পার্থ সারথি বণিক
ভারতীয় সমাজ যেমন বৈচিত্র্যে বর্ণময়, তেমনই বৈপরীত্যে বাঙ্ময়! আমাদের প্রতিদিনের জীবনচর্যাতেই দেখছি সেই বৈপরীত্য কীভাবে চিৎকার করে নিজেকে জানান দিচ্ছে। এক দিকে ঐতিহ্য থেকে পাওয়া উদার মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, আর অন্য দিকে, সেই ঐতিহ্যকেই হাতিয়ার করে ছড়িয়ে দেওয়া সংকীর্ণ ফ্যাসিবাদী মানসিকতা। একদিকে বিশ্বের প্রগতিশীল আন্দোলনগুলো থেকে পাওয়া মানবতাবাদী চেতনা, অন্য দিকে সেই প্রগতিশীলতাকেই সংকীর্ণ স্বার্থের কানাগলিতে ঢুকিয়ে দেওয়ার ফ্যাসিবাদী প্রবণতা। দুনিয়া জুড়ে মানবতাবাদের খোলা জমিতে ফ্যাসিবাদ এদিক ওদিক থাবা বসাচ্ছে, তাকে নাকচ করার চেষ্টা করছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি।
মানবতাবাদী মতাদর্শের মধ্যে যে যুক্তি-তর্কের পরিসর আছে তার উলটো পথে হাঁটে ফ্যাসিবাদ। আমাদের দেশেও দেখছি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার উদগ্র বাসনায় সে প্রগতিবাদী চিন্তার পথে দেওয়াল তুলছে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের প্রতি সুবিচার কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তা বারবার বিতর্কের কষ্টিপাথরে বিচার করে দেখতে হয়। কারণ, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে বহু এবং বিচিত্র স্রোত কাজ করে। বৈচিত্র্য গণতন্ত্রের প্রাণ, বিতর্ক তার চালিকা শক্তি। ফ্যাসিবাদী মানসিকতা এই বৈচিত্র্যকে দুর্বলতা বলে প্রচার করে; তার্কিকের গলা টিপে ধরে। সমস্ত বহুমুখী সামাজিক প্রবণতাকেই সে একরৈখিক মাত্রা দিতে চায়, এবং সেইভাবে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার ফন্দি করে। আমরা অনেক সময় বুঝতেই পারি না, ফ্যাসিবাদী রাজনীতি কীভাবে আমাদের স্বচ্ছ চিন্তার স্রোতকে একটু একটু করে গ্রাস করছে!
এই সব খণ্ড-খণ্ড গ্রাসের ছবি মেলে দৈনিক সংবাদপত্রের পাতায়। আই আই টি বম্বের পারফরমিং আর্ট ফেস্টিভালে স্নাতক স্তরের কিছু ছাত্র গত ৩১ মার্চ মঞ্চস্থ করলেন ‘রাহবান’ নাটক। নাটকটা রামায়ণের একটা নারীবাদী পাঠ। নাটকে নাকি রাবণের আদলে তৈরি ‘আঘোরা’ চরিত্রটাকে গৌরবময় করে তোলা হয়েছে; লক্ষ্মণকে ‘অবমাননা’ করা হয়েছে! ছাত্রদের একটা ‘কট্টরপন্থী’ অংশের আপত্তির ফলে কর্তৃপক্ষ দু-মাস ধরে ‘তদন্ত’ চালিয়ে নাটকের ছাত্রদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ঘোষণা করেন। এক ছাত্রের জরিমানা হয় লাখ টাকারও বেশি!১ দেশের একটা শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতিচর্চার বহুমুখী ভারতীয় ঐতিহ্যকে এই ভাবে টুঁটি টিপে ধরার অর্থ কী নিছক রামায়ণের জনপ্রিয় ভাষ্যকে পুনরুদ্ধার করা, নাকি বহুত্ববাদের এই দেশে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে ‘বিপদ’ বলে দেগে দেওয়া? এবার কী তবে মেঘনাদবধকাব্যের লেখকের শিরে সংক্রান্তি?
বহুত্ববাদ ফ্যাসিবাদের বেড়ে ওঠার পথে এক বড়ো বিপদ! কিন্তু একে ধ্বংস করতে গেলে জনগণের বিপুল সমর্থন চাই। তাই গণতন্ত্রের মুখোশের নীচে ফ্যাসিবাদী মুখ তুমুল জনমোহিনী নীতি নেয়। সংখ্যাগুরু জনতার সেন্টিমেন্টের সঙ্গে সে নিজেকে সম্পৃক্ত করে রাখে। আমরা অনেক সময়েই বুঝতে পারি না তাঁর কর্মপদ্ধতি কত সূক্ষ্ম; মানুষের মনের মধ্যে তার বিস্তার কত গভীরে; তার রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি কতটা একপেশে! ফ্যাসিবাদী সুবিধাবাদের প্রসাদপুষ্ট জনতার অন্ধ আনুগত্য হয়তো এসব দেখেও দেখে না। ঠিক যেমন দেখেননি আলবার্তো গিসলানজোৎনি। ইতালিতে ফ্যাসিস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেড ইউনিয়নগুলোর সেন্ট্রাল সংগঠনের প্রেস বিভাগের কর্তা ছিলেন আলবার্তো গিসলানজোৎনি। সেই ১৯৩৩ সাল নাগাদ। তাঁর মন্তব্য বেশ মজার:
ফ্যাসিস্ট মতবাদ যে আসলে কী, তা আমরা জানি না। প্রতিদিনই মতবাদ বদলাচ্ছে। আজ মুসোলিনি এক কথা বলেছেন, কাল ঠিক তার বিপরীত কথা শুনব। তাই জন্য এক মুসোলিনি ছাড়া অন্য কারোই বোধ হয় ফ্যাসিজম সম্বন্ধে স্পষ্ট কোনও ধারণা নেই।২
ফ্যাসিজমের স্বরূপ এবং তার কর্মপদ্ধতি সম্বন্ধে অবশ্য স্পষ্ট ধারণার অভাব আছে আমাদের, সাধারণ মানুষের। তাই অনেক সময়ই আমরা ফ্যাসিবাদকে স্বৈরতন্ত্রের সমার্থক মনে করি। ফ্যাসিবাদী শক্তি স্বৈরতন্ত্রকেও ছাপিয়ে যায়। চেহারায় সে নিয়মতান্ত্রিক। সেই নিয়মের অনুশাসন আমাদের আপ্লুত করতে পারে। যেমন করেছিল বালকৃষ্ণ শিবরাম মুঞ্জেকে:
আজ সকালেই আমি বালিল্লা ও অন্যান্য ফ্যাসিস্ট সংগঠন দেখেছি এবং দেখে খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছি… যে জাতির উচ্চাশা আছে, যে জাতি বিকশিত হতে চায় তাদেরই এ ধরনের সংগঠন দরকার। তার সামরিক পুনর্জাগরণের জন্য ভারতেরও এই ধরনের সংগঠন দরকার…।৩
ফ্যাসিবাদী মানসিকতাকে যে লালন করে সে রক্তে উচ্চজাতের শুদ্ধতা খোঁজে; নিজের মাটির উপর নিজের নিঃসংশয় অধিকারের কথা বলে; নিজের অধিকারের সীমানায় সে নিশ্ছিদ্র পাঁচিল তুলতে চায়। ফ্যাসিবাদীর শুদ্ধতার মাপকাঠিতে যারা ডাহা ফেল, রাষ্ট্র তাদের নিশ্চিহ্ন করে; চাকরি আর ব্যবসা নিজের জাতরক্তের ভাইয়েরা কুক্ষিগত করে রাখে; পাশের বাড়ির দরিদ্র মানুষটার উন্নয়নের প্রশ্নে সে প্রথমেই ভাবে ওই দরিদ্র মানুষটা কি তার ‘বিশুদ্ধ’ রক্তের লোক? তাই ফ্যাসিবাদ পক্ষপাতমূলক; জাতের নামে ঘোরতর এক বজ্জাতি।
এই বজ্জাতি ‘আমরা-ওরা’ বিভাজনকে সমাজে প্রোথিত করে, প্রতিদিন প্রতি পদক্ষেপে সেই চারাগাছে জল দেয়। তাকে মহিরুহ করে তোলে। এই ‘আমরা-ওরা’ দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের প্রতিদিনের জীবনের সঙ্গে এতটাই জড়িয়ে থাকে যে আমরা চট করে মানতে চাইব না, আমাদের চেতনার মধ্যেও একটা ফ্যাসিবাদী স্নায়ু দপদপ করছে। বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে ওঠে যখন ভালোবাসার মত সূক্ষ্ম অনুভূতিকে, অথবা বিয়ের মতো সামাজিক সম্পর্কের সম্ভাবনাকে ‘আমরা-ওরা’ দিয়ে বিচার করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয় আমাদের সমাজে, ছেলেমেয়েদের মাথায়। প্রেমকে খানদানের খাঁচায় পুরে রাখো, তথাকথিত নীচু জাতে বা অন্য ধর্মে বিয়েকে থেঁতলে মারো। রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষা করো। মারতে হাত কাঁপবে? লাভ জেহাদ বা অনার কিলিং সম্ভব নয়? বেশ তবে বেড়া ডিঙানো ওই বেয়াদপের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করো। বংশ কৌলীন্যের উত্তরাধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করো। ‘তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?’
‘ফ্যাসিবাদ’ শব্দটা উচ্চারণ করলেই বিশেষ কিছু রাজনৈতিক মতাদর্শগত অবস্থানের কথাও মাথায় আসে– যে রাজনৈতিক অবস্থান ‘মূলধন’-কে কুক্ষিগত করার কারবারিদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করে, রক্তের তথাকথিত শুদ্ধতার নিরিখে জাতির এবং রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের কথা বলে, ন্যাশনালিজমের ভূতকে জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার ফন্দিফিকির করে, সমাজে সমস্ত শ্রেণির সহাবস্থানের কথা বলে শ্রমিক শ্রেণির মন থেকে শ্রেণিসংগ্রামের চিন্তাকে মুছে দিতে চায়, এবং একই সঙ্গে, শান্তি নয়, যুদ্ধকেই জীবনের সত্য বলে মানে। ফ্যাসিবাদী নেতা জনগণের কাছে হয়ে ওঠে নায়ক:
মুসোলিনির কাছ থেকে আমরা যে কাজটুকু করবার আদেশ পাই, সেইটুকু আমরা সম্পন্ন করি। তার বেশি আমরা কিছু জানিনে। আজ আমরা এক প্রণালীতে কাজ করতে আদেশ পেয়েছি, কাল ঠিক তার বিপরীত প্রণালীতে কাজ করবার আদেশ পেতে পারি। আমাদের কাজ হচ্ছে সাধারণ সৈনিকের কাজ। নায়ক যে আদেশ দেবেন তা আমরা সমাধান করব। তার বেশি জানবার প্রয়োজন কী?৪
এই ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক মানসিকতা গণতন্ত্রের সুযোগ সুবিধাগুলোকে ব্যবহার করে তলায় তলায় আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মকে প্রভাবিত করছে, আমাদের মনের মধ্যে সন্দেহের বীজ ঢুকিয়ে দিচ্ছে।৫ ঠিক যেমন ইয়াগো করেছিল ওথেলোর ক্ষেত্রে। আমরা বুঝতেও পারছি না ছাপোষা জীবনকে নিরুদ্বিগ্ন করে রাখতে গিয়ে আমরা কখন যেন ফ্যাসিবাদী শাসকের জুতোয় পা গলিয়ে দিচ্ছি!
জীবন যুদ্ধে বিধ্বস্ত আপনি-আমি স্বাভাবিকভাবেই সেই ত্রাণকর্তাকে খুঁজব, যিনি জনতাকে তাদের দুরবস্থা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখাতে পারেন। তিনিই ‘নায়ক’। এখানেই ফ্যাসিবাদী স্বপ্নসন্ধানী নায়কের খেলা শুরু হয়। জনতার দুরবস্থা বলতে তিনি নিজে কী বোঝেন? বোঝেন নিজের জাতির, অথবা নিজের তাঁবেদার অর্থনৈতিক শ্রেণির দুরবস্থা। জনতা এখানে আর কেউ নয়, নিজের জাতি, নিজের তাঁবেদার শ্রেণি। বাকিরা তবে কী? বাকিরা ‘অপর’। এই সিদ্ধান্তটুকু জনতাকে হজম করিয়ে দিতে পারলে জনতার দুরবস্থার কারণ সহজেই বের করা যাবে। কারণ ওই ‘অপর’। তাকে নিকেশ করার এজেন্ডা তৈরি করো, আর তারপর ইতিহাসের খণ্ডিত পাঠকে হাতিয়ার করে জেহাদ ঘোষণা করো লড়াইয়ের টার্গেটের বিরুদ্ধে।
‘অপর’ এর প্রতি এই বৈরিতা কী প্রতিদিনের জীবনে আমাদের নিজেদেরও ব্যক্তিগত অবস্থান হয়ে ওঠে না? কখনো কখনো? যদি তা-ই হয় তবে ফ্যাসিবাদী মানসিকতা আমাদের মনের মধ্যেও মাথা তুলছে, একটু একটু করে, আমাদের অজান্তে! ট্রেনে বাসে প্রতিদিনের চলাফেরায় আমরা যে অহরহ শুনি দাগি অপরাধীরা বেশিরভাগই নাকি দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক, আমরা কি সেই মতের শরিক হয়ে পড়ি? নিজের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের শুদ্ধতায় আত্মতৃপ্তি চাই? যদি চাই, তবে সাধু সাবধান!
আমরা কী সত্যিই সাধু? টেলিভিশনে প্রতি সন্ধ্যার বিতর্ক সভার কথাই ধরা যাক। টেবিল ঘিরে বসে আছে দলীয় রাজনীতির ঘেমো খেলোয়াড়েরা। তথ্য আর উত্তর-সত্যের ঝুলি থেকে বেড়াল বেরোচ্ছে। একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন ওটা আসলে বেড়াল নয়, রুমাল। ভাঁজে ভাঁজে শঠতা, জটিলতা, বিশ্বাস-অবিশ্বাস। যুক্তি-কুযুক্তির তরজা চলে। অসহিষ্ণুতার উল্লম্ফন, প্রতিপক্ষ তার্কিক প্রবরের কণ্ঠরোধের প্রবল প্রতিযোগিতা, বিপ্রতীপের অস্তিত্বকে নাকচ করার বলগাহীন বীরত্বের প্রদর্শনী! এই কণ্ঠরোধের রিয়ালিটি শোয়ের মধ্যেই লুকিয়ে আছে সেই ফ্যাসিবাদী মানসিকতা। তার্কিক বাঙালি তখন বিনা যুদ্ধে সূচ্যগ্র গণতান্ত্রিক পরিসরটুকুও ছাড়তে রাজি নয়। যত মত তত পথ নয়। শুধু দাবিয়ে দাও, নিজেকে প্রতিষ্ঠা করো! এই অভ্যাস কি আমরা আমাদের পরিবারের অন্দরমহলেও বজায় রাখি না?
পরিবারে সন্তান কী বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করবে সেই সিদ্ধান্ত নেবেন বাবা, আর রান্নায় কী ফোঁড়ন দেওয়া হবে তার সিদ্ধান্ত মায়ের। এভাবেই পরিবারে আমরা নারী-পুরুষ জুটির পারস্পরিক সাহচর্যের বিধি তৈরি করতে চিরাচরিতকাল থেকে অভ্যস্ত হয়েছি। নারী-পুরুষের সমতা বা সমানাধিকারের প্রশ্ন এখানে বাতুলতা। নারী যদি পুরুষের মতো বাড়ির বাইরে বেরিয়ে রোজগেরে গিন্নি হয়ে হয়ে ওঠেন, তবে ঘর সামলাবে কে? বাচ্চাকাচ্চার পড়াশুনো, স্কুলের টিফিন– কে সামলাবে? চাকরিজীবন শেষে এই সব অবসরপ্রাপ্ত কর্মী মহিলাদের পেনশন দিতে সরকারকে যে পরিমাণ টাকার বোঝা নিতে হবে, সে-ও তো অতিরিক্ত এক বাধ্যবাধকতা। মহিলাদের মাইনে এবং পেনশনের দায় নিতে না হলে সেই টাকা পুরুষকর্মীদের মধ্যে তো আরও বেশি বেশি ছড়িয়ে দেওয়া যেত! ছেলেদের কর্মপ্রাপ্তিও বেড়ে যেত। তাই মেয়েদের রান্নাঘর থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে কাজের জগতকে নারী অধ্যুষিত করে তোলা হচ্ছে এক গণতান্ত্রিক মূর্খামি। ফ্যাসিবাদ আমাদের পুরুষ সমাজকে তা-ই বোঝাতে চায়।
কিন্তু, ধন-অধ্যুষিত এই বাজারে নির্ধন হয়ে কৃচ্ছ্রসাধন করাটা কী কোনও কাজের কথা হল? তাই মেয়েরা ঘরের বাইরে কাজের বাজারে বেরচ্ছেন। রোজগার করছেন। ফ্যাসিবাদী নিয়োগকর্তা কিন্তু চতুর! তিনি মহিলা কর্মীর জন্য বৈষম্যমূলক বেতনের ব্যবস্থা রেখেছেন। এতে করে নারী কর্মচারীর সংখ্যা দেখিয়ে নারীবাদী সংগঠনের রোষ এড়ানো যেমন গেল, তেমনই লাভের গুড় খাওয়া থেকে বেশ কিছু পিঁপড়েকেও সরানো গেল।
নারীর এবং মা-এর আদর্শ মূর্তি নির্মাণের প্রয়োজনটাও সমান জরুরি। আদর্শ মূর্তি বলতে আমরা প্রোটোটাইপ বলছি না। নারীর আদর্শ রূপ কেমন হবে তা নির্দেশ করে দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন একদল মানুষ। আমাদের সমাজে তাঁদের আকছার আমাদের বন্ধু, আমাদের সহকর্মীর চেহারায় দেখতে পাওয়া যায়। মানসিকতায় তারা ফ্যাসিবাদী। মুসোলিনির এবং হিটলারের ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে নারীকে এমনই একটা ছাঁচে ঢেলে দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের রান্নাঘরে ফিরে যেতে বলা হয়েছিল; বলা হয়েছিল, আর্য রক্ত বইছে যে নারীর শরীরে তাঁর জন্ম দেওয়া সন্তানই প্রস্তুত হতে পারে রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেকে উৎসর্গ করতে।৬
তাই নারী কেমন হবেন তার একটা ছাঁচ মানুষের মনের মধ্যে তৈরি করা এবং তাকে লালন করা একজন ফ্যাসিবাদী মানসিকতার মানুষের কাছে জরুরি। আমাদের ভারতবর্ষীয় সমাজে তো দেখছি ‘মাতৃমূর্তি’ নির্মাণের এক নিরন্তর চেষ্টা জারি রাখা হয়েছে। এই কাজ কী অতীতের রক্ষণশীলতারই সম্প্রসারণ? রক্ষণশীলতার অনেক গণ্ডিই তো আমরা পেরিয়ে এসেছি। তবু কেন আমাদের সমাজ মেয়েকে ওই মাতৃমূর্তির একটামাত্র ছাঁচেই আটকে রাখতে চায়? রাখতে চায়, কারণ, ফ্যাসিবাদী মানসিকতা সমস্তরকম প্রগতির বিরোধী। তুমি তো নারী, তুমি কেন ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে গোলাপ কিনবে, কেন রাত্তিরে একা বেরোবে, কেন নাইটক্লাবে নাচবে? তোমার যৌন আচরণে মনুসংহিতার শৃঙ্খলা জরুরি। নারীবাদীরা শৃঙ্খলা মানে না। ফ্যাসিবাদী মানসিকতা অন্তত তা-ই বলে; কিন্তু আমাদের আদর্শ সমাজ তো ‘ভারতীয়’ শৃঙ্খলায় বাঁধা! সে শৃঙ্খলার পুরোধা নারী হলেন সীতা। আজকের পৃথিবীতে সেই নারী উৎপাদনে অংশ নিতেই পারেন, কিন্তু মনে রাখতে হবে তার পোশাকের দৈর্ঘ্য যেন পুরুষের লালসার উদ্দীপক না হয়ে ওঠে! এইভাবে, ধর্ষিতা হওয়ার দায় যদি নারীর নিজের কাঁধেই চাপে তবে সেই সামাজিক প্রবণতাকে ফ্যাসিবাদী না বলে উপায় কী!
কিন্তু পুরুষসমাজের জন্য দিনকাল যে আর আগের মতো নেই! এখন মেয়েদের শরীরে স্পর্শ লাগলেও নারীবাদীরা হইহই করে উঠবে! কারা যেন আবার বিয়ের মধ্যেও ধর্ষণকে আইনি বৈধতা দেওয়ার দাবি তুলছে! এমন গণতান্ত্রিক পরিবেশে মানবাধিকারের চাপে পড়ে যে পৌরুষ দিনদিন যেন কেঁচো হয়ে যাচ্ছে! আর সমকাম তো পরিবার প্রথার উপর ভয়ংকর এক আঘাত, মানব প্রকৃতির অবমাননা! তবু আইনি স্বীকৃতি আসছে, দুনিয়া জুড়ে! এ সবই গণতন্ত্রের হ্যাপা। আর গণতন্ত্র মানব সভ্যতার এক ঐতিহাসিক ভুল। সোজা কথা, নারী হলেন সন্তান উৎপাদন করার যন্ত্র। তিনি আদর্শ সন্তানের জন্ম দেবেন; সেই সন্তান ইনফোসিস বহুজাতিকের কর্ণধার এন আর নারায়ণমূর্তির পরিকল্পনা মাফিক সপ্তাহে সত্তর ঘণ্টা৭ কাজ দিয়ে দেশকে উৎপাদনমুখী উন্নয়নে বিশ্বে প্রথম সারিতে নিয়ে আসবে। উন্নয়নে ভারতবর্ষ হয়ে উঠবে ফার্স্ট বয়! এইভাবে ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন জিতে নিতে পারবে। আর তার জন্য দেশের সন্তান দেশের উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করবে। এই হল দেশপ্রেম!
ফ্যাসিবাদ যে আসলে একটা মনোভঙ্গি, সে কথা ফ্যাসিবাদের ইতিহাস চর্চাকারী পণ্ডিতেরা আমাদের বারবার জানিয়েছেন। এ এমন এক জীবনভঙ্গি, যেখানে বড়ো মাছ যে ছোটো মাছকে গিলে খাবে, সেটাই স্বাভাবিক রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক মান্যতা পায়। কিন্তু রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য ছবিটাকে সম্পূর্ণ উলটে দেওয়া হয়। বড়ো মাছ দাবি করে বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সে নিজেই অন্যায্যতার শিকার হয়েছে। এই কায়দায় সে নিজের স্বার্থসিদ্ধির অনুকূল তত্ত্বকে জনমানসে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলে। শিকার হয়েছে, এবং অদূর ভবিষ্যতে আরও হতে চলেছে– এমনতরো মনোভঙ্গি সফলভাবে গড়েপিটে দেওয়ার মধ্যেই আছে অন্যায্য আবদারকে এবং অত্যাচারকে মান্যতা দেওয়ার গোপন চাবি। হাতের কাছেই একটা উদাহরণ পাচ্ছি। ভারতবর্ষের বর্তমান রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতিতে কিছু প্রোপাগ্যান্ডিস্ট কেমন নিজের বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে তথ্যকে বাছাই করে এবং নিয়ন্ত্রণ করে এ দেশে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু হিন্দুর আসন্ন অবলুপ্তির আশঙ্কা ছড়িয়ে দিচ্ছে সমাজ-মাধ্যমে।৮
কিছু মানুষ জনগণের মনের মধ্যে এমন অস্তিত্বের সংকট এবং অস্থিরতা তৈরি করে নিজেদের রাজনৈতিক ডিভিডেন্ড পাওয়ার চেষ্টা শুরু করেছেন, বিলক্ষণ টের পাওয়া যায়। ফ্যাসিবাদকে একটা সমাজে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে তো মানুষের মনকে এইভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে! এর সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হবে, আমাদের দেশে, দেশভাগ আর দাঙ্গার বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলোকে। অন্যায্যতার শিকার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার মধ্যে দিয়ে এ দেশে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু শিবিরের রাজনৈতিক কৌশল নির্মাতারা কী ‘ভিক্টিম কার্ড’ খেলেন না? যেমন খেলেছিলেন জার্মান নাৎসি পার্টির রাজনীতি কুশলীরা, আর্যরক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষার প্রবক্তারা, ইহুদিদের বিরুদ্ধে? আমাদের পাশের বাড়ির ফ্যাসিবাদী মানুষটা বলবেন বর্ডারের ওপার থেকে আসা উদ্বাস্তুদের জন্যই এ দেশের মাটির মূল মানুষদের এই হাঁড়ির হাল! বেকারি, দারিদ্র্য, অপরাধ! তাই বর্ডার সিল করে দেওয়া যখন উচিত ছিল তখন মানবাধিকারের ভূত ঘাড়ে চড়ে সমাজটার দফারফা করে দিল।
শুধু এটুকুই নয়। নিজের বর্তমান দুর্দশাকে তো আরও হৃদয়স্পর্শী করে তুলতে হবে! সে কাজ অল্প আয়াসেই করা যায় যদি জনমানসে কোনও এক সুদূর অতীতের গৌরবকে জাগিয়ে তোলা যায়; যদি খণ্ডিত ইতিহাসে ভর করে প্রচার করা যায় বহিরাগত শাসকের যথেচ্ছাচারের তালিকা; যদি ভারতীয় ইতিহাসের কোনো কোনো পর্যায়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু শাসকের ধ্বংস উন্মাদনার বিপ্রতীপে সংখ্যাগুরু প্রজার অতীত গৌরবের “আবেগ”-কে স্থাপন করা যায়! তবে গৌরবময় প্রাচীন ভারত নতুন করে জেগে ওঠে মানুষের আকাঙ্ক্ষায়।
ফ্যাসিবাদী মনোভঙ্গি অতীত গৌরবের নবজাগরণকে ত্বরান্বিত করতে চায় সমাজে শুদ্ধতাকে প্রতিষ্ঠিত করার কর্মসূচি নিয়ে। সেই কর্মসূচি লক্ষ্যে পৌঁছোবে কীভাবে যদি সমাজে ধর্মীয় একমুখিতা না থাকে? যদি জনতার খাদ্যাভ্যাস একটাই ধর্মীয় ব্যাখ্যার নির্দেশ না মেনে হয়? যদি পোশাক এবং চুম্বনের ভঙ্গি একই অনুশাসনের আওতায় না আসে? যদি ভালোবাসার ভাষা আর শালীনতার সীমানা একটাই পাঁচিলের ভিতরে ঢুকিয়ে না দেওয়া যায়! সমাজ শুদ্ধিকরণের প্রয়োজনে সংখ্যালঘু মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা অথবা তাঁর ধর্মস্থানকে ধ্বংস করা তাই সমর্থনযোগ্য হয়ে ওঠে। প্রয়োজন হয় গো-মাংস নিয়ে রাজনীতির।৯
বলাই বাহুল্য, মুসোলিনি বা হিটলারের সময়ে যেটা ছিল যুদ্ধক্ষেত্রের বাধ্যবাধকতা আজকে তা চেহারা পরিবর্তন করে পুঁজিবাদী বহুজাতিকের পরিচালনায় তথাকথিত রাষ্ট্রীয় উৎপাদনের হিসেব নিকেশে পরিণত হতে চাইছে। পুঁজির ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছেন গণতন্ত্রী শাসক। তাঁর পৃষ্ঠপোষক বহুজাতিক সংস্থার কর্ণধার; নিদান দিচ্ছেন দেশের উৎপাদন বাড়াতে কর্মদ্যোগী যুব সম্প্রদায়কে কতটা সময় শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্রেই উৎসর্গ করতে হবে (ইতিমধ্যেই কর্ণাটক বিধানসভায় বেসরকারি তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দিনে চোদ্দো ঘণ্টা কাজের প্রস্তাব আনা হয়েছে)। সেটা কী তবে করা হবে কোনো রকম শ্রম আইনের তোয়াক্কা না করে? নাকি আইনকেই পরিবর্তন করে দেওয়া হবে? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রকেরা যদি ফ্যাসিবাদী মানসিকতার হন তবে ভবিষ্যতে হয়ত তা-ই হবে!
একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনকে যথেচ্ছ পরিবর্তন করতে গেলে তো আইন পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা চাই। ভোটে সেই সংখ্যা পেতে গেলে তো জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের রূপায়ণ। এমন প্রকল্প যা বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের এবং ঐক্যের মধ্যে বৈচিত্র্যের সুদূর প্রসারী নীতিকে রক্ষা করবে। সেটাই তো ভারতীয় সংবিধানের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য; তাৎক্ষণিক জনমোহিনী প্রণোদনার মধ্যে দিয়ে জনচিত্তের তাৎক্ষণিক জয় নয়; অর্থ এবং আশীর্বাদ ছড়িয়ে জনমনের প্রচলিত সংস্কারগুলোকে সুচারুভাবে ব্যবহার করে নিজের নিয়ন্ত্রণ জারি রাখা নয়।
প্রচারমাধ্যম যদি এ সব বিষয়ে গলা তোলে তবে তার কণ্ঠরোধের ইচ্ছে শাসকের স্বাভাবিক প্রবণতার মধ্যে পড়ে কী? প্রশাসন কী সংবাদ মাধ্যমের সমালোচনা সহ্য করতে পারছে? কার মাথায় সে আশীর্বাদের হাত রাখছে? সংবাদপত্র কী স্বাধীন, মুক্ত? সমাজ নায়কদের নগ্নতায় সে কী বলতে পারে, ‘রাজা তোর কাপড় কোথায়’?
জনগণের মনে অতিমানবের আধিপত্যের মিথ তৈরি করতে পারলে সমাজের ফ্যাসিবাদী শোষণ অনায়াসে হাসিল করা যায়! জনসম্মোহনকে তার ভিত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। জনতার সমর্থন চাই! ফ্যাসিবাদী শাসককে ‘অতিমানব’(superman) হিসেবে প্রচার করতে হবে। দেখাতে হবে, তিনিই ত্রাণকর্তা, তিনিই সমস্ত কাম্য পরিবর্তনের নায়ক। ‘নায়ক’ ধারণাটা কিন্তু আমাদের মনের মধ্যে, আমাদের অজান্তেই, ফ্যাসিবাদের বীজ বুনে দেয়। একটা গণতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোর মধ্যেই এই প্রক্রিয়া স্বচ্ছন্দে চলে। মুখে মুখে তৈরি হওয়া মহাকাব্যের যুগ থেকেই ব্যক্তি-নায়কের উপর যে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের সাফল্যকে আরোপ করার এই প্রবণতা আমাদের চোখে পড়ে। নায়ক এক উদ্যোগী পুরুষ, সমস্ত বিশুদ্ধতার নিয়ামক, রক্ষাকর্তা, রণভূমিতে সমাজ-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের রথের সারথি। এ আমাদের এক পৌরাণিক ‘ধারণার’ উত্তরাধিকার! ইউরোপে superman-এর তত্ত্ব তো রীতিমতো বইপত্র লিখে প্রচার করেছিলেন দর্শনের অধ্যাপক ফ্রেডরিখ নিৎসে! নিৎসের superman শুধু মগজ নয়, আভিজাত্য আর সঠিক বিয়ে, এবং সঠিক রক্তের ফসল:
Intellect alone does not ennoble; on the contrary, something is always needed to ennoble intellect. What then is needed? Blood….১০
এই superman-এর বীরত্বের মধ্যেই তো লুকিয়ে উঁকি দিচ্ছে আমাদের আজকের ফ্যাসিবাদী নায়কের বীজ! বীজ যখন মহিরুহ হয়ে দেখা দেবে তখনই রক্তের আর সংস্কৃতির শুদ্ধতার জন্য, জাতির উন্নতির জন্য, অপোগণ্ড মানবাধিকারীর মুখ বন্ধ করার জন্য সফদার হাসমি, গৌরী লঙ্কেশদের নিকেশ করা হবে, ভারতবর্ষের মসজিদ আর আফগানিস্তানের বামিয়ান বুদ্ধ প্রশাসনের পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ মদতে হইহই করে ধুলোয় মিশে যাবে। তখন হাসিনা-উত্তর টালমাটালে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর দেহ ফাঁসিতে লটকে ঝুলতে থাকবে রাস্তায়; রসগ্রাহী জনতা চোখ ভরে দেখবে ‘আমরা-ওরা’ দ্বন্দ্বে ‘ওরা’ কেমন নিকেশ হয়ে যাচ্ছে! আমাদের এমনতরো প্রত্যক্ষ সমর্থনের মধ্যে, প্রশাসনের মৌন অনুমোদনের মধ্যে লুকিয়ে থাকবে সমাজ শুদ্ধিকরণ মন্ত্র; শাসকের, এবং একই সঙ্গে শাসিতের, ফ্যাসিবাদী মন।
তথ্যসূত্র এবং শেষের দু-একটা কথা:
১। ‘অন্ধকার ক্রমে আসিতেছে’, স্বাগতম দাস, “আনন্দবাজার পত্রিকা”, ‘উত্তর সম্পাদকীয়’, ২৫ জুন, ২০২৪।
২। ‘ফ্যাসিজম’, সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মনফকিরা, পৃষ্ঠা ৮৩।
৩। ‘আর এস এস-এর প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার-এর পথপ্রদর্শক বি এস মুঞ্জের সাক্ষাৎকার মুসোলিনির সঙ্গে’; “প্রমিথিউসের পথে”, অষ্টম বর্ষ, ১ম সংখ্যা, জানুয়ারি-মার্চ, ২০১৫, পৃষ্ঠা ১৭।
৪। গিসলানজোৎনির বক্তব্য, ‘ফ্যাসিজম’, সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, পৃষ্ঠা: ৮৩।
৫। ‘How To Be A Fascist, a manual’, Michela Murgia, মূল ইতালিয়ান থেকে ইংরেজি অনুবাদ: Alex Valente, Pushkin Press।
৬। ১৯৩৩ সালের জুন মাসে জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভিল্হেল্ম ফ্রিক ঘোষণা করলেন, দশ লক্ষেরও বেশি জার্মান বিশুদ্ধ আর্য সন্তানের জন্ম দেওয়ার উপযুক্ত নয়…পরের মাসেই আইন পাস হল, বেঁচে থাকার অনুপযুক্ত সন্তানের জন্ম দেওয়া প্রতিরোধ করার ক্ষমতা পেল দেশের সরকার। পরবর্তী বারো বছরে প্রায় দু-লক্ষ জার্মান মহিলাকে বাধ্য করা হয়েছিল বন্ধ্যাত্বকরণে: ‘মেয়েদের চোখে ফ্যাসিবাদঃ বিরোধিতা-সমর্থনের দ্বন্দ্ব’, স্বাতী ভট্টাচার্য, “অনুষ্টুপ, বিষয় ফ্যাসিবাদ”, পৃষ্ঠা ২১২।
৭। চিনে আলিবাবার কর্ণধার জ্যাক মা-র অনুমোদন করা বিতর্কিত ৯৯৬ কর্ম সংস্কৃতির অন্তর্গত, অর্থাৎ সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সপ্তাহে ৬ দিন=সপ্তাহে ৭২ ঘণ্টা কাজের নিদান স্মরণীয়।
৮। “জনসুমারি অনুসারে (২০১১) ভারতে প্রধান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যা ১৪ শতাংশ। সংখ্যাগুরুর সংখ্যা ৮৪ শতাংশ। ‘অনুপ্রবেশ, গাদাগাদা সন্তান উৎপাদন করেও কোনোদিনই সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ে পরিণত হতে পারবে না… আসল উদ্দেশ্য, এই সম্প্রদায়কে শারীরিকভাবে আক্রমণ করো, হত্যা করো, আতঙ্কে রাখো… তাহলে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ কায়েম করা সম্ভব হবে’– “আন্দোলন রাজনীতি মানবাধিকার”, সুজাত ভদ্র, বোধিসত্ত্ব, পৃষ্ঠা ২১।
৯। ঐ, সুজাত ভদ্র, ‘গো-মাংস নিয়ে রাজনীতি’, পৃষ্ঠা ১৩-১৮।
১০। ‘The Story of Philosophy’, Will Durant, Washington Square Press, পৃষ্ঠা ৪২৬-এ উদ্ধৃত।