বাংলায় আদিবাসী অভ্যুত্থান : প্রসঙ্গ চুয়াড় বিদ্রোহ

মধুশ্রী মজুমদার

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ব্রিটিশ বিরোধী লড়াইয়ে গৌরবময় ভূমিকা পালন করে ঔপনিবেশিক বাংলার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের নিম্নবর্গীয় সম্প্রদায়, অথচ ইতিহাসের পাতায় সেরূপ উল্লেখযোগ্য স্থান লাভ করেনি তাদের সংগ্রামী ঐতিহ্য। এই প্রবন্ধে দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলায় নিম্নবর্গীয়দের অভ্যুত্থান এবং তার ঐতিহাসিক পর্যালোচনার আলোকে চুয়াড় বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল পূর্ব ভারতে কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রথম শক্তিশালী কৃষক-নেতৃত্বাধীন আদিবাসী (উপজাতি) প্রতিরোধ। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জঙ্গলমহলে যে নবনীতি প্রণয়ন করে তাতে সিংহভূম, মানভূমের একটি অংশ সহ, বেশিরভাগ দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলা, ছোটোনাগপুর এবং উড়িষ্যার কিছু অংশের বসবাসকারী বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠী, যথা বাগদি, কুর্মি, সাঁওতাল, ভূমিজ, বাউরি, কোরা, মাহলি ও মুন্ডা স্বীকার করেনি।

চুয়াড় বলতে প্রকৃতপক্ষে কাদের বোঝানো হয়েছে তা নিয়ে একাধিক বিতর্ক বর্তমান। ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, পাইক বা চুয়াড়রা স্থানীয় জমিদারদের অধীনে কর্মরত ছিলেন এবং তাদের বেতনের পরিবর্তে পাইকান বা করমুক্ত জমি ভোগ করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল। বাংলার বৈষ্ণব ধর্মের বিখ্যাত প্রচারক শ্রীচৈতন্যের এ-সকল অঞ্চল দিয়ে যাত্রার (১৫০৭ খ্রিষ্টাব্দ) সময়কালের বিবরণীতে এই পাইক বা চুয়াড় সম্প্রদায়ের বর্ণনা করা হয়েছে স্থানীয় সুরক্ষা বাহিনী হিসেবে। আবার কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী তাঁর ‘কালকেতু উপাখ্যান’ গ্রন্থে চুয়াড় শব্দের উল্লেখ রয়েছে। বাংলা ভাষায় শব্দকোশ অনুসারে, চুয়াড় বলতে অসভ্য বর্বর খানিক আদিম বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করে। সুপ্রকাশ রায়ের মতে, চরম অত্যাচারিত বঞ্চিত ও লাঞ্ছিত হয়ে এই জনজাতি তাদের অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে ভীষণভাবে সোচ্চার হয়ে ছিল, তাই হয়তো এদের এই প্রকার হীন শব্দের দ্বারা চিহ্নিত করেছে। এমনকি যোগেশ চন্দ্র বসু তাঁর ‘মেদিনীপুরের ইতিহাস’ গ্রন্থে এই জাতিকে বহিরাগত ও জঙ্গলমহলের দখলকারী রূপে বর্ণনা করেছেন।   

সরকারিভাবে ‘চুয়াড়’ শব্দটির সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দের ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নথিতে, যেখানে এক গোষ্ঠীকে ‘চুয়াড়’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয় জেলার সদরে এক জনজাতি প্রবেশ করে এবং গবাদি পশু শস্য ইত্যাদি লুঠ করে। নথিতে আলোচ্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয় এবং কার্যকলাপকে ডাকাতির মতো অপরাধের সাথে তুলনা করা হয়। তৎকালীন সময়ে ক্যাপ্টেন কার্টার ছিলেন মেদিনীপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি বীরভূমের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে সাহায্য চেয়ে আবেদন করেন এই লুটেরা দলকে দমন করতে। এই চুয়াড়রা সত্যিই লুটেরা কিংবা অরাজকতা সৃষ্টিকারী কিনা তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। ঐতিহাসিক জে সি ঝা-এর মতে চুয়াড় জনজাতি মূলত ভূমিজ আদিবাসী গোষ্ঠীর অন্তর্গত এবং মুন্ডারি ছিল তাদের আদি জনগোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠী ছোটোনাগপুর অঞ্চল থেকে বহুল সংখ্যায় অভিবাসিত হয় এবং মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলায় বসতি স্থাপন করে।

১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত Giant’s Analysis of Finances of Bengal-এ প্রথমেই জনজাতিকে বর্ণনা করা হয়েছে— যারা বিষ্ণুপুরে বসবাসকারী এক লুটেরা গোষ্ঠী বা ডাকাত গোষ্ঠী হিসাবে মূলত আদিম প্রবৃত্তির এবং এই জনজাতি গোষ্ঠী এতটাই বর্বর যে, তারা দেবী ভবানী ও কালীর উদ্দেশে নরবলি প্রথার মতো নারকীয় প্রথাকে মান্যতা দেয়।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী জঙ্গলমহল মূলত পাইক চুয়াড় গোষ্ঠীর আদিবাসীরা বসবাস করত যারা চাষাবাদে খুব বেশি আগ্রহী না হলেও লুটপাটে ছিল দক্ষ।১০ তবে, পরবর্তীকালে জঙ্গলমহলে মূলত মেদিনীপুর, বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া অঞ্চলে অরাজকতা সৃষ্টিকারী যে কোনও গোষ্ঠীকে ব্রিটিশ আধিকারিকরা চুয়াড় নামেই চিহ্নিত করেছে।১১ জমি ও জীবিকাকে কেন্দ্র করে চুয়াড়দের অভিযোগের সঙ্গে জমিদারদের অনিশ্চিত পরিস্থিতি মিলিত হয়ে ব্যাপক আকারে যে বিদ্রোহ সংঘটিত হয়, তা সাধারণত চুয়াড় বিদ্রোহ হিসাবে পরিচিত। 

চুয়াড় বিদ্রোহের আর্থ-সামাজিক পটভূমি 

চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল বাংলায় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ। চুয়াড় বিদ্রোহ শুধু রাজনৈতিক ঘটনা নয়, এর মূলে অবশ্যই ছিল অর্থনৈতিক কারণাবলি। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মূল লক্ষ্য ছিল এদেশের সম্পদকে কুক্ষিগত করা। কোম্পানি উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে এই দেশের প্রধান সম্পদ তুলা এবং রেশম, বনজ পণ্য, খনিজ দ্রব্য ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান সম্পদ দ্বারা ভারতবর্ষ সম্পদশালী একটি অঞ্চল, ফলে এই অঞ্চলের সম্পদকে নিজেদের আওতায় আনার উদ্দেশ্যে তারা নতুন জমি বন্দোবস্ত প্রবর্তন করে। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার জন্য দেওয়ানি লাভের পর থেকে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা।১২ ফলস্বরূপ জঙ্গলমহলের অধিবাসীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। তারা মূলত আদিবাসী জীবন ও কৃষিজীবীর জীবনধারা অনুসরণ করত। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বকালে এই জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। ডঃ বিনোদ শঙ্কর দাসের মতে, “ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা উপজাতীয় সমাজের নিজস্ব আধিপত্যের অবসান ঘটায়।”১৩ জঙ্গলমহলের জমিদাররা তাদের ক্ষমতা হারায় এবং এ সকল জমিদারদের ওপর নির্ভরশীল জনজাতি বিপদের সম্মুখীন হতে থাকে। এভাবে সকল শ্রেণির ক্ষোভ বিদ্রোহের পটভূমি সৃষ্টি করে।

ঔপনিবেশিক বাংলার জঙ্গলমহলে অষ্টাদশ শতকের শেষে যে অভ্যুত্থান গড়ে উঠেছিল তা চুয়াড় বিদ্রোহ নামে পরিচিত হলেও মূলত এটি ছিল গণবিদ্রোহ। চুয়াড় বিদ্রোহের মূল তথ্যগুলি বিদ্রোহবিরোধী ব্রিটিশ লেখকের লেখা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তাই বিদ্রোহের ইতিহাস রচনা খুব স্পর্শকাতর একটি বিষয়। চুয়াড় বিদ্রোহ প্রথম পর্যায়ে ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ সংঘটিত হলেও, ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ কয়েকবার পুনরায় মাথাচাড়া দেয়। বিদ্রোহের মূল কেন্দ্র ছিল দক্ষিণ পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম প্রভৃতি জেলা। তাছাড়া বর্তমান ঝাড়খণ্ডের কিছু অংশ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এ সকল স্থানে বসবাসকারী জনজাতির মানুষের মধ্যে ভৌগোলিক ও ঐতিহ্যের সংযোগ থাকায় তাদের অধিকাংশ একই অর্থনৈতিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলস্বরূপ তাদের সবার ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপের মধ্যে সাদৃশ্য থাকা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।১৪

চুয়াড়রা ছিল জঙ্গলমহলের ভূমিপুত্র। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই তারা এ ভূখণ্ডের আদি বাসিন্দা। চুয়াড়রা স্থানীয় জমিদারের অধীনে পাইক হিসেবে কাজ করত। তারা বেতনের বিনিময়ে ‘পাইকান’ বা করমুক্ত জমি ভোগ করত। কৃষি ও জঙ্গল পণ্য ছিল জীবিকার অন্যান্য উৎস। তারা সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখেছিল।১৫ তারা করমুক্ত জমিও ভোগ করত। চুয়াড় ও স্থানীয় জমিদারদের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। ইংরেজদের আধিপত্যের বিস্তারের সাথে সাথে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিভিন্ন রাজস্ব ব্যবস্থা চালু করে। ফলে কৃষি সম্পর্কের পরিবর্তন হয়। নতুন ব্যবস্থার প্রধান ত্রুটি ছিল রাজস্ব আদায়ের সর্বাধিকীকরণ। এটি জমিদার, অভিজাত এবং চাষিদের উপরও প্রভাব ফেলেছিল। ১৭৯৮-১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের চুয়াড় বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে কোম্পানি রাজস্ব পরিশোধ না-করা জমি বন্দোবস্ত পুনরায় চালু করলেও বহু বছরের পুরানো আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে না পারায় তা চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।১৬

১৭৬০ সাল থেকে কৃষি ক্ষেত্রে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হতে থাকে। কারণ কোম্পানি এ বছর মেদিনীপুর ও তৎসংলগ্ন পরগনার জমিদারির অধিকার লাভ করে। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে তারা দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে দেওয়ানি সনদও পেয়েছিলেন। কোম্পানি একটি নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। একটি বাণিজ্যিক কোম্পানি ভূমি রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পায়। এ ক্ষেত্রে তাদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। স্থানীয় ঐতিহ্য, পরিমাপের মান, ওজন এবং মুদ্রার পার্থক্য থাকায় ব্রিটিশ কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকে। মুঘল আমলের রাজস্ব আদায়ের অবকাঠামো দুর্বল ছিল। তাছাড়া ব্রিটিশ শাসকদের কাছে জমির প্রকৃত মালিকানা সম্পর্কে স্পষ্ট কোনও ধারণা ছিল না এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় খাজনা আদায়ের সম্পর্কে তাদের কোনও অভিজ্ঞতা না থাকার ফলে কোম্পানি নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। ফলস্বরূপ, কোম্পানি তাদের শাসন ব্যবস্থায় বহু পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানির পাশাপাশি কোম্পানি বাংলায় দ্বৈত শাসন ব্যবস্থাও লাভ করে। মোহাম্মদ রেজা খানকে বাংলার ‘আমিল’ হিসেবে নিয়োগ করা হয়। আমিল ব্যবস্থায় আমিল কোম্পানিকে সর্বোচ্চ পরিমাণ খাজনা প্রদান করত এবং আমিল তার অধীনে বেশ কিছু খাজনাদার নিয়োগ করত যারা আমিলের কাছে সর্বোচ্চ পরিমাণ খাজনা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিত। এক্ষেত্রে ‘চৌধুরি’ নামক সম্প্রদায় ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। ফলে চাষিদের ওপর শুরু হয় চরম অত্যাচার। গভর্নর ভিড়েলস্ট চাষিদের দুর্দশার বিষয়টি কিছুটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, তাই তিনি পরবর্তীতে আমিলদারি ব্যবস্থা বিলোপ করে দেন এবং ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে বিশেষ কিছু জেলায় তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করেন। তবে এতেও চাষিদের অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। কারণ এই সকল তত্ত্বাবধায়করা চাষিদের নিয়ে খুব বেশি আগ্রহী ছিলেন না। কারণ তারা ব্যক্তিগত ব্যবসায় ব্যস্ত থাকতেন, সুতরাং চাষিদের উপর অত্যাচার অব্যাহত ছিল। 

বিনোদ শংকর দাস তাঁর গবেষণায় নিম্নলিখিত তথ্যগুলির মাধ্যমে বিষ্ণুপুরের রাজাকে প্রদেয় রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরেছেন। যা হল, ১৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে ১০৭০০০ (আইন-ই-আকবরি), ১৭১৫ খ্রিস্টাব্দে ১২৯৮০৩ (জাম্মা কামিল তুম্মারি), ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে ২৫০,৫০১ (ফার্গুসন), ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে ২৮০৫০১, ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে ৪৭৯,৬৬,১৫,১৬ এবং ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে ৫২২,৮১৭ টাকা।১৭ কোম্পানির কর্মকর্তাবৃন্দ জঙ্গলমহল ও বিষ্ণুপুরের রাজস্ব বন্দোবস্ত যে অতিমাত্রায় মূল্যায়ন করা হয়েছে তা বুঝতে পারেনি। এমনকি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও উপলব্ধি করতে পারেনি যে জমিদার তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে। জঙ্গলমহলের জমিদাররা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে শুরু করে। এমতাবস্থায় ছাতনা ও বরাভূমের জমিদার কর দিতে অস্বীকার করে এবং ধলভূমের রাজা ব্রিটিশ বিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন। জমিদারের অসন্তোষের কারণ ছিল মূলত কোম্পানির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা, যেমন লবণ রপ্তানি ও পুলিশের দায়িত্ব পালনে বিধিনিষেধ, রাজস্ব আদায় না করা, জমি ও পতিত জমি পুনরায় চালু করা। এরূপ পরিস্থিতি স্থানীয় আদিবাসীদের লুটপাট জাতীয় কার্যকলাপে নিযুক্ত হতে বাধ্য করে।১৮ ব্রিটিশদের এই সকল পদক্ষেপ এবং স্থানীয় জমিদাররা তাদের মদত দিতে থাকলে জঙ্গলমহলের অধিবাসীগণ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।     

১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির সার্কিট কমিটি পাঁচশালা বন্দোবস্ত ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে জমিদারদের বংশানুক্রমিক অধিকার রক্ষায় কোনো নজর ছিল না, অথচ রাজস্ব আয়ের হার ছিল অনেক বেশি। স্থানীয় জমিদারদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার প্রাচীন ব্যবস্থার অবসান ঘটে ‘নানকার’ জমি বাজেয়াপ্ত করার মধ্য দিয়ে।১৯ বহু জমিদার ও পাইক সেখানকার জমিদারি থেকে উচ্ছেদ হন। প্রাথমিক উৎপাদকদের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমশ নিম্নগামী হতে থাকে এবং সেখানে অশান্তি ও নৈরাজ্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আবার ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হলে সেখানে জমিদাররা জমির মালিক হিসেবে স্বীকৃত হন। তাদের জমির উত্তরাধিকারের বংশানুক্রমিক অধিকার দেওয়া হয়েছিল ও জমিদার কর্তৃক প্রদত্ত অর্থের স্থির ও অপরিবর্তনশীল পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল। নির্ধারিত পরিমাণ ছিল ১০/১১ রাজস্বের এক চতুর্থাংশ সরকারের এবং ১/১০ অংশ ছিল জমিদারের জন্য। প্রাথমিক উৎপাদকদের সঙ্গে সরকারের সরাসরি যোগাযোগ ছিল না। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির অজুহাতে জমিদারের কোনো নিস্তার পাওয়ার উপায় ছিল না। টাকা পরিশোধ না করলে তার জমি নিলামে বিক্রি করা হত। বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণও ছিল, যেমন— ব্রিটিশ কর্মকর্তা বুঝতে পেরেছিলেন যে তারা ভারতে বিদেশি, তাদের শাসন অস্থিতিশীল হবে যদি না তারা স্থানীয় সমর্থন অর্জন করে। মূলত জমিদাররা ব্রিটিশ সরকার ও কৃষকদের মধ্যে মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হবে। দ্বিতীয়ত, তাদের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আর্থিক নিরাপত্তা এবং তৃতীয়ত, স্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হয়েছিল।২০ 

তবে কৃষকদের দুর্দশার শেষ এখানেই নয়। তাদের ভাড়াটে কৃষকে পরিণত করা হয়। ফলে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের জন্য কৃষক বা রায়তদের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা শুরু হয়। খাজনার অতিরিক্ত মূল্যায়নের কারণে জমিদারদের অবস্থা অনুকূল ছিল না। জঙ্গলমহলের বহু জমিদার তাদের সম্পত্তি হারায়। সরকারের নীতি ছিল জমিদার ও তাদের সশস্ত্র অনুচরদের জন্য অত্যন্ত নেতিবাচক। সাধারণ কৃষক সম্প্রদায়ের অবস্থানকে স্পর্শ করে এমন রাজস্ব প্রদানকারী জমিদারি পুনরায় চালু করাই ছিল সেই সময়ের সামাজিক অসন্তোষের প্রধান উৎস।২১ এই ছিল চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্বপূর্ণ পটভূমি। কৃষক জমিদার পাইক প্রত্যেকেরই লক্ষ্য ছিল কোম্পানির শাসনকে নিশ্চিহ্ন করা। 

বিদ্রোহের বিভিন্ন পর্যায়

১৭৬০ সালে কোম্পানি মির কাশিমের কাছ থেকে মেদিনীপুর, জঙ্গলমহল ও ধলভূম অঞ্চল অধিগ্রহণ করে। ১৭৬৫ সালে দেওয়ানি লাভ করার পর এই অঞ্চলে ব্রিটিশদের অনুপ্রবেশ যখন শুরু হয়, মেদিনীপুরের বাসিন্দা গ্রাহাম “জঙ্গলমহলে আয় নির্ধারণের প্রক্রিয়া” অনুসরণ করে মেদিনীপুরের পশ্চিমে জঙ্গলমহলের জমিদারদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য একটি সামরিক বাহিনী প্রেরণ করেন।২২ আবার ফার্গুসন ঝাড়গ্রাম প্রধানদের দুর্গ আক্রমণ ও দখল করা শুরু করেছিলেন।২৩ জমিদারদের রামগড়, শমকাকুলিয়া (লালগড়), জাম্বানি এবং জাতবানি (শিলদা) ব্রিটিশদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল। তারা বলরামপুরে চাপ দিতে সক্ষম হয়েছিল এবং আমাইনগর (অম্বিকানগর), সুপার, মানভূম, ছাতনা, বরাভূম, রাজপুর এবং ফুলকুসমার প্রধানদের বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়েছিল।২৪

তবে ফার্গুসন জানতেন যে উপজাতি প্রধানরা কোনোভাবেই সম্পূর্ণ ব্রিটিশ কর্তৃত্ব স্বীকার করতে রাজি নয়। এই অঞ্চলে স্থায়ী বাহিনী গঠন করার ফলে রাজস্ব আদায় ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের জন্য অনেকাংশে সহজতর হয়ে ওঠে।২৫ তবে চুয়াড়দের বিরোধিতা সত্ত্বেও কিছু জমিদার ছিলেন যারা ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে নির্ধারিত কর প্রদান করেছিলেন। মানভূম ও বরাভূমে, বিশেষত ঘাটশিলা ও বরাভূমের মধ্যবর্তী পাহাড়ে চুয়ারদের দুর্গ অবস্থিত ছিল। এ সকল অঞ্চলে বেশ কিছু জমিদাররা রাজত্ব করতেন যাদের সাথে ভূমির কোনো সম্পর্ক ছিল না, যা জনজাতি গোষ্ঠীর জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে।

মানভূম জেলার সরকারি রেকর্ডগুলি চুয়াড় বিদ্রোহের বিবরণে পূর্ণ। উল্লেখযোগ্য, ক্রফোর্ড ১৭৮২ সালে ঝালদা অঞ্চলে গণঅভ্যুত্থান দমন করেন এবং খাজনা সংগ্রহের বিষয়ে মনোযোগী হন। তিনি ঝালদা, পাচেত ও রামগড় অঞ্চলে উপজাতিদের নিরস্ত্র হওয়ার পরামর্শ দেন। ১৭৮৩-৮৪ খ্রিস্টাব্দে কুলিয়া পাল অঞ্চলে পুনরায় অশান্তি পরিলক্ষিত হয়, যা করব্যবস্থার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বরাভূম প্রথম অধিকৃত হয় যদিও ঝালদা খাতরা ঝরিয়া নোয়াগড় এবং অন্যান্য স্টেটগুলি পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা সামরিক বলপ্রয়োগের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করে।২৬

১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে অগাস্ট মাসে ঘাটশিলার জমিদার কোম্পানির কাছে আত্মসমর্পণ করলে পাটকুম সিংহুম ও ছাতনার জমিদার জোটবদ্ধ হয় এবং ছাতনার জমিদার দাবি করে করেন তিনি অভুক্ত থাকতে পছন্দ করবেন, কিন্তু পরাজয় স্বীকার করবেন না।২৭ এই সকল অঞ্চলের উপজাতিগণ ব্রিটিশ কোম্পানির বাহিনীর থেকে যে সকল অস্ত্র লুট করেছিল তা ফেরত দিতে অস্বীকার করলে ১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে ঘাটশিলাকে কেন্দ্র করে পুনরায় অভ্যুত্থানের সূত্রপাত হয় এবং ঘাটশিলার অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন অঞ্চলের সর্দাররা তাতে নেতৃত্ব প্রদান করে।২৮ ফলস্বরূপ ডালভূম ও বরাভূম অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী, বিশেষত ভূমিজ জনজাতির বিক্ষুব্ধ হয়।২৯ কোম্পানি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে ঘাটশিলার বিদ্রোহী নেতৃত্ব জগন্নাথ ঢালকে দমন করতে সক্ষম না হওয়া পর্যন্ত সুবর্ণরেখা পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে কর আদায় করা অসম্ভব।৩০

১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে এসকল অঞ্চলে অশান্তি অব্যাহত ছিল। লেফটেন্যান্ট গুডিয়ারকে কর্পোরেশন কর্তৃক বিদ্রোহ দমনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল। তিনি বিদ্রোহ দমনের একাধিক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত ছিলেন।৩১ ১৭৭৩ সালে তিনি বিদ্রোহ দমন করতে সফল হন। জমিদারদের প্রধান ধলভূমের রাজা জগন্নাথের এস্টেট পুনরুদ্ধার করলে ব্রিটিশ সরকার শান্তি স্থাপনে বাধ্য হয়। সুবিয়া সিং এবং ধাড়কির সর্দার কুইলাপালজাঘিন্দর সহ আরও অনেকে পশ্চিমের জঙ্গলের অভ্যুত্থানকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। তারা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ, মুনাফা নিষ্পত্তি এবং তাদের সম্পত্তি জরিপ করতে অস্বীকার করলে, সীতারাম থানাদারের নেতৃত্বে কোম্পানি এক হাজার পাইকের একটি বাহিনী গঠন করে। মূল লক্ষ ছিল তাদের অধীনস্থ করা এবং তাদের মেদিনীপুরে নিয়ে আসার জন্য দ্রুত ও অনুকূল বন্দোবস্ত করা। ১৭৭৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘাটশিলার জগন্নাথ ঢালের নেতৃত্বে পশ্চিম জঙ্গলে নতুন করে অশান্তি দেখা দিলে বিদ্রোহ মারাত্মক আকার ধারণ করে। হলদিপুকুরিয়তরা জগন্নাথের সাথে যোগ দেয় এবং বিদ্রোহে লিপ্ত হয়। শিলদার জমিদার মানগোবিন ডোমপাড়া পাইকদের জোটবদ্ধ করে এবং বিদ্রোহে যোগদান করে।৩২

মেদিনীপুর জেলার অধিকাংশ অঞ্চল ঘন জঙ্গল দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। এ সকল অঞ্চলের মূল অধিবাসী ছিল মূলত পাইক এবং চুয়াড়, যারা কৃষি কাজে ছিল অনাগ্রহী তবে লুটপাটে দক্ষ। আবার মানভূমের পাহাড়ি এবং জঙ্গলাকীর্ণ পরিবেশ বিদ্রোহীদের আড়াল হতে সাহায্য করেছিল। অষ্টাদশ শতকে এবং উনিশ শতকের প্রথমার্ধে মানভূম এলাকা ছিল বিশালাকার বৃক্ষ দ্বারা পরিপূর্ণ, যা এই অঞ্চলকে দুর্গম ও দুর্বিষহ করে তোলে। এ রূপ পরিবেশ বিদ্রোহীদের জন্য ছিল অনুকূল।৩৩ এমনকি উনিশ শতকের প্রথমার্ধে মেদিনীপুর জেলার দুই-তৃতীয়াংশ জঙ্গলাকীর্ণ ছিল, যা আদিবাসীদের দুর্গগুলিকে সুরক্ষা প্রদান করত। জঙ্গলমহলে আদিবাসীরা চাষাবাদের পাশাপাশি জঙ্গল থেকে প্রাপ্ত সম্পদ ভোগ করত, ফলে জঙ্গলমহলের প্রকৃত কর নির্ধারণ করা ছিল দুষ্কর।৩৪ এক্ষেত্রে হান্টার বলেছেন কোম্পানি দ্বারা প্রণীত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত অজ্ঞাতভাবেই জঙ্গলমহলের প্রাচীন প্রথাকে আঘাত হানে, যা স্থানীয় শাসক কিংবা কৃষক কেউই স্বীকার করেননি।৩৫

পরবর্তীতে মেদিনীপুরের এস্টেটের রানি শিরোমণি, পাচেতের রাজা, রায়পুরের জমিদার এবং আরও অনেককে কোণঠাসা করে দেওয়া হয় এবং তাদের নজিরবিহীনভাবে অপদস্থ ও মানহানি করা হয়। এমনকি তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা নিলামে তোলা হয়। জে সি প্রাইসের মতে, জঙ্গলের অধিকাংশ জমিদার ছিলেন সুদক্ষ সামরিক নেতা। ফলে তারা কৃষকদেরকে যেমন সুরক্ষা প্রদান করতে পারেন তেমনি প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে সামরিক সাহায্য চাইতে পারেন।৩৬

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রানি শিরোমণির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। তবে জঙ্গলমহলের সর্দাররা রানি শিরোমণিকে বেশ কিছু সময়ের জন্য তাদের নেত্রী রূপে গ্রহণ করে। রানি গোপনে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। কারণ ব্রিটিশ কোম্পানির বিরুদ্ধে আঘাত হানার মতো ক্ষমতা তাঁর ছিল না। এ সময় শিমলাপালের জমিদার কোম্পানির বিরুদ্ধে পুনরায় বিদ্রোহীদের উজ্জীবিত করলে পাইক অন্যান্য উপজাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহী ও আনন্দপুর ফ্যাক্টরির অত্যাচারিত কারিগর গোষ্ঠীবদ্ধ হয় এবং রানি শিরোমণিকে সমর্থন করে।৩৭

রানি ছিলেন এক অসহায় বিধবা যাঁর জমিদারি অন্যায়ভাবে ব্রিটিশ কোম্পানি বাজেয়াপ্ত করেছিল। ফলে রানি সাধারণ জনগণ ও বিদ্রোহীদের সহানুভূতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের যে বিদ্রোহ বিশাল আকার ধারণ করেছিল তার প্রকৃত কারণ ছিল রানির প্রতি সুবিচার আদায়। তাছাড়া লবণের মূল্য বৃদ্ধি এবং জমির করকে কেন্দ্র করে যে বিরোধিতা সৃষ্টি হয়েছিল তার ফলে সরকার কর আদায় করতে অপারগ ছিল।৩৮

কোম্পানির নয়া নীতির ফলে বহু পুরানো সর্দারদের সরিয়ে নতুন ও আদিবাসী জমিদারদের নিয়োগ করা হলে স্থানীয় আদিবাসী কৃষকরা সমস্যার সম্মুখীন হয়। ফলস্বরূপ ১৭৯৫ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আদিবাসী কৃষকদের মধ্যে একাধিকবার অসন্তোষ দেখা দেয়। ফলে এ সকল জমিদারিগুলি কোম্পানি পুনরায় নিলামে তুলতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে পাচেত ও রায়পুরের জমিদারির কাছে কোম্পানি পরাজয় স্বীকার করে। কোম্পানির এই দুর্বলতার সুযোগে বরাভূমের ভূমিজ মানভূম এবং জঙ্গলমহলের অন্যান্য নেতৃত্ববৃন্দ বিষ্ণুপুরের প্রয়াত রাজা চেতন সিংয়ের পরিবারের জমিদারি পুনরুদ্ধার করতেএগিয়ে আসেন।৩৯

বিদ্রোহীদের মূল লক্ষ্য ছিল জানপুর অঞ্চলের তহশিলদার ও সেরিস্তাদারদের ওপর আক্রমণ করা। আনন্দপুরের তহশিলদার উচ্চ মহলকে তার নিরাপত্তার জন্য আবেদন জানায়। তবে এক্ষেত্রে পুলিশি ব্যবস্থা পুরোপুরি ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়। কারণ অধিকাংশ দারোগা ছিলেন ঘুসখোর এবং তারা কিছু অর্থের বিনিময়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মুক্তি প্রদান করতেন।৪০

ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করেছিলেন জঙ্গলমহলের আদিবাসী জনজাতি যথেষ্ট সাহসী ও নিরীহ। এমতাবস্থায় কোম্পানি পুনরায় নবনীতি প্রণয়ন করার জন্য বিশেষ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন যা এই রাজনৈতিক অবক্ষয়কে রুখতে সাহায্য করবে।৪১ জঙ্গলমহলের জমিদারদের শান্তি রক্ষার জন্য কোম্পানি সহযোগিতার আবেদন করে। বিদ্রোহ সম্পূর্ণভাবে শান্ত হলে কোম্পানি নতুন আইন গ্রহণ অস্বীকার করে, কারণ এটি চুয়াড়দের জয়কে সুনিশ্চিত করতে পারত।

তবে চুয়াড় বিদ্রোহের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আদিবাসীদের দ্বারা সংঘটিত গেরিলা যুদ্ধ। বিদ্রোহীরা সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত না হয়ে পাহাড় এবং জঙ্গলের পেছন থেকে আক্রমণ করত, যার ফলে কোম্পানির সেনা জঙ্গলের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বন্দিতে পরিণত হত। কোম্পানি সুপুর অঞ্চলের রাজা গোপীনাথ ঢাল, মতিলাল দুবরাজ, ঘাটশিলার রাজা জগন্নাথ ঢালের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীরচাঁদ হাকিম মুক্তার, গোপীনাথ অম্বিকানগরের নাবালক জমিদার প্রতাপ নারায়ণ, মানভূমের জমিদার বাঁশি মাইতি, বরাভূমের মুক্তার এবং লছমি নারায়ণ, ছাতনার জমিদার প্রমুখের কাছ থেকে লিখিত স্বীকারোক্তি কিংবা মুচলেকা লাভ করে যাতে তারা আগামীতে কোনও আদিবাসীদের হয়ে বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করতে না পারে। এমনকি কোনও জমিদার যদি আদিবাসীদের সাহায্য করে তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং তার সম্পত্তি কোম্পানি দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হবে— এমন আদেশ দেওয়া হয়।

কিন্তু, বহু জমিদার আদিবাসীদের গোপনে সহায়তা করত এবং কোম্পানির প্রতি তোষামোদকারী জমিদারদের বিরুদ্ধে লুটপাট ইত্যাদি কার্যকলাপে মদত প্রদান করত। এমনকি বেশ কিছু উৎসবে সেই লুণ্ঠিত সম্পদ আদিবাসীদের মধ্যে প্রদান করতেন। জমিদারদের এ সকল অবাধ্য কার্যকলাপ ব্রিটিশদের ক্ষুব্ধ করেছিল।৪২

পরবর্তীকালে বিদ্রোহ পুনরায় উজ্জীবিত হয় এবং বেশ কিছু স্থানীয় জমিদার ও কৃষক রানি শিরোমণি এবং কর্ণঘরের রাজার সাথে বিদ্রোহে লিপ্ত হন। স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেট রানি এবং তাঁর সমর্থকদের গ্রেপ্তার করার জন্য পরোয়ানা জারি করে। তার সাথে বিদ্রোহীদের গোপন আশ্রয় কর্ণঘরের দুর্গ কোম্পানির দ্বারা বাজেয়াপ্ত হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে রানি জঙ্গলমহলের সকল জমিদারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানান। তবে রানি এবং তার অনুগামীরা গ্রেপ্তার হলে আদিবাসী জনজাতি ক্ষুব্ধ হয়ে ঢালহারা বাজার আক্রমণ করে এবং বহুল সংখ্যক গবাদি পশু লুট করে ও পারিপার্শ্বিক অঞ্চল ধ্বংস করে। বারংবার বিদ্রোহী ও কোম্পানি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। আবার একাধিক বিদ্রোহী একত্রিত হয়ে শহরাঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে অগ্নিনিক্ষেপ করে, ফলস্বরূপ দীর্ঘকাল ধরে জঙ্গলমহলে আশঙ্কা ক্রমে বেড়েই চলেছিল। যদিও ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের পর ব্রিটিশ সরকার এই বিদ্রোহকে শক্ত হাতে দমন করতে অনেকাংশে সফল হয়েছিল।

আলোচ্য এই বিদ্রোহে আক্রমণকারীদের মূল লক্ষ্য ছিল কোম্পানির প্রতি অনুগত জমিদারগণ তহশিলদার ও কোম্পানির কর্মকর্তাগণ। তবে জঙ্গলমহল অঞ্চলের কৃষকরা অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও এই অঞ্চলে আদিবাসী ও কৃষকদের মধ্যে মৈত্রী স্থাপন হয়েছিল বলেই বিদ্রোহী আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ঘন জঙ্গলে আত্মগোপনে সক্ষম হয়েছিল। ঐতিহাসিক বিনয় ভূষণ চৌধুরী তাঁর গবেষণায় আলোচ্য বিদ্রোহকে ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, বিদ্রোহীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন কৃষিজীবী। কিন্তু এই বিদ্রোহে যোগদানের ফলে তারা তাদের মূল জীবিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্থানীয় জমিদার কিংবা সর্দারদের দ্বারা লুটপাট জাতীয় কার্যকলাপে যুক্ত হয়। যদিও নির্দ্বিধায় সমগ্র শহরে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা এই বিদ্রোহ যে সম্পূর্ণভাবে ব্রিটিশ বিরোধী ছিল তার প্রমাণ দেয়।৪৩

ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা                                         

আঠারো শতকের শেষার্ধ থেকে বহু ব্রিটিশ কর্মকর্তা থেকে শুরু ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার এবং জে সি প্রাইস চুয়াড় বিদ্রোহ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছেন। উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, ঔপনিবেশিক শাসন ১৭৯৯ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গে অসংখ্য বিদ্রোহ ও অশান্তির সাক্ষী ছিল। এই বিদ্রোহ অভিজাত সম্প্রদায় থেকে শুরু হলেও গণআন্দোলনে পরিণত হয়। উপজাতীয় বিদ্রোহগুলি সংঘটিত হয়েছিল, কারণ ব্রিটিশ ও স্থানীয় জনগণ উভয়ই উপজাতিদের জীবনের সংরক্ষিত জাতিগত পরিধিতে অনুপ্রবেশ করার প্রচেষ্টা করে।৪৪ উদাহরণস্বরূপ, আদিবাসী জনজাতি তাদের জাতিগত পরিচয়ের মৌলিক উপাদানগুলি, যেমন— আচার, মূল্যবোধ, সামাজিক কাঠামো, জীবনশৈলী, উপভাষা ইত্যাদির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ অনুভব করে। প্রতিফলে তারা কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলে।৪৫ ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পর্যায়ে এই ধরনের উপজাতীয় প্রতিরোধ প্রভাবশালী ছিল। ঔপনিবেশিক ও দেশীয় শোষকদের দ্বারা তাদের প্রতি শোষণের বিরোধিতা করার জন্য শুধু কৃষক অভ্যুত্থান নয়, বেশ কয়েকটি উপজাতীয় আন্দোলনও গড়ে উঠেছিল।৪৬ জমিকে কেন্দ্র করে যতগুলি আদিবাসী অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিষয় ছিল ঔপনিবেশিক শাসনের শোষণমূলক রাজনীতির বিরুদ্ধে এবং জমিদার, মহাজন প্রভৃতি অসাধু শক্তির বিরুদ্ধে, যারা কেবল তাদের জীবিকার উপায়ই ধ্বংস করেনি, বরং তাদের উপর অসহনীয় আর্থিক বোঝাও চাপিয়ে দিয়েছিল।৪৭ উপজাতিগত ও কৃষকদের সমস্যাগুলির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও, এই প্রতিরোধগুলি মূলত রাজনৈতিক রূপ নিয়েছিল, সম্ভবত তাদের নেতাদের জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে যারা জাতীয় আন্দোলনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের সমস্যার সমাধান করার কথা ভেবেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকরা এই প্রতিরোধকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের জন্য উপজাতি বিদ্রোহ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

মার্কসবাদী ঐতিহাসিকদের মতে, এই অভ্যুত্থান সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনের নির্মম শোষণের যে সুপ্ত পরিকল্পনা ছিল তাকে উন্মোচিত করেছিল। এ সকল মার্কসবাদী ঐতিহাসিকদের মতে ব্রিটিশদের আগ্রাসী নীতি এভাবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছিল এবং পরবর্তীকালে তা দুর্ভিক্ষ এবং কৃষি ক্ষেত্রে অবক্ষয় ডেকে আনে। আবার বহু গবেষক মন্তব্য করেছেন জমিদার ও সর্দারদের যে সামাজিক মৈত্রী স্থাপিত হয়েছিল তা জঙ্গলমহলের নিম্নবর্গীয় জনজাতির কাঁধে ভর করে উচ্চ বর্গীয়দের ক্ষমতা দখলের নির্লজ্জ প্রচেষ্টা মাত্র। পরবর্তীকালে এই পরিস্থিতির ফলস্বরূপ কৃষিজীবী মানুষেরা শহরাঞ্চলে অভিবাসিত হয় জীবন ও জীবিকার জন্য। তবে চুয়াড় বিদ্রোহ থেকে শুরু করে জঙ্গলমহলে পাইকদের ক্রমাগত যে সংগ্রাম গড়ে উঠেছিল তা আদৌ জঙ্গলমহলে ঔপনিবেশিক শাসনকে কতটা অগ্রাহ্য করতে পেরেছিল তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।       

চুয়াড় বিদ্রোহের রাজনৈতিক তাৎপর্য অনস্বীকার্য। যদিও বিদ্রোহীরা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আঞ্চলিক সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছিল এবং বহু নেতৃবৃন্দ চুয়াড় বিদ্রোহে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেননি। তাঁরা অনেকেই তাঁদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। তবে জঙ্গলমহলের কৃষক জমিদার ব্রিটিশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে কোম্পানিকে উৎখাত করার জন্য যে বিদ্রোহ করেছিল তা ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পরবর্তী প্রজন্ম এই ঐতিহ্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে। সুতরাং এই বিদ্রোহ ব্রিটিশদের নির্মম সামরিক শক্তির দ্বারা দমন করা হলেও বিদ্রোহীদের আন্দোলন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়নি। কিন্তু তৎকালীন অন্যান্য কৃষক আন্দোলনের মতো বিদ্রোহ দমনের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গ প্রেসিডেন্সির সামন্ততান্ত্রিক আর্থনীতিক পর্বের অবসান ঘটে এবং এই অঞ্চলে পরোক্ষভাবে পুঁজিবাদী পর্বের ভিত্তি স্থাপিত হয়। 

তথ্যসূত্র:

১. J.C Price: ‘The Chuar Rebellion of 1799’, Calcutta, 1873, page 1-3

২. Ananda Bhattacharyya: ‘The Chuar Rebellion of 1799’, page 69-79

৩. যোগেশ চন্দ্র বসু: ‘মেদিনীপুরের ইতিহাস’, কলিকাতা, ১৯৩৯, পৃষ্ঠা-৩৭-৪১

৪. Sutapa Bhattacharya and Ananda Bhattacharya: ‘The Adivasi Resistance in Jungle Mahal: A Case Study of Chuar Rebellion’, Journal of Adivasi and Indigenous Studies, vol-xi, no.2, August, 202, ISSN– 23945524

৫. সুপ্রকাশ রায়: ‘ভারতের কৃষক বিদ্রোহ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম’, র‍্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন, কলকাতা, ১৯৯৮, পৃষ্ঠা-৫৫

৬. যোগেশ চন্দ্র বসু: ‘মেদিনীপুরের ইতিহাস’, কলিকাতা, ১৯৩৯, পৃষ্ঠা-৪০

৭. তদেব

৮. J.C. Jha: ‘The Bhumij Revolt’, Munshiram Monoharlal, Delhi, 1967, page.1-25.

৯. L.S.S. O’ Malley: ‘Bengal District Gazetteer’, Bankura Kolkata: Bengal Secretariat Book Depot, 1908, (1995, reprint), page 37. 

১০. L.S.S. O’Malley: ‘Bengal District Gazetteer’ Midnapore, Kolkata: Bengal Secretariat Book Depot,1911, page 47-48.

১১. Subas Sinchan Roy: ‘Police Administration’, pp. 494-495

১২. Sekhar Bandapadhyay: ‘Plassey to partition; A History of Modern India’, Orient Longman, New Delhi, 2004, page 82

১৩. Binod Sankar Das: ‘Changing Profile of South West Bengal’, Pustak Biponi, kolkata,2013 page 95

১৪. J.C. Jha: ‘The Bhumij Revolt’, Munshiram Monoharlal, Delhi, 1967,page.Xii

১৫. সুপ্রকাশ রায়: ‘ভারতের কৃষক বিদ্রোহ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম’, র‍্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন, কলকাতা, ১৯৯৮, পৃষ্ঠা-১৫৫

১৬. J. C Price: ‘Notes on the History of Medinipore’, Calcutta, 1876, Page 78-79

১৭. Binod Sankar Das: ‘Changing Profile of South West Bengal’, Pustak Biponi, kolkata, 2013, page-100

১৮. তদেব, পৃষ্ঠা-১০৪

১৯. তদেব, পৃষ্ঠা-৪২

২০. Bipan Chandra: ‘Modern India’, Orient Longman, New Delhi, 2009,Page 104

২১. Narattam Sinha Mahapatra: ‘The Chuar Rebellion of the Jungle Mahal: A Historical Study’, Pratidwani the Echo, vol- x, 2022, ISBN- 2278-5264

২২. Graham to Fergusson dated 4th February 1767, No.78. (collected from Medinipore District Collectorate, the source will be referred to as MDC) 

২৩. Fergusson to Graham dated 7 th February 1767, No.120 (MDC) 

২৪. Fergusson to Graham dated 29 th February 1767, No.129 and 6 th March 1767, No.139 (MDC) 

২৫. Fergusson to Graham dated 6 th March 1767, No.139 (MDC) 

২৬. J. C Price: ‘Notes on the History of Medinipore’, Calcutta, 1876, Page 67-68

২৭. Fergusson to Vansittart dated 5 th June 1767, No.202 (MDC) 

২৮. Eward Baber to Goodyar dated 30 th November 1770, No.70 (MDC vol 4) 

২৯. Vansittart to Lt. Nun 8 th January 1770, No.509 (MDC) 

৩০. Eward Baber to Goodyar dated 30 th November 1770, No.70 (MDC vol 4) 

৩১. Capt. J Forbes from Haldyapukur dated 4th April 1773 (MDC) 

৩২. J. C Price: ‘Notes on the History of Medinipore’, Calcutta, 1876, Page 67

৩৩. J. C Price: ‘Notes on the History of Medinipore’, Calcutta, 1876, Page 68

৩৪. H. Y Bayley: ‘Memoranda of Midnapore’, Calcutta, 1902, Page 2

৩৫. W. W Hunter: ‘The Annals of Rural Bengal’, Smith Elder and Co., London, 1894

৩৬. H. H Wilson: ‘History of British India’, fifth ed. ix, Page 220-221

৩৭. J. C Jha: ‘Thekol Insurrection of Chotonagpur’, Calcutta, 1964, Page 4-5

৩৮. Chittabrata Palit (Ed.) : ‘Agrarian Bengal Under the Raj’, Page 67

৩৯. Binoy Bhusan Chaudhury: ‘The Transformation of the Tribal society in middle India’, EPW, Vol-XII, Nos 33-34

৪০. K. S Singh: ‘Colonial Transformation of rural Protest in Eastern India’, 1757-1930, Presidential Address, section-III, IHC, Waltair, 1978

৪১. S.B Chaudhuri: ‘Civil disturbances during the British Rule in India’ (1765-1857), Calcutta,1955, Page 112

৪২. তদেব, পৃষ্ঠা-১১৪

৪৩. তদেব, পৃষ্ঠা-১১৫

৪৪. জে সি ঝা: ‘ছোটোনাগপুরের কোল বিদ্রোহ’, কোলকাতা, ১৯৬৪,পৃষ্ঠা-৩৪

৪৫. Binod Sankar Das: ‘Changing Profile of South West Bengal’, Pustak Biponi, kolkata, 2013, page 95

৪৬. Ranajit Guha (Ed.) : ‘Subaltern Studies’ Vol-2, Page 34

৪৭. D. N Danagyare: ‘Themes and Perspective in Indian Society’, Page 32

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান