ফ্যাসিবাদ : বিবিধ ভাবনা


পার্থ প্রতিম দুবে

ফ্যাসিবাদ হল পুঁজিবাদের ক্ষয়িষ্ণু রূপ

এক

‘মিসকোট’ দিয়ে শুরু করা এ প্রবন্ধের বিষয়টিকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে স্থানীয় স্তরে একটি সমীক্ষা চালাই নিজের মতো করে। দু’জন নিম্নবর্গীয়,– একজন মাছ বেচেন, অপরজন সবজি। শিক্ষক, অধ্যাপক চারজন, একজন ডাক্তারবাবু। দু-জন জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক নেতা আর কয়েকজন প্রগতিশীল রাজনৈতিক মানুষজন। এঁদের নিয়েই আমার সমীক্ষা। নিম্নবর্গীয়দের সোজাসাপটা উত্তর, এসব লেখাপড়ার ব্যাপার, তাদের না জানলেও চলবে। লঙ্কায় যে যায় সেই …। শিক্ষক, অধ্যাপক, ডাক্তারবাবু ও জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দের বক্তব্য আমি ভালো বুঝতে পারিনি। 

তবে প্রগতিশীলরা বিষয়টিকে লুফে নেন। এবং তারপর যা আরম্ভ করেন তা রীতিমতো ঝড়। তবে এঁদের সকলের বক্তব্যের সারসংকলন হল বর্তমান কেন্দ্রের শাসক দলকে উৎখাত করেই এর একটা সুরাহা হতে পারে। আমি আর কোনো সমীক্ষা চালাইনি।

‘ফ্যাসিস্ট’ শব্দটি রাজনীতির কারবারিদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় শব্দ। আমাদের দেশে যেখানে বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েনি, ব্যক্তিগতভাবে ফ্যাসিবাদের মুখোমুখি হতে হয়নি কাউকে, যেখানে সবটাই কাগজপত্রে, লেখালখিতে সীমাবদ্ধ; সেখানে ওই বিশেষ শব্দ দিয়ে যে কাউকে বা যে কোনো দলকে দেগে দেওয়া যায় অনায়াসে। বিচার বিবেচনা তখন দূর অস্ত। ‘আধা-ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাস’, ‘ফ্যাসিবাদী’ শক্তি শব্দগুলি তখন রাজনীতির কন্ঠজীবীদের গলায় খেলা করতে শুরু করে। এ ফাঁদে তখন অনেকেই পড়ে যান।

তবে এরকম প্রচেষ্টা যে কেবল এদেশেই হয়েছে এমন নয় বিদেশেও চলেছে। এরই ফলস্বরূপ দেখি একটি বইতে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নাম। তবে এর থেকেও আশ্চর্যজনক একটি বই যেখানে ছত্রে ছত্রে বর্তমানে ভারতে কেন্দ্রাসীন শাসক দলকে নিশানা করে লেখা ও ফ্যাসিবাদী বলে চিহ্নিত করতে আপ্রাণ প্রয়াসী; অথচ ফ্যাসিবাদের কোনো সংজ্ঞা নেই, ফ্যাসিবাদের উত্থান যে দেশে, তার কোনো কথাই নেই বইটির কোনো কোণে।

আসলে আমার বলার উদ্দেশ্য এটাই যে যত্রতত্র এসব শব্দের প্রয়োগ শব্দগুলির গুরুত্বকেই লঘু করে দেয়। যদিও রাজনীতির কারবারিরা এসব ছাড়বেন না।

আর-একটি গুরুত্বপূর্ণ বিযয় হল নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদ-কে গুলিয়ে ফেলা। বহু গুণীজন বক্তৃতার সময় এ দুটোকে এক করে ফেলেছেন, আমি শুনেছি। এসবেরও উৎপত্তি বিদেশে। যদিও দুটি বিষয়ের সাদৃশ্য ও বিভিন্নতা নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়েছে রিচার্ড বেসেলের গবেষণায়।

একটু আগে যে ফাঁদে পড়ার কথা বলছিলাম, তার একটি বঙ্গ সংযোগ রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবি প্রথম ইতালি ভ্রমণ করেন ১৯২৫ সালে, সেসময় তিনি মুসোলিনির সাথে দেখা করতে পারেননি। তবে দেখা হয়ে যায় ভারততত্ত্ববিদ অধ্যাপক ফর্মিকির সাথে, যাঁকে তিনি বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনার জন্য আহ্বান জানান। সানন্দে অধ্যাপক রাজি হয়ে যান। অধ্যাপক ফর্মিকি ও ভারততত্ত্ববিদ তুচ্চি দুজনে ১৯২৫ সালের নভেম্বর মাসে বিশ্বভারতীতে যোগদান করেন। তাঁদের এক বছরের খরচ ইতালি সরকার বহন করবেন এমনই ঠিক হয়। অধ্যাপক ফর্মিকি তাঁর দেশের সরকারের বদান্যতায় ইতালির ওপর সর্বোত্তম বইপত্র বিশ্বভারতীকে দান করেন।

প্রসঙ্গক্রমে বলা দরকার যে মুসোলিনির ভারত সম্বন্ধে সেরকম আগ্রহ ছিল না, এ ঘটনার পর রবীন্দ্রনাথ ও ভারত নিয়ে আগ্রহী হয়ে পড়েন। তারই প্রতিফলন দেখা যায় তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা, ‘ইল পোপোলো দি ইতালিয়া’- তে তিনি মোপলা বিদ্রোহ প্রসঙ্গে বলেন, এই বিদ্রোহ ভারতে ব্রিটিশ শাসনের পতন ত্বরান্বিত করবে।

মুসোলিনির আহ্বানে কবি রোমে পৌঁছান ৩০ মে ১৯২৬ সালে। পরের দিন অধ্যাপক ফর্মিকিকে নিয়ে কবি মুসোলিনির সাথে সাক্ষাৎ করেন পালাতজো চিগি (Palazzo Chigi)-তে। প্রথম দর্শনেই মুগ্ধ কবি হোটেলে ফেরার পথে অধ্যাপককে মুসোলিনি সম্বন্ধে ঢালাও প্রশংসা উজাড় করে দিলেন।১০

এরপরে কবি সুইজারল্যান্ডে রম্যাঁ রলাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলে, রলাঁ ইতালির ঘটনাবলি কবিকে জানান ও ব্যবস্থা করেন জুরিখে অধ্যাপক সালভাদোরি ও ভিয়েনাতে মদিগিলিয়ানির সাথে সাক্ষাতের। সালভাদোরি অসুস্থ হওয়ায় তাঁর স্ত্রী কবির সাথে ফ্যাসিজম নিয়ে আলোচনা করেন। কবি হৃদয়ঙ্গম করেন ঘটনার গভীরতা। সাথে সাথে ভারতে সি এফ এনড্রুজকে সবকিছু জানান যা প্রকাশিত হয় দি ম্যাঞ্চেস্টার গার্ডিয়ানে ৫ আগস্ট ১৯২৬ সালে।১১ অধ্যাপক ফর্মিকীও এর প্রতিবাদে তিন সপ্তাহ পরে একটি প্রবন্ধ লেখেন একই পত্রিকায়।

ঘটনার পরম্পরায় ইতালির সরকার খেপে গেল, তাদের বোলোনার সংবাদপত্র, ‘এ্যাসালতো’-তে কবির নামে যথেচ্ছ কুৎসিত কথা ছাপা হল। এমনকি দেহোপজীবীনীও বলা হয়।১২

অনেক পরে, ২১  নভেম্বর ১৯৩০ সালে ইতালির সাথে ভুল বোঝাবুঝি অবসানের জন্য পূর্বোল্লিখিত অধ্যাপক ফর্মিকির পরামর্শক্রমে মুসোলিনিকে কবি স্বয়ং চিঠি লেখেন, যদিও চিঠিটি পুত্র রথীন্দ্রনাথের অনুমতির জন্য শান্তিনিকেতনে পাঠান।১৩ সে চিঠি আদৌ পাঠানো হয়েছিল কিনা জানা নেই। তবে মারিও প্রেয়ারের মতে পাঠানো হয়েছিল।১৪

কবির ব্যক্তিগত পরিসর থেকে বৃহত্তর ক্ষেত্রে আলোকপাত করলে দেখা যায় ফ্যাসিবাদ  নিয়ে বহু বই যেমন আছে, সেরকম প্রবন্ধ ও নিবন্ধের মোট সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশি। সেগুলি সবই মনোজ্ঞ ও চিন্তার দাবি করে। এমনকি ফ্যাসিবাদ নিয়ে অঙ্কও কষেছেন বেশ কয়েকজন।১৫ 

‘ফ্যাসিজম’ শব্দের অর্থ ও উৎপত্তিগত উৎসস্থলের সুলুক-সন্ধান করলে দেখা যায়– রোমান সাম্রাজ্যের একতা ও কর্তৃত্ব বোঝাতে স্থানীয় শাসনকর্তার আগে আগে একগুচ্ছ লোহার দণ্ডের সাথে একটি কুঠার বেঁধে নিয়ে যাওয়া হত। ঐ কুঠার সমেত দণ্ডটিকে ইতালিয়ান শব্দে বলা হয় ফাশিও (fascio), লাতিনে ফ্যাশেস (fasces), ফরাসি ভাষায় ফেশো (faisceau)। অর্থ একই,– একতা,পরিষদ ও কর্তৃত্ব। এর ব্যবহার সেসময় বহুল প্রচলিত ছিল। ফেশো হাতে ধরে আছে এমন ছবি আঁকা হত ফরাসি প্রজাতন্ত্রের প্রতীক মারিয়ানকে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিস্টোফার রেনের শেলডোনীয় থিয়েটারে (১৬৬৪-৬৯) প্রদর্শিত হত এ প্রতীক। এ প্রতীক দেখা গেছে খোদ ওয়াশিংটনে লিঙ্কন মেমোরিয়ালে ১৯২২ সালে, এমনকি আমেরিকার টাঁকশালে ১৯৩২ সালে। একসময় ঐ প্রতীকটির প্রতি বামেদের সমর্থন কম ছিল না।১৬

অনেক গবেষক বামেদের এসব দেখেশুনে বলেন যে ফ্যাসিবাদের উত্থান তাঁরা বুঝতে পারেননি, বিশেষত এঙ্গেলস। তিনি ফ্রান্স ও জার্মানিতে সমাজবাদের সমর্থক ও মতদান দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় আশা প্রকাশ করেন যে সমাজতন্ত্রীরা উনবিংশ শতাব্দীর শেষে পেটি বুর্জোয়া ও কৃষকদের মিলিত ঐক্য  নিয়ে একটি নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি হয়ে উঠবে।১৭

এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে এঙ্গেলস কেন, স্বয়ং মার্কসও ফ্যাসিবাদের উত্থান হতে পারে এমন আশঙ্কার কথা লিপিবদ্ধ করেননি কোথাও। 

বিপ্লব কেবল সরলরৈখিক, একমুখী, সমাজের উন্নতির দিকেই পরিচালিত হয় এমন তো নয়, অবক্ষয়ের বিপ্লবও বিপ্লব– যার মধ্যে নিহিত থাকে অতীত গৌরবের হাতছানি ও সমাজকে সংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ করার হিংস্র প্রচেষ্টা।১৮

আসলে সে সময় ছিল সমাজতান্ত্রিক মতবাদের যুগ। বহু রকমের সমাজবাদ, সাঁ-সিমো, ফুরিয়ে, ওয়েনদের মতবাদ। মুসোলিনির উত্থানও ঐ সমাজবাদের হাত ধরে। ১৯১২ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত মুসোলিনি সমাজবাদী দৈনিক পত্রিকা আবান্তি (Avanti, অর্থ– এগিয়ে চলো)-র সম্পাদক ছিলেন, যদিও ১৯১৯ সালের এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখে সে কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেয় মুসোলিনির বন্ধুবান্ধবেরা। এর কিছুদিন আগেই প্রতিষ্ঠা হয়ে গিয়েছে ফ্যাসিস্ট পার্টি সরকারিভাবে। ১৯১৯ সাল ২৩ মার্চ রবিবার মিলানে।১৯

এরপর ১৯২২ সালের অক্টোবর মাসে ২৫০০০ অনুগামী (Black Shirt)-সমেত মুসোলিনি রোমের দিকে যাত্রা করলে প্রধানমন্ত্রী লুইগি ফাকতা তাদের দমনের জন্য সেনা পাঠাতে চাইলে রাজা তৃতীয় ভিকতর ইমানুয়েল সম্মত না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। সাথে সাথে রাজা মুসোলিনিকে সরকার গঠন করতে ডেকে পাঠালেন ২৯ অক্টোবর ১৯২২ সালে। সরকার গঠিত হল দক্ষিণপন্থী, উদারনৈতিক, গণতান্ত্রিক ও ক্যাথলিকদের নিয়ে।২০ এর পরের ঘটনা ইতিহাস।

দুই

এখন যদি অনুসন্ধিৎসু হওয়া যায় ফ্যাসিস্ট শক্তির উত্থানের সাথে কোন দর্শন বা কেমনতরো সংস্কৃতি জড়িত, তবে তা খুব অপ্রাসঙ্গিক হবে বলে মনে হয় না। প্রথমেই যাঁকে কাঠগড়ায় তোলা হয়, তিনি ফ্রিডরিশ নিৎসে। নিৎসে তাঁর মতামত ব্যক্ত করতেন ছোটো ছোটো বাক্যে, তার সাথে যুক্ত ছিল তাঁর কিছু বদ্ধমূল ধারণা। তাঁকে মনে হয়েছে নারীবিদ্বেষী, ইহুদিবিদ্বেষী, খ্রিস্টবিরোধী, দুঃস্থ ও অসুস্থদের প্রতি ঘৃণা পোষণকারী। নীচে ঈশ্বরহীন, অর্থহীন এই বিশ্বে মানুষের অস্তিত্ব উদ্দেশ্যহীন বলে মনে করতেন, চেষ্টা করতেন এর থেকে পরিত্রাণের। তিনি অসতর্ক থাকায় অনেকেই তাঁকে ব্যবহার করেছেন নিজেদের স্বার্থে।২১

এরপরে নাম করতে হয় জর্জ সোরেলের।২২ এঁর প্রভাব মুসোলিনির ওপর অত্যন্ত বেশি থাকার কারণ হল, জর্জ সোরেল সিন্ডিক্যালিস্টদের২৩ মতো ‘বৃহৎ শক্তি’, ‘বৃহৎ সমাবেশ’ পছন্দ করতেন। অবশ্য মুসোলিনিরও রাজনৈতিক কার্যকলাপের গর্ভগৃহ ছিল সিন্ডিক্যালিজম।

মুসোলিনির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিলেন গুস্তাভ ল্যে বুঁ ( Gustave Le Bon), যাঁর বই ‘লাপসিকোলজি দে ফুল’ (La Psychologic de foules)। তিনি মনে করতেন, জনগণের মধ্যে একটি উন্মাদনা সৃষ্টি করতে পারলে তাদেরকে দিয়ে যে কোনো কাজ সহজে করানো যায়।২৪

কেবল দার্শনিক তত্ত্ব নয়, বিজ্ঞান, বিশেষত আধুনিক বিজ্ঞান যে স্তর থেকে তার পক্ষ বিস্তার করল, সেখান থেকেও ফ্যাসিবাদ তার মতাদর্শের রসদ খুঁজে নিয়েছে। গ্রেগর যোহান মেন্ডেলের বংশগতির সূত্র যা ইউজেনিক্স২৫ আন্দোলনের সূতিকাগার, বৈজ্ঞানিক বর্ণবাদের সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত এ মতবাদ, পুষ্টি জোগায় গায় ফ্যাসিবাদকে।২৬ এর সাথে যুক্ত বহু বিখ্যাত ব্যক্তিরা; চার্লস ডারউইন, টমাস কার্লাইল, এমিল ডুরখেইম, ল্যুই পাস্তুর।২৭

মুসোলিনির নিজের বক্তব্য স্পষ্ট। তাঁর মতে, ফ্যাসিবাদ ঘৃণা করে বিশ্বজনীন শান্তিবাদকে। এ মতবাদ মার্কসীয় সমাজতত্ত্বের বিপরীত, পবিত্রতা ও বীরত্বের সমর্থক। ফ্যাসিবাদ  অস্বীকার করে সংখ্যাগুরু তত্ত্বের। এ তত্ত্ব দাঁড়িয়ে আছে রাষ্ট্র, তার চরিত্র, তার কর্তব্য ও তার লক্ষ্যের দিকে। জাতিগত রাষ্ট্রের প্রতি তার ঝোঁক ও সাম্রাজ্য বিস্তারই তার অভীপ্সা ইত্যাদি।২৮

এ বক্তব্যের বিশ্লেষণগুলি যা পাওয়া যায় তা পণ্ডিতদের কূটকচাল তর্ক, যা আমার কাছে দুর্জ্ঞেয় হওয়ায় সে পথে অগ্রসর হইনি, সাধ্যে কুলোতও না। তবুও কয়েকটি চিন্তাভাবনার কথা উল্লেখ করা যেতেই পারে।

ফ্যাসিবাদী শক্তি উচ্চবর্গীয় মানুষজনের আপন হতে চায়, শ্রমজীবী শ্রেণিকেও কাছে পেতে চায় খুড়োর কল দেখিয়ে। কলটি হল জাতি ও জাতীয় ঐক্য। তার সাথে আহ্বান জানায় দেশের জন্য চরম মূল্য দেওয়ার। সমস্যা হল, এমন কথা তো সব রাজনৈতিক দলই বলে, বিশেষত সমাজতান্ত্রিকেরা। এজন্যে অনেকে বলেন, ফ্যাসিবাদী শক্তির উৎস প্রাক্তন সমাজতান্ত্রিকরা।২৯ এ খুব একটা ফেলে দেওয়ার কথা নয়।

এখন লক্ষণীয়, ফ্যাসিবাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে জাতীয়তা, জাতি ও শ্রেণি।  অর্থনীতি, আদর্শবাদ, সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তির মিশেল তৈরি করে দেয় ফ্যাসিবাদকে।৩০ কিন্তু এহ বাহ্য, এসব তো সব রাজনৈতিক দলেরই আঁতুড়ঘর। তাহলে বাকি থাকে কৌশল।

এই কৌশলী নির্মাণের ফলে, ‘জনসাধারণের এক অংশ আদর্শগতভাবে পচনশীল আঁস্তাকুড়ের বিষে সংক্রমিত হয়ে পড়েন’।৩১ ‘Stato Totalitario’৩২ বা দৃঢ় রাষ্ট্র গঠন তখন নির্মাণের অভিমুখ। জনসাধারণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই এ রাষ্ট্রের বেড়ে ওঠা। প্রশ্ন উঠতে পারে, জনসাধারণ কেন সমর্থন দেবে? সমর্থনের কারণ হল, জনসাধারণের সামনে যখন কোনো উপায় থাকেনা, থাকে কেবল একটি স্থবির, পচনশীল ভরসাহীন সমাজ,৩৩ সে তখন ওই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আঁকড়ে ধরে কৌশলী নির্মাণকে।

ক্ষমতাসীন হয়ে নির্মিত সমাজ তখন উদ্দাম; আক্রমণ নামিয়ে আনে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার ওপর, বলগাহীন হয়ে ওঠে তার শানিত হিংস্রতা,৩৪ বাদ যায় না সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রগুলিও।৩৫ একেই গ্রামশি বলেছিলেন, ‘শাসনহীনতা থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি’;৩৬ ফ্যাসিস্ট কারাগারে বসে মুসোলিনির দলকে আখ্যা দেন, ‘ডেমাগোগিক’৩৭ যা নির্মূল করে মানবতাকে, জাতির নামে নিকেশ করে বিশেষ সম্প্রদায়কে, শৃঙ্খলিত করে প্রতিবাদকে।৩৮ প্রশ্ন একটাই, তোগোলিয়াত্তি ও গ্রামশির ইতালিয়ান কমিউনিস্ট পার্টি কেন জনগণের কাছে ভরসার যোগ্য হয়ে উঠল না? ভরসাহীন হওয়ার পরিণাম হল ষাট লাখ ইহুদি হত্যা৩৯ সমেত কয়েক কোটি মানুষের নিঃশেষ হয়ে যাওয়া যা আতঙ্কিত করে তোলে মহাবিজ্ঞানীকেও, চিন্তিত হয়ে পড়েন পরের বিশ্বযুদ্ধে মানব জাতির অস্তিত্ব নিয়ে।৪০

তিন

এখন আর-একটি প্রশ্ন এর সাথে চলে আসে, তা হল ফ্যাসিবাদী সরকার চলে কীভাবে, কীভাবে তার আধিপত্য বজায় রাখে। এর একধরনের সরাসরি উত্তর হল গায়ের জোরে, সামরিক শক্তির প্রয়োগে।৪১ কর্তৃত্ববাদের উপাদানে ভরপুর সামরিক শক্তি জনসাধারণের ওপর এমন সুচতুরভাবে প্রয়োগ করা হয়৪২ যাতে জনসাধারণ ঘুণাক্ষরে বুঝতে না পারে, এ শক্তি প্রকৃতপক্ষে অভিজাততন্ত্রের প্রতিনিধি, শাসক ও অভিজাতদের ব্যবহৃত সুমসৃণ সেতু মাত্র।

দু-মুখো তরবারি হল সামরিক শক্তি। একদিক দিয়ে সে গণতন্ত্রকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। আর-একটি দিক একটু জটিল। শক্তিশালী সামরিক বাহিনী যদি সৈন্যবাহিনীর স্বীকৃতি আদায় করে নিতে পারে তবে সে টিকে যাবে। নয়তো বিদ্রোহী সামরিক বাহিনী পুনরুত্থানের জন্ম দিতে পারে।৪৩ ইতালিতে সামরিক বাহিনীর ইতিহাস অবশ্য জনগণের অবদমনের ইতিহাস।

এজন্য অভিজাতেরা সর্বদাই সামরিক শাসনের জন্য লালায়িত। ইতালিতেও তাই। সেখানে ফ্যাসিবাদকে সমর্থন জানায় অভিজাতেরা কারণ তারা জানত সামরিক শাসন অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রগুলির সাথে জড়িত সাম্যের দাবিগুলি দাবিয়ে রাখতে সমর্থ হবে। মজার ব্যাপার হল, যখনই কোনো সামরিক শক্তি এসব সামাল দিতে ব্যর্থ হয় তখনই অভিজাতেরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতির জন্য সরব হয়ে ওঠে।

সামরিক শক্তি কর্পোরেট দুনিয়ার স্বার্থে কাজ করে।৪৪ পৃথিবী জুড়ে এর অসংখ্য উদাহরণ বিদ্যমান। পাকিস্তানে, বাংলাদেশে, ইন্দোনেশিয়ায়, চিলিতে, লাতিন আমেরিকার দেশগুলিতে আংশিক, প্রাথমিক বা সম্পূর্ণ সামরিক শাসনের ইতিহাস আসলে অভিজাত শ্রেণির অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার ইতিহাস।৪৫

এ প্রসঙ্গে আশার কথা শোনাচ্ছেন নিম্নবর্গীয় ইতিহাসবিদ, ‘আধুনিক ক্ষমতাতন্ত্র হিসেবে ফ্যাসিবাদী শাসন অতি নিকৃষ্ট ব্যবস্থা, মোটেই দীর্ঘস্থায়ী অথবা কার্যকর নয়।’৪৬

চার

আমরা আরম্ভ করেছিলাম রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে, লেখা শেষ করা যাক আর-এক বিশ্বখ্যাত ভারতীয়কে নিয়ে।

১৯৩১-এর ডিসেম্বরে লন্ডনে গোলটেবিল বৈঠক সেরে সুইজারল্যান্ডের ভিলনিউতে রোঁমা রলাঁর সাথে দেখা করতে যান তিনি। তাঁর ইতালি যাওয়ার নিমন্ত্রণ ছিল। রলাঁর সতর্কবাণী ছিল, ফ্যাসিস্ট শক্তি তাঁকে ব্যবহার করতে পারে।৪৭ ইতালি থেকে ফেরার পর তিনি মুসোলিনির প্রশংসা করে রলাঁকে চিঠি দেন। তাতে লেখা থাকে মুসোলিনির কৃষকদের জন্য ভালো কাজের কথা, গরিবদের প্রতি যত্ন ইত্যাদি।৪৮

রামগড় কংগ্রেসে নির্বাচনি সভায় তিনি বললেন, ‘… তোমরা যদি আমার সেনাবাহিনীতে সৈনিক হও তাহলে সেই সংগঠনে গণতন্ত্রের কোনো স্থান নেই। … যে কোনো সেনাবাহিনীতে প্রধান সেনাপতির আদেশ হচ্ছে আইন এবং তার শর্তগুলো শিথিল করা যাবে না।’৪৯

তাঁর প্রিয় শিষ্য তাঁর সম্বন্ধে বলেন, ‘সভাপতি হতেন (তাঁর) হাতের তৈরি। … তিনি সব সময়ে মুসোলিনি হতে চাইতেন এবং অন্যদের সাময়িক রাজা ও ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ করে রাখতেন।’৫০

উপরোক্ত ‘তিনি’ হলেন মহাত্মা গান্ধি আর প্রিয় শিষ্যটি হলেন জওহরলাল নেহরু।

এখন প্রশ্ন,– কেন এমন হয়? দু-জন বিশ্বখ্যাত শান্তির বার্তা বহনকারী ব্যক্তিত্ব, রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধিজি কীভাবে দানব শক্তির প্রতি মোহগ্রস্ত হন! একজন তো আবার আত্মসাৎ করতে চান সে শক্তিকে! তাহলে মাছ আর সবজি বিক্রেতারাই কি ঠিক,– যে যায় লঙ্কায়…। আর, রাবণকে কে চটাতে চায়? এ গবেষণা এখন তোলা থাক পরবর্তী গবেষকদের জন্যে।

তবে আমার একটি অস্পষ্ট উত্তর আছে। তা হল, মানুষ খাঁচা পছন্দ করে। মতবাদিক খাঁচা। যতই সে বলুক, ‘Long live Mingheria! Long live Mingherians! Long Live liberty!’৫১

মুক্তি আর আসে না।

টীকা:

১। আমাদের তরুণ বয়সে প্রগতিশীল দাদারা দুটি বাক্য মুখস্থ করাতেন। একটি হল, ‘সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ রূপ।’ আর-একটি, ‘ফ্যাসিবাদ হল পুঁজিবাদের ক্ষয়িষ্ণু রূপ।’ দুটোই লেনিনের উক্তি বলে গেলানো হত। একটু মাথাঝাড়া দিয়ে ওঠার পর দেখেছি প্রথম উক্তিটি নিয়ে লেনিনের বিখ্যাত বই আছে, কিন্তু দ্বিতীয়টি লেনিনের কালেকটেড ওয়ার্কস-এর কোনো খণ্ডতেই দেখতে পাইনি। ইংরাজি বাক্যটি হল, ‘Fascism is capitalism in decay.’ তাহলে এটির উদ্ভব কোথা থেকে?

রজনী পাম দত্তের একটি লেখাতে এটি পাওয়া যায়, তবে ভিন্ন রূপে। ফ্যাসিজম নিয়ে দ্য লিওভের দুটি প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে তিনি লেখেন, ‘The question of capitalist “decay”; the meaning of Lenin’s definition of imperialism as “decaying capitalism”….’ (রজনী পাম দত্ত, ‘দি কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল’, ১২(৪), জুলাই ২০, ১৯৩৫)।

১৯৩৫ সালে প্রকাশিত শ্রীদত্তের একটি বই আছে যার নাম, ‘ফ্যাসিজম এ্যান্ড সোশাল রেভোলিউশন: এ স্টাডি অফ দি ইকনমিকস অ্যান্ড পলিটিকস অফ দি লেফ্ট স্টেজেস অফ ক্যাপিটালিজম ইন ডিকে’। তাহলে কী রজনী পাম দত্তের কথাই লেনিনের বলে…?

প্রসঙ্গত, মুসোলিনি ক্ষমতায় বসেন ১৯২২ সালে, লেনিন মারা যান ২২ জানুয়ারি ১৯২৪-এ। ১৯১৮ সালের ৩০ আগস্ট লেনিনকে গুলি করেন ফানিয়া কাপলান। একটি গুলি বাঁ ফুসফুসে থেকে যায়। ১০ মার্চ ১৯২২ থেকে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, কথা রুদ্ধ হয়ে যায় (অমল দাশগুপ্ত, ‘কমরেড লেনিন’, লেখাপড়া, ১৯৭০, পৃঃ ৩৮৩, ৩৯৭-৯৮)। ফলে লেনিনের পক্ষে এ উক্তি অসম্ভব।

২। এর একটি নিদর্শন আইজাজ আহমেদের লেখাতে পাওয়া যায়, যেখানে বিষয় ছিল, ‘দক্ষিণপন্থী রাজনীতি ও তার সাংস্কৃতিক নিষ্ঠুরতা’– সে বিষয় থেকে তিনি অনায়াসে চলে যান ‘ফ্যাসিস্ট’ শব্দে আর লক্ষ্য হলো কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। দেখুন, আইজাজ আহমেদ, ‘রাইট উইং পলিটিকস অ্যান্ড দি কালচারস অফ ক্রুয়েলিটি’, সোশাল সায়েন্টিস্ট, ২৬(৯-১০), ১৯৯৮, পৃঃ ৩-২৫।

৩। দেখুন, অ্যারিস্টটল. কে. ক্যালিস, ‘ফ্যাসিজম, প্যারাফ্যাসিজম এ্যান্ড ফ্যাসিস্টাইজেশন: অন দি সিমিলারিটস অফ থ্রি কনসেপচুয়াল ক্যাটিগরিস’, ইউরোপিয়ান হিস্ট্রি কোয়াটারলি, সেজ, ভল্যুম ৩৩, নং ২, পৃঃ ২১৯-২৪৯।

৪। জেসন স্ট্যানলি, ‘হাউ ফ্যাসিজম ওয়ার্কস, দি পলিটিকস অফ আস অ্যান্ড দেম’, র‍্যানডম হাউস, ২০১৮, পৃঃ ২০।

৫। সন্দীপ পেনডসে, ‘ফ্যাসিজম অ্যান্ড কম্যুনালিজম কনসিডারেশনস’, সেন্টার ফর এডুকেশন অ্যান্ড ডকুমেনটেশন, ২০০৭।

৬। আলেকজান্ডার ডি গ্রান্ড, ‘ফ্যাসিস্ট ইতালি অ্যান্ড নাজি জার্মানি: দি ফ্যাসিস্ত টাইপ অফ রুল’, রুটলেজ, ১৯৯৫।

এই বইয়ের চুরাশি পৃষ্ঠায় নাজিবাদ ও ফ্যাসিবাদকে এক বলা হয়েছে। এর দৃঢ়ভাবে সমালোচনা করেন লিন টেলর। দেখুন, লিন টেলর, বুক রিভিউ আলেকজান্ডার. ডি. গ্রান্ড, ‘ফ্যাসিস্ট ইতালি অ্যান্ড নাজি জার্মানি: দি ফ্যাসিস্ট টাইপ অফ রুল’, সোশাল হিস্ট্রি, ১৯৯৭, পৃঃ ৪৭২।

৭। আগ্রহী পাঠক দেখুন, রিচার্ড বেসেল, ‘ফ্যাসিস্ট ইতালি অ্যান্ড নাজি জার্মানি: কমপ্যারিসনস অ্যান্ড কনট্রাস্ট’, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯৬।

৮। মালাবারের মুসলমান মোপলা সম্প্রদায় ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালায় ১৮৭৩ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত।

দেখুন,

১) উইলিয়াম লোগান, ‘রিপোর্ট অফ দি মালাবার স্পেশাল কমিশন’, মাদ্রাজ গভর্নমেন্ট প্রেস, ১৮৮২।

২) সি এ ইভানস অ্যান্ড ফি বি ইভানস, মালাবার, ‘মাদ্রাজ ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার’, মাদ্রাজ গভর্নমেন্ট প্রেস, ১৯৫১।

৩) কে এন পানিক্কর, ‘পেজ্যান্ট প্রটেস্ট অ্যান্ড রিভোল্টস ইন মালাবার’, পি পি এইচ, ১৯৯০।

৯। মারিও প্রেয়ার, ‘ইতালিয়ান ফ্যাসিস্ট রেজিম এ্যান্ড ন্যাশনালিস্ট ইন্ডিয়া, ১৯২১-৪৫’, ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ, ভল্যুম ২৮, ১৯৯১, পৃঃ ২৪৯ -২৭১।

এটি ভারত সম্বন্ধে মুসোলিনির একমাত্র বক্তব্য।

১০। কার্লো ফর্মিকি, ‘ইন্ডিয়া ই ইন্ডিয়ান আলপস’, মিলান, ১৯২৯, অনুবাদিত মারিও প্রেয়ার, ‘রবীন্দ্র-বীক্ষা’, ভল্যুম ৪০, রবীন্দ্রভবন, শান্তিনিকেতন, ২০০১, পৃঃ ১৯। এছাড়াও রোম থেকে ৩০ জুন মুসোলিনির সাথে সাক্ষাতের সময় ইতালি ও মুসোলিনি সম্বন্ধে আরও কিছু প্রশংসাসূচক কথা কবি বলেন।

১১। কল্যাণ কুন্ডু সম্পাদিত, ‘ইমেজিনিং টেগোর রবীন্দ্রনাথ অ্যান্ড দি ব্রিটিশ প্রেস (১৯১২-৪১)’, সাহিত্য সংসদ, ২০০০, পৃঃ ৪১৮-৪২১।

১২। সংবাদপত্রে লেখার কিয়দংশ, ‘…That Tagore,…an old actor…is paid so much at each lecture…As soon as he crossed the border…behaved like prostitutes who always swear they are in love with their latest customer….’(‘এ্যাসালতো’, ২৮ আগস্ট ১৯২৬, গেতানো সালভেমিনি, ‘টেগোর ই মুসোলিনি’, ফ্লোরেন্স লা নুয়োভা, ১৯৫৭, পৃঃ ১৯১ – ২০৬)।

১৩। ‘মুসোলিনি ফাইল’, রবীন্দ্রভবন আর্কাইভ, শান্তিনিকেতন, ‘মুসোলিনি এ্যান্ড টেগোর’, কল্যাণ কুন্ডু পরবাস ডট কম, ২০০৯।

১৪। ‘পূর্বোক্ত’, মারিও প্রেয়ার, ভল্যুম ৩, ১৯৯১, পৃঃ ২৫৩।

১৫। আগ্রহী পাঠক দেখতে পারেন, ডারন এসিমোগলু, জি ডি ফিও, জি ডি লুকা ও জি রুসো, ‘ওয়র, সোশালিজম, অ্যান্ড দি রাইজ অফ ফ্যাসিজম: অ্যান এমপিরিক্যাল এক্সপ্লোরেশন’, এন বি ই আরৎওয়ার্কিং পেপার নং ২৭৮৫৪, ২০২০। এসিমোগলু (৩রা সেপ্টেম্বর ১৯৬৭) রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ। নিষ্কাশনমূলক তত্ত্বের উদ্‌গাতা।

১৬। দেখুন,

১) স্ট্যানলি জি পাইন, ‘এ হিস্ট্রি অফ ফ্যাসিজম’, ইউ সি এল. ১৯৯৫, পৃঃ ৩।

২) এস এফয় জামপোনি, ‘ফ্যাসিস্ট স্পেকটাকল: দি এসথেটিকস অফ পাওয়ার’, ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস, ১৯৯৭, পৃঃ ৯৫–৯৯।

১৭। এঙ্গেলসের মতে, ‘If it(the growing socialist vote) continues in this fashion, by the end of this (nineteenth) century we (socialists) shall conquer the major part of the middle strata of society, petty bourgeois and peasants, and grow into the decisive power in the land.’ (ফ্রেডরিক এঙ্গেলস, কার্ল মার্কসের ‘ক্লাস স্ট্রাগল ইন ফ্রান্স (১৮৪৮-৫০)’-এর ১৮৯৫ সালের লিখিত ভূমিকা, রবার্ট সি টাকার সম্পাদিত ‘দি মার্কস এঙ্গেলস রিডার’-এ উদ্ধৃত, নিউইয়র্ক, ১৯৭৮, পৃঃ ৫৭১)।

১৮। জর্জ সোরেল, ‘রিফ্লেকশনস অন ভায়োলেন্স’, কেমব্রিজ, ১৯৯৯, পৃঃ ৭৯-৮০।

১৯। রবার্ট ও প্যাকসটন, ‘দি অ্যানাটমি অফ ফ্যাসিজম’, নফ, ২০০৪, পৃঃ ৫-৭।

২০। ডারন এসিমোগলু, জি ডি ফিও, জি ডি লুকা ও জি রুসো, ‘ওয়র, সোশালিজম, অ্যান্ড দি রাইজ অফ ফ্যাসিজম: অ্যান এমপিরিক্যাল এক্সপ্লোরেশন’, এন বি ই আর ২৭৮৫৪, ২০২০, পৃঃ ১১।

২১। নিৎসের মতে, ‘…he who is hated by the people as a wolf is by the dogs; he is the free spirit, the enemy of fetters, the non-worshipper, the dweller in forests.’ (ফ্রিডরিশ নিৎসে, ‘দাস স্পোক জরাথ্রুস্ট’, পেঙ্গুইন, ২০০৩, পৃঃ ১২৬)।

আসশ্যেম যথার্থই বলেছেন, ‘ Nietzsche’s texts themselves provide a positive goldmine of varied possibilities.’ (এস. ই. আসশ্যেম, ‘নিৎসে, এ্যান্টি-সেমিটিজম, অ্যান্ড মাস মার্ডার’, আসশ্যেম সংকলিত ‘কালচার অ্যান্ড ক্যাটাস্ট্রোপ’, নিউইয়র্ক, ১৯৯৬, পৃঃ ৭১)।

২২। জর্জ সোরেল (১৮৪৭- ১৯২২) ফরাসি ইঞ্জিনিয়ার ও সমাজতত্ত্ববিদ।

২৩। সিন্ডিক্যালিস্টরা শ্রমিক শ্রেণির একনায়কত্ব মানত না। তারা মনে করত ট্রেড ইউনিয়নগুলি (সিন্ডিকেট) বিপ্লব ছাড়াই সাধারণ ধর্মঘটের মাধ্যমে পুঁজিবাদ উচ্ছেদ করে উৎপাদনের ভার স্বহস্তে নিতে পারবে।

২৪। সুজানমা ব্যারোস, ‘ডিসটর্টিং মিররস: ভিশনস অফ দি ক্রাউড ইন লেট নাইনটিনথ সেঞ্চুরি ফ্রান্স’, নিউ হ্যাভেন, ১৯৮১।

২৫। এরা বিশ্বাস করে মানব জাতির জিনগত মান উন্নত করা সম্ভব। (ফ্রান্সিস গালটন, ‘ইউজেনিক্স: ইটস ডেফিনিশন, স্কোপ অ্যান্ড এইমস’, আমেরিকান জার্নাল অফ সোসিওলজি, ১০(১), ১৯০৪)। গালটন, চার্লস ডারউইনের ভাইপো।

২৬। ‘সম্পাদকীয়’, ন্যাচারাল রিভিউস জেনেটিকস, ২৩(৩৮৫), ২০২২।

২৭। সামাজিক ক্ষেত্রে ডারউইনবাদ জন্ম দেয়, ‘যোগ্যতমের বেঁচে থাকা’, যার অর্থ– কিছু মানুষ শক্তিশালী হয়ে ওঠে কারণ তারা জন্মগতভাবে উৎকৃষ্ট।

দেখুন, মাইক হকিন্স, ‘নাজিজম, ফ্যাসিজম অ্যান্ড সোশাল ডারউইনিজম’, কেমব্রিজ, ২০০৯।

টমাস কার্লাইলের মতে, জনসাধারণ হল ‘the masses full of beer and non-sense’, এর জন্য দরকার শৃঙ্খলা, সামরিক কল্যাণকামী একনায়কত্বের রাষ্ট্র। ফ্যাসিস্টরা কার্লাইলকে তাদের গুরু বলে মানত।

দেখুন, জে শ্যালউইন শাপিরো, টমাস কার্লাইল, ‘প্রফেট অফ ফ্যাসিজম’, জার্নাল অফ মডার্ন হিস্ট্রি, ১৭(২), ১৯৪৫, পৃঃ ১০৩।

এমিল ডুরখেইম ‘কাঠামোগত কার্যকারিতা’ তত্ত্বের উদ্‌গাতা যা ফ্যাসিস্টদের উৎসাহ জোগায়।

দেখুন, ডেভিড নরম্যান স্মিথ, ‘কালেকটিভিজম অ্যান্ড দি ইনটেলেকচুয়ালস স্বেন্ড রেনালফ’, এমিল ডুরখেইম, “ফ্যাসিজম অ্যান্ড রেজিস্ট্যান্স”, অ্যান্টিসেমিটিজম স্টাডিজ, ১ (২), ২০০৪।

লুই পাস্তুরের ‘ব্যাকটেরিয়া’ তত্ত্ব জন্ম দেয় ‘জীবন জীবন থেকে আসে’ ও সমাজকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যা উৎসাহিত করে ফ্যাসিবাদকে।

দেখুন, রবার্ট ও প্যাক্সটন, ‘দি অ্যানাটমি অফ ফ্যাসিজম’, নফ, ২০০৪, পৃঃ ৩৬।

২৮। বেনিতো মুসোলিনি, ‘ফ্যাসিজম, ১৯৩২’, কার্ল কোহেন সম্পাদিত “কম্যুনিজম, ফ্যাসিজম অ্যান্ড ডেমোক্রাসি: দি থিওরেটিক্যাল ফাউন্ডেশন”, র‍্যানডম, ১৯৭২, পৃঃ ৩২৮।

২৯। ‘…the Fascist movement has been built up of ex-socialist.’ (কোররাডো গিনি, ‘দি সায়েন্টিফিক বেসিস অফ ফ্যাসিজম’, পলিটিক্যাল সায়েন্স কোয়াটারলি, ৪২(১), ১৯২৭, পৃঃ ৯৯-১০৫)। কোররাডো গিনি (১৮৮৪-১৯৬৫) একজন ইতালীয় পরিসংখ্যানবিদ, জনতত্ত্ববিদ, গিনি সহগের জনক, ফ্যাসিবাদ ও মুসোলিনির সমর্থক।

৩০। মাইকেল মান, ‘দি সোর্সেস অফ সোশাল পাওয়ার’, ভল্যুম ১, লন্ডন স্কুল ইকনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স, ১৯৮৬, পৃঃ ১ -৩৩।

৩১। জর্জি ডিমিট্রভ, ‘শ্রমিক ঐক্য ফ্যাসিবাদ বিরোধী দুর্গ’, এন বি এ ১৯৯৯, পৃঃ ৫২।

৩২। ম্যারিন রোকসানা, ‘সাম কনসিডারেশনস অন দি ইভলিউশন অফ ডিফাইনিং ফ্যাসিজম’, স্টাডিয়া পলিটিকা: রোমানিয়ান পলিটিক্যাল সায়েন্স রিভিউ, ১২(১), পৃঃ ৫২।

৩৩। মাইকেল মান, ‘ফ্যাসিস্ত’, কেমব্রিজ, ২০০৪, পৃঃ ৩৫৫।

৩৪। রবার্ট ও প্যাক্সটন, ‘দি অ্যানাটমি অফ ফ্যাসিজম’, নফ, ২০০৪, পৃঃ ২১৮।

৩৫। ‘আঁদ্রে জিদের ভাষণ’, নেপাল মজুমদার, ‘প্রগতি লেখক-আন্দোলনের সূচনাপর্ব’, ধনঞ্জয় দাশ সম্পাদিত “মার্কসবাদী সাহিত্য বিতর্ক”, করুণা, ২০০৩, পৃঃ ৫৯৫।

৩৬। আন্তোনিও গ্রামশি, ‘প্যাসাতো ই প্রেসেন্তে’, এনাউদি, তুরিন, ১৯৫১, পৃঃ ৩৮, উদ্ধৃত টমাস আর বেটস, ‘গ্রামশি অ্যান্ড দি থিয়োরি অফ হেজিমনি’, জার্নাল অফ হিস্ট্রি অফ আইডিয়াস, ৩৬(২), ১৯৭৫, পৃঃ ৩৫৮।

৩৭। শব্দটির অর্থ আবেগ ও কুসংস্কারের মিশেলে উদ্ভূত জনপ্রিয় নেতা। আন্তোনিও গ্রামশি, ‘সিলেকশনস ফ্রম দি প্রিজন নোটবুকস’, ওরিয়েন্ট, ১৯৯৬, পৃঃ ১৫৬।

৩৮। কুর্ট প্যাজল্ড, ‘টেরর অ্যান্ড ডেমাগোগেরি ইন দি কনসোলিডেশন অফ দি ফ্যাসিস্ট ডিকটেটরশিপ ইন জার্মাননি’, ১৯৩৩-৩৪, ডোবোকাওস্কি ও ওয়ালিমান সম্পাদিত ‘রাডিকাল পারসপেকটিভ অন দি রাইজ অফ ফ্যাসিজম ইন জার্মানি’, ১৯১৯-৪৫, কর্নারস্টোন, ২০০৩, পৃঃ ২৪২।

৩৯। রনি এস ল্যানডাউ, ‘দি নাজি হলোকাস্ট’, টোরাস, ২০১৬, পৃঃ ৩।

৪০। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, ‘হোয়াই সোশালিজম’, ১৯৪৯, ওরটিজ ও গুপ্তা সংকলিত “হিস্ট্রি এ্যাজ ইট হ্যাপেনড”, মান্থলি রিভিউ, কর্নারস্টোন, ১৯৯৪, পৃঃ ১২।

৪১। মাইকেল মান, ‘ফ্যাসিস্ট’, কেমব্রিজ, ২০০৪, পৃঃ ১৩।

৪২। উমবার্তো একো, ‘উর-ফ্যাসিজম’, “ফাইভ মরাল পিসেস”, অনুবাদিত এ ম্যাকওয়েন, হারকোর্ট, ২০০১, পৃঃ ৭২-৭৩।

৪৩। ডারন এসিমোগলু, দাভিড তিচ্চিঅ্যনদ্রেয়া ভিনদিগনি, ‘এ থিয়োরি অফ মিলিটারি ডিকটেটরশিপস’, আমেরিকান ইকনমিক জার্নাল: ম্যাক্রোইকনমিকস, ২০১০, পৃঃ ১-৪২।

৪৪। দেখুন,

১। স্যামুয়েল ই ফিনার, ‘দি ম্যান অন হর্সব্যাক: দি রোল অফ মিলিটারি ইন পলিটিকস’, পিসক্যাটাওয়ে, ১৯৭৬।

২। এরিক এ নর্ডলিংগার, ‘সোলজারস ইন পলিটিকস: মিলিটারি ক্যু অ্যান্ড গভর্নমেন্টস’, প্রেনটিস হল, ১৯৭৭।

৪৫। দেখুন,

১। মার্টিন সি নিডলার, ‘দি প্রবলেম অফ ডেমোক্রাসি ইন লাতিন আমেরিকা’, লেক্সিংটন, ১৯৮৭, পৃঃ ২২৮।

২। গায়তানো মোসকা, ‘দি রুলিং ক্লাস’, ম্যাকগ্রহিল, ১৯৩৯, পৃঃ ২২৮।

৪৬। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ‘ইতিহাসের উত্তরাধিকার’, আনন্দ, ২০০০, পৃঃ ৬৪।

৪৭। ‘রম্যাঁ রলাঁ অ্যান্ড গান্ধি করেসপন্ডেস’, পাবলিকেশন ডিভিশন গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, ১৯৭৬, পৃঃ ১৭২।

৪৮। ‘Mussolini is an enigma to me. Many of the reforms has made attract me. He seems to have done a great deal for the peasantry…his care of the poor people,…seem to me demand very careful attention…what strikes me is that behind musolini’s ruthlessness is the motive of serving his people.’ (পূর্বোক্ত, ‘রম্যাঁ রলাঁ অ্যান্ড গান্ধি করেসপন্ডেস’, পৃঃ ২৪১।

৪৯। ‘গান্ধি কালেকটেড ওয়ার্কস’, ভল্যুম ৭১, ১৯৫৮, পৃঃ ৩৫০-৫১।

৫০। জওহরলাল নেহরু, ‘অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’, অক্সফোর্ড, ১৯৮২, পৃঃ ২৮৭ ফুটনোট।

৫১। ওরহান পামুক, ‘নাইটস অফ প্লেগ’, পেঙ্গুইন, পৃঃ ৬৮৩।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান