিত সেনা। ‘খোয়াবনামা’ উপন্যাসে তাঁরা কৌমসমাজে জাত-ধর্মের ঊর্ধ্বে যূথবদ্ধ সংগ্রামের অনুপ্রেরক। কাহিনির সূচনা হয় নাছোড় সংগ্রামের অতীত স্মৃতিতে—

মজনু শাহের বেশুমার ফকিরের সঙ্গে মহাস্থান কেল্লায় যাবার জন্যে করতোয়ার দিকে ছোটার সময় মুনসি বরকতুল্লা শাহ গোরা সেপাইদের সর্দার টেলরের বন্দুকের গুলিতে মরে পড়ে গিয়েছিল ঘোড়া থেকে। বন্দুকের গুলিতে ফুটো গলা তার আর পুরট হল না। মরার পর সেই গলায় জড়ানো শেকল আর ছাইভস্মমাখা গতর নিয়ে মাছের নকশা আঁকা লোহার পান্টি হাতে সে উঠে বসল কাৎলাহার বিলের উত্তরসিথানে পাকুড়গাছের মাথায়।

পাকুড়গাছের মাথায় বসে মুনসি কাহিনির গতি-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করেন, শাসন করেন অপরাপর চরিত্র। মুনসি শাসিত কাহিনিতে যৌথ লড়াই-এর প্রত্নস্মৃতি নিম্নবর্গীয় মানুষের অন্তর্জগৎ আলোড়িত করে। কখনও মজনু ফকিরের আদেশ শোনা যায়—

মজনু হুংকারে যত মাদারি ফকির।                                                                                               আন্ধার পাগড়িত বান্ধো নিজ নিজ শির।।                                                                                       সিনাতে জিঞ্জির পরো আঁখির ভিতর।                                                                                                 সুরমা করিয়া মাখো সুরুজের কর।।

কখনও ভবানীর হুংকার—

দশনামী প্রভুগণে       বন্দিয়া পবিত্র মনে                                                                                           গিরিসেনা দাঁড়ায় কাতারে।                                                                                                           ভবানী নামিল রণে       পাঠান সেনাপতি সনে                                                                                          গোরা কাটো আদেশে হুংকারে।

লড়াই যতই তীব্র হোক, সহজ সমাধান জানা নেই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের। তিনি নিরন্তর অনুসন্ধানে আভ্যন্তরিক বাস্তবতাকে অনুধাবন করতে চেয়েছেন। আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে বাস্তব অনুক্ষণ পরিবর্তনশীল। ফলে, বর্তমানের নজিরে গৃহীত সিদ্ধান্ত একমাত্র অথবা চরমের প্রামাণ্য অর্জন করতে পারে না। সময় পরিসরকে ভাঙে, পরিসরের মানুষের দ্বারাই সাবয়ব হয় সময়। দ্বান্দ্বিকতার এই চারিত্র্যে বহু সম্ভাবনার অন্তহীন জঙ্গমক্ষেত্র হয়ে ওঠে ইলিয়াসের কথাসাহিত্য। প্রসঙ্গক্রমে, ইলিয়াসের স্বীকারোক্তি (‘সংস্কৃতির ভাঙা সেতু’)—

[কথাসাহিত্য] কোনো সমস্যার সমাধান দেয় না, কিন্তু মানুষের অন্তহীন সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত দেখায়।

সোশ্যাল মিডিয়ার হদ্দমুদ্দ উল্লাসে ব্যক্তির বিচ্ছিন্নতা আজ সর্বগ্রাসী, ব্যাপ্ত-বিনাশী। সারা শরীর মন আত্মকেন্দ্রিকতায় পর্যুদস্ত। ইলিয়াসের কথাসাহিত্য আমাদের সামনে হাজির করে স্বয়ং আমাদের। আমরা কারা? শ্রেণিগত উচ্চাভিলাষী, নিদারুণ ভণ্ড, স্বার্থপর বিকারগ্রস্ত সংস্কৃতিবিবিক্ত মধ্যবিত্ত। এই অনালম্ব মধ্যবিত্তকে তিনি হাজির করতে চেয়েছেন ‘শাসিত স্পৃহা ও দমিত সংকল্পের’ মুক্তির তাৎপর্যে, নিম্নবর্গের শ্রমজীবী কৃষিজীবী কপর্দকশূন্য মানুষের মাঝে। খিজির ডাক দিচ্ছে, ডাক এসে পৌঁছেছে শাহিনবাগ থেকে। সিঙ্ঘু টিকরি সীমান্ত থেকে ডাক দিয়েছে আলিবক্স, তমিজ, চেংটু ও আতিক-রা। সংখ্যাধিক্যের জাতীয়তাবাদী দাপটে এখনও সংখ্যালঘুর অসহনীয় অস্তিত্বযন্ত্রণা ভোগ করছে অমৃতলাল, সমরজিৎ ও ইফতিকারেরা। তারা একদিকে আমরা নিজেরাই, অপরদিকে আমাদের সহনাগরিক। হাজার বছরের ক্ষুধা জঠরে জয়নাব ও সখিনার মতো পৃথিবীর আপামর মানুষ আজ কোনও প্রকারে টিকে আছে। সেই উপোসি রক্তমাংসের কাহিনি শুধু পড়া ও জানার শৌখিন ইচ্ছাতে ইলিয়াস পাঠে অগ্রণী হলে প্রত্যাঘাত অনিবার্য। এখানেই ইলিয়াসের শক্তি। সমস্ত নির্লজ্জ ক্রূরতার প্রতিরোধে তাঁর আছে মিলি। দিন বদলের স্বপ্ন দেখা পাগলা আব্বাস মাস্টারকে রাষ্ট্র বশ মানালেও তাঁর অস্ত্র স্টেনগান হাতবদল হয়ে এখন মিলির হাতে। তার স্রষ্টা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস যে মানুষের লড়াইয়ের অবসান অস্বীকার করেছেন। ইলিয়াসের কথকতায় ক্ষমতার পিরামিডের প্রান্তিক বর্গে গোত্রভুক্ত হয়ে যায় মজনু শাহ, ভবানী পাঠক থেকে ইতিহাসের পাতা হতে উঠে আসা শতসহস্র বছরের ভুখা মানুষের সঙ্গে আজকের নাসিকের আধিয়ার, অতিমারিতে কাজ হারানো শ্রমিক তথা অভুক্ত ভারতবর্ষ, মায় মানুষিক বিশ্ব। ক্ষমতার উচ্চে অবস্থান করছে উচ্চবর্গীয় অধিপতিদল, সারূপ্য যেখানে গোরা ব্রিটিশ থেকে আজকের কর্পোরেট-শাসক অপচক্র। ইলিয়াস ভাই শ্লোক বাঁধছেন কেরামত আলির গানে :

মজনু হাঁকিয়া কয় ভবানী সন্ন্যাসী।                                                                                                   গোরাগণে ধরো আর দাও সবে ফাঁসি।।                                                                                             গিরিবৃন্দ অসি ধরে ভবানী হুংকারে।                                                                                             গোরাগণে পাঠাইয়া দেয় যমদ্বারে।।

পাঠক শিরোনামে পড়েছেন এক সংলাপ। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের বাংলাদেশে মৌলবাদী স্বৈরাচারী রাষ্ট্রক্ষমতা নিকেশ করতে চাওয়া প্রান্তিকের মধ্যে প্রান্তিকতম হাড্ডি খিজির মধ্যবিত্ত মানুষদের নির্লিপ্তভাবে বাঁচার চেয়ে ‘গতর ঝেড়ে’ ভয় ভেঙে বুলেটের মুখোমুখি হওয়ার জন্য পথে নামার তাড়া লাগাতেই থাকে—

আরে আহেন না! কতো মানু বারাইয়া আহে! আপনে দেহি দিন নাই, রাইত নাই, হোগাখান একবার উপ্তা কইরা একবার চৌকির লগে ঠেকাইয়া খালি খোয়াব দ্যাহেন! ওঠেন! গতরটা ঝাড়া দেন!

উনসত্তরের সমাজবদলে প্রত্যয়ী ঢাকায় নিম্নবর্গীয় খিজির মিস্ত্রি বিদ্যুদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে সহসা। তাড়িতকণায় ছুটে চলেছে খিজির; শরীরমনে আপসহীন খেটেখাওয়া মানুষ সে।

সহায়:

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, ‘অন্য ঘরে অন্য স্বর’, ঢাকা, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ১৯৮৮

ঐ, ‘খোঁয়ারি’, ঢাকা, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ১৯৮৯

ঐ, ‘খোয়াবনামা’, কলকাতা, নয়া উদ্যোগ, ১৯৯৮

ঐ, ‘চিলেকোঠার সেপাই’, ঢাকা, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ২০১২

ঐ, ‘জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল’, কলকাতা, অনুষ্টুপ প্রকাশনী, ১৯৯৭

ঐ, ‘দুধভাতে উৎপাত’, ঢাকা, মাওলা ব্রাদার্স, ১৯৯৫

ঐ, ‘দোজখের ওম’, ঢাকা, প্রতীক, ১৯৯৬

ঐ, ‘সংস্কৃতির ভাঙা সেতু’, কলকাতা, নয়া উদ্যোগ, ২০০০

আর্নস্ট ফিশার, ‘দি নেসেসিটি অব আর্ট’ (শফিকুল ইসলাম অনূদিত), ঢাকা, সংঘ প্রকাশন, ২০০৯

ইলিয়া এরেনবুর্গ, ‘লেখক ও তার শৈলী’ (কালিদাস রক্ষিত অনূদিত), কলকাতা, অগ্রণী বুক ক্লাব, ২০০০

পবিত্র সরকার, ‘গদ্যরীতি পদ্যরীতি’, কলকাতা, সাহিত্যলোক, দ্বিতীয় সংস্করণ, ২০০২

বিমলকুমার মুখোপাধ্যায়, ‘মার্কসীয় সাহিত্যতত্ত্ব’, কলকাতা, দে’জ পাবলিশিং, ২০০৬

সুশান্ত পাল, ‘উজান যাত্রার কথক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস’, কলকাতা, পুনশ্চ, ২০১৮

আনওয়ার আহমদ সম্পাদিত, ‘তৃণমূল (আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সংখ্যা)’, ৪র্থ সংখ্যা, ১৯৯৮

অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত, ‘এবং এই সময়’, গ্রীষ্ম সংখ্যা, ১৪০৩ বঙ্গাব্দ 

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান